আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর, মানিকগঞ্জ
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কৃষি সংস্কৃতিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দোরগোড়ায় টেনে এনেছে নারীরা। শতসহস্র বছরের অভিযাত্রায় খাদ্যসংস্কৃতিকে করেছে আধুনিক। তারপরও তারা অন্তরালের মানুষ। সেই অবরোধবাসিনীরাই এবার নেমেছে একটি জনপদের বাঁকবদলের ইতিহাস তৈরিতে। বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে নারী উদ্যোক্তারা ধীরে হলেও বদল আনছেন মানিকগঞ্জের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে। এই উদ্যোক্তা নারীদের হাত ধরে বাড়ছে অন্য নারীদের কর্মসংস্থান। তাঁদের সংসারে আসছে অর্থ ও সচ্ছলতা। গত এক যুগে মানিকগঞ্জের নারী উদ্যোক্তাদের শ্রম, মেধা, ধৈর্য ও সাধনায় পরিসংখ্যানে যোগ হয়েছে এক জাদুকরি ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ।
পুরুষের তুলনায় মানিকগঞ্জে অনেক কম হলেও নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা গত এক যুগে বেড়েছে অনেকগুণ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হিসেবে কৃষি ও মৎস্য খাত ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, ফ্যাশন ও সৌন্দর্য পণ্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্য এবং অনলাইন ব্যবসায় তৈরি হয়েছে অনেক উদ্যোক্তা। পাশাপাশি গার্মেন্টস ও অ্যাকসেসরিজ, বিউটি পারলার, টেইলারিং, রিটেইল শপ, আইটি, ইলেকট্রনিকস, সফটওয়্যার, পাটজাত পণ্য ও হ্যান্ডিক্র্যাফটস খাতে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে।
তাঁহাদের কথা
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া গ্রামের শারমীন আক্তার এ্যানী। উইমেন অ্যান্ড ই কমার্স (উই)-এর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তিনি হয়ে উঠেছেন বড় উদ্যোক্তা। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শারনী’। এ নামে রয়েছে অনলাইন বিপণন পেজ। পরিবেশবান্ধব মাটির চুলা আর হ্যান্ডপেইন্ট পোশাক তাঁর আইকনিক পণ্য। নকশিকাঁথা, শাড়ি, ওড়না, পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের সুনাম আর বাহারি নকশায় নজর কেড়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায় পাশাপাশি আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যে। মাস শেষে এখন তাঁর হাতে আসছে দেড় লাখ টাকার মতো। সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য পরিবারের গৃহবধূ এ্যানী পরিবার ও সন্তান সামলিয়ে হয়ে উঠছেন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা নিয়ে সফল হয়ে উঠেছেন আরও কমপক্ষে শখানেক নারী। ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টের মানিকগঞ্জের কো-অর্ডিনেটর শারমীন এ্যানী বলেন, ‘নারীরা সব সময় ঘরবন্দী থাকবে কেন? আমি নিজে যতটুকু পারি, যতটুকু জানি, ততটুকু করব। সাফল্য আসবেই।’
দেশের আলোচিত উদ্যোক্তা লাবণীর জন্ম মানিকগঞ্জ সদরের বান্দুটিয়ায়। ব্যবসার শুরুটা হয়েছিল ৭০০ টাকা দিয়ে। কুশন কভারে হাতের কাজ এবং পরবর্তী সময়ে জামার ডিজাইন দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর পথচলা। অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে তাতে যুক্ত হয় হাতের কাজের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, ওয়ালম্যাট। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে মানিকগঞ্জ সদর থেকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন। ‘ডিফারেন্ট বিউটি’র মালিক লাবণী ইউএনসিডিএফ থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। ২ জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন, এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ১০০ নারী।
অর্ডার করলেই মুখরোচক চিকেন মোমো, দেশীয় নানা খাবার, পিঠাপুলির সঙ্গে ফাস্ট ফুড আইটেমসহ হোম মেইড বিভিন্ন খাবার পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। মুন্নি আক্তার মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম নারী উদ্যোক্তা, যিনি নিজে এসবের অর্ডার নেন, খাবার তৈরি করেন এবং মোটরবাইক চালিয়ে সরবরাহ করেন। জেলা শহরে জনপ্রিয় একটি লেডিস টেইলার্সও রয়েছে তাঁর। মুন্নি আক্তারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘মুন্নি’স ওয়ার্ল্ড’-এ এবং সরাসরি কল করে খাবারের অর্ডার দেওয়া যায়। প্রতি মাসে ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন তিনি।
ঘিওরের নিভৃত জাবরা গ্রাম থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন মল্লিকা ইয়াসমিন। ২০২৩ সালে হয়েছেন মানিকগঞ্জের সেরা জয়িতা। ১৬ বছর আগে যখন মেয়েদের ব্যবসা করা ছিল এখনকার চেয়ে অনেক কঠিন, সে সময় তিনি দেড় লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ‘অ্যাটায়ার ফ্যাশন’ নামে পোশাক ব্যবসার পাশাপাশি বর্তমানে দুগ্ধ খামার ও দেশীয় আদি ঐতিহ্যের পিঠাপুলির ব্যবসা করছেন তিনি। মল্লিকা কর্মসংস্থান করেছেন এলাকার ২০ জন গৃহবধূর।
এক যুগে উদ্যোক্তা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার
এই উল্লেখযোগ্য নারীদের মতো মানিকগঞ্জের হাজারো নারী উদ্যোক্তা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কিংবা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে স্বনির্ভরতার আলো ছড়াচ্ছেন। মানিকগঞ্জ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক), এসো উদ্যোক্তা হই, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যমতে, ২০১২ সালে জেলায় নারী উদ্যোক্তা ছিলেন মাত্র ৩১৫ জন। তিন বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬৩ জনে। এরপর ক্রমান্বয়ে বাড়ে এই সংখ্যা। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৫০।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালেও সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করেছেন ২ হাজারের বেশি নারী উদ্যোক্তা। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায় নারীর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায় এ সময় থেকেই। এ বছরের শুরুর দিকে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ হাজার ৬৫৮। তাঁদের মধ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন ৪৯৭, মাঝারি ৬৪ এবং কুটিরশিল্পে রয়েছেন ৯ হাজার ৯৭ জন।
উদ্যোক্তা মারুফা আক্তার এক বছর ধরে ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিবাহবিচ্ছেদের পরে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। তাঁর তৈরি কুটিরশিল্পের বিভিন্ন পণ্য দুটি দেশে পাঠানো হয়েছে। আরও একটি দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়।
কর্মকর্তারা যা মনে করছেন
মানিকগঞ্জ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ, উপকরণ বিতরণ ও ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে তাঁদের স্বাবলম্বী করতে নেওয়া হয়েছে বহুমুখী উদ্যোগ, যা মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখছে।’
জাতীয় মহিলা সংঘের মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চ্যাটার্জি জানান, দেশে নারী উদ্যোক্তার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘এটা ভালো দিক, বেকারত্ব কমছে। বর্তমানে নারীরা কাজ করে স্বস্তিবোধ করছেন। তাঁরা নিজেদের দক্ষতা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন নিজস্বতার সঙ্গে।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্যোক্তারা এখনো বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অভূতপূর্ব সাফল্য আসছে। মানিকগঞ্জ জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, ব্যবসায়িক পরামর্শ, আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি সহজ শর্তে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা, উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও বিপণনে সহায়তার জন্য বিসিক মানিকগঞ্জ জেলায় উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করে আসছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন সহায়তা তহবিল থেকে মানিকগঞ্জে চারজন নারী উদ্যোক্তা প্রায় ২২ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য অনুদান পেয়েছেন। জেলায় তিন বছরে নারী উদ্যোক্তাদের ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ এবং ২৫০ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস এবং ই-মার্কেটের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে দেশের অর্থনৈতিক সূচকে ইতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে।’
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কৃষি সংস্কৃতিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দোরগোড়ায় টেনে এনেছে নারীরা। শতসহস্র বছরের অভিযাত্রায় খাদ্যসংস্কৃতিকে করেছে আধুনিক। তারপরও তারা অন্তরালের মানুষ। সেই অবরোধবাসিনীরাই এবার নেমেছে একটি জনপদের বাঁকবদলের ইতিহাস তৈরিতে। বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে নারী উদ্যোক্তারা ধীরে হলেও বদল আনছেন মানিকগঞ্জের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে। এই উদ্যোক্তা নারীদের হাত ধরে বাড়ছে অন্য নারীদের কর্মসংস্থান। তাঁদের সংসারে আসছে অর্থ ও সচ্ছলতা। গত এক যুগে মানিকগঞ্জের নারী উদ্যোক্তাদের শ্রম, মেধা, ধৈর্য ও সাধনায় পরিসংখ্যানে যোগ হয়েছে এক জাদুকরি ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ।
পুরুষের তুলনায় মানিকগঞ্জে অনেক কম হলেও নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা গত এক যুগে বেড়েছে অনেকগুণ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হিসেবে কৃষি ও মৎস্য খাত ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, ফ্যাশন ও সৌন্দর্য পণ্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্য এবং অনলাইন ব্যবসায় তৈরি হয়েছে অনেক উদ্যোক্তা। পাশাপাশি গার্মেন্টস ও অ্যাকসেসরিজ, বিউটি পারলার, টেইলারিং, রিটেইল শপ, আইটি, ইলেকট্রনিকস, সফটওয়্যার, পাটজাত পণ্য ও হ্যান্ডিক্র্যাফটস খাতে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে।
তাঁহাদের কথা
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া গ্রামের শারমীন আক্তার এ্যানী। উইমেন অ্যান্ড ই কমার্স (উই)-এর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তিনি হয়ে উঠেছেন বড় উদ্যোক্তা। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শারনী’। এ নামে রয়েছে অনলাইন বিপণন পেজ। পরিবেশবান্ধব মাটির চুলা আর হ্যান্ডপেইন্ট পোশাক তাঁর আইকনিক পণ্য। নকশিকাঁথা, শাড়ি, ওড়না, পাঞ্জাবি, শিশুদের পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের সুনাম আর বাহারি নকশায় নজর কেড়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায় পাশাপাশি আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যে। মাস শেষে এখন তাঁর হাতে আসছে দেড় লাখ টাকার মতো। সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য পরিবারের গৃহবধূ এ্যানী পরিবার ও সন্তান সামলিয়ে হয়ে উঠছেন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা নিয়ে সফল হয়ে উঠেছেন আরও কমপক্ষে শখানেক নারী। ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টের মানিকগঞ্জের কো-অর্ডিনেটর শারমীন এ্যানী বলেন, ‘নারীরা সব সময় ঘরবন্দী থাকবে কেন? আমি নিজে যতটুকু পারি, যতটুকু জানি, ততটুকু করব। সাফল্য আসবেই।’
দেশের আলোচিত উদ্যোক্তা লাবণীর জন্ম মানিকগঞ্জ সদরের বান্দুটিয়ায়। ব্যবসার শুরুটা হয়েছিল ৭০০ টাকা দিয়ে। কুশন কভারে হাতের কাজ এবং পরবর্তী সময়ে জামার ডিজাইন দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর পথচলা। অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে তাতে যুক্ত হয় হাতের কাজের শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, ওয়ালম্যাট। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে মানিকগঞ্জ সদর থেকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন। ‘ডিফারেন্ট বিউটি’র মালিক লাবণী ইউএনসিডিএফ থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। ২ জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন, এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ১০০ নারী।
অর্ডার করলেই মুখরোচক চিকেন মোমো, দেশীয় নানা খাবার, পিঠাপুলির সঙ্গে ফাস্ট ফুড আইটেমসহ হোম মেইড বিভিন্ন খাবার পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। মুন্নি আক্তার মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম নারী উদ্যোক্তা, যিনি নিজে এসবের অর্ডার নেন, খাবার তৈরি করেন এবং মোটরবাইক চালিয়ে সরবরাহ করেন। জেলা শহরে জনপ্রিয় একটি লেডিস টেইলার্সও রয়েছে তাঁর। মুন্নি আক্তারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘মুন্নি’স ওয়ার্ল্ড’-এ এবং সরাসরি কল করে খাবারের অর্ডার দেওয়া যায়। প্রতি মাসে ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন তিনি।
ঘিওরের নিভৃত জাবরা গ্রাম থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন মল্লিকা ইয়াসমিন। ২০২৩ সালে হয়েছেন মানিকগঞ্জের সেরা জয়িতা। ১৬ বছর আগে যখন মেয়েদের ব্যবসা করা ছিল এখনকার চেয়ে অনেক কঠিন, সে সময় তিনি দেড় লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ‘অ্যাটায়ার ফ্যাশন’ নামে পোশাক ব্যবসার পাশাপাশি বর্তমানে দুগ্ধ খামার ও দেশীয় আদি ঐতিহ্যের পিঠাপুলির ব্যবসা করছেন তিনি। মল্লিকা কর্মসংস্থান করেছেন এলাকার ২০ জন গৃহবধূর।
এক যুগে উদ্যোক্তা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার
এই উল্লেখযোগ্য নারীদের মতো মানিকগঞ্জের হাজারো নারী উদ্যোক্তা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কিংবা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে স্বনির্ভরতার আলো ছড়াচ্ছেন। মানিকগঞ্জ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক), এসো উদ্যোক্তা হই, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যমতে, ২০১২ সালে জেলায় নারী উদ্যোক্তা ছিলেন মাত্র ৩১৫ জন। তিন বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬৩ জনে। এরপর ক্রমান্বয়ে বাড়ে এই সংখ্যা। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৫০।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালেও সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করেছেন ২ হাজারের বেশি নারী উদ্যোক্তা। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায় নারীর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায় এ সময় থেকেই। এ বছরের শুরুর দিকে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ হাজার ৬৫৮। তাঁদের মধ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন ৪৯৭, মাঝারি ৬৪ এবং কুটিরশিল্পে রয়েছেন ৯ হাজার ৯৭ জন।
উদ্যোক্তা মারুফা আক্তার এক বছর ধরে ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিবাহবিচ্ছেদের পরে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। তাঁর তৈরি কুটিরশিল্পের বিভিন্ন পণ্য দুটি দেশে পাঠানো হয়েছে। আরও একটি দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়।
কর্মকর্তারা যা মনে করছেন
মানিকগঞ্জ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ, উপকরণ বিতরণ ও ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে তাঁদের স্বাবলম্বী করতে নেওয়া হয়েছে বহুমুখী উদ্যোগ, যা মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখছে।’
জাতীয় মহিলা সংঘের মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চ্যাটার্জি জানান, দেশে নারী উদ্যোক্তার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘এটা ভালো দিক, বেকারত্ব কমছে। বর্তমানে নারীরা কাজ করে স্বস্তিবোধ করছেন। তাঁরা নিজেদের দক্ষতা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন নিজস্বতার সঙ্গে।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্যোক্তারা এখনো বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অভূতপূর্ব সাফল্য আসছে। মানিকগঞ্জ জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, ব্যবসায়িক পরামর্শ, আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি সহজ শর্তে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা, উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও বিপণনে সহায়তার জন্য বিসিক মানিকগঞ্জ জেলায় উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করে আসছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন সহায়তা তহবিল থেকে মানিকগঞ্জে চারজন নারী উদ্যোক্তা প্রায় ২২ লাখ টাকা অফেরতযোগ্য অনুদান পেয়েছেন। জেলায় তিন বছরে নারী উদ্যোক্তাদের ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ এবং ২৫০ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস এবং ই-মার্কেটের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে দেশের অর্থনৈতিক সূচকে ইতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে।’
প্রবাদ আছে, দুঃসাহসে দুঃখ হয়। কিন্তু বাগেরহাটের প্রজাপতি স্কোয়াড দুঃসাহসে ভর করে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া এখনো যে কতটা কঠিন কাজ, তা কারও অজানা নয়। সেই কঠিন কাজই করে চলেছে বাগেরহাটের কিশোরীরা। প্রজাপতি স্কোয়াড নামে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে তার
২ দিন আগেগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নিহত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন বা ওএইচসিএইচআর এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের
২ দিন আগেআপনি শিক্ষিত ও সচেতন একজন মানুষ। সম্পর্কের একটি সুন্দর পর্যায়ে আছেন। তবে আপনার সঙ্গীর যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা কিন্তু বড় ধরনের আবেগীয়
২ দিন আগেশওকত আরা খন্দকার ওরফে ঝর্ণা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ঘর-সংসার সামলে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
২ দিন আগে