অনলাইন ডেস্ক
তেলআবিবের আকাশে যখন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রবেশ করছিল, তখন একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এতদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, অবশেষে তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
বিগত ছয় মাসের মধ্যে এটি ইসরায়েলে ইরানের দ্বিতীয় হামলা। প্রথমবার যখন ইরান দেশটিতে হামলা চালায় তখন বেশ কয়েক দিনের পূর্ব সতর্কতা ছিল। কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি। সেবার ইরান তুলনামূলক ধীর গতির ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছিল। টার্গেট ছিল, ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি।
তবে এবার ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামোর পাশাপাশি জনবহুল এলাকায়ও আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলেছে, এই হামলা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু বাস্তবতার আলোকে এটি স্পষ্ট যে, জনবহুল শহর আক্রান্ত হলে তা রক্ষা করা ইসরায়েলের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এপ্রিল মাসে ইরান যে, হামলা চালিয়েছিল, তার জবাবে ইসরায়েল দেশটির ইস্পাহান সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। যদিও সেই হামলা ছিল অনেকটাই ‘নাটকীয়’ বা লোক দেখানো।
তবে গত মঙ্গলবার রাতে ইরানের হামলা ইসরায়েলি জনগণকে শক্ত হুমকি দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরও ব্যাপক কড়া জবাব দেবেন বলেই অনুমান করা যায়। এরই মধ্যে একাধিক পরিকল্পনা আলোচনার টেবিলে তোলা হয়েছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সেখান থেকে কোনো একটি বেছে নেবে। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েল ইরানে বড় কোনো অবকাঠামো টার্গেট করতে পারে। এমনকি তা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোও হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার ইরান ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছে, সে ব্যাপারে হোয়াইট হাউসই সবার আগে সতর্ক করেছিল। তাদের হয়তো ক্ষীণ আশাও ছিল যে, এই আকস্মিক আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র হামলার পরপরই তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে এই বিষয়ে, এটা জানাতে যে—তারা এই হামলায় অবাক হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মূলত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলেই এমনটা করেছে।
ইসরায়েলে ইরানের হামলা যেমন মধ্যপ্রাচ্য বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও এক বিশাল ধামাকার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, এই হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে যার মাত্র ৫ সপ্তাহ পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেখানে বিশ্বব্যাপী চাপে থাকা ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে লড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারেনি। সর্বশেষ, লেবাননে যুদ্ধবিরতি আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের যৌথ প্রচেষ্টাও ভন্ডুল করে দিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও ব্যর্থ হয়েছে। গত শুক্রবার যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিচ্ছিলেন তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির বিমানবাহিনী লেবাননে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে। ইরান বলেছে, মঙ্গলবার রাতের হামলা নাসরুল্লাহ ও হামাসের প্রয়াত প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার প্রতিশোধ। এই দুজনই ইরানের খুব ঘনিষ্ঠ নেতা ছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই বাইডেন এই ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি এই যুদ্ধকে আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে দেননি। কিন্তু তাঁর এই কথার আর কোনো ওজন নেই বর্তমানে।
এপ্রিলে যখন ইরান ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা করেছিল সেই হামলা ঠেকাতে। আর সেই উপকারের প্রতিক্রিয়ায়, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছিল, তারা যেন ইরানে হামলার ক্ষেত্রে সংযম দেখায়। কিন্তু এবার হামলার আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে জানিয়েছে—তারা ইসরায়েলের ওপর তাদের প্রভাব আর ব্যবহার করতে পারবে না।
মধ্যপ্রাচ্য প্রতিটি মুহূর্তে ‘সংযম হারিয়ে ফেলছে’। ইরান যখন ইসরায়েলের শহরগুলোতে হামলা চালিয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র যে তেল আবিবকে আর বাধা দিতে পারবে সেটা না ভাবাই ভালো। বিপরীতে, ইরান ওপর (বিশেষ করে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনী—আইআরজিসির ওপর) চাপ ছিল, তার আঞ্চলিক প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে—হিজবুল্লাহ, হামাস, হুতি এবং অন্যান্য—দেখানো যে, তারা দুর্বল হয়ে পড়েনি। তারা এখনো আঞ্চলিক শক্তি এবং প্রতিরোধ অক্ষের নেতা।
ইসরায়েলের ইরানি আক্রমণ নেতানিয়াহুর ওপর থেকে অনেক চাপ কমিয়ে দিয়েছে। কারণ, ইসরায়েল আক্রান্ত হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতানিয়াহুকে সংবরণ করানো কঠিন হবে। এমনকি তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীরাও তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করতে পারবে না এই মুহূর্তে।
অবশেষে আজ নেতানিয়াহু তাঁর দীর্ঘদিনের লালিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানকে একটি যুদ্ধে যুক্ত করে দিয়ে তেহরানের পারমাণবিক কর্মী ধ্বংস করার পরিকল্পনা তাঁর দীর্ঘদিনের। ইসরায়েলের আশঙ্কা ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুবই কাছে।
ইরানের সর্বশেষ হামলায় হয়তো খুব একটা প্রাণহানি হয়নি, ক্ষয়ক্ষতিও খুব একটা হয়নি। ইসরায়েল এই ভয়েই ভীত যে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাত্র ১২ মিনিটে তেল আবিব পৌঁছে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা হয়তো আরও বাড়বে এবং সেগুলোতে যদি এক বা একাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড যুক্ত থাকে তবে ইসরায়েলের পরিণতি কী হবে।
হামাস ও হিজবুল্লাহের বিরুদ্ধে ইসরায়েল তার ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। আর এখন তাতে ইরানও যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ইসরায়েলের যুক্তি হতে পারে, কেবল পারমাণবিক অস্ত্রই ইসরায়েলকে নিরাপদ ও শক্তিশালী রাখতে পারে। তবে ইসরায়েলের এই অবস্থান তেহরানে এই ভয়ও সৃষ্টি করতে পারে যে, ইসরায়েল যেকোনো সময় তার বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে।
এমন বিপজ্জনক সময়ে এই অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করেছে উত্তেজনার আগুন প্রশমনের জন্য। কিন্তু বর্তমানে যিনি ওভাল অফিসে বসে আছেন, তিনি এক ‘পঙ্গু হাস’ বা এক অক্ষম ব্যক্তিত্ব। তিনি এতটাই অক্ষম যে, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্য তাঁর দেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রের হাতে অপমানিত হয়েও অবলীলায় হজম করে গেছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা এস্টাবলিশমেন্ট বহুদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রিম পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে, এখন ইরানের হুমকির বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন—এমন একজনকেই তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক।
বাইডেন প্রশাসন বিদেশে সামরিক অভিযানের বিষয়টি যত্নের সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলেও হয়তো তাই করবেন। ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অনুভূতি কম থাকায় এই বিষয়টি আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে তাঁর প্রশাসনে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত যত বড় হবে কমলার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাও তত কমতে থাকবে। যা চূড়ান্তভাবে ট্রাম্পকেই এগিয়ে দেবে।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
তেলআবিবের আকাশে যখন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রবেশ করছিল, তখন একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এতদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, অবশেষে তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
বিগত ছয় মাসের মধ্যে এটি ইসরায়েলে ইরানের দ্বিতীয় হামলা। প্রথমবার যখন ইরান দেশটিতে হামলা চালায় তখন বেশ কয়েক দিনের পূর্ব সতর্কতা ছিল। কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি। সেবার ইরান তুলনামূলক ধীর গতির ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছিল। টার্গেট ছিল, ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি।
তবে এবার ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামোর পাশাপাশি জনবহুল এলাকায়ও আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দেশটির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলেছে, এই হামলা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু বাস্তবতার আলোকে এটি স্পষ্ট যে, জনবহুল শহর আক্রান্ত হলে তা রক্ষা করা ইসরায়েলের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এপ্রিল মাসে ইরান যে, হামলা চালিয়েছিল, তার জবাবে ইসরায়েল দেশটির ইস্পাহান সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। যদিও সেই হামলা ছিল অনেকটাই ‘নাটকীয়’ বা লোক দেখানো।
তবে গত মঙ্গলবার রাতে ইরানের হামলা ইসরায়েলি জনগণকে শক্ত হুমকি দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরও ব্যাপক কড়া জবাব দেবেন বলেই অনুমান করা যায়। এরই মধ্যে একাধিক পরিকল্পনা আলোচনার টেবিলে তোলা হয়েছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সেখান থেকে কোনো একটি বেছে নেবে। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েল ইরানে বড় কোনো অবকাঠামো টার্গেট করতে পারে। এমনকি তা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোও হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার ইরান ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছে, সে ব্যাপারে হোয়াইট হাউসই সবার আগে সতর্ক করেছিল। তাদের হয়তো ক্ষীণ আশাও ছিল যে, এই আকস্মিক আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র হামলার পরপরই তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে এই বিষয়ে, এটা জানাতে যে—তারা এই হামলায় অবাক হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মূলত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলেই এমনটা করেছে।
ইসরায়েলে ইরানের হামলা যেমন মধ্যপ্রাচ্য বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও এক বিশাল ধামাকার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, এই হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে যার মাত্র ৫ সপ্তাহ পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেখানে বিশ্বব্যাপী চাপে থাকা ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে লড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারেনি। সর্বশেষ, লেবাননে যুদ্ধবিরতি আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের যৌথ প্রচেষ্টাও ভন্ডুল করে দিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও ব্যর্থ হয়েছে। গত শুক্রবার যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিচ্ছিলেন তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির বিমানবাহিনী লেবাননে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে। ইরান বলেছে, মঙ্গলবার রাতের হামলা নাসরুল্লাহ ও হামাসের প্রয়াত প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার প্রতিশোধ। এই দুজনই ইরানের খুব ঘনিষ্ঠ নেতা ছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই বাইডেন এই ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি এই যুদ্ধকে আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে দেননি। কিন্তু তাঁর এই কথার আর কোনো ওজন নেই বর্তমানে।
এপ্রিলে যখন ইরান ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা করেছিল সেই হামলা ঠেকাতে। আর সেই উপকারের প্রতিক্রিয়ায়, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছিল, তারা যেন ইরানে হামলার ক্ষেত্রে সংযম দেখায়। কিন্তু এবার হামলার আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে জানিয়েছে—তারা ইসরায়েলের ওপর তাদের প্রভাব আর ব্যবহার করতে পারবে না।
মধ্যপ্রাচ্য প্রতিটি মুহূর্তে ‘সংযম হারিয়ে ফেলছে’। ইরান যখন ইসরায়েলের শহরগুলোতে হামলা চালিয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র যে তেল আবিবকে আর বাধা দিতে পারবে সেটা না ভাবাই ভালো। বিপরীতে, ইরান ওপর (বিশেষ করে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনী—আইআরজিসির ওপর) চাপ ছিল, তার আঞ্চলিক প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে—হিজবুল্লাহ, হামাস, হুতি এবং অন্যান্য—দেখানো যে, তারা দুর্বল হয়ে পড়েনি। তারা এখনো আঞ্চলিক শক্তি এবং প্রতিরোধ অক্ষের নেতা।
ইসরায়েলের ইরানি আক্রমণ নেতানিয়াহুর ওপর থেকে অনেক চাপ কমিয়ে দিয়েছে। কারণ, ইসরায়েল আক্রান্ত হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতানিয়াহুকে সংবরণ করানো কঠিন হবে। এমনকি তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীরাও তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করতে পারবে না এই মুহূর্তে।
অবশেষে আজ নেতানিয়াহু তাঁর দীর্ঘদিনের লালিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানকে একটি যুদ্ধে যুক্ত করে দিয়ে তেহরানের পারমাণবিক কর্মী ধ্বংস করার পরিকল্পনা তাঁর দীর্ঘদিনের। ইসরায়েলের আশঙ্কা ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুবই কাছে।
ইরানের সর্বশেষ হামলায় হয়তো খুব একটা প্রাণহানি হয়নি, ক্ষয়ক্ষতিও খুব একটা হয়নি। ইসরায়েল এই ভয়েই ভীত যে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাত্র ১২ মিনিটে তেল আবিব পৌঁছে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা হয়তো আরও বাড়বে এবং সেগুলোতে যদি এক বা একাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড যুক্ত থাকে তবে ইসরায়েলের পরিণতি কী হবে।
হামাস ও হিজবুল্লাহের বিরুদ্ধে ইসরায়েল তার ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। আর এখন তাতে ইরানও যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ইসরায়েলের যুক্তি হতে পারে, কেবল পারমাণবিক অস্ত্রই ইসরায়েলকে নিরাপদ ও শক্তিশালী রাখতে পারে। তবে ইসরায়েলের এই অবস্থান তেহরানে এই ভয়ও সৃষ্টি করতে পারে যে, ইসরায়েল যেকোনো সময় তার বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে।
এমন বিপজ্জনক সময়ে এই অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করেছে উত্তেজনার আগুন প্রশমনের জন্য। কিন্তু বর্তমানে যিনি ওভাল অফিসে বসে আছেন, তিনি এক ‘পঙ্গু হাস’ বা এক অক্ষম ব্যক্তিত্ব। তিনি এতটাই অক্ষম যে, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্য তাঁর দেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রের হাতে অপমানিত হয়েও অবলীলায় হজম করে গেছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা এস্টাবলিশমেন্ট বহুদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রিম পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে, এখন ইরানের হুমকির বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন—এমন একজনকেই তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক।
বাইডেন প্রশাসন বিদেশে সামরিক অভিযানের বিষয়টি যত্নের সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলেও হয়তো তাই করবেন। ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অনুভূতি কম থাকায় এই বিষয়টি আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে তাঁর প্রশাসনে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত যত বড় হবে কমলার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাও তত কমতে থাকবে। যা চূড়ান্তভাবে ট্রাম্পকেই এগিয়ে দেবে।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৪ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৭ দিন আগে