অর্ণব সান্যাল
দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অত্যন্ত সুখবর। যদিও সব মাথা ঠিক সমান স্বস্তিতে নেই। আয় বাড়ার খবরে তাই সাধারণের আনন্দ ঢের কম। বরং পকেট বাঁচাতে হিমশিম অবস্থায় উন্নয়নের মহাসড়কে হোঁচট খেতে হচ্ছে সময়ে সময়ে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু গড় আয় কত বেড়েছে, সেটি একটু জানা যাক। সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, নতুন ভিত্তিবছরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার, যা গত অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার। সে হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩২৭ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে নতুন ভিত্তিবছর ধরে সরকার এখন থেকে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, মাথাপিছু আয় গণনা করছে। এত দিন ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে এ হিসাব করা হতো। আর ভিত্তিবছর পরিবর্তন করে হিসাব করায় আগের কয়েক বছরের মাথাপিছু আয়ও বেড়ে গেছে। বলা হচ্ছে, মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে এটিই প্রকৃত চিত্র।
চিত্রের ‘প্রকৃত’ রূপ একটি ধোঁয়াশাপূর্ণ বিষয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মিহি শব্দের সঙ্গে সুশীতল বাতাসের যে ব্যঞ্জন তৈরি হয়, তার মধ্যে থাকলে প্রকৃত চিত্র এক ধরনের হয়। আবার যাদের অবস্থা হয় মনজু মিয়াদের মতো, তাদের অবস্থা ভিন্ন। আগে এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থানে বসে থাকাদের গতিক কিছুটা সুবিধার ছিল। এবার সেখানেও লেগেছে ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে আছে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত।
এই যেমন ধরুন, বাজার থেকে ফেরার পর এখন আর মন ভালো থাকছে না। চাল-ডাল-তেল-নুনের পাশাপাশি মাছ-মুরগি—সবকিছুতেই আগুনের আঁচ। তা আরও তীব্র করতে এবার শাক-লতা-পাতার দামও ঊর্ধ্বমুখী। অর্থাৎ, কচু–ঘেঁচু খেয়ে পেট ভরানোর দিনও শেষ। এসব দেখতে দেখতে চোখে যখন মনজু মিয়ারা ধরা পড়ে, তখন আসলে মাথাপিছু আয় বাড়ার খবর আর উল্লাস জাগাতে পারে না।
মনজু মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক সন্ধ্যায়। সেদিন রাস্তায় গাড়ির জট ছিল বেশ। তাঁকে যখন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম, তখন তাড়াহুড়োয় ঠিক খেয়াল হয়নি। যখন হলো, তখন থেকেই শুরু মনজু মিয়ার বাম হাত নিয়ে গল্প।
মনজু মিয়ার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। শৈশবেই বিদ্যুৎজনিত এক দুর্ঘটনায় তিনি বাম হাত প্রায় কনুই থেকে হারান। এর পর থেকেই তাঁর জীবন চলছে শুধু ডান হাতের ওপর। সেই ডান হাত আগে টাকা-পয়সার হিসাব কষত কড়াভাবে। মনজু ব্যবসা করতেন যে! কিন্তু এক করোনা মহামারি তাঁকে রাজধানী শহরের রিকশাওয়ালা বানিয়েছে। আর সেই রিকশা চলে শুধু ডান হাতের ভরসায়। তবে কখনো কখনো ঢালু রাস্তায় যখন রিকশা টেনে ওঠাতে হয়, তখন বাম হাতও ধাক্কা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। সত্যিকার অর্থে, সেই দৃশ্যই সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর।
এই মনজু মিয়ার দিনের সব খরচ মেটানোর পর হাতে থাকে মোটে তিন থেকে পাঁচ শ টাকা। যদিও এ দেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩২৭ ডলার, তবে মনজু মিয়াদের তাতে কিছু যায় আসে না। তাঁদের যে বাড়িতে বউ-বাচ্চাদের টাকা পাঠানোর চিন্তা করে যেতে হয় প্রতিনিয়ত। আর তা করতে করতে মনজুর নিয়তির কোনো পরিবর্তন আসে না।
এসব পড়ে মাথাপিছু আয়ের আক্ষরিক সংজ্ঞা আমাকে আপনারা শোনাতেই পারেন। কিন্তু বাজার খরচের পাগলা ঘোড়ার গতির সঙ্গে যুঝতে যুঝতে ক্লান্ত এই আমি বা অর্ধেক ‘নাই’ হয়ে যাওয়া হাত নিয়ে রিকশা ঠেলা মনজু মিয়ার কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ আমরা জানি, ওই মাথাপিছু আয়ের বেশির ভাগটাই আছে অন্য কারও দখলে। তাঁদের হয়তো কোটিপতির তালিকায় নাম ওঠে, বা কালোবাজারির। তালিকার নাম ‘ঋণখেলাপি’ কিংবা ‘কর ফাঁকি’ও হতে পারে। ওসব কথা অবশ্য সর্বময় কর্তারা উল্লেখ করেন না তেমন। আয় বেড়েছে বলেই তাঁরা খালাস, বগল বাজানো শুরু। আর আমাদের মাথায় জেঁকে বসে শুধু ঋণের দুশ্চিন্তা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নাগরিকদের বর্তমানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৮৯০ টাকা। বাড়তি আয় হোক না হোক, ঋণ তো চোকাতেই হয়! আর তাতে বাধ্য করার নানা ফন্দি-ফিকিরও তো বর্তমান।
এর ওপর আছে কপাল কুঁচকে দেওয়ার মতো অন্যান্য ইস্যু। এই যেমন ধরুন, বাস ভাড়া বৃদ্ধি, ডিজেল-কেরোসিনের বাড়তি দাম বা গ্যাসের সিলিন্ডারের বাড়তি খরচ জোগানোর হ্যাপা। কর্তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েই নাকে তেল দিতে পারেন বটে। তবে সাধারণের সেই বিজ্ঞপ্তি পড়ে আত্মস্থ ও হজম করতে বেশ কষ্ট হয়, ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটে ঢের। এর মাঝে যখন উন্নয়নের ‘বুলি’ শোনানো হয়, তখন অসহায়ের হাসি মুখে ঝোলানো ছাড়া আর গত্যন্তর থাকে না।
যাক, মনজু মিয়ার কথাতেই ফিরি বরং। মনজু মিয়ারা এত কিছুর পরও হাসেন বটে। তবে তা বিষণ্ন হয় ভীষণ। দেশটা আসলে চলছেই মনজু মিয়াদের এক ডান হাতের ওপর। বাম হাতে যে কী ‘যন্ত্রণা’ তা কেউ জানতেও চায় না!
দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অত্যন্ত সুখবর। যদিও সব মাথা ঠিক সমান স্বস্তিতে নেই। আয় বাড়ার খবরে তাই সাধারণের আনন্দ ঢের কম। বরং পকেট বাঁচাতে হিমশিম অবস্থায় উন্নয়নের মহাসড়কে হোঁচট খেতে হচ্ছে সময়ে সময়ে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু গড় আয় কত বেড়েছে, সেটি একটু জানা যাক। সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, নতুন ভিত্তিবছরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার, যা গত অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার। সে হিসাবে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩২৭ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে নতুন ভিত্তিবছর ধরে সরকার এখন থেকে জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, মাথাপিছু আয় গণনা করছে। এত দিন ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে এ হিসাব করা হতো। আর ভিত্তিবছর পরিবর্তন করে হিসাব করায় আগের কয়েক বছরের মাথাপিছু আয়ও বেড়ে গেছে। বলা হচ্ছে, মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে এটিই প্রকৃত চিত্র।
চিত্রের ‘প্রকৃত’ রূপ একটি ধোঁয়াশাপূর্ণ বিষয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মিহি শব্দের সঙ্গে সুশীতল বাতাসের যে ব্যঞ্জন তৈরি হয়, তার মধ্যে থাকলে প্রকৃত চিত্র এক ধরনের হয়। আবার যাদের অবস্থা হয় মনজু মিয়াদের মতো, তাদের অবস্থা ভিন্ন। আগে এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থানে বসে থাকাদের গতিক কিছুটা সুবিধার ছিল। এবার সেখানেও লেগেছে ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে আছে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত।
এই যেমন ধরুন, বাজার থেকে ফেরার পর এখন আর মন ভালো থাকছে না। চাল-ডাল-তেল-নুনের পাশাপাশি মাছ-মুরগি—সবকিছুতেই আগুনের আঁচ। তা আরও তীব্র করতে এবার শাক-লতা-পাতার দামও ঊর্ধ্বমুখী। অর্থাৎ, কচু–ঘেঁচু খেয়ে পেট ভরানোর দিনও শেষ। এসব দেখতে দেখতে চোখে যখন মনজু মিয়ারা ধরা পড়ে, তখন আসলে মাথাপিছু আয় বাড়ার খবর আর উল্লাস জাগাতে পারে না।
মনজু মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক সন্ধ্যায়। সেদিন রাস্তায় গাড়ির জট ছিল বেশ। তাঁকে যখন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম, তখন তাড়াহুড়োয় ঠিক খেয়াল হয়নি। যখন হলো, তখন থেকেই শুরু মনজু মিয়ার বাম হাত নিয়ে গল্প।
মনজু মিয়ার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। শৈশবেই বিদ্যুৎজনিত এক দুর্ঘটনায় তিনি বাম হাত প্রায় কনুই থেকে হারান। এর পর থেকেই তাঁর জীবন চলছে শুধু ডান হাতের ওপর। সেই ডান হাত আগে টাকা-পয়সার হিসাব কষত কড়াভাবে। মনজু ব্যবসা করতেন যে! কিন্তু এক করোনা মহামারি তাঁকে রাজধানী শহরের রিকশাওয়ালা বানিয়েছে। আর সেই রিকশা চলে শুধু ডান হাতের ভরসায়। তবে কখনো কখনো ঢালু রাস্তায় যখন রিকশা টেনে ওঠাতে হয়, তখন বাম হাতও ধাক্কা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। সত্যিকার অর্থে, সেই দৃশ্যই সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর।
এই মনজু মিয়ার দিনের সব খরচ মেটানোর পর হাতে থাকে মোটে তিন থেকে পাঁচ শ টাকা। যদিও এ দেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩২৭ ডলার, তবে মনজু মিয়াদের তাতে কিছু যায় আসে না। তাঁদের যে বাড়িতে বউ-বাচ্চাদের টাকা পাঠানোর চিন্তা করে যেতে হয় প্রতিনিয়ত। আর তা করতে করতে মনজুর নিয়তির কোনো পরিবর্তন আসে না।
এসব পড়ে মাথাপিছু আয়ের আক্ষরিক সংজ্ঞা আমাকে আপনারা শোনাতেই পারেন। কিন্তু বাজার খরচের পাগলা ঘোড়ার গতির সঙ্গে যুঝতে যুঝতে ক্লান্ত এই আমি বা অর্ধেক ‘নাই’ হয়ে যাওয়া হাত নিয়ে রিকশা ঠেলা মনজু মিয়ার কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ আমরা জানি, ওই মাথাপিছু আয়ের বেশির ভাগটাই আছে অন্য কারও দখলে। তাঁদের হয়তো কোটিপতির তালিকায় নাম ওঠে, বা কালোবাজারির। তালিকার নাম ‘ঋণখেলাপি’ কিংবা ‘কর ফাঁকি’ও হতে পারে। ওসব কথা অবশ্য সর্বময় কর্তারা উল্লেখ করেন না তেমন। আয় বেড়েছে বলেই তাঁরা খালাস, বগল বাজানো শুরু। আর আমাদের মাথায় জেঁকে বসে শুধু ঋণের দুশ্চিন্তা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নাগরিকদের বর্তমানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৮৯০ টাকা। বাড়তি আয় হোক না হোক, ঋণ তো চোকাতেই হয়! আর তাতে বাধ্য করার নানা ফন্দি-ফিকিরও তো বর্তমান।
এর ওপর আছে কপাল কুঁচকে দেওয়ার মতো অন্যান্য ইস্যু। এই যেমন ধরুন, বাস ভাড়া বৃদ্ধি, ডিজেল-কেরোসিনের বাড়তি দাম বা গ্যাসের সিলিন্ডারের বাড়তি খরচ জোগানোর হ্যাপা। কর্তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েই নাকে তেল দিতে পারেন বটে। তবে সাধারণের সেই বিজ্ঞপ্তি পড়ে আত্মস্থ ও হজম করতে বেশ কষ্ট হয়, ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটে ঢের। এর মাঝে যখন উন্নয়নের ‘বুলি’ শোনানো হয়, তখন অসহায়ের হাসি মুখে ঝোলানো ছাড়া আর গত্যন্তর থাকে না।
যাক, মনজু মিয়ার কথাতেই ফিরি বরং। মনজু মিয়ারা এত কিছুর পরও হাসেন বটে। তবে তা বিষণ্ন হয় ভীষণ। দেশটা আসলে চলছেই মনজু মিয়াদের এক ডান হাতের ওপর। বাম হাতে যে কী ‘যন্ত্রণা’ তা কেউ জানতেও চায় না!
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৭ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৭ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৭ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৭ ঘণ্টা আগে