রানা আব্বাস
১২ ম্যাচে ৪৫.৭৫ গড়ে ৩৬৬ রান, ৬.৮১ ইকোনমিতে ১৬ উইকেট—পরিসংখ্যানই বলছে, এবারের বিপিএলে নাসির হোসেন কতটা দুর্দান্ত ছিলেন। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স অসাধারণ হলেও তাঁর দল ঢাকা ডমিনেটরস পারেনি প্লে অফে উঠতে। তবু এই বিপিএল বিশেষ স্মরণীয় হয়ে থাকছে নাসিরের কাছে। গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা অধিনায়ক বললেন নিজের ফেরা, দলের ব্যর্থতাসহ অনেক কিছুই। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস।
প্রশ্ন: যত বিপিএল খেলেছেন, এটাই কি আপনার সেরা?
নাসির হোসেন: বিপিএল খেলছি আট-নয় বছর, একটা কি দুটো মিস গেছে। সব মিলিয়ে বলব, এমন মৌসুম আগে কখনো যায়নি। এটার কারণও আছে। সব সময় তো খেলেছি ভালো ভালো দলে। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ হওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে। যখন আপনি চ্যাম্পিয়ন দলে খেলবেন, তখন ওই সুযোগটা কম আসে। এবার একটা চ্যাম্পিয়ন দলে খেললে হয়তো ছয়-সাতে ব্যাটিং করতাম। সাতে ব্যাটিং করলে আমি কী পারফর্ম করতাম? বোলিংয়েও একই বিষয় হতো। মূল বোলাররা থাকে, বোলিংয়ের সুযোগও ওভাবে আসত না। এ বছর আমাদের দল ওভাবে ভালো করতে পারেনি বা সেভাবে বোলারও ছিল না। খেয়াল করবেন, অফ স্পিনার বলতে শুধু আমিই ছিলাম। এ কারণে সুযোগ বেশি এসেছে, আমি শুধু সেটি কাজে লাগিয়েছি। এমন নয় যে আমি দিন-রাত অনুশীলন করে খেলেছি, এমন নয়। আগে একটু সুযোগ কম পেয়েছি, কাজে ওভাবে লাগত না।
প্রশ্ন: আপনার একটা লম্বা বিরতি পড়েছিল। আপনি কি চ্যালেঞ্জ অনুভব করেছিলেন যে দুর্দান্তভাবে আপনাকে ফিরতে হবে?
নাসির: অনেক দিন পর বিপিএলে ফিরেছি, আমার মধ্যে একটা রোমাঞ্চ কাজ করছিল। এমন কিছুই ছিল না যে পারফর্ম করে ফাটায়ে ফেলব—সেটা ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে। যদি প্রস্তুতির কথা বলেন, এ বছর প্রস্তুতি সবচেয়ে খারাপ ছিল। আমরা চার দিনের ম্যাচ খেলার কদিন পরই খেলেছি বিপিএল। বিপিএলে শুরুতে নেটে এমনও হয়েছে, অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট এমনিই ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে চলে যাচ্ছে! আমরা যারা চার দিনের ম্যাচ খেলে বিপিএল শুরু করেছি, তাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল না। একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এটাকে অজুহাত হিসেবে দেখলে চলবে না। আপনাকে মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে ভালো খেলার।
প্রশ্ন: আপনি দুর্দান্ত খেললেও আপনার দলের পারফরম্যান্স বলার মতো নয়। একজন অধিনায়ককে তো দিন শেষে দলের পারফরম্যান্স দিয়েই মূল্যায়ন করা হয়। এটা নিয়ে কি একটু আফসোস কাজ করছে?
নাসির: ক্রিকেট তো গলফ, টেনিস, অ্যাথলেটিকসের মতো একক খেলোয়াড়ের খেলা নয়। এটা দলীয় খেলা, মানে অনেকটা পরিবারের মতো। খেলোয়াড়দের জেলিং (মিশ্রণ) যত ভালো থাকবে, নিজেদের মধ্যে যত ভালো বোঝাপোড়া থাকবে, ফল তত ভালো হবে। মাঠের পারফরম্যান্স পরের কথা। দলটা তাঁরা (স্বত্বাধিকারী) শেষের দিকে করেছেন। এতে হয়েছে কী, যদি আমাকে অধিনায়ক হিসেবে আগেই চিন্তা করতেন এবং সেভাবে আলোচনা করতেন, কেমন দেশি-বিদেশি খেলোয়াড় নেব। তাসকিন-সৌম্য ছিল। এরকম সিনিয়র খেলোয়াড়দের যদি কথাও বলত, তাহলে আমরা কিছু ভালো পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা দিতে পারতাম। কিন্তু এরকম হয়নি। ওনারা যেটা মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। যেহেতু তাঁরা প্রথমবারের মতো এসেছেন, কিছু জায়গায় ভুল হয়েছে।
প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট চলার সময় ঢাকাকে ঘিরে অনেক আলোচনাই হয়েছে। বিশেষ করে পারিশ্রমিকের ইস্যু নিয়ে। এসব কি নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে বাধাগ্রস্ত করেছে?
নাসির: এসব কোনো ডিস্টার্বই না। আপনি যখন মাঠে বা ২২ গজে যাবেন, তখন কে টাকা পেয়েছে বা কী হয়েছে, এসব কিছুই মাথায় থাকে না। তখন সব মনোযোগ বলটার দিকেই থাকে। কেউ যদি বলে, পারিশ্রমিক পাইনি—এসব কিছুই তখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি যখন মাঠে নেমে যাবেন, তখন আর কিছুই আপনার মাথায় আসে না। খারাপ খেললে তখন এসব অজুহাত হিসেবেই আসে। কেউ যদি বলে খেলব নাকি টাকার চিন্তা করব, এসব তখন অজুহাত। যখন বল হাতে নিই বা ব্যাটিংয়ে নামি তখন দুনিয়ার কিছুই মনে থাকে না।
প্রশ্ন: এবারের বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে কোন কাজটা সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে?
নাসির: দল তো ভালো করেনি। দল ভালো করলে সত্যি খুব ভালো লাগত। যদি আমরা সেমিফাইনালও (প্লে অফ) খেলতাম, ভালো হতো। চ্যালেঞ্জিং তো ছিলই, চেষ্টা করেছি জিততে। তবে অবশ্যই উপভোগ করেছি। দল তো অনেকটা পরিবারের মতো। যদি মন মরা হয়ে থাকেন, উপভোগ করা বন্ধ করে দেন, তাহলে তো ওভাবে ভালো খেলতে পারবেন না। প্রতিটি মানুষ একেকভাবে জীবন উপভোগ করে। আমরা একসঙ্গে প্রায় দেড় মাস ছিলাম। উপভোগের বিষয়গুলো বন্ধ করে দিলে তখন দেড় মাস দেড় বছরের মতো মনে হবে। খেলা আর ভালো লাগবে না।
প্রশ্ন: মাঝে একটা আপনার বিরতি ছিল, এটাই কি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময় মনে হয়েছে?
নাসির: কঠিন সময় তো অবশ্যই ছিল। গত বছর আমি বিপিএল খেলিনি। চোটে পড়েছিলাম। অনেকে হাবিজাবিও ভেবেছে আমাকে নিয়ে। পারিবারিকভাবেও কিছু সমস্যা ছিল। সব মিলিয়ে আমার কঠিন সময়ই গেছে। কিন্তু এটা বলার সুযোগ নেই যে এসব কারণে ভালো খেলতে পারছি না। তাহলে মিথ্যা বলা হবে। মাঠে যখন নামি, তখন এসব কিছুই মাথায় থাকে না।
প্রশ্ন: এই কঠিন সময়ে নিজেকে উদ্বুদ্ধ বা তৈরি করেছেন কীভাবে?
নাসির: এখানে ভালো খেললে জাতীয় দলে সুযোগ পাব, এটা ভেবে কখনোই ক্রিকেট খেলিনি। এবার চেয়েছি অধিনায়ক হিসেবে ভালো খেলতে, যেন দলের উপকার হয়, দল যেন জেতে। বলেকয়ে ভালো করতে পারবেন না। যখন কিছুর আশায় ভালো করতে চাইবেন, তখনই কাজটা কঠিন হয়ে যাবে। এখানে ভালো করলে জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন, ওখানে ডাক পাবেন—যখন এটা মাথায় ঢুকিয়ে ফেলবেন, কাজ কঠিন হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: তবু যদি জিজ্ঞেস করি, বিপিএলে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশ দলে ফেরার একটা আশা কি তৈরি হয়েছে মনে?
নাসির: সব খেলোয়াড়েরই এই আশা, স্বপ্ন থাকেই। এমন নয়, আমার আশা বা ইচ্ছা নেই (জাতীয় দলে ফেরার)। কিন্তু এটা আমার হাতে নেই। আমার হাতে যেটা ছিল সে চেষ্টাই করেছি। আমার হাতে ১২টা ম্যাচ ছিল, ১২টিতেই চেষ্টা করেছি ভালো করার। কোনো ম্যাচে হয়েছে, কোনো ম্যাচে হয়নি। শতভাগ এফোর্ট দিয়ে ভালো করার বিষয়টি আমার হাতে। তবে জাতীয় দলে ফেরার বিষয়টি আমার হাতে নেই। ওটা নিয়ে এত চিন্তাও করতে চাই না। চিন্তা করা মানে সময় নষ্ট।
প্রশ্ন: গত দুই-তিন বছরে আপনার জীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। ব্যক্তিগত জীবনের এই পরিবর্তনের প্রভাব খেলায় কতটা পড়েছে?
নাসির: বিষয়টা হচ্ছে, একটা সময় মানুষ আমাকে নিয়ে বলেছে, ও কত রিল্যাক্স, মাঠে শিস বাজায়, গান গায়, কত এনজয় করে খেলে বলেই পারফর্ম করে। আবার যখন ভালো খেলতে পারিনি, তখন বলেছে, ও খেলবে কী, মাঠেই তো সিরিয়াস না! গান গেয়ে বেড়ায়। হাসাহাসি, ফাজলামো করে বেড়ায়। আমি আসলে আগে যেমন ছিলাম, এখনো তেমনই আছি।
প্রশ্ন: জীবনে কিছু পরিবর্তন তো এসেছেই, আপনি এখন সন্তানের বাবা...
নাসির: সে তো বটেই। এই যে আমার শরীর খারাপ, তবু সকালে টিম হোটেল থেকে বাসায় এসেছি শুধু বাচ্চাটাকে দেখতে। ওর সঙ্গে সময় কাটালাম, খেললাম। এখন (সন্ধ্যায়) যাচ্ছি রংপুরে। পরিবর্তন এতটুকুই।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর তিন-চার বছর পরে আপনার এত উত্থান-পতন, এটা নিয়ে আফসোস কাজ করে না?
নাসির: গাছে যেমন পানি দেবেন, যেমন পরিচর্যা করবেন, সেটা তেমনই ফল দেবে। গাছে সার-পানি দেবেন না, অথচ কচুগাছে খুঁজছেন আপেল! তাহলে তো সমস্যা।
প্রশ্ন: জাতীয় দলের বাইরে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়াটাই কি তবে মূল কারণ?
নাসির: সুযোগ-সুবিধা আবার কী? এসবের কিছুই পাইনি। পাইনি বলতে, আমাদেরও কিছু সমস্যা আছে। ব্যক্তিগত কোচ নেই, এটা-ওটা নেই। জাতীয় দলের বাইরে চলে গেলে বিষয়টা পুরোই অন্যরকম হয়ে যায়। এমনই টিম বয়ের কথাই বলি, জাতীয় দলে থাকলে ওরা একভাবে দেখবে, না থাকলে আরেকভাবে। আর বাকি সব তো বাদই দিলাম।
প্রশ্ন: চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আসছেন, কী মনে হচ্ছে এবার, কেমন হতে পারেন তিনি?
নাসির: তাঁর সময়েই আমি বাদ পড়েছি। তবে তাঁকে নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। বোবার কোনো শত্রু নেই। আমি বোবা হয়ে গেছি।
১২ ম্যাচে ৪৫.৭৫ গড়ে ৩৬৬ রান, ৬.৮১ ইকোনমিতে ১৬ উইকেট—পরিসংখ্যানই বলছে, এবারের বিপিএলে নাসির হোসেন কতটা দুর্দান্ত ছিলেন। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স অসাধারণ হলেও তাঁর দল ঢাকা ডমিনেটরস পারেনি প্লে অফে উঠতে। তবু এই বিপিএল বিশেষ স্মরণীয় হয়ে থাকছে নাসিরের কাছে। গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা অধিনায়ক বললেন নিজের ফেরা, দলের ব্যর্থতাসহ অনেক কিছুই। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস।
প্রশ্ন: যত বিপিএল খেলেছেন, এটাই কি আপনার সেরা?
নাসির হোসেন: বিপিএল খেলছি আট-নয় বছর, একটা কি দুটো মিস গেছে। সব মিলিয়ে বলব, এমন মৌসুম আগে কখনো যায়নি। এটার কারণও আছে। সব সময় তো খেলেছি ভালো ভালো দলে। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ হওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে। যখন আপনি চ্যাম্পিয়ন দলে খেলবেন, তখন ওই সুযোগটা কম আসে। এবার একটা চ্যাম্পিয়ন দলে খেললে হয়তো ছয়-সাতে ব্যাটিং করতাম। সাতে ব্যাটিং করলে আমি কী পারফর্ম করতাম? বোলিংয়েও একই বিষয় হতো। মূল বোলাররা থাকে, বোলিংয়ের সুযোগও ওভাবে আসত না। এ বছর আমাদের দল ওভাবে ভালো করতে পারেনি বা সেভাবে বোলারও ছিল না। খেয়াল করবেন, অফ স্পিনার বলতে শুধু আমিই ছিলাম। এ কারণে সুযোগ বেশি এসেছে, আমি শুধু সেটি কাজে লাগিয়েছি। এমন নয় যে আমি দিন-রাত অনুশীলন করে খেলেছি, এমন নয়। আগে একটু সুযোগ কম পেয়েছি, কাজে ওভাবে লাগত না।
প্রশ্ন: আপনার একটা লম্বা বিরতি পড়েছিল। আপনি কি চ্যালেঞ্জ অনুভব করেছিলেন যে দুর্দান্তভাবে আপনাকে ফিরতে হবে?
নাসির: অনেক দিন পর বিপিএলে ফিরেছি, আমার মধ্যে একটা রোমাঞ্চ কাজ করছিল। এমন কিছুই ছিল না যে পারফর্ম করে ফাটায়ে ফেলব—সেটা ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে। যদি প্রস্তুতির কথা বলেন, এ বছর প্রস্তুতি সবচেয়ে খারাপ ছিল। আমরা চার দিনের ম্যাচ খেলার কদিন পরই খেলেছি বিপিএল। বিপিএলে শুরুতে নেটে এমনও হয়েছে, অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট এমনিই ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে চলে যাচ্ছে! আমরা যারা চার দিনের ম্যাচ খেলে বিপিএল শুরু করেছি, তাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল না। একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এটাকে অজুহাত হিসেবে দেখলে চলবে না। আপনাকে মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে ভালো খেলার।
প্রশ্ন: আপনি দুর্দান্ত খেললেও আপনার দলের পারফরম্যান্স বলার মতো নয়। একজন অধিনায়ককে তো দিন শেষে দলের পারফরম্যান্স দিয়েই মূল্যায়ন করা হয়। এটা নিয়ে কি একটু আফসোস কাজ করছে?
নাসির: ক্রিকেট তো গলফ, টেনিস, অ্যাথলেটিকসের মতো একক খেলোয়াড়ের খেলা নয়। এটা দলীয় খেলা, মানে অনেকটা পরিবারের মতো। খেলোয়াড়দের জেলিং (মিশ্রণ) যত ভালো থাকবে, নিজেদের মধ্যে যত ভালো বোঝাপোড়া থাকবে, ফল তত ভালো হবে। মাঠের পারফরম্যান্স পরের কথা। দলটা তাঁরা (স্বত্বাধিকারী) শেষের দিকে করেছেন। এতে হয়েছে কী, যদি আমাকে অধিনায়ক হিসেবে আগেই চিন্তা করতেন এবং সেভাবে আলোচনা করতেন, কেমন দেশি-বিদেশি খেলোয়াড় নেব। তাসকিন-সৌম্য ছিল। এরকম সিনিয়র খেলোয়াড়দের যদি কথাও বলত, তাহলে আমরা কিছু ভালো পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা দিতে পারতাম। কিন্তু এরকম হয়নি। ওনারা যেটা মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। যেহেতু তাঁরা প্রথমবারের মতো এসেছেন, কিছু জায়গায় ভুল হয়েছে।
প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট চলার সময় ঢাকাকে ঘিরে অনেক আলোচনাই হয়েছে। বিশেষ করে পারিশ্রমিকের ইস্যু নিয়ে। এসব কি নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে বাধাগ্রস্ত করেছে?
নাসির: এসব কোনো ডিস্টার্বই না। আপনি যখন মাঠে বা ২২ গজে যাবেন, তখন কে টাকা পেয়েছে বা কী হয়েছে, এসব কিছুই মাথায় থাকে না। তখন সব মনোযোগ বলটার দিকেই থাকে। কেউ যদি বলে, পারিশ্রমিক পাইনি—এসব কিছুই তখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি যখন মাঠে নেমে যাবেন, তখন আর কিছুই আপনার মাথায় আসে না। খারাপ খেললে তখন এসব অজুহাত হিসেবেই আসে। কেউ যদি বলে খেলব নাকি টাকার চিন্তা করব, এসব তখন অজুহাত। যখন বল হাতে নিই বা ব্যাটিংয়ে নামি তখন দুনিয়ার কিছুই মনে থাকে না।
প্রশ্ন: এবারের বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে কোন কাজটা সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে?
নাসির: দল তো ভালো করেনি। দল ভালো করলে সত্যি খুব ভালো লাগত। যদি আমরা সেমিফাইনালও (প্লে অফ) খেলতাম, ভালো হতো। চ্যালেঞ্জিং তো ছিলই, চেষ্টা করেছি জিততে। তবে অবশ্যই উপভোগ করেছি। দল তো অনেকটা পরিবারের মতো। যদি মন মরা হয়ে থাকেন, উপভোগ করা বন্ধ করে দেন, তাহলে তো ওভাবে ভালো খেলতে পারবেন না। প্রতিটি মানুষ একেকভাবে জীবন উপভোগ করে। আমরা একসঙ্গে প্রায় দেড় মাস ছিলাম। উপভোগের বিষয়গুলো বন্ধ করে দিলে তখন দেড় মাস দেড় বছরের মতো মনে হবে। খেলা আর ভালো লাগবে না।
প্রশ্ন: মাঝে একটা আপনার বিরতি ছিল, এটাই কি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময় মনে হয়েছে?
নাসির: কঠিন সময় তো অবশ্যই ছিল। গত বছর আমি বিপিএল খেলিনি। চোটে পড়েছিলাম। অনেকে হাবিজাবিও ভেবেছে আমাকে নিয়ে। পারিবারিকভাবেও কিছু সমস্যা ছিল। সব মিলিয়ে আমার কঠিন সময়ই গেছে। কিন্তু এটা বলার সুযোগ নেই যে এসব কারণে ভালো খেলতে পারছি না। তাহলে মিথ্যা বলা হবে। মাঠে যখন নামি, তখন এসব কিছুই মাথায় থাকে না।
প্রশ্ন: এই কঠিন সময়ে নিজেকে উদ্বুদ্ধ বা তৈরি করেছেন কীভাবে?
নাসির: এখানে ভালো খেললে জাতীয় দলে সুযোগ পাব, এটা ভেবে কখনোই ক্রিকেট খেলিনি। এবার চেয়েছি অধিনায়ক হিসেবে ভালো খেলতে, যেন দলের উপকার হয়, দল যেন জেতে। বলেকয়ে ভালো করতে পারবেন না। যখন কিছুর আশায় ভালো করতে চাইবেন, তখনই কাজটা কঠিন হয়ে যাবে। এখানে ভালো করলে জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন, ওখানে ডাক পাবেন—যখন এটা মাথায় ঢুকিয়ে ফেলবেন, কাজ কঠিন হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: তবু যদি জিজ্ঞেস করি, বিপিএলে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশ দলে ফেরার একটা আশা কি তৈরি হয়েছে মনে?
নাসির: সব খেলোয়াড়েরই এই আশা, স্বপ্ন থাকেই। এমন নয়, আমার আশা বা ইচ্ছা নেই (জাতীয় দলে ফেরার)। কিন্তু এটা আমার হাতে নেই। আমার হাতে যেটা ছিল সে চেষ্টাই করেছি। আমার হাতে ১২টা ম্যাচ ছিল, ১২টিতেই চেষ্টা করেছি ভালো করার। কোনো ম্যাচে হয়েছে, কোনো ম্যাচে হয়নি। শতভাগ এফোর্ট দিয়ে ভালো করার বিষয়টি আমার হাতে। তবে জাতীয় দলে ফেরার বিষয়টি আমার হাতে নেই। ওটা নিয়ে এত চিন্তাও করতে চাই না। চিন্তা করা মানে সময় নষ্ট।
প্রশ্ন: গত দুই-তিন বছরে আপনার জীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। ব্যক্তিগত জীবনের এই পরিবর্তনের প্রভাব খেলায় কতটা পড়েছে?
নাসির: বিষয়টা হচ্ছে, একটা সময় মানুষ আমাকে নিয়ে বলেছে, ও কত রিল্যাক্স, মাঠে শিস বাজায়, গান গায়, কত এনজয় করে খেলে বলেই পারফর্ম করে। আবার যখন ভালো খেলতে পারিনি, তখন বলেছে, ও খেলবে কী, মাঠেই তো সিরিয়াস না! গান গেয়ে বেড়ায়। হাসাহাসি, ফাজলামো করে বেড়ায়। আমি আসলে আগে যেমন ছিলাম, এখনো তেমনই আছি।
প্রশ্ন: জীবনে কিছু পরিবর্তন তো এসেছেই, আপনি এখন সন্তানের বাবা...
নাসির: সে তো বটেই। এই যে আমার শরীর খারাপ, তবু সকালে টিম হোটেল থেকে বাসায় এসেছি শুধু বাচ্চাটাকে দেখতে। ওর সঙ্গে সময় কাটালাম, খেললাম। এখন (সন্ধ্যায়) যাচ্ছি রংপুরে। পরিবর্তন এতটুকুই।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর তিন-চার বছর পরে আপনার এত উত্থান-পতন, এটা নিয়ে আফসোস কাজ করে না?
নাসির: গাছে যেমন পানি দেবেন, যেমন পরিচর্যা করবেন, সেটা তেমনই ফল দেবে। গাছে সার-পানি দেবেন না, অথচ কচুগাছে খুঁজছেন আপেল! তাহলে তো সমস্যা।
প্রশ্ন: জাতীয় দলের বাইরে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়াটাই কি তবে মূল কারণ?
নাসির: সুযোগ-সুবিধা আবার কী? এসবের কিছুই পাইনি। পাইনি বলতে, আমাদেরও কিছু সমস্যা আছে। ব্যক্তিগত কোচ নেই, এটা-ওটা নেই। জাতীয় দলের বাইরে চলে গেলে বিষয়টা পুরোই অন্যরকম হয়ে যায়। এমনই টিম বয়ের কথাই বলি, জাতীয় দলে থাকলে ওরা একভাবে দেখবে, না থাকলে আরেকভাবে। আর বাকি সব তো বাদই দিলাম।
প্রশ্ন: চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আসছেন, কী মনে হচ্ছে এবার, কেমন হতে পারেন তিনি?
নাসির: তাঁর সময়েই আমি বাদ পড়েছি। তবে তাঁকে নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। বোবার কোনো শত্রু নেই। আমি বোবা হয়ে গেছি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও ক্রিকেটকে পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি মোহাম্মদ রফিক। একসময় জাতীয় দলের স্পিন বোলিংয়ের বড় ভরসা ছিলেন তিনি। অবসরের পর এখন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও রংপুর রাইডার্সের স্পিন কোচ হিসেবে কাজ করছেন।
২ ঘণ্টা আগেখেলা, ক্রিকেট, ভারতীয় ক্রিকেট, আইসিসি
৩ ঘণ্টা আগেভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই টেস্টের অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলেন টিম সাউদি। নতুন অধিনায়ক টম লাথামের নেতৃত্বে ভারতকে পরে টেস্ট সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করে নিউজিল্যান্ড। ভারত সিরিজ শেষের প্রায় দুই সপ্তাহ পর অবসরের খবরটা জানিয়েই দিলেন সাউদি।
৪ ঘণ্টা আগেবার্বাডোজে ২৯ জুন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর উড়ছে ভারত। জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ-টানা তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ ভারত জিতেছে। ভারতের সামনে এবার টানা চারটি সিরিজ জয়ের সুযোগ।
৫ ঘণ্টা আগে