ফারুক মেহেদী
আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য খবরটি বেশ চিত্তাকর্ষক। আপনারা আরও একটি ব্যাংকের মালিক হতে যাচ্ছেন! তবে সাধারণ ব্যবসায়ী নয়; আপনাকে হতে হবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা। যেহেতু আপনি এমনিতেই বড় ও সফল ব্যবসায়ী। আপনার অনেক আছে; টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক, বিমা, কারখানা, প্রভাব, প্রতিপত্তি—কোনোটারই কমতি নেই। তারপরও আপনি আরও সুযোগ পাবেন! পেতেই থাকবেন!
এমনই আয়োজন চলছে আপনার জন্য। আপনি বা আপনার গোত্রীয় যাঁরাই আছেন, তাঁরা যেহেতু দেশের ভাগ্যবান শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী; আপনাদের উপরমহল কানেকশন যেহেতু অনেক শক্ত— তাই এ শক্তিতে ভর করে আপনারা যা চান তা-ই পাচ্ছেন। সরকার না চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য তা দিতে হয়। আপনারা চেয়ে যাচ্ছেন, আর সরকার বাহাদুরও ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অকাতরে দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে আজ আপনারা সম্মাননীয় শ্রেণিতে, সবাইকে ছাড়িয়ে। ছোট, ক্ষুদ্ররা ব্যবসায়ী তকমা পেলেও তাঁরা আপনাদের মতো কুলীন নন। তাঁরা আপনাদের উচ্চতার কাছে তুচ্ছ।
আপনারা পাচ্ছেন, আর তাঁরা দেখছেন। আপনারা মঞ্চ আলো করে বসে আছেন, তাঁরা দর্শকের সারিতে বসে হাততালি দিচ্ছেন। আপনারা মহান হচ্ছেন। ধনী থেকে আরও ধনী—ফুটপাত থেকে অভিজাত হোটেলে, মতিঝিল-কারওয়ান বাজার থেকে জাতীয় সংসদ—সর্বত্র এখন আপনাদেরই জয়জয়কার।
তারপরও আপনারাই শিরোনাম। আপনারাই গল্পের নায়ক! জি, বলছি। এত পাওয়ার পরও আপনারা আরও চাচ্ছেন। আর এটি নিয়েই আজ একটু আলোচনা করব। খবরে দেখলাম, আপনারা মানে আপনাদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই একটি ব্যাংক চেয়েছে সরকারের কাছে। সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি আলাদা ব্যাংক দিতে হবে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজও। বাহ, বেশ প্রস্তাব! জাতি অনেক খুশি হয়েছে আপনাদের এ প্রস্তাবে! কেনই–বা হবে না। আপনাদের ভূরি ভূরি আছে; তাতে কী, আপনারা আরও একটি ব্যাংক চাইতেই পারেন। একটি ব্যাংকই তো। দেশের অর্থনীতিতে আপনাদের অবদান কি কম নাকি? সবই তো আপনারা চালাচ্ছেন। শিল্পকারখানা, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ, উদ্যোগ-কর্মসংস্থান, রাজস্ব, অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতি—সবই আপনাদের হাত ধরে! এটি কে না জানে? এখন আপনাদের চাওয়ামাত্র তা দিয়ে সরকারের ধন্য হওয়া উচিত। আর আমরা যারা সাধারণ নাগরিক কোনোমতে বেঁচেবর্তে আছি, তাদের আনন্দের সঙ্গে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা উচিত।
আপনারা জায়গার অভাবে কারখানা করতে পারছেন না। কারখানার জায়গা পেলেন বিশেষ সুবিধায়। তাতে বিশেষ ছাড়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাও হলো। আপনারা বললেন কারখানা চালাতে পারছেন না, ঋণ দিতে হবে স্বল্প সুদে। ঋণ পেলেন। বললেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না; শুল্কমুক্ত সুবিধায় শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আনতে দিতে হবে। সুবিধা পেলেন। বললেন খরচ বেড়ে গেছে, টিকতে পারছেন না; কর ছাড় দিতে হবে। পেলেন তাও। এভাবে যখন যা চান, যেভাবে চান—সরকার দিয়ে যাচ্ছে। এরপরও কর ফাঁকি দেন। সরকার যেহেতু চাওয়ামাত্র আপনাদের সব দিয়ে দিচ্ছে; আপনাদের উচিত ছিল সরকারকে সাহায্য করা। হ্যাঁ, আপনারা যে সবাই ফাঁকি দেন, তা নয়; কেউ কেউ দেন। কেউ কর ফাঁকি দেন, কেউ বিল খেলাপি হন, কেউ বা হন ঋণখেলাপি। এভাবে কোনো না কোনো তালিকায় কমবেশি আছেন আপনারা। যখন আপনাদের পেতে হবে, তখন আপনারা একাট্টা। বিদ্যুৎ নাই, গ্যাস নাই, পানি নাই, বন্দর অদক্ষ, সড়ক-মহাসড়ক বেহাল—এসব অভিযোগে তটস্থ করে রাখেন সরকারকে। এসব লাগবে। কিন্তু এসব করতে যে টাকা লাগবে, তা কে দেবে? সরকার তো কোনো ব্যক্তি নয়; একটি পদ্ধতি। আপনারা, আমরা যাঁরা করদাতা, তাঁরা ঠিকমতো কর দিলেই না সরকারের হাতে টাকা আসবে। সরকার তা দিয়ে আপনার চাহিদামতো রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ-গ্যাস-বন্দর-অবকাঠামো তৈরি করবে। চুন থেকে পান খসলেই আপনারা সব সোচ্চার। এটা নাই, ওটা নাই। আবার এটা করার জন্য যখন কর দিতে হবে, তখন আপনারা নির্বিকার। অনেক ক্ষেত্রে কর মওকুফে তৎপর।
কর আপনারা দিতেই চান না। যখনই বাজেট আসে, আপনারা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে এনবিআরের সঙ্গে দেনদরবারে বসে যান।
এটার ওপর কর দিতে চান না। ওটাতে কর নিলে ব্যবসা বসে যাবে। ওই খাতের কর কমাতে হবে কিংবা মাফ করতে হবে। আরও কত অজুহাত। আপনারাই তো করেন। চাওয়ার বেলায় আপনারা একজোট, আবার না দেওয়ার বেলায়ও। তাহলে সরকার কীভাবে দেশটাকে উন্নত করবে? আবার বলেন, দাতাদের কাছ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নেওয়া যাবে না।
সরকার দেশকে ঋণের ভারে জর্জরিত করছে ইত্যাদি। আপনারা সরকারকে দিতে চান না, আবার নিতে চান। নিতে নিতে আর বাকি নেই কিছু। তারপরও চাই। সবশেষ চাইলেন আলাদা একটি ব্যাংক। আপনাদের শীর্ষদের সবারই কমবেশি ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। কারও একাধিক আছে।
আপনারা নিজেদের ব্যাংক থেকে টাকা নেন, ব্যবসা করেন। কেউ কেউ নিতে নিতে ব্যাংক ফতুর করে ফেলেন। তারপরও নেন। সাধারণ গ্রাহকের আমানতের টাকাও আপনাদের নজর এড়ায় না। পরে পুরো ব্যাংককে দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে যান। এ খবর এখন আর পুরোনো নয়। আপনাদেরই কেউ কেউ এক-দুই কোটি নয়, শতকোটি নয়, হাজার হাজার কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন—এমন ঘটনা অহরহ। নিজের ব্যাংক খালি করেছেন, এরপর হাত দিয়েছেন আরেকজনের ব্যাংকে। তিনিও আপনার বন্ধু-সহযোগী-সহকর্মী। আপনারা মিলেমিশেই করেন। আপনার ব্যাংক থেকে তাঁকে দেন; আর তাঁর ব্যাংক থেকে আপনি নেন। এভাবে আপনারা একেকজন গলায় গলায় ভাব করে ব্যাংকের টাকায় সব করেন। পরে বলেন, সব লোকসান। ব্যবসা লোকসান, উদ্যোগ দেউলিয়া। আপনাদের সব শেষ। আপনাদেরই কেউ কর ফাঁকি, বিল খেলাপি, ঋণখেলাপি হয়ে সরকারের খাতায় ছন্নছাড়া। এই আপনারা একদিকে দেউলিয়া, অন্যদিকে বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চষে বেড়ান সর্বত্র। রপ্তানি করেন, টাকার সবটা দেশে আনেন না। আবার দেশে আয় করেন, বাড়ি বানান বিদেশে।
কতভাবে যে ক্যারিক্যাচার করে দেশের টাকাটা পাচার করে আপনাদের কেউ কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে বাড়ি বানাচ্ছেন—তার ইয়ত্তা নেই।
করোনাভাইরাস বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-ভূমিকম্প-বন্যা-খড়া—সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আবার আপনারাই সবার সামনে। শূন্য হাত বাড়িয়ে দেন সরকারের সহায়তার জন্য। কারখানায় বেতন দিতে পারছেন না, সরকারের কাছে হাত পাতেন। প্রণোদনার সময়ও সবার আগে আপনারা। এভাবে সবকিছুতে শুধুই আপনারা। আবার রাজনীতিতেও আপনারা। মতিঝিল-কারওয়ানবাজার-খাতুনগঞ্জ থেকে সংসদ ভবনেও আপনাদের পদধুলি। দিন দিনই সংখ্যা বাড়ছে সেখানে। বলতে পারেন, এখন কোথাও আপনারা আর পিছিয়ে নেই। সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন! ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-রাজনীতি—সবখানেই শীর্ষে আপনারা! তাই ধরেই নিয়েছেন, আরও একটি নতুন ব্যাংকও চাই আপনাদের। এটি হবে একান্তই আপনাদের সবার। দেশের প্রায় ৬০টি ব্যাংকের প্রায় ৪০টির মতো আপনাদের মালিকানায় হওয়ার পরও তাতে চলছে না। আরও একটি ব্যাংক না হলে কী যেন নাই আপনাদের—এমন অনুভূতি হয়! কেন ভাইসব, সবই কেন লাগবে আপনাদের? কিছু কিছু খাতে কি একটু ছাড় দেওয়া যায় না? একটু কি যৌক্তিক হওয়া যায় না? অর্থনীতি-রাজনীতিতে আপনাদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব আছে আমরা জানি। তাই বলে এতটা কেন? যেগুলো আছে, সেগুলো আরেকটু ভালোভাবে চালানো যায় না? আপনারা যাঁরা যেসব ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছেন—এগুলোর দিকে একটু আন্তরিকভাবে তাকান। দেখেন কী হাল হয়েছে এসবের। মানুষের আস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে দেখেন।
আপনাদের কারও কারও কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্বমানে থাকা তো দূরের কথা, একেবারে ভঙ্গুর দশায় পৌছেছে ব্যাংকিং খাত। লুটপাট, দুর্নীতি আর কুশাসনে এ খাতটির এখন মরণপণ অবস্থা। আগে খাতটিকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনুন। পরিচর্যা করুন। সত্যিকার অর্থে একে মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরি করুন। এরপর না হয় আরেকটি ব্যাংক নিন। একটি কেন প্রয়োজনে সরকার আরও ১০টি ব্যাংক দিক আপনাদের। না হলে আরও নিন। এতে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে তার আগে আপনারা যাঁরা শীর্ষ আছেন, ব্যাংক-বিমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মালিক আছেন, তাঁরা এবার ক্ষান্ত দেন।
জানি আমার কথায় আপনারা অনেকে নাখোশ হয়েছেন। অনেকে উড়িয়ে দেবেন। দাবি থেকে একচুলও নড়বেন না—এটাই স্বাভাবিক। সরকারকে ঠিকই চাপ দিয়ে যাবেন। সরকার বাহাদুরও আপনাদের প্রতি নতজানু। এটাও আমি জানি। না হয়েই বা কি করবে সরকার? দাবি না মানলে আপনারা সব একজোট হয়ে বসে পড়বেন। নীরব হয়ে দেখবেন কী হয়। একে একে বন্ধ করে দেবেন শিল্পকারখানা, বেচাকেনা। ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন আমদানি বন্ধ করে দেবেন। হু হু করে দাম বাড়তে থাকবে—সরকারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়বে। বল তখন আপনাদের কোর্টে। কী আর করা, সরকার আপনাদের কথা মেনে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ করবে।
আমরা কী এমন দৃশ্য না ভেবে উল্টো ভাবতে পারি না? আমরা কি এমনটি চিন্তা করতে পারি না যে আপনারা স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারকে বলবেন—এত ব্যাংক, বিমা আপনাদের দরকার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা করুক। দেশের জন্য যা দরকার সেভাবে নীতিমালা করা হোক। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ভালো চলে, একটি দেশ যাতে আত্মসম্মান নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যায় সে ব্যাপারে আপনারা কাজ করবেন। কারও ক্ষুদ্র স্বার্থে রাজনীতি ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করবেন না। এমন দৃশ্য কি আমরা কল্পনা করতে পারি না? নিশ্চয় সম্ভব। শুধু কল্পনা নয়; আপনারা আরও একটু উদার হলে বাস্তবেই এমন দৃশ্য দেখতে পারি আমরা। আপনাদের জন্য শুভ কামনা।
আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য খবরটি বেশ চিত্তাকর্ষক। আপনারা আরও একটি ব্যাংকের মালিক হতে যাচ্ছেন! তবে সাধারণ ব্যবসায়ী নয়; আপনাকে হতে হবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা। যেহেতু আপনি এমনিতেই বড় ও সফল ব্যবসায়ী। আপনার অনেক আছে; টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক, বিমা, কারখানা, প্রভাব, প্রতিপত্তি—কোনোটারই কমতি নেই। তারপরও আপনি আরও সুযোগ পাবেন! পেতেই থাকবেন!
এমনই আয়োজন চলছে আপনার জন্য। আপনি বা আপনার গোত্রীয় যাঁরাই আছেন, তাঁরা যেহেতু দেশের ভাগ্যবান শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী; আপনাদের উপরমহল কানেকশন যেহেতু অনেক শক্ত— তাই এ শক্তিতে ভর করে আপনারা যা চান তা-ই পাচ্ছেন। সরকার না চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে আপনাদের জন্য তা দিতে হয়। আপনারা চেয়ে যাচ্ছেন, আর সরকার বাহাদুরও ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অকাতরে দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে আজ আপনারা সম্মাননীয় শ্রেণিতে, সবাইকে ছাড়িয়ে। ছোট, ক্ষুদ্ররা ব্যবসায়ী তকমা পেলেও তাঁরা আপনাদের মতো কুলীন নন। তাঁরা আপনাদের উচ্চতার কাছে তুচ্ছ।
আপনারা পাচ্ছেন, আর তাঁরা দেখছেন। আপনারা মঞ্চ আলো করে বসে আছেন, তাঁরা দর্শকের সারিতে বসে হাততালি দিচ্ছেন। আপনারা মহান হচ্ছেন। ধনী থেকে আরও ধনী—ফুটপাত থেকে অভিজাত হোটেলে, মতিঝিল-কারওয়ান বাজার থেকে জাতীয় সংসদ—সর্বত্র এখন আপনাদেরই জয়জয়কার।
তারপরও আপনারাই শিরোনাম। আপনারাই গল্পের নায়ক! জি, বলছি। এত পাওয়ার পরও আপনারা আরও চাচ্ছেন। আর এটি নিয়েই আজ একটু আলোচনা করব। খবরে দেখলাম, আপনারা মানে আপনাদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই একটি ব্যাংক চেয়েছে সরকারের কাছে। সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি আলাদা ব্যাংক দিতে হবে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজও। বাহ, বেশ প্রস্তাব! জাতি অনেক খুশি হয়েছে আপনাদের এ প্রস্তাবে! কেনই–বা হবে না। আপনাদের ভূরি ভূরি আছে; তাতে কী, আপনারা আরও একটি ব্যাংক চাইতেই পারেন। একটি ব্যাংকই তো। দেশের অর্থনীতিতে আপনাদের অবদান কি কম নাকি? সবই তো আপনারা চালাচ্ছেন। শিল্পকারখানা, আমদানি-রপ্তানি, বিনিয়োগ, উদ্যোগ-কর্মসংস্থান, রাজস্ব, অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতি—সবই আপনাদের হাত ধরে! এটি কে না জানে? এখন আপনাদের চাওয়ামাত্র তা দিয়ে সরকারের ধন্য হওয়া উচিত। আর আমরা যারা সাধারণ নাগরিক কোনোমতে বেঁচেবর্তে আছি, তাদের আনন্দের সঙ্গে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা উচিত।
আপনারা জায়গার অভাবে কারখানা করতে পারছেন না। কারখানার জায়গা পেলেন বিশেষ সুবিধায়। তাতে বিশেষ ছাড়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাও হলো। আপনারা বললেন কারখানা চালাতে পারছেন না, ঋণ দিতে হবে স্বল্প সুদে। ঋণ পেলেন। বললেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না; শুল্কমুক্ত সুবিধায় শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আনতে দিতে হবে। সুবিধা পেলেন। বললেন খরচ বেড়ে গেছে, টিকতে পারছেন না; কর ছাড় দিতে হবে। পেলেন তাও। এভাবে যখন যা চান, যেভাবে চান—সরকার দিয়ে যাচ্ছে। এরপরও কর ফাঁকি দেন। সরকার যেহেতু চাওয়ামাত্র আপনাদের সব দিয়ে দিচ্ছে; আপনাদের উচিত ছিল সরকারকে সাহায্য করা। হ্যাঁ, আপনারা যে সবাই ফাঁকি দেন, তা নয়; কেউ কেউ দেন। কেউ কর ফাঁকি দেন, কেউ বিল খেলাপি হন, কেউ বা হন ঋণখেলাপি। এভাবে কোনো না কোনো তালিকায় কমবেশি আছেন আপনারা। যখন আপনাদের পেতে হবে, তখন আপনারা একাট্টা। বিদ্যুৎ নাই, গ্যাস নাই, পানি নাই, বন্দর অদক্ষ, সড়ক-মহাসড়ক বেহাল—এসব অভিযোগে তটস্থ করে রাখেন সরকারকে। এসব লাগবে। কিন্তু এসব করতে যে টাকা লাগবে, তা কে দেবে? সরকার তো কোনো ব্যক্তি নয়; একটি পদ্ধতি। আপনারা, আমরা যাঁরা করদাতা, তাঁরা ঠিকমতো কর দিলেই না সরকারের হাতে টাকা আসবে। সরকার তা দিয়ে আপনার চাহিদামতো রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ-গ্যাস-বন্দর-অবকাঠামো তৈরি করবে। চুন থেকে পান খসলেই আপনারা সব সোচ্চার। এটা নাই, ওটা নাই। আবার এটা করার জন্য যখন কর দিতে হবে, তখন আপনারা নির্বিকার। অনেক ক্ষেত্রে কর মওকুফে তৎপর।
কর আপনারা দিতেই চান না। যখনই বাজেট আসে, আপনারা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে এনবিআরের সঙ্গে দেনদরবারে বসে যান।
এটার ওপর কর দিতে চান না। ওটাতে কর নিলে ব্যবসা বসে যাবে। ওই খাতের কর কমাতে হবে কিংবা মাফ করতে হবে। আরও কত অজুহাত। আপনারাই তো করেন। চাওয়ার বেলায় আপনারা একজোট, আবার না দেওয়ার বেলায়ও। তাহলে সরকার কীভাবে দেশটাকে উন্নত করবে? আবার বলেন, দাতাদের কাছ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নেওয়া যাবে না।
সরকার দেশকে ঋণের ভারে জর্জরিত করছে ইত্যাদি। আপনারা সরকারকে দিতে চান না, আবার নিতে চান। নিতে নিতে আর বাকি নেই কিছু। তারপরও চাই। সবশেষ চাইলেন আলাদা একটি ব্যাংক। আপনাদের শীর্ষদের সবারই কমবেশি ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। কারও একাধিক আছে।
আপনারা নিজেদের ব্যাংক থেকে টাকা নেন, ব্যবসা করেন। কেউ কেউ নিতে নিতে ব্যাংক ফতুর করে ফেলেন। তারপরও নেন। সাধারণ গ্রাহকের আমানতের টাকাও আপনাদের নজর এড়ায় না। পরে পুরো ব্যাংককে দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে যান। এ খবর এখন আর পুরোনো নয়। আপনাদেরই কেউ কেউ এক-দুই কোটি নয়, শতকোটি নয়, হাজার হাজার কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন—এমন ঘটনা অহরহ। নিজের ব্যাংক খালি করেছেন, এরপর হাত দিয়েছেন আরেকজনের ব্যাংকে। তিনিও আপনার বন্ধু-সহযোগী-সহকর্মী। আপনারা মিলেমিশেই করেন। আপনার ব্যাংক থেকে তাঁকে দেন; আর তাঁর ব্যাংক থেকে আপনি নেন। এভাবে আপনারা একেকজন গলায় গলায় ভাব করে ব্যাংকের টাকায় সব করেন। পরে বলেন, সব লোকসান। ব্যবসা লোকসান, উদ্যোগ দেউলিয়া। আপনাদের সব শেষ। আপনাদেরই কেউ কর ফাঁকি, বিল খেলাপি, ঋণখেলাপি হয়ে সরকারের খাতায় ছন্নছাড়া। এই আপনারা একদিকে দেউলিয়া, অন্যদিকে বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চষে বেড়ান সর্বত্র। রপ্তানি করেন, টাকার সবটা দেশে আনেন না। আবার দেশে আয় করেন, বাড়ি বানান বিদেশে।
কতভাবে যে ক্যারিক্যাচার করে দেশের টাকাটা পাচার করে আপনাদের কেউ কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে বাড়ি বানাচ্ছেন—তার ইয়ত্তা নেই।
করোনাভাইরাস বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-ভূমিকম্প-বন্যা-খড়া—সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আবার আপনারাই সবার সামনে। শূন্য হাত বাড়িয়ে দেন সরকারের সহায়তার জন্য। কারখানায় বেতন দিতে পারছেন না, সরকারের কাছে হাত পাতেন। প্রণোদনার সময়ও সবার আগে আপনারা। এভাবে সবকিছুতে শুধুই আপনারা। আবার রাজনীতিতেও আপনারা। মতিঝিল-কারওয়ানবাজার-খাতুনগঞ্জ থেকে সংসদ ভবনেও আপনাদের পদধুলি। দিন দিনই সংখ্যা বাড়ছে সেখানে। বলতে পারেন, এখন কোথাও আপনারা আর পিছিয়ে নেই। সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন! ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-রাজনীতি—সবখানেই শীর্ষে আপনারা! তাই ধরেই নিয়েছেন, আরও একটি নতুন ব্যাংকও চাই আপনাদের। এটি হবে একান্তই আপনাদের সবার। দেশের প্রায় ৬০টি ব্যাংকের প্রায় ৪০টির মতো আপনাদের মালিকানায় হওয়ার পরও তাতে চলছে না। আরও একটি ব্যাংক না হলে কী যেন নাই আপনাদের—এমন অনুভূতি হয়! কেন ভাইসব, সবই কেন লাগবে আপনাদের? কিছু কিছু খাতে কি একটু ছাড় দেওয়া যায় না? একটু কি যৌক্তিক হওয়া যায় না? অর্থনীতি-রাজনীতিতে আপনাদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব আছে আমরা জানি। তাই বলে এতটা কেন? যেগুলো আছে, সেগুলো আরেকটু ভালোভাবে চালানো যায় না? আপনারা যাঁরা যেসব ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছেন—এগুলোর দিকে একটু আন্তরিকভাবে তাকান। দেখেন কী হাল হয়েছে এসবের। মানুষের আস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে দেখেন।
আপনাদের কারও কারও কর্মকাণ্ডের ফলে বিশ্বমানে থাকা তো দূরের কথা, একেবারে ভঙ্গুর দশায় পৌছেছে ব্যাংকিং খাত। লুটপাট, দুর্নীতি আর কুশাসনে এ খাতটির এখন মরণপণ অবস্থা। আগে খাতটিকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনুন। পরিচর্যা করুন। সত্যিকার অর্থে একে মানুষের কল্যাণের জন্য তৈরি করুন। এরপর না হয় আরেকটি ব্যাংক নিন। একটি কেন প্রয়োজনে সরকার আরও ১০টি ব্যাংক দিক আপনাদের। না হলে আরও নিন। এতে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে তার আগে আপনারা যাঁরা শীর্ষ আছেন, ব্যাংক-বিমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মালিক আছেন, তাঁরা এবার ক্ষান্ত দেন।
জানি আমার কথায় আপনারা অনেকে নাখোশ হয়েছেন। অনেকে উড়িয়ে দেবেন। দাবি থেকে একচুলও নড়বেন না—এটাই স্বাভাবিক। সরকারকে ঠিকই চাপ দিয়ে যাবেন। সরকার বাহাদুরও আপনাদের প্রতি নতজানু। এটাও আমি জানি। না হয়েই বা কি করবে সরকার? দাবি না মানলে আপনারা সব একজোট হয়ে বসে পড়বেন। নীরব হয়ে দেখবেন কী হয়। একে একে বন্ধ করে দেবেন শিল্পকারখানা, বেচাকেনা। ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন আমদানি বন্ধ করে দেবেন। হু হু করে দাম বাড়তে থাকবে—সরকারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়বে। বল তখন আপনাদের কোর্টে। কী আর করা, সরকার আপনাদের কথা মেনে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ করবে।
আমরা কী এমন দৃশ্য না ভেবে উল্টো ভাবতে পারি না? আমরা কি এমনটি চিন্তা করতে পারি না যে আপনারা স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারকে বলবেন—এত ব্যাংক, বিমা আপনাদের দরকার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা করুক। দেশের জন্য যা দরকার সেভাবে নীতিমালা করা হোক। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ভালো চলে, একটি দেশ যাতে আত্মসম্মান নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যায় সে ব্যাপারে আপনারা কাজ করবেন। কারও ক্ষুদ্র স্বার্থে রাজনীতি ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করবেন না। এমন দৃশ্য কি আমরা কল্পনা করতে পারি না? নিশ্চয় সম্ভব। শুধু কল্পনা নয়; আপনারা আরও একটু উদার হলে বাস্তবেই এমন দৃশ্য দেখতে পারি আমরা। আপনাদের জন্য শুভ কামনা।
সিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
১৫ মিনিট আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
২৫ মিনিট আগেএখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগে