দিল আফরোজ খানম
বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ কোভিড মহামারির এই সময়ে দেশে বিভিন্ন বয়সীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে এই প্রবণতা রোধে তেমন কোনো উদ্যোগ দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ২০-৩৯ বছর বয়সী মানুষের অপঘাতে মৃত্যুর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আত্মহত্যা। ইদানীং নানা শ্রেণি-পেশা ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শুধু বেকারদের মধ্যেই নয়, বরং পেশাজীবীদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পুলিশের এক সদস্য নিজ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনা সবাইকে চমকে দিয়েছে। ধারণা করা যায়, পেশাগত হতাশা, চাপ, ক্ষোভ এ ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তবে পেশাজীবীদের মধ্যকার এ ধরনের আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে বিষদ গবেষণা খুবই জরুরি।
আত্মহত্যা নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক গবেষণায় এমিল ডুর্খেইম সর্বপ্রথম তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেন—‘আত্মহত্যা কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়; বরং আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলো সামাজিক। সমাজের নানামুখী শক্তির কারণেই মানুষ আত্মহত্যায় বাধ্য হয়। তিনি দেখিয়েছেন, একটি সমাজের সামাজিক অবস্থা, লিঙ্গ, বয়স, ধর্মীয় বিশ্বাস, বৈবাহিক অবস্থা, পারিবারিক পরিবেশ, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার হার প্রভাবিত হয়।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মানসিক চাপ, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, যৌন নির্যাতন, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, ঋণের বোঝা, বেকারত্ব, প্রেম বিষয়ক জটিলতা ইত্যাদি আত্মহত্যার প্রধান কারণ। উল্লিখিত প্রতিটি কারণ বিশ্লেষণ করলে এটা বলা খুবই সহজ যে, আত্মহত্যা তখনই সংগঠিত হয়, যখন একজন ব্যক্তির ওপর নানামুখী সামাজিক চাপ অনুভূত হয়।
কোভিডকালে সারা বিশ্বেই আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে, যা একই সময়ে কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর (৮ হাজার ৪৬২) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কোভিড পূর্ববর্তী এক বছরের তুলনায় কোভিডকালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। এ সময়ে আত্মহত্যার হার বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া। মানুষ চাকরি, ব্যবসা হারিয়ে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এই সময়ে বিশেষত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। চাকরির নিয়োগ বন্ধ থাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা, পারিবারিক অশান্তি, বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন কারণ এর জন্য দায়ী।
তবে আশার কথা হচ্ছে যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর সে জন্য প্রধান ও প্রথম কাজ হলো একটি ‘জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশলপত্র’ প্রণয়ন করা। এ ধরনের কৌশলপত্র প্রণয়নের সময় কিছু বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত। যেমন—আত্মহত্যায় ব্যবহৃত উপকরণগুলোর প্রাপ্যতা কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, সু-নজরদারির মাধ্যমে প্রতিরোধের ব্যবস্থা (বিশ্বব্যাপী একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, (এরই মধ্যে এটি সরকারিভাবে শুরু হয়েছে), আত্মহত্যার ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা হ্রাসের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ, ই-স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত মনো-চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা, আত্মহত্যা সম্পর্কিত বিবেচনাপ্রসূত সংবাদ পরিবেশন, কাউন্সেলিংয়ের জন্য হটলাইন সার্ভিস চালু ইত্যাদি।
এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া বর্তমান বাস্তবতায় পোস্ট- কোভিড ট্রমা কাটিয়ে উঠতে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্ক্রিন ও মোবাইল আসক্তি দূর করতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা, শরীর চর্চা, খেলাধুলা, নিজ নিজ ধর্ম চর্চা, আত্মোন্নয়ন ও ধ্যানের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
দিল আফরোজ খানম: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ কোভিড মহামারির এই সময়ে দেশে বিভিন্ন বয়সীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে এই প্রবণতা রোধে তেমন কোনো উদ্যোগ দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ২০-৩৯ বছর বয়সী মানুষের অপঘাতে মৃত্যুর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আত্মহত্যা। ইদানীং নানা শ্রেণি-পেশা ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শুধু বেকারদের মধ্যেই নয়, বরং পেশাজীবীদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পুলিশের এক সদস্য নিজ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনা সবাইকে চমকে দিয়েছে। ধারণা করা যায়, পেশাগত হতাশা, চাপ, ক্ষোভ এ ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তবে পেশাজীবীদের মধ্যকার এ ধরনের আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে বিষদ গবেষণা খুবই জরুরি।
আত্মহত্যা নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক গবেষণায় এমিল ডুর্খেইম সর্বপ্রথম তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেন—‘আত্মহত্যা কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়; বরং আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলো সামাজিক। সমাজের নানামুখী শক্তির কারণেই মানুষ আত্মহত্যায় বাধ্য হয়। তিনি দেখিয়েছেন, একটি সমাজের সামাজিক অবস্থা, লিঙ্গ, বয়স, ধর্মীয় বিশ্বাস, বৈবাহিক অবস্থা, পারিবারিক পরিবেশ, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার হার প্রভাবিত হয়।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মানসিক চাপ, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, যৌন নির্যাতন, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, ঋণের বোঝা, বেকারত্ব, প্রেম বিষয়ক জটিলতা ইত্যাদি আত্মহত্যার প্রধান কারণ। উল্লিখিত প্রতিটি কারণ বিশ্লেষণ করলে এটা বলা খুবই সহজ যে, আত্মহত্যা তখনই সংগঠিত হয়, যখন একজন ব্যক্তির ওপর নানামুখী সামাজিক চাপ অনুভূত হয়।
কোভিডকালে সারা বিশ্বেই আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে, যা একই সময়ে কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর (৮ হাজার ৪৬২) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কোভিড পূর্ববর্তী এক বছরের তুলনায় কোভিডকালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। এ সময়ে আত্মহত্যার হার বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া। মানুষ চাকরি, ব্যবসা হারিয়ে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এই সময়ে বিশেষত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। চাকরির নিয়োগ বন্ধ থাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা, পারিবারিক অশান্তি, বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন কারণ এর জন্য দায়ী।
তবে আশার কথা হচ্ছে যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর সে জন্য প্রধান ও প্রথম কাজ হলো একটি ‘জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশলপত্র’ প্রণয়ন করা। এ ধরনের কৌশলপত্র প্রণয়নের সময় কিছু বিষয় খুব গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত। যেমন—আত্মহত্যায় ব্যবহৃত উপকরণগুলোর প্রাপ্যতা কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, সু-নজরদারির মাধ্যমে প্রতিরোধের ব্যবস্থা (বিশ্বব্যাপী একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, (এরই মধ্যে এটি সরকারিভাবে শুরু হয়েছে), আত্মহত্যার ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা হ্রাসের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ, ই-স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত মনো-চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা, আত্মহত্যা সম্পর্কিত বিবেচনাপ্রসূত সংবাদ পরিবেশন, কাউন্সেলিংয়ের জন্য হটলাইন সার্ভিস চালু ইত্যাদি।
এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া বর্তমান বাস্তবতায় পোস্ট- কোভিড ট্রমা কাটিয়ে উঠতে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্ক্রিন ও মোবাইল আসক্তি দূর করতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা, শরীর চর্চা, খেলাধুলা, নিজ নিজ ধর্ম চর্চা, আত্মোন্নয়ন ও ধ্যানের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
দিল আফরোজ খানম: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন:
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১৫ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১৫ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
১৫ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
১৫ ঘণ্টা আগে