আব্দুর রহমান
গাজায় স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। তেল আবিবের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসবে তা অনেক আগেই অনুমান করছিল হামাস। গোষ্ঠীটির এক শীর্ষ নেতা বলেছিলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা হয় ধীরে ধীরে মরব, নয়তো দখলদারদের (ইসরায়েল) সঙ্গে নিয়ে মরব।’ এ মন্তব্য থেকে হামাসের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। কিন্তু ইতিহাস বলে প্রতিটি ঘটনাই অন্য একাধিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এবং সবগুলোর পরম্পরা আছে। সবকিছু হামাসের অনুকূলে নাও যেতে পারে।
যদিও হামাস পরিস্থিতি অনুকূলে বলে দাবি করেছে। তাদের সেনারা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রশিক্ষিত, উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত। এর আগে হামাস ২০১৪ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে টানা ৫০ দিন লড়াই করেছে কিন্তু হার মানেনি। সে সময় গাজাকে আক্ষরিক অর্থেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল ইসরায়েল। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
মাঝে দীর্ঘ সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে যায়নি হামাস বরং দেশটিকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তারা তেল আবিবের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না। এর মধ্য দিয়ে হামাস মূলত ইসরায়েলের কাছ থেকে সময় কিনেছে। হামাস নেতারা বলছেন, তাঁরা উপযুক্ত সময়েই ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়েছেন। কারণ, এই দীর্ঘ সময়ে তাঁরা নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে ইসরায়েলিরা যেসব জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু করছে তা অনেক পুরোনো।
হামাসের দাবি, রাজনৈতিক মতভেদের কারণে ইসরায়েলকে স্থল যুদ্ধে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়তে হবে। তার কিছুটা প্রমাণ দেখা গেছে চলমান যুদ্ধে। হামাস হামলা শুরুর চার দিন পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েল এখনো স্থল অভিযান শুরু করতে পারেনি। হামাসের আশা—স্থল অভিযানে ইসরায়েল খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না স্রেফ গাজার অতি ঘনত্বের জনসংখ্যার কারণে। গাজায় স্থল অভিযান চালানোর পর বেসামরিক প্রাণ হতাহতের ঘটনা ঘটলে তা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার ইস্যুতে শোরগোল তুলবে যা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
হামাসের জন্য চলতি যুদ্ধে আরেকটি বড় সুবিধা হলো—তাদের কাছে শতাধিক ইসরায়েলি বন্দী। যা ইসরায়েলের সঙ্গে দর–কষাকষির সুযোগ তৈরি করে দেবে তাদের। এরই মধ্যে দলটি ঘোষণা দিয়েছে, এই বন্দীদের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কারাগারে যত ফিলিস্তিনি বন্দী রয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া গাজা উপত্যকায় আরোপিত ইসরায়েলের অবরোধ তুলে নিতে এই বন্দীদের দর–কষাকষির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি এক মধ্যস্থতাকারী বলছেন, এর আগে মাত্র ১ জন ইসরায়েলি বন্দীর (গিলাদ শাতিল) বিনিময়ে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে হয়েছিল। এবার তাদের হাতে রয়েছে শ খানিক গিলাদ শাতিল। এই বন্দীদের বিপরীতে আরেকটি সুবিধা এরই মধ্যে হামাস হাসিল করার চেষ্টা করছে। গোষ্ঠীটি ঘোষণা দিয়েছে—ইসরায়েল যদি পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কোনো অভিযান চালায়, তবে প্রতিটি অভিযানের বিপরীতে একজন করে বন্দীকে হত্যা করা হবে।
ইসরায়েল ২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। এরপর দেশটি গাজাবাসীকে মিসর ও ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য করার সুযোগ দেয়। কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস গাজা উপত্যকার দখল নিলে ইসরায়েল ও মিসর গাজার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে গাজা উপত্যকার ২০ লাখের বেশি মানুষকে স্রেফ নিজেদের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে অনেকে সতর্ক করে বলেছিলেন, এমন পরিস্থিতি গাজাবাসীকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর ইসরায়েলের নীতি নির্ধারকেরা এই বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। তাঁরা উড়িয়ে দিয়েছেন যে, গাজাবাসী তথা হামাস ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
হামাস ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার অনেকটাই স্পষ্ট পাঁচ দিন ধরে চলা এই যুদ্ধ থেকে। হামাস ইসরায়েলকে দেখিয়ে দিয়েছে তারা অজেয় না। তাদের ব্যর্থ করে দিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আক্রমণ চালিয়েছে হামাস। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের কলামিস্ট গিডিওন লেভি বলেন, ‘এই ব্যর্থতার একটি বড় কারণ হলো ইসরায়েলিদের ঔদ্ধত্য। তারা মনে করে, তারা খুবই শক্তিশালী এবং তাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী, যাদের কাছে আছে সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।’
কেবল এই ঔদ্ধত্যই নয়, নিজেদের নিয়ে আত্মতুষ্টিতেও ভোগে ইসরায়েলিরা। এ বিষয়ে লেভি বলেন, ‘ইসরায়েলিরা মনে করে, আমরা যেহেতু কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে সুদীর্ঘ প্রাচীর, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছি, তাই আমরা অনেক বেশি সুরক্ষিত।’ লেভির মতে, ইসরায়েলিদের ঔদ্ধত্য ও আত্মতুষ্টিতে ভোগার ঐতিহ্য হামাসের আক্রমণের মুখে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ।
মোসাদ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে লেভি বলেন, ‘দ্বিতীয় কারণটি হলো সরকারের প্রাধান্য তালিকা। ইসরায়েলের বর্তমান সরকার পাগলের মতো প্রায় সব সেনাই মোতায়েন করেছে পশ্চিম তীরে, যাতে করে সেখানে যত ইসরায়েলি (অবৈধ) বসতি রয়েছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে দক্ষিণ রণাঙ্গন কার্যত খালি হয়ে পড়ে।’ মূলত এ দুই কারণেই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হামাসের চাল আগাম অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গাজা প্রশাসনের অন্যতম প্রধান অর্থদাতা ছিল কাতার। কিন্তু দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয়নি হামাস। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ডের নামে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে ইসরায়েল। এই তালিকায় সর্বশেষ দেশটি হলো সৌদি আরব। দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের। বিনিময়ে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিরবচ্ছিন্ন অস্ত্রের সরবরাহ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করতে চায়। বিষয়গুলো গাজাবাসীকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, তাঁরা বিশ্ব রাজনীতির মাঠে কেবলই ‘সওদা করার পণ্য’, তাদের ভাগ্য তাদের নিজেদেরই বয়ে বেড়াতে হবে। এই আশঙ্কা থেকে হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দায়েফের বক্তব্য হলো—‘আমরা বিষয়গুলোর একটি সমাপ্তি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে শত্রু উপলব্ধি করতে পারে যে, তাঁরা আর দায়বদ্ধতার বিষয়টি হিসাব না করে আনন্দ করতে পারবে না।’
মোহাম্মদ দায়েফ এবং অন্যান্য হামাস নেতারা এবারের আন্দোলন কেবল গাজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না। এ বিষয়ে হামাসের এক নেতা বলেছেন, ‘আমরা বিদ্রোহের এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিতে চাই অধিকৃত পশ্চিম তীরেও।’ বিশেষ করে পশ্চিম তীরের জনগণের মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের (অনেক দিন কোনো নির্বাচন ছাড়াই) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পশ্চিম তীরের মানুষকে সংঘবদ্ধ করার ইচ্ছা তাদের।
কেবল পশ্চিম তীর নয়, হামাস এবার মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই ইসরায়েল বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে চায়। লেবানন, মিসর, সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশে। এরই মধ্যে লেবাননের শরণার্থীশিবিরে থাকা ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সহায়তা পেলে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত। সিরিয়ার গোলান মালভূমি এলাকা থেকেও ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে তেল আবিবকে সহায়তা করে, তবে ওয়াশিংটনকে কড়া জবাব দেওয়া হবে। এমন হুমকি দিয়েছে ইরাক ও ইয়েমেনের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। প্রয়োজনে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে হামলা চালানোর মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। ইরাকের সশস্ত্র সংগঠন কাতাইব হিজবুল্লাহ বা হিজবুল্লাহ ব্রিগেড, বদর অর্গানাইজেশন ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুথি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে। প্রসঙ্গত, এই তিনটি সংগঠনেরই ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে কথিত রয়েছে।
ইরাকের হিজবুল্লাহ ব্রিগেড হুমকি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা দিলে তাঁরা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ব্যবহার করে স্পেশাল ফোর্সের মাধ্যমে হামলা চালাবে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের স্থাপনায় হামলার অভিযোগ এনেছিল। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার ও সিরিয়ায় ৯০০ সেনা রয়ে গেছে।
বদর অর্গানাইজেশনের নেতা হাজি আল-আমিরি বলেছেন, ‘যদি তাঁরা (যুক্তরাষ্ট্র) ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তবে আমরাও ইরাকে তাদের স্থাপনায় হামলাকে বৈধ বলে বিবেচনা করব।’ উল্লেখ্য, বদর অর্গানাইজেশন ইরাকের রাষ্ট্রায়ত্ত আধাসামরিক বাহিনী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের অংশ। এই আধা সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে বলে দাবি পশ্চিমা বিশ্বের।
ইয়েমেনের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথির এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপের কড়া জবাব দেওয়া হবে। প্রয়োজনে হামাসের হয়ে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও অন্যান্য সামরিক উপায় অবলম্বন করে হামলা চালানো হবে। এমনকি হুথি ওই নেতা লেবানন ও ইরাকের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন।
এই সংগঠনগুলোর বাইরে হামাসের সবচেয়ে বড় মিত্র হলো লেবাননের হিজবুল্লাহ। এর আগেও একাধিকবার হিজবুল্লাহ হামাসের হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু এবার নিশ্চিত নয় যে, গোষ্ঠীটি এবার হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে কিনা। এরই মধ্যে হিজবুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্ত না হওয়ার জন্য। হিজবুল্লাহর কাছে বিপুল পরিমাণ রকেট মজুত রয়েছে। কিন্তু নিকট অতীত অর্থাৎ ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল লড়াইয়ে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি গোষ্ঠীটি। আরেকটি বিষয় হলো লেবানন রাষ্ট্র। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। এই অবস্থায় লেবানন চাইবে না হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু বাস্তবতা হলো হিজবুল্লাহর ওপর লেবানন সরকারের প্রভাব সামন্যই, নেই বললেই চলে।
হিজবুল্লাহ সম্প্রতি মাস খানিক আগে, ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বড় আকারের একটি সামরিক মহড়া চালিয়েছে। কেবল তাই নয়, হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ইসরায়েলে তিনটি রকেট হামলাও চালানো হয়েছিল। রকেটগুলো ইসরায়েল অধিকৃত সেবা অঞ্চলে আঘাত হানে। কিন্তু হিজবুল্লাহর তরফ থেকে বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি। এখানে হিজবুল্লাহর একটি বড় সুবিধা হলো—নিশ্চয়ই গাজায় হামাস, সিরিয়া সীমান্তে ইসরায়েল বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী ও লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে একই সঙ্গে লড়াই করতে চাইবে না তেল আবিব। এমনটা হলে এই অঞ্চলে আবারও একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। যাতে জড়িয়ে পড়তে পারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও।
যেসব গোষ্ঠী হামাসের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সেগুলোসহ হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হলো ইরান। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান নিজের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে ইসরায়েলকে দূরে রাখতেই এসব গোষ্ঠীকে অর্থায়ন ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। তবে এসবই বয়ান। সরাসরি আর্থিক সহায়তার প্রমাণ চোখের সামনে আসে না। তবে ইতিহাস বলছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে যতগুলো আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হয়েছে তার কোনোটিতেই ইরান সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি। এই বিষয়টি মাথায় আছে হামাসের নেতাদেরও। তাই তারা ইরানের সমর্থনকে ‘ক্ষণস্থায়ী বিয়ে’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। এখান থেকে একটি বার্তা স্পষ্ট যে, হামাসের সামনে অনেকগুলো সম্ভাব্য দৃশ্যপট রয়েছে। কিন্তু সেগুলো শর্ত সাপেক্ষ। সেগুলো কাজ করতেও পারে, নাও পারে। তবে এটিও স্পষ্ট যে, হামাস বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত এবং তারা এই লড়াই একা হলেও চালিয়ে নিতে চায়। কিন্তু কতক্ষণ তারা ইসরায়েলের সামনে টিকবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আরটি, আনাদোলু এজেন্সি, আল-জাজিরা, দ্য ইকোনমিস্ট ও আটলান্টিক কাউন্সিল
গাজায় স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। তেল আবিবের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসবে তা অনেক আগেই অনুমান করছিল হামাস। গোষ্ঠীটির এক শীর্ষ নেতা বলেছিলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা হয় ধীরে ধীরে মরব, নয়তো দখলদারদের (ইসরায়েল) সঙ্গে নিয়ে মরব।’ এ মন্তব্য থেকে হামাসের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। কিন্তু ইতিহাস বলে প্রতিটি ঘটনাই অন্য একাধিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এবং সবগুলোর পরম্পরা আছে। সবকিছু হামাসের অনুকূলে নাও যেতে পারে।
যদিও হামাস পরিস্থিতি অনুকূলে বলে দাবি করেছে। তাদের সেনারা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রশিক্ষিত, উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত। এর আগে হামাস ২০১৪ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে টানা ৫০ দিন লড়াই করেছে কিন্তু হার মানেনি। সে সময় গাজাকে আক্ষরিক অর্থেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল ইসরায়েল। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
মাঝে দীর্ঘ সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে যায়নি হামাস বরং দেশটিকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তারা তেল আবিবের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না। এর মধ্য দিয়ে হামাস মূলত ইসরায়েলের কাছ থেকে সময় কিনেছে। হামাস নেতারা বলছেন, তাঁরা উপযুক্ত সময়েই ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়েছেন। কারণ, এই দীর্ঘ সময়ে তাঁরা নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে ইসরায়েলিরা যেসব জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু করছে তা অনেক পুরোনো।
হামাসের দাবি, রাজনৈতিক মতভেদের কারণে ইসরায়েলকে স্থল যুদ্ধে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়তে হবে। তার কিছুটা প্রমাণ দেখা গেছে চলমান যুদ্ধে। হামাস হামলা শুরুর চার দিন পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েল এখনো স্থল অভিযান শুরু করতে পারেনি। হামাসের আশা—স্থল অভিযানে ইসরায়েল খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না স্রেফ গাজার অতি ঘনত্বের জনসংখ্যার কারণে। গাজায় স্থল অভিযান চালানোর পর বেসামরিক প্রাণ হতাহতের ঘটনা ঘটলে তা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার ইস্যুতে শোরগোল তুলবে যা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
হামাসের জন্য চলতি যুদ্ধে আরেকটি বড় সুবিধা হলো—তাদের কাছে শতাধিক ইসরায়েলি বন্দী। যা ইসরায়েলের সঙ্গে দর–কষাকষির সুযোগ তৈরি করে দেবে তাদের। এরই মধ্যে দলটি ঘোষণা দিয়েছে, এই বন্দীদের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কারাগারে যত ফিলিস্তিনি বন্দী রয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া গাজা উপত্যকায় আরোপিত ইসরায়েলের অবরোধ তুলে নিতে এই বন্দীদের দর–কষাকষির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি এক মধ্যস্থতাকারী বলছেন, এর আগে মাত্র ১ জন ইসরায়েলি বন্দীর (গিলাদ শাতিল) বিনিময়ে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিতে হয়েছিল। এবার তাদের হাতে রয়েছে শ খানিক গিলাদ শাতিল। এই বন্দীদের বিপরীতে আরেকটি সুবিধা এরই মধ্যে হামাস হাসিল করার চেষ্টা করছে। গোষ্ঠীটি ঘোষণা দিয়েছে—ইসরায়েল যদি পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কোনো অভিযান চালায়, তবে প্রতিটি অভিযানের বিপরীতে একজন করে বন্দীকে হত্যা করা হবে।
ইসরায়েল ২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। এরপর দেশটি গাজাবাসীকে মিসর ও ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য করার সুযোগ দেয়। কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস গাজা উপত্যকার দখল নিলে ইসরায়েল ও মিসর গাজার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে গাজা উপত্যকার ২০ লাখের বেশি মানুষকে স্রেফ নিজেদের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে অনেকে সতর্ক করে বলেছিলেন, এমন পরিস্থিতি গাজাবাসীকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর ইসরায়েলের নীতি নির্ধারকেরা এই বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। তাঁরা উড়িয়ে দিয়েছেন যে, গাজাবাসী তথা হামাস ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
হামাস ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার অনেকটাই স্পষ্ট পাঁচ দিন ধরে চলা এই যুদ্ধ থেকে। হামাস ইসরায়েলকে দেখিয়ে দিয়েছে তারা অজেয় না। তাদের ব্যর্থ করে দিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আক্রমণ চালিয়েছে হামাস। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের কলামিস্ট গিডিওন লেভি বলেন, ‘এই ব্যর্থতার একটি বড় কারণ হলো ইসরায়েলিদের ঔদ্ধত্য। তারা মনে করে, তারা খুবই শক্তিশালী এবং তাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী, যাদের কাছে আছে সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।’
কেবল এই ঔদ্ধত্যই নয়, নিজেদের নিয়ে আত্মতুষ্টিতেও ভোগে ইসরায়েলিরা। এ বিষয়ে লেভি বলেন, ‘ইসরায়েলিরা মনে করে, আমরা যেহেতু কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে সুদীর্ঘ প্রাচীর, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছি, তাই আমরা অনেক বেশি সুরক্ষিত।’ লেভির মতে, ইসরায়েলিদের ঔদ্ধত্য ও আত্মতুষ্টিতে ভোগার ঐতিহ্য হামাসের আক্রমণের মুখে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ।
মোসাদ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে লেভি বলেন, ‘দ্বিতীয় কারণটি হলো সরকারের প্রাধান্য তালিকা। ইসরায়েলের বর্তমান সরকার পাগলের মতো প্রায় সব সেনাই মোতায়েন করেছে পশ্চিম তীরে, যাতে করে সেখানে যত ইসরায়েলি (অবৈধ) বসতি রয়েছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে দক্ষিণ রণাঙ্গন কার্যত খালি হয়ে পড়ে।’ মূলত এ দুই কারণেই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হামাসের চাল আগাম অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গাজা প্রশাসনের অন্যতম প্রধান অর্থদাতা ছিল কাতার। কিন্তু দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয়নি হামাস। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ডের নামে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে ইসরায়েল। এই তালিকায় সর্বশেষ দেশটি হলো সৌদি আরব। দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের। বিনিময়ে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিরবচ্ছিন্ন অস্ত্রের সরবরাহ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করতে চায়। বিষয়গুলো গাজাবাসীকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, তাঁরা বিশ্ব রাজনীতির মাঠে কেবলই ‘সওদা করার পণ্য’, তাদের ভাগ্য তাদের নিজেদেরই বয়ে বেড়াতে হবে। এই আশঙ্কা থেকে হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দায়েফের বক্তব্য হলো—‘আমরা বিষয়গুলোর একটি সমাপ্তি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে শত্রু উপলব্ধি করতে পারে যে, তাঁরা আর দায়বদ্ধতার বিষয়টি হিসাব না করে আনন্দ করতে পারবে না।’
মোহাম্মদ দায়েফ এবং অন্যান্য হামাস নেতারা এবারের আন্দোলন কেবল গাজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না। এ বিষয়ে হামাসের এক নেতা বলেছেন, ‘আমরা বিদ্রোহের এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিতে চাই অধিকৃত পশ্চিম তীরেও।’ বিশেষ করে পশ্চিম তীরের জনগণের মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের (অনেক দিন কোনো নির্বাচন ছাড়াই) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পশ্চিম তীরের মানুষকে সংঘবদ্ধ করার ইচ্ছা তাদের।
কেবল পশ্চিম তীর নয়, হামাস এবার মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই ইসরায়েল বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে চায়। লেবানন, মিসর, সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশে। এরই মধ্যে লেবাননের শরণার্থীশিবিরে থাকা ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সহায়তা পেলে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত। সিরিয়ার গোলান মালভূমি এলাকা থেকেও ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে তেল আবিবকে সহায়তা করে, তবে ওয়াশিংটনকে কড়া জবাব দেওয়া হবে। এমন হুমকি দিয়েছে ইরাক ও ইয়েমেনের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। প্রয়োজনে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে হামলা চালানোর মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। ইরাকের সশস্ত্র সংগঠন কাতাইব হিজবুল্লাহ বা হিজবুল্লাহ ব্রিগেড, বদর অর্গানাইজেশন ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন হুথি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে। প্রসঙ্গত, এই তিনটি সংগঠনেরই ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে কথিত রয়েছে।
ইরাকের হিজবুল্লাহ ব্রিগেড হুমকি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা দিলে তাঁরা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ব্যবহার করে স্পেশাল ফোর্সের মাধ্যমে হামলা চালাবে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের স্থাপনায় হামলার অভিযোগ এনেছিল। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার ও সিরিয়ায় ৯০০ সেনা রয়ে গেছে।
বদর অর্গানাইজেশনের নেতা হাজি আল-আমিরি বলেছেন, ‘যদি তাঁরা (যুক্তরাষ্ট্র) ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তবে আমরাও ইরাকে তাদের স্থাপনায় হামলাকে বৈধ বলে বিবেচনা করব।’ উল্লেখ্য, বদর অর্গানাইজেশন ইরাকের রাষ্ট্রায়ত্ত আধাসামরিক বাহিনী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের অংশ। এই আধা সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে বলে দাবি পশ্চিমা বিশ্বের।
ইয়েমেনের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথির এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপের কড়া জবাব দেওয়া হবে। প্রয়োজনে হামাসের হয়ে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও অন্যান্য সামরিক উপায় অবলম্বন করে হামলা চালানো হবে। এমনকি হুথি ওই নেতা লেবানন ও ইরাকের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন।
এই সংগঠনগুলোর বাইরে হামাসের সবচেয়ে বড় মিত্র হলো লেবাননের হিজবুল্লাহ। এর আগেও একাধিকবার হিজবুল্লাহ হামাসের হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু এবার নিশ্চিত নয় যে, গোষ্ঠীটি এবার হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে কিনা। এরই মধ্যে হিজবুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্ত না হওয়ার জন্য। হিজবুল্লাহর কাছে বিপুল পরিমাণ রকেট মজুত রয়েছে। কিন্তু নিকট অতীত অর্থাৎ ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল লড়াইয়ে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি গোষ্ঠীটি। আরেকটি বিষয় হলো লেবানন রাষ্ট্র। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। এই অবস্থায় লেবানন চাইবে না হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু বাস্তবতা হলো হিজবুল্লাহর ওপর লেবানন সরকারের প্রভাব সামন্যই, নেই বললেই চলে।
হিজবুল্লাহ সম্প্রতি মাস খানিক আগে, ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বড় আকারের একটি সামরিক মহড়া চালিয়েছে। কেবল তাই নয়, হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ইসরায়েলে তিনটি রকেট হামলাও চালানো হয়েছিল। রকেটগুলো ইসরায়েল অধিকৃত সেবা অঞ্চলে আঘাত হানে। কিন্তু হিজবুল্লাহর তরফ থেকে বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি। এখানে হিজবুল্লাহর একটি বড় সুবিধা হলো—নিশ্চয়ই গাজায় হামাস, সিরিয়া সীমান্তে ইসরায়েল বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী ও লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে একই সঙ্গে লড়াই করতে চাইবে না তেল আবিব। এমনটা হলে এই অঞ্চলে আবারও একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। যাতে জড়িয়ে পড়তে পারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও।
যেসব গোষ্ঠী হামাসের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সেগুলোসহ হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হলো ইরান। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান নিজের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে ইসরায়েলকে দূরে রাখতেই এসব গোষ্ঠীকে অর্থায়ন ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। তবে এসবই বয়ান। সরাসরি আর্থিক সহায়তার প্রমাণ চোখের সামনে আসে না। তবে ইতিহাস বলছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে যতগুলো আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হয়েছে তার কোনোটিতেই ইরান সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি। এই বিষয়টি মাথায় আছে হামাসের নেতাদেরও। তাই তারা ইরানের সমর্থনকে ‘ক্ষণস্থায়ী বিয়ে’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। এখান থেকে একটি বার্তা স্পষ্ট যে, হামাসের সামনে অনেকগুলো সম্ভাব্য দৃশ্যপট রয়েছে। কিন্তু সেগুলো শর্ত সাপেক্ষ। সেগুলো কাজ করতেও পারে, নাও পারে। তবে এটিও স্পষ্ট যে, হামাস বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত এবং তারা এই লড়াই একা হলেও চালিয়ে নিতে চায়। কিন্তু কতক্ষণ তারা ইসরায়েলের সামনে টিকবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আরটি, আনাদোলু এজেন্সি, আল-জাজিরা, দ্য ইকোনমিস্ট ও আটলান্টিক কাউন্সিল
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২০ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে