অনলাইন ডেস্ক
আয়তনে খুবই ছোট্ট দেশ কাতার। ছোট হলেও দেশটি চলমান গাজা সংকটে হামাসের সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশটির মধ্যস্থতায় হামাস চার জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। আবার গাজায় আটকে পড়া বিদেশি ও গুরুতর আহত ফিলিস্তিনিদের রাফাহ ক্রসিংয়ের মাধ্যমে মিসরে পাঠানোর বিষয়টিরও মধ্যস্থতা করেছে কাতার। প্রশ্ন হলো, এই মধ্যস্থতা থেকে কাতার কী অর্জন করে বা করতে চায় এবং কীভাবে দেশটি এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়।
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতারের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর অপসারণ ও তালেবানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভূমিকা পালন করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বন্দী বিনিময়, জব্দ করা টাকা ছাড় এবং পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনার ক্ষেত্রেও মধ্যস্থতা করেছে দোহা। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে দোহা ওয়াশিংটনেরও ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠেছে। দেশটিতে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটিটি অবস্থিত।
হামাসের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কও এক যুগের বেশি পুরোনো। ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ এই দেশটির বিরুদ্ধে। যদিও কাতার সব সময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলো সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই কাতারের সঙ্গে ২০১৭ সালে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এসব দেশের মধ্যে—সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর অন্যতম। তবে এর আগেই ২০১২ সালে কাতার হামাসকে দোহায় তাদের কার্যালয় চালু করার অনুমতি দেয়।
কেবল তাই নয়, গাজায় যে প্রশাসন পরিচালনা করে হামাস তার বেতন-ভাতা সরবরাহ করে কাতার। প্রতি মাসে গাজার পরিবারগুলোকে সরাসরি সহায়তা হিসেবে ৩ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩১০ কোটি টাকারও বেশি) দেয়। এমনকি স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর জন্য জ্বালানিও সরবরাহ করে দেশটি।
কাতারের কেবল হামাসের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে তা নয়। ইসরায়েলের সঙ্গেও ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে যোগাযোগ বজায় রেখেছে দেশটি। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কাতারই সবার আগে, ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা আক্রমণ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে কাতার। তবে ব্যাক ডোর অর্থাৎ পেছনের দরজা দিয়ে দোহা এখনো তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কাতার যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও ন্যাটোর বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।
সব মিলিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে নানামাত্রিক সম্পর্কের কারণেই কাতার একটি আদর্শ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, কাতারের এই অবস্থান দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অপরিহার্য মিত্র হিসেবে তুলে ধরছে। তবে আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, হামাস এক সময় কাতারের কাছে বোঝায় পরিণত হবে।
লন্ডনের কিংস কলেজে উপসাগরীয় দেশগুলো নিয়ে কাজ করা সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রেইগ বলেন, ‘কাতার কূটনীতিতে নিজের একটি জায়গা তৈরির চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মূল কারণ ছিল—গাজায় ইসরায়েলি অভিযান বিলম্বিত করা।’ ক্রেইগের মতে, হামাসের কাছ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে পারলে তা কাতারকে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে যাবে।
ইসরায়েল ৭ অক্টোবরের ঘটনার প্রায় ৩ সপ্তাহ পর গাজায় ব্যাপক আকারে স্থল অভিযান চালানো শুরু করেছে গত শুক্রবারে। ইসরায়েলি এই অভিযান হামাসের হাতে জিম্মি ২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশির প্রাণকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মত মার্কিন কর্মকর্তাদের। কাতারও একই অবস্থান ব্যক্ত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, স্থল যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে বন্দী সংক্রান্ত আলোচনার প্রকৃতি কঠিন হয়ে পড়েছে।
কিন্তু এখনো সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। ক্রেইগ বলছেন, ‘কাতারের সঙ্গে হামাসের যে সম্পর্ক সেটিই এই জিম্মি মুক্তির আলোচনার মূলভিত্তি। এ ক্ষেত্রে কাতারের অবস্থান অনেকটা একচ্ছত্র। নিজের অবস্থানের কারণে কাতার চলমান সংকটের দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা চালাতে পারে যা বিশ্বের আর কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়।’
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক জস আর হিল্টারমান বিভিন্ন মধ্যস্থতায় কাতারের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘মধ্যস্থতা’ কাতারের সবচেয়ে বেশি বিক্রয়যোগ্য দক্ষতার একটি।
ইসরায়েলও কাতারের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জিচকো হানেবি কাতারের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে বলেছেন, উপসাগরীয় এই দেশটি এই সংকটের মানবিক সমাধানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে হাজির হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেন ‘বর্তমান সময়ে কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে যে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে তার ফলে ইসরায়েল স্তম্ভিত হয়েছিল কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই অবস্থা কাটিয়ে দেশটি প্রবল পরাক্রমে গাজার সাধারণ জনগণের ওপর হামলা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজারের কাছাকাছি মানুষ নিহত হয়েছে। এই অবস্থা প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে কাতারের কূটনৈতিক তৎপরতা কী খুব একটা কাজে আসেনি? নাকি কাতার এই বিষয়টি এড়িয়ে কেবল বন্দী/জিম্মি মুক্তির অংশটুকুতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছে? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন—এই পরিপ্রেক্ষিতে হামাস কি কাতারের জন্য বোঝা হয়ে উঠবে?
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা স্বীকার করলেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন অভিযোগ করেছেন, কাতার হামাসকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করার পাশাপাশি গোষ্ঠীটির নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছে। জবাবে কাতার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দেশটি বলেছে, তাঁরা ইসরায়েলি মন্ত্রীর এমন মন্তব্যে বিস্মিত ও হতাশ। বিশেষ করে কাতার যখন জিম্মিদের মুক্তি এবং সংকট প্রশমনে কাজ করে যাচ্ছে সে সময় এ ধরনের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য। দেশটি আরও বলেছে, এ ধরনের উসকানিমূলক বিবৃতি মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মানুষের জীবনকে বিপন্ন করবে।
ক্রেইগের মতে, হামাসের প্রতি কাতারের আলাদা একটি টান রয়েছে। তবে বাস্তবতার আলোকে এই দুই পক্ষের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করা উচিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জিম্মি সংকট শেষ হওয়ার পর কাতার হামাসের সঙ্গে তার সম্পর্ককে নতুন করে মূল্যায়ন করবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনকে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও কাতারের আমিরের মধ্যে দোহায় সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেই সূত্র। তবে চুক্তি অনুসারে, কাতার থেকে হামাস নেতাদের বহিষ্কার করবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত।
ক্রেইগের মতে, এমনটা মনে হচ্ছে না যে—কাতার হামাস নেতাদের বের করে দেবে। তবে দেশটি হামাসের সঙ্গে আপাত একটি দূরত্ব বজায় রাখবে। যেমনটা তাঁরা করেছে তালেবানের সঙ্গে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় মার্কিন নীতি নির্ধারকদের একাংশ। জস আর হিল্টারমানের মতে, হামাসকে বের করে দেওয়ার জন্য কাতারের ওপর চাপ থাকলেও দেশটি তা করবে বলে মনে হয় না। কারণ, এটি কাতারের নিজেকে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো একটি পদক্ষেপ হবে। কারণ এমনটা হলে হামাস ইরানের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে।
হিল্টারমানের মতে, এমনটা হলে আপনি আপনার সব ধরনের যোগাযোগ হারিয়ে ফেলবেন। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ভবিষ্যতে যেকোনো সময় এই যোগাযোগ খুবই কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে।
যাই হোক, কাতারের প্রচেষ্টার পরও ইসরায়েল হুমকি দিয়েছে—তারা হামাসকে চিরতরে মুছে ফেলবে যাতে তারা আর কোনো দিন ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে। এমনটা হলে হয়তো, ভবিষ্যতে কাতারের আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু এর অন্যথা হলে কাতারের প্রয়োজন খুব শিগগিরই ফুরিয়ে যাবে—এমনটাও ভাবা যাচ্ছে না।
সিএনএন থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আয়তনে খুবই ছোট্ট দেশ কাতার। ছোট হলেও দেশটি চলমান গাজা সংকটে হামাসের সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশটির মধ্যস্থতায় হামাস চার জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। আবার গাজায় আটকে পড়া বিদেশি ও গুরুতর আহত ফিলিস্তিনিদের রাফাহ ক্রসিংয়ের মাধ্যমে মিসরে পাঠানোর বিষয়টিরও মধ্যস্থতা করেছে কাতার। প্রশ্ন হলো, এই মধ্যস্থতা থেকে কাতার কী অর্জন করে বা করতে চায় এবং কীভাবে দেশটি এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়।
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতারের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর অপসারণ ও তালেবানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভূমিকা পালন করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বন্দী বিনিময়, জব্দ করা টাকা ছাড় এবং পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনার ক্ষেত্রেও মধ্যস্থতা করেছে দোহা। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে দোহা ওয়াশিংটনেরও ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠেছে। দেশটিতে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটিটি অবস্থিত।
হামাসের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কও এক যুগের বেশি পুরোনো। ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ এই দেশটির বিরুদ্ধে। যদিও কাতার সব সময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলো সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই কাতারের সঙ্গে ২০১৭ সালে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এসব দেশের মধ্যে—সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর অন্যতম। তবে এর আগেই ২০১২ সালে কাতার হামাসকে দোহায় তাদের কার্যালয় চালু করার অনুমতি দেয়।
কেবল তাই নয়, গাজায় যে প্রশাসন পরিচালনা করে হামাস তার বেতন-ভাতা সরবরাহ করে কাতার। প্রতি মাসে গাজার পরিবারগুলোকে সরাসরি সহায়তা হিসেবে ৩ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩১০ কোটি টাকারও বেশি) দেয়। এমনকি স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর জন্য জ্বালানিও সরবরাহ করে দেশটি।
কাতারের কেবল হামাসের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে তা নয়। ইসরায়েলের সঙ্গেও ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে যোগাযোগ বজায় রেখেছে দেশটি। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কাতারই সবার আগে, ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা আক্রমণ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে কাতার। তবে ব্যাক ডোর অর্থাৎ পেছনের দরজা দিয়ে দোহা এখনো তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কাতার যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও ন্যাটোর বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।
সব মিলিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে নানামাত্রিক সম্পর্কের কারণেই কাতার একটি আদর্শ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, কাতারের এই অবস্থান দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অপরিহার্য মিত্র হিসেবে তুলে ধরছে। তবে আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, হামাস এক সময় কাতারের কাছে বোঝায় পরিণত হবে।
লন্ডনের কিংস কলেজে উপসাগরীয় দেশগুলো নিয়ে কাজ করা সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রেইগ বলেন, ‘কাতার কূটনীতিতে নিজের একটি জায়গা তৈরির চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মূল কারণ ছিল—গাজায় ইসরায়েলি অভিযান বিলম্বিত করা।’ ক্রেইগের মতে, হামাসের কাছ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে পারলে তা কাতারকে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে যাবে।
ইসরায়েল ৭ অক্টোবরের ঘটনার প্রায় ৩ সপ্তাহ পর গাজায় ব্যাপক আকারে স্থল অভিযান চালানো শুরু করেছে গত শুক্রবারে। ইসরায়েলি এই অভিযান হামাসের হাতে জিম্মি ২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশির প্রাণকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মত মার্কিন কর্মকর্তাদের। কাতারও একই অবস্থান ব্যক্ত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, স্থল যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে বন্দী সংক্রান্ত আলোচনার প্রকৃতি কঠিন হয়ে পড়েছে।
কিন্তু এখনো সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। ক্রেইগ বলছেন, ‘কাতারের সঙ্গে হামাসের যে সম্পর্ক সেটিই এই জিম্মি মুক্তির আলোচনার মূলভিত্তি। এ ক্ষেত্রে কাতারের অবস্থান অনেকটা একচ্ছত্র। নিজের অবস্থানের কারণে কাতার চলমান সংকটের দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা চালাতে পারে যা বিশ্বের আর কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়।’
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক জস আর হিল্টারমান বিভিন্ন মধ্যস্থতায় কাতারের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘মধ্যস্থতা’ কাতারের সবচেয়ে বেশি বিক্রয়যোগ্য দক্ষতার একটি।
ইসরায়েলও কাতারের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জিচকো হানেবি কাতারের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে বলেছেন, উপসাগরীয় এই দেশটি এই সংকটের মানবিক সমাধানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে হাজির হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেন ‘বর্তমান সময়ে কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে যে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে তার ফলে ইসরায়েল স্তম্ভিত হয়েছিল কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই অবস্থা কাটিয়ে দেশটি প্রবল পরাক্রমে গাজার সাধারণ জনগণের ওপর হামলা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজারের কাছাকাছি মানুষ নিহত হয়েছে। এই অবস্থা প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে কাতারের কূটনৈতিক তৎপরতা কী খুব একটা কাজে আসেনি? নাকি কাতার এই বিষয়টি এড়িয়ে কেবল বন্দী/জিম্মি মুক্তির অংশটুকুতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছে? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন—এই পরিপ্রেক্ষিতে হামাস কি কাতারের জন্য বোঝা হয়ে উঠবে?
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা স্বীকার করলেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন অভিযোগ করেছেন, কাতার হামাসকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করার পাশাপাশি গোষ্ঠীটির নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছে। জবাবে কাতার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দেশটি বলেছে, তাঁরা ইসরায়েলি মন্ত্রীর এমন মন্তব্যে বিস্মিত ও হতাশ। বিশেষ করে কাতার যখন জিম্মিদের মুক্তি এবং সংকট প্রশমনে কাজ করে যাচ্ছে সে সময় এ ধরনের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য। দেশটি আরও বলেছে, এ ধরনের উসকানিমূলক বিবৃতি মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মানুষের জীবনকে বিপন্ন করবে।
ক্রেইগের মতে, হামাসের প্রতি কাতারের আলাদা একটি টান রয়েছে। তবে বাস্তবতার আলোকে এই দুই পক্ষের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করা উচিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জিম্মি সংকট শেষ হওয়ার পর কাতার হামাসের সঙ্গে তার সম্পর্ককে নতুন করে মূল্যায়ন করবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনকে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও কাতারের আমিরের মধ্যে দোহায় সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেই সূত্র। তবে চুক্তি অনুসারে, কাতার থেকে হামাস নেতাদের বহিষ্কার করবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত।
ক্রেইগের মতে, এমনটা মনে হচ্ছে না যে—কাতার হামাস নেতাদের বের করে দেবে। তবে দেশটি হামাসের সঙ্গে আপাত একটি দূরত্ব বজায় রাখবে। যেমনটা তাঁরা করেছে তালেবানের সঙ্গে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় মার্কিন নীতি নির্ধারকদের একাংশ। জস আর হিল্টারমানের মতে, হামাসকে বের করে দেওয়ার জন্য কাতারের ওপর চাপ থাকলেও দেশটি তা করবে বলে মনে হয় না। কারণ, এটি কাতারের নিজেকে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো একটি পদক্ষেপ হবে। কারণ এমনটা হলে হামাস ইরানের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে।
হিল্টারমানের মতে, এমনটা হলে আপনি আপনার সব ধরনের যোগাযোগ হারিয়ে ফেলবেন। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ভবিষ্যতে যেকোনো সময় এই যোগাযোগ খুবই কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে।
যাই হোক, কাতারের প্রচেষ্টার পরও ইসরায়েল হুমকি দিয়েছে—তারা হামাসকে চিরতরে মুছে ফেলবে যাতে তারা আর কোনো দিন ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে। এমনটা হলে হয়তো, ভবিষ্যতে কাতারের আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু এর অন্যথা হলে কাতারের প্রয়োজন খুব শিগগিরই ফুরিয়ে যাবে—এমনটাও ভাবা যাচ্ছে না।
সিএনএন থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৭ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে