অনলাইন ডেস্ক
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট নিশ্চিত করতে পারেননি। তাই নির্বাচন রান অফে তথা দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। এতে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। এমন সময়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, যখন বিশ্বজুড়ে জোট ভাঙা–গড়ার খেলা চলছে। আর তাই অন্যতম আঞ্চলিক শক্তির দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রভাব অনুভূত হবে এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলসহ সারা বিশ্বেই।
ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ছিল তিক্ততায় ভরা। গত ৯ মে ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে অস্থির ইরানে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হয়ে আসে। রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বময় ক্ষমতাকেন্দ্রের ব্যক্তিদের জন্য ‘অনুগত’ ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে মাসুদ পেজেশকিয়ানের মতো মধ্যপন্থী-সংস্কারবাদীকে নির্বাচনে লড়ার সুযোগ করে দিতে হয়।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিজেও পেজেশকিয়ানকে প্রার্থী হিসেবে চাননি। সে কারণেই ক্ষোভ দেখিয়ে হয়তো প্রথম দফার ভোটে অনেক ইরানি ভোট দিতে যাননি। তবে দ্বিতীয় দফায় পেজেশকিয়ান এগিয়ে থেকে লড়াই করার সুযোগ পাওয়ার পর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। প্রথম দফায় যেখানে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লেও দ্বিতীয় দফায় পড়েছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। পেজেশকিয়ান জিতলেও সরকার পরিচালনা অতটা সহজ হবে না। কারণ, ইরান সরকার এখনো রক্ষণশীলদের দিয়ে ভর্তি।
ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মতো মধ্যপ্রাচ্য ও দেশটির আশপাশের আঞ্চলিক রাজনীতি অনেকটা পিচ্ছিল-কর্দমাক্ত। ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী আবেগের দেখা মেলে। একদিকে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও পশ্চিমা চাপ কাটিয়ে উঠতে দেশটি আঞ্চলিক স্থিতশীলতা চায়। অপর দিকে আবার ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ নামে পশ্চিমাবিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়েও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিরোধ অক্ষে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুতি, গাজার হামাস ও ইরাক-সিরিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী। এই অক্ষ ইসরায়েলের বিনাশ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিতাড়ন চায়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বব্যবস্থার বিলোপও চায় তারা।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে ইরান, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের মধ্যে এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির ফলাফল দেখা যায়। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ গাজায় অভিযানের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননের দিকে মনোনিবেশ করবে। লেবানন থেকে ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র-রকেট হামলার কারণে তেল আবিব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য কখনোই স্থিতিশীলতার আদর্শ উদাহরণ ছিল না। তবে গাজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির আগে মধ্যপ্রাচ্য কিছুটা হলেও শান্ত ছিল। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০২০ সালে শুরু হওয়া আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই অ্যাকর্ডের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছিল ওয়াশিংটন। দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন অন্যতম। সৌদি আরবের সঙ্গে একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যকে স্থিতিশীল করে সেখানে মনোযোগ কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাইছিল। এ ছাড়া ইউক্রেনেও যেন বাড়তি মনোযোগ দিতে পারে সেই লক্ষ্যও ছিল এই অ্যাকর্ডের। কিন্তু ইসরায়েলে আক্রমণের মধ্য দিয়ে পাশার দান উল্টে দেয় হামাস এবং তার পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালানোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার বাকি দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় ইসরায়েল।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফেরানোর লক্ষ্যে গত বছর বৈরী সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ইরান। তেহরানের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখা বেইজিং সৌদি-ইরান সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করে। এ ছাড়া ইরানের জ্বালানি তেলের অন্যতম বড় গন্তব্যও চীন। দেশটি প্রতিদিন চীনের কাছে ১৫ কোটি ডলারের তেল বিক্রি করে।
চীনের পাশাপাশি ইরান-রাশিয়ার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লালন করে। উভয় দেশই বিশ্বে পশ্চিমা প্রাধান্য কমানোর লক্ষ্যে একই মনোভাব পোষণ করে। ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান রাশিয়াকে সমর্থন তো করছেই, পাশাপাশি মস্কোর ওপর থাকা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতেও তেহরান সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে—আর্থিক লেনদেন ও জ্বালানি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উভয় দেশের সহযোগিতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ পাওয়া যায় রাইসির মৃত্যুর পর লেখা পুতিনের চিঠি থেকে। সেই চিঠিতে পুতিন উল্লেখ করেন, তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তিত্ব হিসেবে রাইসিকে আজীবন মনে রাখবেন।
এদিকে ইরান দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে ইউক্রেন, গাজা সংকট এবং ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে নির্বাচনী ডামাডোল চলছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যস্ততার সুযোগ নিচ্ছে। যদিও দেশটি আপাতত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে দেশটি এরই মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে ফেলেছে। এই অবস্থায় ইরানের নেতৃত্বে ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ যদি তেহরানকে শক্তিমত্তা প্রদর্শনে দায়মুক্তি দেয় তাহলে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার জন্য বিশ্বাসযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করবে।
ইরানের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়তো ‘নির্দিষ্ট পয়েন্ট’ পর্যন্ত এই হুমকিকে সীমাবদ্ধ রাখবে। কারণ, নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান আরও ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি ও পারমাণবিক কূটনীতির পুনরুজ্জীবনের পক্ষে। তাঁর এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। ইরানের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনে আলোচনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনেছিল।
তবে পেজেশকিয়ানও সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন না। বিশেষত আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় এই বিষয়ের সম্ভাবনা আরও শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। কারণ, ট্রাম্পই একতরফাভাবে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। এ ছাড়া পেজেশকিয়ান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি করার চেষ্টা করবেন—কার্যত এমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
আপাতত কিছুদিন হয়তো ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না। তবে দেশটি নিজেকে এমন একটা অবস্থানে রাখতে চাইবে, যেখান থেকে যেকোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব হবে এবং দেশটি যেকোনো সময় বিশ্বকে এই হুমকি দিতে পারবে যে, তারা যেকোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে। এই অবস্থায় ইরানের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল যদি কিছু করে ফেলে, সে ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি থাকে। এই অবস্থায় ঝুঁকিগুলোকে প্রশমিত করার প্রচেষ্টায় পশ্চিমকে অবশ্যই পুরোনো কৌশলে আটকে থাকলে চলবে না। তাদের অবশ্যই নতুন ও সৃজনশীল কিছু ভাবতে হবে। কারণ, সময় এখন ইরানি রক্ষণশীলদের পক্ষে।
সব মিলিয়ে পেজেশকিয়ানের জয় হয়তো প্রতিরোধ অক্ষকে নিশ্চিহ্ন করবে না, হয়তো বিশ্বব্যবস্থা বদলাতে ইরানের যে আকাঙ্ক্ষা তাতেও খুব একটা পরিবর্তন আনবে না—কারণ, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সামান্যই—কিন্তু তাঁর কারণে প্রতিরোধ অক্ষে কিছুটা হলেও ফাটল ধরতে পারে। এই অবস্থা থেকে ফায়দা তোলার জন্য পশ্চিমাদের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পশ্চিমারাই এই মুহূর্তে খুবই নাজুক অবস্থানে আছে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট নিশ্চিত করতে পারেননি। তাই নির্বাচন রান অফে তথা দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। এতে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। এমন সময়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, যখন বিশ্বজুড়ে জোট ভাঙা–গড়ার খেলা চলছে। আর তাই অন্যতম আঞ্চলিক শক্তির দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রভাব অনুভূত হবে এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলসহ সারা বিশ্বেই।
ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ছিল তিক্ততায় ভরা। গত ৯ মে ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে অস্থির ইরানে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হয়ে আসে। রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বময় ক্ষমতাকেন্দ্রের ব্যক্তিদের জন্য ‘অনুগত’ ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে মাসুদ পেজেশকিয়ানের মতো মধ্যপন্থী-সংস্কারবাদীকে নির্বাচনে লড়ার সুযোগ করে দিতে হয়।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিজেও পেজেশকিয়ানকে প্রার্থী হিসেবে চাননি। সে কারণেই ক্ষোভ দেখিয়ে হয়তো প্রথম দফার ভোটে অনেক ইরানি ভোট দিতে যাননি। তবে দ্বিতীয় দফায় পেজেশকিয়ান এগিয়ে থেকে লড়াই করার সুযোগ পাওয়ার পর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। প্রথম দফায় যেখানে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লেও দ্বিতীয় দফায় পড়েছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। পেজেশকিয়ান জিতলেও সরকার পরিচালনা অতটা সহজ হবে না। কারণ, ইরান সরকার এখনো রক্ষণশীলদের দিয়ে ভর্তি।
ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মতো মধ্যপ্রাচ্য ও দেশটির আশপাশের আঞ্চলিক রাজনীতি অনেকটা পিচ্ছিল-কর্দমাক্ত। ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী আবেগের দেখা মেলে। একদিকে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও পশ্চিমা চাপ কাটিয়ে উঠতে দেশটি আঞ্চলিক স্থিতশীলতা চায়। অপর দিকে আবার ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ নামে পশ্চিমাবিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়েও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিরোধ অক্ষে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুতি, গাজার হামাস ও ইরাক-সিরিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী। এই অক্ষ ইসরায়েলের বিনাশ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিতাড়ন চায়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বব্যবস্থার বিলোপও চায় তারা।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে ইরান, হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের মধ্যে এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির ফলাফল দেখা যায়। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ গাজায় অভিযানের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননের দিকে মনোনিবেশ করবে। লেবানন থেকে ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র-রকেট হামলার কারণে তেল আবিব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য কখনোই স্থিতিশীলতার আদর্শ উদাহরণ ছিল না। তবে গাজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির আগে মধ্যপ্রাচ্য কিছুটা হলেও শান্ত ছিল। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০২০ সালে শুরু হওয়া আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই অ্যাকর্ডের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছিল ওয়াশিংটন। দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন অন্যতম। সৌদি আরবের সঙ্গে একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যকে স্থিতিশীল করে সেখানে মনোযোগ কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাইছিল। এ ছাড়া ইউক্রেনেও যেন বাড়তি মনোযোগ দিতে পারে সেই লক্ষ্যও ছিল এই অ্যাকর্ডের। কিন্তু ইসরায়েলে আক্রমণের মধ্য দিয়ে পাশার দান উল্টে দেয় হামাস এবং তার পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালানোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার বাকি দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় ইসরায়েল।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফেরানোর লক্ষ্যে গত বছর বৈরী সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ইরান। তেহরানের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখা বেইজিং সৌদি-ইরান সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করে। এ ছাড়া ইরানের জ্বালানি তেলের অন্যতম বড় গন্তব্যও চীন। দেশটি প্রতিদিন চীনের কাছে ১৫ কোটি ডলারের তেল বিক্রি করে।
চীনের পাশাপাশি ইরান-রাশিয়ার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লালন করে। উভয় দেশই বিশ্বে পশ্চিমা প্রাধান্য কমানোর লক্ষ্যে একই মনোভাব পোষণ করে। ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান রাশিয়াকে সমর্থন তো করছেই, পাশাপাশি মস্কোর ওপর থাকা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতেও তেহরান সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে—আর্থিক লেনদেন ও জ্বালানি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উভয় দেশের সহযোগিতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ পাওয়া যায় রাইসির মৃত্যুর পর লেখা পুতিনের চিঠি থেকে। সেই চিঠিতে পুতিন উল্লেখ করেন, তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তিত্ব হিসেবে রাইসিকে আজীবন মনে রাখবেন।
এদিকে ইরান দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে ইউক্রেন, গাজা সংকট এবং ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে নির্বাচনী ডামাডোল চলছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যস্ততার সুযোগ নিচ্ছে। যদিও দেশটি আপাতত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে দেশটি এরই মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে ফেলেছে। এই অবস্থায় ইরানের নেতৃত্বে ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ যদি তেহরানকে শক্তিমত্তা প্রদর্শনে দায়মুক্তি দেয় তাহলে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার জন্য বিশ্বাসযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করবে।
ইরানের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়তো ‘নির্দিষ্ট পয়েন্ট’ পর্যন্ত এই হুমকিকে সীমাবদ্ধ রাখবে। কারণ, নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান আরও ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি ও পারমাণবিক কূটনীতির পুনরুজ্জীবনের পক্ষে। তাঁর এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। ইরানের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনে আলোচনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনেছিল।
তবে পেজেশকিয়ানও সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন না। বিশেষত আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় এই বিষয়ের সম্ভাবনা আরও শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। কারণ, ট্রাম্পই একতরফাভাবে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। এ ছাড়া পেজেশকিয়ান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি করার চেষ্টা করবেন—কার্যত এমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
আপাতত কিছুদিন হয়তো ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না। তবে দেশটি নিজেকে এমন একটা অবস্থানে রাখতে চাইবে, যেখান থেকে যেকোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব হবে এবং দেশটি যেকোনো সময় বিশ্বকে এই হুমকি দিতে পারবে যে, তারা যেকোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে। এই অবস্থায় ইরানের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল যদি কিছু করে ফেলে, সে ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি থাকে। এই অবস্থায় ঝুঁকিগুলোকে প্রশমিত করার প্রচেষ্টায় পশ্চিমকে অবশ্যই পুরোনো কৌশলে আটকে থাকলে চলবে না। তাদের অবশ্যই নতুন ও সৃজনশীল কিছু ভাবতে হবে। কারণ, সময় এখন ইরানি রক্ষণশীলদের পক্ষে।
সব মিলিয়ে পেজেশকিয়ানের জয় হয়তো প্রতিরোধ অক্ষকে নিশ্চিহ্ন করবে না, হয়তো বিশ্বব্যবস্থা বদলাতে ইরানের যে আকাঙ্ক্ষা তাতেও খুব একটা পরিবর্তন আনবে না—কারণ, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সামান্যই—কিন্তু তাঁর কারণে প্রতিরোধ অক্ষে কিছুটা হলেও ফাটল ধরতে পারে। এই অবস্থা থেকে ফায়দা তোলার জন্য পশ্চিমাদের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পশ্চিমারাই এই মুহূর্তে খুবই নাজুক অবস্থানে আছে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে