চিররঞ্জন সরকার
দেশের অর্থনীতির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গড়া সংগঠনের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এই সংগঠনটির অনেক সুনাম আছে। শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদেরা এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সংগঠনটিও দখল হয়ে গেছে। ‘বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র ব্যানারে একদল সদস্য সমিতির প্রধান কার্যালয় দখল করে রেখেছেন। শুধু অর্থনীতি সমিতির অফিস নয়, এক সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবর মতে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাবলিক টয়লেটও দখল করা হয়েছে। আগে যাঁরা এই পাবলিক টয়লেটগুলো পরিচালনা করতেন, তাঁদের বাদ দিয়ে এখন নতুন গ্রুপ এগুলোর দখল নিয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যায় লুটপাট, হামলা আর দখলের অভিযান। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাঁরা এখন সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন। কেউ চাইছেন ঠিকাদারি, কেউ দাবি করছেন চাঁদা, আবার কেউ ব্যস্ত চেয়ার দখল নিয়ে। ক্ষমতার পালাবদলে যেন দখলের মচ্ছব লেগেছে সর্বত্র।
এই নব্য দখলদারেরা রাতারাতি তাঁদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও খাসজমি দখল করে দলীয় ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চাপ প্রয়োগ করে, হুমকি দিয়ে ঠিকাদারি কাজের দখলও নেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দলবল নিয়ে ঠিকাদারি কাজের জন্য চাপ দিচ্ছে একটি মহল। তারা উন্নয়নকাজগুলো দখলে নিতে মরিয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় পুরোনো ঠিকাদারদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতাও চলছে। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা একটি গ্রুপ বিভিন্ন চেয়ারে বসার জন্য দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় চাপ প্রয়োগ করে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে পছন্দের লোকদের পোস্টিং বাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পদোন্নতিও আদায় করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশেই চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেলেও সেখানে চাঁদাবাজির নতুন সিন্ডিকেটের উদ্ভব হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরেও
লিখিত অভিযোগ জমা পড়ছে। দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বেশ কিছু বিএনপি নেতাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
এমনিতেই বাংলাদেশ হলো সংঘ, সংগঠন, সমিতি ও জোটের দেশ। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, আমলা, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামা—প্রত্যেকের পৃথক সংগঠন আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় রাতারাতি এই সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব পরিবর্তন ও কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে।
দলবাজি ছাড়া এ দেশে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অন্য কোনো ভূমিকা নেই। ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলো স্রেফ চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করে। পছন্দের লোকদের ভালো পদায়ন ও অপছন্দের লোকদের কোণঠাসা করে রাখাও শ্রমিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়, আর নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, সেই টাকা মেরে দিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। প্রকৌশলীরা ঠিকাদারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করার নেশায় মত্ত। চিকিৎসকেরা পছন্দের জায়গায় পোস্টিং নিয়ে হাসপাতাল ফাঁকি দিয়ে ওষুধ কোম্পানি আর বেসরকারি ক্লিনিকের কমিশন-বাণিজ্য করেন। শিক্ষকেরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং-বাণিজ্য করে, প্রাইভেট পড়িয়ে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শক হয়ে টু-পাইস কামানোর ধান্দা করেন। আমলা, পুলিশ, আইনজীবীদের সংগঠনও নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধা আদায়ের ধান্দায় মশগুল থাকে।
দলীয় আনুগত্যই শেষ বিচারে ঠিক করবে তার পদ, অবস্থা—সরকার পরিবর্তনের পর তাই ‘বঞ্চিত’ অংশ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নিজেদের ‘হিস্যা’ বুঝে নেওয়ার অভিযানে। পুরোনো সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে নতুন সাইনবোর্ড তোলা হয়েছে। আমাদের দেশে আমলা, ডাক্তার, পুলিশ, শিক্ষক, প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীর আয়-উন্নতির নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় আনুগত্য। বিদেশে পড়ার বৃত্তি, অর্থ-বিত্ত, প্রভাব, সস্ত্রীক বা সপরিবারে বিদেশ সফরের কাঙ্ক্ষিত সুযোগ; জীবনের রোশনাই আর ভাগ্যের খোলতাই নির্ভর করছে দলীয় রাজনীতির জটিল সমীকরণে তার খেলবার শক্তির ওপর। চাল আর কূটচালে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে দলীয় নেতাদের কতটা নৈকট্যে কারা পৌঁছাতে পারলেন তার ওপরে নির্ভর করছে শান-শওকত, ক্যারিয়ার।
দলের কাজল না মেখে এখন কেউ চোখে দেখে না। গণসংগঠনগুলোও না। আর আমাদের দেশে দল মানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এতে কোনো রাখঢাকের বালাই থাকে না। পিয়ন থেকে সচিব—বলতে গেলে সবাই এই দুই শিবিরে ভাগ হয়ে পড়েছেন। আরও ভয়ংকর যে মহামান্য আদালতের মান্যবর বিচারকদের ক্ষেত্রেও এই রকম সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উচ্চারিত হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, বাসমালিক, আইনজীবী, ট্রাকচালক, ব্যাংক, বিমা, সচিবালয়, ওলামা-মাশায়েখ, ভ্যানচালক সমিতি সবাই দলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে তাদের তথাকথিত নেতা নির্বাচিত করছে। কোনোটা হচ্ছে একেবারে নগ্নভাবে, প্রকাশ্যে দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে, কোনোটায় আবার কিছুটা আড়াল রাখা হচ্ছে। এই নেতারাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিয়োগ-বাণিজ্য, ভর্তি-বাণিজ্য, পদোন্নতি, টেন্ডারসহ তাবৎ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাপট থাকে বেশি, কারণ সুযোগ আর সম্পদের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রবল আর বিরোধীপক্ষ অপেক্ষায় থাকে কবে তারা ক্ষমতায় যাবে।
সব শ্রেণির পেশাজীবীদের মধ্যে যেমন দলের খাদেমের অভাব নেই, তেমনি আবার একদল খাদেম আছে, যাদের কোনো দল নেই। তারা সব সময়ই সরকারি দল। খেদমতের নামে নিজেদের আখের গোছাতে সব সময় তারা চেষ্টা করে সরকারি দলে ভিড়তে। তাদের আরেক নাম পারমানেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এখন বিএনপির খাদেমদের সমারোহ লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মুখ একই, কেবল সাইনবোর্ডটা বদলেছে।
ক্ষমতা বদলের মাস তিনেক হয়েছে। এর মধ্যেই সিবিএগুলোতে কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, মোটরশ্রমিক—সব সংগঠন এখন বিএনপির দখলে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও ভোল পাল্টে ফেলেছেন। অনেকেই এখন জয় বাংলাপন্থী থেকে জিন্দাবাদপন্থী হয়ে গেছেন। ক্রীড়াঙ্গনেও একই চিত্র।
এতকাল আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা হাজার হাজার শাখা সংগঠনে দেশ ভরে ফেলেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা, শিশু, যুব, স্বেচ্ছাসেবক, কৃষক, হকার, বাস্তুহারা, তাঁতি, মজুর, মুটে, রিকশা-ভ্যানচালক, সিবিএ, ব্যবসায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি, সংস্কৃতি, চিকিৎসক, আর্থিক, মৎস্যজীবী, বিনিয়োগকারী, খেলাধুলা,
নারী, শিল্প-বাণিজ্য, ব্যবসায়ী, প্রবীণ নাগরিক, ম্যানেজমেন্ট, মানবাধিকারসহ অসংখ্য সেল তৈরি করেছিল। সেসব সেলে সদস্যেরও কোনো অভাব হয়নি। ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর সব সেল শ্মশানের ছাইয়ের মতো মিলিয়ে গেছে। সেই ভস্মে এখন জন্ম নিয়েছে বিএনপির সব সেল। জন্ম নিয়েছে বললে ভুল হবে, তাদের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে।
দেশজুড়েই আগের রূপে ফিরে এসেছে দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়, কিন্তু এর মধ্যেও রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে চাঁদাবাজের পরিবর্তন হয় কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হয় না।
অথচ ৫ আগস্টের পর দেশবাসী এক ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন দেখেছিল। বাংলাদেশ হবে সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, জবরদখলবিহীন ও সব প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহারের ঊর্ধ্বে—এমনটাই ছিল জনপ্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আড়ালে চলে যাওয়ায় শূন্যস্থান পূরণে ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের একশ্রেণির নেতা-কর্মী ‘এখন আমাদের সময়’ মনে করে আত্মঘাতী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান যে নিপীড়নহীন ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে, তাকে প্রহসনে পরিণত করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছেন।
এই পরিস্থিতি থেকে যদি উদ্ধার পাওয়া না যায় তাহলে ‘নতুন বাংলাদেশে’র অভীষ্ট ব্যর্থ হয়ে পড়বে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
দেশের অর্থনীতির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গড়া সংগঠনের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এই সংগঠনটির অনেক সুনাম আছে। শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদেরা এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সংগঠনটিও দখল হয়ে গেছে। ‘বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র ব্যানারে একদল সদস্য সমিতির প্রধান কার্যালয় দখল করে রেখেছেন। শুধু অর্থনীতি সমিতির অফিস নয়, এক সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবর মতে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাবলিক টয়লেটও দখল করা হয়েছে। আগে যাঁরা এই পাবলিক টয়লেটগুলো পরিচালনা করতেন, তাঁদের বাদ দিয়ে এখন নতুন গ্রুপ এগুলোর দখল নিয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যায় লুটপাট, হামলা আর দখলের অভিযান। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাঁরা এখন সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন। কেউ চাইছেন ঠিকাদারি, কেউ দাবি করছেন চাঁদা, আবার কেউ ব্যস্ত চেয়ার দখল নিয়ে। ক্ষমতার পালাবদলে যেন দখলের মচ্ছব লেগেছে সর্বত্র।
এই নব্য দখলদারেরা রাতারাতি তাঁদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও খাসজমি দখল করে দলীয় ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চাপ প্রয়োগ করে, হুমকি দিয়ে ঠিকাদারি কাজের দখলও নেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দলবল নিয়ে ঠিকাদারি কাজের জন্য চাপ দিচ্ছে একটি মহল। তারা উন্নয়নকাজগুলো দখলে নিতে মরিয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় পুরোনো ঠিকাদারদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতাও চলছে। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা একটি গ্রুপ বিভিন্ন চেয়ারে বসার জন্য দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় চাপ প্রয়োগ করে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে পছন্দের লোকদের পোস্টিং বাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পদোন্নতিও আদায় করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশেই চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেলেও সেখানে চাঁদাবাজির নতুন সিন্ডিকেটের উদ্ভব হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরেও
লিখিত অভিযোগ জমা পড়ছে। দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বেশ কিছু বিএনপি নেতাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
এমনিতেই বাংলাদেশ হলো সংঘ, সংগঠন, সমিতি ও জোটের দেশ। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, আমলা, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামা—প্রত্যেকের পৃথক সংগঠন আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় রাতারাতি এই সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব পরিবর্তন ও কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে।
দলবাজি ছাড়া এ দেশে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অন্য কোনো ভূমিকা নেই। ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলো স্রেফ চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করে। পছন্দের লোকদের ভালো পদায়ন ও অপছন্দের লোকদের কোণঠাসা করে রাখাও শ্রমিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়, আর নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, সেই টাকা মেরে দিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। প্রকৌশলীরা ঠিকাদারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করার নেশায় মত্ত। চিকিৎসকেরা পছন্দের জায়গায় পোস্টিং নিয়ে হাসপাতাল ফাঁকি দিয়ে ওষুধ কোম্পানি আর বেসরকারি ক্লিনিকের কমিশন-বাণিজ্য করেন। শিক্ষকেরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং-বাণিজ্য করে, প্রাইভেট পড়িয়ে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শক হয়ে টু-পাইস কামানোর ধান্দা করেন। আমলা, পুলিশ, আইনজীবীদের সংগঠনও নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধা আদায়ের ধান্দায় মশগুল থাকে।
দলীয় আনুগত্যই শেষ বিচারে ঠিক করবে তার পদ, অবস্থা—সরকার পরিবর্তনের পর তাই ‘বঞ্চিত’ অংশ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নিজেদের ‘হিস্যা’ বুঝে নেওয়ার অভিযানে। পুরোনো সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে নতুন সাইনবোর্ড তোলা হয়েছে। আমাদের দেশে আমলা, ডাক্তার, পুলিশ, শিক্ষক, প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীর আয়-উন্নতির নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় আনুগত্য। বিদেশে পড়ার বৃত্তি, অর্থ-বিত্ত, প্রভাব, সস্ত্রীক বা সপরিবারে বিদেশ সফরের কাঙ্ক্ষিত সুযোগ; জীবনের রোশনাই আর ভাগ্যের খোলতাই নির্ভর করছে দলীয় রাজনীতির জটিল সমীকরণে তার খেলবার শক্তির ওপর। চাল আর কূটচালে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে দলীয় নেতাদের কতটা নৈকট্যে কারা পৌঁছাতে পারলেন তার ওপরে নির্ভর করছে শান-শওকত, ক্যারিয়ার।
দলের কাজল না মেখে এখন কেউ চোখে দেখে না। গণসংগঠনগুলোও না। আর আমাদের দেশে দল মানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এতে কোনো রাখঢাকের বালাই থাকে না। পিয়ন থেকে সচিব—বলতে গেলে সবাই এই দুই শিবিরে ভাগ হয়ে পড়েছেন। আরও ভয়ংকর যে মহামান্য আদালতের মান্যবর বিচারকদের ক্ষেত্রেও এই রকম সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উচ্চারিত হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, বাসমালিক, আইনজীবী, ট্রাকচালক, ব্যাংক, বিমা, সচিবালয়, ওলামা-মাশায়েখ, ভ্যানচালক সমিতি সবাই দলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে তাদের তথাকথিত নেতা নির্বাচিত করছে। কোনোটা হচ্ছে একেবারে নগ্নভাবে, প্রকাশ্যে দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে, কোনোটায় আবার কিছুটা আড়াল রাখা হচ্ছে। এই নেতারাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিয়োগ-বাণিজ্য, ভর্তি-বাণিজ্য, পদোন্নতি, টেন্ডারসহ তাবৎ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাপট থাকে বেশি, কারণ সুযোগ আর সম্পদের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রবল আর বিরোধীপক্ষ অপেক্ষায় থাকে কবে তারা ক্ষমতায় যাবে।
সব শ্রেণির পেশাজীবীদের মধ্যে যেমন দলের খাদেমের অভাব নেই, তেমনি আবার একদল খাদেম আছে, যাদের কোনো দল নেই। তারা সব সময়ই সরকারি দল। খেদমতের নামে নিজেদের আখের গোছাতে সব সময় তারা চেষ্টা করে সরকারি দলে ভিড়তে। তাদের আরেক নাম পারমানেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এখন বিএনপির খাদেমদের সমারোহ লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মুখ একই, কেবল সাইনবোর্ডটা বদলেছে।
ক্ষমতা বদলের মাস তিনেক হয়েছে। এর মধ্যেই সিবিএগুলোতে কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, মোটরশ্রমিক—সব সংগঠন এখন বিএনপির দখলে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও ভোল পাল্টে ফেলেছেন। অনেকেই এখন জয় বাংলাপন্থী থেকে জিন্দাবাদপন্থী হয়ে গেছেন। ক্রীড়াঙ্গনেও একই চিত্র।
এতকাল আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা হাজার হাজার শাখা সংগঠনে দেশ ভরে ফেলেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা, শিশু, যুব, স্বেচ্ছাসেবক, কৃষক, হকার, বাস্তুহারা, তাঁতি, মজুর, মুটে, রিকশা-ভ্যানচালক, সিবিএ, ব্যবসায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি, সংস্কৃতি, চিকিৎসক, আর্থিক, মৎস্যজীবী, বিনিয়োগকারী, খেলাধুলা,
নারী, শিল্প-বাণিজ্য, ব্যবসায়ী, প্রবীণ নাগরিক, ম্যানেজমেন্ট, মানবাধিকারসহ অসংখ্য সেল তৈরি করেছিল। সেসব সেলে সদস্যেরও কোনো অভাব হয়নি। ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর সব সেল শ্মশানের ছাইয়ের মতো মিলিয়ে গেছে। সেই ভস্মে এখন জন্ম নিয়েছে বিএনপির সব সেল। জন্ম নিয়েছে বললে ভুল হবে, তাদের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে।
দেশজুড়েই আগের রূপে ফিরে এসেছে দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়, কিন্তু এর মধ্যেও রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে চাঁদাবাজের পরিবর্তন হয় কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হয় না।
অথচ ৫ আগস্টের পর দেশবাসী এক ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন দেখেছিল। বাংলাদেশ হবে সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, জবরদখলবিহীন ও সব প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহারের ঊর্ধ্বে—এমনটাই ছিল জনপ্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আড়ালে চলে যাওয়ায় শূন্যস্থান পূরণে ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের একশ্রেণির নেতা-কর্মী ‘এখন আমাদের সময়’ মনে করে আত্মঘাতী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান যে নিপীড়নহীন ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে, তাকে প্রহসনে পরিণত করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছেন।
এই পরিস্থিতি থেকে যদি উদ্ধার পাওয়া না যায় তাহলে ‘নতুন বাংলাদেশে’র অভীষ্ট ব্যর্থ হয়ে পড়বে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৪ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৪ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৪ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৪ ঘণ্টা আগে