সেলিম জাহান
এত জোরে এবং এমন অভদ্র ভাষায় ভদ্রলোক ধমক দিলেন তাঁর স্ত্রীকে যে ঘরের নানান কোণের আলাপের গুঞ্জন সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই থেমে গেল। অদ্ভুত এক স্তব্ধতা নেমে এল সারা ঘরে। আমরা হতবাক—নিজেদের কানকেই কেউ আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ভদ্রলোক শুধু ধনাঢ্য নন, শিক্ষিত ও অমায়িক বলে বাইরে তাঁর খ্যাতি আছে, কিন্তু এ মুহূর্তে তাঁকে বীভৎস দানবের মতো মনে হচ্ছিল। এতক্ষণের একটি সুন্দর পরিবেশ যেন ভেঙে খানখান হয়ে গেল। একধরনের বিমূঢ়তা যেন আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলল।
অভ্যাগতদের কেউই আমরা ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। অপমানে, দুঃখে মুখ ক্লিষ্ট, আশাহত এবং সবচেয়ে বড় কথা বেদনাহতও বটে। মাটির দিকে তাকিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ালেন, শাড়ির আঁচলটি একটু টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলেন, যেন অপমানের সবটুকু চিহ্ন তিনি মুছে দিতে চাইছেন। বুঝতে পারছিলাম যে তিনি প্রাণপণে কান্না চাপতে চেষ্টা করছেন। ধীর পায়ে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। অন্য সবাই স্তব্ধ, কিন্তু তাঁর স্বামীটির কোনো বিকার নেই। যেন কিছুই হয়নি, তেমন একটা দেঁতো হাসি হেসে তিনি তাঁর কথায় ফিরে গেলেন।
আমার মনে হতে লাগল, এইমাত্র এখানে একটি ধর্ষণ ঘটে গেল। কেউ জানল না, কেউ বুঝল না, তবু একটি নারী-নিপীড়ন সংঘটিত হলো। এ ধর্ষণ শারীরিক নয়, এ ধর্ষণ মানসিক; এ ধর্ষণ স্থূল নয়, এ ধর্ষণ সূক্ষ্ম; এ ধর্ষণ দেখার নয়, এ ধর্ষণ উপলব্ধির; এ ধর্ষণ দৃশ্যমান নয়, এ ধর্ষণ প্রচ্ছন্ন। এ ঘটনায় ভদ্রমহিলার ব্যক্তিত্ব, নারীত্ব ধর্ষিত হলো, তাঁর স্বাধীনতা ধর্ষিত হলো, ধর্ষিত হলো তাঁর আত্মসম্মান। ধর্ষণ শুধু দেহের হয় না, ধর্ষণ হতে পারে মনের; ধর্ষণ শুধু স্পর্শের মাধ্যমে হয় না, সেটা হতে পারে কথার। ধর্ষণ শুধু দৃশ্যমান হয় না, সেটা ঘটতে পারে অদৃশ্যভাবেও।
গৃহাভ্যন্তরে নারী এ-জাতীয় নিপীড়নের শিকার প্রতিনিয়ত—কখনো কখনো পিতা, ভ্রাতা, স্বামী, পুত্রের মতো প্রিয়জনদের দ্বারাও বটে। ‘মেয়েমানুষ, কী জানো?, মেয়েছেলে, চুপ করে থাকবে; বড় বাড় বেড়েছে তোমার, মেয়ে হয়ে বেশি কথা বলো না; মেয়ে হয়ে জন্মেছ, চুপ করে থাকবে’—এমন কথা অনবরতই নারীর আপন পুরুষদের মুখে উচ্চারিত হয়
আর দশটা স্বাভাবিক বাক্যের মতো। যেন এটাই নিয়ম,
এটাই ন্যায্য, এটার মধ্যে কোনো দোষ নেই। ঘরের বাইরে পথেঘাটে, স্কুল-কলেজে কথা-নিপীড়নের শিকার হন নারীরা। ‘বাসে-ট্রেনে আলাদা সিট পেয়েছেন বলে কি আমাদের মাথা কিনে নিয়েছেন আপনারা’, কিংবা ‘রান্নাঘরেই আপনাদের জায়গা, সেটা ছেড়ে বাইরে কাজ করতে এসেছেন কেন’ অথবা ‘সাজগোজের তো কমতি দেখি না, পড়াশোনার বেলায় তো অষ্টরম্ভা’—নারীর জীবনের নানান বাঁকে এমন সব নিপীড়িত বাক্য শুনেই তাঁদের বেড়ে ওঠা।
আমাদের, পুরুষদের কাছে মনে হয় নারীরা পৃথিবী সম্পর্কে অজ্ঞ, তাঁদের বুদ্ধিশুদ্ধি কম, এবং এ-জাতীয় কথা তাঁদের নির্দ্বিধায় বলা যায়। অথচ আমরা ভাবি না, এ-জাতীয় কথার মাধ্যমে আমরা তাঁদের বুদ্ধি ও মেধাকে কটাক্ষ করছি, তাঁদের সক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছি এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সন্দিহান হচ্ছি। নারীরা যদি পুরুষদের সম্পর্কে এমন কথা বলেন, তবে তাঁরা পুরুষের তথাকথিত পৌরুষের কাছে নির্যাতনের শিকার হবেন নিশ্চিতভাবে। এমন ধারা মানসিক নিপীড়ন চলতে থাকলে নারীর আত্মসম্মানই শুধু নয়, একদিন তাঁর আত্মবিশ্বাসও ধর্ষিত হবে। আমরা পুরুষেরা মনে করি, আমরা নারীদের চেয়ে উচ্চতর প্রাণী, সুতরাং নারীদের সব রকমের নিপীড়ন করা আমাদের জন্মগত অধিকার। অনেকে আবার মনে করেন, নারীরা পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সুতরাং তাঁদের ওপরে আমরা সব রকমের জোর খাটাতে পারি।
কথার ধর্ষণের অন্য নগ্নরূপও তো দেখেছি। পুরুষদের জমানো আড্ডায় নারীর কথা উঠলে সে গল্পের প্রকৃতি, স্বরূপ আর ধারা কোনদিকে মোড় নেয়, তা অভাবনীয়। নারীর শরীরের অশালীন বর্ণনা, তাঁদের চরিত্রের প্রতি কটাক্ষ, তাঁদের নিয়ে খিস্তিখেউড়ই সেসব গল্পের সারবস্তু। এ সবই নাকি ‘রসালো গল্প’! সত্যিকার অর্থে, পুরুষদের আড্ডার ‘রসালো গল্প’ মেয়েদের সম্পূর্ণ নগ্ন করে ছেড়ে দেয়। আশ্চর্যের কথা, এ প্রক্রিয়ায় পুরুষেরা চেনা-অচেনার বালাই করেন না, বালাই করেন না বয়সের। নারী তখন পুরুষের আদি রসাত্মক গল্পের খোরাকমাত্র। অনেকে বলে থাকেন, এ-জাতীয় গালগল্প ছেলে-ছোকরারাই করে রকে বসে, চা-খানার আড্ডায় কফি-হাউসের টেবিলে। এ কথা ঠিক নয়। খুব উচ্চপদস্থ, বাহ্যত ভদ্রলোক, তথাকথিত পরিশীলিত মধ্যবয়সী ও প্রৌঢ় মানুষের আড্ডায় নারীবিষয়ক আলোচনা কোনো অংশে কম উলঙ্গ নয়। পাড়ায় একজন নারী একা থাকেন, কিংবা ব্যাংকে চাকরিরত একজন নারী একটু রাত করে কাজ থেকে ঘরে ফেরেন, অথবা বিবাহবিচ্ছেদের কারণে একজন মা একহাতে দুটো বাচ্চাকে মানুষ করছেন—এরা সবাই ওইসব আড্ডার ‘রসালো গল্পের’ খোরাক, রটনার সোনার খনি। কথার এ ধর্ষণের তুলনা কোথায়?
রাস্তায় পথ চলতে নারীরা অনবরত শিকার হন বাক্য আর দৃষ্টি ধর্ষণের। পথচলতি নারীরা অনবরত লক্ষ্য হন বাক্য ধর্ষণের আর দৃষ্টি লেহনের। রাস্তায় হেঁটে যাওয়া নারীদের শুনতেই হয় তাঁদের প্রতি পুরুষের ছুড়ে দেওয়া অশালীন শব্দ বা শব্দমালা। মনে আছে, আমার এক বন্ধু বলেছিলেন যে বহু বছর আগে তিনি তাঁর তরুণী কন্যাকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায়। বিভিন্ন সময়ে রাস্তার বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুড়ে দেওয়া অশালীন বাক্যবাণে বড় বিচলিত হচ্ছিলেন সেই পিতা। রাগান্বিত হচ্ছিলেনও বলা চলে। তখন তাঁর তরুণী কন্যাটি হেসে পিতার হাত ধরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাবা, রাগ করে নিজের শরীর খারাপ কোরো না। এটাই আমার জীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতা।’ এমন সত্যি কথা বড় একটা শুনিনি।
কথা-নিপীড়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘটে যায় দৃষ্টি-ধর্ষণের। রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে নারীদের শিকার হতে হয় অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি লেহনের, যার অন্য নাম ‘চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া’। অনেকেই বলেন, রাস্তায় এসব ঘটনা অশিক্ষিত শ্রমজীবী শ্রেণির লোকজনই করে থাকেন। কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। বরং তাঁরা নারীকে মান্য করেন। এ কাজটি বেশি প্রকাশ্য তথাকথিত শিক্ষিত বিত্তবান মানুষের মধ্যে। এবং এটা প্রকাশ্য সর্বত্রই। শিক্ষিত মানুষের ক্ষেত্রে এটা ঘটে আড়ে আড়ে, কিন্তু সব নারীই এটা টের পান হাড়ে হাড়ে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে এসব ক্ষেত্রে পুরুষ তাঁর নিজের মা-বোন সম্পর্কে সুরক্ষিত মনোভাব নেন, কিন্তু অন্যের মা-বোনের ক্ষেত্রে তাঁর মানদণ্ড ভিন্নতর—দ্বৈত মানদণ্ড বললেও ব্যত্যয় হয় না।
চূড়ান্ত বিচারে নারীজীবনের বহু নির্মম বাস্তবতা নির্ধারিত হয় পুরুষের কর্মকাণ্ডের দ্বারা। সব রকমের নারী নির্যাতন, নিপীড়ন ও ধর্ষণ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এর শুরু পুরুষেই, এর সমাপ্তিও হতে হবে পুরুষেই।
লেখক: অর্থনীতিবিদ
এত জোরে এবং এমন অভদ্র ভাষায় ভদ্রলোক ধমক দিলেন তাঁর স্ত্রীকে যে ঘরের নানান কোণের আলাপের গুঞ্জন সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই থেমে গেল। অদ্ভুত এক স্তব্ধতা নেমে এল সারা ঘরে। আমরা হতবাক—নিজেদের কানকেই কেউ আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ভদ্রলোক শুধু ধনাঢ্য নন, শিক্ষিত ও অমায়িক বলে বাইরে তাঁর খ্যাতি আছে, কিন্তু এ মুহূর্তে তাঁকে বীভৎস দানবের মতো মনে হচ্ছিল। এতক্ষণের একটি সুন্দর পরিবেশ যেন ভেঙে খানখান হয়ে গেল। একধরনের বিমূঢ়তা যেন আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলল।
অভ্যাগতদের কেউই আমরা ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। অপমানে, দুঃখে মুখ ক্লিষ্ট, আশাহত এবং সবচেয়ে বড় কথা বেদনাহতও বটে। মাটির দিকে তাকিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ালেন, শাড়ির আঁচলটি একটু টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলেন, যেন অপমানের সবটুকু চিহ্ন তিনি মুছে দিতে চাইছেন। বুঝতে পারছিলাম যে তিনি প্রাণপণে কান্না চাপতে চেষ্টা করছেন। ধীর পায়ে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। অন্য সবাই স্তব্ধ, কিন্তু তাঁর স্বামীটির কোনো বিকার নেই। যেন কিছুই হয়নি, তেমন একটা দেঁতো হাসি হেসে তিনি তাঁর কথায় ফিরে গেলেন।
আমার মনে হতে লাগল, এইমাত্র এখানে একটি ধর্ষণ ঘটে গেল। কেউ জানল না, কেউ বুঝল না, তবু একটি নারী-নিপীড়ন সংঘটিত হলো। এ ধর্ষণ শারীরিক নয়, এ ধর্ষণ মানসিক; এ ধর্ষণ স্থূল নয়, এ ধর্ষণ সূক্ষ্ম; এ ধর্ষণ দেখার নয়, এ ধর্ষণ উপলব্ধির; এ ধর্ষণ দৃশ্যমান নয়, এ ধর্ষণ প্রচ্ছন্ন। এ ঘটনায় ভদ্রমহিলার ব্যক্তিত্ব, নারীত্ব ধর্ষিত হলো, তাঁর স্বাধীনতা ধর্ষিত হলো, ধর্ষিত হলো তাঁর আত্মসম্মান। ধর্ষণ শুধু দেহের হয় না, ধর্ষণ হতে পারে মনের; ধর্ষণ শুধু স্পর্শের মাধ্যমে হয় না, সেটা হতে পারে কথার। ধর্ষণ শুধু দৃশ্যমান হয় না, সেটা ঘটতে পারে অদৃশ্যভাবেও।
গৃহাভ্যন্তরে নারী এ-জাতীয় নিপীড়নের শিকার প্রতিনিয়ত—কখনো কখনো পিতা, ভ্রাতা, স্বামী, পুত্রের মতো প্রিয়জনদের দ্বারাও বটে। ‘মেয়েমানুষ, কী জানো?, মেয়েছেলে, চুপ করে থাকবে; বড় বাড় বেড়েছে তোমার, মেয়ে হয়ে বেশি কথা বলো না; মেয়ে হয়ে জন্মেছ, চুপ করে থাকবে’—এমন কথা অনবরতই নারীর আপন পুরুষদের মুখে উচ্চারিত হয়
আর দশটা স্বাভাবিক বাক্যের মতো। যেন এটাই নিয়ম,
এটাই ন্যায্য, এটার মধ্যে কোনো দোষ নেই। ঘরের বাইরে পথেঘাটে, স্কুল-কলেজে কথা-নিপীড়নের শিকার হন নারীরা। ‘বাসে-ট্রেনে আলাদা সিট পেয়েছেন বলে কি আমাদের মাথা কিনে নিয়েছেন আপনারা’, কিংবা ‘রান্নাঘরেই আপনাদের জায়গা, সেটা ছেড়ে বাইরে কাজ করতে এসেছেন কেন’ অথবা ‘সাজগোজের তো কমতি দেখি না, পড়াশোনার বেলায় তো অষ্টরম্ভা’—নারীর জীবনের নানান বাঁকে এমন সব নিপীড়িত বাক্য শুনেই তাঁদের বেড়ে ওঠা।
আমাদের, পুরুষদের কাছে মনে হয় নারীরা পৃথিবী সম্পর্কে অজ্ঞ, তাঁদের বুদ্ধিশুদ্ধি কম, এবং এ-জাতীয় কথা তাঁদের নির্দ্বিধায় বলা যায়। অথচ আমরা ভাবি না, এ-জাতীয় কথার মাধ্যমে আমরা তাঁদের বুদ্ধি ও মেধাকে কটাক্ষ করছি, তাঁদের সক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছি এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সন্দিহান হচ্ছি। নারীরা যদি পুরুষদের সম্পর্কে এমন কথা বলেন, তবে তাঁরা পুরুষের তথাকথিত পৌরুষের কাছে নির্যাতনের শিকার হবেন নিশ্চিতভাবে। এমন ধারা মানসিক নিপীড়ন চলতে থাকলে নারীর আত্মসম্মানই শুধু নয়, একদিন তাঁর আত্মবিশ্বাসও ধর্ষিত হবে। আমরা পুরুষেরা মনে করি, আমরা নারীদের চেয়ে উচ্চতর প্রাণী, সুতরাং নারীদের সব রকমের নিপীড়ন করা আমাদের জন্মগত অধিকার। অনেকে আবার মনে করেন, নারীরা পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সুতরাং তাঁদের ওপরে আমরা সব রকমের জোর খাটাতে পারি।
কথার ধর্ষণের অন্য নগ্নরূপও তো দেখেছি। পুরুষদের জমানো আড্ডায় নারীর কথা উঠলে সে গল্পের প্রকৃতি, স্বরূপ আর ধারা কোনদিকে মোড় নেয়, তা অভাবনীয়। নারীর শরীরের অশালীন বর্ণনা, তাঁদের চরিত্রের প্রতি কটাক্ষ, তাঁদের নিয়ে খিস্তিখেউড়ই সেসব গল্পের সারবস্তু। এ সবই নাকি ‘রসালো গল্প’! সত্যিকার অর্থে, পুরুষদের আড্ডার ‘রসালো গল্প’ মেয়েদের সম্পূর্ণ নগ্ন করে ছেড়ে দেয়। আশ্চর্যের কথা, এ প্রক্রিয়ায় পুরুষেরা চেনা-অচেনার বালাই করেন না, বালাই করেন না বয়সের। নারী তখন পুরুষের আদি রসাত্মক গল্পের খোরাকমাত্র। অনেকে বলে থাকেন, এ-জাতীয় গালগল্প ছেলে-ছোকরারাই করে রকে বসে, চা-খানার আড্ডায় কফি-হাউসের টেবিলে। এ কথা ঠিক নয়। খুব উচ্চপদস্থ, বাহ্যত ভদ্রলোক, তথাকথিত পরিশীলিত মধ্যবয়সী ও প্রৌঢ় মানুষের আড্ডায় নারীবিষয়ক আলোচনা কোনো অংশে কম উলঙ্গ নয়। পাড়ায় একজন নারী একা থাকেন, কিংবা ব্যাংকে চাকরিরত একজন নারী একটু রাত করে কাজ থেকে ঘরে ফেরেন, অথবা বিবাহবিচ্ছেদের কারণে একজন মা একহাতে দুটো বাচ্চাকে মানুষ করছেন—এরা সবাই ওইসব আড্ডার ‘রসালো গল্পের’ খোরাক, রটনার সোনার খনি। কথার এ ধর্ষণের তুলনা কোথায়?
রাস্তায় পথ চলতে নারীরা অনবরত শিকার হন বাক্য আর দৃষ্টি ধর্ষণের। পথচলতি নারীরা অনবরত লক্ষ্য হন বাক্য ধর্ষণের আর দৃষ্টি লেহনের। রাস্তায় হেঁটে যাওয়া নারীদের শুনতেই হয় তাঁদের প্রতি পুরুষের ছুড়ে দেওয়া অশালীন শব্দ বা শব্দমালা। মনে আছে, আমার এক বন্ধু বলেছিলেন যে বহু বছর আগে তিনি তাঁর তরুণী কন্যাকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায়। বিভিন্ন সময়ে রাস্তার বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুড়ে দেওয়া অশালীন বাক্যবাণে বড় বিচলিত হচ্ছিলেন সেই পিতা। রাগান্বিত হচ্ছিলেনও বলা চলে। তখন তাঁর তরুণী কন্যাটি হেসে পিতার হাত ধরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাবা, রাগ করে নিজের শরীর খারাপ কোরো না। এটাই আমার জীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতা।’ এমন সত্যি কথা বড় একটা শুনিনি।
কথা-নিপীড়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘটে যায় দৃষ্টি-ধর্ষণের। রাস্তাঘাটে, স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে নারীদের শিকার হতে হয় অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি লেহনের, যার অন্য নাম ‘চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া’। অনেকেই বলেন, রাস্তায় এসব ঘটনা অশিক্ষিত শ্রমজীবী শ্রেণির লোকজনই করে থাকেন। কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। বরং তাঁরা নারীকে মান্য করেন। এ কাজটি বেশি প্রকাশ্য তথাকথিত শিক্ষিত বিত্তবান মানুষের মধ্যে। এবং এটা প্রকাশ্য সর্বত্রই। শিক্ষিত মানুষের ক্ষেত্রে এটা ঘটে আড়ে আড়ে, কিন্তু সব নারীই এটা টের পান হাড়ে হাড়ে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যে এসব ক্ষেত্রে পুরুষ তাঁর নিজের মা-বোন সম্পর্কে সুরক্ষিত মনোভাব নেন, কিন্তু অন্যের মা-বোনের ক্ষেত্রে তাঁর মানদণ্ড ভিন্নতর—দ্বৈত মানদণ্ড বললেও ব্যত্যয় হয় না।
চূড়ান্ত বিচারে নারীজীবনের বহু নির্মম বাস্তবতা নির্ধারিত হয় পুরুষের কর্মকাণ্ডের দ্বারা। সব রকমের নারী নির্যাতন, নিপীড়ন ও ধর্ষণ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এর শুরু পুরুষেই, এর সমাপ্তিও হতে হবে পুরুষেই।
লেখক: অর্থনীতিবিদ
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
২ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
২ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৩ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৩ ঘণ্টা আগে