আব্দুর রহমান
চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ ইসরায়েলের নেগেভে হয়ে গেল আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্মেলন। মার্কিন উদ্যোগে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্য হওয়া চুক্তির পথ ধরে এ সম্মেলন হলো। আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এ উদ্যোগে প্রায় স্থায়ী ক্ষত হয়ে থাকা ফিলিস্তিন ইস্যু ঊহ্যই থেকে গেছে, যা এক ধরনের সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। এ উদ্যোগ সংকট নিরসনের বদলে নিরাপত্তা সংকটের মধ্য দিয়ে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের দিকে মধ্যপ্রাচ্যকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ওয়াশিংটন বেশ আগে থেকেই কাজ করছে। এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে সামনে আসে ইসরায়েল-ইউএই চুক্তি, যার প্রেক্ষাপটে রয়েছে কাতারের ওপর চার আরব দেশের অবরোধ। সমীকরণে ইরান অনুচ্চারিত, কিন্তু সবচেয়ে জোরাল পক্ষগুলোর একটি। কাতার অবরোধে চার আরব দেশের দেওয়া ১৩ শর্তের অন্যতম ছিল ইরানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কচ্ছেদ। সেটা না হলেও বিস্তর অস্ত্রবাণিজ্য হয়েছে। আর এটি করেছে মুখ্যত যুক্তরাষ্ট্র, ছিল রাশিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশও। এখন এই সময়ে এমন সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে অবধারিতভাবে দাঁড়াচ্ছে ইউক্রেন সংকট এবং সেই সূত্রে ধনী দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তা। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র সৌদি আরব যখন পিঠ না দেখালেও নির্লিপ্ত থাকে, তখন এ সম্মেলন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
ইব্রাহিমি তিন ধর্ম—ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলামের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে ‘গালভরা’ নাম দেওয়া হলেও আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মূল উদ্দেশ্য হলো আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলা। প্রশ্ন হলো—ফিলিস্তিন ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে নেগেভে হওয়া এই সম্মেলন কি মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে? এখনই এই প্রশ্নের জবাব না পাওয়া গেলেও এই সম্মেলন যে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে নিরাপত্তা সংকট উসকে দেবে এবং দেশগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন বাড়াবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞদের ধারণা—আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে কেন্দ্র করে হয়ে যাওয়া নেগেভ সম্মেলন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করবে।
নেগেভ সম্মেলনে ইসরায়েল, ইউএই ছাড়াও বাহরাইন, মিসর ও মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলন উত্তপ্ত আরব মরুর ভূ-রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনকে বাদ রেখেই (যুক্তরাষ্ট্রের) আরব মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করছে ইসরায়েল। অথচ, ইসরায়েলের নিকট প্রতিবেশী ফিলিস্তিনকে নিয়েই তিন তিনটি যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়েছে এই আরব দেশগুলোই। কালের পরিক্রমায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতিতে ক্রমেই ইসরায়েলের কাছে আসছে তার বৈরী দেশগুলো। বিপরীতে বিগত ৭৪ বছর ধরে নিজ ভূখণ্ডে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিরা ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই নৈকট্য ও দূরত্ব এত দিন প্রকাশ্যে ছিল না। এবার হলো। ফলে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের মৈত্রী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের আরও বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে—এই বিষয়টি নিশ্চিত। যে নিরাপত্তার কথা ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনিরা যে সেই নিরাপত্তার সংকটেই ভুগবে, তা একেবারেই আমলে নেওয়া হয়নি নেগেভ সম্মেলনে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো এবং বৈশ্বিক রাজনীতি বিশ্লেষণ বিষয়ক ম্যাগাজিন ফরেইন পলিসির সিনিয়র ফেলো পল আর পিলার মার্কিন পত্রিকা দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট-এ একটি নিবন্ধ লিখেছেন। ‘The Middle East Non-Peace Accords and Non-Cooperation on Russia’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস তৈরি করা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে। বছরের পর বছর ইসরায়েলের সরকারগুলো যখন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ করছে, সে সময় আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁদের সম্প্রসারিত সম্পর্ক উপভোগ করছে।
নেগেভ সম্মেলনটি এমন একটি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়নের সমাধি রয়েছে। বেন গুরিয়ন ১৯৪৮ সালের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনিই পরে ফিলিস্তিন থেকে ইসরায়েলে পরিণত হওয়া ভূমি থেকে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিদের ভয়ংকর জাতিগত নির্মূলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যা পরের সব ইসরায়েলি সরকারই অনুসরণ করেছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্মেলন যে ফিলিস্তিনিদের আরও শঙ্কায় ফেলবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ নিপীড়িত পক্ষকেই তথাকথিত ‘দ্বন্দ্ব নিরসন’ সম্মেলনে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
এই সম্মেলন এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডস প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছর আগেও এমন একটি সম্মেলন কল্পনা করাও অসম্ভব ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়াকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং করে যাবে—যা এই অঞ্চল এবং এর বাইরের অঞ্চলকেও বদলে দিচ্ছে।’
২০২০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের অধীনে ইউএই ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। মরক্কো তারপর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের মতো ঘটনাও ঘটেছিল ট্রাম্প জমানাতেই। নির্বাচনী প্রচারকালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদিও এ নিয়ে ভিন্ন পথে হাঁটার কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।
নেগেভ সম্মেলনের পর মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বোরিতা বলেন, ‘আমরা আজ এখানে এসেছি কারণ আমরা সত্যিকারের, আন্তরিকতাপূর্ণ শান্তিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এমন ধরনের নিষ্ক্রিয় শান্তি নয়, যেখানে আমরা একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই এবং শান্তিপূর্ণভাবে একে অপরকে উপেক্ষা করি। আমরা এই অঞ্চলে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ, ফলপ্রসূ, দৃষ্টান্তমূলক এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শান্তিতে বিশ্বাস করি।’ অথচ আরব সংকটের কারণ ফিলিস্তিনকে বাদ দিয়ে কীভাবে শান্তি আসবে এই অঞ্চলে তা মার্কিন বা মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কেউই বলেননি।
কাতারের নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের অধ্যাপক খালিদ আল রউব লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই-এ প্রকাশিত তাঁর ‘Naqab Summit: Arab autocrats hand over regional leadership to Israel’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে “ইরান ভীতি” এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল রাজনৈতিক পুঁজি ও আঞ্চলিক নেতৃত্ব করায়ত্ত করেছে, যা দেশটির স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।...এবং যত বেশি আরব স্বৈরাচারী শাসকেরা ইসরায়েলের অঘোষিত নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করছে—পুরো অঞ্চলজুড়ে হতাশা, ক্রোধ এবং বিশ্বাসঘাতকতার গভীর অনুভূতি তত বেড়েছে। এই ধরনের হতাশা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আরও বেশি গভীর, যা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর মরিয়া হামলার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।’
কেবল ফিলিস্তিন নয় এই অঞ্চলের আরেকটি শক্তিকেও আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের বাইরে রাখা হয়েছে—ইরান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে থাকা ছয় জাতি পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এই ইরানবিরোধী অক্ষ একত্রিত হয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক ইরানের পরমাণু চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ অক্ষ এখনো সক্রিয়। বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে থাকা ইরান-বিরোধী ঐক্য অক্ষুণ্ন রেখে পরমাণু কর্মসূচি থেকে ইরানকে নিরস্ত করার চেষ্টাকে দেশটি ভালো চোখে দেখার কোনো যুক্তি অবশিষ্ট নেই। বরং ইরান তার প্রভাব বলয় বজায় রাখা এবং তা আরও বৃদ্ধির দিকেই নজর দেওয়া স্বাভাবিক।
আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিসারা, ‘Towards a new Middle East Cold War’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইরানবিরোধী জোটের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সিরিয়া ও ইরাক এখনো ওই জোটের অংশ হয়নি এবং রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণে দেশ দুটি এখনো ইরানের দিকেই ঝুঁকছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে তেহরান আরও সাহসী হয়ে উঠলে এই দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
ইরান এরই মধ্যে ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়া ও চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কমপক্ষে তিনটি যৌথ নৌ-মহড়া পরিচালনা করেছে। গত বছর বেইজিংয়ের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিপরীতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু চুক্তি ইরানের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য ‘আরও সহিংস, আরও অস্থির’ হয়ে উঠবে।
মারওয়ান বিসারা তাঁর প্রবন্ধে বলছেন, ‘এটি নিছক ভবিষ্যদ্বাণী নয়; বরং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। কারণ, ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে মনে করে যে—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে যা যা করা দরকার, তা সে করবে। এবং ইয়েমেন, লেবানন, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা ও সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব কমাতে যা করতে হয়, তাও করবে।’
ইসরায়েলের মতো ইউএর ভয়ও একই জায়গায়। ইসরায়েল তার ঘোষিত মিত্র হওয়ার পর ইরান নিয়ে তার শঙ্কা বেড়েছে। দেশটি মনে করে, ইরান একটি নতুন পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পর আরও ধনী, শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত হবে। একই সঙ্গে চুক্তির শর্ত পরিপালনের পর ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির ওপর থেকে সমস্ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এমনিক বাইডেন প্রশাসন ‘নিরাপত্তা আশ্বাসে’র বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী তালিকা’ থেকে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের নাম সরিয়ে দেবে বলে ইসরায়েলের মতোই মনে করে ইউএই। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি জোর চেষ্টা করছেন ইসরায়েলকে এটা বোঝানোর জন্য যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখন কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয় ইরানের বিরুদ্ধেও একসঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু এতে এখন পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস এবং জেরুসালেম পোস্ট পৃথকভাবে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের সূত্র ধরে হয়ে যাওয়া নেগেভ সম্মেলনকে শান্তি এবং আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করছে। যদিও এই প্রক্রিয়া যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দুই হিস্যাকে বাদ দিয়ে করা হচ্ছে। এদিকে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো স্নায়ুযুদ্ধে ব্যস্ত। এই প্রতিটি পরিস্থিতি ও এর জের মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করছে, যা পুরো অঞ্চলকে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আরব মরুর বালি সময়ের সঙ্গে উত্তপ্ত থেকে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে অনেকের অগোচরেই। এই দুই অঞ্চলে বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যকার টানাপোড়েনের ফলে মূল্য চোকাতে হচ্ছে ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের।
চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ ইসরায়েলের নেগেভে হয়ে গেল আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্মেলন। মার্কিন উদ্যোগে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্য হওয়া চুক্তির পথ ধরে এ সম্মেলন হলো। আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এ উদ্যোগে প্রায় স্থায়ী ক্ষত হয়ে থাকা ফিলিস্তিন ইস্যু ঊহ্যই থেকে গেছে, যা এক ধরনের সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। এ উদ্যোগ সংকট নিরসনের বদলে নিরাপত্তা সংকটের মধ্য দিয়ে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের দিকে মধ্যপ্রাচ্যকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ওয়াশিংটন বেশ আগে থেকেই কাজ করছে। এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে সামনে আসে ইসরায়েল-ইউএই চুক্তি, যার প্রেক্ষাপটে রয়েছে কাতারের ওপর চার আরব দেশের অবরোধ। সমীকরণে ইরান অনুচ্চারিত, কিন্তু সবচেয়ে জোরাল পক্ষগুলোর একটি। কাতার অবরোধে চার আরব দেশের দেওয়া ১৩ শর্তের অন্যতম ছিল ইরানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কচ্ছেদ। সেটা না হলেও বিস্তর অস্ত্রবাণিজ্য হয়েছে। আর এটি করেছে মুখ্যত যুক্তরাষ্ট্র, ছিল রাশিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশও। এখন এই সময়ে এমন সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে অবধারিতভাবে দাঁড়াচ্ছে ইউক্রেন সংকট এবং সেই সূত্রে ধনী দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তা। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র সৌদি আরব যখন পিঠ না দেখালেও নির্লিপ্ত থাকে, তখন এ সম্মেলন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
ইব্রাহিমি তিন ধর্ম—ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলামের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে ‘গালভরা’ নাম দেওয়া হলেও আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মূল উদ্দেশ্য হলো আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলা। প্রশ্ন হলো—ফিলিস্তিন ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে নেগেভে হওয়া এই সম্মেলন কি মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে? এখনই এই প্রশ্নের জবাব না পাওয়া গেলেও এই সম্মেলন যে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে নিরাপত্তা সংকট উসকে দেবে এবং দেশগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন বাড়াবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞদের ধারণা—আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে কেন্দ্র করে হয়ে যাওয়া নেগেভ সম্মেলন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করবে।
নেগেভ সম্মেলনে ইসরায়েল, ইউএই ছাড়াও বাহরাইন, মিসর ও মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলন উত্তপ্ত আরব মরুর ভূ-রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনকে বাদ রেখেই (যুক্তরাষ্ট্রের) আরব মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করছে ইসরায়েল। অথচ, ইসরায়েলের নিকট প্রতিবেশী ফিলিস্তিনকে নিয়েই তিন তিনটি যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়েছে এই আরব দেশগুলোই। কালের পরিক্রমায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতিতে ক্রমেই ইসরায়েলের কাছে আসছে তার বৈরী দেশগুলো। বিপরীতে বিগত ৭৪ বছর ধরে নিজ ভূখণ্ডে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিরা ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই নৈকট্য ও দূরত্ব এত দিন প্রকাশ্যে ছিল না। এবার হলো। ফলে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের মৈত্রী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের আরও বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে—এই বিষয়টি নিশ্চিত। যে নিরাপত্তার কথা ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনিরা যে সেই নিরাপত্তার সংকটেই ভুগবে, তা একেবারেই আমলে নেওয়া হয়নি নেগেভ সম্মেলনে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো এবং বৈশ্বিক রাজনীতি বিশ্লেষণ বিষয়ক ম্যাগাজিন ফরেইন পলিসির সিনিয়র ফেলো পল আর পিলার মার্কিন পত্রিকা দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট-এ একটি নিবন্ধ লিখেছেন। ‘The Middle East Non-Peace Accords and Non-Cooperation on Russia’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস তৈরি করা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে। বছরের পর বছর ইসরায়েলের সরকারগুলো যখন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ করছে, সে সময় আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁদের সম্প্রসারিত সম্পর্ক উপভোগ করছে।
নেগেভ সম্মেলনটি এমন একটি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়নের সমাধি রয়েছে। বেন গুরিয়ন ১৯৪৮ সালের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনিই পরে ফিলিস্তিন থেকে ইসরায়েলে পরিণত হওয়া ভূমি থেকে বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিদের ভয়ংকর জাতিগত নির্মূলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যা পরের সব ইসরায়েলি সরকারই অনুসরণ করেছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্মেলন যে ফিলিস্তিনিদের আরও শঙ্কায় ফেলবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ নিপীড়িত পক্ষকেই তথাকথিত ‘দ্বন্দ্ব নিরসন’ সম্মেলনে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
এই সম্মেলন এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডস প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছর আগেও এমন একটি সম্মেলন কল্পনা করাও অসম্ভব ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়াকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং করে যাবে—যা এই অঞ্চল এবং এর বাইরের অঞ্চলকেও বদলে দিচ্ছে।’
২০২০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের অধীনে ইউএই ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। মরক্কো তারপর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের মতো ঘটনাও ঘটেছিল ট্রাম্প জমানাতেই। নির্বাচনী প্রচারকালে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদিও এ নিয়ে ভিন্ন পথে হাঁটার কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।
নেগেভ সম্মেলনের পর মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বোরিতা বলেন, ‘আমরা আজ এখানে এসেছি কারণ আমরা সত্যিকারের, আন্তরিকতাপূর্ণ শান্তিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এমন ধরনের নিষ্ক্রিয় শান্তি নয়, যেখানে আমরা একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই এবং শান্তিপূর্ণভাবে একে অপরকে উপেক্ষা করি। আমরা এই অঞ্চলে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ, ফলপ্রসূ, দৃষ্টান্তমূলক এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শান্তিতে বিশ্বাস করি।’ অথচ আরব সংকটের কারণ ফিলিস্তিনকে বাদ দিয়ে কীভাবে শান্তি আসবে এই অঞ্চলে তা মার্কিন বা মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কেউই বলেননি।
কাতারের নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের অধ্যাপক খালিদ আল রউব লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই-এ প্রকাশিত তাঁর ‘Naqab Summit: Arab autocrats hand over regional leadership to Israel’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে “ইরান ভীতি” এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল রাজনৈতিক পুঁজি ও আঞ্চলিক নেতৃত্ব করায়ত্ত করেছে, যা দেশটির স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।...এবং যত বেশি আরব স্বৈরাচারী শাসকেরা ইসরায়েলের অঘোষিত নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করছে—পুরো অঞ্চলজুড়ে হতাশা, ক্রোধ এবং বিশ্বাসঘাতকতার গভীর অনুভূতি তত বেড়েছে। এই ধরনের হতাশা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আরও বেশি গভীর, যা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর মরিয়া হামলার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।’
কেবল ফিলিস্তিন নয় এই অঞ্চলের আরেকটি শক্তিকেও আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের বাইরে রাখা হয়েছে—ইরান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে থাকা ছয় জাতি পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এই ইরানবিরোধী অক্ষ একত্রিত হয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক ইরানের পরমাণু চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ অক্ষ এখনো সক্রিয়। বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে থাকা ইরান-বিরোধী ঐক্য অক্ষুণ্ন রেখে পরমাণু কর্মসূচি থেকে ইরানকে নিরস্ত করার চেষ্টাকে দেশটি ভালো চোখে দেখার কোনো যুক্তি অবশিষ্ট নেই। বরং ইরান তার প্রভাব বলয় বজায় রাখা এবং তা আরও বৃদ্ধির দিকেই নজর দেওয়া স্বাভাবিক।
আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিসারা, ‘Towards a new Middle East Cold War’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইরানবিরোধী জোটের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সিরিয়া ও ইরাক এখনো ওই জোটের অংশ হয়নি এবং রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণে দেশ দুটি এখনো ইরানের দিকেই ঝুঁকছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে তেহরান আরও সাহসী হয়ে উঠলে এই দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
ইরান এরই মধ্যে ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়া ও চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কমপক্ষে তিনটি যৌথ নৌ-মহড়া পরিচালনা করেছে। গত বছর বেইজিংয়ের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিপরীতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু চুক্তি ইরানের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য ‘আরও সহিংস, আরও অস্থির’ হয়ে উঠবে।
মারওয়ান বিসারা তাঁর প্রবন্ধে বলছেন, ‘এটি নিছক ভবিষ্যদ্বাণী নয়; বরং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। কারণ, ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে মনে করে যে—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে যা যা করা দরকার, তা সে করবে। এবং ইয়েমেন, লেবানন, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা ও সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব কমাতে যা করতে হয়, তাও করবে।’
ইসরায়েলের মতো ইউএর ভয়ও একই জায়গায়। ইসরায়েল তার ঘোষিত মিত্র হওয়ার পর ইরান নিয়ে তার শঙ্কা বেড়েছে। দেশটি মনে করে, ইরান একটি নতুন পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পর আরও ধনী, শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত হবে। একই সঙ্গে চুক্তির শর্ত পরিপালনের পর ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির ওপর থেকে সমস্ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এমনিক বাইডেন প্রশাসন ‘নিরাপত্তা আশ্বাসে’র বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী তালিকা’ থেকে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের নাম সরিয়ে দেবে বলে ইসরায়েলের মতোই মনে করে ইউএই। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি জোর চেষ্টা করছেন ইসরায়েলকে এটা বোঝানোর জন্য যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখন কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয় ইরানের বিরুদ্ধেও একসঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু এতে এখন পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস এবং জেরুসালেম পোস্ট পৃথকভাবে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের সূত্র ধরে হয়ে যাওয়া নেগেভ সম্মেলনকে শান্তি এবং আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করছে। যদিও এই প্রক্রিয়া যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দুই হিস্যাকে বাদ দিয়ে করা হচ্ছে। এদিকে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো স্নায়ুযুদ্ধে ব্যস্ত। এই প্রতিটি পরিস্থিতি ও এর জের মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করছে, যা পুরো অঞ্চলকে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আরব মরুর বালি সময়ের সঙ্গে উত্তপ্ত থেকে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে অনেকের অগোচরেই। এই দুই অঞ্চলে বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যকার টানাপোড়েনের ফলে মূল্য চোকাতে হচ্ছে ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে