ড. আরমানা সাবিহা হক
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা একটি গুরুতর জননিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিয়মিতভাবে প্রচুর সংখ্যক প্রাণহানি ঘটছে এবং এর ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই বিষয়ে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে যা দুর্ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ায় গভীর প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন স্থান ও সময়ে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনাগুলোর তদন্তের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তদন্ত কমিটিতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) একজন শিক্ষক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্ঘটনার কারণগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার জন্য সুপারিশ করা।
সৌভাগ্যক্রমে আমি ১০ টিরও বেশি তদন্ত কমিটিতে এআরআই–এর পক্ষ থেকে একজন ট্রাফিক সেফটি এক্সপার্ট হিসেবে যুক্ত ছিলাম। এর মধ্যে আটটি তদন্ত রিপোর্টের সারসংক্ষেপ এখানে উত্থাপন করছি। এই ৮টি সড়ক দুর্ঘটনা হলো ঝালকাঠির গাবখান ব্রিজে সংঘর্ষ, ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস এবং পিকআপ ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ, পিরোজপুরে বাস, মোটরসাইকেল এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ, হাটহাজারীতে বাস, প্রাইভেট কার এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনা, সিলেটের সিন্দ্রাগাঁও এলাকায় বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, সিলেটের দরবস্ত এলাকায় সংঘর্ষ, পদ্মা সেতুতে বাস দুর্ঘটনা।
এই তদন্তগুলো থেকে দেখা গেছে যে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই বাস (৭৫ %), অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা (৩৭.৫ %), সিএনজি চালিত অটোরিকশা (২৫ %), এবং প্রাইভেট কারের (২৫ %) মতো একাধিক যানবাহন জড়িত ছিল, যার ফলে প্রচুর প্রাণহানি (৯১ জন) ও আহত (৭৬ জন) হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চালকের অদক্ষতা, অসতর্কতা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা এবং ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন (বাস, ব্যাটারি চালিত ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা) প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটার অন্যতম প্রধান কারণ। দুর্ঘটনায় পতিত ৬৬.৬৭% বাসই ছিল ফিটনেসবিহীন, রাস্তায় চলাচলের অযোগ্য। উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হতে গড়ে ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে যা হতাহতের সংখ্যা অনেক গুনে বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশের বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে যা অবিলম্বে সংশোধনের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহ, প্রশিক্ষিত কর্মী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, সড়ক নিরাপত্তা নিরীক্ষা এই সবকিছুরই অভাব লক্ষণীয়। তদন্ত কার্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া নেই এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও স্বচ্ছতার অভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তদন্ত প্রক্রিয়ায় উন্নত প্রযুক্তির সুস্পষ্ট অভাব রয়েছে। সরকারের পক্ষ হতে পর্যাপ্ত প্রণোদনারও অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়া উন্নত করতে আধুনিক প্রযুক্তি, GIS–ভিত্তিক সফটওয়্যার এর মাধ্যমে দুর্ঘটনার অবস্থান নির্ণয়, ড্রাইভারদের কেন্দ্রীয় ডেটা সিস্টেম, ইন্টিগ্রেটেড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, কঠোর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। ট্রাফিক সেফটি আইনের দৃঢ় প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনের কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে (সরকারি, বেসরকারি, মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশন, সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইত্যাদি) ট্রাফিক সেফটি ইউনিট থাকা অত্যাবশ্যক।
দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটি একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ট্রাফিক সেফটি এক্সপার্টের তত্ত্বাবধানে গঠিত হওয়া জরুরি, যিনি পরবর্তীতে তদন্তে বের হয়ে আসা দুর্ঘটনার কারণ ও সুপারিশগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবেন ও সুপারিশগুলোর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করবেন। সেই তদন্ত কমিটিতেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো থেকে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ এক্সপার্ট নিয়োগ দেওয়া জরুরি।
সবশেষে সরকারের আন্তরিকতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যাগুলো সমাধানহীন থেকে যাবে এবং এর ফলাফল হবে ভয়াবহ, তাই সরকারের উচিত অতি দ্রুত সময়ে এই বিষয়ে নজর দেওয়া।
লেখক: ট্রাফিক সেফটি এক্সপার্ট ও সহকারী অধ্যাপক, এআরআই, বুয়েট
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা একটি গুরুতর জননিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিয়মিতভাবে প্রচুর সংখ্যক প্রাণহানি ঘটছে এবং এর ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই বিষয়ে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে যা দুর্ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ায় গভীর প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন স্থান ও সময়ে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনাগুলোর তদন্তের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তদন্ত কমিটিতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) একজন শিক্ষক এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্ঘটনার কারণগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার জন্য সুপারিশ করা।
সৌভাগ্যক্রমে আমি ১০ টিরও বেশি তদন্ত কমিটিতে এআরআই–এর পক্ষ থেকে একজন ট্রাফিক সেফটি এক্সপার্ট হিসেবে যুক্ত ছিলাম। এর মধ্যে আটটি তদন্ত রিপোর্টের সারসংক্ষেপ এখানে উত্থাপন করছি। এই ৮টি সড়ক দুর্ঘটনা হলো ঝালকাঠির গাবখান ব্রিজে সংঘর্ষ, ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস এবং পিকআপ ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ, পিরোজপুরে বাস, মোটরসাইকেল এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ, হাটহাজারীতে বাস, প্রাইভেট কার এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনা, সিলেটের সিন্দ্রাগাঁও এলাকায় বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, সিলেটের দরবস্ত এলাকায় সংঘর্ষ, পদ্মা সেতুতে বাস দুর্ঘটনা।
এই তদন্তগুলো থেকে দেখা গেছে যে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই বাস (৭৫ %), অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা (৩৭.৫ %), সিএনজি চালিত অটোরিকশা (২৫ %), এবং প্রাইভেট কারের (২৫ %) মতো একাধিক যানবাহন জড়িত ছিল, যার ফলে প্রচুর প্রাণহানি (৯১ জন) ও আহত (৭৬ জন) হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চালকের অদক্ষতা, অসতর্কতা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা এবং ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন (বাস, ব্যাটারি চালিত ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা) প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটার অন্যতম প্রধান কারণ। দুর্ঘটনায় পতিত ৬৬.৬৭% বাসই ছিল ফিটনেসবিহীন, রাস্তায় চলাচলের অযোগ্য। উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হতে গড়ে ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে যা হতাহতের সংখ্যা অনেক গুনে বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশের বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে যা অবিলম্বে সংশোধনের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহ, প্রশিক্ষিত কর্মী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, সড়ক নিরাপত্তা নিরীক্ষা এই সবকিছুরই অভাব লক্ষণীয়। তদন্ত কার্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া নেই এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও স্বচ্ছতার অভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তদন্ত প্রক্রিয়ায় উন্নত প্রযুক্তির সুস্পষ্ট অভাব রয়েছে। সরকারের পক্ষ হতে পর্যাপ্ত প্রণোদনারও অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়া উন্নত করতে আধুনিক প্রযুক্তি, GIS–ভিত্তিক সফটওয়্যার এর মাধ্যমে দুর্ঘটনার অবস্থান নির্ণয়, ড্রাইভারদের কেন্দ্রীয় ডেটা সিস্টেম, ইন্টিগ্রেটেড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, কঠোর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। ট্রাফিক সেফটি আইনের দৃঢ় প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনের কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে (সরকারি, বেসরকারি, মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশন, সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইত্যাদি) ট্রাফিক সেফটি ইউনিট থাকা অত্যাবশ্যক।
দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটি একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ট্রাফিক সেফটি এক্সপার্টের তত্ত্বাবধানে গঠিত হওয়া জরুরি, যিনি পরবর্তীতে তদন্তে বের হয়ে আসা দুর্ঘটনার কারণ ও সুপারিশগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবেন ও সুপারিশগুলোর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করবেন। সেই তদন্ত কমিটিতেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো থেকে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ এক্সপার্ট নিয়োগ দেওয়া জরুরি।
সবশেষে সরকারের আন্তরিকতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যাগুলো সমাধানহীন থেকে যাবে এবং এর ফলাফল হবে ভয়াবহ, তাই সরকারের উচিত অতি দ্রুত সময়ে এই বিষয়ে নজর দেওয়া।
লেখক: ট্রাফিক সেফটি এক্সপার্ট ও সহকারী অধ্যাপক, এআরআই, বুয়েট
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৬ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৬ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৬ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৬ ঘণ্টা আগে