শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ায় ‘ম্যাসিভ’ প্রভাব পড়বে না: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১: ৩০
Thumbnail image
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। ছবি: পিআইডি

অর্ধশতাধিক পণ্য ও সেবার উপর বাড়তি সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের তীব্র সমালোচনার মুখে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গাইলেন অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি দাবি করেছেন, শুল্ক-কর আরোপের ফলে মানুষের উপর ‘ন্যূনতম’ প্রভাব পড়বে।

আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব দাবি করেন, নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্কারোপের ফলে মানুষের উপর তেমন একটা প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি তা খুবই মিনিমাম হবে, ম্যাসিভ প্রভাব পড়বে না।’

আইএমএফের পরামর্শে শুল্ক-কর বাড়ানো নিয়ে তোলা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে আইএমএফের ঋণটা মুখ্য না। তারা ক্ষুদ্র অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে ভালো পরামর্শ দেয়— এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আইএমএফ ঋণ দিলে, তাদের সামনে রেখে অন্যরা আসে (বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যরা)। এটা বিদেশ থেকে বেসরকারি বিনিয়োগকারী আসতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কারণ তারা বিনিয়োগ করার আগে আইএমএফের প্রতিবেদন দেখে থাকে। ভালো রাজস্ব থাকলে একচেঞ্জ মার্কেট স্থিতিশীল থাকবে। তাতে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। পরিকল্পনাকারী সকল অর্থনীতিবিদই বোদ্ধা, তারা জানেন কি করছেন।’

সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে দাবি করে শফিকুল আলম বলেন, ‘সেটা না হলে টাকার মান কমে যাবে। এখন ১২৫ টাকায় ডলার কিনছেন, কিন্তু একটা সময় আসবে ১৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হবে। ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াতে হবে। এটা এমন জায়গায় চলে গেছে, তা টেকসই না। ৫ মাসে রাজস্ব শর্টফল হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। খরচতো মেটাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ভালো বুঝেন। বর্তমান অর্থনৈতিক টিমটি দেশের ইতিহাস সেরা। তারা সেভাবে পরিকল্পনা করছেন।’

শুল্ক-কর বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি ও মানুষের কষ্ট বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘মোটেও না।’ এমন সিদ্ধান্তে সরকার অজনপ্রিয় হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অজনপ্রিয় হওয়ার কোনো প্রশ্নই দেখছি না। বরং সরকার দেশের অর্থনীতির অবস্থা যাতে ঠিক থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখছে। আমি মনে করি, বিষয়টির প্রেক্ষাপট ও কেন করা হয়েছে তা মানুষকে বুঝানো সাংবাদিক ও সবার কর্তব্য।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খরচ কমানোর ক্রমাগত চেষ্টার কথা জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফর সর্বনিম্ন লোক নিয়ে হচ্ছে, তার মধ্যেও নিরাপত্তা পারপাসে লোকসংখ্যা বেশি। কিন্তু আগে আড়াইশ ৩০০ মানুষে নিয়ে বিশেষ যেতেন (শেখ হাসিনা)। সবখানে অর্থ অপচয় করা হয়েছে। চট্টগ্রামে টানেল করলে, করিডোর পেরিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাড়িতে তিনি রেস্ট নিতেন, সেখানে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে সেভেন স্টার হোটেল করেছেন। এগুলো কার টাকা? তার আত্মীয়-স্বজনের টাকায় নয়, বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায়।’

শ্বেতপত্র পুরোটা সবাইকে পড়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘দেখবেন, কীভাবে জনগণের টাকাগুলো অপচয় করা হয়েছেন এবং লুটপাট করেছেন (শেখ হাসিনা)। তার কিছু নমুনা ব্রিটিশ.. দেখছেন। সেজন্য আমরা সত্যিকার অর্থে চাচ্ছি, বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি এমন একটা পর্যায়ে যাক, যাতে দেশের ইকোনোমি গ্রো করে। ট্যাক্স জিডিপি কমে যাওয়ার মানে হচ্ছে, যে ঋণ আপনি করেছেন, তা শোধ করার সুযোগ নাও হতে পারে। সবকিছু বিবেচনা করেই এটা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোতে মানুষের উন্নয়নে এই টাকাগুলো ব্যয় হবে।’

জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, ট্যাক্স বাড়ায় মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়বে, অন্য বিকল্পে যাওয়া যেত। তাই প্রত্যাহার বা কমানোর চিন্তা সরকারের আছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা তাদের কথাগুলো শুনছি, এটাই বলতে পারি।’

আওয়ামী লীগের সময় দেশে-বিদেশে অপচয় করা জনগণের টাকা ক্রোক বা স্যাংশন করা বা ওই সম্পদের ওপর ট্যাক্স বসানোর কোনো কাজ হচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়গুলো নিয়েই আমরা কাজ করছি। একটা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কীভাবে ওই টাকাগুলো আনা যায়, এটা আমাদের টপ প্রায়োরোটি। এই চুরিটা কোথা থেকে হয়েছে, সেটা ট্রেস করা হচ্ছে। আমরা দেখছি, কোথায় কোথায় কীভাবে টাকাগুলো গেছে, কোন অফশোর একাউন্টে গেছে, চুরি করে কোথায় নিয়ে গেছে...। সরকারের জায়গা থেকে অনেক বেশি সতর্কতার সঙ্গে এসব নিয়ে কাজ হচ্ছে। যা যা করা দরকার, সবই করা হচ্ছে।’

দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংক, মানিলন্ডারিং বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের শক্তিশালী করা দাবি করে শফিকুল আলম বলেন, ‘টাকাগুলো যেসব দেশে জলে গেছে, তাদের সঙ্গে আমরা কনটাক্ট করছি। তাদের আমরা জানাচ্ছি, টাকাটা তোমার ওখানে চলে গেছে, তুমি আমাদের সঙ্গে কোঅপারেট করো। আমরা সবার কাছ থেকে সাপোর্ট পাচ্ছি। আমরা কোনো দেশের কথা বলব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনা ভারতের জন্য অনেক করেছেন, তাঁকে আমৃত্যু থাকতে দেওয়া উচিত: কংগ্রেস নেতা

বাসচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, লাশ উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ

রেডিমেড ব্লেজারে বাজার মাত

টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে চান সুজান হল

দেশে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত, আক্রান্ত একজন নারী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত