আবু তাহের খান
খুব সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং- সানেমের সম্মেলনের আলোচনায় উঠে এসেছে, ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এখন শাসকগোষ্ঠীর অংশ হয়ে পড়েছেন। অবশ্য এরূপ বলার স্থান বা ধরন নতুন হলেও ঘটনা বা বিষয় হিসেবে এটি মোটেও নতুন কিছু নয় এবং তা হঠাৎ করেও ঘটেনি। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে যখন থেকেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমান্বয়ে তার চিন্তার ঐশ্বর্য্য, মূল্যবোধের অগ্রগামিতা ও সামাজিক দায়বোধ হারাতে থাকে, ঠিক তখন থেকেই এখানে তস্কর ব্যবসায়ী (সব ব্যবসায়ীকে বলা হচ্ছে না) শ্রেণির বিকাশ ঘটতে শুরু করে। আর এটিকে একেবারে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে চিহ্নিত করা না গেলেও ১৯৯০ দশকের গোড়াতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সাথে এর একটি যোগসূত্র নির্মাণের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি। তবে এর যাত্রা যখন থেকেই শুরু হয়ে থাকুক না কেন, এর একটি বিকট ও ভয়ানক আনুষ্ঠানিক চেহারা প্রথম দৃশ্যমান হয় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (এ নির্বাচন দিনে নাকি রাতে হয়েছে সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ) ফলাফল থেকে। তাতে দেখা যায়, বিজয়ী ঘোষিতদের মধ্যে ১৬২ জনই ব্যবসায়ী, যা মোট আসনের ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ।
ওই নির্বাচনের আগেও রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রভাব কমবেশি ছিল। সরকারি ও বিরোধী উভয় দলকেই তারা সমহারে না হোক- কমবেশি করে হলেও বরাবরই চাঁদা দিয়ে আসছিল। তবে নির্বাচনে জিতে নিজেদের স্বার্থ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পাওয়ার পর এখন আর তাদেরকে চাঁদা দিতে হচ্ছে না। উল্টো বরং রাষ্ট্র ও জনগণই এখন তাদেরকে নানা নামে চাঁদা দিয়ে বেড়াচ্ছে। এই নামের তালিকা বেশ লম্বা- নগদ প্রণোদনা, কর-শুল্ক ফাঁকিদান, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করা, বিদেশে টাকা পাচার, গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ রেখে এলএনজি আমদানির অনুমতিলাভ, জনগণের মাথায় কুইক রেন্টালের কাঠাল ভেঙে খাওয়াকে দায়মুক্তি প্রদান, মজুদদারী, যখন-তখন পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদির মতো একচেটিয়া কর্তৃত্ব অর্জন প্রভৃতি। আর রাজনৈতিক প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও আশীর্বাদের কারণে এগুলোও আবার এতোটাই একচেটিয়া হয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে যে, এসব ক্ষেত্রে তাদের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের কারণে জনগণের এখন দিশেহারা অবস্থা।
ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র শাসকশ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত নন- ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সবচেয়ে বড় উপদেষ্টা এবং সুহৃদও বটে। রাজনীতিকদের কাছে তারা এখন পরম কাম্য এবং কখনো কখনো আরাধ্যও। যেকোনো দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাই এখন নীতিনির্ধারকদের এক নম্বর পছন্দ, তা তার রাজনৈতিক পটভূমি যদি বিতর্কিত বা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে বিরোধপূর্ণ হয় তবু্ও। করোনা বা অন্যবিধ সমস্যায় কাকে কতো প্রণোদনা দেয়া হবে তার মূল পরামর্শদাতা যেমন ব্যবসায়ীরা, তেমনি খেলাপি ঋণে কাকে কখন কতটুকু ছাড় দিতে হবে কিংবা এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কখন কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেসবেরও মূল নির্ধারক এখন ব্যবসায়ীরাই। ব্যবসায়ীদের মতের ভিত্তিতেই এখন সিদ্ধান্ত হচ্ছে কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ আর কোন কোন অসচ্ছ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে জাতীয় সংসদে দায়মুক্তি দেয়া হবে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্তি ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়ার এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এখন ঢুকে যাচ্ছে বিদেশি ব্যবসায়ীরাও। সম্ভাবনাবিহীন যেসব মেগাপ্রকল্প নিয়ে বিবেকবান অর্থনীতিবিদ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ প্রায়শই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, সেসব প্রকল্পের বেশিরভাগই গ্রহণ করা হয়েছে বিদেশি ব্যবসায়ীদের ইন্ধন, পরামর্শ ও আগ্রহে।
এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীরা শাসকশ্রেণির অংশ হয়ে ওঠছেন বলে সানেম সম্মেলনে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলো, সে উদ্বেগের সাথে এটিও যোগ করা প্রয়োজন যে, বহু বিদেশি কোম্পানিই এখন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পড়েছে। বন কেটে বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট স্থাপন কিংবা মহাসড়ককে বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারের সাথে একীভূত করে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের মতো প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ততো আসলে বিদেশিদের স্বার্থ ও চিন্তা থেকেই আসা। ফলে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা এখন ব্যবসায়ীদের করতলগত- এটা বলাই শুধু যথেষ্ট নয়। বরং সেই সাথে এটাও বলা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব এখন দেশি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বহুলাংশে বিদেশি ব্যবসায়ীদের হাতেও ন্যস্ত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাহলে অসুবিধা কী? প্রথম অসুবিধা এই যে, ব্যবসায়ীর মূল লক্ষ্য যেখানে মুনাফা, রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য সেখানে জনগণের কল্যাণ সাধন। আর জনগণ যখন ব্যবসায়ীর মুনাফা অর্জনের মূল উপকরণ, তখন সেই জনগণকে ভোক্তা হিসেবে ব্যবহার করে মুনাফা বৃদ্ধির পরিবর্তে তাদের কল্যাণ সাধন ব্যবসায়ীর কাছে কখনোই অগ্রাধিকার কর্তব্য হতে পারে না। এবং সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, তেমনটি হচ্ছেও না। ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কি হয় বা তখন কি কি তারা করতে পারেন, তার অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। ফলে বিষয়টি এখানে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে এটুকু শুধু বলা যেতে পারে যে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের কেউই আজ পর্যন্ত এমন একটি নজিরও স্থাপন করতে পারেননি যা সামনে রেখে বলা যাবে যে, ব্যবসায়ীদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যুক্ত করার মধ্যে দোষের কিছু নেই।
সে যাইহোক, রাষ্ট্র ও রাজনীতির বর্তমান ধারা বহাল থাকলে এটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের রাষ্ট্রশাসনে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সুযোগে তাদের মুনাফার লোভও আরো প্রকট হয়ে ওঠবে। আর এর ফলশ্রুতিতে মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যদশাই যে শুধু বাড়বে তাই নয়- রাষ্ট্র হিসেবেও বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে চরম অধঃগামিতার দিকে ধাবিত হবে, যার কিছু কিছু নমুনা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। শিক্ষিত রুচিবান মানুষের জন্য রাজনীতিকে এখন শুধু কঠিনই করে ফেলা হয়নি, সেইসঙ্গে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে, রাজনীতি করতে হলে বা রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে হলে আগে ব্যবসায়ী হয়ে সাদাকালো নানাপথে অঢেল অর্থ কামাতে হবে এবং পরে সেই অর্থ দিয়ে মনোনয়ন কিনতে হবে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের কাছে এ প্রক্রিয়া বেশ উপভোগ্য বলেই মনে হচ্ছে। কারণ এ ধরনের মনোনয়ন কিনতে যত অর্থই ব্যয় হোক না কেন, পরে তা সুদে-আসলে আরো বহগুণ বাড়িয়ে উসুল করে নিতে পারাটা তাদের জন্য মোটেও কঠিন কিছু নয়।
বুর্জোয়া রাষ্ট্রে জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে কার্ল মার্ক্স যথার্থই রাষ্ট্রকে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান চেহারা দেখতে পেলে তিনি হয়তো এটাও বলতেন যে, রাষ্ট্র শোষণের হাতিয়ার বটে, তবে ব্যবসায়ীশাসিত রাষ্ট্র হচ্ছে শোষণের নিষ্ঠুর ও কুৎসিৎতম হাতিয়ার। এ দেশের মানুষ রাষ্ট্রীয় শোষণের সে কদর্যতা থেকে কখন মুক্তি পাবে, আমরা কেউই তা জানি না। তবে এটুকু জানি যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা ১৮৫৭ কিংবা ১৯৭১-এ এরকম একটি রাষ্ট্রের জন্য প্রাণ দেননি।
সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
খুব সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং- সানেমের সম্মেলনের আলোচনায় উঠে এসেছে, ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এখন শাসকগোষ্ঠীর অংশ হয়ে পড়েছেন। অবশ্য এরূপ বলার স্থান বা ধরন নতুন হলেও ঘটনা বা বিষয় হিসেবে এটি মোটেও নতুন কিছু নয় এবং তা হঠাৎ করেও ঘটেনি। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে যখন থেকেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমান্বয়ে তার চিন্তার ঐশ্বর্য্য, মূল্যবোধের অগ্রগামিতা ও সামাজিক দায়বোধ হারাতে থাকে, ঠিক তখন থেকেই এখানে তস্কর ব্যবসায়ী (সব ব্যবসায়ীকে বলা হচ্ছে না) শ্রেণির বিকাশ ঘটতে শুরু করে। আর এটিকে একেবারে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে চিহ্নিত করা না গেলেও ১৯৯০ দশকের গোড়াতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সাথে এর একটি যোগসূত্র নির্মাণের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি। তবে এর যাত্রা যখন থেকেই শুরু হয়ে থাকুক না কেন, এর একটি বিকট ও ভয়ানক আনুষ্ঠানিক চেহারা প্রথম দৃশ্যমান হয় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (এ নির্বাচন দিনে নাকি রাতে হয়েছে সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ) ফলাফল থেকে। তাতে দেখা যায়, বিজয়ী ঘোষিতদের মধ্যে ১৬২ জনই ব্যবসায়ী, যা মোট আসনের ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ।
ওই নির্বাচনের আগেও রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রভাব কমবেশি ছিল। সরকারি ও বিরোধী উভয় দলকেই তারা সমহারে না হোক- কমবেশি করে হলেও বরাবরই চাঁদা দিয়ে আসছিল। তবে নির্বাচনে জিতে নিজেদের স্বার্থ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পাওয়ার পর এখন আর তাদেরকে চাঁদা দিতে হচ্ছে না। উল্টো বরং রাষ্ট্র ও জনগণই এখন তাদেরকে নানা নামে চাঁদা দিয়ে বেড়াচ্ছে। এই নামের তালিকা বেশ লম্বা- নগদ প্রণোদনা, কর-শুল্ক ফাঁকিদান, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করা, বিদেশে টাকা পাচার, গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ রেখে এলএনজি আমদানির অনুমতিলাভ, জনগণের মাথায় কুইক রেন্টালের কাঠাল ভেঙে খাওয়াকে দায়মুক্তি প্রদান, মজুদদারী, যখন-তখন পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদির মতো একচেটিয়া কর্তৃত্ব অর্জন প্রভৃতি। আর রাজনৈতিক প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও আশীর্বাদের কারণে এগুলোও আবার এতোটাই একচেটিয়া হয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে যে, এসব ক্ষেত্রে তাদের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের কারণে জনগণের এখন দিশেহারা অবস্থা।
ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র শাসকশ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত নন- ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সবচেয়ে বড় উপদেষ্টা এবং সুহৃদও বটে। রাজনীতিকদের কাছে তারা এখন পরম কাম্য এবং কখনো কখনো আরাধ্যও। যেকোনো দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাই এখন নীতিনির্ধারকদের এক নম্বর পছন্দ, তা তার রাজনৈতিক পটভূমি যদি বিতর্কিত বা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে বিরোধপূর্ণ হয় তবু্ও। করোনা বা অন্যবিধ সমস্যায় কাকে কতো প্রণোদনা দেয়া হবে তার মূল পরামর্শদাতা যেমন ব্যবসায়ীরা, তেমনি খেলাপি ঋণে কাকে কখন কতটুকু ছাড় দিতে হবে কিংবা এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কখন কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেসবেরও মূল নির্ধারক এখন ব্যবসায়ীরাই। ব্যবসায়ীদের মতের ভিত্তিতেই এখন সিদ্ধান্ত হচ্ছে কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ আর কোন কোন অসচ্ছ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে জাতীয় সংসদে দায়মুক্তি দেয়া হবে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্তি ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়ার এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এখন ঢুকে যাচ্ছে বিদেশি ব্যবসায়ীরাও। সম্ভাবনাবিহীন যেসব মেগাপ্রকল্প নিয়ে বিবেকবান অর্থনীতিবিদ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ প্রায়শই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, সেসব প্রকল্পের বেশিরভাগই গ্রহণ করা হয়েছে বিদেশি ব্যবসায়ীদের ইন্ধন, পরামর্শ ও আগ্রহে।
এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীরা শাসকশ্রেণির অংশ হয়ে ওঠছেন বলে সানেম সম্মেলনে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলো, সে উদ্বেগের সাথে এটিও যোগ করা প্রয়োজন যে, বহু বিদেশি কোম্পানিই এখন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পড়েছে। বন কেটে বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট স্থাপন কিংবা মহাসড়ককে বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারের সাথে একীভূত করে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের মতো প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ততো আসলে বিদেশিদের স্বার্থ ও চিন্তা থেকেই আসা। ফলে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা এখন ব্যবসায়ীদের করতলগত- এটা বলাই শুধু যথেষ্ট নয়। বরং সেই সাথে এটাও বলা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব এখন দেশি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বহুলাংশে বিদেশি ব্যবসায়ীদের হাতেও ন্যস্ত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাহলে অসুবিধা কী? প্রথম অসুবিধা এই যে, ব্যবসায়ীর মূল লক্ষ্য যেখানে মুনাফা, রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য সেখানে জনগণের কল্যাণ সাধন। আর জনগণ যখন ব্যবসায়ীর মুনাফা অর্জনের মূল উপকরণ, তখন সেই জনগণকে ভোক্তা হিসেবে ব্যবহার করে মুনাফা বৃদ্ধির পরিবর্তে তাদের কল্যাণ সাধন ব্যবসায়ীর কাছে কখনোই অগ্রাধিকার কর্তব্য হতে পারে না। এবং সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, তেমনটি হচ্ছেও না। ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কি হয় বা তখন কি কি তারা করতে পারেন, তার অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। ফলে বিষয়টি এখানে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে এটুকু শুধু বলা যেতে পারে যে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের কেউই আজ পর্যন্ত এমন একটি নজিরও স্থাপন করতে পারেননি যা সামনে রেখে বলা যাবে যে, ব্যবসায়ীদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যুক্ত করার মধ্যে দোষের কিছু নেই।
সে যাইহোক, রাষ্ট্র ও রাজনীতির বর্তমান ধারা বহাল থাকলে এটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের রাষ্ট্রশাসনে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সুযোগে তাদের মুনাফার লোভও আরো প্রকট হয়ে ওঠবে। আর এর ফলশ্রুতিতে মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যদশাই যে শুধু বাড়বে তাই নয়- রাষ্ট্র হিসেবেও বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে চরম অধঃগামিতার দিকে ধাবিত হবে, যার কিছু কিছু নমুনা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। শিক্ষিত রুচিবান মানুষের জন্য রাজনীতিকে এখন শুধু কঠিনই করে ফেলা হয়নি, সেইসঙ্গে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে, রাজনীতি করতে হলে বা রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে হলে আগে ব্যবসায়ী হয়ে সাদাকালো নানাপথে অঢেল অর্থ কামাতে হবে এবং পরে সেই অর্থ দিয়ে মনোনয়ন কিনতে হবে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের কাছে এ প্রক্রিয়া বেশ উপভোগ্য বলেই মনে হচ্ছে। কারণ এ ধরনের মনোনয়ন কিনতে যত অর্থই ব্যয় হোক না কেন, পরে তা সুদে-আসলে আরো বহগুণ বাড়িয়ে উসুল করে নিতে পারাটা তাদের জন্য মোটেও কঠিন কিছু নয়।
বুর্জোয়া রাষ্ট্রে জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে কার্ল মার্ক্স যথার্থই রাষ্ট্রকে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান চেহারা দেখতে পেলে তিনি হয়তো এটাও বলতেন যে, রাষ্ট্র শোষণের হাতিয়ার বটে, তবে ব্যবসায়ীশাসিত রাষ্ট্র হচ্ছে শোষণের নিষ্ঠুর ও কুৎসিৎতম হাতিয়ার। এ দেশের মানুষ রাষ্ট্রীয় শোষণের সে কদর্যতা থেকে কখন মুক্তি পাবে, আমরা কেউই তা জানি না। তবে এটুকু জানি যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা ১৮৫৭ কিংবা ১৯৭১-এ এরকম একটি রাষ্ট্রের জন্য প্রাণ দেননি।
সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৭ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৭ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৭ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৭ ঘণ্টা আগে