মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
নারীর জন্য নিরাপদ একটি সমাজ গড়ার যে প্রত্যয় প্রায়ই উচ্চারিত হয়, তা এবারও ফাঁপা বুলি হিসেবে প্রমাণিত হলো। বছরের প্রতিটি মাস তো বটেই, প্রতিটি দিনই কোনো না কোনো অঞ্চল থেকে এসেছে নারীর নির্যাতিত হওয়ার খবর। এর মধ্যে ধর্ষণ তো এক ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মেয়েশিশু নির্যাতনের ঘটনাও ছিল ভীষণ উদ্বেগজনক। সারা বছর নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের এত এত খবর এসেছে যে, তা একধরনের নির্লিপ্ততা তৈরি করেছে সমাজের মধ্যে। এই নির্লিপ্ততা বলে দেয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে দমে দমে যে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়, তা একেবারেই অন্তঃসারশূন্য।
বছরের প্রায় প্রতিদিন খবরের পাতায় ধর্ষণ, পাশবিক নির্যাতন, দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের সময় ভিডিও ধারণ, সেই ভিডিও অনলাইনে প্রচার, শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা বা তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছিল। ফলে বিচারহীনতাই যেন একমাত্র বাস্তব হয়ে উঠেছে।
নারীরা আজ ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। বর্তমানের রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, বসতবাড়ি—সর্বত্র যে হারে নারী নির্যাতন হচ্ছে, তাতে নিরাপত্তা সম্পর্কিত তাবৎ বুলি অর্থহীন হয়ে পড়ছে। নারী নির্যাতনের কোনো এক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এসেছে অন্য এক ঘটনা। বছরের শেষ দিকে সারা দেশ যখন কক্সবাজারে এক নারী পর্যটকের দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে, তখনো দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসছে নানা বয়সী নারীর ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর। একটু উদাহরণ দেওয়া যাক। একই সময়ে বান্দরবানে ছেলেমেয়েকে বেঁধে রেখে প্রবাসীর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছিল, তার দিকে কিন্তু কেউ তাকানোর ফুরসত পায়নি। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, বাল্যবিবাহের সংখ্যার ভয়াবহ বৃদ্ধিও এখন আর কাউকে চমকে দেয় না। বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকেই শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের অনুপস্থিতির দিকে নজর গেছে। এ নিয়ে দু-একটি বক্তব্য ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ কিন্তু দেখা যায়নি।
২০২১ সালে ধর্ষণ, দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের সময় ভিডিও ধারণ, সেই ভিডিও অনলাইনে প্রচারের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ঘরের ভেতরেও শিক্ষার্থী, কিশোরী ও শিশুরা স্থানীয় বখাটের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
দেশের ৯টি পত্রিকা ও নিজেদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বছরের প্রথম ১১ মাসের নারী নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরেছে তাদের প্রতিবেদনে। আসকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মোট ১ হাজার ২৪৭টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা আছে ২৩৪টি। এর মধ্যে ৬ বছরের নিচের ৭৬টি শিশু এবং ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ১২৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরী রয়েছে ১৮৭ জন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে। ধর্ষণচেষ্টাকে এই তালিকায় ঢোকালে মোট ধর্ষণের সংখ্যা আরও ২৮৬টি বেড়ে যাবে।
এ তো ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার বিষয়। কিন্তু এই সমাজে নারী বহু কায়দায় নির্যাতনের শিকার হয়। ঘরে ও ঘরের বাইরে এই নির্যাতনের হাজারটা রকম রয়েছে। আসকের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে ১০ শতাংশ। পারিবারিক নির্যাতনকে ঘিরে হত্যা, আত্মহত্যাসহ মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে ৭ শতাংশ। যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ৪০ জন। মোট পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ৬০৮টি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুসারে, ঢাকায় গত বছরের তুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের মামলা ১৩ শতাংশ এবং যৌতুকের কারণে হত্যা মামলা ২০০ শতাংশ বেড়েছে। ধর্ষণের মামলা গত বছরের তুলনায় এই ১১ মাসে দুটি কম। ডিসেম্বর মাসের হিসাব যুক্ত করলে ধর্ষণের মামলাও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ১৩টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় বাল্যবিবাহ বেড়েছে ২৩৮ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বারবার সামনে এসেছে করোনা মহামারির বিষয়টি। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, দুই মিলিয়ে বাল্যবিবাহের এক নীরব মহামারির মধ্য দিয়ে গেছে পুরো দেশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পর থেকে বিষয়টি নজরে আসতে শুরু করে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই দেশে ১৮৫ জনের বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া গেছে। পুরো বছরে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই সংখ্যা ২৮৪ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। অথচ ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৪।
এক কথায়, পুরো বছরই নারী নির্যাতন এক প্রাত্যহিক বাস্তবতা হয়ে ছিল। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি নোয়াখালীতে গৃহবধূকে যৌন নির্যাতন এবং সেই নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে চলে আসে ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা। দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে আড়াল করে দেয়। এর মধ্যে এমন নয় যে, মাঝের ছয় দিন কোনো নারী বা শিশু নির্যাতিত হয়নি। হয়েছে। কিন্তু সড়কে মৃত্যুর মতোই নারী নির্যাতনও সংখ্যায় পরিণত হয়েছে। ফলে কলাবাগান বা নোয়াখালীর ঘটনা অনায়াসে আড়াল হয়ে যায় ১২ জানুয়ারি স্বামী তার বন্ধুদের নিয়ে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার নিচে। এরপর ২৮ জানুয়ারি আরেক কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। বন্দী রেখে একটানা চলতে থাকে এই নির্যাতন। চতুর্থ দিন পুলিশের সহায়তায় মুক্তি পেলে ঘটনাটি সামনে আসে।
হ্যাঁ, এভাবেই শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের প্রথম মাসটি। এভাবে একটি একটি করে দিন গেছে আর নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের খবরের পত্রিকার পাতা ভরে উঠেছে। এটা এতটাই যে বহু নির্যাতনের খবর শুধু চাপা পড়েছে স্থানের ওভাবে। এমনকি টেলিভিশন চ্যানেলের স্ক্রলেও জায়গা করে নিতে পারেনি বহু ঘটনা। কারণ, নির্যাতনই যখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়, তখন তো নির্যাতনের মাত্রা দিয়েই খবর-মূল্যের বিচার চলে।
আগেই বলা হয়েছে, বছরের শুরুই হয়েছিল ভয়াবহ এক যৌন নির্যাতনের খবর দিয়ে। শেষ হতে যাওয়া এ বছরের প্রথম দিন গত ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর হাতিয়ার চরচানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে স্থানীয় বখাটে জিয়া ওরফে জিহাদ, ফারুখ, এনায়েত, ভুট্টো মাঝি ও ফারুক এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা ব্যর্থ হয়ে সন্তানদের সামনেই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে। পরে গৃহবধূকে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে মুঠোফোনে নারীর বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে। ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। ধারণ করা ওই ভিডিও ওই বখাটেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। হতবাক হয়ে যায় পুরো দেশ। এমন একটি ঘটনার পর আর ২০২১ সালকে সেভাবে স্বাগত জানানোটা কঠিন ছিল সবার জন্য। বছরটির শেষে এসেও দুটি ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনা দেখতে হয়েছে দেশকে। একটি কক্সবাজারে, অন্যটি বান্দরবানে। দুটিতেই পর্যটক হিসেবে যাওয়া নারীই ভুক্তভোগী হয়েছেন। এর মধ্যে কক্সবাজারের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারকে রীতিমতো হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।
এই এত ঘটনার পর প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া পদক্ষেপ, থানায় মামলা নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে সংকট, অভিযোগের পর ভুক্তভোগীকে সহায়তা ইত্যাদি কোনো বিচারেই কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং কিছুটা পিছিয়ে যেতে হয়েছে বলতে হবে। কক্সবাজারের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সৈকতে নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে তার চলাচলেই সীমা টেনে দেওয়া এমন সিদ্ধান্ত অবশ্য ১০ ঘণ্টার ব্যবধানেই বদলেছে প্রশাসন। কিন্তু এমন চিন্তা এবং তা থেকে উদ্ভূত সিদ্ধান্ত তো দেখতে হয়েছে। সৈকতে তো ‘নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা’ লেখা সাইনবোর্ড দেখা গেছে, তা যত অল্প সময়ের জন্যই হোক। এটুকুই দেশে নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিতে সক্ষম।
নারীর জন্য নিরাপদ একটি সমাজ গড়ার যে প্রত্যয় প্রায়ই উচ্চারিত হয়, তা এবারও ফাঁপা বুলি হিসেবে প্রমাণিত হলো। বছরের প্রতিটি মাস তো বটেই, প্রতিটি দিনই কোনো না কোনো অঞ্চল থেকে এসেছে নারীর নির্যাতিত হওয়ার খবর। এর মধ্যে ধর্ষণ তো এক ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মেয়েশিশু নির্যাতনের ঘটনাও ছিল ভীষণ উদ্বেগজনক। সারা বছর নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের এত এত খবর এসেছে যে, তা একধরনের নির্লিপ্ততা তৈরি করেছে সমাজের মধ্যে। এই নির্লিপ্ততা বলে দেয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে দমে দমে যে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়, তা একেবারেই অন্তঃসারশূন্য।
বছরের প্রায় প্রতিদিন খবরের পাতায় ধর্ষণ, পাশবিক নির্যাতন, দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের সময় ভিডিও ধারণ, সেই ভিডিও অনলাইনে প্রচার, শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা বা তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছিল। ফলে বিচারহীনতাই যেন একমাত্র বাস্তব হয়ে উঠেছে।
নারীরা আজ ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। বর্তমানের রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, বসতবাড়ি—সর্বত্র যে হারে নারী নির্যাতন হচ্ছে, তাতে নিরাপত্তা সম্পর্কিত তাবৎ বুলি অর্থহীন হয়ে পড়ছে। নারী নির্যাতনের কোনো এক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে এসেছে অন্য এক ঘটনা। বছরের শেষ দিকে সারা দেশ যখন কক্সবাজারে এক নারী পর্যটকের দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে, তখনো দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসছে নানা বয়সী নারীর ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর। একটু উদাহরণ দেওয়া যাক। একই সময়ে বান্দরবানে ছেলেমেয়েকে বেঁধে রেখে প্রবাসীর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছিল, তার দিকে কিন্তু কেউ তাকানোর ফুরসত পায়নি। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, বাল্যবিবাহের সংখ্যার ভয়াবহ বৃদ্ধিও এখন আর কাউকে চমকে দেয় না। বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকেই শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের অনুপস্থিতির দিকে নজর গেছে। এ নিয়ে দু-একটি বক্তব্য ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ কিন্তু দেখা যায়নি।
২০২১ সালে ধর্ষণ, দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের সময় ভিডিও ধারণ, সেই ভিডিও অনলাইনে প্রচারের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ঘরের ভেতরেও শিক্ষার্থী, কিশোরী ও শিশুরা স্থানীয় বখাটের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
দেশের ৯টি পত্রিকা ও নিজেদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বছরের প্রথম ১১ মাসের নারী নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরেছে তাদের প্রতিবেদনে। আসকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে মোট ১ হাজার ২৪৭টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা আছে ২৩৪টি। এর মধ্যে ৬ বছরের নিচের ৭৬টি শিশু এবং ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ১২৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরী রয়েছে ১৮৭ জন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে। ধর্ষণচেষ্টাকে এই তালিকায় ঢোকালে মোট ধর্ষণের সংখ্যা আরও ২৮৬টি বেড়ে যাবে।
এ তো ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার বিষয়। কিন্তু এই সমাজে নারী বহু কায়দায় নির্যাতনের শিকার হয়। ঘরে ও ঘরের বাইরে এই নির্যাতনের হাজারটা রকম রয়েছে। আসকের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে ১০ শতাংশ। পারিবারিক নির্যাতনকে ঘিরে হত্যা, আত্মহত্যাসহ মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে ৭ শতাংশ। যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ৪০ জন। মোট পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ৬০৮টি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুসারে, ঢাকায় গত বছরের তুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের মামলা ১৩ শতাংশ এবং যৌতুকের কারণে হত্যা মামলা ২০০ শতাংশ বেড়েছে। ধর্ষণের মামলা গত বছরের তুলনায় এই ১১ মাসে দুটি কম। ডিসেম্বর মাসের হিসাব যুক্ত করলে ধর্ষণের মামলাও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ১৩টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় বাল্যবিবাহ বেড়েছে ২৩৮ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বারবার সামনে এসেছে করোনা মহামারির বিষয়টি। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, দুই মিলিয়ে বাল্যবিবাহের এক নীরব মহামারির মধ্য দিয়ে গেছে পুরো দেশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পর থেকে বিষয়টি নজরে আসতে শুরু করে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই দেশে ১৮৫ জনের বাল্যবিবাহের খবর পাওয়া গেছে। পুরো বছরে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই সংখ্যা ২৮৪ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। অথচ ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৪।
এক কথায়, পুরো বছরই নারী নির্যাতন এক প্রাত্যহিক বাস্তবতা হয়ে ছিল। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি নোয়াখালীতে গৃহবধূকে যৌন নির্যাতন এবং সেই নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে চলে আসে ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা। দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে আড়াল করে দেয়। এর মধ্যে এমন নয় যে, মাঝের ছয় দিন কোনো নারী বা শিশু নির্যাতিত হয়নি। হয়েছে। কিন্তু সড়কে মৃত্যুর মতোই নারী নির্যাতনও সংখ্যায় পরিণত হয়েছে। ফলে কলাবাগান বা নোয়াখালীর ঘটনা অনায়াসে আড়াল হয়ে যায় ১২ জানুয়ারি স্বামী তার বন্ধুদের নিয়ে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার নিচে। এরপর ২৮ জানুয়ারি আরেক কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। বন্দী রেখে একটানা চলতে থাকে এই নির্যাতন। চতুর্থ দিন পুলিশের সহায়তায় মুক্তি পেলে ঘটনাটি সামনে আসে।
হ্যাঁ, এভাবেই শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের প্রথম মাসটি। এভাবে একটি একটি করে দিন গেছে আর নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের খবরের পত্রিকার পাতা ভরে উঠেছে। এটা এতটাই যে বহু নির্যাতনের খবর শুধু চাপা পড়েছে স্থানের ওভাবে। এমনকি টেলিভিশন চ্যানেলের স্ক্রলেও জায়গা করে নিতে পারেনি বহু ঘটনা। কারণ, নির্যাতনই যখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়, তখন তো নির্যাতনের মাত্রা দিয়েই খবর-মূল্যের বিচার চলে।
আগেই বলা হয়েছে, বছরের শুরুই হয়েছিল ভয়াবহ এক যৌন নির্যাতনের খবর দিয়ে। শেষ হতে যাওয়া এ বছরের প্রথম দিন গত ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর হাতিয়ার চরচানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে স্থানীয় বখাটে জিয়া ওরফে জিহাদ, ফারুখ, এনায়েত, ভুট্টো মাঝি ও ফারুক এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা ব্যর্থ হয়ে সন্তানদের সামনেই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে। পরে গৃহবধূকে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে মুঠোফোনে নারীর বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে। ঘটনা এখানে থেমে থাকেনি। ধারণ করা ওই ভিডিও ওই বখাটেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। হতবাক হয়ে যায় পুরো দেশ। এমন একটি ঘটনার পর আর ২০২১ সালকে সেভাবে স্বাগত জানানোটা কঠিন ছিল সবার জন্য। বছরটির শেষে এসেও দুটি ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনা দেখতে হয়েছে দেশকে। একটি কক্সবাজারে, অন্যটি বান্দরবানে। দুটিতেই পর্যটক হিসেবে যাওয়া নারীই ভুক্তভোগী হয়েছেন। এর মধ্যে কক্সবাজারের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারকে রীতিমতো হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।
এই এত ঘটনার পর প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া পদক্ষেপ, থানায় মামলা নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে সংকট, অভিযোগের পর ভুক্তভোগীকে সহায়তা ইত্যাদি কোনো বিচারেই কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং কিছুটা পিছিয়ে যেতে হয়েছে বলতে হবে। কক্সবাজারের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সৈকতে নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে তার চলাচলেই সীমা টেনে দেওয়া এমন সিদ্ধান্ত অবশ্য ১০ ঘণ্টার ব্যবধানেই বদলেছে প্রশাসন। কিন্তু এমন চিন্তা এবং তা থেকে উদ্ভূত সিদ্ধান্ত তো দেখতে হয়েছে। সৈকতে তো ‘নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা’ লেখা সাইনবোর্ড দেখা গেছে, তা যত অল্প সময়ের জন্যই হোক। এটুকুই দেশে নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিতে সক্ষম।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৭ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে