আবু তাহের খান
গণমাধ্যমের খবরমতে, দুবাইয়ে (আসলে দেশটির নাম হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যার রাজধানী আবুধাবি। এটি সাত আমিরাত বা রাজ্য নিয়ে গঠিত। এটি দেশটির অন্যতম রাজ্যও বটে) বর্তমানে ১০ হাজার ৯৭৫টি, অর্থাৎ প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি কোম্পানি ব্যবসা করছে। একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কোম্পানিগুলোর কোনোটিই এই বিনিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি নেয়নি।
এসব কোম্পানির মধ্যে কোনো কোনোটির মালিক বাংলাদেশি নাগরিকত্ব-পরিচয় গোপন করে আলবেনিয়া, সাইপ্রাস প্রভৃতি দেশের ভুয়া নাগরিকত্বের কাগজপত্র ব্যবহার করছেন। আবার অনেকের বাংলাদেশি নাগরিকত্বও আছে। তবে এই প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি কোম্পানির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ কত? তা ওই সংবাদ-প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে এই বিনিয়োগ দেশটির সাত রাজ্যের (দুবাই, শারজা, আবুধাবি, আজমান, উম-আল-কুয়াইন, রাস-আল-কায়মা ও ফুজায়রা) সব কটিতেই কমবেশি রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব বাংলাদেশি কোম্পানির মালিকেরা বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কীভাবে এবং কোথা থেকে সংস্থান করলেন? ধারণা করা যায়, সে দেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা তাঁদের উপার্জন ও সঞ্চয় থেকে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তবে সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য হওয়ার কথা। কারণ সাধারণভাবে বাংলাদেশি কর্মীরা সেখানে যে পরিমাণ মজুরি পান, তা থেকে উদ্বৃত্ত সঞ্চয় দেশের পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য পাঠিয়ে দেন।
তারপরও হয়তো কেউ কেউ অনেক কষ্ট করে কিছুটা সঞ্চয় করে দুবাইয়ের সহজ শর্তের বিনিয়োগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিছু একটা দাঁড় করাতে চাইছেন। তবে অনুমান করি, উল্লিখিত বিনিয়োগকারীর মধ্যে এই সংখ্যা ১ হাজার ১০০ হবে না, অর্থাৎ বাদবাকি প্রায় ১০ হাজার বিনিয়োগকারীর সবাই সেই দলের, যাঁরা এই বিনিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনোরূপ অনুমতি তো নেননি, এমনকি এই অর্থ তাঁরা কোথা থেকে এবং কীভাবে পেলেন, সেই জিজ্ঞাসার জবাবও কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
তাহলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে, উল্লিখিত ১০ হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীর সবাই বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় ওই দেশের বিনিয়োগে যুক্ত হয়েছেন। কারণ যে ধরনের অবৈধ বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী এখন সারা পৃথিবীতেই ব্যাপকভাবে ও বিপুল সংখ্যায় ছড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশ থেকে অর্থ, সম্পদ ও মেধা পাচারের যে সর্বনাশা প্রক্রিয়া সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হয়েছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব অর্থনীতিতে শোষণের এক বিস্তৃততর পশ্চাদ্ভূমি হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, অর্থ পাচারের তালিকায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ভূমিকা শুধু ভয়ংকরই নয়, রীতিমতো বিপজ্জনকও। ধারণা করা যায়, ইউএইর ওই ১১ হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীও মূলত ব্যাংকিং চ্যানেল ও হুন্ডিকেই অর্থ পাচারের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, এই বাংলাদেশিরা এখন সুইস ব্যাংকেও ব্যাপক হারে অর্থ জমা রাখতে শুরু করেছেন এবং সেই অর্থেরও সিংহভাগই চোরাই পথে যাওয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশি এই উদ্যোক্তারা এখন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ভারত প্রভৃতি দেশে এমনকি পশ্চিমের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়ও তাঁদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করে চলেছেন। কিন্তু হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা হচ্ছে, তাঁরা প্রায় কেউই বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে বৈধ পন্থায় এসব বিনিয়োগ করছেন না। দেশে দেশে এই যে হাজার হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী, তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠান। সেই অর্থে উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের প্রায় সবাই কমবেশি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
কিন্তু এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণপ্রয়াস আছে বলে মনে হয় না। অর্থমন্ত্রী তো জাতীয় সংসদেই বলেছেন, কেউ অর্থ পাচার করেছে বলে তাঁর জানা নেই এবং তিনি এ-ও বলেছেন, কারও জানা থাকলে তা যেন তাঁকে জানানো হয়; অর্থাৎ কে বা কারা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, তা জানার ব্যাপারে তাঁর নিজের বিন্দুমাত্র কোনো আগ্রহ বা উদ্যোগ নেই। অন্য কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে, তখন তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী-সংক্রান্ত সংবাদটি অর্থমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রের অন্য কোনো নীতিনির্ধারকের চোখে পড়েছে কি না, জানি না।
আর পড়ে থাকলে এ ব্যাপারে তাঁদের ভেতরকার প্রতিক্রিয়া কী, তা-ও জানি না। তবে এ প্রসঙ্গে এটা বলা বোধকরি প্রাসঙ্গিক হবে যে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত ছোট্ট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমলযোগ্য নমুনা। সদিচ্ছা থাকলে এটিকে এখন আমলে নিয়ে শিগগিরই এসব বিনিয়োগকারীর নাম, পরিচয় ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করা সম্ভব। পরবর্তী সময়ে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে, সেসব দেশের ওই সব বিনিয়োগকারীর বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য
সংগ্রহ করা যেতে পারে।
বিবেকের তাড়নায় অর্থ পাচার রোধে এখানে কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো। এক. প্রথমেই বিদেশে বিনিয়োগকারী বাংলাদেশিদের দেশওয়ারি একটি তালিকা তৈরি করতে হবে, যেখানে তাঁদের পুঁজির উৎস ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে; দুই. এই প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাংলাদেশে ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে; তিন. উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের মুনাফার সঙ্গে বছরওয়ারি পুনর্বিনিয়োগ ও দেশে মুনাফা প্রত্যাবাসনের (reparation) হিসাব মিলিয়ে দেখতে হবে; চার. বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সহায়তা নিয়ে ওই সব দেশে উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক লেনদেন যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে; পাঁচ. উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।
আর এ সবকিছুই করতে হবে দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধকল্পে প্রাসঙ্গিক করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে। তবে এ ব্যাপারে আর কী কী করণীয় রয়েছে, তা চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরামর্শ ও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। অর্থ পাচার রোধকল্পে ওপরে যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হলো, তার সবই সাদা চোখের সরল প্রস্তাব। আসলে পাচার যদি রোধ করতেই হয়, তাহলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বস্তুত এই রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ঘাটতির কারণেই বর্তমানে এরূপ বিধ্বংসী কায়দায় দেশ থেকে নানা দেশে দেদার অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ঔপনিবেশিক শাসন আমলে বিদেশি শাসকেরা এ ধরনের অর্থ ও সম্পদ পাচার করে নিয়ে গিয়ে নিজ দেশে শিল্পবিপ্লবের মতো বিশাল ঘটনার জন্ম দিয়েছিল [ব্যাপকভাবে মনে করা হয় যে শাসিত উপনিবেশ থেকে শোষণ ও পাচারের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া সম্পদই ছিল ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের (১৭৬০-১৮২০) মূল চালিকাশক্তি]। তাই ২০০ বছরের বেশি আগে সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইউরোপীয় শাসক ও বণিকেরা যে কাজটি করে গেছেন, রাজনৈতিক মদদে দেশীয় বণিকেরা এখন সেই একই কাজ আরও জোরেশোরে করে যাচ্ছেন।
আর সেই কাজের ফলে সরকারের অনুমতি না নিয়ে এক সংযুক্ত আরব আমিরাতেই ব্যবসা করছেন প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী। সারা পৃথিবীতে এ সংখ্যা কত হাজার হবে, সেই সংখ্যা আমাদের জানা নেই। তবে সম্পদ ও অর্থের পাচার যদি রোধ করতেই হয়, তাহলে সে হিসাবও আমাদের শিগগিরই বের করতে হবে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকেরা সেটি করতে সম্মত হবেন কি?
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
গণমাধ্যমের খবরমতে, দুবাইয়ে (আসলে দেশটির নাম হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যার রাজধানী আবুধাবি। এটি সাত আমিরাত বা রাজ্য নিয়ে গঠিত। এটি দেশটির অন্যতম রাজ্যও বটে) বর্তমানে ১০ হাজার ৯৭৫টি, অর্থাৎ প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি কোম্পানি ব্যবসা করছে। একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কোম্পানিগুলোর কোনোটিই এই বিনিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি নেয়নি।
এসব কোম্পানির মধ্যে কোনো কোনোটির মালিক বাংলাদেশি নাগরিকত্ব-পরিচয় গোপন করে আলবেনিয়া, সাইপ্রাস প্রভৃতি দেশের ভুয়া নাগরিকত্বের কাগজপত্র ব্যবহার করছেন। আবার অনেকের বাংলাদেশি নাগরিকত্বও আছে। তবে এই প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি কোম্পানির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ কত? তা ওই সংবাদ-প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে এই বিনিয়োগ দেশটির সাত রাজ্যের (দুবাই, শারজা, আবুধাবি, আজমান, উম-আল-কুয়াইন, রাস-আল-কায়মা ও ফুজায়রা) সব কটিতেই কমবেশি রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব বাংলাদেশি কোম্পানির মালিকেরা বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কীভাবে এবং কোথা থেকে সংস্থান করলেন? ধারণা করা যায়, সে দেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা তাঁদের উপার্জন ও সঞ্চয় থেকে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তবে সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য হওয়ার কথা। কারণ সাধারণভাবে বাংলাদেশি কর্মীরা সেখানে যে পরিমাণ মজুরি পান, তা থেকে উদ্বৃত্ত সঞ্চয় দেশের পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য পাঠিয়ে দেন।
তারপরও হয়তো কেউ কেউ অনেক কষ্ট করে কিছুটা সঞ্চয় করে দুবাইয়ের সহজ শর্তের বিনিয়োগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিছু একটা দাঁড় করাতে চাইছেন। তবে অনুমান করি, উল্লিখিত বিনিয়োগকারীর মধ্যে এই সংখ্যা ১ হাজার ১০০ হবে না, অর্থাৎ বাদবাকি প্রায় ১০ হাজার বিনিয়োগকারীর সবাই সেই দলের, যাঁরা এই বিনিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনোরূপ অনুমতি তো নেননি, এমনকি এই অর্থ তাঁরা কোথা থেকে এবং কীভাবে পেলেন, সেই জিজ্ঞাসার জবাবও কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
তাহলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে, উল্লিখিত ১০ হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীর সবাই বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় ওই দেশের বিনিয়োগে যুক্ত হয়েছেন। কারণ যে ধরনের অবৈধ বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী এখন সারা পৃথিবীতেই ব্যাপকভাবে ও বিপুল সংখ্যায় ছড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশ থেকে অর্থ, সম্পদ ও মেধা পাচারের যে সর্বনাশা প্রক্রিয়া সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হয়েছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব অর্থনীতিতে শোষণের এক বিস্তৃততর পশ্চাদ্ভূমি হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, অর্থ পাচারের তালিকায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ভূমিকা শুধু ভয়ংকরই নয়, রীতিমতো বিপজ্জনকও। ধারণা করা যায়, ইউএইর ওই ১১ হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীও মূলত ব্যাংকিং চ্যানেল ও হুন্ডিকেই অর্থ পাচারের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, এই বাংলাদেশিরা এখন সুইস ব্যাংকেও ব্যাপক হারে অর্থ জমা রাখতে শুরু করেছেন এবং সেই অর্থেরও সিংহভাগই চোরাই পথে যাওয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশি এই উদ্যোক্তারা এখন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ভারত প্রভৃতি দেশে এমনকি পশ্চিমের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়ও তাঁদের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করে চলেছেন। কিন্তু হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা হচ্ছে, তাঁরা প্রায় কেউই বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে বৈধ পন্থায় এসব বিনিয়োগ করছেন না। দেশে দেশে এই যে হাজার হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী, তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠান। সেই অর্থে উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের প্রায় সবাই কমবেশি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
কিন্তু এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণপ্রয়াস আছে বলে মনে হয় না। অর্থমন্ত্রী তো জাতীয় সংসদেই বলেছেন, কেউ অর্থ পাচার করেছে বলে তাঁর জানা নেই এবং তিনি এ-ও বলেছেন, কারও জানা থাকলে তা যেন তাঁকে জানানো হয়; অর্থাৎ কে বা কারা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, তা জানার ব্যাপারে তাঁর নিজের বিন্দুমাত্র কোনো আগ্রহ বা উদ্যোগ নেই। অন্য কেউ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে, তখন তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী-সংক্রান্ত সংবাদটি অর্থমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রের অন্য কোনো নীতিনির্ধারকের চোখে পড়েছে কি না, জানি না।
আর পড়ে থাকলে এ ব্যাপারে তাঁদের ভেতরকার প্রতিক্রিয়া কী, তা-ও জানি না। তবে এ প্রসঙ্গে এটা বলা বোধকরি প্রাসঙ্গিক হবে যে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত ছোট্ট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমলযোগ্য নমুনা। সদিচ্ছা থাকলে এটিকে এখন আমলে নিয়ে শিগগিরই এসব বিনিয়োগকারীর নাম, পরিচয় ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করা সম্ভব। পরবর্তী সময়ে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে, সেসব দেশের ওই সব বিনিয়োগকারীর বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য
সংগ্রহ করা যেতে পারে।
বিবেকের তাড়নায় অর্থ পাচার রোধে এখানে কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো। এক. প্রথমেই বিদেশে বিনিয়োগকারী বাংলাদেশিদের দেশওয়ারি একটি তালিকা তৈরি করতে হবে, যেখানে তাঁদের পুঁজির উৎস ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে; দুই. এই প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাংলাদেশে ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে; তিন. উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের মুনাফার সঙ্গে বছরওয়ারি পুনর্বিনিয়োগ ও দেশে মুনাফা প্রত্যাবাসনের (reparation) হিসাব মিলিয়ে দেখতে হবে; চার. বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সহায়তা নিয়ে ওই সব দেশে উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক লেনদেন যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে; পাঁচ. উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।
আর এ সবকিছুই করতে হবে দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধকল্পে প্রাসঙ্গিক করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে। তবে এ ব্যাপারে আর কী কী করণীয় রয়েছে, তা চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরামর্শ ও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। অর্থ পাচার রোধকল্পে ওপরে যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হলো, তার সবই সাদা চোখের সরল প্রস্তাব। আসলে পাচার যদি রোধ করতেই হয়, তাহলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বস্তুত এই রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ঘাটতির কারণেই বর্তমানে এরূপ বিধ্বংসী কায়দায় দেশ থেকে নানা দেশে দেদার অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ঔপনিবেশিক শাসন আমলে বিদেশি শাসকেরা এ ধরনের অর্থ ও সম্পদ পাচার করে নিয়ে গিয়ে নিজ দেশে শিল্পবিপ্লবের মতো বিশাল ঘটনার জন্ম দিয়েছিল [ব্যাপকভাবে মনে করা হয় যে শাসিত উপনিবেশ থেকে শোষণ ও পাচারের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া সম্পদই ছিল ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের (১৭৬০-১৮২০) মূল চালিকাশক্তি]। তাই ২০০ বছরের বেশি আগে সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইউরোপীয় শাসক ও বণিকেরা যে কাজটি করে গেছেন, রাজনৈতিক মদদে দেশীয় বণিকেরা এখন সেই একই কাজ আরও জোরেশোরে করে যাচ্ছেন।
আর সেই কাজের ফলে সরকারের অনুমতি না নিয়ে এক সংযুক্ত আরব আমিরাতেই ব্যবসা করছেন প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী। সারা পৃথিবীতে এ সংখ্যা কত হাজার হবে, সেই সংখ্যা আমাদের জানা নেই। তবে সম্পদ ও অর্থের পাচার যদি রোধ করতেই হয়, তাহলে সে হিসাবও আমাদের শিগগিরই বের করতে হবে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকেরা সেটি করতে সম্মত হবেন কি?
আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১ দিন আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১ দিন আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
১ দিন আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
১ দিন আগে