মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
মোটরবাইকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের উদ্দেশে ছুটলাম। যেতে যেতে মাঝেমধ্যে নানান জায়গায় ব্রেক কষে আলাপ জমিয়েছিলাম স্থানীয়দের সঙ্গে। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে সুখ-দুঃখের ধারণা পেতে পেতে সময় গড়িয়ে রাত আটটায় পৌঁছাই কিশোরগঞ্জে। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পাশে থাকা পূর্বপরিচিত এক মাদ্রাসার মেহমানখানায় উঠি। রাতটা কাটিয়ে সকাল সকাল বালিখোলা ঘাট দিয়ে ফেরিতে পার হই।
ধনু নদের সৌন্দর্য অন্য কোনো নদীর চেয়ে কম নয়। ফেরি থেকে নেমে কিছুটা পথ এগোতেই মনে হলো, আমি কোনো সড়কে নেই! রয়েছি বিমানবন্দরের রানওয়েতে। ধু ধু হাওরের বুকে মসৃণ পিচঢালা পথ, কেতাবি ভাষায় মারসেবল রোড। পথের নজরকাড়া সৌন্দর্যে বাইকের গতি বাড়তে বাড়তে নয়াগাঁও গ্রামে ব্রেক কষলাম। সেখানে মাঠে মাঠে ধান কাটছেন কৃষকেরা।
কৃষকের সুখ-দুঃখের গল্প শুনতে শুনতে ছুটে চলি ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের বিস্তীর্ণ হাওরের বুকের মারসেবল রোড ধরে। প্রথমে মিঠামইন উপজেলার নয়াগাঁও এলাকার খেতে নামি। শুনি, এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত ধান ছিল রাতা ও হিরা। স্থানীয়ভাবে রাতা ধান থেকে ছাঁটাই করা চালকে জামাইমুখিও বলা হতো। এটা মূলত পোলাও চাল। হিরা হলো মোটা ভাতের চাল।
এরপর ছুটি ইটনার পথে। যেতে যেতে আসনপুর গ্রামে থামি। সেখানেও কথা হয় কৃষকদের সঙ্গে। বিদায় নিয়ে আবারও ছুটি। এবার উদ্দেশ্য, ইটনা উপজেলার প্রাচীনতম শাহি মসজিদ, যাকে স্থানীয়রা গায়েবি মসজিদ হিসেবে চেনে। যেতে যেতে বড়হাটি গ্রামের গায়েবি মসজিদের সামনে পৌঁছাই।
তিন গম্বুজবিশিষ্ট কারুকার্যখচিত মসজিদটি প্রথম দর্শনেই মনের ভেতর অন্য রকম ভালো লাগার জায়গা তৈরি করে নেয়। মোগল স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে মসজিদটি তৈরি করা। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রায় ৪২৫ বছরের পুরোনো ইটনা শাহি মসজিদ! বারবার অপরিকল্পিত সংস্কারের কারণে এর নির্মাণকাল লেখার শিলালিপি পলেস্তারার নিচে ঢেকে যাওয়ায় সঠিক সন-তারিখ এখন আর জানা যায় না।
মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বারোভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁর সভাসদ মজলিস দেলোয়ার।
মসজিদের নামকরণ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় এক মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ নুরুল ইসলাম। এই অঞ্চলের বাসিন্দারা ইটনা শাহি মসজিদকেই গায়েবি মসজিদ হিসেবে মনে করেন।
মসজিদের ভেতরটা দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যময়। মসজিদের ভেতর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াই অবিশ্বাস্য রকমের ঠান্ডা। এর সামনের অংশে উঠোন আকৃতির বড় বারান্দা রয়েছে।
মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৪ ও প্রস্থ প্রায় ১০ মিটার। তিনটি দরজা, মেহরাবসহ শাহি মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব ২ মিটার। ইটনা শাহি মসজিদটি শত শত বছর ধরে মোগল স্থাপনাশৈলীর অনন্য সৌন্দর্য বহন করছে। এই মসজিদে আজও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে ভাটি অঞ্চলের অনুপম প্রাচীন নিদর্শন শাহি তথা গায়েবি মসজিদ।
এবার ফেরার পথে ছুটি অষ্টগ্রামের দিকে। বর্ষায় হাওর থাকে পানিতে টইটম্বুর। সাগরের মতো উত্তাল। আকাশে মেঘ জমলেই হয় অশান্ত। আবার এই সব আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ তোলা হাওরগুলোই পানি নেমে গেলে হয় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এই হলো হাওরের রূপ। বাইক চলতে চলতে অষ্টগ্রাম সীমানায় চলে আসি। এরই মধ্যে সূর্য হেলে পড়েছে। রাতের হাওরের পরিবেশ দিনের থেকে ভিন্ন। যোগ-বিয়োগ করে নিরাপত্তার স্বার্থে অষ্টগ্রামের ঐতিহাসিক কুতুব শাহ্ মসজিদের দিকে না গিয়ে বাজিতপুর দিয়ে ঢাকায় ফেরার পথ ধরি।
যাবেন যেভাবে
সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস চলাচল করে কিশোরগঞ্জে। একই রুটে বাইকেও যাওয়া যায়। বালিখোলা ও চামড়াবন্দর ঘাট দিয়ে মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রামে যাওয়া যায়। ওই সব রুটে লেগুনা, অটোরিকশা চলাচল করে।
থাকা-খাওয়া
রাতে থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ শহরে ভালো মানের হোটেল রয়েছে, সেখানে থাকতে পারেন। খাবারের হোটেল মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে রয়েছে।
সতর্কতা
■ মোটরবাইকের গতি যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
■ হেলমেটসহ বিভিন্ন গিয়ার সঙ্গে নিয়ে নেবেন।
■ মোটরবাইক ভ্রমণের আগে অবশ্যই বাইকটি চেক করে নেবেন। ত্রুটি থাকলে সারিয়ে নিয়ে তবেই ভ্রমণে যাবেন।
■ বাইক চালানোর সময় অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যের বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। কম ঘুম হওয়া, দুর্বলতা কিংবা ক্রনিক কোনো অসুখে আক্রান্ত থাকলে বাইকিং না করাই ভালো।
মোটরবাইকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের উদ্দেশে ছুটলাম। যেতে যেতে মাঝেমধ্যে নানান জায়গায় ব্রেক কষে আলাপ জমিয়েছিলাম স্থানীয়দের সঙ্গে। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে সুখ-দুঃখের ধারণা পেতে পেতে সময় গড়িয়ে রাত আটটায় পৌঁছাই কিশোরগঞ্জে। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের পাশে থাকা পূর্বপরিচিত এক মাদ্রাসার মেহমানখানায় উঠি। রাতটা কাটিয়ে সকাল সকাল বালিখোলা ঘাট দিয়ে ফেরিতে পার হই।
ধনু নদের সৌন্দর্য অন্য কোনো নদীর চেয়ে কম নয়। ফেরি থেকে নেমে কিছুটা পথ এগোতেই মনে হলো, আমি কোনো সড়কে নেই! রয়েছি বিমানবন্দরের রানওয়েতে। ধু ধু হাওরের বুকে মসৃণ পিচঢালা পথ, কেতাবি ভাষায় মারসেবল রোড। পথের নজরকাড়া সৌন্দর্যে বাইকের গতি বাড়তে বাড়তে নয়াগাঁও গ্রামে ব্রেক কষলাম। সেখানে মাঠে মাঠে ধান কাটছেন কৃষকেরা।
কৃষকের সুখ-দুঃখের গল্প শুনতে শুনতে ছুটে চলি ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের বিস্তীর্ণ হাওরের বুকের মারসেবল রোড ধরে। প্রথমে মিঠামইন উপজেলার নয়াগাঁও এলাকার খেতে নামি। শুনি, এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত ধান ছিল রাতা ও হিরা। স্থানীয়ভাবে রাতা ধান থেকে ছাঁটাই করা চালকে জামাইমুখিও বলা হতো। এটা মূলত পোলাও চাল। হিরা হলো মোটা ভাতের চাল।
এরপর ছুটি ইটনার পথে। যেতে যেতে আসনপুর গ্রামে থামি। সেখানেও কথা হয় কৃষকদের সঙ্গে। বিদায় নিয়ে আবারও ছুটি। এবার উদ্দেশ্য, ইটনা উপজেলার প্রাচীনতম শাহি মসজিদ, যাকে স্থানীয়রা গায়েবি মসজিদ হিসেবে চেনে। যেতে যেতে বড়হাটি গ্রামের গায়েবি মসজিদের সামনে পৌঁছাই।
তিন গম্বুজবিশিষ্ট কারুকার্যখচিত মসজিদটি প্রথম দর্শনেই মনের ভেতর অন্য রকম ভালো লাগার জায়গা তৈরি করে নেয়। মোগল স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে মসজিদটি তৈরি করা। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রায় ৪২৫ বছরের পুরোনো ইটনা শাহি মসজিদ! বারবার অপরিকল্পিত সংস্কারের কারণে এর নির্মাণকাল লেখার শিলালিপি পলেস্তারার নিচে ঢেকে যাওয়ায় সঠিক সন-তারিখ এখন আর জানা যায় না।
মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বারোভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁর সভাসদ মজলিস দেলোয়ার।
মসজিদের নামকরণ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় এক মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ নুরুল ইসলাম। এই অঞ্চলের বাসিন্দারা ইটনা শাহি মসজিদকেই গায়েবি মসজিদ হিসেবে মনে করেন।
মসজিদের ভেতরটা দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যময়। মসজিদের ভেতর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াই অবিশ্বাস্য রকমের ঠান্ডা। এর সামনের অংশে উঠোন আকৃতির বড় বারান্দা রয়েছে।
মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৪ ও প্রস্থ প্রায় ১০ মিটার। তিনটি দরজা, মেহরাবসহ শাহি মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব ২ মিটার। ইটনা শাহি মসজিদটি শত শত বছর ধরে মোগল স্থাপনাশৈলীর অনন্য সৌন্দর্য বহন করছে। এই মসজিদে আজও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে ভাটি অঞ্চলের অনুপম প্রাচীন নিদর্শন শাহি তথা গায়েবি মসজিদ।
এবার ফেরার পথে ছুটি অষ্টগ্রামের দিকে। বর্ষায় হাওর থাকে পানিতে টইটম্বুর। সাগরের মতো উত্তাল। আকাশে মেঘ জমলেই হয় অশান্ত। আবার এই সব আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ তোলা হাওরগুলোই পানি নেমে গেলে হয় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এই হলো হাওরের রূপ। বাইক চলতে চলতে অষ্টগ্রাম সীমানায় চলে আসি। এরই মধ্যে সূর্য হেলে পড়েছে। রাতের হাওরের পরিবেশ দিনের থেকে ভিন্ন। যোগ-বিয়োগ করে নিরাপত্তার স্বার্থে অষ্টগ্রামের ঐতিহাসিক কুতুব শাহ্ মসজিদের দিকে না গিয়ে বাজিতপুর দিয়ে ঢাকায় ফেরার পথ ধরি।
যাবেন যেভাবে
সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস চলাচল করে কিশোরগঞ্জে। একই রুটে বাইকেও যাওয়া যায়। বালিখোলা ও চামড়াবন্দর ঘাট দিয়ে মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রামে যাওয়া যায়। ওই সব রুটে লেগুনা, অটোরিকশা চলাচল করে।
থাকা-খাওয়া
রাতে থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ শহরে ভালো মানের হোটেল রয়েছে, সেখানে থাকতে পারেন। খাবারের হোটেল মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে রয়েছে।
সতর্কতা
■ মোটরবাইকের গতি যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
■ হেলমেটসহ বিভিন্ন গিয়ার সঙ্গে নিয়ে নেবেন।
■ মোটরবাইক ভ্রমণের আগে অবশ্যই বাইকটি চেক করে নেবেন। ত্রুটি থাকলে সারিয়ে নিয়ে তবেই ভ্রমণে যাবেন।
■ বাইক চালানোর সময় অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যের বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। কম ঘুম হওয়া, দুর্বলতা কিংবা ক্রনিক কোনো অসুখে আক্রান্ত থাকলে বাইকিং না করাই ভালো।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে