অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আমার পেশা সম্পর্কে অবগত এক ভদ্রলোক গতকাল বাজারে দেখা পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা দ্রব্যমূল্য নামক যে কাঁটা আমাদের গলায় বিঁধে আছে, সেটি কি শুধু সবজিকেন্দ্রিক? আপনাদের গণমাধ্যমের হইচই আর সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে তো তা-ই মনে হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দুর্মূল্য সম্পর্কে খবরাখবর পরিবেশনে গণমাধ্যমকে দেখি সবজির দামকেই প্রাধান্য দিতে। আবার সরকারও দেখি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় সবজি পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন পর্যন্ত চালু করেছে। কিন্তু সবজি রান্না করে খাওয়ার জন্য এবং মানুষের স্বাভাবিক নৈমিত্তিক জীবনযাপনের জন্য আরও যেসব দ্রব্যসামগ্রী দরকার তার কোনটির দাম কম বলুন তো?’
আরও অনেক কথাই তিনি বলেছেন যার সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। জবাব দেওয়ার মতোও কিছু নেই। যেমন বিভিন্ন ধরনের সবজি একেকটি মৌসুমি কৃষিপণ্য। এগুলো বিভিন্ন মৌসুমের আবহাওয়ানির্ভর। বর্ষা মৌসুমে যখন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয় তখন মরিচ-বেগুনের মতো সবজির ফলন ও সরবরাহ কমে যায়। গাছের গোড়ায় পানি জমলে এই দুটি গাছ মরেও যায়। তাহলে বর্ষায় যদি মরিচ-বেগুনের সরবরাহ কমে এবং দাম বাড়ে সেটা তো মানতে হবে। তখন সেগুলোর ব্যবহার কমানো হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পন্থা। না হলে আমদানি করা যায়। কিন্তু যেসব উৎস থেকে আমদানি করা হবে সেখানেও তো ওই মৌসুমি কারণেই তখন সরবরাহ কম এবং দামও চড়া। এগুলো তো ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানি করার জিনিস না। আবার কোনো কোনো সময় তো এই ঢাকা শহরেই কাঁচা মরিচ-বেগুন ৩০-৪০ টাকা কেজি দরেও পাওয়া যায়।
এই যে কয়েক দিন ধরে আবহাওয়ায় পরিবর্তন এসেছে। বৃষ্টি-বাদল চলে গেছে। শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। ফলে দামও অনেক কমেছে। উৎপাদন, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে এই দাম কখনো কিছুটা কমবে, কখনো বাড়তে পারে। দাম বাড়া-কমার এই প্রক্রিয়ায় আরেকটি বড় ভূমিকা রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী এবং চাঁদাবাজদের। এর মধ্যে সরকার আন্তরিক হলে চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব নয়। তবে পুরো সরবরাহপ্রক্রিয়া থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দেওয়া অসম্ভব। কারণ, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কৃষকের পক্ষে তো তাঁর উৎপাদিত সবজি নিয়ে ঢাকায় আসা সম্ভব নয়। কৃষককে তো ওই ফড়িয়া-ব্যবসায়ীদের ওপরই নির্ভর করতে হয়। আসলে ফড়িয়া-ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হয় শহর-নগরের ক্রেতাদেরও। কেননা ট্রাক নিয়ে কৃষকের খেতের পাশে তো ওই ফড়িয়া-ব্যবসায়ীরাই গিয়ে দাঁড়ান। তারপর সেইসব পণ্য পৌঁছেও দেন শহর-নগরের সব মোকামে-আড়তে। এটা তাঁর জীবিকাও বটে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেটা করা উচিত তা হলো তাঁর আসা-যাওয়ার পথে পণ্য সরবরাহের বিঘ্নগুলো অপসারণ করা এবং তাঁর অতিমুনাফার প্রবণতার প্রতি কড়া নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এর পরের ধাপ হলো শহর-নগরের আড়তদার-ব্যবসায়ী। এখানেও সরকারের কার্যকর নজরদারিই পারে অতিমুনাফা, মজুত কিংবা ফাটকা ব্যবসার প্রবণতা রোধ করতে। এরও পরে একটা ধাপ থাকে। তা হলো আড়ত থেকে শহর-নগরের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ। এই কাজটি করেন ছোট ও মাঝারি মাপের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ওপরের ধাপগুলো ঠিক হলে এদের পর্যায়ে দ্রব্যমূল্যে বড় কোনো ব্যত্যয় ঘটানো সম্ভব নয়। কৃষকের খেত থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পণ্যগুলো যাঁরা পৌঁছে দেন, এর পুরোটা মিলে একটা প্রক্রিয়া। আজকাল এই প্রক্রিয়ায় কোনো কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হওয়ায় প্রক্রিয়াটির সিন্ডিকেট হয়ে ওঠার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে প্রক্রিয়াটির প্রতিটি ধাপে সরকারের নজরদারির প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। কিন্তু সরকার সেই নজরদারি জোরদার বা কার্যকরভাবে না করে সবজিট্রেন চালু করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অসম্ভব প্রয়াস চালাচ্ছে।
সবজিট্রেনের অনেক সমস্যা ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। প্রথমত ট্রেনের সময়সূচি। যেসব এলাকা থেকে সবজিগুলো আনা হবে সেখান থেকে ট্রেন ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকালে। এটা কারও বাড়ির খেতের কয়েকটা লাউ-মুলা নয় যে সকালবেলা তুলে তা ট্রেনে তুলে দিল। হাজার হাজার টন সবজির চালান কোনো এলাকা থেকে সরবরাহের জন্য সকালে প্রস্তুত হয় না। প্রস্তুত হয় দুপুর থেকে বিকেলে। আজ ঢাকার বাজারে যশোর কিংবা দিনাজপুরের যে সবজি আমরা পাচ্ছি তা সেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছে গতকাল বিকেল-সন্ধ্যায়। দ্বিতীয়ত কৃষক কীভাবে খেত থেকে তাঁর টনকে টন সবজি রেলস্টেশনে নিয়ে যাবেন? এ জন্য তাঁকে তো ট্রাক ভাড়া করতে হবে। আবার ট্রেন ঢাকায় আসার পরও সেই সবজি কোনো আড়তে পাঠানোর জন্য ট্রাক লাগবে। এই ব্যবস্থাপনা কি তাঁর পক্ষে করা সম্ভব? তৃতীয়ত ট্রেনে খরচ বেশি। কয়েকটি এলাকার কৃষকেরা হিসাব করে দেখিয়েছেন যে ট্রেনে প্রতি কেজি সবজির পরিবহন ভাড়া গড়ে দেড় টাকার কম নির্ধারণ করা হলেও পণ্যগুলো স্টেশনে নেওয়া এবং ঢাকার আড়তে পৌঁছানোর জন্য সর্বমোট খরচ পড়বে কেজিপ্রতি সাড়ে চার টাকার মতো। অন্যদিকে তাঁর খেতের পাশ থেকে যে ট্রাক পণ্যগুলো তুলে নেয় তাতে খরচ হয় কেজিপ্রতি আড়াই টাকার মতো। সবজিট্রেন চালুর আগে আমাদের নীতিনির্ধারক কর্তাব্যক্তিরা কি এসব বিষয় ভেবে দেখেছিলেন? যদি দেখতেন তাহলে ৯-১০ লাখ টাকা গচ্চা দিয়ে সবজিশূন্য একেকটি ট্রেন চালাতে হতো না।
কৃষকের কাছ থেকেই মধ্যস্বত্বভোগীর আরেকটি প্রকরণ সম্পর্কে জানা গেছে। সেটি হলো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। যেকোনো পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যম ছাড়া ট্রাক ভাড়া করা যায় না। যখনই কোনো সরবরাহকারী বা বিক্রেতা কোনো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করেন, তখনই ওই এজেন্সির পক্ষ থেকে বিভিন্ন আড়তের নির্দিষ্ট ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃষক পর্যায়ে পণ্যের দাম, পরিবহন খরচ, অন্যান্য খরচ হিসাব করে, পণ্যের সরবরাহ ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের ইচ্ছামতো মুনাফা যোগ করে একটি বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ীই বাজারে পণ্যগুলোর বেচা-কেনা চলে। ফলে সিন্ডিকেট যে কোথায় তা বোঝাই যায় না। ধরাও সম্ভব হয় না। এই কারণেই দশকের পর দশক ধরে যেসব সিন্ডিকেটের কথা আমরা শুনছি তার একটিও ভেঙে দেওয়ার কোনো নজির দেখিনি। সরকার বিষয়টির প্রতি নজর দিতে পারে। শুধু সবজি নয়, মাছ-মাংস-ডিম, শাক-ফলমূল প্রভৃতি সব পণ্যের ক্ষেত্রেই উপরোক্ত সিন্ডিকেট বা প্রক্রিয়াটি প্রযোজ্য।
নৈমিত্তিক জীবনযাপনের জন্য অন্যান্য উপকরণের মূল্য পরিস্থিতি কী তা সবারই জানা। যে কৃষক সবজি উৎপাদন করেন তাঁর তো চাল-ডাল-তেল-নুন-কাপড়চোপড় কিনতে হয়। সেগুলোর দাম তো বেশি। কৃষকের উৎপাদন উপকরণের দামও বেশি। এর কারণ সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। যুদ্ধ-বিগ্রহ ও প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে টানাপোড়েন চলেছে, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তার অসহায় শিকার। মার্কিন ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান প্রতিনিয়ত নিম্নগামী। আমাদের যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় সেগুলোর দাম বেশি পড়ছে। ফলে কোনো পর্যায়েই কোনো জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকছে না। দেশের অর্থনীতির শক্তি বাড়িয়ে, সব ক্ষেত্রে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সেটা নিশ্চয়ই সময়সাপেক্ষ। আমাদের সেই সামর্থ্যও সীমিত। সেই কারণেই দ্রব্যমূল্য আমাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক গলার কাঁটার মতো বিঁধে আছে। এই কাঁটা ছাড়াতে না পারলে কোনো পরিবর্তনই জনজীবনে অর্থবহ কোনো পরিবর্তন বয়ে আনতে পারবে না। কোনো পরিবর্তন টেকসইও হবে না।
আমার পেশা সম্পর্কে অবগত এক ভদ্রলোক গতকাল বাজারে দেখা পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা দ্রব্যমূল্য নামক যে কাঁটা আমাদের গলায় বিঁধে আছে, সেটি কি শুধু সবজিকেন্দ্রিক? আপনাদের গণমাধ্যমের হইচই আর সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে তো তা-ই মনে হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দুর্মূল্য সম্পর্কে খবরাখবর পরিবেশনে গণমাধ্যমকে দেখি সবজির দামকেই প্রাধান্য দিতে। আবার সরকারও দেখি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় সবজি পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন পর্যন্ত চালু করেছে। কিন্তু সবজি রান্না করে খাওয়ার জন্য এবং মানুষের স্বাভাবিক নৈমিত্তিক জীবনযাপনের জন্য আরও যেসব দ্রব্যসামগ্রী দরকার তার কোনটির দাম কম বলুন তো?’
আরও অনেক কথাই তিনি বলেছেন যার সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। জবাব দেওয়ার মতোও কিছু নেই। যেমন বিভিন্ন ধরনের সবজি একেকটি মৌসুমি কৃষিপণ্য। এগুলো বিভিন্ন মৌসুমের আবহাওয়ানির্ভর। বর্ষা মৌসুমে যখন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয় তখন মরিচ-বেগুনের মতো সবজির ফলন ও সরবরাহ কমে যায়। গাছের গোড়ায় পানি জমলে এই দুটি গাছ মরেও যায়। তাহলে বর্ষায় যদি মরিচ-বেগুনের সরবরাহ কমে এবং দাম বাড়ে সেটা তো মানতে হবে। তখন সেগুলোর ব্যবহার কমানো হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পন্থা। না হলে আমদানি করা যায়। কিন্তু যেসব উৎস থেকে আমদানি করা হবে সেখানেও তো ওই মৌসুমি কারণেই তখন সরবরাহ কম এবং দামও চড়া। এগুলো তো ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানি করার জিনিস না। আবার কোনো কোনো সময় তো এই ঢাকা শহরেই কাঁচা মরিচ-বেগুন ৩০-৪০ টাকা কেজি দরেও পাওয়া যায়।
এই যে কয়েক দিন ধরে আবহাওয়ায় পরিবর্তন এসেছে। বৃষ্টি-বাদল চলে গেছে। শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। ফলে দামও অনেক কমেছে। উৎপাদন, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে এই দাম কখনো কিছুটা কমবে, কখনো বাড়তে পারে। দাম বাড়া-কমার এই প্রক্রিয়ায় আরেকটি বড় ভূমিকা রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী এবং চাঁদাবাজদের। এর মধ্যে সরকার আন্তরিক হলে চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব নয়। তবে পুরো সরবরাহপ্রক্রিয়া থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দেওয়া অসম্ভব। কারণ, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কৃষকের পক্ষে তো তাঁর উৎপাদিত সবজি নিয়ে ঢাকায় আসা সম্ভব নয়। কৃষককে তো ওই ফড়িয়া-ব্যবসায়ীদের ওপরই নির্ভর করতে হয়। আসলে ফড়িয়া-ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হয় শহর-নগরের ক্রেতাদেরও। কেননা ট্রাক নিয়ে কৃষকের খেতের পাশে তো ওই ফড়িয়া-ব্যবসায়ীরাই গিয়ে দাঁড়ান। তারপর সেইসব পণ্য পৌঁছেও দেন শহর-নগরের সব মোকামে-আড়তে। এটা তাঁর জীবিকাও বটে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেটা করা উচিত তা হলো তাঁর আসা-যাওয়ার পথে পণ্য সরবরাহের বিঘ্নগুলো অপসারণ করা এবং তাঁর অতিমুনাফার প্রবণতার প্রতি কড়া নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এর পরের ধাপ হলো শহর-নগরের আড়তদার-ব্যবসায়ী। এখানেও সরকারের কার্যকর নজরদারিই পারে অতিমুনাফা, মজুত কিংবা ফাটকা ব্যবসার প্রবণতা রোধ করতে। এরও পরে একটা ধাপ থাকে। তা হলো আড়ত থেকে শহর-নগরের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ। এই কাজটি করেন ছোট ও মাঝারি মাপের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ওপরের ধাপগুলো ঠিক হলে এদের পর্যায়ে দ্রব্যমূল্যে বড় কোনো ব্যত্যয় ঘটানো সম্ভব নয়। কৃষকের খেত থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পণ্যগুলো যাঁরা পৌঁছে দেন, এর পুরোটা মিলে একটা প্রক্রিয়া। আজকাল এই প্রক্রিয়ায় কোনো কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হওয়ায় প্রক্রিয়াটির সিন্ডিকেট হয়ে ওঠার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে প্রক্রিয়াটির প্রতিটি ধাপে সরকারের নজরদারির প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। কিন্তু সরকার সেই নজরদারি জোরদার বা কার্যকরভাবে না করে সবজিট্রেন চালু করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অসম্ভব প্রয়াস চালাচ্ছে।
সবজিট্রেনের অনেক সমস্যা ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। প্রথমত ট্রেনের সময়সূচি। যেসব এলাকা থেকে সবজিগুলো আনা হবে সেখান থেকে ট্রেন ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকালে। এটা কারও বাড়ির খেতের কয়েকটা লাউ-মুলা নয় যে সকালবেলা তুলে তা ট্রেনে তুলে দিল। হাজার হাজার টন সবজির চালান কোনো এলাকা থেকে সরবরাহের জন্য সকালে প্রস্তুত হয় না। প্রস্তুত হয় দুপুর থেকে বিকেলে। আজ ঢাকার বাজারে যশোর কিংবা দিনাজপুরের যে সবজি আমরা পাচ্ছি তা সেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছে গতকাল বিকেল-সন্ধ্যায়। দ্বিতীয়ত কৃষক কীভাবে খেত থেকে তাঁর টনকে টন সবজি রেলস্টেশনে নিয়ে যাবেন? এ জন্য তাঁকে তো ট্রাক ভাড়া করতে হবে। আবার ট্রেন ঢাকায় আসার পরও সেই সবজি কোনো আড়তে পাঠানোর জন্য ট্রাক লাগবে। এই ব্যবস্থাপনা কি তাঁর পক্ষে করা সম্ভব? তৃতীয়ত ট্রেনে খরচ বেশি। কয়েকটি এলাকার কৃষকেরা হিসাব করে দেখিয়েছেন যে ট্রেনে প্রতি কেজি সবজির পরিবহন ভাড়া গড়ে দেড় টাকার কম নির্ধারণ করা হলেও পণ্যগুলো স্টেশনে নেওয়া এবং ঢাকার আড়তে পৌঁছানোর জন্য সর্বমোট খরচ পড়বে কেজিপ্রতি সাড়ে চার টাকার মতো। অন্যদিকে তাঁর খেতের পাশ থেকে যে ট্রাক পণ্যগুলো তুলে নেয় তাতে খরচ হয় কেজিপ্রতি আড়াই টাকার মতো। সবজিট্রেন চালুর আগে আমাদের নীতিনির্ধারক কর্তাব্যক্তিরা কি এসব বিষয় ভেবে দেখেছিলেন? যদি দেখতেন তাহলে ৯-১০ লাখ টাকা গচ্চা দিয়ে সবজিশূন্য একেকটি ট্রেন চালাতে হতো না।
কৃষকের কাছ থেকেই মধ্যস্বত্বভোগীর আরেকটি প্রকরণ সম্পর্কে জানা গেছে। সেটি হলো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। যেকোনো পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যম ছাড়া ট্রাক ভাড়া করা যায় না। যখনই কোনো সরবরাহকারী বা বিক্রেতা কোনো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করেন, তখনই ওই এজেন্সির পক্ষ থেকে বিভিন্ন আড়তের নির্দিষ্ট ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃষক পর্যায়ে পণ্যের দাম, পরিবহন খরচ, অন্যান্য খরচ হিসাব করে, পণ্যের সরবরাহ ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের ইচ্ছামতো মুনাফা যোগ করে একটি বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ীই বাজারে পণ্যগুলোর বেচা-কেনা চলে। ফলে সিন্ডিকেট যে কোথায় তা বোঝাই যায় না। ধরাও সম্ভব হয় না। এই কারণেই দশকের পর দশক ধরে যেসব সিন্ডিকেটের কথা আমরা শুনছি তার একটিও ভেঙে দেওয়ার কোনো নজির দেখিনি। সরকার বিষয়টির প্রতি নজর দিতে পারে। শুধু সবজি নয়, মাছ-মাংস-ডিম, শাক-ফলমূল প্রভৃতি সব পণ্যের ক্ষেত্রেই উপরোক্ত সিন্ডিকেট বা প্রক্রিয়াটি প্রযোজ্য।
নৈমিত্তিক জীবনযাপনের জন্য অন্যান্য উপকরণের মূল্য পরিস্থিতি কী তা সবারই জানা। যে কৃষক সবজি উৎপাদন করেন তাঁর তো চাল-ডাল-তেল-নুন-কাপড়চোপড় কিনতে হয়। সেগুলোর দাম তো বেশি। কৃষকের উৎপাদন উপকরণের দামও বেশি। এর কারণ সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। যুদ্ধ-বিগ্রহ ও প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে টানাপোড়েন চলেছে, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তার অসহায় শিকার। মার্কিন ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান প্রতিনিয়ত নিম্নগামী। আমাদের যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় সেগুলোর দাম বেশি পড়ছে। ফলে কোনো পর্যায়েই কোনো জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকছে না। দেশের অর্থনীতির শক্তি বাড়িয়ে, সব ক্ষেত্রে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সেটা নিশ্চয়ই সময়সাপেক্ষ। আমাদের সেই সামর্থ্যও সীমিত। সেই কারণেই দ্রব্যমূল্য আমাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক গলার কাঁটার মতো বিঁধে আছে। এই কাঁটা ছাড়াতে না পারলে কোনো পরিবর্তনই জনজীবনে অর্থবহ কোনো পরিবর্তন বয়ে আনতে পারবে না। কোনো পরিবর্তন টেকসইও হবে না।
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৬ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৬ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৬ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৬ ঘণ্টা আগে