সৌগত বসু, ঢাকা
সেবার আওতা এবং আয় বাড়ানোকে লক্ষ্য দেখিয়ে রেলওয়ের জন্য গত এক যুগে কয়েক ডজন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আয় বাড়ানোর লক্ষ্যের কথা বলা হলেও এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্প বরং রেলের ব্যয়ের বোঝা বাড়িয়েছে। রেলের তৎকালীন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উৎসাহে অগ্রাধিকার দেওয়া বিপুল ব্যয়ের এসব প্রকল্পে ট্রেন চলে মাত্র কয়েকটি। অথচ সম্ভাব্য লাভজনক প্রকল্পের কাজ চলেছে ধীরগতিতে। কোনোটি বন্ধও হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাষ্ট্র তথা জনস্বার্থ।
রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ‘এলাকাপ্রীতির জন্য’ উৎসাহের সঙ্গে অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু থমকে গেছে অনেক ‘লাইফ লাইন’ (অতি প্রয়োজনীয়) প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম কডলাইন (বিকল্প), বগুড়া-সিরাজগঞ্জ, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন প্রকল্প, ঢাকা-সিলেট ডাবল লাইন, ঢাকা-জামালপুর ডাবল লাইন প্রকল্প। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এসব প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। এগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম কডলাইন সমীক্ষার পর বন্ধই হয়ে গেছে।
রেলসূত্র বলছে, যখন যিনি রেলে মন্ত্রী হয়ে আসেন, তখন তাঁর এলাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নূরুল ইসলাম সুজন মন্ত্রী থাকার সময় উত্তরবঙ্গ বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে। আবার সর্বশেষ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের সময়ে অগ্রাধিকার ছিল দক্ষিণবঙ্গকেন্দ্রিক। অন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাও সুযোগ-সুবিধামতো নিজেদের এলাকাভিত্তিক প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়েছেন। তবে এ রকম অনেক প্রকল্প চালু হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ট্রেন চলছে না।
রেলওয়ের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। তারপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ এগুলোতে ট্রেন চলছে মাত্র ৭টি। এগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে দেশের রেলকে যুক্ত করা আখাউড়া-আগরতলা রুটে একটি ট্রেনও চলছে না। ৩৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ট্রেন চালু রয়েছে ৪টি এবং ১৮ হাজার কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে মাত্র দুটি। রেলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর, রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জ লাইনে প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী মেলেনি। মধুখালী-মাগুরা রেলপথের কাজ শেষ হলে একই অবস্থা হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ঠিকাদারদের সুবিধায় রেলের অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখানে লাভ-লোকসান কিংবা জনগণের জন্য কতটা উপযোগী, সেটা ভাবা হয়নি। এতে রাজনৈতিক নেতা ও ঠিকাদারদের দুষ্টচক্রই কেবল লাভবান হয়েছে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা, আর ব্যয় ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ লোকসান হয় ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। রেলের লোকসানের বোঝা বাড়ানোর পেছনে অযৌক্তিক প্রকল্পের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কথা আর কাজের ফারাকের নমুনা
রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং পুরোনো লাইন সংস্কার প্রকল্পের বিষয়ে বলা হয়েছিল, এই লাইন দিয়ে দিনে ১৪টি ট্রেন চলবে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে নতুন এই রেলপথের উদ্বোধন হয়। এখন পর্যন্ত এই পথে ট্রেন চলছে মাত্র দুটি।
ঈশ্বরদী-ঢালারচর লাইনের প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১০ সালে। ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্পন্ন হয় ২০১৮ সালে। শুরুতে ধরা ৯৮৩ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭১৫ কোটিতে। এ পথের বিষয়ে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয়নি। উদ্বোধনের পর দুই বছর আদৌ কোনো ট্রেন চলেনি। ২০২০ সালে ‘ঢালারচর এক্সপ্রেস’ নামে এক জোড়া ট্রেন চালু করা হয়। চলার কথা ছিল ১০টি। রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী ও পাবনার বাসিন্দা প্রয়াত এ কে খোন্দকারের আগ্রহে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি ব্রডগেজ রেললাইন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তবে জমি অধিগ্রহণ, করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয় ২০২১ সালের মে মাসে। প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় জানিয়েছে, এর কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের মধ্যে। তবে ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ২-৩টির বেশি আন্তনগর ট্রেন চলবে না। ফলে এটি হতে যাচ্ছে আরেকটি ‘সাদা হাতি’ প্রকল্প। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের একক আগ্রহে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।
ভারতের অর্থায়নে খুলনা থেকে মোংলা বন্দরে ট্রেনে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ বসানো হয়। মোংলা বন্দর থেকে খুলনা ও যশোর হয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সহজ করা এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল। তবে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর উদ্বোধনের দীর্ঘ সাত মাস পর গত ১ জুন থেকে পুরোনো ইঞ্জিন ও বগি দিয়ে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে একটিমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে এই লাইনে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর যা অবস্থা
দেশের রেল যোগাযোগের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার কমিয়ে বিকল্প (কডলাইন) রেলরুট তৈরি করার প্রকল্প থমকে গেছে। ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইন হলে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে সময় লাগবে মাত্র তিন ঘণ্টা। কয়েক দশক ধরে আলোচনা চলার পরে ২০১০ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। রেলের সূত্র বলেছে, মন্ত্রণালয়ের ‘অদৃশ্য ইশারায়’ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রেল কর্তৃপক্ষ এর কারণ বলতে পারছে না। প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, গত ১২ মার্চ মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনাপত্র জারি করে কাজ স্থগিত করে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। অগ্রগতি না হওয়ায় দুই দফা সময় বাড়িয়ে তা ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাট পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কথা। অর্থায়নের জটিলতায় ভারতীয় ঋণের এ প্রকল্পের অগ্রগতি নেই। ভারতের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কের টানাপোড়েনে দৃশ্যত তা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০১৬ সালে চীনের ঋণে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন তৈরির বিষয়ে সমঝোতা হয়। শর্ত অনুযায়ী কাজ পায় চীনের ঠিকাদার সিসিইসিসি। কিন্তু চীন ২০২০ সালে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাকে (জাইকা) বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। ২০২১ সালে জাইকা কাজ শুরু করলেও প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি নেই। কারণ, জাইকা আবার সমীক্ষা করতে বলছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী প্রকল্প আগামী পাঁচ বছরেও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই। অগ্রগতি নেই টঙ্গী-জামালপুর ডাবল রেললাইন ও ঢাকা-সিলেট ডাবল রেললাইন প্রকল্পেরও।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করার পরিকল্পনা থাকলেও এডিবি, বিশ্বব্যাংক, জাইকার মতো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর অর্থায়ন সঠিক সময়ে না হওয়ায় করতে পারি না। অনেক কিছু তো আমাদের হাতে নেই। তাদের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়।’
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দিকে নজর বেশি কেন—এ প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম কডলাইন মন্ত্রণালয় হঠাৎ চিঠি দিয়ে বন্ধ করে দেয়। বগুড়া-সিরাজগঞ্জসহ ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে অর্থায়ন চেয়ে বারবার চিঠি দিলেও দাতার কোনো সাড়া নেই। একটা চিঠি দিলে জবাব পেতে ৬ মাস সময় লাগে।’
সেবার আওতা এবং আয় বাড়ানোকে লক্ষ্য দেখিয়ে রেলওয়ের জন্য গত এক যুগে কয়েক ডজন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আয় বাড়ানোর লক্ষ্যের কথা বলা হলেও এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্প বরং রেলের ব্যয়ের বোঝা বাড়িয়েছে। রেলের তৎকালীন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উৎসাহে অগ্রাধিকার দেওয়া বিপুল ব্যয়ের এসব প্রকল্পে ট্রেন চলে মাত্র কয়েকটি। অথচ সম্ভাব্য লাভজনক প্রকল্পের কাজ চলেছে ধীরগতিতে। কোনোটি বন্ধও হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাষ্ট্র তথা জনস্বার্থ।
রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ‘এলাকাপ্রীতির জন্য’ উৎসাহের সঙ্গে অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু থমকে গেছে অনেক ‘লাইফ লাইন’ (অতি প্রয়োজনীয়) প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম কডলাইন (বিকল্প), বগুড়া-সিরাজগঞ্জ, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন প্রকল্প, ঢাকা-সিলেট ডাবল লাইন, ঢাকা-জামালপুর ডাবল লাইন প্রকল্প। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এসব প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। এগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম কডলাইন সমীক্ষার পর বন্ধই হয়ে গেছে।
রেলসূত্র বলছে, যখন যিনি রেলে মন্ত্রী হয়ে আসেন, তখন তাঁর এলাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নূরুল ইসলাম সুজন মন্ত্রী থাকার সময় উত্তরবঙ্গ বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে। আবার সর্বশেষ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের সময়ে অগ্রাধিকার ছিল দক্ষিণবঙ্গকেন্দ্রিক। অন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাও সুযোগ-সুবিধামতো নিজেদের এলাকাভিত্তিক প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়েছেন। তবে এ রকম অনেক প্রকল্প চালু হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ট্রেন চলছে না।
রেলওয়ের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। তারপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ এগুলোতে ট্রেন চলছে মাত্র ৭টি। এগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে দেশের রেলকে যুক্ত করা আখাউড়া-আগরতলা রুটে একটি ট্রেনও চলছে না। ৩৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ট্রেন চালু রয়েছে ৪টি এবং ১৮ হাজার কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে মাত্র দুটি। রেলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর, রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জ লাইনে প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী মেলেনি। মধুখালী-মাগুরা রেলপথের কাজ শেষ হলে একই অবস্থা হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ঠিকাদারদের সুবিধায় রেলের অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখানে লাভ-লোকসান কিংবা জনগণের জন্য কতটা উপযোগী, সেটা ভাবা হয়নি। এতে রাজনৈতিক নেতা ও ঠিকাদারদের দুষ্টচক্রই কেবল লাভবান হয়েছে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা, আর ব্যয় ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ লোকসান হয় ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। রেলের লোকসানের বোঝা বাড়ানোর পেছনে অযৌক্তিক প্রকল্পের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কথা আর কাজের ফারাকের নমুনা
রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং পুরোনো লাইন সংস্কার প্রকল্পের বিষয়ে বলা হয়েছিল, এই লাইন দিয়ে দিনে ১৪টি ট্রেন চলবে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে নতুন এই রেলপথের উদ্বোধন হয়। এখন পর্যন্ত এই পথে ট্রেন চলছে মাত্র দুটি।
ঈশ্বরদী-ঢালারচর লাইনের প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১০ সালে। ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্পন্ন হয় ২০১৮ সালে। শুরুতে ধরা ৯৮৩ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭১৫ কোটিতে। এ পথের বিষয়ে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয়নি। উদ্বোধনের পর দুই বছর আদৌ কোনো ট্রেন চলেনি। ২০২০ সালে ‘ঢালারচর এক্সপ্রেস’ নামে এক জোড়া ট্রেন চালু করা হয়। চলার কথা ছিল ১০টি। রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী ও পাবনার বাসিন্দা প্রয়াত এ কে খোন্দকারের আগ্রহে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি ব্রডগেজ রেললাইন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তবে জমি অধিগ্রহণ, করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয় ২০২১ সালের মে মাসে। প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় জানিয়েছে, এর কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের মধ্যে। তবে ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ২-৩টির বেশি আন্তনগর ট্রেন চলবে না। ফলে এটি হতে যাচ্ছে আরেকটি ‘সাদা হাতি’ প্রকল্প। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের একক আগ্রহে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।
ভারতের অর্থায়নে খুলনা থেকে মোংলা বন্দরে ট্রেনে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ বসানো হয়। মোংলা বন্দর থেকে খুলনা ও যশোর হয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সহজ করা এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল। তবে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর উদ্বোধনের দীর্ঘ সাত মাস পর গত ১ জুন থেকে পুরোনো ইঞ্জিন ও বগি দিয়ে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে একটিমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে এই লাইনে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর যা অবস্থা
দেশের রেল যোগাযোগের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার কমিয়ে বিকল্প (কডলাইন) রেলরুট তৈরি করার প্রকল্প থমকে গেছে। ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইন হলে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে সময় লাগবে মাত্র তিন ঘণ্টা। কয়েক দশক ধরে আলোচনা চলার পরে ২০১০ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। রেলের সূত্র বলেছে, মন্ত্রণালয়ের ‘অদৃশ্য ইশারায়’ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রেল কর্তৃপক্ষ এর কারণ বলতে পারছে না। প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, গত ১২ মার্চ মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনাপত্র জারি করে কাজ স্থগিত করে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। অগ্রগতি না হওয়ায় দুই দফা সময় বাড়িয়ে তা ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাট পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কথা। অর্থায়নের জটিলতায় ভারতীয় ঋণের এ প্রকল্পের অগ্রগতি নেই। ভারতের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কের টানাপোড়েনে দৃশ্যত তা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০১৬ সালে চীনের ঋণে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন তৈরির বিষয়ে সমঝোতা হয়। শর্ত অনুযায়ী কাজ পায় চীনের ঠিকাদার সিসিইসিসি। কিন্তু চীন ২০২০ সালে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাকে (জাইকা) বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। ২০২১ সালে জাইকা কাজ শুরু করলেও প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি নেই। কারণ, জাইকা আবার সমীক্ষা করতে বলছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী প্রকল্প আগামী পাঁচ বছরেও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই। অগ্রগতি নেই টঙ্গী-জামালপুর ডাবল রেললাইন ও ঢাকা-সিলেট ডাবল রেললাইন প্রকল্পেরও।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করার পরিকল্পনা থাকলেও এডিবি, বিশ্বব্যাংক, জাইকার মতো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর অর্থায়ন সঠিক সময়ে না হওয়ায় করতে পারি না। অনেক কিছু তো আমাদের হাতে নেই। তাদের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়।’
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দিকে নজর বেশি কেন—এ প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম কডলাইন মন্ত্রণালয় হঠাৎ চিঠি দিয়ে বন্ধ করে দেয়। বগুড়া-সিরাজগঞ্জসহ ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে অর্থায়ন চেয়ে বারবার চিঠি দিলেও দাতার কোনো সাড়া নেই। একটা চিঠি দিলে জবাব পেতে ৬ মাস সময় লাগে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে না বসলেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নারীনেত্রী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা, ইউটিউবারসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিতে সভা করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। প্র
৭ ঘণ্টা আগেডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১০৭ জন রোগী।
১২ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ‘কনফারেন্স অফ পার্টিস-২৯(কপ২৯)’ শীর্ষক বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগদান শেষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন।
১৩ ঘণ্টা আগেবিচারপতি এম এ মতিন বলেছেন, ‘জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে দেশ পরিচালিত হবে—এটাই স্বাভাবিক, এর কোনো ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। কিন্তু দেশের ন্যূনতম কোনো সংস্কার না করে রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া অনেকে নিরাপদ বোধ করছে না। ভালো নির্বাচন হলেও স্বৈরতন্ত্র আসবে না, তার গ্যারান্টি নেই
১৪ ঘণ্টা আগে