কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
ফুলের মতো দেয়ালটাতে
একটি প্রজাপতি,
দুঃসাহসে বসলো এসে
আলোর মুখোমুখি;...
সেই প্রজাপতি, নির্মলেন্দু গুণ
প্রবাদ আছে, দুঃসাহসে দুঃখ হয়। কিন্তু বাগেরহাটের প্রজাপতি স্কোয়াড দুঃসাহসে ভর করে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া এখনো যে কতটা কঠিন কাজ, তা কারও অজানা নয়। সেই কঠিন কাজই করে চলেছে বাগেরহাটের কিশোরীরা। প্রজাপতি স্কোয়াড নামে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে তারা।
স্কোয়াডের প্রজাপতি কারা
বাগেরহাটের মেয়ে নূশরাত ইসলাম তৃষা। বাগেরহাটের সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। লেখাপড়া শেষে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান তৃষা। ধীরে ধীরে সেই স্বপ্নের দিকে পা বাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুঝতে পারছিলেন, কন্যাশিশুদের অনেক বৈষম্যের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়। এর কোনো শেষ নেই, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানও নেই। কিন্তু তিনি এটাও দেখেছেন, বিষয়টি নিয়ে অনেকে নানাভাবে কাজ করে চলেছেন। তৃষা ভাবলেন, তিনিও কন্যাশিশুদের নিয়ে ‘কিছু একটা’ করবেন।
সেই ভাবনা থেকে ২০২৩ সালে জানুয়ারি কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তুললেন প্রজাপতি স্কোয়াড। উদ্দেশ্য, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা এবং কন্যাশিশুদের প্রাপ্য অধিকারের সঙ্গে বড় হয়ে
উঠতে সহায়তা করা। দলটির সদস্য এখন ৮ জন।
প্রজাপতি স্কোয়াডের সদস্যরা স্কুলে ঘুরে ঘুরে বাল্যবিবাহ বন্ধে মেয়ে ও ছেলেদের সচেতন করে। বাল্যবিবাহের কুফল কী, এর কারণে কেন দেশ পিছিয়ে যায়, বাল্যবিবাহ কেন আইনত অপরাধ—এসব বিষয়ে কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীদের জানানোর কাজ করা হয়। এর বাইরে আছে শিশুদের অধিকারের কথা।
এই কিশোরী প্রজাপতিরা কাজ করছে বাগেরহাটকে কেন্দ্র করে। কারণ, তারা সবাই সেখানেই থাকে।
বাধা পেরিয়ে যারা ডানা মেলে
মেয়েরা ঘরে থাকবে, ঘরের কাজ করবে—এমন চিন্তাধারা থেকে এখনো বের হতে পারেনি সমাজ।
এ পরিস্থিতিতে স্কুলে বাল্যবিবাহ রোধের বিষয়ে ক্যাম্পেইন করা কঠিন কাজ। তৃষা জানিয়েছেন, তাঁদের কাজের প্রশংসা করেন অনেকে। আবার অনেকে এটিকে ‘ভালো চোখে’ দেখেনও না। মূল সমস্যা, অনেক পরিবারে এখনো মেয়েদের বোঝা মনে করা হয়। ফলে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে হয়ে যায়। কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টি রয়েছে যাদের, তারাই প্রজাপতি স্কোয়াডের কাজ পছন্দ করে না। আবার এর সদস্যরা মেয়ে হওয়ায় সমালোচনাটা যেন বেশি।
এরপরেও তৃষা স্বপ্ন দেখেন, প্রজাপতি স্কোয়াড বড় পরিসরে কাজ করবে। এর ব্যাপ্তি হবে পুরো দেশ। তৃষা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি স্কুলে ক্যাম্পেইন করতে। একবার একটি স্কুলে গিয়েছিলাম ক্যাম্পিংয়ের জন্য। সেখানে প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন, স্কুলে ছেলে আছে। তাই মেয়েদের বোরকা না পরলে স্কুলে ঢোকা যাবে না।’ সাদা গোলাপি জামা আর গোলাপি রঙের ওড়না পরা প্রজাপতি স্কোয়াডকে আটকে দেওয়া হয়েছিল সেদিন। এসব ঘটনা মনে আঘাত দেয় প্রজাপতি স্কোয়াডের সদস্যদের।
সীমানা পেরিয়ে
প্রজাপতি স্কোয়াড ইতিমধ্যে বাগেরহাটের দশটি স্কুলে বাল্যবিবাহের কুফল এবং শিশু ও নারীদের অধিকার বিষয়ে কর্মশালা করেছে। এসব কর্মশালায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। ধীরে ধীরে স্কুলভিত্তিক এই কর্মশালার সংখ্যা বাড়ছে।
এসব কর্মকাণ্ডের সংবাদ এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক মহলে। আর সে জন্যই এ বছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তৃষা। নেদারল্যান্ডসের কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন তাঁকে বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করায় আন্তর্জাতিক এ পুরস্কারে মনোনীত করেছে।
বৈষম্যহীনতার স্বপ্ন দেখে প্রজাপতিরা
‘আমি নারীদের জন্য এমন একটি রাষ্ট্রের আশা করি, যেখানে কোনো কন্যাশিশুকে বাল্যবিবাহের শিকার হতে হবে না। সব কন্যাশিশু সমান অধিকারের সঙ্গে বড় হতে পারবে। মেয়েরা খেলার মাঠে সমান সুযোগ পাবে। কোনো নারীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হতে হবে না।’ দৃঢ়কণ্ঠে বলেন তৃষা। সেই রাষ্ট্রে প্রত্যেক কন্যাশিশু, কিশোরী ও নারী বাঁচবে সমান অধিকার আর নিরাপত্তা নিয়ে।
বৈষম্যবিরোধের এই সময়ে নারীদের ওপর থেকে সব ধরনের অসমতার অবসান চান তৃষা এবং তাঁর প্রজাপতি স্কোয়াডের সঙ্গীরা।
ফুলের মতো দেয়ালটাতে
একটি প্রজাপতি,
দুঃসাহসে বসলো এসে
আলোর মুখোমুখি;...
সেই প্রজাপতি, নির্মলেন্দু গুণ
প্রবাদ আছে, দুঃসাহসে দুঃখ হয়। কিন্তু বাগেরহাটের প্রজাপতি স্কোয়াড দুঃসাহসে ভর করে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া এখনো যে কতটা কঠিন কাজ, তা কারও অজানা নয়। সেই কঠিন কাজই করে চলেছে বাগেরহাটের কিশোরীরা। প্রজাপতি স্কোয়াড নামে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে তারা।
স্কোয়াডের প্রজাপতি কারা
বাগেরহাটের মেয়ে নূশরাত ইসলাম তৃষা। বাগেরহাটের সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। লেখাপড়া শেষে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান তৃষা। ধীরে ধীরে সেই স্বপ্নের দিকে পা বাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুঝতে পারছিলেন, কন্যাশিশুদের অনেক বৈষম্যের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়। এর কোনো শেষ নেই, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানও নেই। কিন্তু তিনি এটাও দেখেছেন, বিষয়টি নিয়ে অনেকে নানাভাবে কাজ করে চলেছেন। তৃষা ভাবলেন, তিনিও কন্যাশিশুদের নিয়ে ‘কিছু একটা’ করবেন।
সেই ভাবনা থেকে ২০২৩ সালে জানুয়ারি কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তুললেন প্রজাপতি স্কোয়াড। উদ্দেশ্য, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা এবং কন্যাশিশুদের প্রাপ্য অধিকারের সঙ্গে বড় হয়ে
উঠতে সহায়তা করা। দলটির সদস্য এখন ৮ জন।
প্রজাপতি স্কোয়াডের সদস্যরা স্কুলে ঘুরে ঘুরে বাল্যবিবাহ বন্ধে মেয়ে ও ছেলেদের সচেতন করে। বাল্যবিবাহের কুফল কী, এর কারণে কেন দেশ পিছিয়ে যায়, বাল্যবিবাহ কেন আইনত অপরাধ—এসব বিষয়ে কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীদের জানানোর কাজ করা হয়। এর বাইরে আছে শিশুদের অধিকারের কথা।
এই কিশোরী প্রজাপতিরা কাজ করছে বাগেরহাটকে কেন্দ্র করে। কারণ, তারা সবাই সেখানেই থাকে।
বাধা পেরিয়ে যারা ডানা মেলে
মেয়েরা ঘরে থাকবে, ঘরের কাজ করবে—এমন চিন্তাধারা থেকে এখনো বের হতে পারেনি সমাজ।
এ পরিস্থিতিতে স্কুলে বাল্যবিবাহ রোধের বিষয়ে ক্যাম্পেইন করা কঠিন কাজ। তৃষা জানিয়েছেন, তাঁদের কাজের প্রশংসা করেন অনেকে। আবার অনেকে এটিকে ‘ভালো চোখে’ দেখেনও না। মূল সমস্যা, অনেক পরিবারে এখনো মেয়েদের বোঝা মনে করা হয়। ফলে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে হয়ে যায়। কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টি রয়েছে যাদের, তারাই প্রজাপতি স্কোয়াডের কাজ পছন্দ করে না। আবার এর সদস্যরা মেয়ে হওয়ায় সমালোচনাটা যেন বেশি।
এরপরেও তৃষা স্বপ্ন দেখেন, প্রজাপতি স্কোয়াড বড় পরিসরে কাজ করবে। এর ব্যাপ্তি হবে পুরো দেশ। তৃষা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি স্কুলে ক্যাম্পেইন করতে। একবার একটি স্কুলে গিয়েছিলাম ক্যাম্পিংয়ের জন্য। সেখানে প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন, স্কুলে ছেলে আছে। তাই মেয়েদের বোরকা না পরলে স্কুলে ঢোকা যাবে না।’ সাদা গোলাপি জামা আর গোলাপি রঙের ওড়না পরা প্রজাপতি স্কোয়াডকে আটকে দেওয়া হয়েছিল সেদিন। এসব ঘটনা মনে আঘাত দেয় প্রজাপতি স্কোয়াডের সদস্যদের।
সীমানা পেরিয়ে
প্রজাপতি স্কোয়াড ইতিমধ্যে বাগেরহাটের দশটি স্কুলে বাল্যবিবাহের কুফল এবং শিশু ও নারীদের অধিকার বিষয়ে কর্মশালা করেছে। এসব কর্মশালায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। ধীরে ধীরে স্কুলভিত্তিক এই কর্মশালার সংখ্যা বাড়ছে।
এসব কর্মকাণ্ডের সংবাদ এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক মহলে। আর সে জন্যই এ বছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তৃষা। নেদারল্যান্ডসের কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন তাঁকে বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করায় আন্তর্জাতিক এ পুরস্কারে মনোনীত করেছে।
বৈষম্যহীনতার স্বপ্ন দেখে প্রজাপতিরা
‘আমি নারীদের জন্য এমন একটি রাষ্ট্রের আশা করি, যেখানে কোনো কন্যাশিশুকে বাল্যবিবাহের শিকার হতে হবে না। সব কন্যাশিশু সমান অধিকারের সঙ্গে বড় হতে পারবে। মেয়েরা খেলার মাঠে সমান সুযোগ পাবে। কোনো নারীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হতে হবে না।’ দৃঢ়কণ্ঠে বলেন তৃষা। সেই রাষ্ট্রে প্রত্যেক কন্যাশিশু, কিশোরী ও নারী বাঁচবে সমান অধিকার আর নিরাপত্তা নিয়ে।
বৈষম্যবিরোধের এই সময়ে নারীদের ওপর থেকে সব ধরনের অসমতার অবসান চান তৃষা এবং তাঁর প্রজাপতি স্কোয়াডের সঙ্গীরা।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন বা ওএইচসিএইচআর এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের
২ দিন আগেআপনি শিক্ষিত ও সচেতন একজন মানুষ। সম্পর্কের একটি সুন্দর পর্যায়ে আছেন। তবে আপনার সঙ্গীর যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা কিন্তু বড় ধরনের আবেগীয়
২ দিন আগেশওকত আরা খন্দকার ওরফে ঝর্ণা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঘর-সংসার সামলে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
২ দিন আগেকাজের মাধ্যমে জীবনে বিস্ময়কর কোনো অভিজ্ঞতাকে অনুভব করতে পারে, এমন মানুষ আসলেই সৌভাগ্যবান।
২ দিন আগে