বিভুরঞ্জন সরকার
আজকের পত্রিকা: জন্মদিন উপলক্ষে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন লাগছে এবার জন্মদিন পালন সামনে রেখে?
হায়দার আকবর খান রনো: ধন্যবাদ। এবার আমার ৮১ বছর পূর্ণ হলো, মানে ৮২ বছরে পা দিলাম। নতুন করে তেমন কোনো ভাবনা বা অনুভূতি নেই। এখন তো আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাব জীবনের পড়ন্ত বেলার দিকে। এখন চোখে ভালো দেখতে পারি না, ঝাপসা দেখি। জীবনের বেশির ভাগটা তো এখন অতীত। আর কয় দিন বাঁচব, সেটা তো জানি না। তবে খুব দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখন আর আগের মতো বাইরে যেতে পারি না। চোখে ঝাপসা দেখার কারণে পড়তেও পারি না। এ জন্য খুব খারাপ লাগে, অসহায় বোধ করি। সারা জীবন ছোটাছুটি করেছি, রাজনীতি করেছি। এখনো আমি পার্টির সদস্য, কিন্তু পার্টির তো কোনো কাজ করতে পারি না, এমনকি পার্টি অফিসেও যেতে পারি না। এ জন্য একা একা বাসায় বসে, শুয়ে থাকতে হয়। আমার কাছে একটা ছেলে আসে। আমার তরুণ বন্ধু। সে আমাকে কিছু পড়ে শোনায় আবার কখনো আমার কিছু বলা কথা লিখে দেয়। এভাবেই চলছে।
আজকের পত্রিকা: আপনার ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবন। দীর্ঘ সময়। কী মনে হয়, সঠিক ধারায় আছেন?
হায়দার আকবর খান রনো: ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবন ঠিকই। এর মধ্যে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। অনেক ভুল করেছি। কিছু সাফল্যও আছে। তেমন বড় কিছু সাফল্য না। তবে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জমিন প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অতি সামান্য হলেও ভূমিকা ছিল। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয় যে ওই যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলাম। সৌভাগ্যবান মনে হয় এ কারণে যে সেই সময় আমি একেবারেই যুবক ছিলাম। প্রথম থেকে ভালোভাবে সব দিকে না তাকানোর কারণে কিছু ভুল নিশ্চয়ই হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: একসময় মেনন-রনো নাম দুটি একসঙ্গে উচ্চারিত হতো। এখন দুজনের পথ দুই দিকে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
হায়দার আকবর খান রনো: রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বন্ধুত্ব যখন আমরা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকে। সেই বন্ধুত্বে এখনো কোনো ঘাটতি পড়েনি। যদিও প্রায় দেড় যুগ পর রাজনৈতিক কারণে মতপার্থক্য হয়ে গেছে। আমরা এখন ভিন্ন পথের যাত্রী। তার পরও আমি তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব অটুট আছে এবং আগামী দিনগুলোতে এই বন্ধুত্ব থাকবে বলে মনে করি।
আজকের পত্রিকা: আপনার রাজনৈতিক জীবন প্রভাবিত করেছে এমন কয়েকজন মানুষ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
হায়দার আকবর খান রনো: আমার রাজনৈতিক জীবন প্রভাবিত করেছেন প্রথমত, আমার মা ও বাবা। তাঁদের উৎসাহ (তাঁরা দুজনই কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন) ও সাহায্য না পেলে আমি এ পথে এগোতে পারতাম না। এ ছাড়া আমার রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করেছেন ভারতবর্ষের কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা। যদিও তাঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ একাত্তর সালের পরে। এর মধ্যে একজন হলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ। তাঁর সঙ্গে আমার মাত্র তিনবার দেখা হয়েছিল কলকাতায়। ঢাকায়ও দেখা হয়েছিল। তাঁর আশ্চর্য ব্যক্তিত্ব আমাকে প্রভাবিত করেছিল। আরেকজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করতে চাই, তিনি হলেন পি সুন্দরাইয়া। এ ছাড়া বাংলাদেশেরও কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা আমাকে প্রভাবিত করেছেন।
আজকের পত্রিকা: আপনি যখন সিপিবির বাইরে ছিলেন, তখন দেশের রাজনীতিতে দলটির দৃশ্যমান প্রভাব ছিল। এখন আপনি প্রভাবহীন সিপিবিতে—এমন কথা কেউ বললে কী জবাব দেবেন?
হায়দার আকবর খান রনো: যদি প্রভাবের কথা বলেন, তাহলে দেশে বেশি প্রভাবশালী দল তো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কোন দলের প্রভাব কতখানি, সেই বিবেচনা বা ভাবনা থেকে তো আমি দল করি না। তাহলে তো আমি বড় দুই দলের একটি করতাম। আমি রাজনীতি করি আদর্শবোধের জায়গা থেকে। বাংলাদেশে যে কয়েকটি বাম দল আছে, এর মধ্যে সিপিবিতেই আমার আস্থা রাখার জায়গা মনে হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি তো আমার নিজের হাতেই গড়া। একসময় এই দলের সঙ্গে আমার মতবিরোধ হয়ে গেল। দলে সংখ্যালঘু হয়ে দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। এসব নিয়ে বিস্তারিত আমার তখনকার বিবৃতিতে আছে। এরপর আমি সিপিবিতে যোগ দিলাম। সেই সময় আমি আর কোনো বাম দল খুঁজে পাইনি, যে দলে গিয়ে আমি কাজ করতে পারি। আমার যে চিন্তা, আদর্শ-উদ্দেশ্য, তাকে খানিকটা হলেও এগিয়ে নিতে পারি, সে রকম দল সিপিবিকেই মনে হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলুন।
হায়দার আকবর খান রনো: এই মুহূর্তে কমিউনিজমের একটা ভাটার যুগ চলছে—এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ইতিহাসের চূড়ান্ত রায় এখনো ঘোষিত হয়নি। আমার ধারণা, পুঁজিবাদ যে ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে, তাতে বেশি দিন এটা টিকবে না। যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলো, তখন সবাই বলেছিল যে এক মেরু বিশ্ব তৈরি হয়ে গেল। কে জানত তার কয়েক দশক পরেই সেই পুঁজিবাদী বিশ্বে মেরুকরণ হবে? আজকের রাশিয়া তো পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশ। ইউক্রেনও তো তাই। তাহলে তাদের মধ্যে কেন এখন যুদ্ধ চলছে? আগের স্নায়ুযুদ্ধের কথা বাদই দিলাম। পুঁজিবাদ এই পৃথিবীকে কিছুই দিতে পারবে না। যুদ্ধ ছাড়াও তারা পরিবেশকে ধ্বংস করছে। পরিবেশ সমস্যা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে হলেও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আর পুঁজিবাদের পতন অনিবার্য। একটা কথা বলে রাখি, সোভিয়েত সমাজতন্ত্র তো শেষ হয়ে গেছে। আর চীন নিজেকে সমাজতান্ত্রিক বললেও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চীনে আর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়। মানুষের ইতিহাস হলো সাম্যের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার ইতিহাস। সেটা কার্ল মার্ক্সের আগে এবং পরেও ছিল। স্পার্টাকাস থেকে শুরু করে সূর্য সেন পর্যন্ত সবাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার জন্য এবং মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন। এ লড়াই এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এ লড়াইয়ে সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে। আমার ধারণা, একবিংশ শতাব্দীতে আমরা পুঁজিবাদের পতন এবং নতুন সমাজের অভ্যুদয় দেখতে পাব।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। কী করণীয়?
হায়দার আকবর খান রনো: বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভিত্তি করেই। পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ত্বকে অসাড় প্রমাণ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি ঘোষিত হয়েছিল, তার একটি ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া ও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার যে নীতি নেওয়া হয়েছিল, তা এখনো বাতিল হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক। এখন মৌলবাদের একটা দাপট আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমার সরাসরি শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে দীপনকেও হত্যা করেছে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীরা। তারা আরও কিছু ব্যক্তিকেও খুন করেছে। এই যে ভয়াবহ ঘটনাগুলো ঘটল—এ রকম যে হবে, সেটা আমি ধারণা করতে পারি না। ১৯৭১ বা ’৭২ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন দেশে সমাজতন্ত্র যে হতে যাচ্ছে না, এটা আমি মনে করতাম। কারণ আওয়ামী লীগ দিয়ে সমাজতন্ত্র হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমি ধারণা করেছিলাম, দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনৈতিক দল বলেই মনে করা হতো। কিন্তু আমার ধারণা যে ভুল ছিল, সেটা তো আজ প্রমাণিত। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতেই হবে। নতুবা আমাদের স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যেতে বাধ্য।
আজকের পত্রিকা: জন্মদিন উপলক্ষে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন লাগছে এবার জন্মদিন পালন সামনে রেখে?
হায়দার আকবর খান রনো: ধন্যবাদ। এবার আমার ৮১ বছর পূর্ণ হলো, মানে ৮২ বছরে পা দিলাম। নতুন করে তেমন কোনো ভাবনা বা অনুভূতি নেই। এখন তো আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাব জীবনের পড়ন্ত বেলার দিকে। এখন চোখে ভালো দেখতে পারি না, ঝাপসা দেখি। জীবনের বেশির ভাগটা তো এখন অতীত। আর কয় দিন বাঁচব, সেটা তো জানি না। তবে খুব দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখন আর আগের মতো বাইরে যেতে পারি না। চোখে ঝাপসা দেখার কারণে পড়তেও পারি না। এ জন্য খুব খারাপ লাগে, অসহায় বোধ করি। সারা জীবন ছোটাছুটি করেছি, রাজনীতি করেছি। এখনো আমি পার্টির সদস্য, কিন্তু পার্টির তো কোনো কাজ করতে পারি না, এমনকি পার্টি অফিসেও যেতে পারি না। এ জন্য একা একা বাসায় বসে, শুয়ে থাকতে হয়। আমার কাছে একটা ছেলে আসে। আমার তরুণ বন্ধু। সে আমাকে কিছু পড়ে শোনায় আবার কখনো আমার কিছু বলা কথা লিখে দেয়। এভাবেই চলছে।
আজকের পত্রিকা: আপনার ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবন। দীর্ঘ সময়। কী মনে হয়, সঠিক ধারায় আছেন?
হায়দার আকবর খান রনো: ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবন ঠিকই। এর মধ্যে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। অনেক ভুল করেছি। কিছু সাফল্যও আছে। তেমন বড় কিছু সাফল্য না। তবে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জমিন প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অতি সামান্য হলেও ভূমিকা ছিল। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয় যে ওই যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলাম। সৌভাগ্যবান মনে হয় এ কারণে যে সেই সময় আমি একেবারেই যুবক ছিলাম। প্রথম থেকে ভালোভাবে সব দিকে না তাকানোর কারণে কিছু ভুল নিশ্চয়ই হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: একসময় মেনন-রনো নাম দুটি একসঙ্গে উচ্চারিত হতো। এখন দুজনের পথ দুই দিকে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
হায়দার আকবর খান রনো: রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বন্ধুত্ব যখন আমরা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকে। সেই বন্ধুত্বে এখনো কোনো ঘাটতি পড়েনি। যদিও প্রায় দেড় যুগ পর রাজনৈতিক কারণে মতপার্থক্য হয়ে গেছে। আমরা এখন ভিন্ন পথের যাত্রী। তার পরও আমি তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব অটুট আছে এবং আগামী দিনগুলোতে এই বন্ধুত্ব থাকবে বলে মনে করি।
আজকের পত্রিকা: আপনার রাজনৈতিক জীবন প্রভাবিত করেছে এমন কয়েকজন মানুষ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
হায়দার আকবর খান রনো: আমার রাজনৈতিক জীবন প্রভাবিত করেছেন প্রথমত, আমার মা ও বাবা। তাঁদের উৎসাহ (তাঁরা দুজনই কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন) ও সাহায্য না পেলে আমি এ পথে এগোতে পারতাম না। এ ছাড়া আমার রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করেছেন ভারতবর্ষের কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা। যদিও তাঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ একাত্তর সালের পরে। এর মধ্যে একজন হলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ। তাঁর সঙ্গে আমার মাত্র তিনবার দেখা হয়েছিল কলকাতায়। ঢাকায়ও দেখা হয়েছিল। তাঁর আশ্চর্য ব্যক্তিত্ব আমাকে প্রভাবিত করেছিল। আরেকজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করতে চাই, তিনি হলেন পি সুন্দরাইয়া। এ ছাড়া বাংলাদেশেরও কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা আমাকে প্রভাবিত করেছেন।
আজকের পত্রিকা: আপনি যখন সিপিবির বাইরে ছিলেন, তখন দেশের রাজনীতিতে দলটির দৃশ্যমান প্রভাব ছিল। এখন আপনি প্রভাবহীন সিপিবিতে—এমন কথা কেউ বললে কী জবাব দেবেন?
হায়দার আকবর খান রনো: যদি প্রভাবের কথা বলেন, তাহলে দেশে বেশি প্রভাবশালী দল তো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কোন দলের প্রভাব কতখানি, সেই বিবেচনা বা ভাবনা থেকে তো আমি দল করি না। তাহলে তো আমি বড় দুই দলের একটি করতাম। আমি রাজনীতি করি আদর্শবোধের জায়গা থেকে। বাংলাদেশে যে কয়েকটি বাম দল আছে, এর মধ্যে সিপিবিতেই আমার আস্থা রাখার জায়গা মনে হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি তো আমার নিজের হাতেই গড়া। একসময় এই দলের সঙ্গে আমার মতবিরোধ হয়ে গেল। দলে সংখ্যালঘু হয়ে দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। এসব নিয়ে বিস্তারিত আমার তখনকার বিবৃতিতে আছে। এরপর আমি সিপিবিতে যোগ দিলাম। সেই সময় আমি আর কোনো বাম দল খুঁজে পাইনি, যে দলে গিয়ে আমি কাজ করতে পারি। আমার যে চিন্তা, আদর্শ-উদ্দেশ্য, তাকে খানিকটা হলেও এগিয়ে নিতে পারি, সে রকম দল সিপিবিকেই মনে হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলুন।
হায়দার আকবর খান রনো: এই মুহূর্তে কমিউনিজমের একটা ভাটার যুগ চলছে—এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ইতিহাসের চূড়ান্ত রায় এখনো ঘোষিত হয়নি। আমার ধারণা, পুঁজিবাদ যে ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে, তাতে বেশি দিন এটা টিকবে না। যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলো, তখন সবাই বলেছিল যে এক মেরু বিশ্ব তৈরি হয়ে গেল। কে জানত তার কয়েক দশক পরেই সেই পুঁজিবাদী বিশ্বে মেরুকরণ হবে? আজকের রাশিয়া তো পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশ। ইউক্রেনও তো তাই। তাহলে তাদের মধ্যে কেন এখন যুদ্ধ চলছে? আগের স্নায়ুযুদ্ধের কথা বাদই দিলাম। পুঁজিবাদ এই পৃথিবীকে কিছুই দিতে পারবে না। যুদ্ধ ছাড়াও তারা পরিবেশকে ধ্বংস করছে। পরিবেশ সমস্যা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে হলেও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আর পুঁজিবাদের পতন অনিবার্য। একটা কথা বলে রাখি, সোভিয়েত সমাজতন্ত্র তো শেষ হয়ে গেছে। আর চীন নিজেকে সমাজতান্ত্রিক বললেও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চীনে আর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়। মানুষের ইতিহাস হলো সাম্যের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার ইতিহাস। সেটা কার্ল মার্ক্সের আগে এবং পরেও ছিল। স্পার্টাকাস থেকে শুরু করে সূর্য সেন পর্যন্ত সবাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার জন্য এবং মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন। এ লড়াই এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এ লড়াইয়ে সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে। আমার ধারণা, একবিংশ শতাব্দীতে আমরা পুঁজিবাদের পতন এবং নতুন সমাজের অভ্যুদয় দেখতে পাব।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। কী করণীয়?
হায়দার আকবর খান রনো: বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভিত্তি করেই। পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ত্বকে অসাড় প্রমাণ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি ঘোষিত হয়েছিল, তার একটি ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া ও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার যে নীতি নেওয়া হয়েছিল, তা এখনো বাতিল হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক। এখন মৌলবাদের একটা দাপট আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমার সরাসরি শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে দীপনকেও হত্যা করেছে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীরা। তারা আরও কিছু ব্যক্তিকেও খুন করেছে। এই যে ভয়াবহ ঘটনাগুলো ঘটল—এ রকম যে হবে, সেটা আমি ধারণা করতে পারি না। ১৯৭১ বা ’৭২ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন দেশে সমাজতন্ত্র যে হতে যাচ্ছে না, এটা আমি মনে করতাম। কারণ আওয়ামী লীগ দিয়ে সমাজতন্ত্র হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমি ধারণা করেছিলাম, দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনৈতিক দল বলেই মনে করা হতো। কিন্তু আমার ধারণা যে ভুল ছিল, সেটা তো আজ প্রমাণিত। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতেই হবে। নতুবা আমাদের স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যেতে বাধ্য।
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৪ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৪ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৫ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৫ ঘণ্টা আগে