সৈয়দ গোলাম কাদের
পর্যটন খাতে বাংলাদেশ সব সময় কোনো রকম বেঁচে থাকার বাজেট দিয়ে আসছে। অর্থাৎ পর্যটন শিল্পকে মাজা শক্ত করে ঘুরে দাঁড়াবার মতো অর্থ বরাদ্দ বাজেটে পাওয়া যায় না। কোভিডের বছরগুলো হয়তো পর্যটন অচল ছিল, কিন্তু চালু ছিল টুরিজম মাস্টার প্ল্যানের কার্যক্রম। সেটি এখন সম্পন্ন। এ বছর নতুন সরকারের নতুন বাজেট। প্রত্যাশা অনেক বেশি। অনেক দিনের দাবি অনেক কিছু চাওয়ার বাজেট এবার। নতুন মন্ত্রী ফারুক খান আশার বাণী দিয়েছেন: দেশে বিদেশি পর্যটক আনবেন। টুরিজম মাস্টার প্ল্যানে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে।
পর্যটন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একটি উৎস। সরকার যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চিন্তিত, তখনো কেন বিদেশি পর্যটক আনার ব্যাপারে গতি সৃষ্টি করা হচ্ছে না? পঞ্চাশ বছর কাটল, তবু কোনো সরকার কেন বিষয়টা নিয়ে ভাবছে না! যদি এটি সরকারের প্রায়োরিটি না হয়ে থাকে তো কেন টুরিজম মাস্টার প্ল্যান করতে ৩০ কোটি টাকা খরচ করলেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতের তালিকায় পর্যটন ৩ নম্বরে স্থান পেয়েছে।
ডোমেস্টিক টুরিজম নিয়ে আমরা অনেক চর্চা করেছি। বর্তমানে আনুমানিক ২ কোটি দেশীয় পর্যটক যারা দেশে ভ্রমণ করছেন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। বরং বাংলাদেশ যেহেতু মোটা দাগে প্রকৃতি নির্ভর; অতি পর্যটকের চাপে এবং যথার্থ ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ভালো ব্যবস্থাপনা এবং সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের আরও ক্ষতি করবে। সেন্টমার্টিন, রাতারগুল, সুন্দরবন—এই জায়গাগুলো অনেক ক্ষতি হয়েছে পরিকল্পনা না থাকার জন্য। পরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থাপনা অতি জরুরি।
অর্থনীতিতে একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো—ব্যালান্স অব ট্রেড। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কতজন বিদেশ যাত্ৰা করছে এবং কত সংখ্যায় বিদেশি বাংলাদেশে আসছে—সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টুরিজম বোর্ডের হিসাবে, গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি পাসপোর্টধারী এসেছেন ৬ লাখ | এ কারণে বললাম কারণ, এর মধ্যে প্রবাসীরা আছেন, ব্যবসায়ী আছেন, প্রকৃত পর্যটক কতজন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
আর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গমনের সংখ্যা কত? শুধু ভারতে গত বছর ১৬ লাখ মানুষ গেছেন! অন্য দেশ ধরলে এটি ২৬ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এই ২৬ লাখ মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করছে। আসছে ৬ লাখ মানুষ। তা হলে দেশ থেকে প্রায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বেশি বিদেশ যাচ্ছে। ফলে পর্যটন খাত থেকে আমাদের ব্যয় চার গুন বেশি। যা বৈদেশিক মুদ্রায় খরচ হচ্ছে।
অথচ পর্যটনে গুরুত্ব আরোপ করলে এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে এবং ১০ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য সরকারকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, চাকরি নয়। এবং এই কর্মীরা ঢাকামুখী না হয়ে নিজ নিজ এলাকায় জীবনযাপন করতে পারবে। পর্যটন যেহেতু বহুমুখী শিল্প ফলে এর সুফল অনেক পেশার মানুষের মধ্যে প্রসারিত হবে।
পর্যটন যেহেতু একক শিল্প নয় এবং অনেকের সমন্বয়ে এটি পরিচালিত হয় এবং ১৯টি মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ফলে এর হিসাব নির্ণয় করা সহজ নয়। সে কারণে প্রয়োজন টুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টিং (TSA)। যা আমাদের সব প্রতিবেশী দেশে আছে আমরা বাদে।
পর্যটন একটি বহুমাতৃক শিল্প। এক কথায়, যে বিষয়ে একজন পর্যটকের অগগ্রহ সেটাই একটা আকর্ষণ। সে কারণে তাঁরা একটি দেশে যান। তবে মোটা দাগে বেশ কিছু পণ্য তৈরি করতে হবে প্রথম, এর পরে উপখাত। আমাদের সমস্যা হলো, নিজে যেটা বুঝি সেটিকে প্রাধান্য দেওয়া। যেমন, একবার দেখলাম সরকার কমিউনিটি বেজড টুরিজম বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করল। এটি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু যে কোনো শিল্পের মূলধারা বাদ দিয়ে উপধারায় হাত দেবেন?
পর্যটন বিকাশে পরিকাঠামো
পর্যটন বিকাশে পরিকাঠামো জরুরি। বাংলাদেশ উন্নয়ন ধারায় এগিয়ে চলেছে। সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ এবং বিমান যোগাযোগ সব সূচক উল্লেখ করার মতো। কিন্তু পর্যটন এলাকাগুলোতে পরিকাঠামো যথেষ্ট নয়। সব উন্নয়নের সঙ্গে পর্যটন সংযুক্ত থাকা উচিত। স্থাপত্যকলার একটু সমন্বয় থাকা উচিত। প্রাচীন স্থাপনার সঙ্গে যেনতেন একটি নতুন স্থাপনা না করা। সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। যেহেতু ১৯টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পর্যটন যুক্ত ফলে তাদের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকা জরুরি; যা বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনে সম্ভব। একজন মন্ত্রী একা তা সামাল দিতে পারেন না। আরও সংকট হলো, বিমান চলাচল একটি ব্যাপক খাত। পর্যটনও ব্যাপক খাত। একজন সচিব বা একজন মন্ত্রী এটি সামাল দিতে পারেন না। বিমান চলাচল গুরুত্ব পাচ্ছে, কিন্তু পর্যটন ভুক্তভোগী থেকে যায়।
২০২৩–এর খতিয়ান বলছে, নেপাল ১০ লাখ, শ্রীলঙ্কা ১৪ লাখ, মালদ্বীপ ১৮ লাখ পর্যটক পেয়েছে। পাকিস্তান ১১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৬ লাখে।
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাংলাদেশ অনায়াসে ১৫ লাখ পর্যটক আগামী ৩ বছরে আসতে পারবে, যদি পরিকল্পিত মার্কেটিং বাজেট থাকে এবং সেই অর্থ সক্ষমতার সঙ্গে খরচ করতে পারে। প্রথম বছর ৫০ কোটি, দ্বিতীয় বছর ৭৫ কোটি এবং তৃতীয় বছর ১০০ কোটি টাকা। টুরিজম বোর্ডের সক্ষমতা একই সঙ্গে বাড়াতে হবে যাতে তারা এই অর্থ যথাযথ ভাবে বিনিয়োগ করতে পারে। একটি বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা থাকতে হবে। তাড়াহুড়ো করে অর্থনৈতিক বছরের শেষে অপরিকল্পিত ব্যয় যেন না হয়। এর ফলে আমরা লক্ষ্য অর্জন করব এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে ১৫০ থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলার, যদি বাস্তবমুখী পর্যটন বাজারজাত করা হয় | তাহলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে কম করে ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ যেহেতু প্রকৃতি নির্ভর দেশ, ফলে বিলাসী পর্যটনের বদলে প্রাকৃতিক পর্যটনের দিকে যেতে হবে। অল্প বিনিয়োগ, বেশি মুনাফা। কক্সবাজারের চেয়ে সুন্দরবন, নদী, সিলেট, বরিশাল, উত্তরবঙ্গ—এ সব অঞ্চলে পর্যটন বিকাশে বিদেশিদের বেশি টানবে।
বাংলাদেশে এই উপমহাদেশে পর্যটন খরচ সবার চেয়ে বেশি। সে কারণে অনেক সময় দেশের মানুষই কক্সবাজারের চেয়ে কলকাতা যেতে পছন্দ করে খরচের বহর দেখে। হোটেলের ট্যাক্স ৪৫ শতাংশ, গাড়ির ভাড়া অস্বাভাবিক। ফলে বিদেশি হোক বা দেশি সবাই অবাক হয়। ভারতে হোটেলের মান অনুযায়ী ট্যাক্স সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ। এরপরে ডলারের ব্যাংক রেটের সঙ্গে হোটেলের মিল নেই। হোটেলগুলো কমপক্ষে প্রতি ডলারে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি মুনাফা করে। এখানেও সমন্বয়হীনতা আছে। এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই।
সব দেশ তাদের মুদ্রায় মূল্য নির্ধারণ করে, আমরা ব্যতিক্রম। অথচ হোটেলগুলো ডলার গ্রহণ করে না। টুর অপারেটররা যেখানে সরকার নির্ধারিত ব্যাংক রেটে অর্থ পায়। হোটেলগুলোর অনাচারে বেচারাদের ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। উপরন্তু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেও উৎসে তাদের কাছ থেকে কর কর্তন করা হচ্ছে। সরকার পর্যটন খাত থেকে বেশি ট্যাক্স পেতে হলে তা সহনীয় করতে হবে। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদেরও প্রতিবেশী গন্তব্যের সঙ্গে লড়তে হয়।
বিদেশি পর্যটকেরা এখনো বাংলাদেশকে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে চেনে না। সম্প্রতি টুরিজম বোর্ড কোরিয়ায় একটি পর্যটন মেলায় অংশ নিয়েছিল। সেখানে অনেক ভাবে বোঝাতে হয়েছে বাংলাদেশ কোথায়। পর্যটনই পারে দেশের পরিচিতি সহজে তুলে ধরতে। এ কারণে বেশি বেশি বাজারজাতকরণ জরুরি।
পরিশেষে বলব, পর্যটনের বিকাশ মানে শিল্পের বিকাশ। দেশি পণ্য পাবে বড় বাজার। পরিচয় পাবে বিদেশের ক্রেতাদের কাছে সহজে।
লেখক: মহাসচিব, ওয়ার্ল্ড টুরিজম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ চ্যাপটার।
পর্যটন খাতে বাংলাদেশ সব সময় কোনো রকম বেঁচে থাকার বাজেট দিয়ে আসছে। অর্থাৎ পর্যটন শিল্পকে মাজা শক্ত করে ঘুরে দাঁড়াবার মতো অর্থ বরাদ্দ বাজেটে পাওয়া যায় না। কোভিডের বছরগুলো হয়তো পর্যটন অচল ছিল, কিন্তু চালু ছিল টুরিজম মাস্টার প্ল্যানের কার্যক্রম। সেটি এখন সম্পন্ন। এ বছর নতুন সরকারের নতুন বাজেট। প্রত্যাশা অনেক বেশি। অনেক দিনের দাবি অনেক কিছু চাওয়ার বাজেট এবার। নতুন মন্ত্রী ফারুক খান আশার বাণী দিয়েছেন: দেশে বিদেশি পর্যটক আনবেন। টুরিজম মাস্টার প্ল্যানে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে।
পর্যটন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একটি উৎস। সরকার যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চিন্তিত, তখনো কেন বিদেশি পর্যটক আনার ব্যাপারে গতি সৃষ্টি করা হচ্ছে না? পঞ্চাশ বছর কাটল, তবু কোনো সরকার কেন বিষয়টা নিয়ে ভাবছে না! যদি এটি সরকারের প্রায়োরিটি না হয়ে থাকে তো কেন টুরিজম মাস্টার প্ল্যান করতে ৩০ কোটি টাকা খরচ করলেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতের তালিকায় পর্যটন ৩ নম্বরে স্থান পেয়েছে।
ডোমেস্টিক টুরিজম নিয়ে আমরা অনেক চর্চা করেছি। বর্তমানে আনুমানিক ২ কোটি দেশীয় পর্যটক যারা দেশে ভ্রমণ করছেন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। বরং বাংলাদেশ যেহেতু মোটা দাগে প্রকৃতি নির্ভর; অতি পর্যটকের চাপে এবং যথার্থ ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ভালো ব্যবস্থাপনা এবং সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের আরও ক্ষতি করবে। সেন্টমার্টিন, রাতারগুল, সুন্দরবন—এই জায়গাগুলো অনেক ক্ষতি হয়েছে পরিকল্পনা না থাকার জন্য। পরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থাপনা অতি জরুরি।
অর্থনীতিতে একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো—ব্যালান্স অব ট্রেড। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কতজন বিদেশ যাত্ৰা করছে এবং কত সংখ্যায় বিদেশি বাংলাদেশে আসছে—সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টুরিজম বোর্ডের হিসাবে, গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি পাসপোর্টধারী এসেছেন ৬ লাখ | এ কারণে বললাম কারণ, এর মধ্যে প্রবাসীরা আছেন, ব্যবসায়ী আছেন, প্রকৃত পর্যটক কতজন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
আর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গমনের সংখ্যা কত? শুধু ভারতে গত বছর ১৬ লাখ মানুষ গেছেন! অন্য দেশ ধরলে এটি ২৬ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এই ২৬ লাখ মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করছে। আসছে ৬ লাখ মানুষ। তা হলে দেশ থেকে প্রায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বেশি বিদেশ যাচ্ছে। ফলে পর্যটন খাত থেকে আমাদের ব্যয় চার গুন বেশি। যা বৈদেশিক মুদ্রায় খরচ হচ্ছে।
অথচ পর্যটনে গুরুত্ব আরোপ করলে এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে এবং ১০ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য সরকারকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, চাকরি নয়। এবং এই কর্মীরা ঢাকামুখী না হয়ে নিজ নিজ এলাকায় জীবনযাপন করতে পারবে। পর্যটন যেহেতু বহুমুখী শিল্প ফলে এর সুফল অনেক পেশার মানুষের মধ্যে প্রসারিত হবে।
পর্যটন যেহেতু একক শিল্প নয় এবং অনেকের সমন্বয়ে এটি পরিচালিত হয় এবং ১৯টি মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ফলে এর হিসাব নির্ণয় করা সহজ নয়। সে কারণে প্রয়োজন টুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টিং (TSA)। যা আমাদের সব প্রতিবেশী দেশে আছে আমরা বাদে।
পর্যটন একটি বহুমাতৃক শিল্প। এক কথায়, যে বিষয়ে একজন পর্যটকের অগগ্রহ সেটাই একটা আকর্ষণ। সে কারণে তাঁরা একটি দেশে যান। তবে মোটা দাগে বেশ কিছু পণ্য তৈরি করতে হবে প্রথম, এর পরে উপখাত। আমাদের সমস্যা হলো, নিজে যেটা বুঝি সেটিকে প্রাধান্য দেওয়া। যেমন, একবার দেখলাম সরকার কমিউনিটি বেজড টুরিজম বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করল। এটি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু যে কোনো শিল্পের মূলধারা বাদ দিয়ে উপধারায় হাত দেবেন?
পর্যটন বিকাশে পরিকাঠামো
পর্যটন বিকাশে পরিকাঠামো জরুরি। বাংলাদেশ উন্নয়ন ধারায় এগিয়ে চলেছে। সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ এবং বিমান যোগাযোগ সব সূচক উল্লেখ করার মতো। কিন্তু পর্যটন এলাকাগুলোতে পরিকাঠামো যথেষ্ট নয়। সব উন্নয়নের সঙ্গে পর্যটন সংযুক্ত থাকা উচিত। স্থাপত্যকলার একটু সমন্বয় থাকা উচিত। প্রাচীন স্থাপনার সঙ্গে যেনতেন একটি নতুন স্থাপনা না করা। সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। যেহেতু ১৯টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পর্যটন যুক্ত ফলে তাদের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকা জরুরি; যা বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনে সম্ভব। একজন মন্ত্রী একা তা সামাল দিতে পারেন না। আরও সংকট হলো, বিমান চলাচল একটি ব্যাপক খাত। পর্যটনও ব্যাপক খাত। একজন সচিব বা একজন মন্ত্রী এটি সামাল দিতে পারেন না। বিমান চলাচল গুরুত্ব পাচ্ছে, কিন্তু পর্যটন ভুক্তভোগী থেকে যায়।
২০২৩–এর খতিয়ান বলছে, নেপাল ১০ লাখ, শ্রীলঙ্কা ১৪ লাখ, মালদ্বীপ ১৮ লাখ পর্যটক পেয়েছে। পাকিস্তান ১১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৬ লাখে।
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাংলাদেশ অনায়াসে ১৫ লাখ পর্যটক আগামী ৩ বছরে আসতে পারবে, যদি পরিকল্পিত মার্কেটিং বাজেট থাকে এবং সেই অর্থ সক্ষমতার সঙ্গে খরচ করতে পারে। প্রথম বছর ৫০ কোটি, দ্বিতীয় বছর ৭৫ কোটি এবং তৃতীয় বছর ১০০ কোটি টাকা। টুরিজম বোর্ডের সক্ষমতা একই সঙ্গে বাড়াতে হবে যাতে তারা এই অর্থ যথাযথ ভাবে বিনিয়োগ করতে পারে। একটি বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা থাকতে হবে। তাড়াহুড়ো করে অর্থনৈতিক বছরের শেষে অপরিকল্পিত ব্যয় যেন না হয়। এর ফলে আমরা লক্ষ্য অর্জন করব এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে ১৫০ থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলার, যদি বাস্তবমুখী পর্যটন বাজারজাত করা হয় | তাহলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে কম করে ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ যেহেতু প্রকৃতি নির্ভর দেশ, ফলে বিলাসী পর্যটনের বদলে প্রাকৃতিক পর্যটনের দিকে যেতে হবে। অল্প বিনিয়োগ, বেশি মুনাফা। কক্সবাজারের চেয়ে সুন্দরবন, নদী, সিলেট, বরিশাল, উত্তরবঙ্গ—এ সব অঞ্চলে পর্যটন বিকাশে বিদেশিদের বেশি টানবে।
বাংলাদেশে এই উপমহাদেশে পর্যটন খরচ সবার চেয়ে বেশি। সে কারণে অনেক সময় দেশের মানুষই কক্সবাজারের চেয়ে কলকাতা যেতে পছন্দ করে খরচের বহর দেখে। হোটেলের ট্যাক্স ৪৫ শতাংশ, গাড়ির ভাড়া অস্বাভাবিক। ফলে বিদেশি হোক বা দেশি সবাই অবাক হয়। ভারতে হোটেলের মান অনুযায়ী ট্যাক্স সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ। এরপরে ডলারের ব্যাংক রেটের সঙ্গে হোটেলের মিল নেই। হোটেলগুলো কমপক্ষে প্রতি ডলারে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি মুনাফা করে। এখানেও সমন্বয়হীনতা আছে। এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই।
সব দেশ তাদের মুদ্রায় মূল্য নির্ধারণ করে, আমরা ব্যতিক্রম। অথচ হোটেলগুলো ডলার গ্রহণ করে না। টুর অপারেটররা যেখানে সরকার নির্ধারিত ব্যাংক রেটে অর্থ পায়। হোটেলগুলোর অনাচারে বেচারাদের ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। উপরন্তু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেও উৎসে তাদের কাছ থেকে কর কর্তন করা হচ্ছে। সরকার পর্যটন খাত থেকে বেশি ট্যাক্স পেতে হলে তা সহনীয় করতে হবে। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদেরও প্রতিবেশী গন্তব্যের সঙ্গে লড়তে হয়।
বিদেশি পর্যটকেরা এখনো বাংলাদেশকে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে চেনে না। সম্প্রতি টুরিজম বোর্ড কোরিয়ায় একটি পর্যটন মেলায় অংশ নিয়েছিল। সেখানে অনেক ভাবে বোঝাতে হয়েছে বাংলাদেশ কোথায়। পর্যটনই পারে দেশের পরিচিতি সহজে তুলে ধরতে। এ কারণে বেশি বেশি বাজারজাতকরণ জরুরি।
পরিশেষে বলব, পর্যটনের বিকাশ মানে শিল্পের বিকাশ। দেশি পণ্য পাবে বড় বাজার। পরিচয় পাবে বিদেশের ক্রেতাদের কাছে সহজে।
লেখক: মহাসচিব, ওয়ার্ল্ড টুরিজম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ চ্যাপটার।
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১১ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১১ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
১১ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
১১ ঘণ্টা আগে