রানা আব্বাস
প্রশ্ন: বাংলাদেশে দ্বিতীয় পর্ব কেমন উপভোগ করছেন?
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে: খুব উপভোগ্য মনে হচ্ছে। এবার যখন এলাম, আমার অনেক কিছুই আসলে জানা। উপভোগ্য মনে হওয়ার আরেকটি কারণ, আগের তুলনায় এবার আমাকে আরও ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়েছে (হাসি)।
প্রশ্ন: সবাই বলছে, আপনি আগের তুলনায় অনেক শান্ত। এর কারণ কী?
হাথুরু: কেন, (হেসে) এই যে আমি হাসছি। আমাকে সব সময় আপনারা আক্রমণ করতেন। তখন আমাকেও আক্রমণ করতে হতো (কিছুটা রসিকতার সুরে)। এখন আপনারা অনেক বন্ধুভাবাপন্ন, আমিও আপনাদের প্রতি বন্ধুসুলভ। গতবার আমাকে আসলে অনেক কিছু বদলাতে হয়েছিল। খেলোয়াড়েরা জানত না যে তাদের এখানে বদলাতে হবে। সংস্কৃতির জায়গায় পরিবর্তন আনতে কিছুটা কঠোর হতে হয়েছিল। বলছি না যে খারাপ সংস্কৃতি ছিল। কিন্তু আমার পছন্দ হতো না। আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে, সহজেই পরিবর্তন পছন্দ করে না। এই যেমন আপনি নিজের দাড়ি কাটতে পছন্দ করছেন না। যদি আপনার স্ত্রী বলেন, তখন হয়তো কাটবেন।
গতবারের তুলনায় আমি সম্ভবত আরও পাঁচ বছরে বেশি পরিণত হয়েছি। এবার খুব বেশি পরিবর্তন করতে হয়নি। কারণ, তারা আমার অনেক কিছুই জানে। খেলোয়াড়েরা অনেক উন্নতি করেছে। পুরো সিস্টেমে উন্নতি হয়েছে। আমাকে আলাদা কিছু করতে হয়নি। শুধু কয়েকটি জিনিস জায়গায় রাখতে হয়েছে আর কিছুটা নাড়াচাড়া করে একটা পরিবেশ তৈরি করতে হয়েছে। এ কারণে তাদের হয়তো মনে হচ্ছে, আমি অনেক শান্ত কিংবা তারা স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। আমারও একই অনুভূতি হচ্ছে।
প্রশ্ন: এবার আপনার ভিশন-মিশন কী আসলে?
হাথুরু: ভিশন-মিশন অনেক বড় বিষয়। এবার আমার মনোযোগ হচ্ছে দুটো বিষয়ে। প্রথমত, দীর্ঘ মেয়াদে সামগ্রিক উন্নতি। গতবার দ্রুততম সময়ে ফল এনে দেওয়ায় বেশি মনোযোগ ছিল। কারণ, আমি অনেকের কাছে খুব একটা পরিচিত কোচ ছিলাম না। তাই প্রমাণের বিষয় ছিল। এবার প্রমাণের বিষয় নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি টেকসই উন্নতিতে সব মনোযোগ। কাজেই এবার অ্যাপ্রোচ ভিন্ন। আমি চাইছি এমন কিছু করতে, যেন দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি হয়। আমি না থাকলেও যেন ধারাটা অব্যাহত থাকে।
প্রশ্ন: গত দুই দশকে আপনিই সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত কোচ। মানুষ আপনার ব্যাপারে এত কৌতূহলী কেন?
হাথুরু: ঠিক জানি না, মানুষকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনার অধীনে বাংলাদেশের বড় কিছু সাফল্য, নাকি কাজের ধরনের কারণে এটা হয়েছে?
হাথুরু: ফল অবশ্যই একজন কোচকে সহায়তা করে। কিন্তু তা প্রতিদিন আসবে না। যতক্ষণ ফল ভালো হয়, ততক্ষণ এটা স্থায়ী থাকে। পরে এটা বদলে যায়। সব দলেরই মন্দ সময় যায়। আমি খুশি যে মানুষ প্রশংসা করে। কারণ, আমি জানি বাংলাদেশের মানুষ দারুণ। তারা খুবই নিরহংকার এবং ভালো কৃতজ্ঞতাবোধ আছে।
প্রশ্ন: ব্যাপক মিডিয়া হাইপও তো আছে। মানুষ অনেক কিছু জানতে চায়। কখনো কখনো অনেক কোচ এসবে সমস্যায় পড়েন।
হাথুরু: এটার জন্য (মিডিয়া হাইপ) ধন্যবাদ, বন্ধু। কেন (মিডিয়ায় অন্য কোচরা সমস্যা মনে করেন), ঠিক জানি না।
প্রশ্ন: আপনি যে কড়া হেডমাস্টার, তার একটা পরিচিতি দাঁড়িয়ে গেছে, এটা নিয়ে কী বলবেন?
হাথুরু: খেলোয়াড়দের কাছে জানতে চাইতে পারেন। আমি কোনো কড়া হেডমাস্টার নই। সবাই একটা ভালো কাঠামো অনুসরণ করবে, আমি এটাই চাই। যদি আমরা সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাই, তাহলে ভালো ফল পাব; বিশেষ করে দলীয় খেলায় নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড় দলের চেয়ে বড় হতে পারে না। সবাই যদি বোঝে, দল সবার আগে, সবাই আমরা দলের জন্যই এগোব, কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের জন্য নয়। নির্দিষ্ট একজন খেলোয়াড় হাইলাইটেড হতে পারে তার পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে। তার মানে এই নয় যে দলের বিরুদ্ধে তার কিছু করার অধিকার আছে। এটাই আমার মন্ত্র। এ কারণেই হয়তো আপনারা আমাকে (কড়া) হেডমাস্টার বলেন। আমি একমুখী চিন্তা করি এবং সেভাবেই এগিয়ে যাই।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, যে দর্শন কিংবা যেভাবে কাজ করেন, এটিই সবচেয়ে মানিয়ে যায় বাংলাদেশ দলে?
হাথুরু: না, আমি তা বলব না। আমার কাজের ধরন বদলায় দল বুঝে। যখন শ্রীলঙ্কা দলে ছিলাম, সেখানে অন্যভাবে কাজ করেছি। কারণ, তাদের পরিপক্বতা ও সংস্কৃতি ভিন্ন। যখন নিউ সাউথ ওয়েলসে কাজ করেছি, সেটা ভিন্ন ছিল। দলের পরিপক্বতা আর সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দলকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়াই হচ্ছে একজন কোচের দক্ষতা।
প্রশ্ন: কোচ হিসেবে কোথায় সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন?
হাথুরু: তৃপ্তির দিক থেকে? বাংলাদেশ। এখানে আমি পার্থক্য তৈরি করতে পেরেছি। অন্য দলেও কিছু ভ্যালু অ্যাড করেছি। তবে এখানে বেশি উপভোগ করি।
প্রশ্ন: এবার দর্শক-সমর্থকেরা আশা করছেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে-ফাইনালে খেলতে পারে। আপনার কী মনে হয়?
হাথুরু: সবাই আশা করছি, কিছু একটা আমরা করতে পারি। কারণ, আমাদের সম্ভাব্য সেরা সুযোগ আছে এবার। কারণ, আমাদের অতীত ও সাম্প্রতিক ফল। কিন্তু এটাও ঠিক, আমরা ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বর দল। অন্য দলগুলো অসাধারণ খেলছে বলেই তো তারা এক, দুই, তিনে। আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি—এভাবে নিজেদের উজ্জীবিত করতে পারি। আগের তুলনায় আমাদের এবার সেরা সুযোগ। বিশ্বকাপও একেবারেই ভিন্ন ফরম্যাটে। একে অন্যের বিপক্ষে ৯টা ম্যাচ খেলতে হবে। ৯ দিন ধারাবাহিক ভালো খেলা মোটেও সহজ নয়। যদি সেটা করতে পারি, তবে বাকিদের মতো আমাদেরও সুযোগ থাকবে। যদি সবাই ফিট থাকে, আমাদেরও সেরা খেলোয়াড় থাকবে, সেরা সমন্বয় থাকবে।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমনকি আফগানিস্তানকেও সহজ ভাবার সুযোগ নেই। কীভাবে তাদের সহজে হারিয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা করা যায়?
হাথুরু: প্রতিটি দলের ভিন্ন শক্তি। নির্দিষ্ট দিনে প্রত্যেকের সমান সুযোগ আর কন্ডিশনও বড় ভূমিকা রাখবে। কিছু কন্ডিশন আপনার শক্তি বাড়িয়ে দেবে, কিছু কমিয়ে দেবে। আমার মনে হচ্ছে, এই বিশ্বকাপটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে। কারণ, কেউ পরিষ্কার ফেবারিট নয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত কাছাকাছি। পাকিস্তান তাদের মাঠের বাইরে খুব বেশি ক্রিকেট খেলেনি। দেশের বাইরে পাকিস্তানের শক্তি সম্পর্কে আপনার খুব ধারণা নেই। গত কিছুদিনে দেশের মাঠে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। দেশের বাইরে খুব বেশি খেলিনি। এতে আপনাকে বুঝতে দিচ্ছি না, কে আসলে ফেবারিট। টুর্নামেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত বলে এটাও একটা সুযোগ।
প্রশ্ন: বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের কিছু হৃদয় ভাঙার গল্প আছে। সেই সব নিশ্চয় অজানা নয়।
হাথুরু: বাংলাদেশের হয়ে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭—আইসিসির তিনটি বড় টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা আছে। আমরা সব কটিতেই প্রত্যাশার চেয়ে ভালো খেলেছিলাম। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারানো, কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডকে হারানো। আমরা যদি ওই ম্যাচে (২০১৬) ভারতকেও হারাতে পারতাম, তারা টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যেত। কী জানি, আমাদের সেমিফাইনালেও হয়তো খেলা হতো। এই টুর্নামেন্টে আমরা দুর্দান্ত একটা দিনের ওপর আসলে ভরসা করতে পারি না। ৯টার মধ্যে অন্তত ৭টা দুর্দান্ত দিন দরকার।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় শক্তি কী হবে—ব্যাটিং না বোলিং?
হাথুরু: ব্যাটিং, বোলিং—দুটোই। সূচির দিকে যদি তাকান, আমরা মনে হয় দিবারাত্রির অনেক ম্যাচ খেলব। কন্ডিশন বড় একটা ভূমিকা রাখবে। সেটা আমাদের ফাস্ট বোলারদের ভালো সুবিধা দেবে। উপমহাদেশে শিশির-ফ্যাক্টর আছে, স্পিনারদের জন্য কঠিন হতে পারে। ভারতে বড় স্কোরিং ম্যাচ হয়, ব্যাটাররা খেলে মজা পায়। স্পিনারদের জন্য কঠিন হলেও আমাদের দুজন দুর্দান্ত স্পিনার আছে, তারা অভিজ্ঞও।
প্রশ্ন: বেঙ্গালুরুতে যদি আবার যাওয়ার সুযোগ হয়, কী অনুভূতি হবে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ওই ক্লোজ ম্যাচটা হারের স্মৃতি নিশ্চয় ফিরে আসবে?
হাথুরু: না, না, সেই ম্যাচ চলে গেছে। অতীত হয়ে গেছে। ওই ম্যাচ থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা—আবেগ ম্যাচ জেতায় না, জেতায় আপনার দক্ষতা।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে প্রশংসিত হয়েছে লিটন দাসের অধিনায়কত্ব। আপনার কি মনে হয়, তিন সংস্করণেই ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম?
হাথুরু: এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়। সক্ষমতা আছে। সবার সক্ষমতা আছে। তাইজুলেরও সক্ষমতা আছে। সবার নেতৃত্বগুণ আছে। লিডারশিপের সংজ্ঞা কী? আপনি লিড দেবেন কাজের মাধ্যমে। অনেক নেতা আছে, যারা ঠিক কাজটা করতে পারে। অনেক সময় অধিনায়ক কিছু না করেও নেতৃত্ব দিতে পারে। কেউ অনেক ভোকাল হতে পারে। বিরাট কোহলি কিংবা এমন আরও অনেককে দেখুন।
প্রশ্ন: অন্তর্মুখী কেউ কি নেতৃত্ব দিতে পারেন?
হাথুরু: যদি পুরো দল তার যোগাযোগের ধরন জানে...নির্দিষ্ট একজনের ওপর কেন আলো ফেলছেন? আমি বলতে পারি না, অমুক তমুকের চেয়ে ভালো। আমি একজনকে নিয়ে বলতে পারি। তবে সেটা আমি বলব না।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান সিরিজটাই সম্ভবত বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের আগে যাচাই-বাছাইয়ের শেষ সুযোগ। এখনো কি নির্দিষ্ট কোনো পজিশন নিয়ে আপনার সন্দেহ কিংবা দ্বিধা আছে?
হাথুরু: সন্দেহ কিংবা দ্বিধা? আমার মনে কোনো সন্দেহ কিংবা দ্বিধা নেই (হাসি)। আফগানিস্তান সিরিজ একটা ভালো সুযোগ ব্যাটিং শক্তি পরখ করার। কারণ, তাদের বোলিং আক্রমণ অন্যতম সেরা। যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিও, আমরা নিজেদের ব্যাটিং গভীরতা দেখতে চাই। হ্যাঁ, দু-তিনটি জায়গা আছে উন্নতির। কিছু জায়গা এরই মধ্যে স্থির হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গার কথা বলতে চাই না। জানেনই তো, আমি একজন লেগ স্পিনার খুঁজছি। এখনো পাইনি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশকে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে কোথায় দেখতে চান?
হাথুরু: শীর্ষ তিন কিংবা পাঁচে। যদি পরের চক্রে (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে) আমরা শীর্ষ পাঁচে যেতে পারি, এটা অনেক বড় একটা লাফ হবে। আর সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, এই সংস্করণে আমরা একটু পিছিয়ে আছি। নিজেদের খেলার উপায় খুঁজতে হবে। কারণ, আমাদের নির্দিষ্ট শক্তি এবং কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যেটা আপনি রাতারাতি বদলাতে পারবেন না। নিজেদেরই খেলার উপায় বের করতে হবে। যদি কাজ করে তো করল। না করলে সবাই বলবে, কেন এটা করছে। (মুচকি হেসে) আপনারাও বলবেন। তবে সুযোগটা আমি নিতে চাই।
প্রশ্ন: এই লক্ষ্যপূরণে আপনার পরিকল্পনা কী?
হাথুরু: দেখছেন, এখন আমরা একেক প্রতিপক্ষের সঙ্গে একেকভাবে টেস্ট খেলছি। আপনারা শুধু খেলাটাই দেখছেন। কিন্তু আমরা কৌশলগতভাবে তৈরি হচ্ছি। স্কিলের দিকে তৈরি হচ্ছি। নির্দিষ্ট ধরনের উইকেট চাইছি। সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস তৈরি হচ্ছি। আড়ালে অনেক কাজ চলছে, যেটা হয়তো আপনারা বুঝতে পারেন না। আপনারা দেখেছেন, আমি ইনডোর ও আউটডোরে রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করাই। এর জন্য মানুষ আমার সমালোচনা করে। কিন্তু আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। সে কারণে ভালো উইকেট দরকার আমাদের। এই ছোট ছোট বিষয় যেভাবে খেলতে চাই, সেটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে। বোর্ড একটা ভালো কাজ করছে, চার-পাঁচ বছরের জন্য দ্রুতগতির উইকেট তৈরি করছে। এ কারণে ফাস্ট বোলাররা ভালো করছে। ব্যাটাররা ফাস্ট বোলিং ভালো খেলছে। একটা সময় তারা এখানে সংগ্রাম করত, রেকর্ডে যদি তাকান। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখনো এ বিষয়গুলো ঘটছে। আমরা ঠিক কাজটাই করছি। এগিয়ে যেতে আমাদের আরও অনেক কিছুই করতে হচ্ছে। যেমন দেখেছেন, অনুশীলনে হাই বোলিং, লো বোলিং মেশিন ব্যবহার করছি। যাতে নানা ধরনের শট খেলা যায়। আমাদের অনুশীলন শুধু ব্যাট বনাম বলের নয়; ভিন্নভাবে আমরা অনুশীলন করছি। অনুশীলনের এই ফল ভবিষ্যতে আপনারা দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন: আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে সাকিব-তামিম-মুশফিকের মতো তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার হয়তো শেষ হবে। তাঁদের শূন্যতা পূরণে কি কাজ শুরু হয়েছে?
হাথুরু: তারা তো এ নিয়ে এখনো আমাকে কিছু বলেনি! মাত্র পাঁচ মাস এসেছি। পর্যাপ্ত সময় এখনো পাইনি এটার জন্য (শূন্যতা পূরণে বিকল্প তৈরি করা)। তবে অন্যভাবে প্রশ্নটা করতে পারেন, কেন ওই খেলোয়াড় খেলছে না? কেন খেলছে না, তখনই উত্তরটা পাবেন। যদি জায়গা পেতে খেলোয়াড়দের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকে, আমাকে কিছু করতে হবে না, সিস্টেমই সব করে দেবে।
প্রশ্ন: সৌম্য-মোসাদ্দেক-মেহেদীর মতো কিছু খেলোয়াড়কে ক্যাম্পে ডেকেছেন। সৌম্যর মতো খেলোয়াড়ের কি এখনো সুযোগ আছে, যেটা তিনি লুফে নিতে পারেন?
হাথুরু: শুধু ১৫ জন ভেবে একটা বিশ্বকাপে যেতে পারেন না। বিশ্বকাপের আগে ১৮ জন দরকার হতে পারে। দল বড় করব। যখন বড় করবেন তখন এমন খেলোয়াড়ের ওপর ভরসা করবেন, যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে, বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই। যদি হাতে দুই বছর সময় থাকত, ভিন্ন উপায়ে এগোতাম। খেয়াল করে দেখবেন, বিশ্বকাপ কখনো অনভিজ্ঞ দল জেতে না।
প্রশ্ন: আগে কিছু নামে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় পড়ত বাংলাদেশ—যেমন রশিদ কিংবা মুজিব। কারও নাম শুনে ঘুম হারাম হওয়ার মতো অবস্থায় বাংলাদেশ কি এখন আছে?
হাথুরু: আমরা কোনো নামে খুব একটা নজর দিই না। সমীহ করি। যদি নির্দিষ্ট দিনে রশিদ খান অনেক কার্যকর হয়, তাকে সমীহ করি। যদি (মিচেল) স্টার্ক সহায়তা পায় কন্ডিশন থেকে কিংবা কোনো ফাস্ট বোলার; খেলোয়াড়ের চেয়ে কন্ডিশনকেই বেশি সমীহ করি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে দ্বিতীয় পর্ব কেমন উপভোগ করছেন?
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে: খুব উপভোগ্য মনে হচ্ছে। এবার যখন এলাম, আমার অনেক কিছুই আসলে জানা। উপভোগ্য মনে হওয়ার আরেকটি কারণ, আগের তুলনায় এবার আমাকে আরও ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়েছে (হাসি)।
প্রশ্ন: সবাই বলছে, আপনি আগের তুলনায় অনেক শান্ত। এর কারণ কী?
হাথুরু: কেন, (হেসে) এই যে আমি হাসছি। আমাকে সব সময় আপনারা আক্রমণ করতেন। তখন আমাকেও আক্রমণ করতে হতো (কিছুটা রসিকতার সুরে)। এখন আপনারা অনেক বন্ধুভাবাপন্ন, আমিও আপনাদের প্রতি বন্ধুসুলভ। গতবার আমাকে আসলে অনেক কিছু বদলাতে হয়েছিল। খেলোয়াড়েরা জানত না যে তাদের এখানে বদলাতে হবে। সংস্কৃতির জায়গায় পরিবর্তন আনতে কিছুটা কঠোর হতে হয়েছিল। বলছি না যে খারাপ সংস্কৃতি ছিল। কিন্তু আমার পছন্দ হতো না। আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে, সহজেই পরিবর্তন পছন্দ করে না। এই যেমন আপনি নিজের দাড়ি কাটতে পছন্দ করছেন না। যদি আপনার স্ত্রী বলেন, তখন হয়তো কাটবেন।
গতবারের তুলনায় আমি সম্ভবত আরও পাঁচ বছরে বেশি পরিণত হয়েছি। এবার খুব বেশি পরিবর্তন করতে হয়নি। কারণ, তারা আমার অনেক কিছুই জানে। খেলোয়াড়েরা অনেক উন্নতি করেছে। পুরো সিস্টেমে উন্নতি হয়েছে। আমাকে আলাদা কিছু করতে হয়নি। শুধু কয়েকটি জিনিস জায়গায় রাখতে হয়েছে আর কিছুটা নাড়াচাড়া করে একটা পরিবেশ তৈরি করতে হয়েছে। এ কারণে তাদের হয়তো মনে হচ্ছে, আমি অনেক শান্ত কিংবা তারা স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। আমারও একই অনুভূতি হচ্ছে।
প্রশ্ন: এবার আপনার ভিশন-মিশন কী আসলে?
হাথুরু: ভিশন-মিশন অনেক বড় বিষয়। এবার আমার মনোযোগ হচ্ছে দুটো বিষয়ে। প্রথমত, দীর্ঘ মেয়াদে সামগ্রিক উন্নতি। গতবার দ্রুততম সময়ে ফল এনে দেওয়ায় বেশি মনোযোগ ছিল। কারণ, আমি অনেকের কাছে খুব একটা পরিচিত কোচ ছিলাম না। তাই প্রমাণের বিষয় ছিল। এবার প্রমাণের বিষয় নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি টেকসই উন্নতিতে সব মনোযোগ। কাজেই এবার অ্যাপ্রোচ ভিন্ন। আমি চাইছি এমন কিছু করতে, যেন দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি হয়। আমি না থাকলেও যেন ধারাটা অব্যাহত থাকে।
প্রশ্ন: গত দুই দশকে আপনিই সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত কোচ। মানুষ আপনার ব্যাপারে এত কৌতূহলী কেন?
হাথুরু: ঠিক জানি না, মানুষকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনার অধীনে বাংলাদেশের বড় কিছু সাফল্য, নাকি কাজের ধরনের কারণে এটা হয়েছে?
হাথুরু: ফল অবশ্যই একজন কোচকে সহায়তা করে। কিন্তু তা প্রতিদিন আসবে না। যতক্ষণ ফল ভালো হয়, ততক্ষণ এটা স্থায়ী থাকে। পরে এটা বদলে যায়। সব দলেরই মন্দ সময় যায়। আমি খুশি যে মানুষ প্রশংসা করে। কারণ, আমি জানি বাংলাদেশের মানুষ দারুণ। তারা খুবই নিরহংকার এবং ভালো কৃতজ্ঞতাবোধ আছে।
প্রশ্ন: ব্যাপক মিডিয়া হাইপও তো আছে। মানুষ অনেক কিছু জানতে চায়। কখনো কখনো অনেক কোচ এসবে সমস্যায় পড়েন।
হাথুরু: এটার জন্য (মিডিয়া হাইপ) ধন্যবাদ, বন্ধু। কেন (মিডিয়ায় অন্য কোচরা সমস্যা মনে করেন), ঠিক জানি না।
প্রশ্ন: আপনি যে কড়া হেডমাস্টার, তার একটা পরিচিতি দাঁড়িয়ে গেছে, এটা নিয়ে কী বলবেন?
হাথুরু: খেলোয়াড়দের কাছে জানতে চাইতে পারেন। আমি কোনো কড়া হেডমাস্টার নই। সবাই একটা ভালো কাঠামো অনুসরণ করবে, আমি এটাই চাই। যদি আমরা সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাই, তাহলে ভালো ফল পাব; বিশেষ করে দলীয় খেলায় নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড় দলের চেয়ে বড় হতে পারে না। সবাই যদি বোঝে, দল সবার আগে, সবাই আমরা দলের জন্যই এগোব, কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের জন্য নয়। নির্দিষ্ট একজন খেলোয়াড় হাইলাইটেড হতে পারে তার পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে। তার মানে এই নয় যে দলের বিরুদ্ধে তার কিছু করার অধিকার আছে। এটাই আমার মন্ত্র। এ কারণেই হয়তো আপনারা আমাকে (কড়া) হেডমাস্টার বলেন। আমি একমুখী চিন্তা করি এবং সেভাবেই এগিয়ে যাই।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, যে দর্শন কিংবা যেভাবে কাজ করেন, এটিই সবচেয়ে মানিয়ে যায় বাংলাদেশ দলে?
হাথুরু: না, আমি তা বলব না। আমার কাজের ধরন বদলায় দল বুঝে। যখন শ্রীলঙ্কা দলে ছিলাম, সেখানে অন্যভাবে কাজ করেছি। কারণ, তাদের পরিপক্বতা ও সংস্কৃতি ভিন্ন। যখন নিউ সাউথ ওয়েলসে কাজ করেছি, সেটা ভিন্ন ছিল। দলের পরিপক্বতা আর সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দলকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়াই হচ্ছে একজন কোচের দক্ষতা।
প্রশ্ন: কোচ হিসেবে কোথায় সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন?
হাথুরু: তৃপ্তির দিক থেকে? বাংলাদেশ। এখানে আমি পার্থক্য তৈরি করতে পেরেছি। অন্য দলেও কিছু ভ্যালু অ্যাড করেছি। তবে এখানে বেশি উপভোগ করি।
প্রশ্ন: এবার দর্শক-সমর্থকেরা আশা করছেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে-ফাইনালে খেলতে পারে। আপনার কী মনে হয়?
হাথুরু: সবাই আশা করছি, কিছু একটা আমরা করতে পারি। কারণ, আমাদের সম্ভাব্য সেরা সুযোগ আছে এবার। কারণ, আমাদের অতীত ও সাম্প্রতিক ফল। কিন্তু এটাও ঠিক, আমরা ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বর দল। অন্য দলগুলো অসাধারণ খেলছে বলেই তো তারা এক, দুই, তিনে। আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি—এভাবে নিজেদের উজ্জীবিত করতে পারি। আগের তুলনায় আমাদের এবার সেরা সুযোগ। বিশ্বকাপও একেবারেই ভিন্ন ফরম্যাটে। একে অন্যের বিপক্ষে ৯টা ম্যাচ খেলতে হবে। ৯ দিন ধারাবাহিক ভালো খেলা মোটেও সহজ নয়। যদি সেটা করতে পারি, তবে বাকিদের মতো আমাদেরও সুযোগ থাকবে। যদি সবাই ফিট থাকে, আমাদেরও সেরা খেলোয়াড় থাকবে, সেরা সমন্বয় থাকবে।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমনকি আফগানিস্তানকেও সহজ ভাবার সুযোগ নেই। কীভাবে তাদের সহজে হারিয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা করা যায়?
হাথুরু: প্রতিটি দলের ভিন্ন শক্তি। নির্দিষ্ট দিনে প্রত্যেকের সমান সুযোগ আর কন্ডিশনও বড় ভূমিকা রাখবে। কিছু কন্ডিশন আপনার শক্তি বাড়িয়ে দেবে, কিছু কমিয়ে দেবে। আমার মনে হচ্ছে, এই বিশ্বকাপটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে। কারণ, কেউ পরিষ্কার ফেবারিট নয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত কাছাকাছি। পাকিস্তান তাদের মাঠের বাইরে খুব বেশি ক্রিকেট খেলেনি। দেশের বাইরে পাকিস্তানের শক্তি সম্পর্কে আপনার খুব ধারণা নেই। গত কিছুদিনে দেশের মাঠে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। দেশের বাইরে খুব বেশি খেলিনি। এতে আপনাকে বুঝতে দিচ্ছি না, কে আসলে ফেবারিট। টুর্নামেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত বলে এটাও একটা সুযোগ।
প্রশ্ন: বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের কিছু হৃদয় ভাঙার গল্প আছে। সেই সব নিশ্চয় অজানা নয়।
হাথুরু: বাংলাদেশের হয়ে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭—আইসিসির তিনটি বড় টুর্নামেন্টের অভিজ্ঞতা আছে। আমরা সব কটিতেই প্রত্যাশার চেয়ে ভালো খেলেছিলাম। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারানো, কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডকে হারানো। আমরা যদি ওই ম্যাচে (২০১৬) ভারতকেও হারাতে পারতাম, তারা টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যেত। কী জানি, আমাদের সেমিফাইনালেও হয়তো খেলা হতো। এই টুর্নামেন্টে আমরা দুর্দান্ত একটা দিনের ওপর আসলে ভরসা করতে পারি না। ৯টার মধ্যে অন্তত ৭টা দুর্দান্ত দিন দরকার।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় শক্তি কী হবে—ব্যাটিং না বোলিং?
হাথুরু: ব্যাটিং, বোলিং—দুটোই। সূচির দিকে যদি তাকান, আমরা মনে হয় দিবারাত্রির অনেক ম্যাচ খেলব। কন্ডিশন বড় একটা ভূমিকা রাখবে। সেটা আমাদের ফাস্ট বোলারদের ভালো সুবিধা দেবে। উপমহাদেশে শিশির-ফ্যাক্টর আছে, স্পিনারদের জন্য কঠিন হতে পারে। ভারতে বড় স্কোরিং ম্যাচ হয়, ব্যাটাররা খেলে মজা পায়। স্পিনারদের জন্য কঠিন হলেও আমাদের দুজন দুর্দান্ত স্পিনার আছে, তারা অভিজ্ঞও।
প্রশ্ন: বেঙ্গালুরুতে যদি আবার যাওয়ার সুযোগ হয়, কী অনুভূতি হবে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ওই ক্লোজ ম্যাচটা হারের স্মৃতি নিশ্চয় ফিরে আসবে?
হাথুরু: না, না, সেই ম্যাচ চলে গেছে। অতীত হয়ে গেছে। ওই ম্যাচ থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা—আবেগ ম্যাচ জেতায় না, জেতায় আপনার দক্ষতা।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে প্রশংসিত হয়েছে লিটন দাসের অধিনায়কত্ব। আপনার কি মনে হয়, তিন সংস্করণেই ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম?
হাথুরু: এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়। সক্ষমতা আছে। সবার সক্ষমতা আছে। তাইজুলেরও সক্ষমতা আছে। সবার নেতৃত্বগুণ আছে। লিডারশিপের সংজ্ঞা কী? আপনি লিড দেবেন কাজের মাধ্যমে। অনেক নেতা আছে, যারা ঠিক কাজটা করতে পারে। অনেক সময় অধিনায়ক কিছু না করেও নেতৃত্ব দিতে পারে। কেউ অনেক ভোকাল হতে পারে। বিরাট কোহলি কিংবা এমন আরও অনেককে দেখুন।
প্রশ্ন: অন্তর্মুখী কেউ কি নেতৃত্ব দিতে পারেন?
হাথুরু: যদি পুরো দল তার যোগাযোগের ধরন জানে...নির্দিষ্ট একজনের ওপর কেন আলো ফেলছেন? আমি বলতে পারি না, অমুক তমুকের চেয়ে ভালো। আমি একজনকে নিয়ে বলতে পারি। তবে সেটা আমি বলব না।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান সিরিজটাই সম্ভবত বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের আগে যাচাই-বাছাইয়ের শেষ সুযোগ। এখনো কি নির্দিষ্ট কোনো পজিশন নিয়ে আপনার সন্দেহ কিংবা দ্বিধা আছে?
হাথুরু: সন্দেহ কিংবা দ্বিধা? আমার মনে কোনো সন্দেহ কিংবা দ্বিধা নেই (হাসি)। আফগানিস্তান সিরিজ একটা ভালো সুযোগ ব্যাটিং শক্তি পরখ করার। কারণ, তাদের বোলিং আক্রমণ অন্যতম সেরা। যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিও, আমরা নিজেদের ব্যাটিং গভীরতা দেখতে চাই। হ্যাঁ, দু-তিনটি জায়গা আছে উন্নতির। কিছু জায়গা এরই মধ্যে স্থির হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গার কথা বলতে চাই না। জানেনই তো, আমি একজন লেগ স্পিনার খুঁজছি। এখনো পাইনি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশকে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে কোথায় দেখতে চান?
হাথুরু: শীর্ষ তিন কিংবা পাঁচে। যদি পরের চক্রে (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে) আমরা শীর্ষ পাঁচে যেতে পারি, এটা অনেক বড় একটা লাফ হবে। আর সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, এই সংস্করণে আমরা একটু পিছিয়ে আছি। নিজেদের খেলার উপায় খুঁজতে হবে। কারণ, আমাদের নির্দিষ্ট শক্তি এবং কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যেটা আপনি রাতারাতি বদলাতে পারবেন না। নিজেদেরই খেলার উপায় বের করতে হবে। যদি কাজ করে তো করল। না করলে সবাই বলবে, কেন এটা করছে। (মুচকি হেসে) আপনারাও বলবেন। তবে সুযোগটা আমি নিতে চাই।
প্রশ্ন: এই লক্ষ্যপূরণে আপনার পরিকল্পনা কী?
হাথুরু: দেখছেন, এখন আমরা একেক প্রতিপক্ষের সঙ্গে একেকভাবে টেস্ট খেলছি। আপনারা শুধু খেলাটাই দেখছেন। কিন্তু আমরা কৌশলগতভাবে তৈরি হচ্ছি। স্কিলের দিকে তৈরি হচ্ছি। নির্দিষ্ট ধরনের উইকেট চাইছি। সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস তৈরি হচ্ছি। আড়ালে অনেক কাজ চলছে, যেটা হয়তো আপনারা বুঝতে পারেন না। আপনারা দেখেছেন, আমি ইনডোর ও আউটডোরে রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করাই। এর জন্য মানুষ আমার সমালোচনা করে। কিন্তু আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। সে কারণে ভালো উইকেট দরকার আমাদের। এই ছোট ছোট বিষয় যেভাবে খেলতে চাই, সেটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে। বোর্ড একটা ভালো কাজ করছে, চার-পাঁচ বছরের জন্য দ্রুতগতির উইকেট তৈরি করছে। এ কারণে ফাস্ট বোলাররা ভালো করছে। ব্যাটাররা ফাস্ট বোলিং ভালো খেলছে। একটা সময় তারা এখানে সংগ্রাম করত, রেকর্ডে যদি তাকান। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখনো এ বিষয়গুলো ঘটছে। আমরা ঠিক কাজটাই করছি। এগিয়ে যেতে আমাদের আরও অনেক কিছুই করতে হচ্ছে। যেমন দেখেছেন, অনুশীলনে হাই বোলিং, লো বোলিং মেশিন ব্যবহার করছি। যাতে নানা ধরনের শট খেলা যায়। আমাদের অনুশীলন শুধু ব্যাট বনাম বলের নয়; ভিন্নভাবে আমরা অনুশীলন করছি। অনুশীলনের এই ফল ভবিষ্যতে আপনারা দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন: আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে সাকিব-তামিম-মুশফিকের মতো তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার হয়তো শেষ হবে। তাঁদের শূন্যতা পূরণে কি কাজ শুরু হয়েছে?
হাথুরু: তারা তো এ নিয়ে এখনো আমাকে কিছু বলেনি! মাত্র পাঁচ মাস এসেছি। পর্যাপ্ত সময় এখনো পাইনি এটার জন্য (শূন্যতা পূরণে বিকল্প তৈরি করা)। তবে অন্যভাবে প্রশ্নটা করতে পারেন, কেন ওই খেলোয়াড় খেলছে না? কেন খেলছে না, তখনই উত্তরটা পাবেন। যদি জায়গা পেতে খেলোয়াড়দের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকে, আমাকে কিছু করতে হবে না, সিস্টেমই সব করে দেবে।
প্রশ্ন: সৌম্য-মোসাদ্দেক-মেহেদীর মতো কিছু খেলোয়াড়কে ক্যাম্পে ডেকেছেন। সৌম্যর মতো খেলোয়াড়ের কি এখনো সুযোগ আছে, যেটা তিনি লুফে নিতে পারেন?
হাথুরু: শুধু ১৫ জন ভেবে একটা বিশ্বকাপে যেতে পারেন না। বিশ্বকাপের আগে ১৮ জন দরকার হতে পারে। দল বড় করব। যখন বড় করবেন তখন এমন খেলোয়াড়ের ওপর ভরসা করবেন, যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে, বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই। যদি হাতে দুই বছর সময় থাকত, ভিন্ন উপায়ে এগোতাম। খেয়াল করে দেখবেন, বিশ্বকাপ কখনো অনভিজ্ঞ দল জেতে না।
প্রশ্ন: আগে কিছু নামে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় পড়ত বাংলাদেশ—যেমন রশিদ কিংবা মুজিব। কারও নাম শুনে ঘুম হারাম হওয়ার মতো অবস্থায় বাংলাদেশ কি এখন আছে?
হাথুরু: আমরা কোনো নামে খুব একটা নজর দিই না। সমীহ করি। যদি নির্দিষ্ট দিনে রশিদ খান অনেক কার্যকর হয়, তাকে সমীহ করি। যদি (মিচেল) স্টার্ক সহায়তা পায় কন্ডিশন থেকে কিংবা কোনো ফাস্ট বোলার; খেলোয়াড়ের চেয়ে কন্ডিশনকেই বেশি সমীহ করি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও ক্রিকেটকে পুরোপুরি ছাড়তে পারেননি মোহাম্মদ রফিক। একসময় জাতীয় দলের স্পিন বোলিংয়ের বড় ভরসা ছিলেন তিনি। অবসরের পর এখন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও রংপুর রাইডার্সের স্পিন কোচ হিসেবে কাজ করছেন।
২ ঘণ্টা আগেখেলা, ক্রিকেট, ভারতীয় ক্রিকেট, আইসিসি
৩ ঘণ্টা আগেভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই টেস্টের অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলেন টিম সাউদি। নতুন অধিনায়ক টম লাথামের নেতৃত্বে ভারতকে পরে টেস্ট সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করে নিউজিল্যান্ড। ভারত সিরিজ শেষের প্রায় দুই সপ্তাহ পর অবসরের খবরটা জানিয়েই দিলেন সাউদি।
৪ ঘণ্টা আগেবার্বাডোজে ২৯ জুন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর উড়ছে ভারত। জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ-টানা তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ ভারত জিতেছে। ভারতের সামনে এবার টানা চারটি সিরিজ জয়ের সুযোগ।
৫ ঘণ্টা আগে