রানা আব্বাস, সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে
আশঙ্কা, সংশয়ের চোরাস্রোত বয়ে গেল ঈদের সকালে! ২০০৩ বিশ্বকাপের সেই স্মৃতি ফিরে আসবে না তো? ২১ বছর আগে কোরবানির ঈদ বিষাদে ভরে গিয়েছিল বাংলাদেশের দর্শকদের মন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল কানাডার কাছে। আজ আরেকটি কোরাবানির ঈদ, জয়-পরাজয়ের দোলাচলে বাংলাদেশ—তবে শেষ পর্যন্ত আনন্দের সকালে আনন্দ, আরেকটি লো স্কোরিং ম্যাচ জিতে শান্ত-সাকিবরা দেশবাসীকে জানালেন ঈদ মোবারক!
সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেলেই দক্ষিণ আফ্রিকার ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল নেপাল। সে ম্যাচে ১ রানে হারা নেপালিরা বাংলাদেশের বিপক্ষে যে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নেমেছিল। সেন্ট ভিনসেন্টের ঘূর্ণি উইকেটে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটারদের নাকাল করে ছাড়লেন নেপালের স্পিনাররা। পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ, ১৯.৩ ওভারে অলআউট ১০৬ রানে।
উইকেট যতই কঠিন হোক, প্রতিপক্ষ যেই হোক টি-টোয়েন্টিতে ১০৬ রানকে কখনোই ‘নিরাপদ’ ভাবার সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মূল শক্তিই তো বোলিং। আর্নস ভেলকে মিরপুর ভেবে শুরু থেকেই তোপ দাগতে শুরু করলেন তানজিম সাকিব। বিশ্বকাপ দলে যাঁর অন্তর্ভুক্ত নিয়ে কত প্রশ্ন, সেই তানজিম এমন দুর্দান্ত বোলিং করছেন বিশ্বকাপে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চোটে পড়া শরীফুল ইসলাম এখন একাদশেই সুযোগ পাচ্ছেন না।
অল্প পুঁজি নিয়ে পাওয়ার প্লেতে টানা স্পেলে নেপালি টপঅর্ডার তছনছ করে দিলেন তানজিম। শুধু বোলিংয়েই নয়, তরুণ পেসারের আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষাও ছিল দেখার মতো। যেভাবে রোহিত পৌডেলের সঙ্গে তাঁর কথার লড়াই হলো, দেখার মতো এক দৃশ্য।
২৪ বলের মধ্যে ২১টা ডট দিলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডট বলের রেকর্ড। ২ মেডেন দিয়ে তানজিম নিয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা ৪ উইকেট। তাঁর বোলিং অসাধারণ বললেও কম বলা হবে, বাংলাদেশ জয়ের পথই তো তৈরি করে দিয়েছেন তিনি।
২৬ রানে ৫ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দীপেন্দ্র সিং ঐরি ও কুশল মাল্লা। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটি যোগ করে ফেলে ৫৮ বলে ৫২ রান। হুমকি হয়ে ওঠা জুটি ভাঙার কাজটা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ এক ক্যাচ হয়ে মাল্লা ফেরেন ২৭ রানে। মোস্তাফিজ ফেরান ঐরিকেও (২৫)। তানজিম সাকিব যদি দুর্দান্ত শুরু এনে দেন ডেথ ওভারের ‘ত্রাস’ ফিজ। তিনি ৭ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। শেষ ৭ রানের মধ্যে বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে নেপাল ১৯.২ ওভারে অলআউট ৮৫ রানে। আর তাতে বাংলাদেশের জয় ২১ রানে। বাংলাদেশ যখন সেন্ট ভিনসেন্টে ব্যাটিংয়ে ধুঁকছিল, তখন বারবার সেন্ট লুসিয়ার দিকেও চোখ রাখতে হচ্ছিল, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা কী করে।
শেষ পর্যন্ত অন্য কোনো দলের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়নি বাংলাদেশকে। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ডি-২ হিসেবেই উঠে গেল সুপার এইটে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তান।
গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই বোলাররা জেতালেও চিন্তার কারণ হয়ে থাকল ব্যাটিং। সেন্ট ভিনসেন্টে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে পাওয়ার প্লেতেই ৩০ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের দুরবস্থা আগের মতোই থেকে গেছে। লম্বা সময় ধরে ভঙ্গুর ব্যাটিং অর্ডারে বাংলাদেশের কিছুটা স্বস্তি ছিল মিডল অর্ডারে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-তাওহিদ হৃদয়রা আজ সুবিধা করতে পারেননি। দায়িত্ব নিতে পারেননি বাকিরাও। নেপালের দুই লেগ স্পিনার সন্দ্বীপ লামিচান ও কুশল ভুরটালের ৩-৪ ডিগ্রি টার্ন বুঝতেই পারছিলেন না তাঁরা। বাংলাদেশ পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি, অলআউট ১০৬ রানে। আইসিসির সহযোগী কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটিই সর্বনিম্ন স্কোর।
নেপালের বিপক্ষ জয় এবং সুপার এইট নিশ্চিত হলেও যে বিবর্ণ ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ সেরা আটে উঠল, তাতে বড় আশা করা কঠিনই। তবু ঈদের সকালটা যে মাটি হয়নি, আপাতত এটাই বাংলাদেশের দর্শকদের বড় স্বস্তি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১০৬
নেপাল: ১৯.২ ওভারে ৮৫
ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী
আরও পড়ুন—
আশঙ্কা, সংশয়ের চোরাস্রোত বয়ে গেল ঈদের সকালে! ২০০৩ বিশ্বকাপের সেই স্মৃতি ফিরে আসবে না তো? ২১ বছর আগে কোরবানির ঈদ বিষাদে ভরে গিয়েছিল বাংলাদেশের দর্শকদের মন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল কানাডার কাছে। আজ আরেকটি কোরাবানির ঈদ, জয়-পরাজয়ের দোলাচলে বাংলাদেশ—তবে শেষ পর্যন্ত আনন্দের সকালে আনন্দ, আরেকটি লো স্কোরিং ম্যাচ জিতে শান্ত-সাকিবরা দেশবাসীকে জানালেন ঈদ মোবারক!
সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেলেই দক্ষিণ আফ্রিকার ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল নেপাল। সে ম্যাচে ১ রানে হারা নেপালিরা বাংলাদেশের বিপক্ষে যে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নেমেছিল। সেন্ট ভিনসেন্টের ঘূর্ণি উইকেটে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটারদের নাকাল করে ছাড়লেন নেপালের স্পিনাররা। পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ, ১৯.৩ ওভারে অলআউট ১০৬ রানে।
উইকেট যতই কঠিন হোক, প্রতিপক্ষ যেই হোক টি-টোয়েন্টিতে ১০৬ রানকে কখনোই ‘নিরাপদ’ ভাবার সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মূল শক্তিই তো বোলিং। আর্নস ভেলকে মিরপুর ভেবে শুরু থেকেই তোপ দাগতে শুরু করলেন তানজিম সাকিব। বিশ্বকাপ দলে যাঁর অন্তর্ভুক্ত নিয়ে কত প্রশ্ন, সেই তানজিম এমন দুর্দান্ত বোলিং করছেন বিশ্বকাপে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চোটে পড়া শরীফুল ইসলাম এখন একাদশেই সুযোগ পাচ্ছেন না।
অল্প পুঁজি নিয়ে পাওয়ার প্লেতে টানা স্পেলে নেপালি টপঅর্ডার তছনছ করে দিলেন তানজিম। শুধু বোলিংয়েই নয়, তরুণ পেসারের আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষাও ছিল দেখার মতো। যেভাবে রোহিত পৌডেলের সঙ্গে তাঁর কথার লড়াই হলো, দেখার মতো এক দৃশ্য।
২৪ বলের মধ্যে ২১টা ডট দিলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডট বলের রেকর্ড। ২ মেডেন দিয়ে তানজিম নিয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা ৪ উইকেট। তাঁর বোলিং অসাধারণ বললেও কম বলা হবে, বাংলাদেশ জয়ের পথই তো তৈরি করে দিয়েছেন তিনি।
২৬ রানে ৫ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দীপেন্দ্র সিং ঐরি ও কুশল মাল্লা। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটি যোগ করে ফেলে ৫৮ বলে ৫২ রান। হুমকি হয়ে ওঠা জুটি ভাঙার কাজটা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ এক ক্যাচ হয়ে মাল্লা ফেরেন ২৭ রানে। মোস্তাফিজ ফেরান ঐরিকেও (২৫)। তানজিম সাকিব যদি দুর্দান্ত শুরু এনে দেন ডেথ ওভারের ‘ত্রাস’ ফিজ। তিনি ৭ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। শেষ ৭ রানের মধ্যে বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে নেপাল ১৯.২ ওভারে অলআউট ৮৫ রানে। আর তাতে বাংলাদেশের জয় ২১ রানে। বাংলাদেশ যখন সেন্ট ভিনসেন্টে ব্যাটিংয়ে ধুঁকছিল, তখন বারবার সেন্ট লুসিয়ার দিকেও চোখ রাখতে হচ্ছিল, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা কী করে।
শেষ পর্যন্ত অন্য কোনো দলের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়নি বাংলাদেশকে। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ডি-২ হিসেবেই উঠে গেল সুপার এইটে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তান।
গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই বোলাররা জেতালেও চিন্তার কারণ হয়ে থাকল ব্যাটিং। সেন্ট ভিনসেন্টে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে পাওয়ার প্লেতেই ৩০ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের দুরবস্থা আগের মতোই থেকে গেছে। লম্বা সময় ধরে ভঙ্গুর ব্যাটিং অর্ডারে বাংলাদেশের কিছুটা স্বস্তি ছিল মিডল অর্ডারে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-তাওহিদ হৃদয়রা আজ সুবিধা করতে পারেননি। দায়িত্ব নিতে পারেননি বাকিরাও। নেপালের দুই লেগ স্পিনার সন্দ্বীপ লামিচান ও কুশল ভুরটালের ৩-৪ ডিগ্রি টার্ন বুঝতেই পারছিলেন না তাঁরা। বাংলাদেশ পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি, অলআউট ১০৬ রানে। আইসিসির সহযোগী কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটিই সর্বনিম্ন স্কোর।
নেপালের বিপক্ষ জয় এবং সুপার এইট নিশ্চিত হলেও যে বিবর্ণ ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ সেরা আটে উঠল, তাতে বড় আশা করা কঠিনই। তবু ঈদের সকালটা যে মাটি হয়নি, আপাতত এটাই বাংলাদেশের দর্শকদের বড় স্বস্তি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১০৬
নেপাল: ১৯.২ ওভারে ৮৫
ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী
আরও পড়ুন—
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও ক্রিকেটকে পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি মোহাম্মদ রফিক। একসময় জাতীয় দলের স্পিন বোলিংয়ের বড় ভরসা ছিলেন তিনি। অবসরের পর এখন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও রংপুর রাইডার্সের স্পিন কোচ হিসেবে কাজ করছেন।
২ ঘণ্টা আগেখেলা, ক্রিকেট, ভারতীয় ক্রিকেট, আইসিসি
৩ ঘণ্টা আগেভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই টেস্টের অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলেন টিম সাউদি। নতুন অধিনায়ক টম লাথামের নেতৃত্বে ভারতকে পরে টেস্ট সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করে নিউজিল্যান্ড। ভারত সিরিজ শেষের প্রায় দুই সপ্তাহ পর অবসরের খবরটা জানিয়েই দিলেন সাউদি।
৪ ঘণ্টা আগে