আবু তাহের খান
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক খেসারত নিয়ে এর আগেও আলোকপাতের চেষ্টা করেছি। একই বিষয় নিয়ে আবারও বলার চেষ্টা এ কারণে যে মানুষের পিঠ এখন প্রায় দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষ ভালো করেই জানে, এই দ্বন্দ্বে সাধারণ জনগণের কোনো স্বার্থ নেই; বরং এ হচ্ছে কুক্ষিগত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রলম্বিতকরণ বনাম হৃত ক্ষমতা পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার মধ্যকার দ্বন্দ্ব। আর সেই দ্বন্দ্বে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর স্বার্থ যতটা প্রবল, তার বিপরীতে সাধারণ জনগণের স্বার্থহানির আশঙ্কাও ততটাই প্রচণ্ড।
চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের আওতায় প্রায় এক বছর ধরে উভয় পক্ষ থেকে রাজপথ দখলে রাখার যে রণদামামা চলছে এবং তার পেছনে যে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, সেই অর্থ কে জোগাচ্ছে? পরিপাটি রঙিন জামাকাপড়, টুপি, ব্যাজ, পতাকা, লাঠি, মাইক্রোফোন, খাবারদাবার, বাহন, পকেট খরচ ইত্যাদি নিশ্চয়ই কোনো পক্ষের নেতা-নেত্রীই তাঁদের পকেট থেকে দিচ্ছেন না।
তাহলে সেসব আসছে কোত্থেকে? কোনো রাজনৈতিক দলের ঘোষিত তহবিলেই তো এত টাকা নেই। তাহলে এই অর্থ কীভাবে মিলছে?
জবাব খুবই স্পষ্ট—এই অর্থ যেহেতু আকাশ থেকে পড়ছে না, অতএব এ সমাজেরই কেউ না কেউ তা জোগাচ্ছেন। এখন দেখা যাক সেই জোগানদাতা কারা। উল্লিখিত অর্থের একেবারে প্রথম জোগানদাতা হচ্ছেন বিত্তবান ব্যবসায়ীরা, যাঁরা কখনো স্বেচ্ছায় আবার কখনোবা চাপে পড়ে চাঁদা হিসেবে এই অর্থ দিচ্ছেন। তবে ব্যবসায়ীরা যে চাঁদা রাজপথ দখলে রাখার জন্য রাজনীতিকদের দিচ্ছেন, সেই অর্থ তাঁরা মোটেই নিজেদের পকেট থেকে দিচ্ছেন না; বরং নিজ নিজ পণ্য বা সেবা বিক্রি করে তা তুলে নিচ্ছেন।
বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, যে পরিমাণ অর্থ তাঁরা চাঁদা হিসেবে দিচ্ছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ পণ্যমূল্য বাড়িয়ে ক্রেতা বা ভোক্তার কাছ আদায় করে নিচ্ছেন। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার যে ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর হতে পারছে না, এটিও বিভিন্ন কারণের মধ্যকার একটি বড় কারণ। ফলে দেখাই যাচ্ছে, চাঁদাদানের এ বিষয়টিকে আপাতদৃষ্টিতে ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি বোঝা বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি তাঁদের জন্য একধরনের লাভজনক বিনিয়োগ বৈকি! তবে ঘটনা হচ্ছে, সেই বিনিয়োগের চড়া মাশুল জনগণকেই দিতে হচ্ছে। আর তা দিতে গিয়ে বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য এখন আকাশচুম্বী, যা স্পর্শ করার সামর্থ্য অধিকাংশ মানুষেরই নেই; যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের চার কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ইউরোপীয় মানের।
রাজপথ দখলে রাখার রণে পরবর্তী অর্থ জোগানদাতাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজির শিকার ছোট দোকানদার ও অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ খুদে ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কাছ থেকে জনপ্রতি আদায়ের পরিমাণ অল্প হলেও সংখ্যায় তাঁরা বিপুল বলে মোট আদায়ের পরিমাণ বিশালই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আর চাঁদাবাজির শিকার এই খুদে ব্যবসায়ীরাও চাঁদার অর্থ উশুল করতে গিয়ে পণ্যের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে বাড়তি মুনাফা যোগ করে নিচ্ছেন, যার ফলাফল সহজেই বোধগম্য।
অন্যদিকে উল্লিখিত রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে যখন পণ্যমূল্য বেড়ে যায়, তখন আমদানিকারকেরাও পণ্য আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি দাবি করে বসেন এবং নিরুপায় হয়ে তাঁদের তা দিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থের ঘাটতি মেনে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য প্রায় কখনোই কমছে না। বিষয়টির অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি—দুটোই স্থানীয় পণ্য বিক্রেতা ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিচ্ছে, যদিও এই প্রক্রিয়ায় জনগণের অবস্থা এখন নাভিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায়ে।
প্রসঙ্গত, দ্রব্যের দাম বাড়লে কৃষি উপকরণ ও শিল্পের কাঁচামালেরও দাম বাড়ে এবং সেই ধারাবাহিকতায় বৃদ্ধি পায় এসবের উৎপাদন খরচও। আর সেটাই এখন দেশে ঘটে চলেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এই উভয় খাতে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আর এটা বলাই বাহুল্য, উৎপাদনের ধারায় প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক হলে, রাষ্ট্রের সদিচ্ছা থাকলে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা দিয়ে বাজারমূল্য বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু যদি উৎপাদনই কমে যায়, তাহলে তখন আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কীভাবে? ফলে যেভাবেই হোক, উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার মতো ঝুঁকিতে যাওয়া কিছুতেই সমীচীন হবে না। কিন্তু দেশ এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, তা থেকে সমঝোতার মাধ্যমে দ্রুত বেরিয়ে আসতে না পারলে উল্লিখিত খাতেই শুধু নয়, আনুষঙ্গিক অন্যান্য খাত এমনকি সেবা খাতেও প্রবৃদ্ধির ধারা নিম্নমুখী হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার জন্য রাজপথ দখলে রাখার প্রয়াসে ব্যয়বহুল রাষ্ট্রযন্ত্রকে যুক্ত করার প্রয়াসও চোখে পড়ার মতো। আর তা করতে গিয়ে জনগণের করের পয়সায় গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়ের মানে দাঁড়ায় এই, এর ফলে রাষ্ট্রের অন্যবিধ স্বার্থ বিঘ্নিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরও পড়ছে। এ কাজে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে এ পর্যন্ত মোট কত অর্থ ব্যয় হয়েছে বা হচ্ছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও এটুকু বলা যায়, এই পরিমাণ সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখার মতোই আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পণ্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণ, ব্যাংকের ঋণ আদায় ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং শিগগিরই বিদ্যমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান না ঘটলে এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরও ব্যাপক অবনতি ঘটতে বাধ্য; বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত পরিস্থিতির ধস ঠেকিয়ে এর উন্নতি ঘটাতে না পারলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশকে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়, আমরা সাধারণ মানুষ তার কিছুই জানি না। কিন্তু এটা তো স্পষ্ট, এর অর্থনৈতিক মূল্য ও খেসারত শেষ পর্যন্ত দেশের সাধারণ জনগণকেই দিতে হচ্ছে। দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে নৈরাজ্য বিরাজ করছে, তার ব্যাখ্যা যে যেভাবেই দিন না কেন এবং এর দায় যতই করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা বিশ্বমন্দার ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, আসলে এর মূলে রয়েছে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে লুকায়িত নানা হীনতা ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর এই অস্থিরতার কারণে উল্লিখিত ধরনের প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতিগুলো তো হচ্ছেই। এর সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু পরোক্ষ ক্ষতিও।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি হাতজোড় করে মিনতি জানাই, দয়া করে আপনারা একটি সমঝোতায় আসুন। সমঝোতার ভিত্তিতে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু, সুচারু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পথ উন্মুক্ত করুন। কারণ বিরাজমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের যে অর্থনৈতিক ব্যয়, তা বহনের ক্ষমতা এ দেশের সাধারণ মানুষের নেই। একেবারেই নেই। কারণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নিপীড়নে তাদের অবস্থা ইতিমধ্যে এতটাই সঙিন হয়ে পড়েছে যে ২ হাজার ৬২১ মার্কিন ডলার গড় মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে তাদের বাস্তব অবস্থার কোনোই মিল নেই।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক খেসারত নিয়ে এর আগেও আলোকপাতের চেষ্টা করেছি। একই বিষয় নিয়ে আবারও বলার চেষ্টা এ কারণে যে মানুষের পিঠ এখন প্রায় দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষ ভালো করেই জানে, এই দ্বন্দ্বে সাধারণ জনগণের কোনো স্বার্থ নেই; বরং এ হচ্ছে কুক্ষিগত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রলম্বিতকরণ বনাম হৃত ক্ষমতা পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার মধ্যকার দ্বন্দ্ব। আর সেই দ্বন্দ্বে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর স্বার্থ যতটা প্রবল, তার বিপরীতে সাধারণ জনগণের স্বার্থহানির আশঙ্কাও ততটাই প্রচণ্ড।
চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের আওতায় প্রায় এক বছর ধরে উভয় পক্ষ থেকে রাজপথ দখলে রাখার যে রণদামামা চলছে এবং তার পেছনে যে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, সেই অর্থ কে জোগাচ্ছে? পরিপাটি রঙিন জামাকাপড়, টুপি, ব্যাজ, পতাকা, লাঠি, মাইক্রোফোন, খাবারদাবার, বাহন, পকেট খরচ ইত্যাদি নিশ্চয়ই কোনো পক্ষের নেতা-নেত্রীই তাঁদের পকেট থেকে দিচ্ছেন না।
তাহলে সেসব আসছে কোত্থেকে? কোনো রাজনৈতিক দলের ঘোষিত তহবিলেই তো এত টাকা নেই। তাহলে এই অর্থ কীভাবে মিলছে?
জবাব খুবই স্পষ্ট—এই অর্থ যেহেতু আকাশ থেকে পড়ছে না, অতএব এ সমাজেরই কেউ না কেউ তা জোগাচ্ছেন। এখন দেখা যাক সেই জোগানদাতা কারা। উল্লিখিত অর্থের একেবারে প্রথম জোগানদাতা হচ্ছেন বিত্তবান ব্যবসায়ীরা, যাঁরা কখনো স্বেচ্ছায় আবার কখনোবা চাপে পড়ে চাঁদা হিসেবে এই অর্থ দিচ্ছেন। তবে ব্যবসায়ীরা যে চাঁদা রাজপথ দখলে রাখার জন্য রাজনীতিকদের দিচ্ছেন, সেই অর্থ তাঁরা মোটেই নিজেদের পকেট থেকে দিচ্ছেন না; বরং নিজ নিজ পণ্য বা সেবা বিক্রি করে তা তুলে নিচ্ছেন।
বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, যে পরিমাণ অর্থ তাঁরা চাঁদা হিসেবে দিচ্ছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ পণ্যমূল্য বাড়িয়ে ক্রেতা বা ভোক্তার কাছ আদায় করে নিচ্ছেন। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার যে ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর হতে পারছে না, এটিও বিভিন্ন কারণের মধ্যকার একটি বড় কারণ। ফলে দেখাই যাচ্ছে, চাঁদাদানের এ বিষয়টিকে আপাতদৃষ্টিতে ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি বোঝা বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি তাঁদের জন্য একধরনের লাভজনক বিনিয়োগ বৈকি! তবে ঘটনা হচ্ছে, সেই বিনিয়োগের চড়া মাশুল জনগণকেই দিতে হচ্ছে। আর তা দিতে গিয়ে বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য এখন আকাশচুম্বী, যা স্পর্শ করার সামর্থ্য অধিকাংশ মানুষেরই নেই; যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের চার কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ইউরোপীয় মানের।
রাজপথ দখলে রাখার রণে পরবর্তী অর্থ জোগানদাতাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজির শিকার ছোট দোকানদার ও অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ খুদে ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কাছ থেকে জনপ্রতি আদায়ের পরিমাণ অল্প হলেও সংখ্যায় তাঁরা বিপুল বলে মোট আদায়ের পরিমাণ বিশালই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আর চাঁদাবাজির শিকার এই খুদে ব্যবসায়ীরাও চাঁদার অর্থ উশুল করতে গিয়ে পণ্যের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে বাড়তি মুনাফা যোগ করে নিচ্ছেন, যার ফলাফল সহজেই বোধগম্য।
অন্যদিকে উল্লিখিত রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে যখন পণ্যমূল্য বেড়ে যায়, তখন আমদানিকারকেরাও পণ্য আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি দাবি করে বসেন এবং নিরুপায় হয়ে তাঁদের তা দিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থের ঘাটতি মেনে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য প্রায় কখনোই কমছে না। বিষয়টির অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি—দুটোই স্থানীয় পণ্য বিক্রেতা ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিচ্ছে, যদিও এই প্রক্রিয়ায় জনগণের অবস্থা এখন নাভিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায়ে।
প্রসঙ্গত, দ্রব্যের দাম বাড়লে কৃষি উপকরণ ও শিল্পের কাঁচামালেরও দাম বাড়ে এবং সেই ধারাবাহিকতায় বৃদ্ধি পায় এসবের উৎপাদন খরচও। আর সেটাই এখন দেশে ঘটে চলেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এই উভয় খাতে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আর এটা বলাই বাহুল্য, উৎপাদনের ধারায় প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক হলে, রাষ্ট্রের সদিচ্ছা থাকলে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা দিয়ে বাজারমূল্য বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু যদি উৎপাদনই কমে যায়, তাহলে তখন আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কীভাবে? ফলে যেভাবেই হোক, উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার মতো ঝুঁকিতে যাওয়া কিছুতেই সমীচীন হবে না। কিন্তু দেশ এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, তা থেকে সমঝোতার মাধ্যমে দ্রুত বেরিয়ে আসতে না পারলে উল্লিখিত খাতেই শুধু নয়, আনুষঙ্গিক অন্যান্য খাত এমনকি সেবা খাতেও প্রবৃদ্ধির ধারা নিম্নমুখী হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার জন্য রাজপথ দখলে রাখার প্রয়াসে ব্যয়বহুল রাষ্ট্রযন্ত্রকে যুক্ত করার প্রয়াসও চোখে পড়ার মতো। আর তা করতে গিয়ে জনগণের করের পয়সায় গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়ের মানে দাঁড়ায় এই, এর ফলে রাষ্ট্রের অন্যবিধ স্বার্থ বিঘ্নিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরও পড়ছে। এ কাজে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে এ পর্যন্ত মোট কত অর্থ ব্যয় হয়েছে বা হচ্ছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও এটুকু বলা যায়, এই পরিমাণ সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখার মতোই আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পণ্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স আহরণ, ব্যাংকের ঋণ আদায় ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং শিগগিরই বিদ্যমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান না ঘটলে এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরও ব্যাপক অবনতি ঘটতে বাধ্য; বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত পরিস্থিতির ধস ঠেকিয়ে এর উন্নতি ঘটাতে না পারলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশকে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়, আমরা সাধারণ মানুষ তার কিছুই জানি না। কিন্তু এটা তো স্পষ্ট, এর অর্থনৈতিক মূল্য ও খেসারত শেষ পর্যন্ত দেশের সাধারণ জনগণকেই দিতে হচ্ছে। দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে নৈরাজ্য বিরাজ করছে, তার ব্যাখ্যা যে যেভাবেই দিন না কেন এবং এর দায় যতই করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা বিশ্বমন্দার ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, আসলে এর মূলে রয়েছে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে লুকায়িত নানা হীনতা ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর এই অস্থিরতার কারণে উল্লিখিত ধরনের প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতিগুলো তো হচ্ছেই। এর সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু পরোক্ষ ক্ষতিও।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি হাতজোড় করে মিনতি জানাই, দয়া করে আপনারা একটি সমঝোতায় আসুন। সমঝোতার ভিত্তিতে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু, সুচারু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পথ উন্মুক্ত করুন। কারণ বিরাজমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের যে অর্থনৈতিক ব্যয়, তা বহনের ক্ষমতা এ দেশের সাধারণ মানুষের নেই। একেবারেই নেই। কারণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নিপীড়নে তাদের অবস্থা ইতিমধ্যে এতটাই সঙিন হয়ে পড়েছে যে ২ হাজার ৬২১ মার্কিন ডলার গড় মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে তাদের বাস্তব অবস্থার কোনোই মিল নেই।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৭ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৭ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৮ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৮ ঘণ্টা আগে