সানজিদা সামরিন
আমাদের দেশে মা হওয়াটা খুব ডিপ্রেসিভ একটা ব্যাপার। বাক্য়টাকে আরেকটু সহজ করে বললে, আমরা নতুন মাকে বিষণ্ন করে তুলি। প্রথমত ভাবি, যেহেতু সে প্রথমবার মা হয়েছে, সেহেতু সে কিছুই জানে না; দ্বিতীয়ত, যেহেতু সে মা, সেহেতু তারই উচিত সব জানা, সব সামলে নেওয়া। এ দুই ভাবনার সংমিশ্রণ বড় ভয়াবহ। এটা নতুন মাকে সংকটে ফেলে দেয়, মা তার নিজের কাজগুলো করতে বাধাপ্রাপ্ত হন। আর এই সংকটগুলো যখন পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের অনেকটাই জুড়ে থাকে, তখন তাকে শেখানো হয় কী করে এই ডিপ্রেশনকে অস্বীকার করতে হয়। আমাদের এখানে মাতৃত্বের সংজ্ঞা হলো নিজেকে ভুলে সন্তানকে ভালোবাসা। যে মা সন্তানের পাশাপাশি নিজেকে, নিজের সত্তাকেও ভালোবাসে, সেই মা যেন এখানে স্বার্থপর!
প্রতিটি শিশুই কিন্তু ভিন্ন। তাদের ওজন, উচ্চতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, হজমশক্তি আলাদা। অনেক নবজাতকের ক্ষেত্রে অসুখও ভিন্ন হয়। ফলে নিজের সন্তানের জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা ক্ষতিকর, সেটা কিন্তু ওই সন্তানের মা খুব ভালোভাবে টের পান। সন্তানের কোন কান্নাটা ক্ষুধার, কোনটা পেটব্য়থার আর কোনটা ঘুমের—তা-ও মা খুব ভালোভাবে বোঝেন। কিন্তু আমাদের দেশে একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন, তখন তাঁর পাশে তাঁকে সাহায্য় করার মতো কেউ থাকুক বা না থাকুক, সন্তান জন্মদানের পর তাঁকে মাতৃত্ব শেখানোর লোকের অভাব হয় না। কেউ বলবে বাচ্চাকে ২০ মিনিট পর পর খাওয়াও, কেউ বলবে এক ঘণ্টা পরপর; বাচ্চা সোজা হয়ে ঘুমাবে নাকি কাত হয়ে ঘুমাবে, মাথার নিচে বালিশ থাকবে নাকি থাকবে না, গায়ে সরষের তেল মাখা হবে নাকি অলিভ অয়েল—সবকিছুই সব সময় আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে দেবে। কর্মজীবী মা হলে তো কথাই নেই; কারণ অধিকাংশের ধারণা, কর্মজীবী মা মানেই তিনি প্রথমত সংসারী নন বা সন্তান লালনপালনের জন্য উপযুক্ত নন।
এই বলাগুলো যে সব সময় পরামর্শ বা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আসে, ব্যাপারটা তা-ও নয়; কারও সন্তান কোলবালিশ ছাড়া ঘুমায় না বলে তিনি ভাবছেন আরেকজনের সন্তানেরও কোলবালিশ লাগবে, কারও সন্তানের সরষের তেলে ত্বকে র্যাশ ওঠেনি বলে তিনি ভাবছেন, অন্য শিশুর ত্বকেও সেটা সহনীয় হবে, কেউ খুব ভালো ব্রেস্টফিড করাতে পারেন বলে তাঁর ধারণা যে শিশু ফর্মুলা খায়, তার মা যথেষ্ট চেষ্টা করেননি অথবা কেবল ফিগার ঠিক রাখার জন্য সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না!
নবজাতকের মাথা যেহেতু খুবই নরম হয়, সেহেতু তাকে গোল বিড়ায় শোয়ালে মাথার আকার সুন্দর ও গোল হয় বলেই ধারণা। এই ধারণা কতটা যুক্তিসংগত, জানা নেই। শাড়ি বা ওড়না দিয়ে তৈরি বিড়া তো শুধু এই অঞ্চলেই ব্যবহৃত হয়। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডায় নবজাতকদের খাটে বালিশ, খেলনা ও বাড়তি কাপড় রাখতেও নিষেধ করা হয়। সেখানে কি শিশুদের মাথা গোল হয় না?
ওরা আরামে ঘুমায় না? ধরুন, আপনার সন্তানের যদি শ্বাসনালিতে জন্মগতভাবে সমস্যা থেকে থাকে এবং সোজা হয়ে শোয়ালে বা মাথার নিচে বালিশ বা বিড়া দিলে যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে কি সেটা ব্যবহার করা উচিত? মাথা গোল হওয়া বেশি জরুরি, নাকি সন্তানের শ্বাস নিতে পারাটা বেশি জরুরি? এ দেশে চিকিৎসকদের ঝামেলা আছে বটে, কিন্তু চিকিৎসক যদি পরামর্শ দেন যে যত দিন শিশুর শ্বাসকষ্ট থাকবে, তত দিন মাথার নিচে বালিশ বা বিড়া দেওয়া যাবে না, তাহলে কি সেটা মানা উচিত নয়? আপনার সন্তানের ঠান্ডার ধাত আছে, কিন্তু অনেকের ধারণা কাপড় জড়িয়ে রাখলে বা টাইট করে বেঁধে রাখলে শিশুর হাত-পা টানটান হবে না। তাই বারবার বারণ করা সত্ত্বেও সন্তানের গা থেকে কাঁথা-কাপড় সরিয়ে রাখছেন। এরপর তার ঠান্ডা লাগলে কার দোষ? মায়ের। মা দেরিতে স্নান করেছে, চুল মোছেনি, সন্তানকে স্পঞ্জ করেছে ইত্যাদি।
আমাদের এই অঞ্চলে সরষের তেল বড় আবেগের বিষয়। শিশুর বেড়ে ওঠায় এর ভূমিকা যে রয়েছে, সেটাও শুনেছি। তবে যুক্তিকে তো খণ্ডাতে পারি না। এখনকার দিনে নবজাতককে নিয়ে নতুন মায়ের সঙ্গে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রথম মনকষাকষি হয় এই সরষের তেলের কারণেই।
হ্যাঁ সত্য়ি! কারণ, স্নানের আগে শিশুর শরীরে সরষের তেল মেখে রোদে ফেলে রাখলে তবেই না ভিটামিন ডি’র জোগান দেওয়া সম্ভব। কিন্তু আজকাল চিকিৎসকেরা নিষেধ করেন এই তেল নবজাতকের গায়ে মাখার ব্য়াপারে। অন্তত প্রথম দুই বছর। কারণ ঝাঁজালো এই তেল মাখার পর নবজাতকের ত্বকে র্যাশ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই নিষেধাজ্ঞা জানানোমাত্রই শিশুর দাদি-নানির সঙ্গে নতুন মায়ের ফ্যাসাদ শুরু হয়ে যায়। ‘আমরা কি সরষের তেল মেখে এতগুলো বাচ্চা বড় করিনি? তোমাদের কি র্যাশ উঠেছিল?’ সে ক্ষেত্রে উত্তর কিংবা পাল্টা প্রশ্ন করাটাও সহজ যে, ‘এখন থেকে ২০-৩০ বছর আগে বা তারও আগে কি আবহাওয়া এমন ছিল? তখন কি মার্চ-এপ্রিল মাসেই তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতো? এত দূষণ ছিল কি?’
সব সময় সবকিছু, সব নিয়ম, সব আচার সবার জন্য নয়—এ কথাটা আমরা বাঙালিরা কখনোই মানতে চাই না। আমার মায়ের যুগে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার চল ছিল না, কিন্তু তার সন্তান হয়েও অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া আমার জ্বর ভালো হয়নি। ফলে আমার সন্তানের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, তার ত্বক, তার সহ্য়ক্ষমতা কেমন হবে সেটা আমাকে, আমার মাকে বা আমার দাদি-নানিকে দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। অধিকাংশ শিশুই ভিন্ন দুটি ব্লাডলাইনের সংমিশ্রণ, ফলে নিজেকে বা অন্য কারও সন্তানকে দিয়ে নিজের সন্তানকে বিচার না করাই ভালো।
কারও সন্তান হয়তো কোল ছাড়া ঘুমায় না, কারণ তিনি সেভাবে অভ্যাস করিয়েছেন। ফলে কোল থেকে নামালেই সন্তানের ঘুম ভেঙে যায়। যদি তার হাতে অফুরান সময় থাকে বা সন্তানকে কোলে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজ না থাকে বা তিনি যদি এভাবেই সন্তানকে গ্রুম করতে চান, সেটা একান্তই তার ব্যাপার।
কিন্তু একজন কর্মজীবী মায়ের জন্য সন্তানের এই কোলে ঘুমানোর অভ্যাস কালস্বরূপ। শুধু কর্মজীবী নয়, সৃজনশীল যেকোনো বাবা-মায়ের জন্যই এই কোলে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস ক্ষতিকর। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, সন্তানের সক্ষমতা তৈরিতে এটা ক্ষতিক্ষর ভূমিকা রাখে। বহির্বিশ্বে জন্মের প্রথম দিন থেকেই শিশুকে আলাদা খাটে ঘুমাতে দেওয়া হয়, যেটাকে আমরা নিষ্ঠুরতা বলি। অন্যদিকে ওরা যেখানে স্কিন টু স্কিন টাচকে প্রাধান্য দেয়, যেন সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার বন্ডিং তৈরি হয়, সেটা আমাদের এখানে নাক সিটকানো নাজায়েজ একটা ব্যাপার। শিশু যেন নিজে নিজেই ঘুমাতে পারে, তাই আরামের জন্য তারা প্যাসিফায়ার ব্যবহার করে, যেটা আমাদের দেশে বদভ্যাস বলে খ্যাত।
বাইরের দেশগুলোয় শক্ত খাবার শুরু করলে শিশুদের ডাইনিংয়ে টেবিলে উঁচু চেয়ার দিয়ে বসিয়ে নিজের হাতে খেতে দেওয়া হয়। এতে করে খাবারের সঙ্গে পরিচিতি হয় শিশুর; খাবারের রং, স্বাদ নিজে খুব ভালোভাবে বুঝতে শেখে। সবার সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়ারও অভ্যাস তৈরি হয়। অন্যদিকে আমরা ভাবি, বাচ্চা নিজের হাতে খেলে ভালোভাবে খাবে না, পেটও ভরবে না। উপরন্তু খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘর নোংরা করবে।
আমরা পরনির্ভরশীল করে সন্তানকে বড় করতে শিখি, শেখাই। এর পরের ধাপে শেখাই নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পেতে। কী অদ্ভুত এই গ্রুমিং! প্যারেন্টিং আসলেই শেখার বিষয়।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমাদের দেশে মা হওয়াটা খুব ডিপ্রেসিভ একটা ব্যাপার। বাক্য়টাকে আরেকটু সহজ করে বললে, আমরা নতুন মাকে বিষণ্ন করে তুলি। প্রথমত ভাবি, যেহেতু সে প্রথমবার মা হয়েছে, সেহেতু সে কিছুই জানে না; দ্বিতীয়ত, যেহেতু সে মা, সেহেতু তারই উচিত সব জানা, সব সামলে নেওয়া। এ দুই ভাবনার সংমিশ্রণ বড় ভয়াবহ। এটা নতুন মাকে সংকটে ফেলে দেয়, মা তার নিজের কাজগুলো করতে বাধাপ্রাপ্ত হন। আর এই সংকটগুলো যখন পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের অনেকটাই জুড়ে থাকে, তখন তাকে শেখানো হয় কী করে এই ডিপ্রেশনকে অস্বীকার করতে হয়। আমাদের এখানে মাতৃত্বের সংজ্ঞা হলো নিজেকে ভুলে সন্তানকে ভালোবাসা। যে মা সন্তানের পাশাপাশি নিজেকে, নিজের সত্তাকেও ভালোবাসে, সেই মা যেন এখানে স্বার্থপর!
প্রতিটি শিশুই কিন্তু ভিন্ন। তাদের ওজন, উচ্চতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, হজমশক্তি আলাদা। অনেক নবজাতকের ক্ষেত্রে অসুখও ভিন্ন হয়। ফলে নিজের সন্তানের জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা ক্ষতিকর, সেটা কিন্তু ওই সন্তানের মা খুব ভালোভাবে টের পান। সন্তানের কোন কান্নাটা ক্ষুধার, কোনটা পেটব্য়থার আর কোনটা ঘুমের—তা-ও মা খুব ভালোভাবে বোঝেন। কিন্তু আমাদের দেশে একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন, তখন তাঁর পাশে তাঁকে সাহায্য় করার মতো কেউ থাকুক বা না থাকুক, সন্তান জন্মদানের পর তাঁকে মাতৃত্ব শেখানোর লোকের অভাব হয় না। কেউ বলবে বাচ্চাকে ২০ মিনিট পর পর খাওয়াও, কেউ বলবে এক ঘণ্টা পরপর; বাচ্চা সোজা হয়ে ঘুমাবে নাকি কাত হয়ে ঘুমাবে, মাথার নিচে বালিশ থাকবে নাকি থাকবে না, গায়ে সরষের তেল মাখা হবে নাকি অলিভ অয়েল—সবকিছুই সব সময় আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে দেবে। কর্মজীবী মা হলে তো কথাই নেই; কারণ অধিকাংশের ধারণা, কর্মজীবী মা মানেই তিনি প্রথমত সংসারী নন বা সন্তান লালনপালনের জন্য উপযুক্ত নন।
এই বলাগুলো যে সব সময় পরামর্শ বা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আসে, ব্যাপারটা তা-ও নয়; কারও সন্তান কোলবালিশ ছাড়া ঘুমায় না বলে তিনি ভাবছেন আরেকজনের সন্তানেরও কোলবালিশ লাগবে, কারও সন্তানের সরষের তেলে ত্বকে র্যাশ ওঠেনি বলে তিনি ভাবছেন, অন্য শিশুর ত্বকেও সেটা সহনীয় হবে, কেউ খুব ভালো ব্রেস্টফিড করাতে পারেন বলে তাঁর ধারণা যে শিশু ফর্মুলা খায়, তার মা যথেষ্ট চেষ্টা করেননি অথবা কেবল ফিগার ঠিক রাখার জন্য সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না!
নবজাতকের মাথা যেহেতু খুবই নরম হয়, সেহেতু তাকে গোল বিড়ায় শোয়ালে মাথার আকার সুন্দর ও গোল হয় বলেই ধারণা। এই ধারণা কতটা যুক্তিসংগত, জানা নেই। শাড়ি বা ওড়না দিয়ে তৈরি বিড়া তো শুধু এই অঞ্চলেই ব্যবহৃত হয়। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডায় নবজাতকদের খাটে বালিশ, খেলনা ও বাড়তি কাপড় রাখতেও নিষেধ করা হয়। সেখানে কি শিশুদের মাথা গোল হয় না?
ওরা আরামে ঘুমায় না? ধরুন, আপনার সন্তানের যদি শ্বাসনালিতে জন্মগতভাবে সমস্যা থেকে থাকে এবং সোজা হয়ে শোয়ালে বা মাথার নিচে বালিশ বা বিড়া দিলে যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে কি সেটা ব্যবহার করা উচিত? মাথা গোল হওয়া বেশি জরুরি, নাকি সন্তানের শ্বাস নিতে পারাটা বেশি জরুরি? এ দেশে চিকিৎসকদের ঝামেলা আছে বটে, কিন্তু চিকিৎসক যদি পরামর্শ দেন যে যত দিন শিশুর শ্বাসকষ্ট থাকবে, তত দিন মাথার নিচে বালিশ বা বিড়া দেওয়া যাবে না, তাহলে কি সেটা মানা উচিত নয়? আপনার সন্তানের ঠান্ডার ধাত আছে, কিন্তু অনেকের ধারণা কাপড় জড়িয়ে রাখলে বা টাইট করে বেঁধে রাখলে শিশুর হাত-পা টানটান হবে না। তাই বারবার বারণ করা সত্ত্বেও সন্তানের গা থেকে কাঁথা-কাপড় সরিয়ে রাখছেন। এরপর তার ঠান্ডা লাগলে কার দোষ? মায়ের। মা দেরিতে স্নান করেছে, চুল মোছেনি, সন্তানকে স্পঞ্জ করেছে ইত্যাদি।
আমাদের এই অঞ্চলে সরষের তেল বড় আবেগের বিষয়। শিশুর বেড়ে ওঠায় এর ভূমিকা যে রয়েছে, সেটাও শুনেছি। তবে যুক্তিকে তো খণ্ডাতে পারি না। এখনকার দিনে নবজাতককে নিয়ে নতুন মায়ের সঙ্গে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রথম মনকষাকষি হয় এই সরষের তেলের কারণেই।
হ্যাঁ সত্য়ি! কারণ, স্নানের আগে শিশুর শরীরে সরষের তেল মেখে রোদে ফেলে রাখলে তবেই না ভিটামিন ডি’র জোগান দেওয়া সম্ভব। কিন্তু আজকাল চিকিৎসকেরা নিষেধ করেন এই তেল নবজাতকের গায়ে মাখার ব্য়াপারে। অন্তত প্রথম দুই বছর। কারণ ঝাঁজালো এই তেল মাখার পর নবজাতকের ত্বকে র্যাশ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই নিষেধাজ্ঞা জানানোমাত্রই শিশুর দাদি-নানির সঙ্গে নতুন মায়ের ফ্যাসাদ শুরু হয়ে যায়। ‘আমরা কি সরষের তেল মেখে এতগুলো বাচ্চা বড় করিনি? তোমাদের কি র্যাশ উঠেছিল?’ সে ক্ষেত্রে উত্তর কিংবা পাল্টা প্রশ্ন করাটাও সহজ যে, ‘এখন থেকে ২০-৩০ বছর আগে বা তারও আগে কি আবহাওয়া এমন ছিল? তখন কি মার্চ-এপ্রিল মাসেই তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতো? এত দূষণ ছিল কি?’
সব সময় সবকিছু, সব নিয়ম, সব আচার সবার জন্য নয়—এ কথাটা আমরা বাঙালিরা কখনোই মানতে চাই না। আমার মায়ের যুগে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার চল ছিল না, কিন্তু তার সন্তান হয়েও অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া আমার জ্বর ভালো হয়নি। ফলে আমার সন্তানের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, তার ত্বক, তার সহ্য়ক্ষমতা কেমন হবে সেটা আমাকে, আমার মাকে বা আমার দাদি-নানিকে দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। অধিকাংশ শিশুই ভিন্ন দুটি ব্লাডলাইনের সংমিশ্রণ, ফলে নিজেকে বা অন্য কারও সন্তানকে দিয়ে নিজের সন্তানকে বিচার না করাই ভালো।
কারও সন্তান হয়তো কোল ছাড়া ঘুমায় না, কারণ তিনি সেভাবে অভ্যাস করিয়েছেন। ফলে কোল থেকে নামালেই সন্তানের ঘুম ভেঙে যায়। যদি তার হাতে অফুরান সময় থাকে বা সন্তানকে কোলে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজ না থাকে বা তিনি যদি এভাবেই সন্তানকে গ্রুম করতে চান, সেটা একান্তই তার ব্যাপার।
কিন্তু একজন কর্মজীবী মায়ের জন্য সন্তানের এই কোলে ঘুমানোর অভ্যাস কালস্বরূপ। শুধু কর্মজীবী নয়, সৃজনশীল যেকোনো বাবা-মায়ের জন্যই এই কোলে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস ক্ষতিকর। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, সন্তানের সক্ষমতা তৈরিতে এটা ক্ষতিক্ষর ভূমিকা রাখে। বহির্বিশ্বে জন্মের প্রথম দিন থেকেই শিশুকে আলাদা খাটে ঘুমাতে দেওয়া হয়, যেটাকে আমরা নিষ্ঠুরতা বলি। অন্যদিকে ওরা যেখানে স্কিন টু স্কিন টাচকে প্রাধান্য দেয়, যেন সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার বন্ডিং তৈরি হয়, সেটা আমাদের এখানে নাক সিটকানো নাজায়েজ একটা ব্যাপার। শিশু যেন নিজে নিজেই ঘুমাতে পারে, তাই আরামের জন্য তারা প্যাসিফায়ার ব্যবহার করে, যেটা আমাদের দেশে বদভ্যাস বলে খ্যাত।
বাইরের দেশগুলোয় শক্ত খাবার শুরু করলে শিশুদের ডাইনিংয়ে টেবিলে উঁচু চেয়ার দিয়ে বসিয়ে নিজের হাতে খেতে দেওয়া হয়। এতে করে খাবারের সঙ্গে পরিচিতি হয় শিশুর; খাবারের রং, স্বাদ নিজে খুব ভালোভাবে বুঝতে শেখে। সবার সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়ারও অভ্যাস তৈরি হয়। অন্যদিকে আমরা ভাবি, বাচ্চা নিজের হাতে খেলে ভালোভাবে খাবে না, পেটও ভরবে না। উপরন্তু খাবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘর নোংরা করবে।
আমরা পরনির্ভরশীল করে সন্তানকে বড় করতে শিখি, শেখাই। এর পরের ধাপে শেখাই নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পেতে। কী অদ্ভুত এই গ্রুমিং! প্যারেন্টিং আসলেই শেখার বিষয়।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
২ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
২ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৩ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৩ ঘণ্টা আগে