আবেদীন কাদের
অধ্যাপক অমর্ত্য সেন একটি সমাজের উন্নয়নের সূচক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রায় আড়াই শত বছর আগে একটি নির্দিষ্ট বছরে জাপানে এবং বিলেতে কী পরিমাণ বই ছাপা হয়েছিল এবং ওই দুটি দেশে কতসংখ্যক স্কুল ছিল তার তথ্য দিয়ে একটি তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, জাপানে সে সময়ে স্কুল এবং প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বিলেতের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ছিল। লেখাটা প্রথমে পড়া শুরু করে মনে হয়েছিল, তাঁর সাধারণ সমাজবিষয়ক প্রবন্ধ। কিন্তু কিছুক্ষণ পড়েই বোঝা যায়—এটা মোটেই সে রকম নয়, লেখাটাকে তিনি একেবারে দার্শনিক পর্যায়ের উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের কালেকটিভ চরিত্র এবং প্রবণতাগুলোও শনাক্ত করেছেন একটু ভিন্নভাবে। প্রবন্ধটা ইংরেজিতে লেখা এবং খুব দীর্ঘ নয়।
কিন্তু পড়ার পর অনেক দিন লেখকের কিছু কথার অনুরণন ছিল আমার মাথার ভেতর। যেমন একটি প্রশ্নবোধক কিন্তু ইঙ্গিতে বলেছিলেন, কোনো সমাজে প্রকাশিত বইয়ের গুণমান এবং সেসব বইয়ের আলোচনার মান প্রায় সমান্তরাল। কথাটা প্রথমে মনে হয়েছিল সাধারণ একটি কথা, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আমাকে চিন্তার খোরাক দিল। ভাবতে থাকলাম এই সমান্তরলতার মানে কী? মনে হয় অধ্যাপক সেন বোঝাতে চেয়েছেন—যে সমাজে ভালো বই প্রকাশিত হয়, সেখানে বইয়ের সমালোচনাও মানসম্পন্ন হয়, নাকি উল্টোটাও সত্যি! যে সমাজে ভালো বই প্রকাশিত হয় না, সেখানে বইয়ের ভালো সমালোচকও কদাচিৎ দেখা যায়।
দিন দুয়েক আগে নিউইয়র্কবাসী বিখ্যাত কবি কাজী জহিরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যে কোথায় ছাপা হলো বড় কথা নয়, কী ছাপা হলো সেটাই বড় কথা। আমি সেখানে মন্তব্য দিয়েছিলাম—কিছু কিছু পত্রিকা আছে, যেখানে ছাপা হওয়া মানে লেখার মানও নিশ্চিত ভালো। জহির বলেন আজকাল তেমন পত্রিকা নেই, আজকাল সব জায়গায় খুব সাবস্ট্যান্ডার্ড লেখা ছাপা হয়। আমি কয়েকটি বিদেশি সাহিত্য পত্রিকার নাম উল্লেখ করলে তিনি বলেন, তিনি বাংলা পত্রিকা বুঝিয়েছেন। আমি ‘দেশ’, ‘অনুষ্টুপ’, ‘বিভাস’, ‘কবিতীর্থ’সহ কয়েকটি পত্রিকার নাম বলি; যেখানে এখনো মুদ্রিত লেখার মান খুব ভালো। যদিও ‘দেশ’ মাঝেমধ্যে তার মান হারায়।
কে না জানে আজ, ‘কবিতা’ বা ‘পরিচয়’ পত্রিকায় একসময় লেখা ছাপা হলে বাংলা ভাষার যেকোনো লেখক ভাবতেন—তিনি সত্যিই গ্রহণযোগ্য লেখক হয়ে উঠছেন। জহিরের বক্তব্য অনুযায়ী সাবস্ট্যান্ডার্ড লেখা আমরা চিনব কী করে? কে নির্ধারণ করে কোনটি ভালো লেখা বা কবিতা আর কোনটি নয়? আমার মনে হয়, এ ধরনের জটিল এবং কঠোর মন্তব্যের আগে আমাদের শনাক্ত করার পদ্ধতি জানা প্রয়োজন, কীভাবে আমরা উৎকৃষ্ট লেখা আর সাবস্ট্যান্ডার্ড লেখা নির্ধারণ করব? কোনো লেখক বা কবি কি নিজের লেখাকে নিম্নমানের লেখা ভাবেন? কিন্তু কতজনই বা মানসম্পন্ন লেখা লিখতে পারেন? বাংলাদেশের কবি-লেখকদের কতজনের লেখা আজ থেকে ৫০ বছর পর মানুষ পড়বে বা মনে রাখবে! সামগ্রিক বাংলা ভাষার কবিতা বা সাহিত্যের ইতিহাসে আমাদের লেখক-কবিদের কতজন বেঁচে থাকবেন? আদৌ খুব বেশি থাকবেন কি?
কলকাতা বা মুম্বাইয়ের কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে ভালো লেখক সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কলকাতার কিছু সাহিত্য পত্রিকা অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে শিল্প-সাহিত্যের সেবা করে যাচ্ছে গুণমান বজায় রেখে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন কোনো ভালো সাহিত্য পত্রিকা দীর্ঘদিন বেঁচে আছে, এমন নজির নেই। এটা কি আমাদের সমাজের বা সমাজমানসের একটা চারিত্র্য! বলতে গেলে সেই ‘সমকাল’, ‘পূর্বমেঘ’, ‘সুন্দরম’ বা ‘কালি ও কলম’ই আমাদের ভরসা। মাঝখানে স্বল্পায়ুর ‘গণসাহিত্য’ বের করেছিলেন কবি মাহমুদ আল জামান ও কবি মফিদুল হক। তবে ‘উত্তরাধিকার’ আজ প্রায় ৫০ বছর একটা মান ধরে রেখেছে কিছু দুর্বলতাসহ।
শুধু বইয়ের আলোচনা নিয়ে বিশিষ্ট লেখক গবেষক আহমাদ মাযহার সম্পাদিত ‘বইয়ের জগৎ’ ভালো পত্রিকা। কিন্তু আমি এটি বেশি পড়তে পারিনি। আমি দেশ ছাড়ার পর মাযহার এটির সম্পাদনা শুরু করেন। কয়েকটি সংখ্যা পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার।
আমাদের দেশে কেন কোনো উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য পত্রিকা হয়নি বা যা হয়েছে তা-ও কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে গেছে—এই বিষয়টি নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক কারণগুলোও অনুসন্ধান করে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। বাঙালি মুসলিম সমাজের সব চিন্তামূলক ক্রিয়াকাণ্ডই স্বল্পায়ু হয় কেন!
আমি বই সমালোচনা করতে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু পুস্তক সমালোচনাকে সৃষ্টিশীল পর্যায়ের লেখায় নিয়ে যাওয়া সত্যি কঠিন। যেকোনো বই বা শিল্প-সাহিত্য বিষয়ের ছোট লেখা পড়লে বুক হুহু করে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সত্যি কঠিন। বাংলাদেশে যাঁরা বই সমালোচনা করেন, তাঁদের কারও লেখা কি সে পর্যায়ের? যেমন ‘নিউয়র্ক টাইমস’-এ নিয়মিত বই আলোচনা লিখতেন মিচিকো কাকুতিনি। ৩৪ বছর ধরে লিখেছেন। গণিতশাস্ত্রের জাপানি বিদগ্ধ বাবার মেয়ে মিচিকো জন্মেছেন আমেরিকায়। ইয়েলের ইংরেজি সাহিত্যের তুখোড় এই শিক্ষার্থী গ্রন্থ সমালোচনাকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি আজ প্রায় ২৫ বছর প্রতি রোববার বসে থাকি কাকুতিনির বইয়ের আলোচনা পড়ার জন্য। ২০১৭ সালে তিনি ‘নিউয়র্ক টাইমস’ ছেড়ে দেন।
এই দেশে এবং লন্ডন বা কলকাতার সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে কী ভীষণ মেধাবী ও উজ্জ্বল বইয়ের সমালোচনা লেখা হয়! আমি বিস্ময়ের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে তা পাঠ করি, আর নিজের দীনতা নিয়ে লজ্জায় কুঁকড়ে থাকি। গত দিন দশেক পড়ছিলাম মারিও ভারগাস হসার ‘নোটস অন দ্য ডেথ অব কালচার’ গ্রন্থটি কেনার সময় মনে পড়ছিল আমার প্রিয়তম লেখক এলিয়টের ‘নোটস অন দ্য ডেফিনেশনস অব কালচার’-এর কথা। সম্ভবত ১৯৪৮ সালে এলিয়ট বার্লিন রেডিওতে কয়েকটি বক্তৃতা দেন ‘কালচার’ বিষয়ে। সেটাই তাঁর এই বই। শেষবার বইটি পড়েছি সাড়ে চার দশক আগে। কিন্তু হসার বইটি পড়া শুরু করে দেখলাম, তিনি এলিয়টের সেই বইয়ের বক্তব্যকে খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে পড়ছিলাম ‘দেশ’ পত্রিকার এ বছরের ‘বই সংখ্যা’। দুটোই আমাকে গত দিন দশেক আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আমি এ দুটি বই নিয়েই দুয়েক দিনের মধ্যে লিখব। আসলে বই বা সাহিত্য পত্রিকা নিয়ে লেখাকে অনেকেই ক্ষুদ্র কাজ মনে করেন, কিন্তু আমি এর মাঝে একটি সমাজের শিল্প-সংস্কৃতির একটা মান খুঁজে পাই।
এসব নিয়ে গভীর রাতে ভাবতে ভাবতে মনে হলো, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের কথাটি—আসলে কোনো সমাজের বইয়ের মান এবং বই নিয়ে আলোচনার মান সত্যিই সমান্তরাল। আমাদের সাহিত্যের লেখকদের লেখার যেমন মান, আমাদের সমালোচকদের গ্রন্থ সমালোচনার মানও ঠিক তেমন। যে সমাজ উৎকৃষ্ট লেখক সৃষ্টি করতে পারে না, সে সমাজ বোধ হয় ভালো গ্রন্থ সমালোচকও জন্ম দিতে পারে না।
অধ্যাপক অমর্ত্য সেন একটি সমাজের উন্নয়নের সূচক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রায় আড়াই শত বছর আগে একটি নির্দিষ্ট বছরে জাপানে এবং বিলেতে কী পরিমাণ বই ছাপা হয়েছিল এবং ওই দুটি দেশে কতসংখ্যক স্কুল ছিল তার তথ্য দিয়ে একটি তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, জাপানে সে সময়ে স্কুল এবং প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বিলেতের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ছিল। লেখাটা প্রথমে পড়া শুরু করে মনে হয়েছিল, তাঁর সাধারণ সমাজবিষয়ক প্রবন্ধ। কিন্তু কিছুক্ষণ পড়েই বোঝা যায়—এটা মোটেই সে রকম নয়, লেখাটাকে তিনি একেবারে দার্শনিক পর্যায়ের উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের কালেকটিভ চরিত্র এবং প্রবণতাগুলোও শনাক্ত করেছেন একটু ভিন্নভাবে। প্রবন্ধটা ইংরেজিতে লেখা এবং খুব দীর্ঘ নয়।
কিন্তু পড়ার পর অনেক দিন লেখকের কিছু কথার অনুরণন ছিল আমার মাথার ভেতর। যেমন একটি প্রশ্নবোধক কিন্তু ইঙ্গিতে বলেছিলেন, কোনো সমাজে প্রকাশিত বইয়ের গুণমান এবং সেসব বইয়ের আলোচনার মান প্রায় সমান্তরাল। কথাটা প্রথমে মনে হয়েছিল সাধারণ একটি কথা, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আমাকে চিন্তার খোরাক দিল। ভাবতে থাকলাম এই সমান্তরলতার মানে কী? মনে হয় অধ্যাপক সেন বোঝাতে চেয়েছেন—যে সমাজে ভালো বই প্রকাশিত হয়, সেখানে বইয়ের সমালোচনাও মানসম্পন্ন হয়, নাকি উল্টোটাও সত্যি! যে সমাজে ভালো বই প্রকাশিত হয় না, সেখানে বইয়ের ভালো সমালোচকও কদাচিৎ দেখা যায়।
দিন দুয়েক আগে নিউইয়র্কবাসী বিখ্যাত কবি কাজী জহিরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যে কোথায় ছাপা হলো বড় কথা নয়, কী ছাপা হলো সেটাই বড় কথা। আমি সেখানে মন্তব্য দিয়েছিলাম—কিছু কিছু পত্রিকা আছে, যেখানে ছাপা হওয়া মানে লেখার মানও নিশ্চিত ভালো। জহির বলেন আজকাল তেমন পত্রিকা নেই, আজকাল সব জায়গায় খুব সাবস্ট্যান্ডার্ড লেখা ছাপা হয়। আমি কয়েকটি বিদেশি সাহিত্য পত্রিকার নাম উল্লেখ করলে তিনি বলেন, তিনি বাংলা পত্রিকা বুঝিয়েছেন। আমি ‘দেশ’, ‘অনুষ্টুপ’, ‘বিভাস’, ‘কবিতীর্থ’সহ কয়েকটি পত্রিকার নাম বলি; যেখানে এখনো মুদ্রিত লেখার মান খুব ভালো। যদিও ‘দেশ’ মাঝেমধ্যে তার মান হারায়।
কে না জানে আজ, ‘কবিতা’ বা ‘পরিচয়’ পত্রিকায় একসময় লেখা ছাপা হলে বাংলা ভাষার যেকোনো লেখক ভাবতেন—তিনি সত্যিই গ্রহণযোগ্য লেখক হয়ে উঠছেন। জহিরের বক্তব্য অনুযায়ী সাবস্ট্যান্ডার্ড লেখা আমরা চিনব কী করে? কে নির্ধারণ করে কোনটি ভালো লেখা বা কবিতা আর কোনটি নয়? আমার মনে হয়, এ ধরনের জটিল এবং কঠোর মন্তব্যের আগে আমাদের শনাক্ত করার পদ্ধতি জানা প্রয়োজন, কীভাবে আমরা উৎকৃষ্ট লেখা আর সাবস্ট্যান্ডার্ড লেখা নির্ধারণ করব? কোনো লেখক বা কবি কি নিজের লেখাকে নিম্নমানের লেখা ভাবেন? কিন্তু কতজনই বা মানসম্পন্ন লেখা লিখতে পারেন? বাংলাদেশের কবি-লেখকদের কতজনের লেখা আজ থেকে ৫০ বছর পর মানুষ পড়বে বা মনে রাখবে! সামগ্রিক বাংলা ভাষার কবিতা বা সাহিত্যের ইতিহাসে আমাদের লেখক-কবিদের কতজন বেঁচে থাকবেন? আদৌ খুব বেশি থাকবেন কি?
কলকাতা বা মুম্বাইয়ের কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে ভালো লেখক সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কলকাতার কিছু সাহিত্য পত্রিকা অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে শিল্প-সাহিত্যের সেবা করে যাচ্ছে গুণমান বজায় রেখে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন কোনো ভালো সাহিত্য পত্রিকা দীর্ঘদিন বেঁচে আছে, এমন নজির নেই। এটা কি আমাদের সমাজের বা সমাজমানসের একটা চারিত্র্য! বলতে গেলে সেই ‘সমকাল’, ‘পূর্বমেঘ’, ‘সুন্দরম’ বা ‘কালি ও কলম’ই আমাদের ভরসা। মাঝখানে স্বল্পায়ুর ‘গণসাহিত্য’ বের করেছিলেন কবি মাহমুদ আল জামান ও কবি মফিদুল হক। তবে ‘উত্তরাধিকার’ আজ প্রায় ৫০ বছর একটা মান ধরে রেখেছে কিছু দুর্বলতাসহ।
শুধু বইয়ের আলোচনা নিয়ে বিশিষ্ট লেখক গবেষক আহমাদ মাযহার সম্পাদিত ‘বইয়ের জগৎ’ ভালো পত্রিকা। কিন্তু আমি এটি বেশি পড়তে পারিনি। আমি দেশ ছাড়ার পর মাযহার এটির সম্পাদনা শুরু করেন। কয়েকটি সংখ্যা পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার।
আমাদের দেশে কেন কোনো উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য পত্রিকা হয়নি বা যা হয়েছে তা-ও কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে গেছে—এই বিষয়টি নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক কারণগুলোও অনুসন্ধান করে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। বাঙালি মুসলিম সমাজের সব চিন্তামূলক ক্রিয়াকাণ্ডই স্বল্পায়ু হয় কেন!
আমি বই সমালোচনা করতে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু পুস্তক সমালোচনাকে সৃষ্টিশীল পর্যায়ের লেখায় নিয়ে যাওয়া সত্যি কঠিন। যেকোনো বই বা শিল্প-সাহিত্য বিষয়ের ছোট লেখা পড়লে বুক হুহু করে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সত্যি কঠিন। বাংলাদেশে যাঁরা বই সমালোচনা করেন, তাঁদের কারও লেখা কি সে পর্যায়ের? যেমন ‘নিউয়র্ক টাইমস’-এ নিয়মিত বই আলোচনা লিখতেন মিচিকো কাকুতিনি। ৩৪ বছর ধরে লিখেছেন। গণিতশাস্ত্রের জাপানি বিদগ্ধ বাবার মেয়ে মিচিকো জন্মেছেন আমেরিকায়। ইয়েলের ইংরেজি সাহিত্যের তুখোড় এই শিক্ষার্থী গ্রন্থ সমালোচনাকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি আজ প্রায় ২৫ বছর প্রতি রোববার বসে থাকি কাকুতিনির বইয়ের আলোচনা পড়ার জন্য। ২০১৭ সালে তিনি ‘নিউয়র্ক টাইমস’ ছেড়ে দেন।
এই দেশে এবং লন্ডন বা কলকাতার সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে কী ভীষণ মেধাবী ও উজ্জ্বল বইয়ের সমালোচনা লেখা হয়! আমি বিস্ময়ের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে তা পাঠ করি, আর নিজের দীনতা নিয়ে লজ্জায় কুঁকড়ে থাকি। গত দিন দশেক পড়ছিলাম মারিও ভারগাস হসার ‘নোটস অন দ্য ডেথ অব কালচার’ গ্রন্থটি কেনার সময় মনে পড়ছিল আমার প্রিয়তম লেখক এলিয়টের ‘নোটস অন দ্য ডেফিনেশনস অব কালচার’-এর কথা। সম্ভবত ১৯৪৮ সালে এলিয়ট বার্লিন রেডিওতে কয়েকটি বক্তৃতা দেন ‘কালচার’ বিষয়ে। সেটাই তাঁর এই বই। শেষবার বইটি পড়েছি সাড়ে চার দশক আগে। কিন্তু হসার বইটি পড়া শুরু করে দেখলাম, তিনি এলিয়টের সেই বইয়ের বক্তব্যকে খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে পড়ছিলাম ‘দেশ’ পত্রিকার এ বছরের ‘বই সংখ্যা’। দুটোই আমাকে গত দিন দশেক আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আমি এ দুটি বই নিয়েই দুয়েক দিনের মধ্যে লিখব। আসলে বই বা সাহিত্য পত্রিকা নিয়ে লেখাকে অনেকেই ক্ষুদ্র কাজ মনে করেন, কিন্তু আমি এর মাঝে একটি সমাজের শিল্প-সংস্কৃতির একটা মান খুঁজে পাই।
এসব নিয়ে গভীর রাতে ভাবতে ভাবতে মনে হলো, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের কথাটি—আসলে কোনো সমাজের বইয়ের মান এবং বই নিয়ে আলোচনার মান সত্যিই সমান্তরাল। আমাদের সাহিত্যের লেখকদের লেখার যেমন মান, আমাদের সমালোচকদের গ্রন্থ সমালোচনার মানও ঠিক তেমন। যে সমাজ উৎকৃষ্ট লেখক সৃষ্টি করতে পারে না, সে সমাজ বোধ হয় ভালো গ্রন্থ সমালোচকও জন্ম দিতে পারে না।
সিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে...
১৬ মিনিট আগেঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী পরিচয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচারে সহায়তা করার কথা বলে পাপিয়া আক্তার রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি যে ‘ভুয়া’ ছাত্রী, সেটি বুঝতে পেরে চিকিৎসকেরা তাঁকে আটক করেন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। হয়তো তাঁর শাস্তিও হবে। পাপিয়া শুধু অচেনা রোগী ও তাদের স্বজনদের নয়, তাঁর স্বামীকেও ধোঁকা...
২৬ মিনিট আগেএখন রাজনীতির এক গতিময়তার সময়। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদী দুর্নীতিপরায়ণ শাসন ছাত্র আন্দোলনে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী শাসনকালে দ্রুততার সঙ্গে নানা রকম রাজনৈতিক কথাবার্তা, চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-অপচেষ্টা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটছে।
১ দিন আগেবহু বছর আগে সেই ব্রিটিশ যুগে কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন।’ আসলে পেটের খিদে নিয়ম, আইন, বিবেক, বিচার কোনো কিছুই মানে না। তাই তো প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে, খিদের জ্বালা বড় জ্বালা। এর থেকে বোধ হয় আর কোনো অসহায়তা নেই। খালি পেটে কেউ তত্ত্ব শুনতে চায় না। কাওয়ালিও ন
১ দিন আগে