জাহীদ রেজা নূর
কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম, সে কথা জানিয়ে বললাম, ‘আজ তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মবার্ষিকী!’
‘আজ নাকি! তাইতো!’ বলে মৃদু হাসলেন।
বললাম, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু বলবেন?’
বললেন, ‘সবই তো লিখেছি। আর এখন কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে করে না।’
আমরা যারা সন্জীদা খাতুনের বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি, তাদের অনেকেই জানি, সেই ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন তিনি। আবেদনপত্রের যে শর্তাবলি ছিল, তার একটি ছিল মেয়েদের মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলতে হবে। আর যদি কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, তাহলে প্রক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। নাও ঠেলা সামলাও!
খুবই কঠিন শর্ত। কিন্তু ভর্তি হতে হলে শর্ত তো মানতেই হবে। মেয়েদের পড়াশোনা তখনো খুব সহজ কিছু ছিল না। সন্জীদা খাতুনের পড়ালেখার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তাই সেই শর্তে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য প্রযোজক নাজির আহমেদের বোন শামসুন্নাহার সন্জীদা খাতুনের এক ক্লাস ওপরে পড়তেন। তিনি একদিন সন্জীদাকে বললেন, ‘চলো আমরা বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে কিছু একটা করি।’
তিনি চাইছিলেন শাপমোচন নাটকটি করতে। সেই নাটকের গানগুলো যেন সন্জীদা করেন, সেটাই তিনি চাইছিলেন। পুরো নাটক নয়, কোনো কোনো অংশের সঙ্গে কিছু পাঠ, কিছু অভিনয় মিলিয়ে তৈরি করেছিলেন শাপমোচন। অভিনয় হয়েছিল হুদা হাউজের একতলার একটি ঘরে চৌকি এদিক-ওদিক করে।
সে সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। প্রদীপ জোগাড় করা হলো। সলতেও পাওয়া গেল। কিন্তু তেল পাওয়া যাবে কোথায়। নেপালি একটি মেয়ে প্রতিদিন এক চামচ করে সরষের তেল খেত। ওর নাম ফ্লোরা জেমস। প্রদীপের জন্য মেয়েটি তার খাঁটি সরষের তেল দিয়ে সাহায্য করল মেয়েদের।
অনুষ্ঠান খারাপ হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের করা দুটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন সনজীদা খাতুন। তখন যে নিয়ম ছিল, তার অন্যথা অবশ্য হয়নি। মেয়েদের নাটকে মেয়েরাই অভিনয় করত, আর ছেলেদের নাটকে ছেলেরা। অর্থাৎ মেয়েদের নাটকে পুরুষ চরিত্রগুলো করত মেয়েরাই, আবার ছেলেদের নাটকে নারী চরিত্রগুলো করত ছেলেরা। রবীন্দ্রনাথের ‘তপতী’ নাটকে সনজীদা খাতুন সেজেছিলেন সখা দেবদত্ত। কুলসুম হুদা সেজেছিলেন রাজা বিক্রম দেব, সাবেরী মোস্তফা হয়েছিলেন রাজ পুরোহিত ত্রিবেদী, সাফিয়া খাতুন হয়েছিলেন নরেশ।
সে নাটকের মহড়ায় প্রম্পট করছিলেন মনিমুন্নেসা। মহড়ার সময় রাজা বিক্রম দেব বলবেন, ‘এবার তাকে ডাকবো প্রকাশ্যে, আসবেন দেবতার যোগ্য নিঃসংকোচে—মাথা তুলে ধ্বজা উড়িয়ে!’
কুলসুম হুদা শেষ অংশটায় বলে উঠলেন, ‘ধ্বজা তুলে।’
মনিমুন্নেসা ফিসফিস করে বললেন, ‘হ্যাঁ এবার বললেই হলো ‘মাথা উড়িয়ে।’
সবার হাসাহাসিতে নাটকের মহড়া কিছুক্ষণ বন্ধ রইল।
শরৎচন্দ্রের দত্তা উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘বিজয়া’ নামে করা হয়েছিল। এ নাটকে বিলাস বিহারী হয়েছিলেন মুনীর চৌধুরীর ছোট বোন কনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশের মা। সন্জীদা খাতুনের ভাগে পড়েছিল রাসবিহারী চরিত্রটি। সন্জীদা খাতুন বললেন, ‘সব ভূমিকার জন্য লোক পাওয়া যাবে, শুধু চাকরের ভূমিকায় কেউ অভিনয় করবে না। আমি ওই ভূমিকায় জন্য আছি।’
শেষ পর্যন্ত তিনি চাকরের ভূমিকায় মহড়া করে গেলেন।
নাটকের সময় বেশ মজা হয়েছিল। শেষ দিকের এক দৃশ্যে বিলাস বিহারীকে পিতা রাসবিহারী প্রচণ্ড বকাবকি করবেন। রাসবিহারী চরিত্রে নাদিরা জোরে ধমক দিয়ে হাসতে শুরু করলেন। বিলাস বিহারী চরিত্রের কনা জবাব দিতে গিয়ে হাসতে লাগলেন। দারুণ হাসাহাসি হচ্ছিল। উইংসের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষক সৈয়দ আলী আহসান স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে হাসতে লাগলেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে শোনা যায় এক গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর প্রত্যেক ছাত্রকে দুটো পরীক্ষায় পাস করা ছিল আবশ্যিক। শরীরচর্চা, আর শারীরিক সুস্থতা নিয়ে ছিল পরীক্ষা। নির্ধারিত দিনে হাজির হয়েছেন আনিসুজ্জামান। শরীরচর্চা বিভাগের সহকারী পরিচালক বাঁশি বাজিয়ে নতুন ছাত্রদের দৌড়াতে বললেন, হাই জাম্প–লং জাম্প দিতে বললেন। আনিসুজ্জামানের এগুলো কিছুই ভালো লাগত না। তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন, যারা প্রথমবার ফিরে যাচ্ছে, তাদের দ্বিতীয়বার আরও একটু কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তৃতীয়বার সেটা হয়ে যাচ্ছে আরও কঠিন। খানিকটা ইচ্ছা করেই আনিসুজ্জামান দ্বিতীয়বারেই ব্যর্থ হলেন। সহকারী পরিচালক বললেন, নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। আর কোনো কাজ দিলেন না আনিসুজ্জামানকে।
খুশি মনে ফিরে এলেন আনিসুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা ছিল খুবই জরুরি বিষয়। ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই ডাকসু কমনরুমে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা নিয়ে একটা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এমএ ক্লাসের ছাত্র মুজিবুর রহমান খান তখন ঢাকা বেতারের শিল্পী ছিলেন, তিনি ছিলেন এই সভার সভাপতি। প্রবন্ধকার আনিসুজ্জামান এবং আলোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। গোটা ১৫ শ্রোতা। কেউ একজন সেই সভার খবর পৌঁছে দিয়েছিল দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। সেখানে তা ছাপা হয়েছিল। তাতেই বাধল বিপত্তি। প্রক্টরিয়াল রুল ভঙ্গ করার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই কারণ দর্শানোর চিঠি এল আনিসুজ্জামানের হাতে। দেখা গেল একই চিঠি পেয়েছেন মুজিবুর রহমান খান ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
মুজিবুর রহমান খান অন্য দুজনকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, কথা যা বলার তিনি বলবেন। অন্য দুজন কেন চুপ করে থাকে।
তখন প্রক্টর ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের রিডার ডক্টর মজহারুল হক। খুব কড়া মানুষ।
তার সামনে গিয়ে মুজিবুর রহমান খান প্রক্টরের ছেলের শরীর–স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। ভাবলেন এভাবে পার পেয়ে যাবেন।
কিন্তু নির্বিকার মজহারুল হক ছেলের সংবাদ দেওয়ার পর বললেন, ‘তোমাদের এখানে আমি আমার ছেলের স্বাস্থ্যের সংবাদ জানাতে ডাকিনি। আত্মপক্ষ সমর্থনে তোমাদের কী বলার আছে সেটাই বলো।’
নানা কথা বলার চেষ্টা করলেন মুজিবুর রহমান খান। কোনোটাই আমলে নিলেন না প্রক্টর। আনিসুজ্জামানকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকেই আইন ভাঙা শুরু করেছ! পরে কী করবে?’
ধমক খেলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরও।
ভবিষ্যতে আর এমন করবে না—এই কথা দিয়ে তাঁরা বেরিয়ে এলেন। বেঁচে গেলেন এ যাত্রা।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছেলে এবং মেয়েদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বেশ মজার কথা লিখেছেন। শিক্ষকেরা মেয়েদের কমনরুমের দরজা থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাসে আসতেন, আবার ক্লাস শেষে সেই দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। সেটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু আনিসুজ্জামানদের সময় সে নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন হয়। শিথিল হয়। তখন ছাত্রীরা কমন রুমের বাইরে অপেক্ষা করত শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলে তার পেছন পেছন ঢুকে যেত, আবার ক্লাস শেষ হলে তারই পেছন পেছন বেরিয়ে আসত। ক্লাসরুমে ছাত্রীদের জন্য সামনে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ খালি রাখা হতো; সেখানেই তারা বসত। প্রক্টরের কাছে লিখিত আবেদন না করে এবং তার অনুমতি না নিয়ে কোনো ছাত্র কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারত না। আর কথা বলতে হতো প্রক্টরের সামনেই।
ছেলেমেয়েরা ঠিকই কিছু উপায় বের করে নিত। মেয়েটা হাঁটত কয়েক পা আগে, ছেলেটা কয়েক পা পেছনে। কলাভবন প্রাঙ্গণে হাঁটতে-হাঁটতে তারা ফিসফিস করে কথা বলত। এক শিক্ষক কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রীর সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটতেন। তার দেখাদেখি কিছুদিন পর কয়েকজন ছাত্রছাত্রীও পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করেন। এর পর আনিসুজ্জামানের ভাষায়, ‘ওই শিক্ষক ও তাঁর ছাত্রীর মতো জোড়ায় জোড়ায় হণ্টন বিপ্লবীদের অনেকে পরে সংসার পাততে সমর্থ হয়েছিলেন!’
হায়াৎ মামুদের স্মৃতিচারণ নিয়ে কথা বলা যায়। তিনি যে বেশ ডানপিটে ছিলেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনটাকে উপভোগ করেছেন নিজের মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের পরিচয় পাওয়া যায়।
তিনি আহমদ শরীফের কথা দিয়ে শুরু করেছেন। আহমদ শরীফের মতো নিরীশ্বরবাদী পণ্ডিত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়াবার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তিনি পড়াতেন সমাজের গড়ন ও বিন্যাসের রহস্য। যেহেতু তিনি পড়াতেন প্রাচীন ও মধ্যযুগ, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁর হওয়ার কথা ছিল কূপমণ্ডূক প্রথানুরক্ত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আহমদ শরীফ ছিলেন আধুনিক ও অগ্রসর চিন্তার মানুষ।
সে সময় বাংলা বিভাগের সর্বেসর্বা ছিলেন ড. মো. আব্দুল হাই। ইংরেজিতে ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন। দর্শনে ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব, যিনি সংক্ষেপে জিসি দেব নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করেছিল। ইতিহাসে ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত ড. এ এইচ দানী। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ছিলেন ড. আবু মোহামেদ হাবিবুল্লাহ। ড. নিউম্যান নামে পূর্ব ইউরোপের এক সাহেব অধ্যাপক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। অর্থনীতি বিভাগে ছিলেন ড. মাহমুদ। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ড. নাজমুল করিম। আর ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন যেন জ্যান্ত বিগ্রহ, চলন্ত কিংবদন্তি। হায়াৎ মামুদ আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলছেন, ‘তিনি নিজের পড়াশোনা শখের রান্নাবান্না আর দাবা খেলার বাইরে কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।’
হায়াৎ মামুদ একদিনের কথা বলছেন। এক দুপুরে সলিমুল্লাহ হল থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মেরে রিকশায় করে তিনি ছুটেছেন ক্লাস করতে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটে টান দিয়ে দেখেন, রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে অধ্যাপক আবদুল হাই হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি একবার চোখ মেলে ছাত্রের কাণ্ড দেখলেন। এর পর সারা সপ্তাহ হায়াৎ মামুদের বুক ঢিপঢিপ ছিল। যদিও এই ঘটনার জবাবদিহির জন্য আবদুল হাই হায়াৎ মামুদকে আর ডাকেননি।
হায়াৎ মামুদেরই একটা গল্প দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আলোচনা শেষ করব। এমএ ফাইনাল পরীক্ষার পর বাবাকে বলতে হবে একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তিনি। নিজে তো বলতে পারবেন না, তাই বলানো হবে বন্ধু জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে দিয়ে। কিন্তু এ সময় বাধল গোল। অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই তলব করলেন হায়াৎ মামুদকে। বকাঝকা করলেন। পার্সেন্টেজ নাই বলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অনুমতি দেবেন না বলে শাসালেন। তারপর উপদেশ দিলেন, সব স্যারের বাড়িতে গিয়ে হাতে–পায়ে ধরে পার্সেন্টেজ আদায় করো। তাহলেই কিছু করা যাবে।
আত্মহত্যা ছাড়া আর কী–বা করার থাকল হায়াৎ মামুদের? পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে বিয়েও পিছিয়ে যাবে। এ সময় যদি মেয়েটিকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়! তবে আত্মহত্যার চেয়ে স্যারদের বাড়ি দৌড়ানো সহজ বলে তিনি সে কাজটাই করতে থাকলেন। শিক্ষকেরা যে যার মতো হাজিরা খাতার ঘরে টিক চিহ্ন দিতে থাকলেন; কিন্তু তাতে টেনেটুনে ৬০ শতাংশ হাজিরা পাওয়া গেল। ৭৫ শতাংশ না হলে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না।
বাংলা বিভাগে আলোচনা সভা বসেছে। যার এজেন্ডার একটি হচ্ছে হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে কি না। ডক্টর কাজী দীন মোহাম্মদ অল্প দিন আগে দেশে ফিরে এসেছেন, তাই হায়াৎ মামুদকে সেভাবে চেনেন না। প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলেটা পড়াশোনায় কেমন? ফেল করবে নাকি?’
‘না না ফেল করবে কেন? ফেল কেউ করে নাকি?’ অন্য শিক্ষকদের একজন জবাব দিলেন।
‘তবে কি থার্ডক্লাস পাবে?’
‘থার্ডক্লাস পাওয়ার মতো ছাত্র নয়। থার্ড ক্লাস পাবে না।’ বললেন একজন শিক্ষক।
‘তা তো বটেই! গবেট টাইপের নয়। হয়তো একটা ভালো সেকেন্ড ক্লাসই পাবে।’ পরিষ্কার করলেন আরও একজন শিক্ষক।
আশ্চর্য, তাহলে একে নিয়ে এত কথা বলছি কেন? থাকলে তো ফের সামনের বছর জ্বালাবে। যত তাড়াতাড়ি ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যায়, আপদ গেল! আমাদের বাঁচোয়া!’ বললেন ড. কাজী দীন মোহাম্মদ।
এভাবেই ড. কাজী দীন মোহাম্মদ হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। হায়াৎ মামুদ কথাটি শুনেছিলেন তাঁর শিক্ষক আনিসুজ্জামানের কাছে।
কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম, সে কথা জানিয়ে বললাম, ‘আজ তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মবার্ষিকী!’
‘আজ নাকি! তাইতো!’ বলে মৃদু হাসলেন।
বললাম, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু বলবেন?’
বললেন, ‘সবই তো লিখেছি। আর এখন কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে করে না।’
আমরা যারা সন্জীদা খাতুনের বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি, তাদের অনেকেই জানি, সেই ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন তিনি। আবেদনপত্রের যে শর্তাবলি ছিল, তার একটি ছিল মেয়েদের মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলতে হবে। আর যদি কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, তাহলে প্রক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। নাও ঠেলা সামলাও!
খুবই কঠিন শর্ত। কিন্তু ভর্তি হতে হলে শর্ত তো মানতেই হবে। মেয়েদের পড়াশোনা তখনো খুব সহজ কিছু ছিল না। সন্জীদা খাতুনের পড়ালেখার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তাই সেই শর্তে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য প্রযোজক নাজির আহমেদের বোন শামসুন্নাহার সন্জীদা খাতুনের এক ক্লাস ওপরে পড়তেন। তিনি একদিন সন্জীদাকে বললেন, ‘চলো আমরা বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে কিছু একটা করি।’
তিনি চাইছিলেন শাপমোচন নাটকটি করতে। সেই নাটকের গানগুলো যেন সন্জীদা করেন, সেটাই তিনি চাইছিলেন। পুরো নাটক নয়, কোনো কোনো অংশের সঙ্গে কিছু পাঠ, কিছু অভিনয় মিলিয়ে তৈরি করেছিলেন শাপমোচন। অভিনয় হয়েছিল হুদা হাউজের একতলার একটি ঘরে চৌকি এদিক-ওদিক করে।
সে সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। প্রদীপ জোগাড় করা হলো। সলতেও পাওয়া গেল। কিন্তু তেল পাওয়া যাবে কোথায়। নেপালি একটি মেয়ে প্রতিদিন এক চামচ করে সরষের তেল খেত। ওর নাম ফ্লোরা জেমস। প্রদীপের জন্য মেয়েটি তার খাঁটি সরষের তেল দিয়ে সাহায্য করল মেয়েদের।
অনুষ্ঠান খারাপ হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের করা দুটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন সনজীদা খাতুন। তখন যে নিয়ম ছিল, তার অন্যথা অবশ্য হয়নি। মেয়েদের নাটকে মেয়েরাই অভিনয় করত, আর ছেলেদের নাটকে ছেলেরা। অর্থাৎ মেয়েদের নাটকে পুরুষ চরিত্রগুলো করত মেয়েরাই, আবার ছেলেদের নাটকে নারী চরিত্রগুলো করত ছেলেরা। রবীন্দ্রনাথের ‘তপতী’ নাটকে সনজীদা খাতুন সেজেছিলেন সখা দেবদত্ত। কুলসুম হুদা সেজেছিলেন রাজা বিক্রম দেব, সাবেরী মোস্তফা হয়েছিলেন রাজ পুরোহিত ত্রিবেদী, সাফিয়া খাতুন হয়েছিলেন নরেশ।
সে নাটকের মহড়ায় প্রম্পট করছিলেন মনিমুন্নেসা। মহড়ার সময় রাজা বিক্রম দেব বলবেন, ‘এবার তাকে ডাকবো প্রকাশ্যে, আসবেন দেবতার যোগ্য নিঃসংকোচে—মাথা তুলে ধ্বজা উড়িয়ে!’
কুলসুম হুদা শেষ অংশটায় বলে উঠলেন, ‘ধ্বজা তুলে।’
মনিমুন্নেসা ফিসফিস করে বললেন, ‘হ্যাঁ এবার বললেই হলো ‘মাথা উড়িয়ে।’
সবার হাসাহাসিতে নাটকের মহড়া কিছুক্ষণ বন্ধ রইল।
শরৎচন্দ্রের দত্তা উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘বিজয়া’ নামে করা হয়েছিল। এ নাটকে বিলাস বিহারী হয়েছিলেন মুনীর চৌধুরীর ছোট বোন কনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশের মা। সন্জীদা খাতুনের ভাগে পড়েছিল রাসবিহারী চরিত্রটি। সন্জীদা খাতুন বললেন, ‘সব ভূমিকার জন্য লোক পাওয়া যাবে, শুধু চাকরের ভূমিকায় কেউ অভিনয় করবে না। আমি ওই ভূমিকায় জন্য আছি।’
শেষ পর্যন্ত তিনি চাকরের ভূমিকায় মহড়া করে গেলেন।
নাটকের সময় বেশ মজা হয়েছিল। শেষ দিকের এক দৃশ্যে বিলাস বিহারীকে পিতা রাসবিহারী প্রচণ্ড বকাবকি করবেন। রাসবিহারী চরিত্রে নাদিরা জোরে ধমক দিয়ে হাসতে শুরু করলেন। বিলাস বিহারী চরিত্রের কনা জবাব দিতে গিয়ে হাসতে লাগলেন। দারুণ হাসাহাসি হচ্ছিল। উইংসের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষক সৈয়দ আলী আহসান স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে হাসতে লাগলেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে শোনা যায় এক গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর প্রত্যেক ছাত্রকে দুটো পরীক্ষায় পাস করা ছিল আবশ্যিক। শরীরচর্চা, আর শারীরিক সুস্থতা নিয়ে ছিল পরীক্ষা। নির্ধারিত দিনে হাজির হয়েছেন আনিসুজ্জামান। শরীরচর্চা বিভাগের সহকারী পরিচালক বাঁশি বাজিয়ে নতুন ছাত্রদের দৌড়াতে বললেন, হাই জাম্প–লং জাম্প দিতে বললেন। আনিসুজ্জামানের এগুলো কিছুই ভালো লাগত না। তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন, যারা প্রথমবার ফিরে যাচ্ছে, তাদের দ্বিতীয়বার আরও একটু কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তৃতীয়বার সেটা হয়ে যাচ্ছে আরও কঠিন। খানিকটা ইচ্ছা করেই আনিসুজ্জামান দ্বিতীয়বারেই ব্যর্থ হলেন। সহকারী পরিচালক বললেন, নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। আর কোনো কাজ দিলেন না আনিসুজ্জামানকে।
খুশি মনে ফিরে এলেন আনিসুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা ছিল খুবই জরুরি বিষয়। ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই ডাকসু কমনরুমে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা নিয়ে একটা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এমএ ক্লাসের ছাত্র মুজিবুর রহমান খান তখন ঢাকা বেতারের শিল্পী ছিলেন, তিনি ছিলেন এই সভার সভাপতি। প্রবন্ধকার আনিসুজ্জামান এবং আলোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। গোটা ১৫ শ্রোতা। কেউ একজন সেই সভার খবর পৌঁছে দিয়েছিল দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। সেখানে তা ছাপা হয়েছিল। তাতেই বাধল বিপত্তি। প্রক্টরিয়াল রুল ভঙ্গ করার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই কারণ দর্শানোর চিঠি এল আনিসুজ্জামানের হাতে। দেখা গেল একই চিঠি পেয়েছেন মুজিবুর রহমান খান ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
মুজিবুর রহমান খান অন্য দুজনকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, কথা যা বলার তিনি বলবেন। অন্য দুজন কেন চুপ করে থাকে।
তখন প্রক্টর ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের রিডার ডক্টর মজহারুল হক। খুব কড়া মানুষ।
তার সামনে গিয়ে মুজিবুর রহমান খান প্রক্টরের ছেলের শরীর–স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। ভাবলেন এভাবে পার পেয়ে যাবেন।
কিন্তু নির্বিকার মজহারুল হক ছেলের সংবাদ দেওয়ার পর বললেন, ‘তোমাদের এখানে আমি আমার ছেলের স্বাস্থ্যের সংবাদ জানাতে ডাকিনি। আত্মপক্ষ সমর্থনে তোমাদের কী বলার আছে সেটাই বলো।’
নানা কথা বলার চেষ্টা করলেন মুজিবুর রহমান খান। কোনোটাই আমলে নিলেন না প্রক্টর। আনিসুজ্জামানকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকেই আইন ভাঙা শুরু করেছ! পরে কী করবে?’
ধমক খেলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরও।
ভবিষ্যতে আর এমন করবে না—এই কথা দিয়ে তাঁরা বেরিয়ে এলেন। বেঁচে গেলেন এ যাত্রা।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছেলে এবং মেয়েদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বেশ মজার কথা লিখেছেন। শিক্ষকেরা মেয়েদের কমনরুমের দরজা থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাসে আসতেন, আবার ক্লাস শেষে সেই দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। সেটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু আনিসুজ্জামানদের সময় সে নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন হয়। শিথিল হয়। তখন ছাত্রীরা কমন রুমের বাইরে অপেক্ষা করত শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলে তার পেছন পেছন ঢুকে যেত, আবার ক্লাস শেষ হলে তারই পেছন পেছন বেরিয়ে আসত। ক্লাসরুমে ছাত্রীদের জন্য সামনে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ খালি রাখা হতো; সেখানেই তারা বসত। প্রক্টরের কাছে লিখিত আবেদন না করে এবং তার অনুমতি না নিয়ে কোনো ছাত্র কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারত না। আর কথা বলতে হতো প্রক্টরের সামনেই।
ছেলেমেয়েরা ঠিকই কিছু উপায় বের করে নিত। মেয়েটা হাঁটত কয়েক পা আগে, ছেলেটা কয়েক পা পেছনে। কলাভবন প্রাঙ্গণে হাঁটতে-হাঁটতে তারা ফিসফিস করে কথা বলত। এক শিক্ষক কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রীর সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটতেন। তার দেখাদেখি কিছুদিন পর কয়েকজন ছাত্রছাত্রীও পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করেন। এর পর আনিসুজ্জামানের ভাষায়, ‘ওই শিক্ষক ও তাঁর ছাত্রীর মতো জোড়ায় জোড়ায় হণ্টন বিপ্লবীদের অনেকে পরে সংসার পাততে সমর্থ হয়েছিলেন!’
হায়াৎ মামুদের স্মৃতিচারণ নিয়ে কথা বলা যায়। তিনি যে বেশ ডানপিটে ছিলেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনটাকে উপভোগ করেছেন নিজের মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের পরিচয় পাওয়া যায়।
তিনি আহমদ শরীফের কথা দিয়ে শুরু করেছেন। আহমদ শরীফের মতো নিরীশ্বরবাদী পণ্ডিত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়াবার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তিনি পড়াতেন সমাজের গড়ন ও বিন্যাসের রহস্য। যেহেতু তিনি পড়াতেন প্রাচীন ও মধ্যযুগ, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁর হওয়ার কথা ছিল কূপমণ্ডূক প্রথানুরক্ত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আহমদ শরীফ ছিলেন আধুনিক ও অগ্রসর চিন্তার মানুষ।
সে সময় বাংলা বিভাগের সর্বেসর্বা ছিলেন ড. মো. আব্দুল হাই। ইংরেজিতে ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন। দর্শনে ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব, যিনি সংক্ষেপে জিসি দেব নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করেছিল। ইতিহাসে ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত ড. এ এইচ দানী। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ছিলেন ড. আবু মোহামেদ হাবিবুল্লাহ। ড. নিউম্যান নামে পূর্ব ইউরোপের এক সাহেব অধ্যাপক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। অর্থনীতি বিভাগে ছিলেন ড. মাহমুদ। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ড. নাজমুল করিম। আর ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন যেন জ্যান্ত বিগ্রহ, চলন্ত কিংবদন্তি। হায়াৎ মামুদ আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলছেন, ‘তিনি নিজের পড়াশোনা শখের রান্নাবান্না আর দাবা খেলার বাইরে কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।’
হায়াৎ মামুদ একদিনের কথা বলছেন। এক দুপুরে সলিমুল্লাহ হল থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মেরে রিকশায় করে তিনি ছুটেছেন ক্লাস করতে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটে টান দিয়ে দেখেন, রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে অধ্যাপক আবদুল হাই হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি একবার চোখ মেলে ছাত্রের কাণ্ড দেখলেন। এর পর সারা সপ্তাহ হায়াৎ মামুদের বুক ঢিপঢিপ ছিল। যদিও এই ঘটনার জবাবদিহির জন্য আবদুল হাই হায়াৎ মামুদকে আর ডাকেননি।
হায়াৎ মামুদেরই একটা গল্প দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আলোচনা শেষ করব। এমএ ফাইনাল পরীক্ষার পর বাবাকে বলতে হবে একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তিনি। নিজে তো বলতে পারবেন না, তাই বলানো হবে বন্ধু জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে দিয়ে। কিন্তু এ সময় বাধল গোল। অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই তলব করলেন হায়াৎ মামুদকে। বকাঝকা করলেন। পার্সেন্টেজ নাই বলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অনুমতি দেবেন না বলে শাসালেন। তারপর উপদেশ দিলেন, সব স্যারের বাড়িতে গিয়ে হাতে–পায়ে ধরে পার্সেন্টেজ আদায় করো। তাহলেই কিছু করা যাবে।
আত্মহত্যা ছাড়া আর কী–বা করার থাকল হায়াৎ মামুদের? পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে বিয়েও পিছিয়ে যাবে। এ সময় যদি মেয়েটিকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়! তবে আত্মহত্যার চেয়ে স্যারদের বাড়ি দৌড়ানো সহজ বলে তিনি সে কাজটাই করতে থাকলেন। শিক্ষকেরা যে যার মতো হাজিরা খাতার ঘরে টিক চিহ্ন দিতে থাকলেন; কিন্তু তাতে টেনেটুনে ৬০ শতাংশ হাজিরা পাওয়া গেল। ৭৫ শতাংশ না হলে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না।
বাংলা বিভাগে আলোচনা সভা বসেছে। যার এজেন্ডার একটি হচ্ছে হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে কি না। ডক্টর কাজী দীন মোহাম্মদ অল্প দিন আগে দেশে ফিরে এসেছেন, তাই হায়াৎ মামুদকে সেভাবে চেনেন না। প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলেটা পড়াশোনায় কেমন? ফেল করবে নাকি?’
‘না না ফেল করবে কেন? ফেল কেউ করে নাকি?’ অন্য শিক্ষকদের একজন জবাব দিলেন।
‘তবে কি থার্ডক্লাস পাবে?’
‘থার্ডক্লাস পাওয়ার মতো ছাত্র নয়। থার্ড ক্লাস পাবে না।’ বললেন একজন শিক্ষক।
‘তা তো বটেই! গবেট টাইপের নয়। হয়তো একটা ভালো সেকেন্ড ক্লাসই পাবে।’ পরিষ্কার করলেন আরও একজন শিক্ষক।
আশ্চর্য, তাহলে একে নিয়ে এত কথা বলছি কেন? থাকলে তো ফের সামনের বছর জ্বালাবে। যত তাড়াতাড়ি ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যায়, আপদ গেল! আমাদের বাঁচোয়া!’ বললেন ড. কাজী দীন মোহাম্মদ।
এভাবেই ড. কাজী দীন মোহাম্মদ হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। হায়াৎ মামুদ কথাটি শুনেছিলেন তাঁর শিক্ষক আনিসুজ্জামানের কাছে।
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৯ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৯ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৯ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৯ ঘণ্টা আগে