আব্দুর রহমান
একসময়ের ‘অন্ধকার মহাদেশ’ আফ্রিকার তকমা কেটে গেছে অনেক আগেই। অনেক ক্ষেত্রেই আফ্রিকার দেশগুলো এগিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক নতুন করে বিবেচনার সময় এসেছে। এই সম্পর্কে কে লাভবান, তারও বিবেচনা প্রয়োজন।
ঘানা, সেনেগাল, তানজানিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, কঙ্গো, জাম্বিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেই চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। মহাদেশটিতে চীনা বিনিয়োগ বাড়ায় পশ্চিমা জগতে নতুন করে আশঙ্কার সূত্রপাত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া-চীন সম্পর্ক ‘সীমাহীন’ বলে ঘোষিত হওয়ার পর আফ্রিকায় চীনা উপস্থিতি পশ্চিমের জন্য আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, আফ্রিকায় চীন যেভাবে এগিয়েছে, কোনো দেশই সেভাবে পারেনি। না পারার কারণ হলো চীনা অর্থ। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীন আফ্রিকার সরকারগুলোকে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই ঋণের এক-তৃতীয়াংশই দেওয়া হয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে। বিশেষ করে সমুদ্র ও নৌবন্দর, বিমানবন্দর, মহাসড়কসহ অবকাঠামো নির্মাণ খাতেই বেশির ভাগ ঋণ দেওয়া হয়েছে।
তবে এসব বিনিয়োগ কি কেবলই উন্নয়নের জন্য, নাকি আরও কিছু? এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে চীন-আফ্রিকার সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বুঝতে হবে। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক তিনটি ধাপে বিকশিত হয়েছে।
প্রথম ধাপে স্নায়ুযুদ্ধের সময় চীন আফ্রিকায় নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ রপ্তানির চিন্তা করে; দ্বিতীয় ধাপে ১৯৯০ সালের পর চীন আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক চালু করে, তখনই দেশটির উদ্বৃত্ত অর্থ বিনিয়োগ শুরু হয় আফ্রিকায় এবং তৃতীয় ধাপে এসে চীন আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করে।
এ প্রসঙ্গে সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেনিয়েল লার্জ মনে করেন, সি চিন পিংয়ের আমলে চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করেছে। তিনি (চিন পিং) চীনের সঙ্গে আফ্রিকার সম্পর্ক নিজের মতো করে গড়ে তুলছেন।
আফ্রিকায় চীনের উপস্থিতির মাত্রা দুই ধরনের—অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আফ্রিকায় চীনের বিশাল বিনিয়োগ ও উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। যেমন, চীন আফ্রিকার খনিজ সম্পদ অবৈধভাবে নিজ দেশে নিয়ে আসছে—এমন অভিযোগের ভিত্তিও রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার খনি ব্যবসায়ীকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়েছে অবৈধভাবে খনিজ সম্পদ আহরণের অভিযোগে। কিন্তু তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। কেন আনা হয়নি, সে বিষয়ে ঘানার মন্ত্রী ওসাফো মাফো বলেছিলেন, ‘এদের জেলে দিলেই যে ঘানার অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে তা নয়; আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যই চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন।’ এবং বাস্তবতাও তাই।
আরেকটি অভিযোগ হলো, চীন আফ্রিকার দেশগুলোকে ঋণের ভারে জর্জরিত করে তুলছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সাহারার আশপাশের দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণের মাত্র ১৭ শতাংশ চীনের, বিপরীতে ১৯ শতাংশ ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং পশ্চিমা বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাতের ৩০ শতাংশ। খোদ ইকোনমিস্টই পশ্চিম কর্তৃক চীনের এই সমালোচনাকে ‘ভুল তথ্যের ওপর অনুমান করে দেওয়া বক্তব্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
চায়না আফ্রিকা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, সাহারার আশপাশের ২২টি দেশের মধ্যে মাত্র সাতটি দেশের বৈদেশিক ঋণের ২৫ শতাংশ বা তার বেশি জোগান দিয়েছে চীন।
চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক নিয়ে আরও সমালোচনা রয়েছে। যেমন—চীনের ঋণ পরিশোধের শর্ত অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যমান আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না।
গবেষণা সংস্থা এইড ডেটা বলেছে, চীন আফ্রিকার দেশগুলোকে যেসব কঠোর শর্তে ঋণ দিয়েছে, তা কেবল ১৯ ও ২০ শতকের ঋণের শর্তের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। পশ্চিমাদের তরফ থেকে আরেকটি অভিযোগ হলো, চীনের ঋণের শর্ত ও ডকুমেন্টস অস্বচ্ছ।
এ বিষয়ে দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের অনুমান, চীনের ৫০ শতাংশ ঋণের নথিই গোপনীয় এবং তা কখনো প্রকাশ করা হয় না। এই অভিযোগ নিয়ে চীনের তরফ থেকে অবশ্য কখনোই তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
কড়া শর্ত ও অস্বচ্ছ নথি হওয়ার পরও আফ্রিকার দেশগুলো কেন চীনের দিকেই ঝুঁকছে। এর জবাবে জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, চীন আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোর শাসক এবং তাদের প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর রাখে। পশ্চিমাদের মতো শর্ত নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের। তারা বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পেতেই বেশি আগ্রহী। আফ্রিকার দেশগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে চীন পশ্চিমাদের মতো শর্তের বোঝা আরোপ করে না এবং পশ্চিমাদের তুলনায় চীনা ঋণ ছাড়ের সময় অনেক দ্রুত। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকার ৪৩টি দেশে রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের আওতায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে সময় লেগেছে মাত্র আড়াই বছর বা তার কিছু বেশি সময়, যেখানে বিশ্বব্যাংক বা এজাতীয় প্রতিষ্ঠানের এসব ক্ষেত্রে সময় লাগে এই সময়ের তিন গুণ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য আটলান্টিক কাউন্সিলের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চীন এর আগে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করলেও ইদানীং এসব অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রভাবও বিস্তারের চেষ্টা করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। দেশগুলোর সরকারের রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনা না করেই ঋণ দিচ্ছে। সরকারের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন না তুলেই চীন বিদ্যমান সরকারকে চোখ বুজে সমর্থন দিয়ে যায়। তবে দ্য ডিপ্লোম্যাট এমন নির্লিপ্ত রাজনৈতিক অবস্থানই আফ্রিকায় চীনের সফল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণ বলে উল্লেখ করেছে।
সব মিলিয়ে চীন আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর অন্যতম প্রধান এবং সহজ উপায় হিসেবে হাজির হয়েছে। বিশ্বব্যবস্থায় যখন নানামুখী হিসাব-নিকাশ হচ্ছে, সেই সময় চীন আফ্রিকায় প্রায় নীরবে তার প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছে। এই প্রভাব একই সঙ্গে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক। এই প্রভাব আরও বেড়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। চীন আফ্রিকার দেশগুলোকে বিপুল পরিমাণ কোভিড টিকা বিনা মূল্যে এবং অল্প টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করেছে। এর প্রতিদান চীন পেয়েছে হাতেনাতে কিংবা প্রতিদান দিতে বাধ্য করেছে। যেমন—২০২১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি সমালোচনাত্মক বিবৃতি দিয়েছিল। সেই বিবৃতির সমালোচনা করে আফ্রিকার দেশ চীনের সপক্ষে একটি পাল্টা বিবৃতি দেয়।
এমন বন্ধুত্ব বিগত কয়েক বছর ধরেই চলমান। এই বন্ধুত্বে লাভবান হচ্ছে দুই পক্ষই, বিশেষ করে আফ্রিকার সরকারগুলো। এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে পশ্চিম। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে গেছে তা হলো, আফ্রিকার জনগণ এই সম্পর্ক থেকে কতটা লাভবান হচ্ছে বা হতে পারবে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, দ্য ডিপ্লোম্যাট, আটলান্টিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইট
একসময়ের ‘অন্ধকার মহাদেশ’ আফ্রিকার তকমা কেটে গেছে অনেক আগেই। অনেক ক্ষেত্রেই আফ্রিকার দেশগুলো এগিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক নতুন করে বিবেচনার সময় এসেছে। এই সম্পর্কে কে লাভবান, তারও বিবেচনা প্রয়োজন।
ঘানা, সেনেগাল, তানজানিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, কঙ্গো, জাম্বিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেই চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। মহাদেশটিতে চীনা বিনিয়োগ বাড়ায় পশ্চিমা জগতে নতুন করে আশঙ্কার সূত্রপাত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া-চীন সম্পর্ক ‘সীমাহীন’ বলে ঘোষিত হওয়ার পর আফ্রিকায় চীনা উপস্থিতি পশ্চিমের জন্য আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, আফ্রিকায় চীন যেভাবে এগিয়েছে, কোনো দেশই সেভাবে পারেনি। না পারার কারণ হলো চীনা অর্থ। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীন আফ্রিকার সরকারগুলোকে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই ঋণের এক-তৃতীয়াংশই দেওয়া হয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে। বিশেষ করে সমুদ্র ও নৌবন্দর, বিমানবন্দর, মহাসড়কসহ অবকাঠামো নির্মাণ খাতেই বেশির ভাগ ঋণ দেওয়া হয়েছে।
তবে এসব বিনিয়োগ কি কেবলই উন্নয়নের জন্য, নাকি আরও কিছু? এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে চীন-আফ্রিকার সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বুঝতে হবে। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক তিনটি ধাপে বিকশিত হয়েছে।
প্রথম ধাপে স্নায়ুযুদ্ধের সময় চীন আফ্রিকায় নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ রপ্তানির চিন্তা করে; দ্বিতীয় ধাপে ১৯৯০ সালের পর চীন আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক চালু করে, তখনই দেশটির উদ্বৃত্ত অর্থ বিনিয়োগ শুরু হয় আফ্রিকায় এবং তৃতীয় ধাপে এসে চীন আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করে।
এ প্রসঙ্গে সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেনিয়েল লার্জ মনে করেন, সি চিন পিংয়ের আমলে চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করেছে। তিনি (চিন পিং) চীনের সঙ্গে আফ্রিকার সম্পর্ক নিজের মতো করে গড়ে তুলছেন।
আফ্রিকায় চীনের উপস্থিতির মাত্রা দুই ধরনের—অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আফ্রিকায় চীনের বিশাল বিনিয়োগ ও উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। যেমন, চীন আফ্রিকার খনিজ সম্পদ অবৈধভাবে নিজ দেশে নিয়ে আসছে—এমন অভিযোগের ভিত্তিও রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার খনি ব্যবসায়ীকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়েছে অবৈধভাবে খনিজ সম্পদ আহরণের অভিযোগে। কিন্তু তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। কেন আনা হয়নি, সে বিষয়ে ঘানার মন্ত্রী ওসাফো মাফো বলেছিলেন, ‘এদের জেলে দিলেই যে ঘানার অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে তা নয়; আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যই চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন।’ এবং বাস্তবতাও তাই।
আরেকটি অভিযোগ হলো, চীন আফ্রিকার দেশগুলোকে ঋণের ভারে জর্জরিত করে তুলছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সাহারার আশপাশের দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণের মাত্র ১৭ শতাংশ চীনের, বিপরীতে ১৯ শতাংশ ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং পশ্চিমা বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাতের ৩০ শতাংশ। খোদ ইকোনমিস্টই পশ্চিম কর্তৃক চীনের এই সমালোচনাকে ‘ভুল তথ্যের ওপর অনুমান করে দেওয়া বক্তব্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
চায়না আফ্রিকা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, সাহারার আশপাশের ২২টি দেশের মধ্যে মাত্র সাতটি দেশের বৈদেশিক ঋণের ২৫ শতাংশ বা তার বেশি জোগান দিয়েছে চীন।
চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক নিয়ে আরও সমালোচনা রয়েছে। যেমন—চীনের ঋণ পরিশোধের শর্ত অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যমান আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না।
গবেষণা সংস্থা এইড ডেটা বলেছে, চীন আফ্রিকার দেশগুলোকে যেসব কঠোর শর্তে ঋণ দিয়েছে, তা কেবল ১৯ ও ২০ শতকের ঋণের শর্তের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। পশ্চিমাদের তরফ থেকে আরেকটি অভিযোগ হলো, চীনের ঋণের শর্ত ও ডকুমেন্টস অস্বচ্ছ।
এ বিষয়ে দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের অনুমান, চীনের ৫০ শতাংশ ঋণের নথিই গোপনীয় এবং তা কখনো প্রকাশ করা হয় না। এই অভিযোগ নিয়ে চীনের তরফ থেকে অবশ্য কখনোই তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
কড়া শর্ত ও অস্বচ্ছ নথি হওয়ার পরও আফ্রিকার দেশগুলো কেন চীনের দিকেই ঝুঁকছে। এর জবাবে জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, চীন আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোর শাসক এবং তাদের প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর রাখে। পশ্চিমাদের মতো শর্ত নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের। তারা বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পেতেই বেশি আগ্রহী। আফ্রিকার দেশগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে চীন পশ্চিমাদের মতো শর্তের বোঝা আরোপ করে না এবং পশ্চিমাদের তুলনায় চীনা ঋণ ছাড়ের সময় অনেক দ্রুত। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকার ৪৩টি দেশে রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের আওতায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে সময় লেগেছে মাত্র আড়াই বছর বা তার কিছু বেশি সময়, যেখানে বিশ্বব্যাংক বা এজাতীয় প্রতিষ্ঠানের এসব ক্ষেত্রে সময় লাগে এই সময়ের তিন গুণ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য আটলান্টিক কাউন্সিলের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চীন এর আগে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করলেও ইদানীং এসব অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রভাবও বিস্তারের চেষ্টা করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। দেশগুলোর সরকারের রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনা না করেই ঋণ দিচ্ছে। সরকারের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন না তুলেই চীন বিদ্যমান সরকারকে চোখ বুজে সমর্থন দিয়ে যায়। তবে দ্য ডিপ্লোম্যাট এমন নির্লিপ্ত রাজনৈতিক অবস্থানই আফ্রিকায় চীনের সফল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণ বলে উল্লেখ করেছে।
সব মিলিয়ে চীন আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর অন্যতম প্রধান এবং সহজ উপায় হিসেবে হাজির হয়েছে। বিশ্বব্যবস্থায় যখন নানামুখী হিসাব-নিকাশ হচ্ছে, সেই সময় চীন আফ্রিকায় প্রায় নীরবে তার প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছে। এই প্রভাব একই সঙ্গে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক। এই প্রভাব আরও বেড়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। চীন আফ্রিকার দেশগুলোকে বিপুল পরিমাণ কোভিড টিকা বিনা মূল্যে এবং অল্প টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করেছে। এর প্রতিদান চীন পেয়েছে হাতেনাতে কিংবা প্রতিদান দিতে বাধ্য করেছে। যেমন—২০২১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি সমালোচনাত্মক বিবৃতি দিয়েছিল। সেই বিবৃতির সমালোচনা করে আফ্রিকার দেশ চীনের সপক্ষে একটি পাল্টা বিবৃতি দেয়।
এমন বন্ধুত্ব বিগত কয়েক বছর ধরেই চলমান। এই বন্ধুত্বে লাভবান হচ্ছে দুই পক্ষই, বিশেষ করে আফ্রিকার সরকারগুলো। এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে পশ্চিম। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে গেছে তা হলো, আফ্রিকার জনগণ এই সম্পর্ক থেকে কতটা লাভবান হচ্ছে বা হতে পারবে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, দ্য ডিপ্লোম্যাট, আটলান্টিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইট
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৬ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে