মৃত্যুঞ্জয় রায়
আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গ শহরের নিচে ফ্রিকস পার্ক নামে একটা পার্ক আছে। হেমন্তের এক বিকেলে তার সকার গ্রাউন্ডের সবুজ কোমল ঘাসের বুকে পা রাখতেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি যেন সারা শরীরে বিদ্যুতের মতো খেলে গেল। আহ্, কী কোমল আর সবুজ! মাথার ওপরে উজ্জ্বল নীল আকাশ। তুলো তুলো সাদা ও ধূসর মেঘেরা বাতাসে ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে অন্য কোনো দেশে। মেঘ সরতেই সূর্যের প্রখর আলো চোখে এসে পড়ছে। ইচ্ছে করছে সবুজে পা ডুবিয়ে সেই রৌদ্রস্নানে মেতে উঠি। একটা হিমেল বাতাস আসছে উত্তর থেকে। চোখে-মুখে এক স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে যেন বলে যাচ্ছে সে বাতাস—যত পারো ফুসফুস ভরে আমাকে টেনে নাও, বিনিময়ে কিচ্ছু দিতে হবে না। পাহাড়ের কিনারে ঝোপের ভেতর ফুটে রয়েছে শত শত বুনো ডেইজির ফুল, তারার মতো আলো ছড়াচ্ছে। পাশে প্রবল হাওয়ায় মাথা দুলিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে গোল্ডেন রড ফুলের সোনালি ডাটি, বুনো গোলাপের থোকাধরা লাল ফল। ফুলফলগুলোর দিকে তাকিয়ে বাতাসের কথা মনে পড়ল—তাই তো, এসব ফুলের রূপ দেখতে, ঘ্রাণ শুকতে তো কিছু দিতে হচ্ছে না। আকাশকে শুধালাম মনে মনে, আকাশ, তোমাকে দেখার জন্য কি কিছু দিতে হবে? মনে হলো সেও মাথা ঝাঁকিয়ে বলছে—না, না, কিছু দিতে হবে না, শুধু দেখে যাও আমার বুকে মেঘেদের খেলা। এটাই তো প্রকৃতি। পৃথিবীতে সবকিছু পেতেই পয়সা লাগে। কিন্তু প্রকৃতির রূপ-রস-সুধা আকণ্ঠ পান করতে আমাদের কিছু ব্যয় করতে হয় না। প্রকৃতির এই উদারতাকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে না পারি, আমাদের হৃদয়কে প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখতে না পারি, সে আমাদেরই দুর্ভাগ্য, প্রকৃতির নয়।
একটা ট্রেইল ধরে কিছুদূর হেঁটে যেতেই সামনে পড়ল একপাল বুনো হরিণ। আমরা হেঁটে গেলেও যেন সেদিকে ওরা কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না। একটা হরিণ আর হরিণীর সঙ্গে চারটে বাচ্চা দিব্যি জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঝিরির পাড়ে বুনো হাঁসদের দাপাদাপি। একজন বাবা তাঁর নবকিশোর ছেলেকে গাছপালা ধরে ধরে কী যেন দেখাচ্ছেন। আশপাশের পাথরগুলোর দিকেও আঙুল তুলে কী যেন বলছেন। ছেলেটা অবাক হয়ে হয়তো সেসব কথা শুনছে আর দেখছে। এই না হলে প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য? এসব বিষয় যেন আজ আমাদের জীবন থেকে উধাও হয়ে গেছে। আমরা দিন দিন প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। কখনো ভাবি না যে আমরা যাদের জন্য বেঁচে আছি, তাদের জন্য কোনো কিছু ব্যয় করছি না—না অর্থ, না সময়, না ভাবনা। অথচ যারা আমাদের বাঁচায় মনে করে অকাতরে অর্থ ও সময় ব্যয় করে সেসব পাওয়ার জন্য পাগলের মতো ছুটছি, তারা কী দিচ্ছে সেটা কখনো ভাবি না।
পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ লোক থাকে ঘরের ভেতরে, খোলা প্রকৃতিতে তাদের বিচরণ খুবই কম। অথচ খানিকটা সময়ের খোলা প্রকৃতি মানুষকে যে প্রশান্তি দিতে পারে, আবদ্ধ ঘর তা পারে না। সবুজের কাছে গেলে মন ও দেহ এক অবর্ণনীয় আনন্দে ভরে ওঠে। অথচ প্রকৃতির সঙ্গে সে সংযোগটাই যেন দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে, আমরা যন্ত্রের দাস হয়ে যাচ্ছি, অথচ হওয়ার কথা ছিল প্রকৃতির। আর এর দুর্ভোগ আমাদের রোজই পোহাতে হচ্ছে। আমাদের মনমেজাজও ঠিক থাকছে না, দেহ তো নয়ই।
অনেকেই হয়তো বলবেন, প্রকৃতিতে থাকা বলাটা যত সহজ, কাজটা তত সহজ না। আমেরিকার বিখ্যাত গ্রন্থ ওয়ালডেন-এর লেখক হেনরি ডেভিড থরু শুধু প্রকৃতিকে হৃদয় থেকে উপলব্ধি করা ও নিজেকে বোঝার জন্য বনবাস গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তা করে জীবনে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পেয়েছিলেন। ড. নওয়াজেশ আহমদ তাঁর মহাবনস্পতির পদাবলী বইয়ে মহীরুহ শ্রন্থন নিবন্ধে এক চমৎকার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। রাজেন্দ্রপুরের শালবনের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলে তিনি হাঁটতে হাঁটতে একসময় একটি জরাজীর্ণ বাড়ির কাছে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে দেখেন একজন শীর্ণকায় বৃদ্ধ একটা সুডৌল কদমগাছকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে আছেন। স্বস্তির সঙ্গে বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন। আধঘণ্টা পর তিনি চোখ খুললেন। বয়সের তুলনায় তাঁকে একটু বেশি জরাজীর্ণ মনে হচ্ছিল। ধীরে ধীরে তিনি তাঁকে দেখে হেসে বললেন, ‘বৃক্ষ শ্রন্থন করলাম। রোজই সকালে একবার করতে হয়। কয়েক বছর ধরে বুকের ব্যথায় ভুগছি। কত ডাক্তার দেখালাম, কত ঔষধ খেলাম। কিন্তু কেউ সারাতে পারল না এ ব্যাধি।’ বৃদ্ধের নাম ধরণীমোহন। বছর দুয়েক পর ড. নওয়াজেশ আহমদ আবার সেখানে গিয়ে দেখেন, তিনি বাড়িতে নেই, মুক্তাগাছায় গিয়েছেন নেমন্তন্ন খেতে, ফিরবেন রাতে। কাল নাকি আবার ঢাকায় যাবেন বইমেলায়। নিজের কান ও চোখকে যেন তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কদমগাছটার দিকে তাকিয়ে দেখেন সেটিও মরণাপন্ন অবস্থায়। তাঁর মনে হয়েছিল, অথর্ববেদের কথাই হয়তো সত্যি, উদ্ভিদরা বৈদ্যক গুরু সোমকে যেন বলছে—প্রাণীদের কল্যাণের জন্য আমাদের প্রেরণ করুন। আমরা তাদের সেবায় আত্ম উৎসর্গ করব। বৃক্ষ নাকি তাই মানুষের জটিল ব্যাধি নিজে গ্রহণ করে রোগগ্রস্তের কাছ থেকে। একেই বলে মহীরুহ শ্রন্থন। এটাই তো প্রকৃতির ধর্ম। মানুষের কল্যাণে সে তার সর্বস্ব উজাড় করে দেয়। আর আমরা নির্বোধের দল তার সেই দান গ্রহণে অক্ষম!
এর জন্য আমাদের হারাতে হচ্ছে প্রকৃতির প্রাকৃতিক চক্রকে। বিশেষত পৃথিবীর প্রায় ৭৭ শতাংশ লোক বাস করে শহরে। তারাই সবচেয়ে বেশি প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। আমরা আমাদের গড়া এক কৃত্রিম জগতের মধ্যে বাস করে ভুগছি অসুখে, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও বিষণ্নতায়। এ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের পুনঃসংযোগ ঘটাতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে। এ জন্য যেখানে আছি, সেখানেই প্রকৃতিকে খুঁজে বের করে তার কাছাকাছি যেতে হবে, সাধ্যমতো সমস্ত অনুভূতি দিয়ে প্রকৃতির রসাস্বাদন করতে হবে, শহর থেকে বেরিয়ে মাঝে মাঝে প্রকৃতির রাজ্যে হারিয়ে যেতে হবে, প্রকৃতিকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসতে হবে, বাগান আর গাছপালায় ঘরবাড়ি শ্যামলিমায় ভরিয়ে তুলতে হবে, হাঁটতে ও ব্যায়াম করতে ছুটে যেতে হবে কোনো উদ্যানে বা জলাশয়ের ধারে, প্রকৃতির কোলে বসে সৃজনশীল কাজে মেতে উঠতে হবে, প্রকৃতিকে নিয়ে লিখতে হবে, ছবি আঁকতে হবে, প্রকৃতির ছবি তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি সব সময়ই কাব্যময়, ছোটদেরও সে মধুময় প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে হবে। যে দিন গেছে যাক, আজ থেকেই না হয় আমরা আবার প্রকৃতির সঙ্গে পুনঃসংযোগের কাজটা শুরু করি। বিশ্বাস করুন, এর জন্য কোনো খরচ করতে হবে না।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গ শহরের নিচে ফ্রিকস পার্ক নামে একটা পার্ক আছে। হেমন্তের এক বিকেলে তার সকার গ্রাউন্ডের সবুজ কোমল ঘাসের বুকে পা রাখতেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি যেন সারা শরীরে বিদ্যুতের মতো খেলে গেল। আহ্, কী কোমল আর সবুজ! মাথার ওপরে উজ্জ্বল নীল আকাশ। তুলো তুলো সাদা ও ধূসর মেঘেরা বাতাসে ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে অন্য কোনো দেশে। মেঘ সরতেই সূর্যের প্রখর আলো চোখে এসে পড়ছে। ইচ্ছে করছে সবুজে পা ডুবিয়ে সেই রৌদ্রস্নানে মেতে উঠি। একটা হিমেল বাতাস আসছে উত্তর থেকে। চোখে-মুখে এক স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে যেন বলে যাচ্ছে সে বাতাস—যত পারো ফুসফুস ভরে আমাকে টেনে নাও, বিনিময়ে কিচ্ছু দিতে হবে না। পাহাড়ের কিনারে ঝোপের ভেতর ফুটে রয়েছে শত শত বুনো ডেইজির ফুল, তারার মতো আলো ছড়াচ্ছে। পাশে প্রবল হাওয়ায় মাথা দুলিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে গোল্ডেন রড ফুলের সোনালি ডাটি, বুনো গোলাপের থোকাধরা লাল ফল। ফুলফলগুলোর দিকে তাকিয়ে বাতাসের কথা মনে পড়ল—তাই তো, এসব ফুলের রূপ দেখতে, ঘ্রাণ শুকতে তো কিছু দিতে হচ্ছে না। আকাশকে শুধালাম মনে মনে, আকাশ, তোমাকে দেখার জন্য কি কিছু দিতে হবে? মনে হলো সেও মাথা ঝাঁকিয়ে বলছে—না, না, কিছু দিতে হবে না, শুধু দেখে যাও আমার বুকে মেঘেদের খেলা। এটাই তো প্রকৃতি। পৃথিবীতে সবকিছু পেতেই পয়সা লাগে। কিন্তু প্রকৃতির রূপ-রস-সুধা আকণ্ঠ পান করতে আমাদের কিছু ব্যয় করতে হয় না। প্রকৃতির এই উদারতাকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে না পারি, আমাদের হৃদয়কে প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখতে না পারি, সে আমাদেরই দুর্ভাগ্য, প্রকৃতির নয়।
একটা ট্রেইল ধরে কিছুদূর হেঁটে যেতেই সামনে পড়ল একপাল বুনো হরিণ। আমরা হেঁটে গেলেও যেন সেদিকে ওরা কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না। একটা হরিণ আর হরিণীর সঙ্গে চারটে বাচ্চা দিব্যি জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঝিরির পাড়ে বুনো হাঁসদের দাপাদাপি। একজন বাবা তাঁর নবকিশোর ছেলেকে গাছপালা ধরে ধরে কী যেন দেখাচ্ছেন। আশপাশের পাথরগুলোর দিকেও আঙুল তুলে কী যেন বলছেন। ছেলেটা অবাক হয়ে হয়তো সেসব কথা শুনছে আর দেখছে। এই না হলে প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য? এসব বিষয় যেন আজ আমাদের জীবন থেকে উধাও হয়ে গেছে। আমরা দিন দিন প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। কখনো ভাবি না যে আমরা যাদের জন্য বেঁচে আছি, তাদের জন্য কোনো কিছু ব্যয় করছি না—না অর্থ, না সময়, না ভাবনা। অথচ যারা আমাদের বাঁচায় মনে করে অকাতরে অর্থ ও সময় ব্যয় করে সেসব পাওয়ার জন্য পাগলের মতো ছুটছি, তারা কী দিচ্ছে সেটা কখনো ভাবি না।
পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ লোক থাকে ঘরের ভেতরে, খোলা প্রকৃতিতে তাদের বিচরণ খুবই কম। অথচ খানিকটা সময়ের খোলা প্রকৃতি মানুষকে যে প্রশান্তি দিতে পারে, আবদ্ধ ঘর তা পারে না। সবুজের কাছে গেলে মন ও দেহ এক অবর্ণনীয় আনন্দে ভরে ওঠে। অথচ প্রকৃতির সঙ্গে সে সংযোগটাই যেন দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে, আমরা যন্ত্রের দাস হয়ে যাচ্ছি, অথচ হওয়ার কথা ছিল প্রকৃতির। আর এর দুর্ভোগ আমাদের রোজই পোহাতে হচ্ছে। আমাদের মনমেজাজও ঠিক থাকছে না, দেহ তো নয়ই।
অনেকেই হয়তো বলবেন, প্রকৃতিতে থাকা বলাটা যত সহজ, কাজটা তত সহজ না। আমেরিকার বিখ্যাত গ্রন্থ ওয়ালডেন-এর লেখক হেনরি ডেভিড থরু শুধু প্রকৃতিকে হৃদয় থেকে উপলব্ধি করা ও নিজেকে বোঝার জন্য বনবাস গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তা করে জীবনে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পেয়েছিলেন। ড. নওয়াজেশ আহমদ তাঁর মহাবনস্পতির পদাবলী বইয়ে মহীরুহ শ্রন্থন নিবন্ধে এক চমৎকার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। রাজেন্দ্রপুরের শালবনের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলে তিনি হাঁটতে হাঁটতে একসময় একটি জরাজীর্ণ বাড়ির কাছে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে দেখেন একজন শীর্ণকায় বৃদ্ধ একটা সুডৌল কদমগাছকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে আছেন। স্বস্তির সঙ্গে বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন। আধঘণ্টা পর তিনি চোখ খুললেন। বয়সের তুলনায় তাঁকে একটু বেশি জরাজীর্ণ মনে হচ্ছিল। ধীরে ধীরে তিনি তাঁকে দেখে হেসে বললেন, ‘বৃক্ষ শ্রন্থন করলাম। রোজই সকালে একবার করতে হয়। কয়েক বছর ধরে বুকের ব্যথায় ভুগছি। কত ডাক্তার দেখালাম, কত ঔষধ খেলাম। কিন্তু কেউ সারাতে পারল না এ ব্যাধি।’ বৃদ্ধের নাম ধরণীমোহন। বছর দুয়েক পর ড. নওয়াজেশ আহমদ আবার সেখানে গিয়ে দেখেন, তিনি বাড়িতে নেই, মুক্তাগাছায় গিয়েছেন নেমন্তন্ন খেতে, ফিরবেন রাতে। কাল নাকি আবার ঢাকায় যাবেন বইমেলায়। নিজের কান ও চোখকে যেন তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কদমগাছটার দিকে তাকিয়ে দেখেন সেটিও মরণাপন্ন অবস্থায়। তাঁর মনে হয়েছিল, অথর্ববেদের কথাই হয়তো সত্যি, উদ্ভিদরা বৈদ্যক গুরু সোমকে যেন বলছে—প্রাণীদের কল্যাণের জন্য আমাদের প্রেরণ করুন। আমরা তাদের সেবায় আত্ম উৎসর্গ করব। বৃক্ষ নাকি তাই মানুষের জটিল ব্যাধি নিজে গ্রহণ করে রোগগ্রস্তের কাছ থেকে। একেই বলে মহীরুহ শ্রন্থন। এটাই তো প্রকৃতির ধর্ম। মানুষের কল্যাণে সে তার সর্বস্ব উজাড় করে দেয়। আর আমরা নির্বোধের দল তার সেই দান গ্রহণে অক্ষম!
এর জন্য আমাদের হারাতে হচ্ছে প্রকৃতির প্রাকৃতিক চক্রকে। বিশেষত পৃথিবীর প্রায় ৭৭ শতাংশ লোক বাস করে শহরে। তারাই সবচেয়ে বেশি প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। আমরা আমাদের গড়া এক কৃত্রিম জগতের মধ্যে বাস করে ভুগছি অসুখে, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও বিষণ্নতায়। এ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের পুনঃসংযোগ ঘটাতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে। এ জন্য যেখানে আছি, সেখানেই প্রকৃতিকে খুঁজে বের করে তার কাছাকাছি যেতে হবে, সাধ্যমতো সমস্ত অনুভূতি দিয়ে প্রকৃতির রসাস্বাদন করতে হবে, শহর থেকে বেরিয়ে মাঝে মাঝে প্রকৃতির রাজ্যে হারিয়ে যেতে হবে, প্রকৃতিকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসতে হবে, বাগান আর গাছপালায় ঘরবাড়ি শ্যামলিমায় ভরিয়ে তুলতে হবে, হাঁটতে ও ব্যায়াম করতে ছুটে যেতে হবে কোনো উদ্যানে বা জলাশয়ের ধারে, প্রকৃতির কোলে বসে সৃজনশীল কাজে মেতে উঠতে হবে, প্রকৃতিকে নিয়ে লিখতে হবে, ছবি আঁকতে হবে, প্রকৃতির ছবি তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি সব সময়ই কাব্যময়, ছোটদেরও সে মধুময় প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে হবে। যে দিন গেছে যাক, আজ থেকেই না হয় আমরা আবার প্রকৃতির সঙ্গে পুনঃসংযোগের কাজটা শুরু করি। বিশ্বাস করুন, এর জন্য কোনো খরচ করতে হবে না।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৮ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৮ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৮ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৮ ঘণ্টা আগে