‘জরুরিভিত্তিতে’ ইনফ্লুয়েন্সারদের ফ্যাক্টচেকিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ ইউনেসকোর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৩৬
কনটেন্ট ক্রিয়েটরের ৪০ শতাংশ অনলাইন উৎসের ‘জনপ্রিয়তা’–যা লাইক এবং ভিউয়ের সংখ্যার মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। ছবি: সোশ্যাল পাইলট

সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের তথ্য যাচাই করার জন্য ‘জরুরিভিত্তিতে’ সহায়তার প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছে ইউনেসকো। ফলোয়ারদের কাছে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য ইনফ্লুয়েন্সার ফ্যাক্টচেকিং বা তথ্য যাচাইয়ের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর প্রতিবেদনের মতে, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দুই-তৃতীয়াংশ তাদের তথ্যের সত্যতা যাচাই করে না। ফলে তারা এবং তাদের ফলোয়াররা মিথ্যা তথ্যের শিকার হতে পারে।

ইনফ্লুয়েন্সারদের ওপর একটি জরিপের মাধ্যমে ইউনেসকোর এই গবেষণার ফলাফলে পাওয়া গেছে। তাদের কাজের গুণগত মান উন্নত করতে মিডিয়া এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাস কম থাকা মানে হচ্ছে, তারা মিথ্যা তথ্যের প্রতি আরও সংবেদনশীল। এটা জনসংযোগ এবং মিডিয়াতে মানুষের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশ কনটেন্ট ক্রিয়েটর বলেছেন যে, তারা তাদের তথ্য শেয়ার করার আগে সেগুলোর সত্যতা যাচাই করেননি। কনটেন্ট ক্রিয়েটররা সাধারণত সরকারি নথি এবং ওয়েবসাইটসহ আনুষ্ঠানিক উৎস ব্যবহার করেন না।

কনটেন্ট তৈরির সর্বাধিক সাধারণ উৎস ছিল ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা সাক্ষাৎকার’। এরপর ছিল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের নিজের গবেষণা অথবা যারা বিষয়টি সম্পর্কে জানেন তাদের সঙ্গে কথা বলা, আর তৃতীয় অবস্থানে ছিল মূলধারা এবং এর বাইরের সংবাদ উৎসগুলো।

ইউনেসকোর গবেষণায় জানা গেছে, কনটেন্ট ক্রিয়েটরের ৪০ শতাংশ অনলাইন উৎসের ‘জনপ্রিয়তা’–যা লাইক এবং ভিউয়ের সংখ্যার মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। অনলাইনে লাইক ও ভিউকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা নির্ধারণ করে কনটেন্টটি বিশ্বাসযোগ্য কি না।

অনলাইন কোর্স চালু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নাইট সেন্টার ফর জার্নালিজম ইন দ্য আমেরিকাস (যা টেক্সাস ইউনিভার্সিটির একটি অংশ) এর সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে ইউনেসকো। এই কোর্সটির নাম ‘কীভাবে অনলাইনে একটি বিশ্বাসযোগ্য কণ্ঠস্বর হওয়া যায়’। এই কোর্সে তথ্য যাচাই বা ফ্যাক্টচেকিং এবং নির্বাচনী বা সংকটকালীন বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরির ওপর বিভিন্ন মডিউল রয়েছে। ইউনেসকো জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৯ হাজার ইনফ্লুয়েন্সার এক মাসের ফ্রি কোর্সটির জন্য নিবন্ধন করেছেন।

ইউনেসকোর মিডিয়া সাক্ষরতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আদেলিন হুলিন বলেছেন, কিছু ইনফ্লুয়েন্সার অবাক হয়েছেন যে, তাদের কাজকে সংবাদ সাংবাদিকতা হিসেবে দেখা হতে পারে। তারা সাধারণত নিজেদের সেই শ্রেণিতে রাখতে চান না।

ফরাসি সাংবাদিক এবং জনপ্রিয় ‘নিউজ ইনফ্লুয়েন্সার’ সালোমে সাকু বলেন, অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর সাংবাদিকতার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নন এবং তাদের কাজের প্রভাব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে। তিনি আরও বলেন, আরও পেশাদার সাংবাদিকদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের কাজ প্রচার করা উচিত।

ইউনেসকোর সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রায় অর্ধেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর বলেছেন, তাদের দেশের মুক্তবিশ্ব মতামত, মানহানি এবং কপিরাইট সম্পর্কিত আইনের প্রতি ‘আংশিক’ জ্ঞান রয়েছে। তবে তারা নিজেদের এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য করবেন না।

কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি জানতেন না যে, তারা যে দেশে কাজ করছেন, সেখানে তাদের কাজ সম্পর্কিত কোন নিয়মাবলি রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া কেবল অর্ধেক কনটেন্ট ক্রিয়েটরই স্পষ্টভাবে তাদের অনুসারীদের কাছে স্পনসর, দাতা বা তহবিলের উৎস সম্পর্কে তথ্য জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে, ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে তাদের পোস্ট যদি স্পনসরড হয়, তবে তা ব্যবহারকারীদের জানাতে বাধ্য করা হয়।

ইউনেসকো ৪৫টি দেশ এবং অঞ্চল থেকে ৫০০ কনটেন্ট ক্রিয়েটরের একটি জরিপের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে, যাদের বেশির ভাগই ইউরোপ এবং এশিয়া থেকে। তারা বলেছে, অধিকাংশ প্রতিক্রিয়া প্রদানকারী ৩৫ বছরের নিচে এবং ‘ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সার’, যারা ১০ হাজার ফলোয়ার অনুসারী পর্যন্ত নিয়ে থাকেন এবং তাদের প্রধান প্ল্যাটফর্ম হলো ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক। এদের প্রায় এক চতুর্থাংশের অনুসারী সংখ্যা ১ লাখ পর্যন্ত।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত