মোনায়েম সরকার
রাজনৈতিক বিষয়ে লিখতে গিয়ে বুঝতে পারি না, কী লিখব বা কী সত্যি লেখা উচিত। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে মন খুলে লিখতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভুল ধরিয়ে না দিলে তো ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও ২৯ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমাদের ভেতরে যদি কোনো ভুল হয় বা দুর্নীতি হয়, আপনারা প্রকাশ করে দেন। এতে আমরা সচেতন হব এবং সংশোধন করতে পারব। আমাদের ভুলগুলো অবশ্যই ধরিয়ে দেবেন।’
বয়স এবং আরও কিছু বাস্তব কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই আমি সক্রিয় রাজনীতিতে নেই। তবে এখনো লেখালেখিটা ছাড়িনি। প্রতিদিন অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা পড়ি, টেলিভিশন দেখি। আমার কিছু গুণগ্রাহী আছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রতিদিনই নানা বিষয়ে কথা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সব খবর আমাকে টানে না। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খবরগুলো পড়ি। বোঝার চেষ্টা করি, রাজনীতির গতিপথ, কী হচ্ছে দেশে কিংবা কী হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। খুব যে স্পষ্ট কিছু বুঝতে পারি, তেমন দাবি করব না। যেসব আশা ও স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলন হলো, শেখ হাসিনার লম্বা শাসনের অবসান হলো, সেসব আশা ও স্বপ্ন কবে, কীভাবে পূরণ হবে, তা খুব স্পষ্ট নয় এখনো। যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়, তাঁদের মধ্যেও একধরনের হতাশা ও কিছু বুঝে উঠতে না পারার মনোভাব লক্ষ করি।
রবীন্দ্রনাথের একটি গানের কয়েকটি লাইন কানে বাজে:
ওরে, নূতন যুগের ভোরে
দিস নে সময় কাটিয়ে বৃথা সময় বিচার করে॥
কী রবে আর কী রবে না, কী হবে আর কী হবে না
ওরে হিসাবি,
এ সংশয়ের মাঝে কি তোর ভাবনা মিশাবি?
কী রবে আর কী রবে না, কী হবে আর কী হবে না—তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এখন যাঁরা দেশ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা কোথায় গিয়ে শেষ করবেন, শেষের সেই সময়টা কত দিন পরে আসবে তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলছেন না বা বলতে পারছেন না। আমাদের অনেক কিছুরই শুরু ভালো, শেষটা ভালো না। কেউ কেউ এমনও বলেন যে আমরা আরম্ভ করতে পারি, শেষ করতে পারি না। আমরা পাই, আবার পেয়ে হারাই। কারণ কোথায় থামতে হবে, সেটা আমাদের জানা থাকে না বা ভুলে যাই।
ড. ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা সম্পন্ন করে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাবেন, সেটাই এখন সবার সামনে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। তবে ছোট্ট একটা অগ্রগতি হলো, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’ এরপর নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে। তারপর আসবে নির্বাচনের প্রসঙ্গ। নির্বাচন কমিশন গঠন কতটুকু রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে দেখার বিষয় সেটাও। জুলাই-আগস্টে দেশে মানুষের মধ্যে যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, এখন তা বজায় আছে বলে মনে হয় না। আমরা একমত হতে বেশি পছন্দ করি না। ভিন্ন মতের সঙ্গে কীভাবে চলতে হয়, সেটা আমরা খুব রপ্ত করেছি বা সেটা করার চেষ্টা করি, আমার এই দীর্ঘ জীবনে তার প্রমাণ পাইনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাই সব সময় ভালোটার আশা করে খারাপটার জন্য প্রস্তুত থাকি।
সার্চ কমিটির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খুব উচ্ছ্বাস দেখা গেছে বলে মনে হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটু পরামর্শ করবেন—এটা প্রত্যাশা ছিল। তবে এটাকে বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। আমরা মনে করি, দ্রুত ইলেকশন কমিশন হোক এবং ইলেকশন কমিশন অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজটা করুক।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নেই, যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং তিনি বলেছেন তাঁর
কোনো রকমের কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা নেই। সেই কথা ধরে আমি বলতে চাই সজাগ দৃষ্টি রাখবেন, আপনার সম্মানের জায়গাটা যেন নষ্ট না হয়।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেছেন, সার্চ কমিটি গঠন করার আগে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের মতামত নেওয়া দরকার ছিল। তা তো হলো না। আর সার্চ কমিটি অনেক আগেই করার কথা ছিল; পরে হলেও যে হয়েছে সেটা মন্দের ভালো। তবে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করবেন। এটা যদি প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করেন তা হলে তো হলো না। আমরা চাই আগের স্বৈরাচার সরকারের মতো নির্বাচন যাতে না হয়; সে জন্য যে ইসি আসবে সেটা দলমত-নির্বিশেষে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, যাতে সব দলের সমান সুযোগ থাকে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক থাকে। নির্বাচনে যেন কোনো কারচুপি বা অনিয়ম না হয়। আশা করি, এ সার্চ কমিটি সে রকম একটা ইসি জাতিকে উপহার দেবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে অগ্রাধিকার তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যা আছে বলে মনে হয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। গত ৮০ দিনে তাদের নানা বেফাঁস ও আবেগপ্রবণ কথাবার্তায় তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আবার এই সরকারের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব নিয়েও মানুষের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। এটা মনে করা হচ্ছে, বর্তমান সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পথের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগোতে চাইছে। তা ছাড়া দু-একজন সমন্বয়কের বিভিন্ন বিষয়ে অতি আগ্রহ, অতিকথনের বিষয়টিও মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধকরণের ক্ষেত্রে সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান একই সমতলে হওয়াটা কতটা রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে, সে প্রশ্ন উঠবেই। বিএনপি ভিন্ন অবস্থান না নিলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে বঙ্গভবন ছাড়তেই হতো। তবে সাহাবুদ্দিন কত দিন টিকবেন অথবা তাঁকে কোন প্রক্রিয়ায় বিদায় দেওয়া হবে, সে প্রশ্ন এখনো ঝুলে আছে। ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর’ তকমা দেওয়া রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ইউনূস সরকারের অস্বস্তির বিষয়টি বেশ জোরালোভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু হয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করে আবার এক দিনের ব্যবধানে তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনাটি। আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে করা রিট থেকে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সরে এসেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও হাসিবুল ইসলাম। একই সঙ্গে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে করা রিটও না চালানোর কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
এই রিট যাঁরা করেছেন বা করিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে তাঁদের অজ্ঞতা স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে ‘মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী (বড়ুয়া)’ নামে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। রিটে এই দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। রিটের খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে স্বাভাবিকভাবেই বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়। প্রশ্ন উঠতে থাকে, রিটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও ১০টি দলের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন? এই ১০টি দলের কোনো কোনো দল ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আসছে। বিশেষ করে উল্লেখ করা যায় কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ বা সিপিবির কথা। সিপিবি তো এই ১৫ বছর রাজপথেই থেকেছে। রিটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সিপিবির নামোল্লেখ বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বার্তা দেয় নাকি?
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে। এই অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে ছাত্র-জনতা, যাদের বিশেষ কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। তাদের এই অরাজনৈতিক পরিচয়ই ছিল আন্দোলনের মূল শক্তি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল একটা বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সরকার গঠনের পর তাদের এই অরাজনৈতিক পরিচয় ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে না কি?
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
রাজনৈতিক বিষয়ে লিখতে গিয়ে বুঝতে পারি না, কী লিখব বা কী সত্যি লেখা উচিত। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে মন খুলে লিখতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভুল ধরিয়ে না দিলে তো ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও ২৯ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমাদের ভেতরে যদি কোনো ভুল হয় বা দুর্নীতি হয়, আপনারা প্রকাশ করে দেন। এতে আমরা সচেতন হব এবং সংশোধন করতে পারব। আমাদের ভুলগুলো অবশ্যই ধরিয়ে দেবেন।’
বয়স এবং আরও কিছু বাস্তব কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই আমি সক্রিয় রাজনীতিতে নেই। তবে এখনো লেখালেখিটা ছাড়িনি। প্রতিদিন অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা পড়ি, টেলিভিশন দেখি। আমার কিছু গুণগ্রাহী আছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রতিদিনই নানা বিষয়ে কথা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সব খবর আমাকে টানে না। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খবরগুলো পড়ি। বোঝার চেষ্টা করি, রাজনীতির গতিপথ, কী হচ্ছে দেশে কিংবা কী হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। খুব যে স্পষ্ট কিছু বুঝতে পারি, তেমন দাবি করব না। যেসব আশা ও স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলন হলো, শেখ হাসিনার লম্বা শাসনের অবসান হলো, সেসব আশা ও স্বপ্ন কবে, কীভাবে পূরণ হবে, তা খুব স্পষ্ট নয় এখনো। যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়, তাঁদের মধ্যেও একধরনের হতাশা ও কিছু বুঝে উঠতে না পারার মনোভাব লক্ষ করি।
রবীন্দ্রনাথের একটি গানের কয়েকটি লাইন কানে বাজে:
ওরে, নূতন যুগের ভোরে
দিস নে সময় কাটিয়ে বৃথা সময় বিচার করে॥
কী রবে আর কী রবে না, কী হবে আর কী হবে না
ওরে হিসাবি,
এ সংশয়ের মাঝে কি তোর ভাবনা মিশাবি?
কী রবে আর কী রবে না, কী হবে আর কী হবে না—তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এখন যাঁরা দেশ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা কোথায় গিয়ে শেষ করবেন, শেষের সেই সময়টা কত দিন পরে আসবে তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলছেন না বা বলতে পারছেন না। আমাদের অনেক কিছুরই শুরু ভালো, শেষটা ভালো না। কেউ কেউ এমনও বলেন যে আমরা আরম্ভ করতে পারি, শেষ করতে পারি না। আমরা পাই, আবার পেয়ে হারাই। কারণ কোথায় থামতে হবে, সেটা আমাদের জানা থাকে না বা ভুলে যাই।
ড. ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা সম্পন্ন করে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাবেন, সেটাই এখন সবার সামনে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। তবে ছোট্ট একটা অগ্রগতি হলো, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’ এরপর নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে। তারপর আসবে নির্বাচনের প্রসঙ্গ। নির্বাচন কমিশন গঠন কতটুকু রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে দেখার বিষয় সেটাও। জুলাই-আগস্টে দেশে মানুষের মধ্যে যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, এখন তা বজায় আছে বলে মনে হয় না। আমরা একমত হতে বেশি পছন্দ করি না। ভিন্ন মতের সঙ্গে কীভাবে চলতে হয়, সেটা আমরা খুব রপ্ত করেছি বা সেটা করার চেষ্টা করি, আমার এই দীর্ঘ জীবনে তার প্রমাণ পাইনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাই সব সময় ভালোটার আশা করে খারাপটার জন্য প্রস্তুত থাকি।
সার্চ কমিটির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খুব উচ্ছ্বাস দেখা গেছে বলে মনে হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটু পরামর্শ করবেন—এটা প্রত্যাশা ছিল। তবে এটাকে বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। আমরা মনে করি, দ্রুত ইলেকশন কমিশন হোক এবং ইলেকশন কমিশন অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজটা করুক।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নেই, যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং তিনি বলেছেন তাঁর
কোনো রকমের কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা নেই। সেই কথা ধরে আমি বলতে চাই সজাগ দৃষ্টি রাখবেন, আপনার সম্মানের জায়গাটা যেন নষ্ট না হয়।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেছেন, সার্চ কমিটি গঠন করার আগে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের মতামত নেওয়া দরকার ছিল। তা তো হলো না। আর সার্চ কমিটি অনেক আগেই করার কথা ছিল; পরে হলেও যে হয়েছে সেটা মন্দের ভালো। তবে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করবেন। এটা যদি প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করেন তা হলে তো হলো না। আমরা চাই আগের স্বৈরাচার সরকারের মতো নির্বাচন যাতে না হয়; সে জন্য যে ইসি আসবে সেটা দলমত-নির্বিশেষে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, যাতে সব দলের সমান সুযোগ থাকে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক থাকে। নির্বাচনে যেন কোনো কারচুপি বা অনিয়ম না হয়। আশা করি, এ সার্চ কমিটি সে রকম একটা ইসি জাতিকে উপহার দেবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে অগ্রাধিকার তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যা আছে বলে মনে হয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। গত ৮০ দিনে তাদের নানা বেফাঁস ও আবেগপ্রবণ কথাবার্তায় তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আবার এই সরকারের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব নিয়েও মানুষের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। এটা মনে করা হচ্ছে, বর্তমান সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পথের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগোতে চাইছে। তা ছাড়া দু-একজন সমন্বয়কের বিভিন্ন বিষয়ে অতি আগ্রহ, অতিকথনের বিষয়টিও মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধকরণের ক্ষেত্রে সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান একই সমতলে হওয়াটা কতটা রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে, সে প্রশ্ন উঠবেই। বিএনপি ভিন্ন অবস্থান না নিলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে বঙ্গভবন ছাড়তেই হতো। তবে সাহাবুদ্দিন কত দিন টিকবেন অথবা তাঁকে কোন প্রক্রিয়ায় বিদায় দেওয়া হবে, সে প্রশ্ন এখনো ঝুলে আছে। ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর’ তকমা দেওয়া রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ইউনূস সরকারের অস্বস্তির বিষয়টি বেশ জোরালোভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু হয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করে আবার এক দিনের ব্যবধানে তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনাটি। আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে করা রিট থেকে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সরে এসেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও হাসিবুল ইসলাম। একই সঙ্গে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে করা রিটও না চালানোর কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
এই রিট যাঁরা করেছেন বা করিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে তাঁদের অজ্ঞতা স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে ‘মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী (বড়ুয়া)’ নামে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। রিটে এই দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। রিটের খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে স্বাভাবিকভাবেই বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়। প্রশ্ন উঠতে থাকে, রিটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও ১০টি দলের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন? এই ১০টি দলের কোনো কোনো দল ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আসছে। বিশেষ করে উল্লেখ করা যায় কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ বা সিপিবির কথা। সিপিবি তো এই ১৫ বছর রাজপথেই থেকেছে। রিটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সিপিবির নামোল্লেখ বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বার্তা দেয় নাকি?
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে। এই অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে ছাত্র-জনতা, যাদের বিশেষ কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। তাদের এই অরাজনৈতিক পরিচয়ই ছিল আন্দোলনের মূল শক্তি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল একটা বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সরকার গঠনের পর তাদের এই অরাজনৈতিক পরিচয় ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে না কি?
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৬ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৬ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৬ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৬ ঘণ্টা আগে