ফজলুল কবির
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথ নিয়ে বহু আগে থেকেই আলোচনা চলছিল। বাণিজ্যযুদ্ধ পেরিয়ে একটি আপাত শান্ত দশা এলেও তা শুধু উপরিতলেই। ভেতরে-ভেতরে এই দ্বৈরথ কখনো থামেনি। থামেনি যে, তা গত ১৫ সেপ্টেম্বর অকাস চুক্তিই বলে দিল। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই নতুন চুক্তিকে একুশ শতকের স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা বিন্দু হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই অকাস চুক্তি গোটা অঞ্চলকে এক জটিল গণিতের ফেরে এনে ফেলেছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বাণিজ্য যুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেশ উঠেছিল। সে সময়ের পরিস্থিতিকেই অনেকে নয়া-স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। কিন্তু তারপর বিষয়টি প্রকাশ্যে আর বেশি দূর গড়ায়নি। গোটা বিশ্ব এতে একটু হাঁফ ছাড়লেও সে স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে চীনকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া একটি বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তির কথা ঘোষণা করেছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর। ত্রিদেশীয় এই চুক্তির নাম ‘এইউকেইউএস’, যাকে অকাস চুক্তি হিসেবেই সাধারণভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এই চুক্তি এমন এক সময় ঘটল, যখন সারা বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও সেই প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতায় আবার তালেবানের ফেরা নিয়ে চরম সমালোচনার শিকার হয় বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কংগ্রেস শুনানিতে অংশ নিয়ে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তরও দিতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে—সবখানে এই সেনা প্রত্যাহারকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরাজয় হিসেবেই দেখা হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সবচেয়ে কঠিন ও অস্বস্তিকর যে প্রশ্নটি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে মোকাবিলা করতে হয়েছে, তা হলো—চীন ও রাশিয়ার হাতে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল কেন ছেড়ে এল ওয়াশিংটন? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নের তেমন জোরালো উত্তর তিনি দিতে পারেননি। তবে তারপরই এল ১৫ সেপ্টেম্বরের এই অকাস চুক্তির ঘোষণা, যা পুরো বিশ্বকে রীতিমতো স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপের সঙ্গে ১৯৫৬ সালের সুয়েজ খাল সংকট, ১৯৭২ সালের রিচার্ড নিক্সনের চীন সফর বা ১৯৮৯ সালের বার্লিন দেয়ালের পতনের পূর্বাপর তুলনীয় হতে পারে। এই প্রতিটি ঘটনাই গোটা বিশ্বের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ত্রিদেশীয় চুক্তিটি ঠিক এমনই এক বদলের আভাস নিয়ে এসেছে, যাকে চীন বর্ণনা করেছে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে।
কী আছে অকাস চুক্তিতে? এমনিতে বেশ সাদামাটা একটা ভাষ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণ করতে পারবে। এই চুক্তির আওতাধীন দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময় করবে। অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন বানাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন। আর এই সহায়তার যুক্তি হিসেবে বাইডেন বলেছেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতার কথা।
যুক্তরাষ্ট্র গত ৬০ বছরে যুক্তরাজ্য ছাড়া আর কারও সঙ্গে নিজেদের সাবমেরিন প্রযুক্তি ভাগ করেনি। কিন্তু এখন এমন কী হলো যে, এই প্রযুক্তি তারা অস্ট্রেলিয়াকে দিচ্ছে? তাও আবার এমনভাবে এই চুক্তি তারা করেছে যে, তা তাদের পরীক্ষিত ও পুরোনো মিত্র ফ্রান্সকে ভীষণভাবে চটিয়ে দিয়েছে। কারণ, এই চুক্তির ফলে ফ্রান্সের নকশা করা একটি সাবমেরিন তৈরির চুক্তি বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৬ সালে হওয়া ৪ হাজার কোটি ডলার অর্থমূল্যের ওই চুক্তি বাতিলের প্রত্যুত্তরে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছে ফ্রান্স। তবে লন্ডন থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে ফ্রান্সের বক্তব্য—ব্রিটেন এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির শিকার। তাদের মূল ক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ওপর। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভেস লে দ্রায়াঁ এই দুই দেশের আচরণকে পিঠে ছুরি মারার মতো বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এই দেশগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক ‘নজিরবিহীন খারাপ’ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাল।
চীন অবশ্য এই পদক্ষেপকে ‘সাবেকি স্নায়ুযুদ্ধের শূন্যগর্ভ পদক্ষেপের’ সঙ্গে তুলনা করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা এই চুক্তির কারণে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট হবে বলেও মন্তব্য করেছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়। এর সঙ্গে যখন চুক্তির ঘোষণার সময় ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও স্কট মরিসন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্তব্যকে যোগ করা হয়, তখন এই চুক্তির অভীষ্ট বুঝতে আর বাকি থাকে না। তাঁরা এই চুক্তিকে ‘শক্তির মহত্তম উৎস মিত্রতায় বিনিয়োগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফলে এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে এই অঞ্চলে ছড়ি ঘোরানোর নয়া-কৌশল করছে, তাতে কোনো সন্দেহ আর থাকে না। একই সঙ্গে কিছুদিন আগে ব্রিটিশ নৌবহরের দক্ষিণ চীন সাগরসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নৌপথ ঘুরে বেড়ানোও যে অকারণ ছিল না, তাও পরিষ্কার হয়ে যায়।
চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়াকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। আর এই চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে তারা অস্ট্রেলিয়ার নৌবহরে যোগ করছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন। মুখে এই ‘পারমাণবিক শক্তিচালিত’ কথাটি বলে তারা বাকিদের আশ্বস্ত করতে চায়। যেন পারমাণবিক শক্তিচালিত হওয়া মানে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত। কিন্তু বিষয়টি মোটেই তেমন কিছু নয়। উপরন্তু অস্ট্রেলিয়া নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতেও সই করেনি। ফলে এমন কোনো অস্ত্র যদি তাদের নৌবহরে যুক্ত হয়, তবে কোনো চুক্তিই ভঙ্গ হবে না।
ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নাটকীয় পদক্ষেপ। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত তার সামরিক প্রযুক্তি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ভাগ করে না। আর পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের প্রশ্ন এলে তো এটি একেবারে বিরল ঘটনা। গত ৬৩ বছরে একমাত্র যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তারা এমন প্রযুক্তি ভাগ করেছে। আর এখন এ তালিকায় যুক্ত হলো অস্ট্রেলিয়া। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, ‘স্বাধীন ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ বলতে তারা আসলে কী বোঝাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে চায়। তাদের এই পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই কোয়াডভুক্ত অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান—এই তিন দেশকে আশ্বস্ত করেছে। বলা প্রয়োজন যে, কোয়াডভুক্ত এই তিন দেশ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশল নির্ধারণী আলোচনায় বসছে। ত্রিদেশীয় এই চুক্তির কারণে আসন্ন এই আলোচনার গুরুত্ব এখন বহুগুণে বেড়ে গেল। কাবুল থেকে মিত্রদের রেখে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ায় যে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিমত্তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই দূরীভূত। বরং যুক্তরাষ্ট্র তার শক্তির খেলাটি এখন কোথায় দেখাবে, তা-ই অনেক বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বুঝিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রু ও মিত্র উভয়ের জন্যই আরও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে আসছে। কিন্তু এই বার্তা আবার বুমেরাংও হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এর মাধ্যমে পরীক্ষিত মিত্র ফ্রান্সকে চটিয়েছে ওয়াশিংটন। এটি নিঃসন্দেহে অন্য ফ্রন্টগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদে ফেলবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কথাই ধরা যাক। এই অঞ্চলে ফ্রান্সের রয়েছে ৭ হাজার সৈন্যের সমাবেশ। এই অঞ্চলের ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় রয়েছে ২০ লাখ ফরাসির বাস। ফলে ফ্রান্সকে ক্ষিপ্ত করার মূল্য চোকাতে হতে পারে এই অকাস চুক্তিতে থাকা দেশ তিনটিকে।
ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে গোটা ইউরোপের এখন সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। তারা তা কিছুটা বুঝতেও পারছে। মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই মার্কিন নির্ভরতার যে অন্তঃসারশূন্যতা সামনে আসছিল, তা বাইডেনের সময়ে খুব একটা উপশমের সুযোগ যে নেই, তা অন্তত পরিষ্কার হলো।
এ তো গেল ইউরোপের কথা। যে অঞ্চল ঘিরে এই পদক্ষেপ, সেখানে এর প্রভাব কী? এই অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু সিঙ্গাপুরই বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়নি। তারা এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এরই মধ্যে। বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার পারদ উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে থাকা দেশগুলোও এই পদক্ষেপে বেশ বিস্মিত হয়েছে। আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলো রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এ সম্পর্কিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো, বিশেষত জাকার্তা ও কুয়ালালামপুর মনে করছে, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আদতে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ সাবমেরিনই। তারা মনে করছে, পারমাণবিক শক্তিচালিত থেকে এই সাবমেরিনের অস্ত্রসমৃদ্ধ হয়ে ওঠাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, এর উন্নয়ন, মজুত, পরীক্ষা বা এর ব্যবহারের হুমকি প্রদান থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর এটিকেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছে দেশগুলো। যদিও ১৯৭৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিরোধ চুক্তি এবং ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা না করার চুক্তির (এনটিবিটি) প্রতি সম্মতি জানিয়েছিল দেশটি। কিন্তু এ দুটির কোনোটিতেই স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়ায় গত সপ্তাহে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির ওপরই গোটা বিশ্বকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে।
যদি পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টি বাদও দেওয়া হয়, তবুও এই চুক্তি পুরো অঞ্চলে এক নয়া অস্ত্র প্রতিযোগিতার কারণ হবে নিশ্চিতভাবে। কারণ, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিল যে, তারা চীনের সঙ্গে দ্বৈরথে দক্ষিণ চীন সাগরকেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। এদিকে এই অঞ্চলের দেশগুলো এই সাগরকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবেই দেখতে চায়। তারা এখানে কোনো বহিঃশক্তির প্রবেশ দেখতে চায় না। ১৯৯৫ সালে এই দেশগুলো ট্রিটি অব সাউথইস্ট এশিয়া নিউক্লিয়ার ওয়েপন ফ্রি-জোন নামের একটি চুক্তিতে সই করে। অবশ্য এতে পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশ সই করেনি। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো একই সঙ্গে এই অঞ্চলে চীন যে তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, তাও দেখতে চায় না। এ নিয়েও তারা অতীতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোয়াড ও অকাস চুক্তি মিলিয়ে এশিয়ায় মার্কিন মিত্ররা নতুন করে নড়েচড়ে বসল। চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ও মার্কিন মিত্র হিসেবে মঞ্চে হাজির হওয়া ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো তাদের কৌশলে এখন নতুন করে ঝালাই দিচ্ছে। চীনকে এখন সামরিকভাবে অনেকগুলো দিককে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল কতটা কার্যকর হয়, তা নিয়ে সংশয়ও বেশ রয়েছে। কারণ, চীনকে মোকাবিলায় জো বাইডেন প্রশাসনও শেষ পর্যন্ত সামরিক পথেই হাঁটল। আফগানিস্তান এক রকম চীনের প্রভাব বলয়ে তারা আগেই রেখে এসেছে। সেখানে চীনের সঙ্গে রয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রসঙ্গ একটু পাশে সরিয়ে রেখে শুধু চীনের সামরিক শক্তি ও কৌশলের দিকে তাকালেও বিষয়টি সহজ নয়। এর সঙ্গে যখন চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির বিষয়টি যুক্ত হবে, তখন যুক্তরাষ্ট্র একটু ব্যাকফুটে রয়েছে, মানতেই হবে। বিশেষত এই গোটা অঞ্চলে চীন শুধু অর্থনৈতিক বিনিয়োগ দিয়ে যে পরিমাণ জাল বিস্তার করেছে, তা ছিন্ন করাটা সহজ কিছু হবে না।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথ নিয়ে বহু আগে থেকেই আলোচনা চলছিল। বাণিজ্যযুদ্ধ পেরিয়ে একটি আপাত শান্ত দশা এলেও তা শুধু উপরিতলেই। ভেতরে-ভেতরে এই দ্বৈরথ কখনো থামেনি। থামেনি যে, তা গত ১৫ সেপ্টেম্বর অকাস চুক্তিই বলে দিল। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই নতুন চুক্তিকে একুশ শতকের স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা বিন্দু হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই অকাস চুক্তি গোটা অঞ্চলকে এক জটিল গণিতের ফেরে এনে ফেলেছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বাণিজ্য যুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেশ উঠেছিল। সে সময়ের পরিস্থিতিকেই অনেকে নয়া-স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। কিন্তু তারপর বিষয়টি প্রকাশ্যে আর বেশি দূর গড়ায়নি। গোটা বিশ্ব এতে একটু হাঁফ ছাড়লেও সে স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে চীনকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া একটি বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তির কথা ঘোষণা করেছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর। ত্রিদেশীয় এই চুক্তির নাম ‘এইউকেইউএস’, যাকে অকাস চুক্তি হিসেবেই সাধারণভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এই চুক্তি এমন এক সময় ঘটল, যখন সারা বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও সেই প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতায় আবার তালেবানের ফেরা নিয়ে চরম সমালোচনার শিকার হয় বাইডেন প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কংগ্রেস শুনানিতে অংশ নিয়ে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তরও দিতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে—সবখানে এই সেনা প্রত্যাহারকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরাজয় হিসেবেই দেখা হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সবচেয়ে কঠিন ও অস্বস্তিকর যে প্রশ্নটি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে মোকাবিলা করতে হয়েছে, তা হলো—চীন ও রাশিয়ার হাতে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল কেন ছেড়ে এল ওয়াশিংটন? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নের তেমন জোরালো উত্তর তিনি দিতে পারেননি। তবে তারপরই এল ১৫ সেপ্টেম্বরের এই অকাস চুক্তির ঘোষণা, যা পুরো বিশ্বকে রীতিমতো স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপের সঙ্গে ১৯৫৬ সালের সুয়েজ খাল সংকট, ১৯৭২ সালের রিচার্ড নিক্সনের চীন সফর বা ১৯৮৯ সালের বার্লিন দেয়ালের পতনের পূর্বাপর তুলনীয় হতে পারে। এই প্রতিটি ঘটনাই গোটা বিশ্বের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ত্রিদেশীয় চুক্তিটি ঠিক এমনই এক বদলের আভাস নিয়ে এসেছে, যাকে চীন বর্ণনা করেছে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে।
কী আছে অকাস চুক্তিতে? এমনিতে বেশ সাদামাটা একটা ভাষ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণ করতে পারবে। এই চুক্তির আওতাধীন দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময় করবে। অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন বানাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন। আর এই সহায়তার যুক্তি হিসেবে বাইডেন বলেছেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতার কথা।
যুক্তরাষ্ট্র গত ৬০ বছরে যুক্তরাজ্য ছাড়া আর কারও সঙ্গে নিজেদের সাবমেরিন প্রযুক্তি ভাগ করেনি। কিন্তু এখন এমন কী হলো যে, এই প্রযুক্তি তারা অস্ট্রেলিয়াকে দিচ্ছে? তাও আবার এমনভাবে এই চুক্তি তারা করেছে যে, তা তাদের পরীক্ষিত ও পুরোনো মিত্র ফ্রান্সকে ভীষণভাবে চটিয়ে দিয়েছে। কারণ, এই চুক্তির ফলে ফ্রান্সের নকশা করা একটি সাবমেরিন তৈরির চুক্তি বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৬ সালে হওয়া ৪ হাজার কোটি ডলার অর্থমূল্যের ওই চুক্তি বাতিলের প্রত্যুত্তরে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছে ফ্রান্স। তবে লন্ডন থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে ফ্রান্সের বক্তব্য—ব্রিটেন এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির শিকার। তাদের মূল ক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ওপর। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভেস লে দ্রায়াঁ এই দুই দেশের আচরণকে পিঠে ছুরি মারার মতো বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এই দেশগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক ‘নজিরবিহীন খারাপ’ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাল।
চীন অবশ্য এই পদক্ষেপকে ‘সাবেকি স্নায়ুযুদ্ধের শূন্যগর্ভ পদক্ষেপের’ সঙ্গে তুলনা করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা এই চুক্তির কারণে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট হবে বলেও মন্তব্য করেছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়। এর সঙ্গে যখন চুক্তির ঘোষণার সময় ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও স্কট মরিসন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্তব্যকে যোগ করা হয়, তখন এই চুক্তির অভীষ্ট বুঝতে আর বাকি থাকে না। তাঁরা এই চুক্তিকে ‘শক্তির মহত্তম উৎস মিত্রতায় বিনিয়োগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফলে এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে এই অঞ্চলে ছড়ি ঘোরানোর নয়া-কৌশল করছে, তাতে কোনো সন্দেহ আর থাকে না। একই সঙ্গে কিছুদিন আগে ব্রিটিশ নৌবহরের দক্ষিণ চীন সাগরসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নৌপথ ঘুরে বেড়ানোও যে অকারণ ছিল না, তাও পরিষ্কার হয়ে যায়।
চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়াকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। আর এই চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে তারা অস্ট্রেলিয়ার নৌবহরে যোগ করছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন। মুখে এই ‘পারমাণবিক শক্তিচালিত’ কথাটি বলে তারা বাকিদের আশ্বস্ত করতে চায়। যেন পারমাণবিক শক্তিচালিত হওয়া মানে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত। কিন্তু বিষয়টি মোটেই তেমন কিছু নয়। উপরন্তু অস্ট্রেলিয়া নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতেও সই করেনি। ফলে এমন কোনো অস্ত্র যদি তাদের নৌবহরে যুক্ত হয়, তবে কোনো চুক্তিই ভঙ্গ হবে না।
ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে ওঠা চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নাটকীয় পদক্ষেপ। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত তার সামরিক প্রযুক্তি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ভাগ করে না। আর পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের প্রশ্ন এলে তো এটি একেবারে বিরল ঘটনা। গত ৬৩ বছরে একমাত্র যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তারা এমন প্রযুক্তি ভাগ করেছে। আর এখন এ তালিকায় যুক্ত হলো অস্ট্রেলিয়া। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, ‘স্বাধীন ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ বলতে তারা আসলে কী বোঝাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে চায়। তাদের এই পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই কোয়াডভুক্ত অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান—এই তিন দেশকে আশ্বস্ত করেছে। বলা প্রয়োজন যে, কোয়াডভুক্ত এই তিন দেশ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশল নির্ধারণী আলোচনায় বসছে। ত্রিদেশীয় এই চুক্তির কারণে আসন্ন এই আলোচনার গুরুত্ব এখন বহুগুণে বেড়ে গেল। কাবুল থেকে মিত্রদের রেখে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ায় যে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিমত্তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই দূরীভূত। বরং যুক্তরাষ্ট্র তার শক্তির খেলাটি এখন কোথায় দেখাবে, তা-ই অনেক বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বুঝিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রু ও মিত্র উভয়ের জন্যই আরও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে আসছে। কিন্তু এই বার্তা আবার বুমেরাংও হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এর মাধ্যমে পরীক্ষিত মিত্র ফ্রান্সকে চটিয়েছে ওয়াশিংটন। এটি নিঃসন্দেহে অন্য ফ্রন্টগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদে ফেলবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কথাই ধরা যাক। এই অঞ্চলে ফ্রান্সের রয়েছে ৭ হাজার সৈন্যের সমাবেশ। এই অঞ্চলের ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় রয়েছে ২০ লাখ ফরাসির বাস। ফলে ফ্রান্সকে ক্ষিপ্ত করার মূল্য চোকাতে হতে পারে এই অকাস চুক্তিতে থাকা দেশ তিনটিকে।
ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে গোটা ইউরোপের এখন সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। তারা তা কিছুটা বুঝতেও পারছে। মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই মার্কিন নির্ভরতার যে অন্তঃসারশূন্যতা সামনে আসছিল, তা বাইডেনের সময়ে খুব একটা উপশমের সুযোগ যে নেই, তা অন্তত পরিষ্কার হলো।
এ তো গেল ইউরোপের কথা। যে অঞ্চল ঘিরে এই পদক্ষেপ, সেখানে এর প্রভাব কী? এই অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু সিঙ্গাপুরই বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়নি। তারা এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এরই মধ্যে। বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার পারদ উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে থাকা দেশগুলোও এই পদক্ষেপে বেশ বিস্মিত হয়েছে। আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলো রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এ সম্পর্কিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো, বিশেষত জাকার্তা ও কুয়ালালামপুর মনে করছে, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আদতে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ সাবমেরিনই। তারা মনে করছে, পারমাণবিক শক্তিচালিত থেকে এই সাবমেরিনের অস্ত্রসমৃদ্ধ হয়ে ওঠাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, এর উন্নয়ন, মজুত, পরীক্ষা বা এর ব্যবহারের হুমকি প্রদান থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর এটিকেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছে দেশগুলো। যদিও ১৯৭৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিরোধ চুক্তি এবং ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা না করার চুক্তির (এনটিবিটি) প্রতি সম্মতি জানিয়েছিল দেশটি। কিন্তু এ দুটির কোনোটিতেই স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়ায় গত সপ্তাহে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির ওপরই গোটা বিশ্বকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে।
যদি পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টি বাদও দেওয়া হয়, তবুও এই চুক্তি পুরো অঞ্চলে এক নয়া অস্ত্র প্রতিযোগিতার কারণ হবে নিশ্চিতভাবে। কারণ, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিল যে, তারা চীনের সঙ্গে দ্বৈরথে দক্ষিণ চীন সাগরকেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। এদিকে এই অঞ্চলের দেশগুলো এই সাগরকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবেই দেখতে চায়। তারা এখানে কোনো বহিঃশক্তির প্রবেশ দেখতে চায় না। ১৯৯৫ সালে এই দেশগুলো ট্রিটি অব সাউথইস্ট এশিয়া নিউক্লিয়ার ওয়েপন ফ্রি-জোন নামের একটি চুক্তিতে সই করে। অবশ্য এতে পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশ সই করেনি। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো একই সঙ্গে এই অঞ্চলে চীন যে তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, তাও দেখতে চায় না। এ নিয়েও তারা অতীতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোয়াড ও অকাস চুক্তি মিলিয়ে এশিয়ায় মার্কিন মিত্ররা নতুন করে নড়েচড়ে বসল। চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ও মার্কিন মিত্র হিসেবে মঞ্চে হাজির হওয়া ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো তাদের কৌশলে এখন নতুন করে ঝালাই দিচ্ছে। চীনকে এখন সামরিকভাবে অনেকগুলো দিককে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল কতটা কার্যকর হয়, তা নিয়ে সংশয়ও বেশ রয়েছে। কারণ, চীনকে মোকাবিলায় জো বাইডেন প্রশাসনও শেষ পর্যন্ত সামরিক পথেই হাঁটল। আফগানিস্তান এক রকম চীনের প্রভাব বলয়ে তারা আগেই রেখে এসেছে। সেখানে চীনের সঙ্গে রয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রসঙ্গ একটু পাশে সরিয়ে রেখে শুধু চীনের সামরিক শক্তি ও কৌশলের দিকে তাকালেও বিষয়টি সহজ নয়। এর সঙ্গে যখন চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির বিষয়টি যুক্ত হবে, তখন যুক্তরাষ্ট্র একটু ব্যাকফুটে রয়েছে, মানতেই হবে। বিশেষত এই গোটা অঞ্চলে চীন শুধু অর্থনৈতিক বিনিয়োগ দিয়ে যে পরিমাণ জাল বিস্তার করেছে, তা ছিন্ন করাটা সহজ কিছু হবে না।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২১ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে