তাপস বড়ুয়া
‘দুই মানুষের মাঝে যে অসীম আকাশ সেখানে সব চুপ। সেখানে কথা চলে না। সেই মস্ত চুপকে বাঁশির সুর দিয়ে ভরিয়ে দিতে হয়।’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/মেঘদূত) এটাই বোধ হয় দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি।
নাগরিক জীবনে সেই বাঁশি তো ঠিকঠাক বাজছে না। তাই হয়তো ভাঙনের শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সংসার ভাঙছে; সম্পর্ক ভাঙছে। ২০২০ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ঢাকা শহরে গড়ে প্রতিদিন ৩৯টি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ৩৭ মিনিটে একটি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। ২ কোটি মানুষের এই শহরে ৪০-৪৫ লাখ পরিবার আছে। তার মানে, প্রতি ১ লাখ পরিবারের মধ্যে একটা ভেঙে গেছে এক মাসে। সংখ্যাটা চিন্তায় ফেলে দেওয়ার মতো।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রথম আলো পত্রিকা জানাচ্ছে (২২ ডিসেম্বর, ২০২০), বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে নারীরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন—যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, স্বামীর সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, মাদকাসক্তি। অন্যদিকে পুরুষেরা যেসব কারণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে—স্ত্রীর বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়া, অবাধ্য হওয়া।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংসার ভাঙছে। দেখা যাচ্ছে; সংখ্যা গোনা যাচ্ছে। কিন্তু অদৃশ্যভাবে সম্পর্ক ভাঙছে; বাঁধনের সুতো ছিঁড়ে যাচ্ছে আরও অনেক বেশি। বিষয়টাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখা যায়। সামাজিক কাঠামো, নারী-পুরুষের অবস্থা ও অবস্থান, পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার চাপিয়ে দেওয়া টানাপোড়েন, আবেগগুলো প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি না থাকা, সামাজিক বিভিন্ন সম্পর্কের বন্ধনগুলো আলগা হয়ে যাওয়া, প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার মতো ‘স্পেস’ না থাকা—অনেক কারণই রয়েছে।
কিন্তু ভাঙনের শুরুটা কোথায় হয়? খুব ছোট্ট শুরুটা হয়, যখন একজন মানুষ সারা দিন একজন মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখতে শুরু করে। তখন সে তার ভালোমন্দ সব দিকই জানতে শুরু করে। প্রেমের অধ্যায়ে মানুষ তার প্রেমিক বা প্রেমিকার ভালো দিকটিই শুধু দেখে। ‘পূর্ণতা পানে আঁখি অন্ধ’ থাকে। কিন্তু সংসার করার আগে পঁচিশ বা ত্রিশ বছরের জীবন কাটিয়ে এসেছে যে মানুষ, তার সততা ও সরলতা একবারে শিশুদের অটুট থাকবে এটা অসম্ভব। এটা শুধু প্রেম বা যৌনতার ক্ষেত্রের কথা নয়। জীবনের নানাদিকে সে তার সততার, সরলতার আংশিক বিসর্জন দিতে দিতেই বড় হয়। এ কথাগুলো প্রেমের সময় ঢাকা থাকে। তাই সংসার শুরুর পর এগুলো যখন সামনে আসে, মানুষটাকে নতুন মনে হয়।
আর আছে চাপিয়ে দেওয়া। প্রিয়তমকে নিজের মতো করে পুনর্গঠনের চেষ্টা। সেটা খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক, পছন্দের বই, সিনেমা, গান থেকে শুরু করে জীবনের বড় বড় এবং জটিল বিষয়গুলো পর্যন্ত। যেমন ধরুন, একজন সিলেটের আরেকজন কুষ্টিয়ার মানুষ। মাংস রান্নায় সাতকড়া দেওয়া হবে, না চুইঝাল দেওয়া হবে—এমন ছোট ঘটনার মধ্যেও একজনের কর্তৃত্ব প্রকাশ পেতে পারে। যদি তা বারবার হয়।
এই কাজটি সে-ই করে, সম্পর্কে যে অপেক্ষাকৃত কর্তৃত্বের আসনে থাকে। কর্তৃত্বের চর্চার বিভিন্ন কারণ থাকে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে নিজেকে শ্রেয়তর ভাবা। নিজের পরিবারের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা, বংশ পরিচয়, কে শহরের কে গ্রামের, শিক্ষা, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণের উঁচু-নিচু, কার আত্মীয় কত প্রতিষ্ঠিত, দুজনের মধ্যে কে অপেক্ষাকৃত ভালো চাকরি করে ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে একজন আরেকজনের চেয়ে নিজেকে শ্রেয়তর মনে করে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের দিক দিয়ে এটা বেশি দেখা গেলেও অনেক ক্ষেত্রে নারীকেও বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ দেখা যায় ওপরের বিষয়গুলোতে সে এগিয়ে থাকলে। কর্তৃত্বপরায়ণ মানুষটি অন্য মানুষটিকে তখন ব্যক্তি না ভেবে ‘যেকোনো একটি সত্তা’ হিসেবে ভাবতে শুরু করে। তার বিবেচনায়, সেই ‘সত্তা’ অক্রিয় ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন। দুই পরিবারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উসকানিও থাকে অনেক ক্ষেত্রে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, যৌথ এই নিউক্লিয়ার পরিবারে দুজনের পরিবারের মধ্যে কার পরিবার প্রাধান্য পাচ্ছে, সেটা থেকে একটা ক্ষোভের জন্মও হতে পারে।
প্লেটো বলেছিলেন, দুজন মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরকে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষিত করে তোলার ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। এই শিক্ষা হচ্ছে সেই মানুষটিকে ‘আরও ভালো সেই মানুষটি’ হয়ে উঠতে সাহায্য করা। নিজের মতো করে নতুন করে গড়ে তোলা নয়। একজন পরিণত মানুষকে নতুন করে গড়ে তুলতে গেলে মানুষটি ভেঙে যেতে পারে। কাঁচা মাটির পুতুল ইচ্ছেমতো চেপে চুপে আকার আকৃতি পরিবর্তন করা যায়, মাটিটা শুকিয়ে গেলে সেটা হয় না। পুতুলটি পোড়ানোর পর তো নয়ই। সে রকম শিশুকে নিজের মতো করে গড়ে তোলা যায়; পরিণত মানুষকে আরেকটা ‘আরও ভালো সেই মানুষ’ হতে সহায়তা করতে হয় ভেঙেচুরে গড়ার চেষ্টার বদলে।
মানুষের আত্মম্ভরিতা তাকে অন্ধ করে দেয়। অন্য মানুষটাকে চুপসে দেয়। আত্মবিশ্বাস হারানো চুপসে যাওয়া মানুষটি, সে নারী বা পুরুষ যে-ই হোক, ক্ষোভ জমিয়ে রাখতে রাখতে যখন একপর্যায়ে প্রতিবাদ করতে যায়, তখন তা ভিসুভিয়াসের মতো অগ্নুৎপাৎ ঘটায়। সম্পর্ক খারাপের দিকেই যায়।
প্রায়ই শোনা যায়, আমার স্বামী আমাকে স্বাধীনতা দেয়। অথবা আমার স্ত্রী আমার চলাফেরায় কিছু বলে না। এই কথাটার মধ্যে একটা বশ্যতার বোধ আছে যে, আমার স্বাধীনতা অন্যের ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল। সে যতটা নিয়ন্ত্রণ করবে, তার ওপর নির্ভর করবে আমার স্বাধীন চলাফেরা। আমাদের সমাজে সাধারণত স্ত্রীর স্বাধীনতাই স্বামীর ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে। উল্টোটাও হয় না, তা নয়। পরিণত বয়সের ভিন্ন ভিন্ন দুজন ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কটা কি এমন হওয়াই উচিত? যদি না হয়, তাহলে কি যে যার ইচ্ছেমতো চলবে?
বন্ধনে থেকে তা তো পুরোপুরি হয় না। উন্মুক্ত আকাশ পেলেই তো আমরা ওড়ার চেষ্টা করি না। স্রোতস্বিনী দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ভেসে যেতে চাই না। অন্য ব্যক্তিটার কাছে স্বাধীনতা বাধা দেওয়া না থাকলেও সম্পর্কের কাছে বাধা দেওয়ার অঙ্গীকার আছে। আছে অলিখিত শর্তও।
চাকরি করতে গেলে অফিসের ‘সার্ভিস রুল’ মেনে চলতে হয়, সংগঠনের সদস্য হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মানতে হয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই। খুব ‘বেসিক’ নর্মসগুলো মেনে চলার ‘সেল্ফ-সেন্সরশিপটা’ নিজে আরোপ করতে পারলে স্বাধীনতা পাওয়া বা স্বাধীনতা দেওয়ার প্রশ্নটা তখন আর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। স্বামী-স্ত্রী মিলে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া তখন সহজ হয়। দুজনেই নিজে আলাদা ব্যক্তি, কিন্তু একটি সম্পর্কের অঙ্গীকারে আছি—এটা মনে রাখলেই হয়। না হলে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।
ধারণা করা হয়, দাম্পত্য সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতিতে দুজনের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ একটি মোটামুটিভাবে আবশ্যিক শর্ত। সেটা সত্যি অনুপ্রবেশ হতে পারে; কেউ একজন তৃতীয় কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে পারেন। আবার হতে পারে বাস্তবে সত্যি না; কিন্তু একজনের মনে এই সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, অন্যজন তৃতীয় কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বাস্তব কিংবা কল্পিত তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির ইস্যুটি দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে খুব গুরুতর প্রভাব ফেলে। কারণ, রোমান্টিসিজমের ধারণা আমাদের শিখিয়েছে ‘দুজন শুধু দুজনার’।
এর মাধ্যমে একদিকে তৈরি হয় হারাবার ভয়, আরেক দিকে তৈরি হয় হেরে যাওয়ার ভয়। মনের মধ্যে বাড়তে থাকে রাগ, ক্ষোভ, প্রতিহিংসা। দিনের পর দিন এসব নেতিবাচক আবেগ বয়ে বেড়ালে সেটা বাড়তে বাড়তে একসময় হয়তো ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে যায়।
মনের মধ্যে নিজের সাথে এসব নেতিবাচক আবেগ নিয়ে কথা বলতে বলতে তৈরি হয়ে যায় কিছু সংলাপ। কী বললে অন্যজন কী উত্তর দেবে, প্রতি উত্তরে সে কী বলবে অবচেতনেই এসব মাথার মধ্যে গোছানো হয়ে যায়। যেটাকে ‘সেলফ ফুলফিলিং প্রফেসি’ বলা যায়। এ রকম কথা গুছিয়ে মাথায় ‘সেট’ হয়ে গেলে অন্যজন যদি প্রত্যাশিত আচরণ নাও করে, যা ভাবা হয়েছিল সেই উত্তর নাও দেয়, তবু মনের মধ্যে গুছিয়ে রাখা প্রতি উত্তরগুলো বেরিয়ে আসে। এবং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দেয়।
এই যে দীর্ঘদিন ধরে ‘বুকের মাঝে গভীর গোপন ক্ষত’ বয়ে নিয়ে বেড়ানো এবং সেটা বাড়তে বাড়তে ক্যানসার হওয়া পর্যন্ত যাওয়া; এর কারণ হচ্ছে, বাস্তব বা কল্পিত তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশের সাথে সাথে দুজন মানুষ একজন থেকে আরেকজন দূরে সরতে থাকে। তাদের মধ্যে মন খুলে কথা বলার পথটা আস্তে আস্তে সরু থেকে আরও সরু হয়ে যায়।
পরিণত জীবনে সম্পর্ক নিয়ে একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, একজন মানুষ একটা যৌথ সম্পর্কের অংশ হিসেবে কেমন আচরণ করবে, এর অনেকটাই নির্ভর করে ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠতে উঠতে ভালোবাসা সম্পর্কে কী কী ‘ন্যারেটিভের’ সাথে তার পরিচয় ঘটছে। এর মধ্যে রয়েছে চারপাশের সম্পর্কগুলো দেখে ও শুনে শেখা, সিনেমা, টিভি, গল্প, কবিতা, গান উপন্যাস ইত্যাদির মাধ্যমে জানা ও প্রভাবিত হওয়া। এই প্রক্রিয়াতেই কোনোটা গ্রহণযোগ্য বলে তার মাথায় ঢুকে যাচ্ছে; কোনোটাকে সে বর্জনীয় বলে বিবেচনা করতে শিখছে। এ জন্য জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিৎশে বলেছেন, মানুষ কখনোই স্বাধীন চিন্তা করে না। সে সেই চিন্তাই করে, তাকে দিয়ে যেটা করানো হয়। আর এ ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সে অন্যের চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
মানুষের মধ্যে নানা রকম আবেগ আসে। কোন আবেগটাকে সে প্রশ্রয় দেবে, আর কোন আবেগকে সে অবদমন করবে—এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার এই আগের ‘এক্সপোজারগুলো’ ভূমিকা রাখে। অফিসের বসকে প্রতি মুহূর্তে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করে; আপনি সেই আবেগকে অবদমন করেন। কিন্তু কাউকে ভালো লেগে গেলে মনে করেন, এই আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া যায়। কারণ, আপনার অবচেতন মনে বারবার ধাক্কা মারতে থাকে আপনার দেখা সিনেমা, পড়া উপন্যাস, যেগুলোতে বলা হয়েছে ভালোবাসার ঢেউ বাঁধ দিয়ে আটকানো যায় না। ভালোবাসা হয়ে যেতেই পারে।
হলিউডের কথাই ধরা যাক। হলিউডের ছবি কেন প্লুরালিস্টিক সমাজের কথা বলে, ইনক্লুসিভ সমাজের কথা বলে, কিংকংয়ের মতো এলিয়েনেরও মানবিক হৃদয় দেখায়, সেটা বুঝতে হলে হলিউডের প্রতিষ্ঠাতাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে হবে। হলিউড তৈরি করেছিলেন তখনকার সমাজে মোটামুটিভাবে ‘আউটসাইডার’ ছয়-সাতজন অভিবাসী ইহুদি। তখন ইউরোপ বা আমেরিকায় ইহুদিদের ভালো জায়গায় থাকতে দেওয়া হতো না। ভালো কাজ করতে দেওয়া হতো না। তারা নিজেদের প্রয়োজনেই সমাজে বহুত্ববাদের ধারণা সচেতনভাবে প্রচার করে।
সুতরাং আপনার এক্সপোজার আলাদা হলেই সম্পর্ক নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারত। এই কথা মনে থাকলে অন্যের ভিন্নতাকে সহনীয় মনে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলতেন, ‘আই লাভ ইউ’ বলার দরকার নেই; ‘আই টলারেট ইউ’ কথাটা মন থেকে বলতে পারলেই হয়।
কিন্তু এই ভিন্নতাকে মেনে নেওয়া, তার সাথে মানিয়ে চলা অথবা ‘এক্সট্রিম’ ক্ষেত্রে সহ্য করা—এর কোনোটাই একপক্ষীয় নয়। একটা চাকা উঁচু, আরেকটা নিচু হলে মসৃণ পথেও গাড়ি ঠিকঠাক চলতে পারে না। দুই মানুষের ভিন্নতাকে স্বীকার করে দুজনেই নিজের অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে একটা সমান জায়গায় দাঁড়াতে পারলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও কলাম লেখক
‘দুই মানুষের মাঝে যে অসীম আকাশ সেখানে সব চুপ। সেখানে কথা চলে না। সেই মস্ত চুপকে বাঁশির সুর দিয়ে ভরিয়ে দিতে হয়।’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/মেঘদূত) এটাই বোধ হয় দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি।
নাগরিক জীবনে সেই বাঁশি তো ঠিকঠাক বাজছে না। তাই হয়তো ভাঙনের শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সংসার ভাঙছে; সম্পর্ক ভাঙছে। ২০২০ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ঢাকা শহরে গড়ে প্রতিদিন ৩৯টি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ৩৭ মিনিটে একটি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। ২ কোটি মানুষের এই শহরে ৪০-৪৫ লাখ পরিবার আছে। তার মানে, প্রতি ১ লাখ পরিবারের মধ্যে একটা ভেঙে গেছে এক মাসে। সংখ্যাটা চিন্তায় ফেলে দেওয়ার মতো।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রথম আলো পত্রিকা জানাচ্ছে (২২ ডিসেম্বর, ২০২০), বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে নারীরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন—যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, স্বামীর সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, মাদকাসক্তি। অন্যদিকে পুরুষেরা যেসব কারণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে—স্ত্রীর বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়া, অবাধ্য হওয়া।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংসার ভাঙছে। দেখা যাচ্ছে; সংখ্যা গোনা যাচ্ছে। কিন্তু অদৃশ্যভাবে সম্পর্ক ভাঙছে; বাঁধনের সুতো ছিঁড়ে যাচ্ছে আরও অনেক বেশি। বিষয়টাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখা যায়। সামাজিক কাঠামো, নারী-পুরুষের অবস্থা ও অবস্থান, পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার চাপিয়ে দেওয়া টানাপোড়েন, আবেগগুলো প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি না থাকা, সামাজিক বিভিন্ন সম্পর্কের বন্ধনগুলো আলগা হয়ে যাওয়া, প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার মতো ‘স্পেস’ না থাকা—অনেক কারণই রয়েছে।
কিন্তু ভাঙনের শুরুটা কোথায় হয়? খুব ছোট্ট শুরুটা হয়, যখন একজন মানুষ সারা দিন একজন মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখতে শুরু করে। তখন সে তার ভালোমন্দ সব দিকই জানতে শুরু করে। প্রেমের অধ্যায়ে মানুষ তার প্রেমিক বা প্রেমিকার ভালো দিকটিই শুধু দেখে। ‘পূর্ণতা পানে আঁখি অন্ধ’ থাকে। কিন্তু সংসার করার আগে পঁচিশ বা ত্রিশ বছরের জীবন কাটিয়ে এসেছে যে মানুষ, তার সততা ও সরলতা একবারে শিশুদের অটুট থাকবে এটা অসম্ভব। এটা শুধু প্রেম বা যৌনতার ক্ষেত্রের কথা নয়। জীবনের নানাদিকে সে তার সততার, সরলতার আংশিক বিসর্জন দিতে দিতেই বড় হয়। এ কথাগুলো প্রেমের সময় ঢাকা থাকে। তাই সংসার শুরুর পর এগুলো যখন সামনে আসে, মানুষটাকে নতুন মনে হয়।
আর আছে চাপিয়ে দেওয়া। প্রিয়তমকে নিজের মতো করে পুনর্গঠনের চেষ্টা। সেটা খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক, পছন্দের বই, সিনেমা, গান থেকে শুরু করে জীবনের বড় বড় এবং জটিল বিষয়গুলো পর্যন্ত। যেমন ধরুন, একজন সিলেটের আরেকজন কুষ্টিয়ার মানুষ। মাংস রান্নায় সাতকড়া দেওয়া হবে, না চুইঝাল দেওয়া হবে—এমন ছোট ঘটনার মধ্যেও একজনের কর্তৃত্ব প্রকাশ পেতে পারে। যদি তা বারবার হয়।
এই কাজটি সে-ই করে, সম্পর্কে যে অপেক্ষাকৃত কর্তৃত্বের আসনে থাকে। কর্তৃত্বের চর্চার বিভিন্ন কারণ থাকে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে নিজেকে শ্রেয়তর ভাবা। নিজের পরিবারের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা, বংশ পরিচয়, কে শহরের কে গ্রামের, শিক্ষা, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণের উঁচু-নিচু, কার আত্মীয় কত প্রতিষ্ঠিত, দুজনের মধ্যে কে অপেক্ষাকৃত ভালো চাকরি করে ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে একজন আরেকজনের চেয়ে নিজেকে শ্রেয়তর মনে করে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের দিক দিয়ে এটা বেশি দেখা গেলেও অনেক ক্ষেত্রে নারীকেও বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ দেখা যায় ওপরের বিষয়গুলোতে সে এগিয়ে থাকলে। কর্তৃত্বপরায়ণ মানুষটি অন্য মানুষটিকে তখন ব্যক্তি না ভেবে ‘যেকোনো একটি সত্তা’ হিসেবে ভাবতে শুরু করে। তার বিবেচনায়, সেই ‘সত্তা’ অক্রিয় ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন। দুই পরিবারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উসকানিও থাকে অনেক ক্ষেত্রে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, যৌথ এই নিউক্লিয়ার পরিবারে দুজনের পরিবারের মধ্যে কার পরিবার প্রাধান্য পাচ্ছে, সেটা থেকে একটা ক্ষোভের জন্মও হতে পারে।
প্লেটো বলেছিলেন, দুজন মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরকে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষিত করে তোলার ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। এই শিক্ষা হচ্ছে সেই মানুষটিকে ‘আরও ভালো সেই মানুষটি’ হয়ে উঠতে সাহায্য করা। নিজের মতো করে নতুন করে গড়ে তোলা নয়। একজন পরিণত মানুষকে নতুন করে গড়ে তুলতে গেলে মানুষটি ভেঙে যেতে পারে। কাঁচা মাটির পুতুল ইচ্ছেমতো চেপে চুপে আকার আকৃতি পরিবর্তন করা যায়, মাটিটা শুকিয়ে গেলে সেটা হয় না। পুতুলটি পোড়ানোর পর তো নয়ই। সে রকম শিশুকে নিজের মতো করে গড়ে তোলা যায়; পরিণত মানুষকে আরেকটা ‘আরও ভালো সেই মানুষ’ হতে সহায়তা করতে হয় ভেঙেচুরে গড়ার চেষ্টার বদলে।
মানুষের আত্মম্ভরিতা তাকে অন্ধ করে দেয়। অন্য মানুষটাকে চুপসে দেয়। আত্মবিশ্বাস হারানো চুপসে যাওয়া মানুষটি, সে নারী বা পুরুষ যে-ই হোক, ক্ষোভ জমিয়ে রাখতে রাখতে যখন একপর্যায়ে প্রতিবাদ করতে যায়, তখন তা ভিসুভিয়াসের মতো অগ্নুৎপাৎ ঘটায়। সম্পর্ক খারাপের দিকেই যায়।
প্রায়ই শোনা যায়, আমার স্বামী আমাকে স্বাধীনতা দেয়। অথবা আমার স্ত্রী আমার চলাফেরায় কিছু বলে না। এই কথাটার মধ্যে একটা বশ্যতার বোধ আছে যে, আমার স্বাধীনতা অন্যের ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল। সে যতটা নিয়ন্ত্রণ করবে, তার ওপর নির্ভর করবে আমার স্বাধীন চলাফেরা। আমাদের সমাজে সাধারণত স্ত্রীর স্বাধীনতাই স্বামীর ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে। উল্টোটাও হয় না, তা নয়। পরিণত বয়সের ভিন্ন ভিন্ন দুজন ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কটা কি এমন হওয়াই উচিত? যদি না হয়, তাহলে কি যে যার ইচ্ছেমতো চলবে?
বন্ধনে থেকে তা তো পুরোপুরি হয় না। উন্মুক্ত আকাশ পেলেই তো আমরা ওড়ার চেষ্টা করি না। স্রোতস্বিনী দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ভেসে যেতে চাই না। অন্য ব্যক্তিটার কাছে স্বাধীনতা বাধা দেওয়া না থাকলেও সম্পর্কের কাছে বাধা দেওয়ার অঙ্গীকার আছে। আছে অলিখিত শর্তও।
চাকরি করতে গেলে অফিসের ‘সার্ভিস রুল’ মেনে চলতে হয়, সংগঠনের সদস্য হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মানতে হয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই। খুব ‘বেসিক’ নর্মসগুলো মেনে চলার ‘সেল্ফ-সেন্সরশিপটা’ নিজে আরোপ করতে পারলে স্বাধীনতা পাওয়া বা স্বাধীনতা দেওয়ার প্রশ্নটা তখন আর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। স্বামী-স্ত্রী মিলে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া তখন সহজ হয়। দুজনেই নিজে আলাদা ব্যক্তি, কিন্তু একটি সম্পর্কের অঙ্গীকারে আছি—এটা মনে রাখলেই হয়। না হলে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।
ধারণা করা হয়, দাম্পত্য সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতিতে দুজনের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ একটি মোটামুটিভাবে আবশ্যিক শর্ত। সেটা সত্যি অনুপ্রবেশ হতে পারে; কেউ একজন তৃতীয় কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে পারেন। আবার হতে পারে বাস্তবে সত্যি না; কিন্তু একজনের মনে এই সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, অন্যজন তৃতীয় কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বাস্তব কিংবা কল্পিত তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির ইস্যুটি দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে খুব গুরুতর প্রভাব ফেলে। কারণ, রোমান্টিসিজমের ধারণা আমাদের শিখিয়েছে ‘দুজন শুধু দুজনার’।
এর মাধ্যমে একদিকে তৈরি হয় হারাবার ভয়, আরেক দিকে তৈরি হয় হেরে যাওয়ার ভয়। মনের মধ্যে বাড়তে থাকে রাগ, ক্ষোভ, প্রতিহিংসা। দিনের পর দিন এসব নেতিবাচক আবেগ বয়ে বেড়ালে সেটা বাড়তে বাড়তে একসময় হয়তো ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে যায়।
মনের মধ্যে নিজের সাথে এসব নেতিবাচক আবেগ নিয়ে কথা বলতে বলতে তৈরি হয়ে যায় কিছু সংলাপ। কী বললে অন্যজন কী উত্তর দেবে, প্রতি উত্তরে সে কী বলবে অবচেতনেই এসব মাথার মধ্যে গোছানো হয়ে যায়। যেটাকে ‘সেলফ ফুলফিলিং প্রফেসি’ বলা যায়। এ রকম কথা গুছিয়ে মাথায় ‘সেট’ হয়ে গেলে অন্যজন যদি প্রত্যাশিত আচরণ নাও করে, যা ভাবা হয়েছিল সেই উত্তর নাও দেয়, তবু মনের মধ্যে গুছিয়ে রাখা প্রতি উত্তরগুলো বেরিয়ে আসে। এবং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দেয়।
এই যে দীর্ঘদিন ধরে ‘বুকের মাঝে গভীর গোপন ক্ষত’ বয়ে নিয়ে বেড়ানো এবং সেটা বাড়তে বাড়তে ক্যানসার হওয়া পর্যন্ত যাওয়া; এর কারণ হচ্ছে, বাস্তব বা কল্পিত তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশের সাথে সাথে দুজন মানুষ একজন থেকে আরেকজন দূরে সরতে থাকে। তাদের মধ্যে মন খুলে কথা বলার পথটা আস্তে আস্তে সরু থেকে আরও সরু হয়ে যায়।
পরিণত জীবনে সম্পর্ক নিয়ে একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, একজন মানুষ একটা যৌথ সম্পর্কের অংশ হিসেবে কেমন আচরণ করবে, এর অনেকটাই নির্ভর করে ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠতে উঠতে ভালোবাসা সম্পর্কে কী কী ‘ন্যারেটিভের’ সাথে তার পরিচয় ঘটছে। এর মধ্যে রয়েছে চারপাশের সম্পর্কগুলো দেখে ও শুনে শেখা, সিনেমা, টিভি, গল্প, কবিতা, গান উপন্যাস ইত্যাদির মাধ্যমে জানা ও প্রভাবিত হওয়া। এই প্রক্রিয়াতেই কোনোটা গ্রহণযোগ্য বলে তার মাথায় ঢুকে যাচ্ছে; কোনোটাকে সে বর্জনীয় বলে বিবেচনা করতে শিখছে। এ জন্য জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিৎশে বলেছেন, মানুষ কখনোই স্বাধীন চিন্তা করে না। সে সেই চিন্তাই করে, তাকে দিয়ে যেটা করানো হয়। আর এ ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সে অন্যের চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
মানুষের মধ্যে নানা রকম আবেগ আসে। কোন আবেগটাকে সে প্রশ্রয় দেবে, আর কোন আবেগকে সে অবদমন করবে—এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার এই আগের ‘এক্সপোজারগুলো’ ভূমিকা রাখে। অফিসের বসকে প্রতি মুহূর্তে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করে; আপনি সেই আবেগকে অবদমন করেন। কিন্তু কাউকে ভালো লেগে গেলে মনে করেন, এই আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া যায়। কারণ, আপনার অবচেতন মনে বারবার ধাক্কা মারতে থাকে আপনার দেখা সিনেমা, পড়া উপন্যাস, যেগুলোতে বলা হয়েছে ভালোবাসার ঢেউ বাঁধ দিয়ে আটকানো যায় না। ভালোবাসা হয়ে যেতেই পারে।
হলিউডের কথাই ধরা যাক। হলিউডের ছবি কেন প্লুরালিস্টিক সমাজের কথা বলে, ইনক্লুসিভ সমাজের কথা বলে, কিংকংয়ের মতো এলিয়েনেরও মানবিক হৃদয় দেখায়, সেটা বুঝতে হলে হলিউডের প্রতিষ্ঠাতাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে হবে। হলিউড তৈরি করেছিলেন তখনকার সমাজে মোটামুটিভাবে ‘আউটসাইডার’ ছয়-সাতজন অভিবাসী ইহুদি। তখন ইউরোপ বা আমেরিকায় ইহুদিদের ভালো জায়গায় থাকতে দেওয়া হতো না। ভালো কাজ করতে দেওয়া হতো না। তারা নিজেদের প্রয়োজনেই সমাজে বহুত্ববাদের ধারণা সচেতনভাবে প্রচার করে।
সুতরাং আপনার এক্সপোজার আলাদা হলেই সম্পর্ক নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারত। এই কথা মনে থাকলে অন্যের ভিন্নতাকে সহনীয় মনে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলতেন, ‘আই লাভ ইউ’ বলার দরকার নেই; ‘আই টলারেট ইউ’ কথাটা মন থেকে বলতে পারলেই হয়।
কিন্তু এই ভিন্নতাকে মেনে নেওয়া, তার সাথে মানিয়ে চলা অথবা ‘এক্সট্রিম’ ক্ষেত্রে সহ্য করা—এর কোনোটাই একপক্ষীয় নয়। একটা চাকা উঁচু, আরেকটা নিচু হলে মসৃণ পথেও গাড়ি ঠিকঠাক চলতে পারে না। দুই মানুষের ভিন্নতাকে স্বীকার করে দুজনেই নিজের অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে একটা সমান জায়গায় দাঁড়াতে পারলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও কলাম লেখক
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১০ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১০ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
১০ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
১০ ঘণ্টা আগে