মাসুদ উর রহমান
কম শক্তি নিয়ে আঘাত করলেও উপকূলজুড়ে তাণ্ডবের বড় চিহ্ন রেখে গেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এরই মধ্যে জেনে গেছি আমরা। সরকারি হিসাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ভেসে গেছে চিংড়িঘের। প্রাণ গেছে মানুষের। এই লেখা যখন লিখছি, তখন প্রাণহানির সংখ্যা ২৭ থেকে ৩৬-এ পৌঁছেছে, নিখোঁজ রয়েছে ৭ জন। দৈনিক আজকের পত্রিকায় ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত ‘ক্ষতির নতুন চিত্র সামনে আসছে’ শীর্ষক সংবাদ থেকে বুঝতে পারলাম, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
গত কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড়ে এত বেশি মানুষের মৃত্যু হয়নি। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে কম বিবেচনা করা হয় যদি মৃত্যুর সংখ্যা সর্বনিম্ন রাখা যায়। সেই দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। এবারের মৃত্যুর ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশ ঝড়ে বসতভিটার গাছ ভেঙে পড়ে, যা অনভিপ্রেত। উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অনুপযুক্ত এসব গাছ দ্রুত বর্ধনশীল বলে মানুষ এগুলো লাগিয়েছে, যা ঠিক হয়নি। কাজেই অঞ্চলভেদে গাছ লাগানোর একটি গাইডলাইন এখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
সমূহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে এবারও হিমশিম খেতে হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। তাঁদের ভাষ্যমতে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে, এমন কথা তাঁরা বিশ্বাস করছেন না। তার একটা মানে হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস যথাযথ হয়নি। তা ছাড়া ঝড়ের সময়ে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে অনীহার একটি কারণ ঘরবাড়ি ও সহায়সম্পদ। তার ওপর সাইক্লোন শেল্টারগুলোর পরিবেশও অতটা ভালো নয়। মাথাপিছু জায়গা বরাদ্দ দুই বর্গফুটের মতো, কাজেই একসঙ্গে এত মানুষের গাদাগাদি করে দীর্ঘ সময় থাকা অনেক কষ্টকর।
আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কীকরণের ভাষাও সাধারণ মানুষদের জন্য সহজবোধ্য নয়। দেখা গেছে পুরো একটি বিভাগের জন্য একই সতর্কসংকেত থাকে, ফলে গড়পড়তা একটা প্রস্তুতি থাকে সবার মধ্যে। কিন্তু অনেক দুর্গম এলাকা আছে যেগুলোর ওপর ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবটি অন্য অনেক স্থানের তুলনায় বেশি। ফলে নির্দিষ্ট নম্বরের সতর্কসংকেতে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যেমন এবারের সতর্কসংকেত ছিল ৭। মানুষ মনে করতে পারে, ১০ নম্বর যেহেতু নয়, সেহেতু বিপদ সামান্য।
এবার সিত্রাং বৃষ্টি ঝরিয়ে দ্রুত দুর্বল হয়ে যাওয়ায় উপকূলে আঘাতের সময় ভাটা ছিল। ঝড়টি দ্রুত দুর্বল না হয়ে যদি শক্তিশালী হয়ে জোয়ারের সময়ে আঘাত হানত, তাহলে ৭ নম্বরেও ১০ নম্বরের সমান বিপদ হতে পারত। অর্থাৎ ৭ নম্বর মনে করে সাইক্লোন শেল্টারে না যাওয়াদের মধ্যে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটতে পারত।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টি কিন্তু বারবার তার গতি পরিবর্তন করেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে সেটি বুঝতে পারাও সহজ হয়েছে। কাজেই পুরো বিভাগীয় অঞ্চলের জন্য একই সিগন্যালিং থেকে বেরিয়ে এসে স্থানীয় কমিউনিটি রেডিও ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য সম্ভাব্য আঘাতের চিত্রটি সহজে তুলে ধরতে পারলে মানুষ অধিকতর সচেতন হয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে পারত।
আমাদের সতর্কীকরণ ভাষা অনেকটা এ রকম, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখন অমুক বন্দর থেকে ৩০০ কিমি উত্তর বা দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এত এত। এটি এত বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলে এতটা থেকে এতটা সময়ের মধ্যে আঘাত হানতে পারে। এ সময় পাঁচ থেকে আট ফুট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতে পারে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো, এমন ভাষা সাধারণ মানুষ ঠিক কতটা বুঝতে পারে?
তার চেয়ে ভালো হয় স্থানীয়ভিত্তিক একটি আপেক্ষিক চিত্র তুলে ধরতে পারলে। যেমন স্থানীয় একটি নির্দিষ্ট স্থাপনা অথবা স্কুল, কলেজ বা বাজারে কত ফুট পানি ওঠার আশঙ্কা আছে, সেটি জানাতে পারলে মানুষ তার সঙ্গে নিজের বাড়িটি মিলিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এ ছাড়া দেখা গেছে, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের পর আমাদের দুর্বলতার চিত্রগুলো সামনে আসে। ‘এই’ প্রকল্পের পরিকল্পনা ঠিক হয়নি, তো ‘ওখানে’ বাঁধভাঙায় ঠিকাদারের গাফিলতি ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই আমাদের এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে প্রতিবছর। এমনকি একাধিকবার। কাজেই বাঁধ ভেঙে প্রতিবার হাজার হাজার চিংড়িঘের ভেসে যাওয়া বা ফসলের ক্ষতি আমরা এখনো কেন ঠেকাতে পারছি না?
এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে দেওয়া ড. আইনুন নিশাতের বিশেষজ্ঞ মতটি প্রণিধানযোগ্য। তাঁর ভাষায়, ‘পরিকল্পনার দায়িত্বে যাঁরা, তাঁদের পড়ানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে–বুয়েট, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর অথবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে প্রকল্পের মূল্যায়ন করতে হবে। দেখতে হবে দুর্বলতা কোথায়। ভুলভ্রান্তি কী আছে? উপকূলে বাঁধগুলো ভেঙে গেছে। মন্ত্রীরা আছেন—পানিসম্পদমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী। পানিসচিব, দুর্যোগসচিব। এঁরা কি মূল্যায়ন করতে পারেন না? বাঁধগুলোর দুর্বলতা কোথায়? কোথায় ভেঙে যাবে? ঢাকা, বরিশাল শহরে বৃষ্টি হয়েছে, পানি জমেছে। এই যে মেয়র সাহেবরা, কমিশনার সাহেবরা, ডিসি সাহেবরা, সচিব সাহেবরা, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা—এঁরা কি গাধা না গরু? আগে কী হয়েছে, তা দেখার বিষয় তাঁদের পড়ানো হয়নি। এঁরা ডিগ্রি পেয়েছেন কী করে! এঁদের তো চাকরি যাওয়া উচিত। এটা তো নতুন না। দুবার-তিনবার করে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। কেন আগেরটা কাজ করেনি, সেটা মূল্যায়ন করবে না? এটা খুবই সহজ। আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এক মাস অথবা এক বছর পরেই ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। এই বছর কোথায় কোথায় ব্যর্থ হয়েছে, সেটার মূল্যায়ন করে সামনের ঘটনার জন্য শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলোর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে...।’
পুরো বিষয়টি ঠিক এমনই। পূর্বের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও তাতে রাজনৈতিকভাবে তুষ্ট না হয়ে ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে শতভাগ সততা ও আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটাতে পারলে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে বলেই বোধ হয়।
লেখক: কলেজ শিক্ষক
কম শক্তি নিয়ে আঘাত করলেও উপকূলজুড়ে তাণ্ডবের বড় চিহ্ন রেখে গেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এরই মধ্যে জেনে গেছি আমরা। সরকারি হিসাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ভেসে গেছে চিংড়িঘের। প্রাণ গেছে মানুষের। এই লেখা যখন লিখছি, তখন প্রাণহানির সংখ্যা ২৭ থেকে ৩৬-এ পৌঁছেছে, নিখোঁজ রয়েছে ৭ জন। দৈনিক আজকের পত্রিকায় ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত ‘ক্ষতির নতুন চিত্র সামনে আসছে’ শীর্ষক সংবাদ থেকে বুঝতে পারলাম, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
গত কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড়ে এত বেশি মানুষের মৃত্যু হয়নি। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে কম বিবেচনা করা হয় যদি মৃত্যুর সংখ্যা সর্বনিম্ন রাখা যায়। সেই দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। এবারের মৃত্যুর ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশ ঝড়ে বসতভিটার গাছ ভেঙে পড়ে, যা অনভিপ্রেত। উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অনুপযুক্ত এসব গাছ দ্রুত বর্ধনশীল বলে মানুষ এগুলো লাগিয়েছে, যা ঠিক হয়নি। কাজেই অঞ্চলভেদে গাছ লাগানোর একটি গাইডলাইন এখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
সমূহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে এবারও হিমশিম খেতে হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। তাঁদের ভাষ্যমতে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে, এমন কথা তাঁরা বিশ্বাস করছেন না। তার একটা মানে হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস যথাযথ হয়নি। তা ছাড়া ঝড়ের সময়ে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে অনীহার একটি কারণ ঘরবাড়ি ও সহায়সম্পদ। তার ওপর সাইক্লোন শেল্টারগুলোর পরিবেশও অতটা ভালো নয়। মাথাপিছু জায়গা বরাদ্দ দুই বর্গফুটের মতো, কাজেই একসঙ্গে এত মানুষের গাদাগাদি করে দীর্ঘ সময় থাকা অনেক কষ্টকর।
আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কীকরণের ভাষাও সাধারণ মানুষদের জন্য সহজবোধ্য নয়। দেখা গেছে পুরো একটি বিভাগের জন্য একই সতর্কসংকেত থাকে, ফলে গড়পড়তা একটা প্রস্তুতি থাকে সবার মধ্যে। কিন্তু অনেক দুর্গম এলাকা আছে যেগুলোর ওপর ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবটি অন্য অনেক স্থানের তুলনায় বেশি। ফলে নির্দিষ্ট নম্বরের সতর্কসংকেতে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যেমন এবারের সতর্কসংকেত ছিল ৭। মানুষ মনে করতে পারে, ১০ নম্বর যেহেতু নয়, সেহেতু বিপদ সামান্য।
এবার সিত্রাং বৃষ্টি ঝরিয়ে দ্রুত দুর্বল হয়ে যাওয়ায় উপকূলে আঘাতের সময় ভাটা ছিল। ঝড়টি দ্রুত দুর্বল না হয়ে যদি শক্তিশালী হয়ে জোয়ারের সময়ে আঘাত হানত, তাহলে ৭ নম্বরেও ১০ নম্বরের সমান বিপদ হতে পারত। অর্থাৎ ৭ নম্বর মনে করে সাইক্লোন শেল্টারে না যাওয়াদের মধ্যে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটতে পারত।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টি কিন্তু বারবার তার গতি পরিবর্তন করেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে সেটি বুঝতে পারাও সহজ হয়েছে। কাজেই পুরো বিভাগীয় অঞ্চলের জন্য একই সিগন্যালিং থেকে বেরিয়ে এসে স্থানীয় কমিউনিটি রেডিও ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য সম্ভাব্য আঘাতের চিত্রটি সহজে তুলে ধরতে পারলে মানুষ অধিকতর সচেতন হয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে পারত।
আমাদের সতর্কীকরণ ভাষা অনেকটা এ রকম, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখন অমুক বন্দর থেকে ৩০০ কিমি উত্তর বা দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এত এত। এটি এত বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলে এতটা থেকে এতটা সময়ের মধ্যে আঘাত হানতে পারে। এ সময় পাঁচ থেকে আট ফুট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতে পারে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো, এমন ভাষা সাধারণ মানুষ ঠিক কতটা বুঝতে পারে?
তার চেয়ে ভালো হয় স্থানীয়ভিত্তিক একটি আপেক্ষিক চিত্র তুলে ধরতে পারলে। যেমন স্থানীয় একটি নির্দিষ্ট স্থাপনা অথবা স্কুল, কলেজ বা বাজারে কত ফুট পানি ওঠার আশঙ্কা আছে, সেটি জানাতে পারলে মানুষ তার সঙ্গে নিজের বাড়িটি মিলিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এ ছাড়া দেখা গেছে, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের পর আমাদের দুর্বলতার চিত্রগুলো সামনে আসে। ‘এই’ প্রকল্পের পরিকল্পনা ঠিক হয়নি, তো ‘ওখানে’ বাঁধভাঙায় ঠিকাদারের গাফিলতি ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই আমাদের এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে প্রতিবছর। এমনকি একাধিকবার। কাজেই বাঁধ ভেঙে প্রতিবার হাজার হাজার চিংড়িঘের ভেসে যাওয়া বা ফসলের ক্ষতি আমরা এখনো কেন ঠেকাতে পারছি না?
এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে দেওয়া ড. আইনুন নিশাতের বিশেষজ্ঞ মতটি প্রণিধানযোগ্য। তাঁর ভাষায়, ‘পরিকল্পনার দায়িত্বে যাঁরা, তাঁদের পড়ানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে–বুয়েট, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর অথবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে প্রকল্পের মূল্যায়ন করতে হবে। দেখতে হবে দুর্বলতা কোথায়। ভুলভ্রান্তি কী আছে? উপকূলে বাঁধগুলো ভেঙে গেছে। মন্ত্রীরা আছেন—পানিসম্পদমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী। পানিসচিব, দুর্যোগসচিব। এঁরা কি মূল্যায়ন করতে পারেন না? বাঁধগুলোর দুর্বলতা কোথায়? কোথায় ভেঙে যাবে? ঢাকা, বরিশাল শহরে বৃষ্টি হয়েছে, পানি জমেছে। এই যে মেয়র সাহেবরা, কমিশনার সাহেবরা, ডিসি সাহেবরা, সচিব সাহেবরা, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা—এঁরা কি গাধা না গরু? আগে কী হয়েছে, তা দেখার বিষয় তাঁদের পড়ানো হয়নি। এঁরা ডিগ্রি পেয়েছেন কী করে! এঁদের তো চাকরি যাওয়া উচিত। এটা তো নতুন না। দুবার-তিনবার করে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। কেন আগেরটা কাজ করেনি, সেটা মূল্যায়ন করবে না? এটা খুবই সহজ। আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এক মাস অথবা এক বছর পরেই ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। এই বছর কোথায় কোথায় ব্যর্থ হয়েছে, সেটার মূল্যায়ন করে সামনের ঘটনার জন্য শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলোর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে...।’
পুরো বিষয়টি ঠিক এমনই। পূর্বের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও তাতে রাজনৈতিকভাবে তুষ্ট না হয়ে ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে শতভাগ সততা ও আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটাতে পারলে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে বলেই বোধ হয়।
লেখক: কলেজ শিক্ষক
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১২ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১২ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
১২ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
১২ ঘণ্টা আগে