লিওনেল মেসি-আনহেল দি মারিয়া কেউই নেই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দলে। তবে না খেলেও আজ মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-চিলি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ছিলেন দি মারিয়া। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা যেভাবে সম্মান দিয়েছেন, সেটা সরাসরি না দেখতে পারায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মেসি।
আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে আনহেল দি মারিয়ার অবসর নেওয়ার ১৫ দিনেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল যে এখনো ছাড়েননি। সেই পরিকল্পনা যখনই করতে যাবেন, বাদ সাধল একটি হত্যার হুমকি।
পেশাদার ক্যারিয়ারে এক দিন না তো থেমে যেতে হয়ই। আনহেল দি মারিয়া গত পরশু ইতি টেনেছেন তাঁর ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ক্যারিয়ার শেষ হতে না হতেই তারকা ফুটবলারকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিল ১১ বছরের মিয়া দি মারিয়া।
যেকোনো মেজর টুর্নামেন্ট মানেই এখন চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্ট শেষে বীরের বেশে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে সাদরে বরণ করার দৃশ্য এখন খুবই পরিচিত। এবারের কোপা আমেরিকা জয়ের পর সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আজ সকালে দেশে ফিরেছে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। তবে লিওনেল মেসি, এমিলিয়ানো মা
আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া কোপা আমেরিকার ফাইনাল এক ঘটনাবহুল ম্যাচই বটে। মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে গতকাল ডাগআউটে লিওনেল মেসির কান্না-হাসি দুটিই দেখা গেছে। একই সঙ্গে আর্জেন্টাইন দুই তারকা ফুটবলারও আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন।
আনহেল দি মারিয়া, লিওনেল মেসি—মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে আজ দুজনের চোখেই দেখা গেছে জল। দুই বন্ধুর কান্নার কারণ ছিল ভিন্ন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে শেষ ম্যাচ হওয়ায় দি মারিয়া অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। মেসি কেঁদেছেন ম্যাচের মাঝপথে চোটে পড়ে ছিটকে যাওয়ার কষ্টে।
পেশাদার খেলোয়াড়দের কখনো না কখনো এসে থামতে হয়। যত দীর্ঘ ক্যারিয়ার হোক না কেন, শেষ বেলায় এসে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তেমনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে শেষের কাছাকাছি এসে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি আনহেল দি মারিয়া।
নিকো গনসালেস ইসলার গোড়ালি টেনে ধরেন। ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান ইসলা। তাঁর বুটে ছিল নাইকির লোগো। গনসালেসের পা ধরার ছবিটিই হয়ে যায় ম্যাচের আইকনিক এক ছবি, যা ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ইউরোপীয় ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন আনহেল দি মারিয়া। বেনফিকার হয়ে ইউরোপ পর্ব শুরু করেন ২০০৭ সালে। পর্তুগিজ ক্লাবটির পর রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি), জুভেন্টাস—চারটি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন দি মারিয়া। পরে আবার ফেরেন বেনফিকাতেই।
আনহেল দি মারিয়ার পরিবারের সদস্যকে হত্যার হুমকি দেওয়া ব্যক্তিদের গতকাল গ্রেপ্তার করেছে আর্জেন্টিনার ফেডারেল পুলিশ এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহকারীর একটি বিশেষ ইউনিট পিডিআই।
৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন রোজারিওর দুই সন্তান লিওনেল মেসি ও আনহেল দি মারিয়া। এর জন্য আর্জেন্টাইনরা ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন দুজনকে। তবে দেশকে গর্ব করার মতো উপলক্ষ এনে দেওয়ার পরও হত্যার হুমকি পেলেন মেসি ও দি মারিয়া।
যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনকে নিজের সই করা জার্সি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার আনহেল দি মারিয়া। আজ নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পোস্টে সেই সই করা জার্সি পোস্ট করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলকাতার ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত।
আনহেল দি মারিয়াকে চাইলে আর্জেন্টিনার ‘লাকি চার্ম’ বলা যায়। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে আর্জেন্টিনাকে বেশ কিছু শিরোপা জেতাতে অবদান রেখেছেন তিনি। দলের প্রয়োজনে যে তিনি জ্বলে উঠতে পারেন, সেটা আজ আরও একবার প্রমাণ করেছেন তিনি।
গোলের পর উদ্যাপনের সময় দুই হাতে দিয়ে ভালোবাসার চিহ্ন আঁকতেন আনহেল দি মারিয়া। তাঁর এই আইকনিক উদ্যাপন আর্জেন্টিনার হয়ে আর খুব বেশি দিন দেখা যাবে না। জাতীয় দলের হয়ে যে জার্সি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
হাতেখড়ি আর্জেন্টাইন ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালে হলেও আনহেল দি মারিয়া ইউরোপীয় ফুটবলে পাদপ্রদীপের আলোয় আসা শুরু করেন বেনফিকার হয়ে দুর্দান্ত খেলে। ফুটবলে নিজের জাত চেনানোর মঞ্চটা পর্তুগিজ ক্লাবেই শক্ত করেন তিনি।
জুভেন্টাসের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করলেও নবায়নের সম্ভাবনা ছিল আনহেল দি মারিয়ার। তবে সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় দলবদলের আর্থিক অনিয়মে ‘তুরিনের বুড়িদের’ ১০ পয়েন্ট কেটে যাওয়ায়। ক্লাবের এই শাস্তিই সবকিছু বদলে দেয়।
সময় কত দ্রুত চলে যায়। দেখতে দেখতে তিন মাস পেরিয়ে গেছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের। গত ১৮ ডিসেম্বর ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছিল লা আলবিসেলেস্তেদের। জিতেছিল বহুল আকাঙ্ক্ষিত সোনালি ট্রফি। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে রোমাঞ্চকর জয়ে শিরোপা উদ্যাপন করেছিলেন লিওনেল মেস