শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
রাজধানীর বারিধারায় কূটনৈতিক এলাকায় মধ্যরাতে দায়িত্বরত কনস্টেবল কাওছার আহমেদ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে সহকর্মীর দেহ ঝাঁজরা করে দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের বক্তব্যে উঠে এসেছে, কাওছার মানসিক সমস্যায় ছিলেন। ঘটনার আগে কনস্টেবল মুনিরুল হকের সঙ্গে তাঁর কথাকাটাকাটি হয়, একপর্যায়ে তিনি নির্বিচার গুলি চালিয়ে সহকর্মীকে হত্যা করেন।
কাওছারের পরিবারের সদস্যরাও বলছেন, চাকরিতে যোগ দেওয়ার ৫ বছরের মাথায় ২০১০ সালে তাঁর মানসিক সমস্যা ধরা পড়ে। গত ১৪ বছরে ‘সরকারিভাবে’ একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন কাওছার। মানসিক সংকটের পর্ব চলকালে কয়েকদিন ধরে চুপচাপ থাকতেন কাওছার এবং পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতেন কম।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় দেড় দশক ধরে মানসিক রোগে ভুগতে থাকা ব্যক্তি কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাছে নিয়োজিত আছেন। কীভাবে তাঁর হাতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থাকে এবং তিনি কূটনৈতিকপাড়ার মতো সংবেদনশীল এলাকায় দায়িত্বপালন করতে পারেন? তাছাড়া পুলিশের মধ্যে কাউন্সেলিং বা মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাহলে, এই কনস্টেবলের মানসিক স্থিতি নজরদারিতে কর্তৃপক্ষের কী নজরদারি ছিল? বিষটি তাঁরা আদৌ দেখভাল করেছেন কিনা।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে কাওছারের মানসিক সমস্যার কোনো উল্লেখ নেই। বরং কাওছার ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ’ থেকে এমনটি ঘটাতে পারেন বলে দাবি করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সাময়িক উত্তেজনার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। তাদের সেখানে স্বাভাবিক ডিউটি ছিল। অভিযুক্ত কাওছারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাতে মনে হয়েছে, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এমনটি ঘটাতে পারেন।’
যদিও গত শনিবার রাতের এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ‘কনস্টেবল কাওছার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন’ বলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পুলিশেরই একাধিক কর্মকর্তা জানান। কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি, তিনি পাঁচ–ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তাঁর ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি।’
কাওছারের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীরা জানান, ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন কাওছার। ২০১০ সালের দিকে প্রথম মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। পরে তাঁকে সরকারিভাবে কয়েকবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এরপরও বেশ কয়েকবার অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথি আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমার স্বামী মানসিক রোগে আক্রান্ত। সে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যেত। তাকে কয়েকবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। চিকিৎসার কাগজপত্র আমার স্বামীর কাছে আছে। আমাদের পারিবারিকভাবে কোনো সমস্যা ছিল না। তবে সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে পরিবারের সঙ্গে কম যোগাযোগ করত এবং কথাও কম বলত। ইদানিংও পরিবারের সঙ্গে কথা কম বলত সে।’
কাওছারের মানসিক সমস্যা আছে কিনা এবং তিনি অফিশিয়ালি চিকিৎসা নিতেন কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন, ‘পুলিশ সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে এ রকম কোনো কাউন্সেলিং করা হয় না। তবে মাঝেমধ্যে তাঁদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন।’
এমন প্রেক্ষাপটে এই ঘটনায় পুলিশ কর্তৃপক্ষ বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি ঘাটতি বা দায়িত্বে অবহেলা থাকতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশের শীর্ষ কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান। এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য।
এবিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য যদি চিকিৎসার মধ্যে থাকেন, তাঁকে ডিউটিতে রাখা উচিত হয়নি। কারণ একজন মানসিক রোগী তাঁর আবেগ বা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিছু সময়ের জন্য ভালো ব্যবহার করলেও আবার খারাপ আচরণ করে। স্বাভাবিকভাবে চলতে পারলেও কোনটা যৌক্তিক সেটা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু পুলিশের মতো চাকরিতে এমন অসুস্থ মানুষ কখনোই ফিট না। বিষয়টা তাঁর ঊর্ধ্বতনদের আগেই বুঝতে পারা দরকার ছিল।’
কাওছার ও মনিরুলদের কাছে যে অস্ত্র ছিল তা অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় সাবমেশিনগান এসএমটি ৪০। ব্রাজিলের অস্ত্রনির্মাতা টরাসের তৈরি এই অস্ত্র থেকে মিনিটে প্রায় ৭৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়া সম্ভব। এতে ৩০ রাউন্ডের একটি ম্যাগাজিন থাকে। এতে ৯ এমএম গুলি ব্যবহার করা হয়। প্রায় তিন বছর আগে টরাস এসএমটি ৪০ সাম মেশিনগান পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কাওছারের কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল। একটি ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটি ভরেন কাওছার। দ্বিতীয় ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ টানা ৩৮ রাউন্ড গুলি ছুড়েছেন। কাওছার খুব কাছ থেকে গুলি করেছেন। সেক্ষেত্রে ৩৮টি গুলির ব্যবহারের মধ্যে একধরনের উন্মাদনা যে ছিল তা পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন।
এসএমটি ৪০–এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অনুমতি আছে এমন একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্বরত অবস্থায় এভাবে উত্তেজিত হয়ে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক? এমন অস্ত্র ব্যবহারে তাঁর প্রশিক্ষণ ছিল কিনা। অথবা চাপ সামলানোর মতো মানসিক দৃঢ়তা যাচাই করা হয়েছিল না কিনা—এসব প্রশ্ন এখন উঠেছে।
পুলিশ বাহিনী যে বিধানে চলে, সেই পিআরবির ৭৯৭ (গ) (২) অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী বছরের ৩১ মার্চ সময়কে ফায়ারিং বছর হিসেবে গণনা করা হয়। এসময়ে নিয়মিতিই পিস্তল, রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি, শটগানের ফায়ারিং অনুশীলন করানো হয়। তাছাড়া বিশেষ ইউনিটগুলো নিজেদের মতো করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
প্রায় ২০ বছরের কর্মজীবনে কনস্টেবল কাওছারের এই অস্ত্রের প্রশিক্ষণ থাকারই কথা। কিন্তু এসএমটি ৪০–এর মতো আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারে কনস্টেবল কাওছারের প্রশিক্ষণ ছিল কিনা এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে জোরালো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আর পুলিশের সদর দপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অস্ত্রের প্রশিক্ষণ তো প্রতিবছরই দেওয়া হয়। তবে সেটা নিয়মিত প্রশিক্ষণ। এর বাইরে ইউনিট ধরে বা অস্ত্র ধরে ধরে সেভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ খুব বেশি নেই।’
কিন্তু মানসিক সমস্যার ঝুঁকির মধ্যে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়া আর গতানুগতিক প্রশিক্ষণে সীমাবদ্ধ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে পুলিশকে মানুষের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া, তাও কূটনৈতিক এলাকায়, নিরাপদ কিনা সেবিষয়ে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘উন্নত দেশের পুলিশকে প্রতিটি ইভেন্ট মোকাবিলার বা দায়িত্বের জন্য আলাদা কৌশল শেখানো হয়। কিন্তু আমাদের এখনো ট্র্যাডিশনাল পুলিশিং চলছে, এর উন্নতি দরকার।’
পুলিশ সূত্র বলছে, গত শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তর পাশের গার্ডরুমের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কূটনৈতিক জোনের দুই পুলিশ সদস্য, তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে কনস্টেবল কাওছার আহমেদ সাব মেশিনগান দিয়ে গুলি চালান। দুটি ম্যাগাজিন থেকে ৩৮ রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন তিনি। এতে কনস্টেবল মনিরুল হকের দেহ তাতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন তিনি। এতে ওই পথে যাওয়া এক বাইসাইকেল আরোহী গুলিবিদ্ধ হন। আহত ব্যক্তি জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখ। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়ুন:
রাজধানীর বারিধারায় কূটনৈতিক এলাকায় মধ্যরাতে দায়িত্বরত কনস্টেবল কাওছার আহমেদ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে সহকর্মীর দেহ ঝাঁজরা করে দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের বক্তব্যে উঠে এসেছে, কাওছার মানসিক সমস্যায় ছিলেন। ঘটনার আগে কনস্টেবল মুনিরুল হকের সঙ্গে তাঁর কথাকাটাকাটি হয়, একপর্যায়ে তিনি নির্বিচার গুলি চালিয়ে সহকর্মীকে হত্যা করেন।
কাওছারের পরিবারের সদস্যরাও বলছেন, চাকরিতে যোগ দেওয়ার ৫ বছরের মাথায় ২০১০ সালে তাঁর মানসিক সমস্যা ধরা পড়ে। গত ১৪ বছরে ‘সরকারিভাবে’ একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন কাওছার। মানসিক সংকটের পর্ব চলকালে কয়েকদিন ধরে চুপচাপ থাকতেন কাওছার এবং পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতেন কম।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় দেড় দশক ধরে মানসিক রোগে ভুগতে থাকা ব্যক্তি কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাছে নিয়োজিত আছেন। কীভাবে তাঁর হাতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থাকে এবং তিনি কূটনৈতিকপাড়ার মতো সংবেদনশীল এলাকায় দায়িত্বপালন করতে পারেন? তাছাড়া পুলিশের মধ্যে কাউন্সেলিং বা মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাহলে, এই কনস্টেবলের মানসিক স্থিতি নজরদারিতে কর্তৃপক্ষের কী নজরদারি ছিল? বিষটি তাঁরা আদৌ দেখভাল করেছেন কিনা।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে কাওছারের মানসিক সমস্যার কোনো উল্লেখ নেই। বরং কাওছার ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ’ থেকে এমনটি ঘটাতে পারেন বলে দাবি করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সাময়িক উত্তেজনার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। তাদের সেখানে স্বাভাবিক ডিউটি ছিল। অভিযুক্ত কাওছারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাতে মনে হয়েছে, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এমনটি ঘটাতে পারেন।’
যদিও গত শনিবার রাতের এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ‘কনস্টেবল কাওছার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন’ বলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পুলিশেরই একাধিক কর্মকর্তা জানান। কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি, তিনি পাঁচ–ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তাঁর ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি।’
কাওছারের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীরা জানান, ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন কাওছার। ২০১০ সালের দিকে প্রথম মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। পরে তাঁকে সরকারিভাবে কয়েকবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এরপরও বেশ কয়েকবার অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথি আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমার স্বামী মানসিক রোগে আক্রান্ত। সে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যেত। তাকে কয়েকবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। চিকিৎসার কাগজপত্র আমার স্বামীর কাছে আছে। আমাদের পারিবারিকভাবে কোনো সমস্যা ছিল না। তবে সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে পরিবারের সঙ্গে কম যোগাযোগ করত এবং কথাও কম বলত। ইদানিংও পরিবারের সঙ্গে কথা কম বলত সে।’
কাওছারের মানসিক সমস্যা আছে কিনা এবং তিনি অফিশিয়ালি চিকিৎসা নিতেন কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন, ‘পুলিশ সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে এ রকম কোনো কাউন্সেলিং করা হয় না। তবে মাঝেমধ্যে তাঁদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন।’
এমন প্রেক্ষাপটে এই ঘটনায় পুলিশ কর্তৃপক্ষ বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি ঘাটতি বা দায়িত্বে অবহেলা থাকতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশের শীর্ষ কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান। এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য।
এবিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য যদি চিকিৎসার মধ্যে থাকেন, তাঁকে ডিউটিতে রাখা উচিত হয়নি। কারণ একজন মানসিক রোগী তাঁর আবেগ বা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিছু সময়ের জন্য ভালো ব্যবহার করলেও আবার খারাপ আচরণ করে। স্বাভাবিকভাবে চলতে পারলেও কোনটা যৌক্তিক সেটা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু পুলিশের মতো চাকরিতে এমন অসুস্থ মানুষ কখনোই ফিট না। বিষয়টা তাঁর ঊর্ধ্বতনদের আগেই বুঝতে পারা দরকার ছিল।’
কাওছার ও মনিরুলদের কাছে যে অস্ত্র ছিল তা অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় সাবমেশিনগান এসএমটি ৪০। ব্রাজিলের অস্ত্রনির্মাতা টরাসের তৈরি এই অস্ত্র থেকে মিনিটে প্রায় ৭৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়া সম্ভব। এতে ৩০ রাউন্ডের একটি ম্যাগাজিন থাকে। এতে ৯ এমএম গুলি ব্যবহার করা হয়। প্রায় তিন বছর আগে টরাস এসএমটি ৪০ সাম মেশিনগান পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কাওছারের কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল। একটি ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটি ভরেন কাওছার। দ্বিতীয় ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ টানা ৩৮ রাউন্ড গুলি ছুড়েছেন। কাওছার খুব কাছ থেকে গুলি করেছেন। সেক্ষেত্রে ৩৮টি গুলির ব্যবহারের মধ্যে একধরনের উন্মাদনা যে ছিল তা পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন।
এসএমটি ৪০–এর মতো আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অনুমতি আছে এমন একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্বরত অবস্থায় এভাবে উত্তেজিত হয়ে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক? এমন অস্ত্র ব্যবহারে তাঁর প্রশিক্ষণ ছিল কিনা। অথবা চাপ সামলানোর মতো মানসিক দৃঢ়তা যাচাই করা হয়েছিল না কিনা—এসব প্রশ্ন এখন উঠেছে।
পুলিশ বাহিনী যে বিধানে চলে, সেই পিআরবির ৭৯৭ (গ) (২) অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী বছরের ৩১ মার্চ সময়কে ফায়ারিং বছর হিসেবে গণনা করা হয়। এসময়ে নিয়মিতিই পিস্তল, রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি, শটগানের ফায়ারিং অনুশীলন করানো হয়। তাছাড়া বিশেষ ইউনিটগুলো নিজেদের মতো করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
প্রায় ২০ বছরের কর্মজীবনে কনস্টেবল কাওছারের এই অস্ত্রের প্রশিক্ষণ থাকারই কথা। কিন্তু এসএমটি ৪০–এর মতো আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারে কনস্টেবল কাওছারের প্রশিক্ষণ ছিল কিনা এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে জোরালো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আর পুলিশের সদর দপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অস্ত্রের প্রশিক্ষণ তো প্রতিবছরই দেওয়া হয়। তবে সেটা নিয়মিত প্রশিক্ষণ। এর বাইরে ইউনিট ধরে বা অস্ত্র ধরে ধরে সেভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ খুব বেশি নেই।’
কিন্তু মানসিক সমস্যার ঝুঁকির মধ্যে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়া আর গতানুগতিক প্রশিক্ষণে সীমাবদ্ধ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে পুলিশকে মানুষের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া, তাও কূটনৈতিক এলাকায়, নিরাপদ কিনা সেবিষয়ে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘উন্নত দেশের পুলিশকে প্রতিটি ইভেন্ট মোকাবিলার বা দায়িত্বের জন্য আলাদা কৌশল শেখানো হয়। কিন্তু আমাদের এখনো ট্র্যাডিশনাল পুলিশিং চলছে, এর উন্নতি দরকার।’
পুলিশ সূত্র বলছে, গত শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তর পাশের গার্ডরুমের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কূটনৈতিক জোনের দুই পুলিশ সদস্য, তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে কনস্টেবল কাওছার আহমেদ সাব মেশিনগান দিয়ে গুলি চালান। দুটি ম্যাগাজিন থেকে ৩৮ রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন তিনি। এতে কনস্টেবল মনিরুল হকের দেহ তাতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন তিনি। এতে ওই পথে যাওয়া এক বাইসাইকেল আরোহী গুলিবিদ্ধ হন। আহত ব্যক্তি জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখ। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়ুন:
বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
২৭ মিনিট আগেঅল এশিয়া ফুল কন্টাক্ট কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-৬০ কেজি ওজন ক্যাটাগরিতে তৃতীয় হয়েছেন বাংলাদেশের ‘সেনপাই’ আরাফাত রহমান। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের রাংসিত ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় অল এশিয়া ফুল কন্টাক্ট খিউকুশিন কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপের ১৯-তম আসর।
২৮ মিনিট আগেদেশে গত ১৫ বছরে ৮২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই (কেন্দ্রভাড়া) নিয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বিনা দরপত্রে কেন্দ্র দেওয়ায় বিদ্যুতের দামও পড়েছে বেশি। সেই বাড়তি দাম গিয়ে পড়েছে সাধারণ ভোক্তার কাঁধে।
২ ঘণ্টা আগেরাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে না বসলেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নারীনেত্রী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা, ইউটিউবারসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিতে সভা করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। প্র
৯ ঘণ্টা আগে