জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি শব্দবন্ধ খুব বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে, সেটি হলো-ডকট্রিন অব নেসেসিটি। বাংলায় উপযুক্ত অনুবাদ কী হতে পারে-প্রয়োজনীয়তার মতবাদ, জরুরতের নিদান, বিশেষ পরিস্থিতির নীতি ইত্যাদি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতের পর রাজনীতি ও প্রশাসনের নানা ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধশতকের আবর্জনা যে রাতারাতি সাফ-ছুতরো করা সম্ভব নয়, সেটি সবাই মানছেন। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চর্চায় যে হতাশা থেকে প্রত্যাখ্যানের প্রবণতা তৈরি হয়েছে এরই ফলস্বরূপ একটি গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক।
সেখানে থেকেই এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার পক্ষে জনমত আসছে। কিন্তু সংবিধান এখানে বড় বাধা হয়ে রয়েছে। সংবিধান মানতে গেলে এই সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, আবার এই নব্বই দিনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার যে সম্ভব নয় সেই বাস্তবতাও সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচিত হচ্ছে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’। আগামী দিনে এই নীতির পক্ষেই সম্মতি উৎপাদনের তৎপরতা আরও জোরালো হবে বলে ধারণা করা যায়। এই কারণেই এই ধারণা সম্পর্কে একটু জানাশোনা থাকা ভালো!
প্রয়োজনীয়তা কোনো আইনের ধার ধারে না-এই হলো ঈশপের একটি গল্পের মোরাল।’ Nemo in propria causa judex, esse debet’ এই লাতিন ম্যাক্সিমে (নীতিবাক্য) যে কথাটি বলা হয়েছে সেটিকে বাংলায় এভাবে বলা যায়-বিচারপতির অপরাধের বিচারের ভার তাঁর ওপরেই দেওয়াটা বেকার! এটি প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের অন্যতম নীতি।
ম্যাক্সিমটি আরও একটি বিষয় তুলে ধরেছে, কাউকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা দেওয়া হলে তাঁকে অবশ্যই কোনো ধরনের পক্ষপাত ও সংস্কার ছাড়া ন্যায্য এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।
এটির একটি মোক্ষম উদাহরণ হতে পারে সাম্প্রতিক রক্তপাতের ঘটনা। হত্যার হুকুমদাতা এবং হত্যাকারীরাই যখন সেই হত্যার বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, তার ওপর কোনোভাবে আস্থা রাখা যায় না। কারণ তিনি পুরো বিচারপ্রক্রিয়াতেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের কৌশল অবলম্বন করবেন।
এটি ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যকে ভেস্তে দেয়। তাই এই ধরনের জঘন্য পক্ষপাত রোধে প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো গ্রহণ করা হয়। পক্ষপাতের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতি এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যে-মনোবিজ্ঞান বলে, নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষের স্বভাব-বিরুদ্ধ।
পক্ষপাতিত্ব বা একদেশদর্শিতা বা কারও প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন বলতে মূলত এমন কোনো উপাদানকে বোঝায় যা একজন ব্যক্তিকে ঘটনার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব শঙ্কা বা ধারণার পক্ষে বা বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে। সুতরাং, এক্ষেত্রে তিনি আর শুধু সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো নিরপেক্ষ থাকেন না।
প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো এইভাবে পক্ষপাতের বিপরীতে বিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এসব বিধান সেই উপাদানগুলোকে দূর করে যেগুলো একটি বিশেষ মামলায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বিচারককে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে।
যাইহোক, ডকট্রিন অব নেসেসিটি বা প্রয়োজনীয়তার মতবাদ পক্ষপাত প্রতিরোধের বিধিবিধানের ব্যতিক্রম বলে মনে করা হয়। এ নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলা যাক:
ডকট্রিন অব নেসেসিটি কী
প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো হলো মৌল আইনি প্যারামিটার। প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের একটি নীতির কথা এলে, অর্থাৎ পক্ষপাত প্রতিরোধে গৃহীত বিধিবিধানের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম রয়েছে। এটিই হলো-ডকট্রিন অব নেসেসিটি বা প্রয়োজনীয়তার মতবাদ।
রাজনৈতিক বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা বদল, কিংবা সামরিক অভ্যুত্থানের মতো রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক ঘটনা আইনবহির্ভূত হলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচারে আদালত প্রয়োজনের তাগিদে ঘটেছে বলে ‘বৈধতা’ দেওয়ার নজির রয়েছে। বাস্তব প্রয়োজনের এই তাগিদকেই বলে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’। স্পষ্টত এটি বিদ্যমান আইন ও আইনের বাইরের তাগিদ।
ডকট্রিন অব নেসেসিটি যে পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষকে কাজ করার অনুমতি দেয়:
অবশ্যই একটি বিশেষ মুহূর্তে এমন নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেখানে এই ধরনের পদক্ষেপ একটি সাধারণ আইনি পরিস্থিতিতে আইনের পরিধির মধ্যে বিবেচিত হবে না।
ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগ করা শুধু এমন পরিস্থিতিতেই ন্যায্য যেখানে, কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি নির্ধারক কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি রয়েছে।
এমন একটি পরিস্থিতিতে যেখানে একজন ব্যক্তিকে একটি বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করতে দেওয়া অথবা বিষয়টিকে বাতিল করার জন্য একটি বিকল্প তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে পক্ষপাতমূলক পদ্ধতিতে পদক্ষেপ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকতে পারে, এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতিত্বের দ্বারা সিদ্ধান্তটি প্রভাবিত হতে পারে এমন আশঙ্কা সত্ত্বেও এ সুযোগ রাখা হয়। এটিই ডকট্রিন অব নেসেসিটি।
পূর্বোক্ত পরিস্থিতির অনুরূপ ক্ষেত্রে, পক্ষপাত প্রতিরোধের বিধিগুলো ডকট্রিন অব নেসেসিটির দ্বারা উপেক্ষিত হয়। এখানে একমাত্র শর্ত হলো, এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
ডকট্রিন অব নেসেসিটির ইতিহাস
মধ্যযুগীয় ইংরেজ আইনবিদ ও জুরি (ত্রয়োদশ শতাব্দী) হেনরি ডি ব্র্যাকটনের লেখায় প্রথম ডকট্রিন অব নেসেসিটির ধারণা দেওয়া হয়। এটি হলো প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ ‘যা আইনে বৈধ নয়, তা প্রয়োজনের তাগিদে বৈধ করা’।
উপমহাদেশে এর একটি উদাহরণ হলো, ফেডারেশন অব পাকিস্তান বনাম মৌলভি তমিজউদ্দিন খান (১৯৫৫)-এর বিতর্কিত মামলা।
এই ক্ষেত্রে, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদকে সংবিধান বহির্ভূত জরুরি ক্ষমতার ব্যবহারকে আইনগত বৈধতা দেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সেই সময় হেনরি ডি ব্র্যাকটনের নীতিবাক্যটিও উল্লেখ করেছিলেন।
ফেডারেশন অব পাকিস্তান বনাম মৌলভি তমিজউদ্দিন খান মামলাটি কমনওয়েলথ দেশগুলোতেও ডকট্রিন অব নেসেসিটি ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করে।
ভারতের ক্ষেত্রে, গুল্লাপল্লী নাগেশ্বরা রাও বনাম এপিএসআরটিসি (১৯৫৮)-এর বহুল আলোচিত মামলাটি ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। পরে ভারতের নির্বাচন কমিশন বনাম ডক্টর সুব্রাহ্মনিয়াম স্বামী (১৯৯৬) মামলার মাধ্যমে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগের নীতি পরিবর্তিত হয়। আদালত বলেন, শুধু নিরুপায়ের ক্ষেত্রে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগ করা যাবে।
ডকট্রিন অব নেসেসিটির ব্যতিক্রম
ডকট্রিন অব নেসেসিটি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অজুহাত ব্যবহার করার লাইসেন্স দেয় না। সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় পক্ষপাতের আশ্রয় নেওয়া বিচারকদের অযোগ্য বিবেচনা করা হয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে যেখানে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তকেও বৈধ বলে গণ্য করা হয়। যেমন:
সালিসের জন্য অন্য কোনো যোগ্য ব্যক্তি না পেলে। কোরাম পূর্ণ হয় না এমন বিচারক বা জুরির অনুপস্থিতিতে।
অন্য কোনো উপযুক্ত ট্রাইব্যুনাল গঠনের সম্ভাবনা না থাকলে।
ভারতীয় ফৌজদারি আইনে ডকট্রিন অব নেসেসিটি রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির চতুর্থ অধ্যায়, ১৮৬০-এ ৭৬ ধারা থেকে ১০৬ ধারার অধীনে ‘সাধারণ ব্যতিক্রম’-এর বিধান রয়েছেন
কিছু দৃষ্টান্ত:
রেজিনা বনাম ডুডলি ও স্টিফেনস (১৮৮৪)
টমাস ডুডলি এবং এডউইন স্টিফেনস মামলার আসামি ছিলেন। এই দুই আসামি এবং কেবিন বয় রিচার্ড পার্কার জাহাজডুবির দুর্ঘটনায় একটি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কোনো খাবার এবং পানীয় জল ছিল না। তাঁরা তিনজন সাত দিন ধরে না খেয়ে ছিলেন এবং পাঁচ দিন ধরে পানীয় জল ছাড়া থাকার পর দুর্ঘটনার আঠারোতম দিনে টমাস ডুডলি এডউইন স্টিফেনকে প্রস্তাব দেন, বাকিদের জীবন বাঁচাতে একজনকে হত্যা করা হোক। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন পার্কারকে হত্যা করার। বিশতম দিনে, ডুডলি এবং স্টিফেনস পার্কারকে হত্যা করেন এবং চারদিন তাঁর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকেন। পরে একটি জাহাজ তাঁদের উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
আদালতের রায়ে বলা হয়, নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করাকে সমর্থন করা যায় না, যদিও তা ক্ষুধার প্রয়োজনে সংঘটিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে, পরে তা কমিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম হোমস (১৮৪২)
উইলিয়াম ব্রাউন নামে একটি আমেরিকান জাহাজে ৬৫ জন যাত্রী এবং ১৭ জন ক্রু ছিলেন। একটি হিমশৈলতে আঘাত করলে সেটি দ্রুত ডুবে যায়। উত্তাল সমুদ্রে একটি লংবোট দূরে ভেসে যায়। নৌযানটি যাতে ডুবে না যায় সেজন্য কয়েকজন যাত্রীকে জাহাজ থেকে ছুড়ে ফেলেন নাবিকেরা। পরে ক্রু সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। একজন ক্রুর বিরুদ্ধে শুনানির সময় আদালত বলেন, এই ধরনের প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি ফৌজদারি হত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যাইহোক, আদালত বলেন, যখন এভাবে বলিদান করা হবে তখন তাদের অবশ্যই উপস্থিত লোকদের ওপর নির্ভর করে ন্যায্যতার সঙ্গে নির্বাচন করতে হবে।
রেক্স বনাম বোর্ন (১৯৩৮)
পাঁচ সেনা সদস্যের ধর্ষণের শিকার ১৪ বছরের কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঘটনায় মামলা হয়। আসামিদের একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি মেয়েটির বাবা-মার সম্মতিতে গর্ভপাত করিয়েছিলেন। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, এত কমবয়সী মেয়েটি সন্তান জন্ম দিলে তার জীবনই শঙ্কার মধ্যে পড়বে।
শুনানি ও সত্যতা যাচাইয়ের পর আদালত বলেন, আসামিকে বেআইনিভাবে গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। কারণ তিনি একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে সরল বিশ্বাসে কাজ করেছেন।
টাটা সেলুলার বনাম দ্য ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (১৯৯৪)
ভারত সরকার সব মোবাইল অপারেটরকে চারটি মহানগর-চেন্নাই, বোম্বে, কলকাতা এবং দিল্লিতে তাদের নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। মূল্যায়ন কমিটিকে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া-এর অধীনে দরপত্র পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়, যার মধ্যে টেলিকমিউনিকেশনের একজন মহাপরিচালক ছিলেন।
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষে মহাপরিচালকের ছেলের দরপত্র চূড়ান্ত হয়। এই ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্ট পক্ষপাতের অভিযোগ আমলে নেননি কারণ, টেলিকমিউনিকেশনের মহাপরিচালককে ছাড়া কোনো দরপত্র নির্বাচন করা যায় না এবং সুষ্ঠু মূল্যায়নও করা যায় না। এক্ষেত্রে তাঁকে প্রতিস্থাপনের কোনো বিকল্পও ছিল না। এই ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্ট ডকট্রিন অব নেসেসিটি উদারভাবে প্রয়োগ করেছেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন বনাম ড. সুব্রহ্মনিয়াম স্বামী (১৯৯৬)
প্রধান নির্বাচন কমিশন যদি পক্ষপাতের সম্ভাবনা বা ক্ষেত্র তৈরি করে এবং এই কাজে তাদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক না হয় সে ক্ষেত্রে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রযোজ্য হবে না।
তবে একটা পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন আদালত যে, তারা একটি সভা আহ্বান করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত সভা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়ে কমিশনের অন্য সদস্যদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ছেড়ে দিতে পারে। শুধু সে ক্ষেত্রে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রযোজ্য হবে যখন তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেবে।
বাংলাদেশে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে মোট ১৭ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারকে নিয়ে প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। ফলে বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে গিয়ে অনেক কিছু ঘটার শর্ত তৈরি থাকছে।
তবে এই ডকট্রিন অব নেসেসিটির নামে ভবিষ্যৎ বৃহৎ স্বার্থের খাতিরে ছোটখাটো অন্যায়, বিচ্যুতিগুলোকে উপেক্ষা বা অবহেলা করা যাবে। এসব বিষয়েও গণমাধ্যম এবং সচেতন নাগরিকদের কড়া নজর রাখতে হবে।
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি শব্দবন্ধ খুব বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে, সেটি হলো-ডকট্রিন অব নেসেসিটি। বাংলায় উপযুক্ত অনুবাদ কী হতে পারে-প্রয়োজনীয়তার মতবাদ, জরুরতের নিদান, বিশেষ পরিস্থিতির নীতি ইত্যাদি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতের পর রাজনীতি ও প্রশাসনের নানা ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধশতকের আবর্জনা যে রাতারাতি সাফ-ছুতরো করা সম্ভব নয়, সেটি সবাই মানছেন। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চর্চায় যে হতাশা থেকে প্রত্যাখ্যানের প্রবণতা তৈরি হয়েছে এরই ফলস্বরূপ একটি গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক।
সেখানে থেকেই এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার পক্ষে জনমত আসছে। কিন্তু সংবিধান এখানে বড় বাধা হয়ে রয়েছে। সংবিধান মানতে গেলে এই সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, আবার এই নব্বই দিনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার যে সম্ভব নয় সেই বাস্তবতাও সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচিত হচ্ছে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’। আগামী দিনে এই নীতির পক্ষেই সম্মতি উৎপাদনের তৎপরতা আরও জোরালো হবে বলে ধারণা করা যায়। এই কারণেই এই ধারণা সম্পর্কে একটু জানাশোনা থাকা ভালো!
প্রয়োজনীয়তা কোনো আইনের ধার ধারে না-এই হলো ঈশপের একটি গল্পের মোরাল।’ Nemo in propria causa judex, esse debet’ এই লাতিন ম্যাক্সিমে (নীতিবাক্য) যে কথাটি বলা হয়েছে সেটিকে বাংলায় এভাবে বলা যায়-বিচারপতির অপরাধের বিচারের ভার তাঁর ওপরেই দেওয়াটা বেকার! এটি প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের অন্যতম নীতি।
ম্যাক্সিমটি আরও একটি বিষয় তুলে ধরেছে, কাউকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা দেওয়া হলে তাঁকে অবশ্যই কোনো ধরনের পক্ষপাত ও সংস্কার ছাড়া ন্যায্য এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।
এটির একটি মোক্ষম উদাহরণ হতে পারে সাম্প্রতিক রক্তপাতের ঘটনা। হত্যার হুকুমদাতা এবং হত্যাকারীরাই যখন সেই হত্যার বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, তার ওপর কোনোভাবে আস্থা রাখা যায় না। কারণ তিনি পুরো বিচারপ্রক্রিয়াতেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের কৌশল অবলম্বন করবেন।
এটি ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যকে ভেস্তে দেয়। তাই এই ধরনের জঘন্য পক্ষপাত রোধে প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো গ্রহণ করা হয়। পক্ষপাতের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতি এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যে-মনোবিজ্ঞান বলে, নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষের স্বভাব-বিরুদ্ধ।
পক্ষপাতিত্ব বা একদেশদর্শিতা বা কারও প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন বলতে মূলত এমন কোনো উপাদানকে বোঝায় যা একজন ব্যক্তিকে ঘটনার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব শঙ্কা বা ধারণার পক্ষে বা বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে। সুতরাং, এক্ষেত্রে তিনি আর শুধু সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো নিরপেক্ষ থাকেন না।
প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো এইভাবে পক্ষপাতের বিপরীতে বিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এসব বিধান সেই উপাদানগুলোকে দূর করে যেগুলো একটি বিশেষ মামলায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বিচারককে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে।
যাইহোক, ডকট্রিন অব নেসেসিটি বা প্রয়োজনীয়তার মতবাদ পক্ষপাত প্রতিরোধের বিধিবিধানের ব্যতিক্রম বলে মনে করা হয়। এ নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলা যাক:
ডকট্রিন অব নেসেসিটি কী
প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো হলো মৌল আইনি প্যারামিটার। প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের একটি নীতির কথা এলে, অর্থাৎ পক্ষপাত প্রতিরোধে গৃহীত বিধিবিধানের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম রয়েছে। এটিই হলো-ডকট্রিন অব নেসেসিটি বা প্রয়োজনীয়তার মতবাদ।
রাজনৈতিক বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা বদল, কিংবা সামরিক অভ্যুত্থানের মতো রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক ঘটনা আইনবহির্ভূত হলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচারে আদালত প্রয়োজনের তাগিদে ঘটেছে বলে ‘বৈধতা’ দেওয়ার নজির রয়েছে। বাস্তব প্রয়োজনের এই তাগিদকেই বলে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’। স্পষ্টত এটি বিদ্যমান আইন ও আইনের বাইরের তাগিদ।
ডকট্রিন অব নেসেসিটি যে পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষকে কাজ করার অনুমতি দেয়:
অবশ্যই একটি বিশেষ মুহূর্তে এমন নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেখানে এই ধরনের পদক্ষেপ একটি সাধারণ আইনি পরিস্থিতিতে আইনের পরিধির মধ্যে বিবেচিত হবে না।
ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগ করা শুধু এমন পরিস্থিতিতেই ন্যায্য যেখানে, কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি নির্ধারক কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি রয়েছে।
এমন একটি পরিস্থিতিতে যেখানে একজন ব্যক্তিকে একটি বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করতে দেওয়া অথবা বিষয়টিকে বাতিল করার জন্য একটি বিকল্প তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানে পক্ষপাতমূলক পদ্ধতিতে পদক্ষেপ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকতে পারে, এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতিত্বের দ্বারা সিদ্ধান্তটি প্রভাবিত হতে পারে এমন আশঙ্কা সত্ত্বেও এ সুযোগ রাখা হয়। এটিই ডকট্রিন অব নেসেসিটি।
পূর্বোক্ত পরিস্থিতির অনুরূপ ক্ষেত্রে, পক্ষপাত প্রতিরোধের বিধিগুলো ডকট্রিন অব নেসেসিটির দ্বারা উপেক্ষিত হয়। এখানে একমাত্র শর্ত হলো, এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
ডকট্রিন অব নেসেসিটির ইতিহাস
মধ্যযুগীয় ইংরেজ আইনবিদ ও জুরি (ত্রয়োদশ শতাব্দী) হেনরি ডি ব্র্যাকটনের লেখায় প্রথম ডকট্রিন অব নেসেসিটির ধারণা দেওয়া হয়। এটি হলো প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ ‘যা আইনে বৈধ নয়, তা প্রয়োজনের তাগিদে বৈধ করা’।
উপমহাদেশে এর একটি উদাহরণ হলো, ফেডারেশন অব পাকিস্তান বনাম মৌলভি তমিজউদ্দিন খান (১৯৫৫)-এর বিতর্কিত মামলা।
এই ক্ষেত্রে, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদকে সংবিধান বহির্ভূত জরুরি ক্ষমতার ব্যবহারকে আইনগত বৈধতা দেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সেই সময় হেনরি ডি ব্র্যাকটনের নীতিবাক্যটিও উল্লেখ করেছিলেন।
ফেডারেশন অব পাকিস্তান বনাম মৌলভি তমিজউদ্দিন খান মামলাটি কমনওয়েলথ দেশগুলোতেও ডকট্রিন অব নেসেসিটি ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করে।
ভারতের ক্ষেত্রে, গুল্লাপল্লী নাগেশ্বরা রাও বনাম এপিএসআরটিসি (১৯৫৮)-এর বহুল আলোচিত মামলাটি ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। পরে ভারতের নির্বাচন কমিশন বনাম ডক্টর সুব্রাহ্মনিয়াম স্বামী (১৯৯৬) মামলার মাধ্যমে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগের নীতি পরিবর্তিত হয়। আদালত বলেন, শুধু নিরুপায়ের ক্ষেত্রে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগ করা যাবে।
ডকট্রিন অব নেসেসিটির ব্যতিক্রম
ডকট্রিন অব নেসেসিটি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অজুহাত ব্যবহার করার লাইসেন্স দেয় না। সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় পক্ষপাতের আশ্রয় নেওয়া বিচারকদের অযোগ্য বিবেচনা করা হয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে যেখানে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তকেও বৈধ বলে গণ্য করা হয়। যেমন:
সালিসের জন্য অন্য কোনো যোগ্য ব্যক্তি না পেলে। কোরাম পূর্ণ হয় না এমন বিচারক বা জুরির অনুপস্থিতিতে।
অন্য কোনো উপযুক্ত ট্রাইব্যুনাল গঠনের সম্ভাবনা না থাকলে।
ভারতীয় ফৌজদারি আইনে ডকট্রিন অব নেসেসিটি রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির চতুর্থ অধ্যায়, ১৮৬০-এ ৭৬ ধারা থেকে ১০৬ ধারার অধীনে ‘সাধারণ ব্যতিক্রম’-এর বিধান রয়েছেন
কিছু দৃষ্টান্ত:
রেজিনা বনাম ডুডলি ও স্টিফেনস (১৮৮৪)
টমাস ডুডলি এবং এডউইন স্টিফেনস মামলার আসামি ছিলেন। এই দুই আসামি এবং কেবিন বয় রিচার্ড পার্কার জাহাজডুবির দুর্ঘটনায় একটি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কোনো খাবার এবং পানীয় জল ছিল না। তাঁরা তিনজন সাত দিন ধরে না খেয়ে ছিলেন এবং পাঁচ দিন ধরে পানীয় জল ছাড়া থাকার পর দুর্ঘটনার আঠারোতম দিনে টমাস ডুডলি এডউইন স্টিফেনকে প্রস্তাব দেন, বাকিদের জীবন বাঁচাতে একজনকে হত্যা করা হোক। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন পার্কারকে হত্যা করার। বিশতম দিনে, ডুডলি এবং স্টিফেনস পার্কারকে হত্যা করেন এবং চারদিন তাঁর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকেন। পরে একটি জাহাজ তাঁদের উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
আদালতের রায়ে বলা হয়, নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করাকে সমর্থন করা যায় না, যদিও তা ক্ষুধার প্রয়োজনে সংঘটিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে, পরে তা কমিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম হোমস (১৮৪২)
উইলিয়াম ব্রাউন নামে একটি আমেরিকান জাহাজে ৬৫ জন যাত্রী এবং ১৭ জন ক্রু ছিলেন। একটি হিমশৈলতে আঘাত করলে সেটি দ্রুত ডুবে যায়। উত্তাল সমুদ্রে একটি লংবোট দূরে ভেসে যায়। নৌযানটি যাতে ডুবে না যায় সেজন্য কয়েকজন যাত্রীকে জাহাজ থেকে ছুড়ে ফেলেন নাবিকেরা। পরে ক্রু সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। একজন ক্রুর বিরুদ্ধে শুনানির সময় আদালত বলেন, এই ধরনের প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি ফৌজদারি হত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যাইহোক, আদালত বলেন, যখন এভাবে বলিদান করা হবে তখন তাদের অবশ্যই উপস্থিত লোকদের ওপর নির্ভর করে ন্যায্যতার সঙ্গে নির্বাচন করতে হবে।
রেক্স বনাম বোর্ন (১৯৩৮)
পাঁচ সেনা সদস্যের ধর্ষণের শিকার ১৪ বছরের কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঘটনায় মামলা হয়। আসামিদের একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি মেয়েটির বাবা-মার সম্মতিতে গর্ভপাত করিয়েছিলেন। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, এত কমবয়সী মেয়েটি সন্তান জন্ম দিলে তার জীবনই শঙ্কার মধ্যে পড়বে।
শুনানি ও সত্যতা যাচাইয়ের পর আদালত বলেন, আসামিকে বেআইনিভাবে গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। কারণ তিনি একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে সরল বিশ্বাসে কাজ করেছেন।
টাটা সেলুলার বনাম দ্য ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (১৯৯৪)
ভারত সরকার সব মোবাইল অপারেটরকে চারটি মহানগর-চেন্নাই, বোম্বে, কলকাতা এবং দিল্লিতে তাদের নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। মূল্যায়ন কমিটিকে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া-এর অধীনে দরপত্র পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়, যার মধ্যে টেলিকমিউনিকেশনের একজন মহাপরিচালক ছিলেন।
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষে মহাপরিচালকের ছেলের দরপত্র চূড়ান্ত হয়। এই ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্ট পক্ষপাতের অভিযোগ আমলে নেননি কারণ, টেলিকমিউনিকেশনের মহাপরিচালককে ছাড়া কোনো দরপত্র নির্বাচন করা যায় না এবং সুষ্ঠু মূল্যায়নও করা যায় না। এক্ষেত্রে তাঁকে প্রতিস্থাপনের কোনো বিকল্পও ছিল না। এই ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্ট ডকট্রিন অব নেসেসিটি উদারভাবে প্রয়োগ করেছেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন বনাম ড. সুব্রহ্মনিয়াম স্বামী (১৯৯৬)
প্রধান নির্বাচন কমিশন যদি পক্ষপাতের সম্ভাবনা বা ক্ষেত্র তৈরি করে এবং এই কাজে তাদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক না হয় সে ক্ষেত্রে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রযোজ্য হবে না।
তবে একটা পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন আদালত যে, তারা একটি সভা আহ্বান করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত সভা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়ে কমিশনের অন্য সদস্যদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ছেড়ে দিতে পারে। শুধু সে ক্ষেত্রে ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রযোজ্য হবে যখন তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেবে।
বাংলাদেশে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে মোট ১৭ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারকে নিয়ে প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। ফলে বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে গিয়ে অনেক কিছু ঘটার শর্ত তৈরি থাকছে।
তবে এই ডকট্রিন অব নেসেসিটির নামে ভবিষ্যৎ বৃহৎ স্বার্থের খাতিরে ছোটখাটো অন্যায়, বিচ্যুতিগুলোকে উপেক্ষা বা অবহেলা করা যাবে। এসব বিষয়েও গণমাধ্যম এবং সচেতন নাগরিকদের কড়া নজর রাখতে হবে।
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শূন্য বর্জ্য, শূন্য কার্বন ও শূন্য বেকারত্ব’র তত্ত্ব তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে।
৮ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয়, করোনাকালই বোধহয় ভালো ছিল। শাটডাউনে সব বন্ধ, রাস্তায় যানবাহন নেই, মানুষের চলাচল সীমিত, যারাও বাইরে যাচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক পরা। রাস্তার ধারের গাছগুলোতে ধুলার পর্দা পড়ছে না, কলকারখানার চোঙা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে না, বায়ুদূষণও কমে এসেছে। এক অদেখা জীবাণুর আতঙ্কে আমাদের কী দুঃসময়ই না কেট
৮ ঘণ্টা আগেতিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মেজ। মা কুমুদিনী দেবীর গভীর স্নেহে বড় হয়ে উঠলেও মায়ের সঙ্গটুকু দীর্ঘস্থায়ী হয়নি; সাত বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি।
৯ ঘণ্টা আগেমঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান ও ফার্মগেটে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। ঢাকার ফুটপাত ও রাস্তার একটা অংশ যেভাবে হকাররা দখল করে রাখেন, তাতে চলাচলে অসুবিধা হয় রাজধানীবাসীর। তাই ব্যস্ত সড়ক হকারমুক্ত করতে পারলে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাধুবাদ পাবে।
৯ ঘণ্টা আগে