জিনাতুন নুর
অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রকৌশলসেবা—এমন সব ক্ষেত্রে সেই নারীদের অবদান ছিল অসাধারণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁদের অবদান যুদ্ধের ফলাফলে হয়তো নির্ণায়ক ছিল, কিন্তু গতিপথ পাল্টাতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুদায়িত্ব পুরুষেরা সামাল দিলেও লড়াইয়ে অংশ নেওয়া এই পাঁচ নারী যা করেছেন, তা সত্যিই আশাতীত ও বিস্ময়কর।
জোসেফাইন বেকার
১৯০৩ সালের ৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির লুইসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন জোসেফাইন বেকার। শিশুকালেই বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে পূর্ব সেন্ট লুইস জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতা এই কিশোরীর মনে দাগ কাটে; কর্মজীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে। বেকার ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান নৃত্যশিল্পী; ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া বেকারের জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর কেউ হোটেলে থাকতে পারত না।
কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি বেকার। শিল্পের প্রতি প্রবল ঝোঁক এসব বাধা ডিঙিয়ে তাকে নিউইর্য়কে নিয়ে যায়। সেখানে ‘হারলেম রেনেসাঁ’ নামে আফ্রিকান-আমেরিকান বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। তারপর আটলান্টিক পেরিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও যান তিনি।
অনন্য অভিনয়ের জন্য বেকার বেশ জনপ্রিয়তা পান। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক অর্থ উপার্জন করেন এবং ইউরোপের অনেক শহর ভ্রমণ করেন। সেই সময় ইউরোপে অতি রক্ষণশীলতার উত্থান ভালোভাবেই বেকারের নজরে পড়ে।
জাতিগত আধিপত্য ও জাতীয়তাবাদের ভিতের ওপর গড়ে ওঠা ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান বেকারকে সেন্ট লুইসের বর্ণবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪০ সালের মে মাসে ফ্রান্সে আগ্রাসন চালানোর পর নাৎসিদের কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বেকার। যে দেশ (ফ্রান্স) তাকে এত কিছু দিয়েছে, সে দেশ জার্মানির দখলে চলে যাচ্ছে দেখে নাৎসিবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি।
ফ্রান্সে শ্যাতো দি মিলান্দেস নামে পঞ্চদশ শতকের তৈরি প্রাসাদে থাকতেন বেকার। ১৯৪০ সালে তিনি বাড়িটি ভাড়া নেন এবং সাত বছর পর সেটি কিনে নেন। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাসাদ ঘুরে দেখতে আসেন এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বেকারকে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দিলে তিনি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন। খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার কারণে বেকার বহু কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতেন। সেখান থেকে তিনি গোপনে জার্মান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতেন। ফ্রান্স থেকে পালিয়ে পর্তুগাল আসার পর বেকার বিভিন্ন দূতাবাসের পার্টিগুলোতে অংশ নেন এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা আন্দোলনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। হোটেলরুমে ফিরে এসব তথ্য অদৃশ্য কালি বা সুরক্ষা কালি ব্যবহার করে লিখে রাখতেন।
তবে নিউমোনিয়া ও রক্তে বিষক্রিয়াসহ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বেকারের গুপ্তচর জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অসুস্থ অবস্থায় ২১ মাস হাসপাতালে কাটান তিনি। এরপর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র বাহিনীর পক্ষে কাজ করে যুদ্ধের বাকি সময় পার করেন বেকার।
এলসি ম্যাকগিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফাইন বেকারের মতো এলসি ম্যাকগিলও সম্মুখসমরে অংশ নেননি। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের গল্প কম অনুপ্রেরণাদায়ক নয়। ১৯০৫ সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাকগিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই নারী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম কানাডিয়ান নারী হিসেবে ১৯২৭ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যার ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে গাড়ি তৈরির কাজ করতেন। পরে বিমানের মতো রোমাঞ্চকর পরিবহন তৈরিতে মনোযোগ দেন ম্যাকগিল।
কিন্তু প্রাণঘাতী পোলিও রোগ ম্যাকগিলের কর্মময় জীবনকে থামিয়ে দেয়। কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে পড়ায় দৈনন্দিন কাজে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হতো এবং মাংসপেশির খিঁচুনিতেও ভোগেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তিনি হাঁটতে পারতেন এবং কাজেও ফিরতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান গাড়ি ও ঢালাই কোম্পানিতে (ক্যান-কার হিসেবে পরিচিত) কাজ করেন ম্যাকগিল। প্রধান বিমান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান হকার-হারিকেন তৈরি করেন। এর জন্য তাকে ‘কুইন অব হারিকেনস’ বা ‘হারিকেনের রানি’ বলা হয়। এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়ার উপযোগী যুদ্ধবিমানের নকশাও করেন তিনি। বি-শীতলীকরণ ও স্কি ল্যান্ডিংসহ ম্যাকগিলের তৈরি নতুন হকার হারিকেন শীতকালীন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত ছিল।
যুদ্ধের বাইরে ম্যাকগিল কানাডিয়ান ফেডারেশন অব বিজনেস অ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাবের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে ম্যাকগিলকে কানাডার সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অর্ডার অব কানাডা’ দেওয়া হয়।
ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়। ১৯৩২ সালে স্থায়ীভাবে রাজধানী কিয়েভে চলে আসেন তিনি। ফায়ারিং রেঞ্জ বা বন্দুক চালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়ার পর নিজের মধ্যে নিখুঁতভাবে গুলি চালানোর ক্ষমতা টের পান। পরের কয়েক বছর তিনি নিজের দক্ষতাকে শাণিত করেন। একপর্যায়ে ১২টি পুরস্কারের শ্যুটিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিই জিতে নেন ল্যুদমিলা!
১৯৪১ সালে নাৎসিরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে তিনি লড়াইয়ে যোগ দেন। পাভলিশেংকো রাইফেল বিভাগের সদস্য হিসেবে রেড আর্মিতে যোগ দেন। এর আগে তিনি নাৎসীদের সহায়তাকারী রোমানিয়ার সেনাদের গুলি করে হত্যা করে দক্ষতার প্রমাণ দেন।
রেড আর্মিতে বেশির ভাগ নারী সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও বহু নারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। বিশেষ করে সোভিয়েত স্নাইপারদের জীবন খুব সংক্ষিপ্ত হতো। তাই পাভলিশেংকোর জীবনও ঝুঁকিতে ছিল।
তবে তিনি মৃত্যু ও ধরা পড়া এড়াতে সক্ষম হন। তার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করেন তিনি। ওডেসা অবরোধের সময় ১৮৭ জন জার্মান সৈনিককে হত্যা করেন পাভলিশেংকো। সেভাস্তোপল (রুশ শহর) যুদ্ধে তাঁর শিকার হয় আরও শত্রুসেনা। কিন্তু এ যুদ্ধই ছিল তাঁর শেষ লড়াই। শার্পনেলের শেলের আঘাত পান পাভলিশেংকো। সেই ক্ষত থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অবসর নিতে হয় তাঁকে।
তার পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তার ভূমিকা ছিল। ক্রেমলিনে জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের পর সোভিয়েতের সমর্থনে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি আমেরিকায় যান। দক্ষ মার্কসম্যান হিসেবে পাভলিশেংকোকে অন্য সোভিয়েত প্রতিনিধিদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আমেরিকার সাংবাদিকেরা। কিন্তু বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের চেয়ে পাভলিশেংকোর চেহারা ও নারীত্ব নিয়েই মার্কিন সাংবাদিকদের মনোযোগ বেশি ছিল। তাঁদের চেয়ে দেশের মানুষ তাঁর প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ১৯৪৩ সালে পাভলিশেংকো বীরত্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিশেষ সম্মাননা পান।
হ্যানি শ্যাফট
হ্যানি শেফট ছিলেন উচ্চাভিলাষী তরুণী। তিনি জাতিসংঘে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে নাৎসিরা নেদারল্যান্ডসে আক্রমণ করায় তাঁর আর আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডস জার্মানির দখলে চলে গেলে ডাচ ইহুদিরা ধীরে ধীরে তাদের অধিকার হারাতে থাকে। তাঁদের জন্য কিছু করার তাড়না বোধ করছিলেন শ্যাফট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি বন্ধুদের জন্য জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন তিনি। এর ফলে তাঁরা নির্যাতন এড়াতে সক্ষম হন।
নাৎসিরা ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দখলদার বাহিনীর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। তখন অনেকের সঙ্গে শ্যাফটও তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি হারলেমে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আরভিভি নামে ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেন।
এই বাহিনীর সদস্যরা শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য বন্দুক ও বিস্ফোরক ব্যবহার করতেন। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী নাৎসিদের সহযোগী ডাচ নাগরিকদের ধরাই ছিল তাঁদের প্রথমিক লক্ষ্য। শ্যাফট এই গোষ্ঠীর পক্ষে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি এতটাই সফল হয়েছিলেন যে শিগগির তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং ‘লাল চুলের মেয়ে’ উপাধি পান।
দুঃখজনকভাবে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি শ্যাফট। তাকে একটা তল্লাশি চৌকিতে পিস্তলসহ আটক করা হয়। শ্যাফটের চুলের কালো ছদ্ম রং ম্লান হতে শুরু করলে নাৎসিরা তাঁর পরিচয় টের পেয়ে যায়। তারা তাঁকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় এবং তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়।
মিত্র শক্তির হাতে নেদারল্যান্ডসকে মুক্ত হওয়ার ঠিক ১৮ দিন আগে নাৎসিরা পশ্চিম হারলেমের এক টিলায় নিয়ে হ্যানি শ্যাফটকে হত্যা করে।
ইরিনা স্যান্ডলার
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বড় হয়েছেন ইরিনা স্যান্ডলার। খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে উঠলেও শৈশবে স্যান্ডলারের বহু ইহুদি বন্ধু ছিল।
১৯৩৯ সালে নাৎসিরা পোল্যান্ড দখল করে এবং শিগগির তারা ইহুদিবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করে। ১৯৪০ সালে নাৎসিরা ওয়ারশতে ইহুদি বস্তি প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ছোট একটা এলাকায় কাঁটাতারের দশ ফুট প্রাচীরবেষ্টিত ওই বস্তিতে ৪০ হাজার ইহুদীকে আটকে রাখা হয়। সমাজের বাকিদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের পরিস্থিতি খুব ভয়ানক ছিল। তাদের খাবার দেওয়া হতো না।
স্যান্ডলার তাদের সাহায্য করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। ওয়ারশর সমাজকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসেবে ‘টাইফাস’ রোগের লক্ষণ পরীক্ষার জন্য বস্তি পরিদর্শনের অনুমতি ছিল তাঁর। কাউন্সিল টু এইড জিউস নামে একটি সংস্থার সহায়তায় স্যান্ডলার ইহুদি শিশুদের নিরাপদে বস্তি থেকে বাইরে পাচার করতেন।
কিছু শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে বাইরে পাচার করা হয়। বাকিদের টুলবক্সে ও আলুর বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। একবার বস্তির বাইরে শিশুরা প্রায় নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েছিল। স্যান্ডলার শিশুদের জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে খ্রিষ্টান এতিমের ছদ্মবেশে আশ্রয়ে রাখেন। কিন্তু শিশুদের আসল নাম ও তাদের নতুন বাড়ির নথিপত্র তিনি সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়।
১৯৪৩ সালের অক্টোবরে গোপন খবর পেয়ে জার্মান গোয়েন্দা পুলিশ (গেস্টাপো) স্যান্ডলারকে গ্রেপ্তার করে। তথ্যের জন্য তাঁকে নির্যাতন করা হলেও স্যান্ডলারের মুখ খুলতে পারেনি তারা। সৌভাগ্যক্রমে কাউন্সিল টু এইড জিউস নাৎসিদের ঘুষ দিয়ে বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধ শেষ হলে উদ্ধারকৃত শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে স্যান্ডলারকে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ অনেকের বাবা-মাকে হলোকাস্টের (ইহুদি গণহত্যা) সময় হত্যা করা হয়। যাদের বাবা-মার সন্ধান মেলেনি, তাদের ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেয় কাউন্সিল টু এইড জিউস।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)
অক্ষশক্তির বিজয় ঠেকাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন বাজি রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সেই লড়াইয়ের সম্মুখভাগে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও বহু নারী সমানতালে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইতিহাসে এমন পাঁচ বীর নারীর সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা সম্মুখসমরে না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা রেখেছেন।
গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রকৌশলসেবা—এমন সব ক্ষেত্রে সেই নারীদের অবদান ছিল অসাধারণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁদের অবদান যুদ্ধের ফলাফলে হয়তো নির্ণায়ক ছিল, কিন্তু গতিপথ পাল্টাতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গুরুদায়িত্ব পুরুষেরা সামাল দিলেও লড়াইয়ে অংশ নেওয়া এই পাঁচ নারী যা করেছেন, তা সত্যিই আশাতীত ও বিস্ময়কর।
জোসেফাইন বেকার
১৯০৩ সালের ৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির লুইসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন জোসেফাইন বেকার। শিশুকালেই বর্ণবাদের শিকার হন তিনি। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ে পূর্ব সেন্ট লুইস জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতা এই কিশোরীর মনে দাগ কাটে; কর্মজীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে। বেকার ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান নৃত্যশিল্পী; ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া বেকারের জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীর কেউ হোটেলে থাকতে পারত না।
কিন্তু বিন্দুমাত্র দমে যাননি বেকার। শিল্পের প্রতি প্রবল ঝোঁক এসব বাধা ডিঙিয়ে তাকে নিউইর্য়কে নিয়ে যায়। সেখানে ‘হারলেম রেনেসাঁ’ নামে আফ্রিকান-আমেরিকান বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। তারপর আটলান্টিক পেরিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেও যান তিনি।
অনন্য অভিনয়ের জন্য বেকার বেশ জনপ্রিয়তা পান। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক অর্থ উপার্জন করেন এবং ইউরোপের অনেক শহর ভ্রমণ করেন। সেই সময় ইউরোপে অতি রক্ষণশীলতার উত্থান ভালোভাবেই বেকারের নজরে পড়ে।
জাতিগত আধিপত্য ও জাতীয়তাবাদের ভিতের ওপর গড়ে ওঠা ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান বেকারকে সেন্ট লুইসের বর্ণবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪০ সালের মে মাসে ফ্রান্সে আগ্রাসন চালানোর পর নাৎসিদের কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বেকার। যে দেশ (ফ্রান্স) তাকে এত কিছু দিয়েছে, সে দেশ জার্মানির দখলে চলে যাচ্ছে দেখে নাৎসিবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি।
ফ্রান্সে শ্যাতো দি মিলান্দেস নামে পঞ্চদশ শতকের তৈরি প্রাসাদে থাকতেন বেকার। ১৯৪০ সালে তিনি বাড়িটি ভাড়া নেন এবং সাত বছর পর সেটি কিনে নেন। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাসাদ ঘুরে দেখতে আসেন এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বেকারকে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দিলে তিনি নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন। খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার কারণে বেকার বহু কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতেন। সেখান থেকে তিনি গোপনে জার্মান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতেন। ফ্রান্স থেকে পালিয়ে পর্তুগাল আসার পর বেকার বিভিন্ন দূতাবাসের পার্টিগুলোতে অংশ নেন এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা আন্দোলনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। হোটেলরুমে ফিরে এসব তথ্য অদৃশ্য কালি বা সুরক্ষা কালি ব্যবহার করে লিখে রাখতেন।
তবে নিউমোনিয়া ও রক্তে বিষক্রিয়াসহ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বেকারের গুপ্তচর জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অসুস্থ অবস্থায় ২১ মাস হাসপাতালে কাটান তিনি। এরপর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র বাহিনীর পক্ষে কাজ করে যুদ্ধের বাকি সময় পার করেন বেকার।
এলসি ম্যাকগিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফাইন বেকারের মতো এলসি ম্যাকগিলও সম্মুখসমরে অংশ নেননি। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের গল্প কম অনুপ্রেরণাদায়ক নয়। ১৯০৫ সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাকগিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই নারী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম কানাডিয়ান নারী হিসেবে ১৯২৭ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যার ডিগ্রি অর্জন করেন। শুরুতে গাড়ি তৈরির কাজ করতেন। পরে বিমানের মতো রোমাঞ্চকর পরিবহন তৈরিতে মনোযোগ দেন ম্যাকগিল।
কিন্তু প্রাণঘাতী পোলিও রোগ ম্যাকগিলের কর্মময় জীবনকে থামিয়ে দেয়। কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে পড়ায় দৈনন্দিন কাজে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হতো এবং মাংসপেশির খিঁচুনিতেও ভোগেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও তিনি হাঁটতে পারতেন এবং কাজেও ফিরতে পেরেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান গাড়ি ও ঢালাই কোম্পানিতে (ক্যান-কার হিসেবে পরিচিত) কাজ করেন ম্যাকগিল। প্রধান বিমান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান হকার-হারিকেন তৈরি করেন। এর জন্য তাকে ‘কুইন অব হারিকেনস’ বা ‘হারিকেনের রানি’ বলা হয়। এমনকি ঠান্ডা আবহাওয়ার উপযোগী যুদ্ধবিমানের নকশাও করেন তিনি। বি-শীতলীকরণ ও স্কি ল্যান্ডিংসহ ম্যাকগিলের তৈরি নতুন হকার হারিকেন শীতকালীন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত ছিল।
যুদ্ধের বাইরে ম্যাকগিল কানাডিয়ান ফেডারেশন অব বিজনেস অ্যান্ড প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাবের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে ম্যাকগিলকে কানাডার সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অর্ডার অব কানাডা’ দেওয়া হয়।
ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন ল্যুদমিলা পাভলিশেংকো। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়। ১৯৩২ সালে স্থায়ীভাবে রাজধানী কিয়েভে চলে আসেন তিনি। ফায়ারিং রেঞ্জ বা বন্দুক চালনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়ার পর নিজের মধ্যে নিখুঁতভাবে গুলি চালানোর ক্ষমতা টের পান। পরের কয়েক বছর তিনি নিজের দক্ষতাকে শাণিত করেন। একপর্যায়ে ১২টি পুরস্কারের শ্যুটিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিই জিতে নেন ল্যুদমিলা!
১৯৪১ সালে নাৎসিরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে তিনি লড়াইয়ে যোগ দেন। পাভলিশেংকো রাইফেল বিভাগের সদস্য হিসেবে রেড আর্মিতে যোগ দেন। এর আগে তিনি নাৎসীদের সহায়তাকারী রোমানিয়ার সেনাদের গুলি করে হত্যা করে দক্ষতার প্রমাণ দেন।
রেড আর্মিতে বেশির ভাগ নারী সম্মুখসমরে অংশ না নিলেও বহু নারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। বিশেষ করে সোভিয়েত স্নাইপারদের জীবন খুব সংক্ষিপ্ত হতো। তাই পাভলিশেংকোর জীবনও ঝুঁকিতে ছিল।
তবে তিনি মৃত্যু ও ধরা পড়া এড়াতে সক্ষম হন। তার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করেন তিনি। ওডেসা অবরোধের সময় ১৮৭ জন জার্মান সৈনিককে হত্যা করেন পাভলিশেংকো। সেভাস্তোপল (রুশ শহর) যুদ্ধে তাঁর শিকার হয় আরও শত্রুসেনা। কিন্তু এ যুদ্ধই ছিল তাঁর শেষ লড়াই। শার্পনেলের শেলের আঘাত পান পাভলিশেংকো। সেই ক্ষত থেকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অবসর নিতে হয় তাঁকে।
তার পরও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তার ভূমিকা ছিল। ক্রেমলিনে জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের পর সোভিয়েতের সমর্থনে তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি আমেরিকায় যান। দক্ষ মার্কসম্যান হিসেবে পাভলিশেংকোকে অন্য সোভিয়েত প্রতিনিধিদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন আমেরিকার সাংবাদিকেরা। কিন্তু বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের চেয়ে পাভলিশেংকোর চেহারা ও নারীত্ব নিয়েই মার্কিন সাংবাদিকদের মনোযোগ বেশি ছিল। তাঁদের চেয়ে দেশের মানুষ তাঁর প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ১৯৪৩ সালে পাভলিশেংকো বীরত্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিশেষ সম্মাননা পান।
হ্যানি শ্যাফট
হ্যানি শেফট ছিলেন উচ্চাভিলাষী তরুণী। তিনি জাতিসংঘে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে নাৎসিরা নেদারল্যান্ডসে আক্রমণ করায় তাঁর আর আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডস জার্মানির দখলে চলে গেলে ডাচ ইহুদিরা ধীরে ধীরে তাদের অধিকার হারাতে থাকে। তাঁদের জন্য কিছু করার তাড়না বোধ করছিলেন শ্যাফট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি বন্ধুদের জন্য জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন তিনি। এর ফলে তাঁরা নির্যাতন এড়াতে সক্ষম হন।
নাৎসিরা ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দখলদার বাহিনীর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। তখন অনেকের সঙ্গে শ্যাফটও তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি হারলেমে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আরভিভি নামে ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেন।
এই বাহিনীর সদস্যরা শত্রুদের পরাস্ত করার জন্য বন্দুক ও বিস্ফোরক ব্যবহার করতেন। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী নাৎসিদের সহযোগী ডাচ নাগরিকদের ধরাই ছিল তাঁদের প্রথমিক লক্ষ্য। শ্যাফট এই গোষ্ঠীর পক্ষে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি এতটাই সফল হয়েছিলেন যে শিগগির তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন এবং ‘লাল চুলের মেয়ে’ উপাধি পান।
দুঃখজনকভাবে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেননি শ্যাফট। তাকে একটা তল্লাশি চৌকিতে পিস্তলসহ আটক করা হয়। শ্যাফটের চুলের কালো ছদ্ম রং ম্লান হতে শুরু করলে নাৎসিরা তাঁর পরিচয় টের পেয়ে যায়। তারা তাঁকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় এবং তাঁর ওপর নির্যাতন চালায়।
মিত্র শক্তির হাতে নেদারল্যান্ডসকে মুক্ত হওয়ার ঠিক ১৮ দিন আগে নাৎসিরা পশ্চিম হারলেমের এক টিলায় নিয়ে হ্যানি শ্যাফটকে হত্যা করে।
ইরিনা স্যান্ডলার
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বড় হয়েছেন ইরিনা স্যান্ডলার। খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে উঠলেও শৈশবে স্যান্ডলারের বহু ইহুদি বন্ধু ছিল।
১৯৩৯ সালে নাৎসিরা পোল্যান্ড দখল করে এবং শিগগির তারা ইহুদিবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করে। ১৯৪০ সালে নাৎসিরা ওয়ারশতে ইহুদি বস্তি প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ছোট একটা এলাকায় কাঁটাতারের দশ ফুট প্রাচীরবেষ্টিত ওই বস্তিতে ৪০ হাজার ইহুদীকে আটকে রাখা হয়। সমাজের বাকিদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের পরিস্থিতি খুব ভয়ানক ছিল। তাদের খাবার দেওয়া হতো না।
স্যান্ডলার তাদের সাহায্য করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। ওয়ারশর সমাজকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসেবে ‘টাইফাস’ রোগের লক্ষণ পরীক্ষার জন্য বস্তি পরিদর্শনের অনুমতি ছিল তাঁর। কাউন্সিল টু এইড জিউস নামে একটি সংস্থার সহায়তায় স্যান্ডলার ইহুদি শিশুদের নিরাপদে বস্তি থেকে বাইরে পাচার করতেন।
কিছু শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করে বাইরে পাচার করা হয়। বাকিদের টুলবক্সে ও আলুর বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। একবার বস্তির বাইরে শিশুরা প্রায় নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েছিল। স্যান্ডলার শিশুদের জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে খ্রিষ্টান এতিমের ছদ্মবেশে আশ্রয়ে রাখেন। কিন্তু শিশুদের আসল নাম ও তাদের নতুন বাড়ির নথিপত্র তিনি সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়।
১৯৪৩ সালের অক্টোবরে গোপন খবর পেয়ে জার্মান গোয়েন্দা পুলিশ (গেস্টাপো) স্যান্ডলারকে গ্রেপ্তার করে। তথ্যের জন্য তাঁকে নির্যাতন করা হলেও স্যান্ডলারের মুখ খুলতে পারেনি তারা। সৌভাগ্যক্রমে কাউন্সিল টু এইড জিউস নাৎসিদের ঘুষ দিয়ে বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধ শেষ হলে উদ্ধারকৃত শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে স্যান্ডলারকে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ অনেকের বাবা-মাকে হলোকাস্টের (ইহুদি গণহত্যা) সময় হত্যা করা হয়। যাদের বাবা-মার সন্ধান মেলেনি, তাদের ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেয় কাউন্সিল টু এইড জিউস।
(দ্য কালেক্টর থেকে অনূদিত)
প্রবাদ আছে, দুঃসাহসে দুঃখ হয়। কিন্তু বাগেরহাটের প্রজাপতি স্কোয়াড দুঃসাহসে ভর করে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া এখনো যে কতটা কঠিন কাজ, তা কারও অজানা নয়। সেই কঠিন কাজই করে চলেছে বাগেরহাটের কিশোরীরা। প্রজাপতি স্কোয়াড নামে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে তার
২ দিন আগেগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন বা ওএইচসিএইচআর এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের
২ দিন আগেআপনি শিক্ষিত ও সচেতন একজন মানুষ। সম্পর্কের একটি সুন্দর পর্যায়ে আছেন। তবে আপনার সঙ্গীর যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা কিন্তু বড় ধরনের আবেগীয়
২ দিন আগেশওকত আরা খন্দকার ওরফে ঝর্ণা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঘর-সংসার সামলে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
২ দিন আগে