বিভুরঞ্জন সরকার
রাজনৈতিক মহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে যতটা আগ্রহ বা কৌতূহল আছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ততটা আছে বলে মনে হয় না। এক সময় সাধারণ মানুষের কাছে ভোট ছিল উৎসবের মতো। নানা বাস্তব কারণে এখন ভোটকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ কমতে শুরু করেছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় শেষে নির্বাচন হবে। এখন প্রশ্ন আসছে, আগামী নির্বাচনও কি আগের দুটি নির্বাচনের মতো একতরফা হবে? নাকি আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ? সবাই আশা করেন নির্বাচনটা যেন অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং ভোট দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন।
নির্বাচন কমিশনেরও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার আকাঙ্ক্ষা আছে বলে মনে হচ্ছে। বড় দলগুলো নির্বাচনে না এলে নির্বাচনটা যে জমজমাট হবে না সেটা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা নানা উপলক্ষেই বলছেন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক সংলাপের চেষ্টা করছে। তবে এখনো এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি দলগুলোর কাছ থেকে। বিএনপি বরং ইসির সঙ্গে বসার বিষয়টি নাকচ করেই দিয়েছে। বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপরও বিএনপির আস্থা-বিশ্বাস নেই।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি আওয়ামী লীগ মানবে না। বিএনপি এই দাবি মানাতে সরকারকে বাধ্য করতে পারবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করে না। বহুদিন থেকেই সরকার পতনের কথা বলছে বিএনপি। কিন্তু মানুষকে রাস্তায় নামাতে পারছে না। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হয়, তাহলে কি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না? নির্বাচনে না গিয়ে কি বিএনপি টিকে থাকতে পারবে? নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করে কি বিএনপি সফল হতে পারবে? এর আগে ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে কিন্তু বিএনপির লজ্জাজনক পরাজয়ই হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ কি ২০১৪ সালের চেয়ে দুর্বল অবস্থানে আছে, নাকি এই সময়ে বিএনপির শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ নিশ্চয়ই বলবেন না যে ২০১৪ সালের তুলনায় বিএনপি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। বরং তখন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও তখন তাঁর বেশি ছিল। তারপর অনেক কিছু ঘটে গেছে। দুটি দু্র্নীতির মামলায় তিনি দণ্ডিত হয়েছেন, জেলে গেছেন। বিএনপি আন্দোলন করে তাঁকে কারামুক্ত করার কথা বললেও তা পারেনি। এখন বয়স ও অসুস্থতার কারণে সরকারের বিশেষ অনুগ্রহে তিনি জামিনে বাসায় থাকার অনুমতি পেয়েছেন। তবে রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয়। শারীরিক কারণে তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন না মনে করে তাঁর পুত্র তারেক রহমানকে দল চালানোর ভার দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানও দণ্ডিত এবং লন্ডনে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তারেকের ব্যক্তিগত ইমেজ খুব উজ্জ্বল নয়। এমনকি দেশের বাইরেও তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাই বেশি বলে শোনা যায়। তাই যারা মনে করছেন, বিএনপি এবার ‘দেখিয়ে দেবে’ তারা হয়তো অচিরেই দেখবেন যে বিএনপির দেখানোর সক্ষমতা কত কম!
অন্যদিকে, বর্তমান বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তা অনেকে কল্পনাও করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি দেশে নেই। তাছাড়া দলটি গত ১৪ বছরে যেসব দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনের আপেক্ষিক হার হ্রাস, কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা, বিশ্বব্যাংকের বিরোধিতার মুখেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন তথা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর প্রভৃতি সাফল্য আওয়ামী লীগকে দিয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। এর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও বর্তমান সরকারের সাফল্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছে। ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হলেও এই চারটি শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাশিয়া, চীন ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে বার্তা দিয়েছেন তা বাংলাদেশের নতুন মর্যাদারই স্বীকৃতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর শুভেচ্ছাবাণীতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আপনি বিশ্ববাসীর সামনে চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশ তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’ শুভেচ্ছাবার্তায় বাইডেন বলেন, ‘স্বাধীনতার মূল্য বাংলাদেশিরা ভাল বোঝে। কারণ, তারা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে ১৯৭১ সালে বীরের বেশে লড়াই করেছে এবং নিজেদের ভাষায় কথা বলার জন্য লড়েছে।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গণতন্ত্র, সাম্য, মানবাধিকার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের ক্ষেত্রে উভয় দেশের ‘গভীর মূল্যবোধের’ কথা স্মরণ করেন।
আমাদের দেশের কোনো কোনো মহল বাইডেনের ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের’ কথার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তবে এতে বিএনপির উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন প্রশাসন নিশ্চয়ই পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পারফরম্যান্সের কথা ভুলে যায়নি। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে বানিয়েছিল মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের কারখানা। সে সময় যেখানে-সেখানে বোমা হামলা হতো, এমনকি ৬৩টি জেলায়ও একসঙ্গে বোমা হামলার নজির রয়েছে। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তা জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
এটা বলা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশের ইতিহাস মানে আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা শুধু অকল্পনীয় বিষয়ই নয়, অযৌক্তিকও। দারুণ এক ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই ভগ্নদশা থেকে দল ও দেশকে টেনে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মডেল।
শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নাও নিতে পারে । তিনি বলেছেন, বিএনপির আচরণ রহস্যজনক। ওদের কৌশল কী, সেটাও বোঝা মুশকিল। মনে হয়, ওরা (বিএনপি) নির্বাচনে আসবে না। এবার তাদের কৌশলটা ভিন্ন।
এখন প্রশ্ন হলো, বিএনপির ভিন্ন কৌশলটা কি? গণমাধ্যমে যেসব খবর বের হচ্ছে তা থেকে জানা যাচ্ছে, নির্দলীয় নি্রবাচনকালীন সরকারের দাবি না মানলে আগামীতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। শেষ পর্যন্ত যদি আন্দোলনে সফলতা না আসে এবং বিএনপিকে যদি আবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, সেক্ষেত্রে সেই নির্বাচন ঠেকাতে কী ধরনের কৌশল নেওয়া যেতে পারে, দলটির ভাবনায় আন্দোলনের পাশাপাশি সে বিষয়টিও রয়েছে। ২০১৪-এর নির্বাচন ও নির্বাচনপূর্ব আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় এমন ভাবছে বিএনপি।
বিএনপির পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারেরও নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। সরকার এটা বুঝতে পারছে যে আগামী নির্বাচনই আগের দুটি নির্বাচনের মতো হবে না। বিএনপি না এলেও নি্র্বাচনকে কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা যায় তার চিন্তাভাবনা সরকারের আছে। বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়াদৌড়ি দেখে বিএনপি হয়তো ভাবছে, তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। সরকারও চায় বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি যতক্ষণ ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখাতে না পারছে, ততক্ষণ তাদের আন্দোলনে জোয়ার আসার বাস্তব সম্ভাবনা কম। শেখ হাসিনার বিকল্প কে – এই প্রশ্নের উত্তর না পেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকার পতনের আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে হয় না।
টানা সরকারে থাকায় মানুষের মধ্যে কিছু ক্ষোভ ও হতাশার উপাদান যুক্ত হলেও তা সরকার পতনের আন্দোলনে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করার মতো নয়। শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা একেবারে নড়বড়ে হয়নি। জাতীয় ভাবে যেমন বিভিন্ন সামাজিক শক্তির সমর্থন সরকারের ওপর আছে, তেমনি বর্তমান জটিল ও অস্থির সময়েও আন্তর্জাতিক কতগুলো ইস্যুতে শেখ হাসিনার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে কারণেও তাঁর প্রতি কারও আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়নি। সব মিলিয়ে এটা বলা যায় যে সরকার খাদের কিনারে নেই, খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে বিএনপি। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপিকে এবার অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
রাজনৈতিক মহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে যতটা আগ্রহ বা কৌতূহল আছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ততটা আছে বলে মনে হয় না। এক সময় সাধারণ মানুষের কাছে ভোট ছিল উৎসবের মতো। নানা বাস্তব কারণে এখন ভোটকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ কমতে শুরু করেছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় শেষে নির্বাচন হবে। এখন প্রশ্ন আসছে, আগামী নির্বাচনও কি আগের দুটি নির্বাচনের মতো একতরফা হবে? নাকি আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ? সবাই আশা করেন নির্বাচনটা যেন অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং ভোট দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন।
নির্বাচন কমিশনেরও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার আকাঙ্ক্ষা আছে বলে মনে হচ্ছে। বড় দলগুলো নির্বাচনে না এলে নির্বাচনটা যে জমজমাট হবে না সেটা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা নানা উপলক্ষেই বলছেন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক সংলাপের চেষ্টা করছে। তবে এখনো এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি দলগুলোর কাছ থেকে। বিএনপি বরং ইসির সঙ্গে বসার বিষয়টি নাকচ করেই দিয়েছে। বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপরও বিএনপির আস্থা-বিশ্বাস নেই।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি আওয়ামী লীগ মানবে না। বিএনপি এই দাবি মানাতে সরকারকে বাধ্য করতে পারবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করে না। বহুদিন থেকেই সরকার পতনের কথা বলছে বিএনপি। কিন্তু মানুষকে রাস্তায় নামাতে পারছে না। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হয়, তাহলে কি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না? নির্বাচনে না গিয়ে কি বিএনপি টিকে থাকতে পারবে? নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করে কি বিএনপি সফল হতে পারবে? এর আগে ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে কিন্তু বিএনপির লজ্জাজনক পরাজয়ই হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ কি ২০১৪ সালের চেয়ে দুর্বল অবস্থানে আছে, নাকি এই সময়ে বিএনপির শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ নিশ্চয়ই বলবেন না যে ২০১৪ সালের তুলনায় বিএনপি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। বরং তখন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও তখন তাঁর বেশি ছিল। তারপর অনেক কিছু ঘটে গেছে। দুটি দু্র্নীতির মামলায় তিনি দণ্ডিত হয়েছেন, জেলে গেছেন। বিএনপি আন্দোলন করে তাঁকে কারামুক্ত করার কথা বললেও তা পারেনি। এখন বয়স ও অসুস্থতার কারণে সরকারের বিশেষ অনুগ্রহে তিনি জামিনে বাসায় থাকার অনুমতি পেয়েছেন। তবে রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয়। শারীরিক কারণে তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন না মনে করে তাঁর পুত্র তারেক রহমানকে দল চালানোর ভার দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানও দণ্ডিত এবং লন্ডনে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তারেকের ব্যক্তিগত ইমেজ খুব উজ্জ্বল নয়। এমনকি দেশের বাইরেও তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাই বেশি বলে শোনা যায়। তাই যারা মনে করছেন, বিএনপি এবার ‘দেখিয়ে দেবে’ তারা হয়তো অচিরেই দেখবেন যে বিএনপির দেখানোর সক্ষমতা কত কম!
অন্যদিকে, বর্তমান বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তা অনেকে কল্পনাও করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি দেশে নেই। তাছাড়া দলটি গত ১৪ বছরে যেসব দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনের আপেক্ষিক হার হ্রাস, কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা, বিশ্বব্যাংকের বিরোধিতার মুখেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন তথা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর প্রভৃতি সাফল্য আওয়ামী লীগকে দিয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। এর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও বর্তমান সরকারের সাফল্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছে। ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হলেও এই চারটি শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাশিয়া, চীন ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে বার্তা দিয়েছেন তা বাংলাদেশের নতুন মর্যাদারই স্বীকৃতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর শুভেচ্ছাবাণীতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আপনি বিশ্ববাসীর সামনে চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশ তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’ শুভেচ্ছাবার্তায় বাইডেন বলেন, ‘স্বাধীনতার মূল্য বাংলাদেশিরা ভাল বোঝে। কারণ, তারা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে ১৯৭১ সালে বীরের বেশে লড়াই করেছে এবং নিজেদের ভাষায় কথা বলার জন্য লড়েছে।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গণতন্ত্র, সাম্য, মানবাধিকার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের ক্ষেত্রে উভয় দেশের ‘গভীর মূল্যবোধের’ কথা স্মরণ করেন।
আমাদের দেশের কোনো কোনো মহল বাইডেনের ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের’ কথার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তবে এতে বিএনপির উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন প্রশাসন নিশ্চয়ই পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পারফরম্যান্সের কথা ভুলে যায়নি। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে বানিয়েছিল মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের কারখানা। সে সময় যেখানে-সেখানে বোমা হামলা হতো, এমনকি ৬৩টি জেলায়ও একসঙ্গে বোমা হামলার নজির রয়েছে। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তা জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
এটা বলা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশের ইতিহাস মানে আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা শুধু অকল্পনীয় বিষয়ই নয়, অযৌক্তিকও। দারুণ এক ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই ভগ্নদশা থেকে দল ও দেশকে টেনে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মডেল।
শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নাও নিতে পারে । তিনি বলেছেন, বিএনপির আচরণ রহস্যজনক। ওদের কৌশল কী, সেটাও বোঝা মুশকিল। মনে হয়, ওরা (বিএনপি) নির্বাচনে আসবে না। এবার তাদের কৌশলটা ভিন্ন।
এখন প্রশ্ন হলো, বিএনপির ভিন্ন কৌশলটা কি? গণমাধ্যমে যেসব খবর বের হচ্ছে তা থেকে জানা যাচ্ছে, নির্দলীয় নি্রবাচনকালীন সরকারের দাবি না মানলে আগামীতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। শেষ পর্যন্ত যদি আন্দোলনে সফলতা না আসে এবং বিএনপিকে যদি আবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, সেক্ষেত্রে সেই নির্বাচন ঠেকাতে কী ধরনের কৌশল নেওয়া যেতে পারে, দলটির ভাবনায় আন্দোলনের পাশাপাশি সে বিষয়টিও রয়েছে। ২০১৪-এর নির্বাচন ও নির্বাচনপূর্ব আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় এমন ভাবছে বিএনপি।
বিএনপির পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারেরও নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। সরকার এটা বুঝতে পারছে যে আগামী নির্বাচনই আগের দুটি নির্বাচনের মতো হবে না। বিএনপি না এলেও নি্র্বাচনকে কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা যায় তার চিন্তাভাবনা সরকারের আছে। বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়াদৌড়ি দেখে বিএনপি হয়তো ভাবছে, তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। সরকারও চায় বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি যতক্ষণ ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখাতে না পারছে, ততক্ষণ তাদের আন্দোলনে জোয়ার আসার বাস্তব সম্ভাবনা কম। শেখ হাসিনার বিকল্প কে – এই প্রশ্নের উত্তর না পেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকার পতনের আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে হয় না।
টানা সরকারে থাকায় মানুষের মধ্যে কিছু ক্ষোভ ও হতাশার উপাদান যুক্ত হলেও তা সরকার পতনের আন্দোলনে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করার মতো নয়। শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা একেবারে নড়বড়ে হয়নি। জাতীয় ভাবে যেমন বিভিন্ন সামাজিক শক্তির সমর্থন সরকারের ওপর আছে, তেমনি বর্তমান জটিল ও অস্থির সময়েও আন্তর্জাতিক কতগুলো ইস্যুতে শেখ হাসিনার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে কারণেও তাঁর প্রতি কারও আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়নি। সব মিলিয়ে এটা বলা যায় যে সরকার খাদের কিনারে নেই, খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে বিএনপি। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপিকে এবার অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
১১ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
১১ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
১১ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
১১ ঘণ্টা আগে