বিভুরঞ্জন সরকার
কুমিল্লা শহরের একটি সুনাম ছিল। গত ১০০ বছরেও কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার কোনো তথ্য কারও জানা নেই। কুমিল্লাকে অনেকে সম্প্রীতির শহর বলে থাকেন। শুধু কুমিল্লা কেন, বাংলাদেশে এমন আরও অনেক শহর ও জনপদ আছে, যেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তো দূরের কথা, হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্ম পালন বা ধর্মীয় উৎসব পালন নিয়ে কখনো কোনো বিরোধ বা অসন্তোষ-অস্থিরতা দেখা যায়নি। ধর্মীয় উৎসব আর জাতীয় উৎসব পালন নিয়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধীন থাকার সময়ও আমাদের এই ভূখণ্ডে বড় কোনো বিরোধ হয়নি। শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক বানিয়েছিল, ধর্মবিশ্বাসকে সামনে এনে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করতে অপচেষ্টা, অপতৎপরতা চালিয়ে দু-একবার দাঙ্গা বাধালেও স্থায়ীভাবে সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট করতে পারেনি। সত্যিকার অর্থেই তখন ‘ধর্ম ছিল যার যার, উৎসব ছিল সবার’। এটা মিছিল-মিটিংয়ে স্লোগান দিয়ে বলা হতো না, বাস্তব জীবনে চর্চা করা হতো।
ঈদ উৎসব কিংবা পূজা উৎসব যেমন হয়েছে, তেমনি বাংলা নববর্ষে বৈশাখী মেলা, পাহাড়িদের বিজু উৎসবও হয়েছে। যে মানুষ মসজিদে নামাজ পড়েছেন, ঈদের জামাতে শরিক হয়েছেন, তিনি দুর্গাপূজার সময় মন্দিরে গিয়ে সন্ধ্যা আরতিও উপভোগ করেছেন, আবার পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন সানন্দে। ইরান, আফগানিস্তান বা অন্য মুসলিমপ্রধান দেশে ইসলামের যে উগ্রতা রয়েছে, আমাদের এখানে তা সেভাবে ছিল না। ওই সব দেশে আর আমাদের দেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারের পটভূমি এক নয়। আমাদের দেশে তলোয়ার হাতে নিয়ে বা যুদ্ধবিগ্রহ করে কেউ ইসলাম প্রচার করেননি, ইসলাম প্রচার করেছেন মূলত সুফি-সাধকেরা। এই সুফি-সাধকেরা বাঙালিত্বের অনেক কিছুর সঙ্গে ইসলামকে সমন্বয় করেছেন।
মসজিদে ও মন্দিরে গিয়ে শিরনি দেওয়ার বিষয়টি এখানে উল্লেখ করা যায়। এটা আসলে একটি লোকজ বিষয়। মাজারে গিয়ে মানত করা, পা ছুঁয়ে সালাম করা—এগুলো দুই সম্প্রদায়ের মানুষই করতেন। ওহাবিরাও কিন্তু এগুলো বন্ধ করতে পারেনি। জামায়াতিদের বিরোধিতা সত্ত্বেও পীর প্রথা বন্ধ হয়নি। এগুলোর মধ্যে মৌলবাদ নেই, বরং হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঐক্যের ধারা রয়েছে। সুন্দরবনে মৌয়ালরা যাচ্ছেন, হিন্দুরা পূজা দিচ্ছেন বনদেবীর আর মুসলমানরা বনবিবির। তফাত দেবী আর বিবির। হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মাঝিরই তো বদর বদর বলে নৌকা বাইতে সমস্যা হয়নি। বদর তো এক লোকজ পীর। এটা সম্ভব হয়েছে এই কারণে যে, সুফিরা বলেননি, আমরাই শ্রেষ্ঠ; কাজেই আমাদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করো, না হলে মারা পড়বে।
হাজার বছরের এই সহিষ্ণুতা ধ্বংস করার সূচনা কখন থেকে? সম্ভবত রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকেই সহিষ্ণুতার উপাদানগুলো ধ্বংস করে বিরোধ ও বিভেদের পাঁয়তারা প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। ব্রিটিশরা ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতি নিয়ে বিরোধ উসকেছে। তারপর হিন্দু এবং মুসলমানের আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে মানুষকে উগ্র এবং মতান্ধ হতে প্ররোচিত করা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর শাসকগোষ্ঠী যা কিছু শুভ ও সুন্দর তাকেই হিন্দুয়ানি বা অনৈসলামিক বলে অগ্রাহ্য করার কৌশল নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু তখনো অধিকাংশ মানুষ যুক্তিহীন উন্মাদনায় মেতে ওঠেনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা উপায়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধের বিষয়টি সামনে এনে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন দমন করতে চেয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির অধিকার আদায়ের সবকিছুকেই পাকিস্তানবিরোধী বা ইসলামবিরোধী বলে প্রচার করেছে। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী ধর্মের নামে মানুষকে যতই বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে, বাঙালির একাংশের মধ্যে ততই বাঙালিত্বকে আঁকড়ে ধরার প্রবণতা বেড়েছে, বাঙালিত্বের চেতনা প্রবল হয়েছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ধর্মীয় ঐক্যের কথা বলে সব বাঙালিকে বিভ্রান্ত করা যায়নি। একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর পত্রিকা ‘সংগ্রাম’-এ বারবার লেখা হয়েছে, পাকিস্তান না থাকলে ইসলাম থাকবে না। কিন্তু এ দেশের মানুষ সে কথা বিশ্বাস করেনি, বেশির ভাগ মানুষ তাতে বিভ্রান্তও হয়নি। ধর্মের কথা বলে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখা যায়নি। মানুষ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি গ্রহণ করেনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আর সাম্প্রদায়িকতার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধারণাটি ভুল ছিল। মানুষের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন রাতারাতি হয় না। শিক্ষার বিস্তার ও অব্যাহত সাংস্কৃতিক চর্চা এবং বাস্তব জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই মানুষের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসে। আর কোনো দিকে মনোযোগ না দিয়ে শুধু সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লিপিবদ্ধ করলেই মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায় না। চেতনাগতভাবে সব মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ না হলে এ নিয়ে অপপ্রচারের সুযোগ থাকে। যারা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে ছিল, তারা শতকণ্ঠে প্রচার চালাতে থাকে যে ধর্মনিরপেক্ষতা হলো আসলে ধর্মহীনতা। রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না এবং রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের হয়ে কারও ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাবে না—এটাই ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বুঝ।
ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয়, সেটা বোঝাতে বঙ্গবন্ধুর আমলে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে কারও কারও ধারণা, এটা করা হয়েছিল সমাজের ভালো হবে এই যুক্তিতে নয়, ধর্মীয় যুক্তিতে। ভারতের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় এ দেশে হিন্দুদের প্রভাব বাড়বে, এমন অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণের জন্যই হয়তো বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন, মাদ্রাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং তাঁর সময়েই বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য হয়েছিল। তিনি বেঁচে থাকলে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আর কী কী করতেন, তা নিয়ে এখন অনুমাননির্ভর আলোচনা নিরর্থক।
তবে মনে রাখার বিষয় এটাই যে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করেছে মাত্র সাড়ে তিন বছর। তারপর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল সাম্প্রদায়িক তথা আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নিয়ে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বিসমিল্লাহ সংযোজন করলেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্র দর্শনে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া তখন থেকেই জোরেশোরে শুরু হয়। সেনাছাউনি থেকে বেরিয়ে ক্ষমতা দখল করে এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তন করে দেশের ইসলামীকরণ সম্পন্ন করেন। খালেদা জিয়াও ধর্ম নিয়ে রাজনীতির ধারার বাইরে গেলেন না। বাংলাদেশ কার্যত চলতে থাকে পাকিস্তানি আদলে। ২১ বছর ধরে একটি প্রজন্মকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে একটি তামসিক চেতনার দিকে। যাঁরা পাকিস্তান ভাঙা রোধ করতে পারেননি, তাঁরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শকে ইসলামি চেতনার পরিপন্থী বলে অপপ্রচার চালাতে থাকেন; যা কিছু পাকিস্তানি তা-ই ভালো, ক্রিকেট থেকে শুরু করে আপেল, মসুর ডাল ইত্যাদি সব। আর যা কিছু বাঙালির নিজস্ব, তাকে দেখা হতে থাকে হিন্দুয়ানি বা ভারতীয় হিসেবে। কপালে টিপ না পরা, রবীন্দ্রসংগীতকে নিরুৎসাহিত করা—এসব পাকিস্তানি আমলেও দেখা গেছে।
টানা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যেও আদর্শিক অবস্থানে দৃঢ় থাকার চেয়ে রাজনৈতিক কৌশলের নামে একধরনের সুবিধাবাদী মানসিকতার প্রসার ঘটে। আয়-উপার্জনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের দেশের অনেকের যাওয়ার সুযোগ হওয়ায় সেসব দেশের পোশাক, ধর্মীয় প্রভাব ইত্যাদি আমাদের দেশে আসার সুযোগ হয়। পেট্রোডলারের আমদানি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখে। মানুষের মধ্যে বাঙালিয়ানার বদলে ইসলামি ভাবধারা বাড়তে থাকে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মানুষের পরিবর্তিত মানসিকতার সঙ্গে সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। যদিও এমনটা মনে করা হয় যে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারে উদারতা দেখালেও পাকিস্তান রক্ষার জন্য যাঁরা মরিয়া ছিলেন, সেই রাজাকার, আলবদর, সাম্প্রদায়িক শক্তি কখনো আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় না, দেবে না। ধর্মের নামে এখন নিজেদের কোরবানি করার ঘোষণা দিলেও পাকিস্তান ভাঙার ‘গুনাহ’ থেকে আওয়ামী লীগের রেহাই নেই।
দলের আদর্শিক অবস্থান নড়বড়ে হওয়ার কারণেই সম্ভবত আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে নিয়মিত বিরতি দিয়ে গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কথা বলে সংখ্যালঘু হিন্দু বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটছে। হিন্দু বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে—এই অভিযোগে রামুতে বৌদ্ধদের ওপর, নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর, তারপর গোবিন্দগঞ্জ, ভোলা কিংবা শাল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হামলা-পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে যে কোনো ঘটনার পেছনেই প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘু কারও সংশ্লিষ্টতা নেই। তাদের ওপর হামলা চালানোর অসৎ পরিকল্পনা থেকেই অন্য কেউ ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এটাই যে, কোনো ঘটনার পেছনের প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে যারা সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়, যারা বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুশূন্য করতে চায়, তারা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য মনে করছে। এর ধারাবাহিকতায়ই এবার দুর্গাপূজার সময় সম্প্রীতির শহর কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটল অপ্রীতিকর ঘটনা। কয়েক জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। কুমিল্লার ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি প্রশাসন দৃশ্যত কড়া অবস্থানে থাকলেও এখন কেউ আর কাউকে বিশ্বাস করে না। আগে একাধিক ঘটনায় মানুষ দেখেছে ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’। রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, শাল্লা বা অন্য জায়গায় যদি প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যেত তাহলে মানুষ বুঝত সরকার কাউকে ছাড় দেওয়ার অবস্থানে নেই। হয়তো কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্লট রচনার সাহসও কেউ
দেখাত না।
সব ধর্মবিশ্বাসীদের কাছেই নিজ নিজ ধর্ম শ্রেষ্ঠ। মুসলমানদেরই শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নেই—এই ধারণা রাষ্ট্রীয় বা সরকারি বা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অপশক্তি আশকারা পেয়ে যায়। আমাদের দেশে শুধু নয়, পৃথিবীজুড়েই এখন ধর্মান্ধতার, উগ্রতার বাজার রমরমা। ভিন্নমত, ভিন্নধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সত্যের চেয়ে গুজব, ঘটনার চেয়ে রটনার প্রতি আমাদের দেশের অনেক মানুষ বেশি মাত্রায় আস্থা রাখছে। কেন এমনটা হচ্ছে, গলদ বা দুর্বলতা কোথায়, তা খতিয়ে দেখে প্রতিকারের পথে হাঁটার এখনই উপযুক্ত সময়। অনুদারতা ও সংকীর্ণতার যে পথযাত্রা শুরু হয়েছে, তার শেষ কোথায়, তা কেউ বলতে পারছে না।
রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা খুব মনে পড়ছে:
নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস–
বিদায় নেবার আগে তাই
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।
কুমিল্লা শহরের একটি সুনাম ছিল। গত ১০০ বছরেও কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার কোনো তথ্য কারও জানা নেই। কুমিল্লাকে অনেকে সম্প্রীতির শহর বলে থাকেন। শুধু কুমিল্লা কেন, বাংলাদেশে এমন আরও অনেক শহর ও জনপদ আছে, যেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তো দূরের কথা, হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্ম পালন বা ধর্মীয় উৎসব পালন নিয়ে কখনো কোনো বিরোধ বা অসন্তোষ-অস্থিরতা দেখা যায়নি। ধর্মীয় উৎসব আর জাতীয় উৎসব পালন নিয়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধীন থাকার সময়ও আমাদের এই ভূখণ্ডে বড় কোনো বিরোধ হয়নি। শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক বানিয়েছিল, ধর্মবিশ্বাসকে সামনে এনে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করতে অপচেষ্টা, অপতৎপরতা চালিয়ে দু-একবার দাঙ্গা বাধালেও স্থায়ীভাবে সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট করতে পারেনি। সত্যিকার অর্থেই তখন ‘ধর্ম ছিল যার যার, উৎসব ছিল সবার’। এটা মিছিল-মিটিংয়ে স্লোগান দিয়ে বলা হতো না, বাস্তব জীবনে চর্চা করা হতো।
ঈদ উৎসব কিংবা পূজা উৎসব যেমন হয়েছে, তেমনি বাংলা নববর্ষে বৈশাখী মেলা, পাহাড়িদের বিজু উৎসবও হয়েছে। যে মানুষ মসজিদে নামাজ পড়েছেন, ঈদের জামাতে শরিক হয়েছেন, তিনি দুর্গাপূজার সময় মন্দিরে গিয়ে সন্ধ্যা আরতিও উপভোগ করেছেন, আবার পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন সানন্দে। ইরান, আফগানিস্তান বা অন্য মুসলিমপ্রধান দেশে ইসলামের যে উগ্রতা রয়েছে, আমাদের এখানে তা সেভাবে ছিল না। ওই সব দেশে আর আমাদের দেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারের পটভূমি এক নয়। আমাদের দেশে তলোয়ার হাতে নিয়ে বা যুদ্ধবিগ্রহ করে কেউ ইসলাম প্রচার করেননি, ইসলাম প্রচার করেছেন মূলত সুফি-সাধকেরা। এই সুফি-সাধকেরা বাঙালিত্বের অনেক কিছুর সঙ্গে ইসলামকে সমন্বয় করেছেন।
মসজিদে ও মন্দিরে গিয়ে শিরনি দেওয়ার বিষয়টি এখানে উল্লেখ করা যায়। এটা আসলে একটি লোকজ বিষয়। মাজারে গিয়ে মানত করা, পা ছুঁয়ে সালাম করা—এগুলো দুই সম্প্রদায়ের মানুষই করতেন। ওহাবিরাও কিন্তু এগুলো বন্ধ করতে পারেনি। জামায়াতিদের বিরোধিতা সত্ত্বেও পীর প্রথা বন্ধ হয়নি। এগুলোর মধ্যে মৌলবাদ নেই, বরং হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঐক্যের ধারা রয়েছে। সুন্দরবনে মৌয়ালরা যাচ্ছেন, হিন্দুরা পূজা দিচ্ছেন বনদেবীর আর মুসলমানরা বনবিবির। তফাত দেবী আর বিবির। হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মাঝিরই তো বদর বদর বলে নৌকা বাইতে সমস্যা হয়নি। বদর তো এক লোকজ পীর। এটা সম্ভব হয়েছে এই কারণে যে, সুফিরা বলেননি, আমরাই শ্রেষ্ঠ; কাজেই আমাদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করো, না হলে মারা পড়বে।
হাজার বছরের এই সহিষ্ণুতা ধ্বংস করার সূচনা কখন থেকে? সম্ভবত রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকেই সহিষ্ণুতার উপাদানগুলো ধ্বংস করে বিরোধ ও বিভেদের পাঁয়তারা প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। ব্রিটিশরা ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতি নিয়ে বিরোধ উসকেছে। তারপর হিন্দু এবং মুসলমানের আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে মানুষকে উগ্র এবং মতান্ধ হতে প্ররোচিত করা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর শাসকগোষ্ঠী যা কিছু শুভ ও সুন্দর তাকেই হিন্দুয়ানি বা অনৈসলামিক বলে অগ্রাহ্য করার কৌশল নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু তখনো অধিকাংশ মানুষ যুক্তিহীন উন্মাদনায় মেতে ওঠেনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা উপায়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধের বিষয়টি সামনে এনে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন দমন করতে চেয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির অধিকার আদায়ের সবকিছুকেই পাকিস্তানবিরোধী বা ইসলামবিরোধী বলে প্রচার করেছে। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী ধর্মের নামে মানুষকে যতই বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে, বাঙালির একাংশের মধ্যে ততই বাঙালিত্বকে আঁকড়ে ধরার প্রবণতা বেড়েছে, বাঙালিত্বের চেতনা প্রবল হয়েছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ধর্মীয় ঐক্যের কথা বলে সব বাঙালিকে বিভ্রান্ত করা যায়নি। একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর পত্রিকা ‘সংগ্রাম’-এ বারবার লেখা হয়েছে, পাকিস্তান না থাকলে ইসলাম থাকবে না। কিন্তু এ দেশের মানুষ সে কথা বিশ্বাস করেনি, বেশির ভাগ মানুষ তাতে বিভ্রান্তও হয়নি। ধর্মের কথা বলে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখা যায়নি। মানুষ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি গ্রহণ করেনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আর সাম্প্রদায়িকতার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধারণাটি ভুল ছিল। মানুষের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন রাতারাতি হয় না। শিক্ষার বিস্তার ও অব্যাহত সাংস্কৃতিক চর্চা এবং বাস্তব জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই মানুষের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসে। আর কোনো দিকে মনোযোগ না দিয়ে শুধু সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লিপিবদ্ধ করলেই মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায় না। চেতনাগতভাবে সব মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ না হলে এ নিয়ে অপপ্রচারের সুযোগ থাকে। যারা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে ছিল, তারা শতকণ্ঠে প্রচার চালাতে থাকে যে ধর্মনিরপেক্ষতা হলো আসলে ধর্মহীনতা। রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না এবং রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের হয়ে কারও ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাবে না—এটাই ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বুঝ।
ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয়, সেটা বোঝাতে বঙ্গবন্ধুর আমলে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে কারও কারও ধারণা, এটা করা হয়েছিল সমাজের ভালো হবে এই যুক্তিতে নয়, ধর্মীয় যুক্তিতে। ভারতের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় এ দেশে হিন্দুদের প্রভাব বাড়বে, এমন অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণের জন্যই হয়তো বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন, মাদ্রাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং তাঁর সময়েই বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য হয়েছিল। তিনি বেঁচে থাকলে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আর কী কী করতেন, তা নিয়ে এখন অনুমাননির্ভর আলোচনা নিরর্থক।
তবে মনে রাখার বিষয় এটাই যে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করেছে মাত্র সাড়ে তিন বছর। তারপর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল সাম্প্রদায়িক তথা আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নিয়ে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বিসমিল্লাহ সংযোজন করলেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্র দর্শনে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া তখন থেকেই জোরেশোরে শুরু হয়। সেনাছাউনি থেকে বেরিয়ে ক্ষমতা দখল করে এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তন করে দেশের ইসলামীকরণ সম্পন্ন করেন। খালেদা জিয়াও ধর্ম নিয়ে রাজনীতির ধারার বাইরে গেলেন না। বাংলাদেশ কার্যত চলতে থাকে পাকিস্তানি আদলে। ২১ বছর ধরে একটি প্রজন্মকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে একটি তামসিক চেতনার দিকে। যাঁরা পাকিস্তান ভাঙা রোধ করতে পারেননি, তাঁরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শকে ইসলামি চেতনার পরিপন্থী বলে অপপ্রচার চালাতে থাকেন; যা কিছু পাকিস্তানি তা-ই ভালো, ক্রিকেট থেকে শুরু করে আপেল, মসুর ডাল ইত্যাদি সব। আর যা কিছু বাঙালির নিজস্ব, তাকে দেখা হতে থাকে হিন্দুয়ানি বা ভারতীয় হিসেবে। কপালে টিপ না পরা, রবীন্দ্রসংগীতকে নিরুৎসাহিত করা—এসব পাকিস্তানি আমলেও দেখা গেছে।
টানা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যেও আদর্শিক অবস্থানে দৃঢ় থাকার চেয়ে রাজনৈতিক কৌশলের নামে একধরনের সুবিধাবাদী মানসিকতার প্রসার ঘটে। আয়-উপার্জনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের দেশের অনেকের যাওয়ার সুযোগ হওয়ায় সেসব দেশের পোশাক, ধর্মীয় প্রভাব ইত্যাদি আমাদের দেশে আসার সুযোগ হয়। পেট্রোডলারের আমদানি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখে। মানুষের মধ্যে বাঙালিয়ানার বদলে ইসলামি ভাবধারা বাড়তে থাকে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মানুষের পরিবর্তিত মানসিকতার সঙ্গে সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। যদিও এমনটা মনে করা হয় যে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারে উদারতা দেখালেও পাকিস্তান রক্ষার জন্য যাঁরা মরিয়া ছিলেন, সেই রাজাকার, আলবদর, সাম্প্রদায়িক শক্তি কখনো আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় না, দেবে না। ধর্মের নামে এখন নিজেদের কোরবানি করার ঘোষণা দিলেও পাকিস্তান ভাঙার ‘গুনাহ’ থেকে আওয়ামী লীগের রেহাই নেই।
দলের আদর্শিক অবস্থান নড়বড়ে হওয়ার কারণেই সম্ভবত আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে নিয়মিত বিরতি দিয়ে গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কথা বলে সংখ্যালঘু হিন্দু বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটছে। হিন্দু বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে—এই অভিযোগে রামুতে বৌদ্ধদের ওপর, নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর, তারপর গোবিন্দগঞ্জ, ভোলা কিংবা শাল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হামলা-পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে যে কোনো ঘটনার পেছনেই প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘু কারও সংশ্লিষ্টতা নেই। তাদের ওপর হামলা চালানোর অসৎ পরিকল্পনা থেকেই অন্য কেউ ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এটাই যে, কোনো ঘটনার পেছনের প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে যারা সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়, যারা বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুশূন্য করতে চায়, তারা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য মনে করছে। এর ধারাবাহিকতায়ই এবার দুর্গাপূজার সময় সম্প্রীতির শহর কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটল অপ্রীতিকর ঘটনা। কয়েক জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। কুমিল্লার ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি প্রশাসন দৃশ্যত কড়া অবস্থানে থাকলেও এখন কেউ আর কাউকে বিশ্বাস করে না। আগে একাধিক ঘটনায় মানুষ দেখেছে ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’। রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ, শাল্লা বা অন্য জায়গায় যদি প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যেত তাহলে মানুষ বুঝত সরকার কাউকে ছাড় দেওয়ার অবস্থানে নেই। হয়তো কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্লট রচনার সাহসও কেউ
দেখাত না।
সব ধর্মবিশ্বাসীদের কাছেই নিজ নিজ ধর্ম শ্রেষ্ঠ। মুসলমানদেরই শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নেই—এই ধারণা রাষ্ট্রীয় বা সরকারি বা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অপশক্তি আশকারা পেয়ে যায়। আমাদের দেশে শুধু নয়, পৃথিবীজুড়েই এখন ধর্মান্ধতার, উগ্রতার বাজার রমরমা। ভিন্নমত, ভিন্নধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সত্যের চেয়ে গুজব, ঘটনার চেয়ে রটনার প্রতি আমাদের দেশের অনেক মানুষ বেশি মাত্রায় আস্থা রাখছে। কেন এমনটা হচ্ছে, গলদ বা দুর্বলতা কোথায়, তা খতিয়ে দেখে প্রতিকারের পথে হাঁটার এখনই উপযুক্ত সময়। অনুদারতা ও সংকীর্ণতার যে পথযাত্রা শুরু হয়েছে, তার শেষ কোথায়, তা কেউ বলতে পারছে না।
রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা খুব মনে পড়ছে:
নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস–
বিদায় নেবার আগে তাই
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১৭ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১৭ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
১৮ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
১৮ ঘণ্টা আগে