গোলাম ওয়াদুদ
৭০ বছর রাজত্ব করে গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের রাজা হিসেবে তাঁর বড় ছেলে চার্লস সিংহাসনে আরোহণ করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি হতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ ১৪টি দেশের শীর্ষ নেতা। প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাজা চার্লস তৃতীয় বলেছেন, ‘রাজতন্ত্রের ভূমিকা ও কর্তব্য এখনো রয়ে গেছে।’ তবে ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকা বিভিন্ন অঞ্চলে রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দেদার।
বর্তমান রাজপরিবারের অধীনে থাকা অনেক দেশ রাজার শাসন থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনা। তাহলে কি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে রাজপরিবারের বা রাজা চার্লসের ক্ষমতা অনেকটা কমে যাবে?
সিংহাসনে তৃতীয় চার্লসের যোগদানের পরই ক্যারিবিয়ান রাজনীতিতে সুর পাল্টেছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে আল-জাজিরা। দেশটির অনেক নেতা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজাকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া কমনওয়েলথ ঘিরেও চলছে বিতর্ক।
৫৬টি দেশের একটি রাজনৈতিক সংস্থা হচ্ছে কমনওয়েলথ, যার বেশির ভাগই প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ। সারা বিশ্বে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ কমনওয়েলথের আওতায়। সর্বশেষ সদস্য হয়েছে টোগো ও গ্যাবন, যদিও কখনো ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল না দেশ দুটি।
এই ৫৬টি দেশের মধ্যে ১৪টি কমনওয়েলথ রাজ্যের অংশ। সেই সব দেশ এখনো রাজা চার্লসকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রেখেছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রেলিয়া, বাহামা, বেলিজ, কানাডা, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও টুভালু।
১৯৫২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে বেশ কিছু দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং অনেকে তখন রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু রানি তখন কমনওয়েলথকে এই দেশগুলোকে একত্রে রাখার উপায় হিসেবে দেখেছিলেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে একটি শীর্ষ সম্মেলনে কমনওয়েলথ নেতারা নিশ্চিত করেছেন যে রানির মৃত্যু হলে চার্লসকে সংগঠনের প্রধান হিসেবে অনুসরণ করা হবে। কিন্তু এখন কয়েকটি দেশ পরিবর্তনের কথা ভাবছে। অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, জ্যামাইকা, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস তারা রাজার শাসনের বাইরে থাকার কথা চিন্তা করছে।
তৃতীয় চার্লসকে অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার রাজা নিশ্চিত করার কিছুক্ষণ পরে প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউন বলেছেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রজাতন্ত্রের পক্ষে গণভোটের আয়োজন করতে চাই।’ সম্প্রচারমাধ্যম আইটিভি নিউজকে গ্যাস্টন ব্রাউন বলেছেন, স্বাধীনতার বৃত্তটি সম্পূর্ণ করার চূড়ান্ত পদক্ষেপে আছেন তাঁরা।
এদিকে জ্যামাইকায়ও পরিবর্তনের কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস গত মার্চ মাসে তৃতীয় চার্লসের ছেলে উইলিয়ামকে বলেছিলেন, ‘জাতি একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে এগিয়ে চলেছে।’ আগস্ট মাসে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৫৬ শতাংশ জ্যামাইকান ব্রিটিশ রাজাকে রাষ্ট্রপ্রধান পদ থেকে অপসারণের পক্ষে।
সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনের প্রধানমন্ত্রী রাল্ফ গনসালভেস এ বছরের জুলাই মাসে একটি গণভোটের প্রস্তাব করেছিলেন বটে। তবে তিনি বলেছিলেন, দ্বিদলীয় সমর্থন থাকলেই তিনি এটি অনুসরণ করবেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী চার্লস এ বছরের জুনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যেমনটি আমি আগেও বলেছি যে, প্রতিটি সদস্যের সাংবিধানিক ব্যবস্থা, প্রজাতন্ত্র বা রাজতন্ত্র বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পূর্ণ তাদের বিষয়।’
যেমন অনেক দেশ রাজার শাসনে থাকতে চায় না, তেমনি অনেক দেশ আবার রাজার শাসনেই থাকতে চায়। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও টুভালু এই তালিকায় আছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন গত সোমবার বলেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর সরকার প্রজাতন্ত্র হওয়ার চেষ্টা করবে না। আরডার্ন বলেছিলেন যে, তিনি ভেবেছিলেন নিউজিল্যান্ড অবশেষে একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হবে এবং এটি সম্ভবত তাঁর জীবদ্দশায় ঘটবে। তবে এটা তাঁর সরকারের জন্য আরও চাপের বিষয়। বিবিসি জানিয়েছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নতুন রাজার প্রতি দেশটির আনুগত্য নিশ্চিত করেছেন। ট্রুডো বলেছেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কানাডার নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতি আমাদের আনুগত্য নিশ্চিত করছি এবং তাঁকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি।’
এদিকে লাইভ মিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতন্ত্র হওয়ার প্রশ্নটি একটি বিতর্কিত বিষয়। বছরের পর বছর ধরে চলা বিভিন্ন জরিপে রাজতন্ত্রবাদী ও প্রজাতন্ত্র উভয়ের জন্যই প্রায় সমান সমর্থন দেখা যাচ্ছে। দেশটিতে ১৯৯৯ সালে প্রজাতন্ত্র হওয়ার জন্য একটি গণভোট হয়েছিল, যেখানে জয়ী হয়েছিল রাজতন্ত্র। একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে রানির মৃত্যু অস্ট্রেলিয়াকে প্রজাতন্ত্রের কাছাকাছি নিয়ে যাবে কি না। তিনি বলেছেন, ‘এটি বলার সময় এখন নয়।’
এ ছাড়া পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও টুভালুর নেতারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাজতন্ত্রের প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
রাজপরিবারের শাসনে থাকা ১৪ দেশের মধ্য বাকি থাকে আর পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো বাহামা, বেলিজ, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ও সেন্ট লুসিয়া।
২০২১ সালের নভেম্বরে বার্বাডোসের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি উৎসাহ হিসেবে দেখা হয়েছিল এবং বেলিজ তখন বলেছিল যে, তারাও এটি অনুসরণ করতে চায়।
বাহামাসে কেমব্রিজের ডিউক ও ডাচেসের সফরের পরে প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ ডেভিস বলেছিলেন, তিনি আশা করেন যে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের সময় ‘ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা ও বিতর্ক হবে’। তাতেই নির্ধারিত হবে যে বাহামাস কী হতে চায়!
গ্রেনাডার জনগণ দেশে রাজপরিবারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং গ্রেনাডার জাতীয় ক্ষতিপূরণ কমিটির চেয়ারম্যান আর্লে গ্রিল এই বছরের শুরুতে বলেছিলেন যে রাজতন্ত্র ‘তার প্রাসঙ্গিকতা এবং তাৎপর্য হারিয়েছে’।
গত এপ্রিল মাসে সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসও রাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক সংশোধন করার জন্য তাদের অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী শন রিচার্ডস বলেছিলেন, ‘এই দশকের অগ্রগতি আমাদের শিখিয়েছে যে, সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের রাজতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার পর্যালোচনা করা দরকার। এ ছাড়া নতুন মর্যাদায় অগ্রসর হওয়ার জন্য সংলাপ শুরু করার সময় এসেছে।’
এদিকে সেইন্ট লুসিয়াতেও প্রজাতন্ত্র হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এপ্রিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেন চ্যাস্তানেট এই আহ্বানকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি, সময় এসেছে একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়ার।’
এদিকে সিংহাসনে আহরণের পর রাজা চার্লস তাঁর ভাষণে নিজের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আজীবন সেবার প্রতিশ্রুতিই আমি আজ আপনাদের সবার কাছে নতুন করে ব্যক্ত করছি।’ রাজতন্ত্রের ভূমিকা এখনো আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের পূর্বতন মূল্যবোধ এখনো রয়ে গেছে এবং আগামী দিনেও তাতে স্থির থাকতে হবে। রাজতন্ত্রের ভূমিকা ও কর্তব্য এখনো রয়ে গেছে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজার শাসনে শেষ পর্যন্ত কতগুলো দেশ থাকে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিভিন্ন দেশের জনগণের রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব যেভাবে প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে, তাতে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ক্ষমতায় যে প্রভাব কিছুটা পড়বেই, তা অবশ্যম্ভাবী। এখন সেই প্রভাবে নতুন রাজার রাজত্বের পরিধি কতটা কমে যায়, সেটিই দেখার।
৭০ বছর রাজত্ব করে গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের রাজা হিসেবে তাঁর বড় ছেলে চার্লস সিংহাসনে আরোহণ করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি হতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ ১৪টি দেশের শীর্ষ নেতা। প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাজা চার্লস তৃতীয় বলেছেন, ‘রাজতন্ত্রের ভূমিকা ও কর্তব্য এখনো রয়ে গেছে।’ তবে ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকা বিভিন্ন অঞ্চলে রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দেদার।
বর্তমান রাজপরিবারের অধীনে থাকা অনেক দেশ রাজার শাসন থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনা। তাহলে কি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে রাজপরিবারের বা রাজা চার্লসের ক্ষমতা অনেকটা কমে যাবে?
সিংহাসনে তৃতীয় চার্লসের যোগদানের পরই ক্যারিবিয়ান রাজনীতিতে সুর পাল্টেছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে আল-জাজিরা। দেশটির অনেক নেতা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজাকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া কমনওয়েলথ ঘিরেও চলছে বিতর্ক।
৫৬টি দেশের একটি রাজনৈতিক সংস্থা হচ্ছে কমনওয়েলথ, যার বেশির ভাগই প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ। সারা বিশ্বে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ কমনওয়েলথের আওতায়। সর্বশেষ সদস্য হয়েছে টোগো ও গ্যাবন, যদিও কখনো ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল না দেশ দুটি।
এই ৫৬টি দেশের মধ্যে ১৪টি কমনওয়েলথ রাজ্যের অংশ। সেই সব দেশ এখনো রাজা চার্লসকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রেখেছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রেলিয়া, বাহামা, বেলিজ, কানাডা, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও টুভালু।
১৯৫২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে বেশ কিছু দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং অনেকে তখন রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু রানি তখন কমনওয়েলথকে এই দেশগুলোকে একত্রে রাখার উপায় হিসেবে দেখেছিলেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে একটি শীর্ষ সম্মেলনে কমনওয়েলথ নেতারা নিশ্চিত করেছেন যে রানির মৃত্যু হলে চার্লসকে সংগঠনের প্রধান হিসেবে অনুসরণ করা হবে। কিন্তু এখন কয়েকটি দেশ পরিবর্তনের কথা ভাবছে। অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, জ্যামাইকা, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস তারা রাজার শাসনের বাইরে থাকার কথা চিন্তা করছে।
তৃতীয় চার্লসকে অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার রাজা নিশ্চিত করার কিছুক্ষণ পরে প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউন বলেছেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রজাতন্ত্রের পক্ষে গণভোটের আয়োজন করতে চাই।’ সম্প্রচারমাধ্যম আইটিভি নিউজকে গ্যাস্টন ব্রাউন বলেছেন, স্বাধীনতার বৃত্তটি সম্পূর্ণ করার চূড়ান্ত পদক্ষেপে আছেন তাঁরা।
এদিকে জ্যামাইকায়ও পরিবর্তনের কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস গত মার্চ মাসে তৃতীয় চার্লসের ছেলে উইলিয়ামকে বলেছিলেন, ‘জাতি একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে এগিয়ে চলেছে।’ আগস্ট মাসে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৫৬ শতাংশ জ্যামাইকান ব্রিটিশ রাজাকে রাষ্ট্রপ্রধান পদ থেকে অপসারণের পক্ষে।
সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনের প্রধানমন্ত্রী রাল্ফ গনসালভেস এ বছরের জুলাই মাসে একটি গণভোটের প্রস্তাব করেছিলেন বটে। তবে তিনি বলেছিলেন, দ্বিদলীয় সমর্থন থাকলেই তিনি এটি অনুসরণ করবেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী চার্লস এ বছরের জুনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যেমনটি আমি আগেও বলেছি যে, প্রতিটি সদস্যের সাংবিধানিক ব্যবস্থা, প্রজাতন্ত্র বা রাজতন্ত্র বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পূর্ণ তাদের বিষয়।’
যেমন অনেক দেশ রাজার শাসনে থাকতে চায় না, তেমনি অনেক দেশ আবার রাজার শাসনেই থাকতে চায়। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও টুভালু এই তালিকায় আছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন গত সোমবার বলেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তাঁর সরকার প্রজাতন্ত্র হওয়ার চেষ্টা করবে না। আরডার্ন বলেছিলেন যে, তিনি ভেবেছিলেন নিউজিল্যান্ড অবশেষে একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হবে এবং এটি সম্ভবত তাঁর জীবদ্দশায় ঘটবে। তবে এটা তাঁর সরকারের জন্য আরও চাপের বিষয়। বিবিসি জানিয়েছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নতুন রাজার প্রতি দেশটির আনুগত্য নিশ্চিত করেছেন। ট্রুডো বলেছেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কানাডার নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতি আমাদের আনুগত্য নিশ্চিত করছি এবং তাঁকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি।’
এদিকে লাইভ মিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতন্ত্র হওয়ার প্রশ্নটি একটি বিতর্কিত বিষয়। বছরের পর বছর ধরে চলা বিভিন্ন জরিপে রাজতন্ত্রবাদী ও প্রজাতন্ত্র উভয়ের জন্যই প্রায় সমান সমর্থন দেখা যাচ্ছে। দেশটিতে ১৯৯৯ সালে প্রজাতন্ত্র হওয়ার জন্য একটি গণভোট হয়েছিল, যেখানে জয়ী হয়েছিল রাজতন্ত্র। একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে রানির মৃত্যু অস্ট্রেলিয়াকে প্রজাতন্ত্রের কাছাকাছি নিয়ে যাবে কি না। তিনি বলেছেন, ‘এটি বলার সময় এখন নয়।’
এ ছাড়া পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও টুভালুর নেতারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাজতন্ত্রের প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
রাজপরিবারের শাসনে থাকা ১৪ দেশের মধ্য বাকি থাকে আর পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো বাহামা, বেলিজ, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ও সেন্ট লুসিয়া।
২০২১ সালের নভেম্বরে বার্বাডোসের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি উৎসাহ হিসেবে দেখা হয়েছিল এবং বেলিজ তখন বলেছিল যে, তারাও এটি অনুসরণ করতে চায়।
বাহামাসে কেমব্রিজের ডিউক ও ডাচেসের সফরের পরে প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ ডেভিস বলেছিলেন, তিনি আশা করেন যে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের সময় ‘ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা ও বিতর্ক হবে’। তাতেই নির্ধারিত হবে যে বাহামাস কী হতে চায়!
গ্রেনাডার জনগণ দেশে রাজপরিবারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং গ্রেনাডার জাতীয় ক্ষতিপূরণ কমিটির চেয়ারম্যান আর্লে গ্রিল এই বছরের শুরুতে বলেছিলেন যে রাজতন্ত্র ‘তার প্রাসঙ্গিকতা এবং তাৎপর্য হারিয়েছে’।
গত এপ্রিল মাসে সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসও রাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক সংশোধন করার জন্য তাদের অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী শন রিচার্ডস বলেছিলেন, ‘এই দশকের অগ্রগতি আমাদের শিখিয়েছে যে, সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের রাজতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার পর্যালোচনা করা দরকার। এ ছাড়া নতুন মর্যাদায় অগ্রসর হওয়ার জন্য সংলাপ শুরু করার সময় এসেছে।’
এদিকে সেইন্ট লুসিয়াতেও প্রজাতন্ত্র হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এপ্রিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেন চ্যাস্তানেট এই আহ্বানকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি, সময় এসেছে একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়ার।’
এদিকে সিংহাসনে আহরণের পর রাজা চার্লস তাঁর ভাষণে নিজের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আজীবন সেবার প্রতিশ্রুতিই আমি আজ আপনাদের সবার কাছে নতুন করে ব্যক্ত করছি।’ রাজতন্ত্রের ভূমিকা এখনো আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের পূর্বতন মূল্যবোধ এখনো রয়ে গেছে এবং আগামী দিনেও তাতে স্থির থাকতে হবে। রাজতন্ত্রের ভূমিকা ও কর্তব্য এখনো রয়ে গেছে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজার শাসনে শেষ পর্যন্ত কতগুলো দেশ থাকে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিভিন্ন দেশের জনগণের রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব যেভাবে প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে, তাতে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ক্ষমতায় যে প্রভাব কিছুটা পড়বেই, তা অবশ্যম্ভাবী। এখন সেই প্রভাবে নতুন রাজার রাজত্বের পরিধি কতটা কমে যায়, সেটিই দেখার।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে