জাহাঙ্গীর আলম
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রো বনাম ওয়েড মামলার রায়ে দেশব্যাপী গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সেটি ১৯৭৩ সালের ঘটনা। সেই রায়টিই এখন বাতিল করে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
গর্ভপাতের ইস্যুটিকে মার্কিন রাজনীতির গুরুতর ‘ফল্ট লাইনগুলোর’ মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। ডেমোক্রেটিক দলের রাজনীতিকেরা দৃঢ়ভাবে গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করেন। রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা প্রায় সবাই-ই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে ১৯৭৩ সালে দুই দলের মধ্যকার পার্থক্য রেখাটি কিন্তু বেশ ধূসর ছিল। তখন রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক ভোটারদের মধ্যে প্রায় সমান সমান লোক গর্ভপাত বৈধতার আইন করার পক্ষে বলার একটা সম্ভাবনা ছিল। রিপাবলিকান নেতাদের মধ্যে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষের লোক খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল। একইভাবে এটাও প্রায় সুনির্দিষ্ট করে বলা যেত ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে করার এই আইনের বিরোধিতা করেন।
প্রথমে এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু ছিল না
ব্যাপক গণদাবির মুখে ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে চারটি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত বৈধ করা হয়। আরও ১৪টি অঙ্গরাজ্য পরিস্থিতির চাপে অনুমতি দেয়।
যখন ক্যাথলিক চার্চ গর্ভপাতের তীব্র বিরোধিতা করেছিল, তখন সাউদার্ন ব্যাপটিস্ট কনভেনশন যারা সবচেয়ে বড় ইভাঞ্জেলিক সম্প্রদায়, তারা বলেছিল কিছু পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া উচিত।
কোনো পক্ষই তখন গর্ভপাতকে একটি স্পষ্ট বিভেদের বিষয় বলে মনে করত না। ফার্স্ট লেডি বেটি ফোর্ডের মতো রিপাবলিকানেরা বলেছিলেন, রো বনাম ওয়েড মামলার রায় ‘একটি দুর্দান্ত, চমৎকার সিদ্ধান্ত’। মজার ব্যাপার হলো তখন জো বাইডেন নামে একজন নবনির্বাচিত সিনেটরের মতো কিছু ডেমোক্র্যাট নেতা বলেছিলেন, আদালত খুব বেশি দূর পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করে ফেলেছে! সেই বাইডেনই কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। যেখানে হোয়াইট হাউস সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লড়বার ঘোষণা দিয়েছে।
অথচ ওই সময় ভোটারেরাও বিষয়টিকে দলীয়ভাবে দেখেনি। ১৯৭৭ সালে জেনারেল সোশ্যাল সার্ভের মতামত জরিপে দেখা গেছে, ৩৯ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করেন কিছু কারণে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া উচিত, যেখানে ৩৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট গর্ভপাতের পক্ষে ছিলেন। আর এখন চিত্র পুরো উল্টো!
গর্ভপাত নিয়ে একটি রক্ষণশীল আন্দোলন সক্রিয়
পরবর্তী বছরগুলোতে ফিলিস শ্লাফলির মতো রক্ষণশীল অধিকারকর্মীরা এই সমস্যাটিকে ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁরা ইভাঞ্জেলিক চার্চগুলোকে পক্ষে টানতে শুরু করেন। এটার একটা বড় কারণ হতে পারে ধর্মীয় স্বাধীনতায় সরাসরি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে জমে থাকা ক্ষোভ। উন্মুক্ত স্থানে প্রার্থনা সীমিত করে রায় দিচ্ছিলেন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালত। এই পরিস্থিতিতে ইভাঞ্জেলিক গির্জাগুলো রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠতে শুরু করে।
সমকামীদের অধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্রমবর্ধমান হার এবং বাড়ির বাইরে নারীদের কাজ করার মতো বহু বিস্তৃত ও সুদূর প্রসারী সামাজিক উন্নয়নকে তাঁরা পারিবারিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে চিত্রিত করতে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয় গর্ভপাত।
ক্যালিফোর্নিয়া-ডেভিস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি ইতিহাসবিদ মেরি জিগলার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, যাজক এবং প্যারিশিয়ানদের মধ্যে বিকাশমান মার্কিন উদারনৈতিক সমাজ নিয়ে যে উদ্বেগ দানা বাঁধছিল সেখানে গর্ভপাত একটি প্রক্সি ইস্যু হয়ে ওঠে। অনেক ধর্মপ্রচারকের (ইভাঞ্জেলিক) জন্য এটি ছিল অনেক বেশি পরিবার, নারী এবং যৌনতা সম্পর্কিত ইস্যু।
১৯৮০ সালে সাউদার্ন ব্যাপটিস্ট কনভেনশন গর্ভপাতের বিরোধিতা করে একটি রেজ্যুলেশন পাস করে। এক দশক আগের অবস্থান থেকে তারা সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে যায়।
একই বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিপাবলিকান রোনাল্ড রিগ্যানের বিজয় গর্ভপাত বিরোধীদের হোয়াইট হাউসে একটি শক্তিশালী মিত্র তৈরি করে। একই সময় নারী অধিকার কর্মীরা ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে আরও প্রভাব বিস্তার করে এবং দলের নেতাদের গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করার জন্য তারা চাপ দিতে থাকে।
কিন্তু তখনো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পক্ষে সমর্থন বা বিরোধিতা রাজনৈতিক বিরোধের পর্যায়ে যায়নি।
১৯৮৩ সালে সিনেটের ভোটে ৩৪ জন রিপাবলিকান এবং ১৫ জন ডেমোক্র্যাট একটি প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেন, যা রো-ওয়েড মামলার রায়কে বাতিল করে দিতে পারে। ১৯ জন রিপাবলিকান এবং ৩১ জন ডেমোক্র্যাট এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন। আজকের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তৎকালীন সিনেটর কিন্তু এই প্রস্তাবে ‘না’ ভোট দেন। যদিও আগের বছর কমিটিতে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত নিয়ে এই বিতর্কের পরম্পরা দেখলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে—জাতীয় ইস্যু তৈরি হয় না, রাজনীতিকেরাই ইস্যু বাছাই করেন। আর ভোটারেরা ভেড়ার পালের মতো তাদের অনুসরণ করে!
পরবর্তী বছরগুলোতে বিভাজন রেখাগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রার্থীরা বুঝে ফেলেন যে, দলের মধ্যে ক্রমে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে এমন অধিকারকর্মীদের (অ্যাকটিভিস্ট) সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়ানোটা এখন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
রিপাবলিকান পার্টির নেতা জর্জ এইচডব্লিউ বুশ গর্ভপাত বিরোধী। আগে তিনি গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। ১৯৯২ সালে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী বিল ক্লিনটনের কাছে পরাজিত হন। ক্লিনটন কিন্তু একসময় গর্ভপাতের বিরোধিতা করেছিলেন!
১৯৮৯ সাল থেকে গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছে এমন সংগঠন ও সংস্থাগুলো গর্ভপাতকে বৈধ রাখা সমর্থন করেন এমন ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থীদের ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং এবং রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের ৩০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। রাজনীতিতে অর্থ প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহকারী সংস্থা ওপেনসিক্রেটস এই তথ্য দিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ীই, গর্ভপাতের বিরোধিতাকারী গোষ্ঠীগুলো একই সময়ের মধ্যে রিপাবলিকানদের ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ডেমোক্র্যাটদের মাত্র ৩ লাখ ৭২ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছে।
গর্ভপাত ইস্যুতে ভোটারদের মধ্যে স্পষ্ট বিভেদ তৈরি হতে বেশ সময় লেগেছে। এটি ধীরে ধীরে ঘটেছে। ১৯৯১ সালের শেষের দিকের জরিপ অনুসারে, ৪৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট এবং ৪১ শতাংশ রিপাবলিকান বিশেষ পরিস্থিতিতে গর্ভপাতকে সমর্থন করেছেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে দলীয় মতপার্থক্য আরও বিস্তৃত হয়। যদিও সমস্যাটি তখন তহবিল সংগ্রহের জন্য টিভিতে ব্যাপক বিজ্ঞাপন এবং এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর গণ সমাবেশের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।
জেনারেল সোশ্যাল সার্ভে অনুসারে, চলতি শতকের শুরুতে মাত্র ৩১ শতাংশ রিপাবলিকান বিশেষ পরিস্থিতিতে গর্ভপাতকে সমর্থন করেছিলেন। আর ডেমোক্রেটিক ভোটারদের এর পক্ষে সমর্থন ৪৫ শতাংশেই স্থির ছিল।
অন্যান্য মতামত জরিপ ধারাবাহিকভাবে দেখিয়েছে যে, বেশিরভাগ আমেরিকানরা গর্ভপাতের ওপর কিছু বিধিনিষেধকে সমর্থন করে। কিন্তু সরাসরি নিষেধাজ্ঞার বিরোধী তাঁরা। একই সময়ে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে সমর্থন বেড়েছে।
আজকের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বড় অংশজুড়ে ‘দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসা সেবা কর্মসূচিতে’ গর্ভপাতের জন্য ফেডারেল তহবিল ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিলেন। ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন চাওয়ার সময় তিনি তাঁর বিপরীত অবস্থানে চলে যান!
বর্তমান কংগ্রেসে শুধু একজন হাউস ডেমোক্র্যাট এবং একজন সিনেট ডেমোক্র্যাট এমন আইনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। সমস্ত পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী গর্ভপাতকে বৈধ করে তুলতেই বিলটি আনা হয়েছিল। কিন্তু বিলটি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ডেমোক্র্যাটরা বলেছেন, তাঁরা ২০২২ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে এটিকে কেন্দ্রীয় ইস্যু বানানোর পরিকল্পনা করছেন।
যেখানে ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে যে কোনো পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের পক্ষে সমর্থন ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ৫৬ শতাংশ, সেটি গত বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ শতাংশ। আর রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে গর্ভপাতের পক্ষে সমর্থন এখনো ৩৪ শতাংশের আশপাশেই আছে।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রো বনাম ওয়েড মামলার রায়ে দেশব্যাপী গর্ভপাতকে সাংবিধানিক অধিকার বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সেটি ১৯৭৩ সালের ঘটনা। সেই রায়টিই এখন বাতিল করে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
গর্ভপাতের ইস্যুটিকে মার্কিন রাজনীতির গুরুতর ‘ফল্ট লাইনগুলোর’ মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। ডেমোক্রেটিক দলের রাজনীতিকেরা দৃঢ়ভাবে গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করেন। রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা প্রায় সবাই-ই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে ১৯৭৩ সালে দুই দলের মধ্যকার পার্থক্য রেখাটি কিন্তু বেশ ধূসর ছিল। তখন রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক ভোটারদের মধ্যে প্রায় সমান সমান লোক গর্ভপাত বৈধতার আইন করার পক্ষে বলার একটা সম্ভাবনা ছিল। রিপাবলিকান নেতাদের মধ্যে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষের লোক খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল। একইভাবে এটাও প্রায় সুনির্দিষ্ট করে বলা যেত ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে করার এই আইনের বিরোধিতা করেন।
প্রথমে এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু ছিল না
ব্যাপক গণদাবির মুখে ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে চারটি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত বৈধ করা হয়। আরও ১৪টি অঙ্গরাজ্য পরিস্থিতির চাপে অনুমতি দেয়।
যখন ক্যাথলিক চার্চ গর্ভপাতের তীব্র বিরোধিতা করেছিল, তখন সাউদার্ন ব্যাপটিস্ট কনভেনশন যারা সবচেয়ে বড় ইভাঞ্জেলিক সম্প্রদায়, তারা বলেছিল কিছু পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া উচিত।
কোনো পক্ষই তখন গর্ভপাতকে একটি স্পষ্ট বিভেদের বিষয় বলে মনে করত না। ফার্স্ট লেডি বেটি ফোর্ডের মতো রিপাবলিকানেরা বলেছিলেন, রো বনাম ওয়েড মামলার রায় ‘একটি দুর্দান্ত, চমৎকার সিদ্ধান্ত’। মজার ব্যাপার হলো তখন জো বাইডেন নামে একজন নবনির্বাচিত সিনেটরের মতো কিছু ডেমোক্র্যাট নেতা বলেছিলেন, আদালত খুব বেশি দূর পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করে ফেলেছে! সেই বাইডেনই কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। যেখানে হোয়াইট হাউস সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লড়বার ঘোষণা দিয়েছে।
অথচ ওই সময় ভোটারেরাও বিষয়টিকে দলীয়ভাবে দেখেনি। ১৯৭৭ সালে জেনারেল সোশ্যাল সার্ভের মতামত জরিপে দেখা গেছে, ৩৯ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করেন কিছু কারণে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া উচিত, যেখানে ৩৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট গর্ভপাতের পক্ষে ছিলেন। আর এখন চিত্র পুরো উল্টো!
গর্ভপাত নিয়ে একটি রক্ষণশীল আন্দোলন সক্রিয়
পরবর্তী বছরগুলোতে ফিলিস শ্লাফলির মতো রক্ষণশীল অধিকারকর্মীরা এই সমস্যাটিকে ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁরা ইভাঞ্জেলিক চার্চগুলোকে পক্ষে টানতে শুরু করেন। এটার একটা বড় কারণ হতে পারে ধর্মীয় স্বাধীনতায় সরাসরি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে জমে থাকা ক্ষোভ। উন্মুক্ত স্থানে প্রার্থনা সীমিত করে রায় দিচ্ছিলেন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালত। এই পরিস্থিতিতে ইভাঞ্জেলিক গির্জাগুলো রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠতে শুরু করে।
সমকামীদের অধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্রমবর্ধমান হার এবং বাড়ির বাইরে নারীদের কাজ করার মতো বহু বিস্তৃত ও সুদূর প্রসারী সামাজিক উন্নয়নকে তাঁরা পারিবারিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে চিত্রিত করতে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয় গর্ভপাত।
ক্যালিফোর্নিয়া-ডেভিস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি ইতিহাসবিদ মেরি জিগলার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, যাজক এবং প্যারিশিয়ানদের মধ্যে বিকাশমান মার্কিন উদারনৈতিক সমাজ নিয়ে যে উদ্বেগ দানা বাঁধছিল সেখানে গর্ভপাত একটি প্রক্সি ইস্যু হয়ে ওঠে। অনেক ধর্মপ্রচারকের (ইভাঞ্জেলিক) জন্য এটি ছিল অনেক বেশি পরিবার, নারী এবং যৌনতা সম্পর্কিত ইস্যু।
১৯৮০ সালে সাউদার্ন ব্যাপটিস্ট কনভেনশন গর্ভপাতের বিরোধিতা করে একটি রেজ্যুলেশন পাস করে। এক দশক আগের অবস্থান থেকে তারা সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে যায়।
একই বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিপাবলিকান রোনাল্ড রিগ্যানের বিজয় গর্ভপাত বিরোধীদের হোয়াইট হাউসে একটি শক্তিশালী মিত্র তৈরি করে। একই সময় নারী অধিকার কর্মীরা ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে আরও প্রভাব বিস্তার করে এবং দলের নেতাদের গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করার জন্য তারা চাপ দিতে থাকে।
কিন্তু তখনো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পক্ষে সমর্থন বা বিরোধিতা রাজনৈতিক বিরোধের পর্যায়ে যায়নি।
১৯৮৩ সালে সিনেটের ভোটে ৩৪ জন রিপাবলিকান এবং ১৫ জন ডেমোক্র্যাট একটি প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেন, যা রো-ওয়েড মামলার রায়কে বাতিল করে দিতে পারে। ১৯ জন রিপাবলিকান এবং ৩১ জন ডেমোক্র্যাট এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন। আজকের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তৎকালীন সিনেটর কিন্তু এই প্রস্তাবে ‘না’ ভোট দেন। যদিও আগের বছর কমিটিতে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত নিয়ে এই বিতর্কের পরম্পরা দেখলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে—জাতীয় ইস্যু তৈরি হয় না, রাজনীতিকেরাই ইস্যু বাছাই করেন। আর ভোটারেরা ভেড়ার পালের মতো তাদের অনুসরণ করে!
পরবর্তী বছরগুলোতে বিভাজন রেখাগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রার্থীরা বুঝে ফেলেন যে, দলের মধ্যে ক্রমে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে এমন অধিকারকর্মীদের (অ্যাকটিভিস্ট) সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়ানোটা এখন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
রিপাবলিকান পার্টির নেতা জর্জ এইচডব্লিউ বুশ গর্ভপাত বিরোধী। আগে তিনি গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। ১৯৯২ সালে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী বিল ক্লিনটনের কাছে পরাজিত হন। ক্লিনটন কিন্তু একসময় গর্ভপাতের বিরোধিতা করেছিলেন!
১৯৮৯ সাল থেকে গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছে এমন সংগঠন ও সংস্থাগুলো গর্ভপাতকে বৈধ রাখা সমর্থন করেন এমন ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থীদের ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং এবং রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের ৩০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। রাজনীতিতে অর্থ প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহকারী সংস্থা ওপেনসিক্রেটস এই তথ্য দিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ীই, গর্ভপাতের বিরোধিতাকারী গোষ্ঠীগুলো একই সময়ের মধ্যে রিপাবলিকানদের ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ডেমোক্র্যাটদের মাত্র ৩ লাখ ৭২ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছে।
গর্ভপাত ইস্যুতে ভোটারদের মধ্যে স্পষ্ট বিভেদ তৈরি হতে বেশ সময় লেগেছে। এটি ধীরে ধীরে ঘটেছে। ১৯৯১ সালের শেষের দিকের জরিপ অনুসারে, ৪৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট এবং ৪১ শতাংশ রিপাবলিকান বিশেষ পরিস্থিতিতে গর্ভপাতকে সমর্থন করেছেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে দলীয় মতপার্থক্য আরও বিস্তৃত হয়। যদিও সমস্যাটি তখন তহবিল সংগ্রহের জন্য টিভিতে ব্যাপক বিজ্ঞাপন এবং এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর গণ সমাবেশের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।
জেনারেল সোশ্যাল সার্ভে অনুসারে, চলতি শতকের শুরুতে মাত্র ৩১ শতাংশ রিপাবলিকান বিশেষ পরিস্থিতিতে গর্ভপাতকে সমর্থন করেছিলেন। আর ডেমোক্রেটিক ভোটারদের এর পক্ষে সমর্থন ৪৫ শতাংশেই স্থির ছিল।
অন্যান্য মতামত জরিপ ধারাবাহিকভাবে দেখিয়েছে যে, বেশিরভাগ আমেরিকানরা গর্ভপাতের ওপর কিছু বিধিনিষেধকে সমর্থন করে। কিন্তু সরাসরি নিষেধাজ্ঞার বিরোধী তাঁরা। একই সময়ে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে সমর্থন বেড়েছে।
আজকের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বড় অংশজুড়ে ‘দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসা সেবা কর্মসূচিতে’ গর্ভপাতের জন্য ফেডারেল তহবিল ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিলেন। ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন চাওয়ার সময় তিনি তাঁর বিপরীত অবস্থানে চলে যান!
বর্তমান কংগ্রেসে শুধু একজন হাউস ডেমোক্র্যাট এবং একজন সিনেট ডেমোক্র্যাট এমন আইনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। সমস্ত পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী গর্ভপাতকে বৈধ করে তুলতেই বিলটি আনা হয়েছিল। কিন্তু বিলটি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ডেমোক্র্যাটরা বলেছেন, তাঁরা ২০২২ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে এটিকে কেন্দ্রীয় ইস্যু বানানোর পরিকল্পনা করছেন।
যেখানে ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে যে কোনো পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের পক্ষে সমর্থন ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ৫৬ শতাংশ, সেটি গত বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ শতাংশ। আর রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে গর্ভপাতের পক্ষে সমর্থন এখনো ৩৪ শতাংশের আশপাশেই আছে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৭ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে