অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন-সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য, ডিপফেক ও ভিত্তিহীন তত্ত্ব শেয়ার করে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) কিছু ব্যবহারকারী। আর এর মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি থেকে ‘হাজার হাজার ডলার’ উপার্জন করছে অনেকে। বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিবিসির প্রতিবেদক কয়েক ডজন অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছে, যেগুলো অন্যদের কনটেন্ট দিনের বিভিন্ন সময়ে শেয়ার করে। এগুলোর মধ্যে সত্য, মিথ্যা, ভুয়া ও বানোয়াট কনটেন্ট রয়েছে। নিজের অ্যাকাউন্টের রিচ বাড়ানোর জন্য এসব কনটেন্ট শেয়ার করা হয়। আর এভাবে আয়ও হয়।
কিছু ব্যবহারকারী বলছেন, তাঁদের এবং অন্যান্য অ্যাকাউন্ট থেকে উপার্জন কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
তাঁরা বিভিন্ন ফোরাম এবং গ্রুপ চ্যাটে একে অপরের পোস্ট শেয়ার করার বিষয়টি সমন্বয় করেন। এক্স ব্যবহারকারী বলেন, ‘এটা একে অপরকে সাহায্য করার একটি উপায়!’
এই নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে কিছু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করে, অন্যরা কমলা হ্যারিসের সমর্থক। আবার এমন অনেকে আছেন, যাঁরা কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন করেন না।
অবশ্য সমর্থক প্রোফাইলগুলো দাবি করে, তারা কোনো প্রার্থীর অফিশিয়াল ক্যাম্পেইনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তবে তাদের সঙ্গে মার্কিন রাজনীতিবিদেরা যোগাযোগ করেন।
গত ৯ অক্টোবর নীতিমালা পরিবর্তন করে এক্স। নতুন নীতিমালা অনুসারে, যাতে যোগ্য অ্যাকাউন্টগুলোর প্রদত্ত অর্থ প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীদের থেকে আসা লাইক, শেয়ার এবং মন্তব্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়, পোস্টের নিচে বিজ্ঞাপনের সংখ্যার ভিত্তিতে নয়।
বহু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীকে পোস্ট থেকে অর্থ উপার্জন বা স্পনসর করা কনটেন্ট শেয়ারের সুযোগ দেয়। তবে মিথ্যা তথ্য পোস্ট করা প্রোফাইলগুলোকে ডি–মনিটাইজ বা স্থগিত করার বিধানও এসব প্ল্যাটফর্মে রয়েছে। কিন্তু ভুয়া তথ্য শেয়ারের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা এক্সে নেই।
যদিও এক্সের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্যগুলোর তুলনায় কম। তবে রাজনৈতিক আলাপচারিতায় এক্স বেশ প্রভাবশালী। মার্কিন রাজনীতির এই সংবেদনশীল মুহূর্তে ব্যবহারকারীদের উসকানিমূলক কনটেন্ট পোস্ট করতে এক্স উৎসাহিত করছে কি না, তা এখন মূল প্রশ্ন।
ব্যবহারকারীর প্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টটির দর্শক, ফলোয়ার ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে তারা কতটা টাকা উপার্জন করতে সক্ষম—তার তুলনা করেছেন বিবিসির প্রতিবেদক। তাদের প্রতীয়মান হয়েছে, ব্যবহারকারীদের প্রদর্শিত তথ্যের সত্যতা রয়েছে।
কিছু বিভ্রান্তিকর পোস্টে ভোট জালিয়াতির দাবি করা হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ-সংক্রান্ত পোস্টও রয়েছে।
এক্সের পোস্টগুলো পরবর্তীকালে ফেসবুক ও টিকটকের মতো বড় প্ল্যাটফর্মেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এক্সে এক ব্যবহারকারী কমলা হ্যারিসের একটি ছবি এডিট করেছে। সেই ছবিতে দেখা যায়, তরুণ বয়সে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মী ছিলেন কমলা। পরে অন্য ব্যবহারকারীরা কোনো প্রমাণ ছাড়া দাবি করেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের প্রার্থীর আগের ছবিগুলো পরিবর্তন করছে।
গত জুলাই মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বমূলক পোস্ট এক্স প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় সেগুলোও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি এক্স।
এক্সে ‘ফ্রিডম লেয়ার’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন ‘ফ্রি’ (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি। তিনি এক্সে বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্টের জন্য দৈনিক ১৬ ঘণ্টা ব্যয় করেন। তিনি অন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং এআই দিয়ে বিভিন্ন ছবি তৈরি করেন। তাঁর মতে, তিনি একজন স্বাধীন নেটিজেন। তবে প্রেসিডেন্টের যোগ্যতায় কমলা হ্যারিসের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখেন তিনি। তিনি বিবিসিকে এই ধরনের অ্যাকাউন্ট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
গত কয়েক মাসে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করে তাঁর অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১০ লাখ ভিউ পেয়েছেন। এসব কনটেন্টের মধ্যে অনেকগুলোই ব্যঙ্গাত্মক। যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনেমার নায়কদের মতো বন্দুকের গুলি পাশ কাটাচ্ছেন; প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘স্বৈরাচারীর’ বেশে দেখানো হয়েছে।
আবার এআই দিয়ে বানানো কিছু ছবি কম বাস্তবসম্মত। যেমন: একজন ব্যক্তি পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়ির ছাদে বসে আছেন এবং যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে যাচ্ছে। এসব ছবির সঙ্গে বিভিন্ন টেক্সটও জুড়ে দেওয়া হয়। যেমন: ‘মনে রাখবেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনীতিবিদদের আসলে আপনার প্রতি কোনো খেয়াল নেই।’
ফ্রি বলেন, এক্সে তাঁর অ্যাকাউন্ট মনিটাইজ হওয়ার পর তিনি প্ল্যাটফর্মটি থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার ডলার উপার্জন করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষের জন্য টাকা উপার্জন অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিছু ব্যবহারকারী পাঁচ অঙ্কের টাকাও কামাচ্ছে। আর “বিভ্রান্তিকর” কনটেন্টই বেশি ভিউ পায়! বিষয়টিতে মিডিয়ার “চাঞ্চল্যকর” কনটেন্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট প্রকাশ করে। কেউ কেউ বাস্তব ঘটনাই ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে। আবার অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন পোস্ট শেয়ার করা হয়, যেগুলো অসত্য। এটি এখন ‘অর্থ উপার্জনের’ সহজ উপায়।
মিথ্যা তথ্য ছড়ানো নিয়ে মানুষের উদ্বেগকে অত গুরুত্ব দিতে চান না ‘ফ্রি’। তিনি বলেন, সরকার পুরো ইন্টারনেটের চেয়ে বেশি মিথ্যা তথ্য ছড়ায়!
তিনি আরও বলেন, এমন অ্যাকাউন্টগুলোর কাছে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সমর্থন চাওয়া ‘খুব সাধারণ’ বিষয়। তিনি জানান, এই রাজনীতিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর লাইভ স্ট্রিমে যুক্ত থাকতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁদের প্রচারণার জন্য মিম, এআই ছবি এবং শিল্পকর্ম তৈরি ও শেয়ার করার ব্যাপারেও তাঁরা আলোচনা করেছেন।
আরেক এক্স অ্যাকাউন্ট ‘ব্রাউন আইড সুসান’–এর ২ লাখেরও বেশি ফলোয়ার। যারা ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস সমর্থনে কনটেন্ট পোস্ট করে সেই নেটওয়ার্কের অংশ এই অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্টের মালিক নিজের নাম প্রোফাইলে ব্যবহার করলেও নিরাপত্তার কারণে নিজের পদবি শেয়ার করেননি।
সুসান কখনো নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করেননি। তবে তাঁর পোস্টগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মধ্যে তিনি দিনে ১০০–এর বেশি মেসেজ ও পোস্ট শেয়ার করেন। তাঁর একটি পোস্টের রিচ কখনো কখনো ২০ লাখেরও বেশি হয়।
তাঁর অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড হওয়ার কারণে তিনি পোস্ট থেকে আয় করতে পারেন। অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে কয়েকশ ডলার আয় করতে পারেন। তাঁর ভাইরাল পোস্টগুলো ৩০ লাখেরও বেশি ভিউ হয়েছে। এসব পোস্টের বেশির ভাগেই বলা হয়, জুলাইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা ছিল সাজানো নাটক।
সুসানও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীকে লক্ষ্য করে মিম শেয়ার করেন, যার মধ্যে কিছু এআই দিয়ে তৈরি। এসব ছবিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেশি বয়সী বা অসুস্থ দেখায়। এগুলো ‘ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থার চিত্র’ বলে প্রচার করেন সুসান।
অন্যান্য ছবিতে ট্রাম্পকে ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবেও তুলে ধরা হয়।
ফ্রিডম আনকাটের মতো রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেস প্রার্থীরা (এমপি) সমর্থনের জন্য সুসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি তাঁদের জন্য ‘যতটা সম্ভব সচেতনতা ছড়ানোর’ চেষ্টা করেন।
কমলা হ্যারিসের ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করা নিয়ে বিতর্কের পর তাঁর সমর্থকেরা ফাস্ট ফুড চেইনটির ইউনিফর্মে একটি এডিটেড ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন, যা ভাইরাল হয়ে যায়। এটি অন্য একজন নারীর এডিটেড ছবি বলে ট্রাম্পের সমর্থনকারীরা বুঝতে পারে। তখন তাঁরা ডেমোক্র্যাট পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁরা বলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি নিজেরাই এই ছবি ছড়িয়েছে।
এক্সে ‘দ্য ইনফিনিট ডুড’ নামে অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি শেয়ার করে বলে, ‘এটি ভুয়া।’ যিনি ছবিটি তৈরি করেছেন তিনিই বলেন, ছবিটি একটি নিরীক্ষার অংশ হিসেবে শেয়ার করেছেন। তাঁর কাছে ছবির ‘মূল ফাইল ও ছবিটি তৈরির সময়ের জলছাপ রয়েছে’। তবে তিনি সেগুলো শেয়ার করেননি। কারণ এসব প্রমাণের তেমন গুরুত্ব নেই বলে তিনি মনে করেন। ।
তিনি বলেন, ‘মানুষ সত্য কনটেন্ট নয়, বরং যা সত্য বলে ভাবতে চায় সেই কনটেন্ট শেয়ার করে। দুই পক্ষই এটা করে। তবে তারা ভিন্ন গল্প বিশ্বাস করতে চায়।’ তিনি বলেন, এটি কোনো রাজনীতির বিষয় নয়!
এক্স বলছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা। তারা কিছু এআই দিয়ে তৈরি এবং সম্পাদিত ভিডিও, অডিও ও ছবিতে লেবেল সেঁটে দেয়। কোম্পানিটির কমিউনিটি নোটস নামে একটি ফিচার রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের সময়, ভুয়া ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করার কারণে এক্স একটি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন-সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য, ডিপফেক ও ভিত্তিহীন তত্ত্ব শেয়ার করে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) কিছু ব্যবহারকারী। আর এর মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি থেকে ‘হাজার হাজার ডলার’ উপার্জন করছে অনেকে। বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিবিসির প্রতিবেদক কয়েক ডজন অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছে, যেগুলো অন্যদের কনটেন্ট দিনের বিভিন্ন সময়ে শেয়ার করে। এগুলোর মধ্যে সত্য, মিথ্যা, ভুয়া ও বানোয়াট কনটেন্ট রয়েছে। নিজের অ্যাকাউন্টের রিচ বাড়ানোর জন্য এসব কনটেন্ট শেয়ার করা হয়। আর এভাবে আয়ও হয়।
কিছু ব্যবহারকারী বলছেন, তাঁদের এবং অন্যান্য অ্যাকাউন্ট থেকে উপার্জন কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
তাঁরা বিভিন্ন ফোরাম এবং গ্রুপ চ্যাটে একে অপরের পোস্ট শেয়ার করার বিষয়টি সমন্বয় করেন। এক্স ব্যবহারকারী বলেন, ‘এটা একে অপরকে সাহায্য করার একটি উপায়!’
এই নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে কিছু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করে, অন্যরা কমলা হ্যারিসের সমর্থক। আবার এমন অনেকে আছেন, যাঁরা কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন করেন না।
অবশ্য সমর্থক প্রোফাইলগুলো দাবি করে, তারা কোনো প্রার্থীর অফিশিয়াল ক্যাম্পেইনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তবে তাদের সঙ্গে মার্কিন রাজনীতিবিদেরা যোগাযোগ করেন।
গত ৯ অক্টোবর নীতিমালা পরিবর্তন করে এক্স। নতুন নীতিমালা অনুসারে, যাতে যোগ্য অ্যাকাউন্টগুলোর প্রদত্ত অর্থ প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীদের থেকে আসা লাইক, শেয়ার এবং মন্তব্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়, পোস্টের নিচে বিজ্ঞাপনের সংখ্যার ভিত্তিতে নয়।
বহু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীকে পোস্ট থেকে অর্থ উপার্জন বা স্পনসর করা কনটেন্ট শেয়ারের সুযোগ দেয়। তবে মিথ্যা তথ্য পোস্ট করা প্রোফাইলগুলোকে ডি–মনিটাইজ বা স্থগিত করার বিধানও এসব প্ল্যাটফর্মে রয়েছে। কিন্তু ভুয়া তথ্য শেয়ারের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা এক্সে নেই।
যদিও এক্সের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্যগুলোর তুলনায় কম। তবে রাজনৈতিক আলাপচারিতায় এক্স বেশ প্রভাবশালী। মার্কিন রাজনীতির এই সংবেদনশীল মুহূর্তে ব্যবহারকারীদের উসকানিমূলক কনটেন্ট পোস্ট করতে এক্স উৎসাহিত করছে কি না, তা এখন মূল প্রশ্ন।
ব্যবহারকারীর প্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টটির দর্শক, ফলোয়ার ও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে তারা কতটা টাকা উপার্জন করতে সক্ষম—তার তুলনা করেছেন বিবিসির প্রতিবেদক। তাদের প্রতীয়মান হয়েছে, ব্যবহারকারীদের প্রদর্শিত তথ্যের সত্যতা রয়েছে।
কিছু বিভ্রান্তিকর পোস্টে ভোট জালিয়াতির দাবি করা হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ-সংক্রান্ত পোস্টও রয়েছে।
এক্সের পোস্টগুলো পরবর্তীকালে ফেসবুক ও টিকটকের মতো বড় প্ল্যাটফর্মেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এক্সে এক ব্যবহারকারী কমলা হ্যারিসের একটি ছবি এডিট করেছে। সেই ছবিতে দেখা যায়, তরুণ বয়সে ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মী ছিলেন কমলা। পরে অন্য ব্যবহারকারীরা কোনো প্রমাণ ছাড়া দাবি করেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের প্রার্থীর আগের ছবিগুলো পরিবর্তন করছে।
গত জুলাই মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বমূলক পোস্ট এক্স প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় সেগুলোও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি এক্স।
এক্সে ‘ফ্রিডম লেয়ার’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন ‘ফ্রি’ (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি। তিনি এক্সে বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্টের জন্য দৈনিক ১৬ ঘণ্টা ব্যয় করেন। তিনি অন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং এআই দিয়ে বিভিন্ন ছবি তৈরি করেন। তাঁর মতে, তিনি একজন স্বাধীন নেটিজেন। তবে প্রেসিডেন্টের যোগ্যতায় কমলা হ্যারিসের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখেন তিনি। তিনি বিবিসিকে এই ধরনের অ্যাকাউন্ট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
গত কয়েক মাসে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করে তাঁর অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১০ লাখ ভিউ পেয়েছেন। এসব কনটেন্টের মধ্যে অনেকগুলোই ব্যঙ্গাত্মক। যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনেমার নায়কদের মতো বন্দুকের গুলি পাশ কাটাচ্ছেন; প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘স্বৈরাচারীর’ বেশে দেখানো হয়েছে।
আবার এআই দিয়ে বানানো কিছু ছবি কম বাস্তবসম্মত। যেমন: একজন ব্যক্তি পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়ির ছাদে বসে আছেন এবং যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে যাচ্ছে। এসব ছবির সঙ্গে বিভিন্ন টেক্সটও জুড়ে দেওয়া হয়। যেমন: ‘মনে রাখবেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনীতিবিদদের আসলে আপনার প্রতি কোনো খেয়াল নেই।’
ফ্রি বলেন, এক্সে তাঁর অ্যাকাউন্ট মনিটাইজ হওয়ার পর তিনি প্ল্যাটফর্মটি থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার ডলার উপার্জন করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষের জন্য টাকা উপার্জন অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিছু ব্যবহারকারী পাঁচ অঙ্কের টাকাও কামাচ্ছে। আর “বিভ্রান্তিকর” কনটেন্টই বেশি ভিউ পায়! বিষয়টিতে মিডিয়ার “চাঞ্চল্যকর” কনটেন্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট প্রকাশ করে। কেউ কেউ বাস্তব ঘটনাই ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে। আবার অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন পোস্ট শেয়ার করা হয়, যেগুলো অসত্য। এটি এখন ‘অর্থ উপার্জনের’ সহজ উপায়।
মিথ্যা তথ্য ছড়ানো নিয়ে মানুষের উদ্বেগকে অত গুরুত্ব দিতে চান না ‘ফ্রি’। তিনি বলেন, সরকার পুরো ইন্টারনেটের চেয়ে বেশি মিথ্যা তথ্য ছড়ায়!
তিনি আরও বলেন, এমন অ্যাকাউন্টগুলোর কাছে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সমর্থন চাওয়া ‘খুব সাধারণ’ বিষয়। তিনি জানান, এই রাজনীতিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর লাইভ স্ট্রিমে যুক্ত থাকতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁদের প্রচারণার জন্য মিম, এআই ছবি এবং শিল্পকর্ম তৈরি ও শেয়ার করার ব্যাপারেও তাঁরা আলোচনা করেছেন।
আরেক এক্স অ্যাকাউন্ট ‘ব্রাউন আইড সুসান’–এর ২ লাখেরও বেশি ফলোয়ার। যারা ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস সমর্থনে কনটেন্ট পোস্ট করে সেই নেটওয়ার্কের অংশ এই অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্টের মালিক নিজের নাম প্রোফাইলে ব্যবহার করলেও নিরাপত্তার কারণে নিজের পদবি শেয়ার করেননি।
সুসান কখনো নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করেননি। তবে তাঁর পোস্টগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মধ্যে তিনি দিনে ১০০–এর বেশি মেসেজ ও পোস্ট শেয়ার করেন। তাঁর একটি পোস্টের রিচ কখনো কখনো ২০ লাখেরও বেশি হয়।
তাঁর অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড হওয়ার কারণে তিনি পোস্ট থেকে আয় করতে পারেন। অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে কয়েকশ ডলার আয় করতে পারেন। তাঁর ভাইরাল পোস্টগুলো ৩০ লাখেরও বেশি ভিউ হয়েছে। এসব পোস্টের বেশির ভাগেই বলা হয়, জুলাইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা ছিল সাজানো নাটক।
সুসানও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীকে লক্ষ্য করে মিম শেয়ার করেন, যার মধ্যে কিছু এআই দিয়ে তৈরি। এসব ছবিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেশি বয়সী বা অসুস্থ দেখায়। এগুলো ‘ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থার চিত্র’ বলে প্রচার করেন সুসান।
অন্যান্য ছবিতে ট্রাম্পকে ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবেও তুলে ধরা হয়।
ফ্রিডম আনকাটের মতো রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেস প্রার্থীরা (এমপি) সমর্থনের জন্য সুসানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি তাঁদের জন্য ‘যতটা সম্ভব সচেতনতা ছড়ানোর’ চেষ্টা করেন।
কমলা হ্যারিসের ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করা নিয়ে বিতর্কের পর তাঁর সমর্থকেরা ফাস্ট ফুড চেইনটির ইউনিফর্মে একটি এডিটেড ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন, যা ভাইরাল হয়ে যায়। এটি অন্য একজন নারীর এডিটেড ছবি বলে ট্রাম্পের সমর্থনকারীরা বুঝতে পারে। তখন তাঁরা ডেমোক্র্যাট পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁরা বলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি নিজেরাই এই ছবি ছড়িয়েছে।
এক্সে ‘দ্য ইনফিনিট ডুড’ নামে অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি শেয়ার করে বলে, ‘এটি ভুয়া।’ যিনি ছবিটি তৈরি করেছেন তিনিই বলেন, ছবিটি একটি নিরীক্ষার অংশ হিসেবে শেয়ার করেছেন। তাঁর কাছে ছবির ‘মূল ফাইল ও ছবিটি তৈরির সময়ের জলছাপ রয়েছে’। তবে তিনি সেগুলো শেয়ার করেননি। কারণ এসব প্রমাণের তেমন গুরুত্ব নেই বলে তিনি মনে করেন। ।
তিনি বলেন, ‘মানুষ সত্য কনটেন্ট নয়, বরং যা সত্য বলে ভাবতে চায় সেই কনটেন্ট শেয়ার করে। দুই পক্ষই এটা করে। তবে তারা ভিন্ন গল্প বিশ্বাস করতে চায়।’ তিনি বলেন, এটি কোনো রাজনীতির বিষয় নয়!
এক্স বলছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা। তারা কিছু এআই দিয়ে তৈরি এবং সম্পাদিত ভিডিও, অডিও ও ছবিতে লেবেল সেঁটে দেয়। কোম্পানিটির কমিউনিটি নোটস নামে একটি ফিচার রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের সময়, ভুয়া ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করার কারণে এক্স একটি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৪ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৭ দিন আগে