ইশতিয়াক হাসান
বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় আবারও পাহাড় ও প্রকৃতিপ্রেমীতে সরগরম হয়ে উঠেছে সাজেক। এদিকে বছরের এই সময়টা, অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি কিংবা শেষভাগ সাজেক ভ্রমণের জন্য এক কথায় আদর্শ। কেন সেই উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি আপনার সাজেকে ঘুরে বেড়ানো আরও আনন্দময় এবং ঝামেলামুক্ত করতে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই লেখায়।
এটা এখন মোটামুটি সবারই জানা যে সাজেক রাঙামাটিতে পড়লেও যাওয়া সহজ খাগড়াছড়ি দিয়ে। আপনি কখনো সাজেক যাননি, তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন, কেন সাজেক যাবেন? লেখাটি পড়তে পড়তে আশা করি এর উত্তর পেয়ে যাবেন।
ধরলাম আপনি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দিকে যাওয়া রাতের বাসে চড়েছেন। ভোরের আলো ফুটেছে কেবল, এমন সময় দেখলেন গাড়িটা বামের একটা পথে ঢুকে পড়েছে। খাড়া পাহাড়ি, আঁকাবাঁকা পথ ধরে যখন বাসটা চলবে, সামনে অনেক দূরে হয়তো ম্যাচ বাক্সের মতো অন্য কোনো একটি ট্রাক কিংবা বাস দেখলেন। আর ভাবলেন, মনে হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমানায় পৌঁছে গেছেন। ব্যাপার মোটেই তা নয়, আপনি আসলে এখন আছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-মিরসরাই রেঞ্জে। বলা চলে সাজেক ভ্রমণের মজা শুরু হয়ে গেল আপনার।
তারপর থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত মোটামুটি পুরো পথটি গিয়েছে পাহাড়কে পাশে রেখে। সবুজ পাহাড় আপনাকে মুগ্ধ করবে, একই সঙ্গে আবার কোথাও কোথাও একপাশের খাদ দেখে গা কাঁটা দিতে পারে। খাগড়াছড়িতে প্রবেশের আগে আলুটিলার পাশে যে খাড়া ঢালটা পাবেন, সেটা পেরোনোর সময় রোমাঞ্চিত হবেন। খাগড়াছড়ি তো চলে এলেন, এখন সাজেক যাবেন কীভাবে?
বড় দল হলে খাগড়াছড়ি শহর থেকে চান্দের গাড়ি বা পিকআপ জিপ ভাড়া নেবেন সাজেক পর্যন্ত। আবার শুধু পরিবার নিয়ে গেলে কিংবা তিন-চারজনের ছোট দল হলে ভাড়া করবেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মাহিন্দ্রা। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, খাগড়াছড়ি থেকে যখনই রওনা দেন না কেন, বাঘাইহাট থেকে সব গাড়ি ছাড়বে একই সময়ে। সকালে এবং দুপুরে দুই টাইমে সেখান থেকে ছাড়ে গাড়ি। পর্যটক বহনকারী গাড়িগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সঙ্গে থাকে সেনাবাহিনীর জিপ।
চান্দের গাড়িতে এক রাত থাকাসহ ভাড়া পড়বে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। সঙ্গে দ্বিতীয় দিন খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদ পার্ক, আলুটিলা গুহার মতো জায়গাগুলোও ঘুরে দেখাবে। এদিকে পিকআপ জিপে ভাড়া পড়বে ৯ হাজার টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা মাহিন্দ্রায় এই ভাড়া ৫ হাজারের আশপাশে।
খাগড়াছড়ি থেকে বাঘাইহাট পর্যন্ত পথটা নয়ন জুড়াবে আপনার। দীঘিনালা পর্যন্ত সড়কে বাঁক বেশি। দীঘিনালার কাছে মাইনি নদী পেরোনোর সময় কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে নদীটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। বাঘাইহাট থেকে চান্দের গাড়িগুলো লাইন করে দাঁড়ায়। এ সময় চাইলে বাঘাইহাট বাজারে নেমে পাহাড়ি কলা কিংবা মৌসুমি কোনো ফল কিনতে পারেন। রাসায়নিকমুক্ত তাজা ফল পাবেন নিঃসন্দেহে। তবে পর্যটকের চাহিদার কারণে দামটা এখন আগের তুলনায় বেড়েছে।
বাঘাইহাটের পর থেকে পাবেন পাহাড়ি পথের আসল মজা। এই রাস্তা উঠেছে তো আবার নেমেছে। তারপর আবার উঠেছে। তবে এই পথে খুব বেশি বাঁক নেই। পাহাড়ি পথে একটার পর একটা চান্দের গাড়ি ছোটার দৃশ্যও সুন্দর। এই পথে রাস্তার ওঠানামার কারণে আপনি পাবেন রোলার কোস্টারে চড়ার অনুভূতি। মাঝে মাঝে রাস্তার ধারে পাহাড়িদের একটা-দুটো ঘর পাবেন, দেখবেন মুগ্ধ চোখে। চলার পথে অবশ্যই দৃষ্টি সজাগ রাখবেন, না হলে অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। বিশেষ করে কাসালং ও মাইনি নদী যেখানটায় মিলেছে সেখানটা এক কথায় অসাধারণ। সেতুর ওপর থেকে নিচে বাঁ পাশে দুই নদীর মিলনস্থলের সৌন্দর্য দেখে আবার গাড়িতে উঠতে মন চাইবে না।
সাজেক যাওয়া পথে মাঝে মাঝেই রাস্তার দুপাশে দেখবেন পাহাড়ি শিশুদের। হাসিমুখে হাত নাড়বে তারা। সর্বশেষ প্রায় খাড়া একটা চড়াই পেরোতে হবে। এটা পেরোতে গিয়ে গাড়িগুলো গোঁ গোঁ শব্দে প্রতিবাদ জানাতে থাকবে। তবে ভয়ের কিছু নেই, শেষ পর্যন্ত ঠিকই আপনাকে পাহাড়ের ওপরে পৌঁছে দেবে। সাজেক ভ্রমণের অন্যতম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত পাহাড়ের খাড়া এই অংশ পেরোনো।
পাহাড়ের ওপর উঠেই চমকে যাবেন। রাস্তার দুপাশে সারবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে একটার পর একটা হোটেল, কটেজ, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ। দৃশ্যটা দেখে আপনার একটু দার্জিলিং দার্জিলিং ফিল হতে পারে। একই সঙ্গে আবার এটাও মনে হতে পারে, জায়গাটি অনেক বেশি ঘিঞ্জি বানিয়ে ফেলেছে।
মোটেল-রিসোর্টে ভরপুর এই জায়গার নাম রুইলুই পাড়া। সাজেক রাঙামাটির একটি ইউনিয়ন হলেও পর্যটকেরা সাজেক বলতে এই রুইলুই পাড়া এবং আরও ওপরের পাড়া কংলাককেই বোঝেন। রুইলুই মূলত লুসাই ও ত্রিপুরা অধ্যুষিত একটি পাড়া। মজার ঘটনা, ২০১১ সালে যখন সাজেকে এসেছিলাম, তখন একটি হোটেল-রিসোর্টও ছিল না, আর এখন এগুলোতে গিজগিজ করছে।
এখন শিরোনামের দিকে একটু তাকাই, লিখেছি ‘সাজেক ভ্রমণের এখনই সময়’, কেন? বর্ষায় প্রকৃতি অনেক সবুজ থাকে সন্দেহ নেই। বৃষ্টিতে পাহাড় যেভাবে সাজে, তার জুড়ি মেলা ভার। মেঘের আনাগোনা থাকে প্রচুর। তবে বৃষ্টির কারণে পথ পিচ্ছিল থাকায় পাহাড়ি রাস্তায় ঝুঁকি কিছুটা হলেও বাড়ে। এদিকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে আবহাওয়া ভালো থাকলেও প্রকৃতির সবুজ ভাব কমতে থাকে। কিন্তু এই সময়টায় বৃষ্টির ঝামেলা নেই, এদিকে আবার পাহাড় যথেষ্ট সবুজ। ভোরের দিকে ভালো মেঘও পাবেন। বেশ একটা শীত শীত আমেজও পাবেন। মোটের ওপর তাই চোখ বুঝে সাজেক ভ্রমণের একটি প্ল্যান সাজিয়ে ফেলতে পারেন।
তবে কথা হলো, পুরোনো সাজেক যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা অনেকেই এখনকার রিসোর্ট-কটেজে ঘিঞ্জি সাজেককে পছন্দ করেন না। তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। এখানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে একের পর এক রিসোর্ট-কটেজ। অনেক ক্ষেত্রেই একটার থেকে প্রকৃতির রূপ উপভোগ নষ্ট করে দিয়েছে আরেকটি। তারপর আবার আমরা পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা মিলে অনেকটা আবর্জনাময় করে রেখেছি জায়গাটি।
তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে, এখনকার সাজেকেও চাইলে আনন্দময় কয়েকটি দিন কাটাতে পারবেন, সেই সঙ্গে ইট-পাথরের নগরে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবেন সারা জীবন মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতি। এমনিতে সাজেকের রুইলুই পাড়ায় ঘুরে বেড়ানোর সময় রাস্তার দুপাশ থেকেই পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
রুইলুই পাড়ায় একটা মডেল লুসাই পাড়া আছে। দেখে বেশ মজা পাবেন, টিকিট জনপ্রতি ৩০ টাকা। আমরা অনেকটা সময় ওখানে কাটিয়েছিলাম। গাছের ওপর বাড়ি বা গাছবাড়িটা দেখে মজা পাবেন। লুসাইদের রাজার বাড়ি, সাধারণ বাড়িঘর, তৈজসপত্র সবকিছুই দেখবেন। রাজার বাড়ি মানে বাড়ির মডেলে আবার আছে কয়েকটা পেইন্টিংও। একটা দোলনাও পাবেন লুসাই শিশুদের জন্য বানানো দোলনার স্টাইলে। এ ছাড়াও লুসাইদের জীবনযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানান কিছুই পাবেন। হেলিপ্যাড থেকে সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। সাজেকে পৌঁছার পরদিন ভোরে ঘুরে আসতে পারেন কংলাক পাড়া থেকে। কংলাক পাড়া এদিকের সবচেয়ে উঁচু জায়গা। ওখান থেকে আশপাশের পাহাড় ও রুইলুই পাড়ার রাস্তা এবং ঘরবাড়িগুলো দেখতেও বেশ লাগে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কংলাকেও পরিকল্পনাহীনভাবে একের পর এক কটেজ-হোটেল গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
এখন সাজেকে একটু নিরিবিলি উপভোগের সুযোগ কীভাবে মিলবে, সে বিষয়ে দু-চারটি কথা বলছি। সাজেকের পুবে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে বাংলাদেশের দীঘিনালা। পুবমুখী ও পশ্চিমমুখী উভয় কটেজ থেকেই সামনে যত দূর চোখ যায় সবুজ পাহাড়ের দেখা মিলবে। ভালো ব্যালকনি বা বারান্দা আছে এমন একটি কটেজ বেছে নিন। আমার ব্যক্তিগতভাবে পুবমুখী দৃশ্য পছন্দ। কারণ ওদিকে বাংলাদেশের পাহাড় শেষ হতেই শুরু হয়ে গেছে ভারতের সেভেন সিস্টারের এক রাজ্য মিজোরামের পাহাড়। ব্যালকনিতে বসেই বড় একটা সময় পার করে দিতে পারবেন। মিজোরামের ওদিকে কামরা থাকলে দেখতে পাবেন সূর্যোদয়, পশ্চিমে মানে দীঘিনালার দিকে কটেজ নিলে সূর্যাস্তের ভিউ ভালো পাবেন।
মেঘ ভালো দেখতে চাইলে একেবারে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখবেন সাদা একটা মেঘের পর্দা ঢেকে রেখেছে গোটা পাহাড়রাজ্য। সূর্য ওপর দিকে ওটার সঙ্গে সঙ্গে মেঘের চাদর ছিঁড়ে সবুজ পাহাড় বেরোতে থাকবে। এ ছাড়া ভিড়বাট্টা এড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করতে চাইলে পাহাড়িদের চলাচলের কোনো পথ ধরে চলে যেতে পারেন নিচের দিকে। পাহাড়িদের জীবন, সবুজ গাছপালা, পাখির কলকাকলি—সবকিছুই দেখার ও শোনার সুযোগ মিলবে চোখ-কান খোলা রাখলে। পাহাড়ের ঢালে কোনো ঘেসো জমিতে বসে মিজোরাম কিংবা বাংলাদেশের পাহাড় দেখতে দেখতেও আনন্দময় সময় পার করতে পারেন।
তবে সাজেকের ভিড় এড়াতে চাইলে অবশ্য আপনার টানা ছুটির দিন এড়িয়ে যেতে হবে। তেমনি শুক্র ও শনিবার না গেলেই মঙ্গল। কারণ ওই দিনগুলোতে পর্যটকের চাপ থাকায় রিসোর্ট-কটেজের ভাড়াও থাকে বেশি। তেমনি সাজেকের রাস্তায় শান্তিমতো হাঁটাও মুশকিল।
আর আগে থেকে হোটেল-কটেজ ভাড়া দিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে ছুটির দিন হলে ওটাই আপনার প্রথম কর্তব্য। ঈদসহ বড় ছুটিতে অনেকেই রিসোর্ট ভাড়া না করে গিয়ে বড় বিপদে পড়েছেন।
রিসোর্ট বা কটেজ বাছাইয়ের জন্য ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন। তেমনি কোন রেস্তোরাঁয় খাবেন সেটা বাছাইয়েও ইউটিউব আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। কিছু ভিডিও দেখলে বাছবিচার করার কাজটা সহজ হবে। তেমনি বেশির ভাগ রিসোর্ট-কটেজের ফেসবুক পেজ আছে। ওখানে ঢুঁ মারতে পারেন। এদিকে ছুটির দিন ছাড়া গেলে আপনি দরাদরি করে একটু কম ভাড়ায় কটেজ পেয়ে যাবেন। সাজেকের বেশির ভাগ কটেজের রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে। রেস্তোরাঁয় গোটা দিনের প্যাকেজ নিলে খাওয়ার খরচটা কম পড়বে।
কাজেই পাঠক, সাজেকে আনন্দময় একটি ভ্রমণে আপনাকে স্বাগত। ওহ্, একটা কথা, আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে পরিবেশ সুন্দর রাখুন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনকে সম্মান করুন।
বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় আবারও পাহাড় ও প্রকৃতিপ্রেমীতে সরগরম হয়ে উঠেছে সাজেক। এদিকে বছরের এই সময়টা, অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি কিংবা শেষভাগ সাজেক ভ্রমণের জন্য এক কথায় আদর্শ। কেন সেই উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি আপনার সাজেকে ঘুরে বেড়ানো আরও আনন্দময় এবং ঝামেলামুক্ত করতে কিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই লেখায়।
এটা এখন মোটামুটি সবারই জানা যে সাজেক রাঙামাটিতে পড়লেও যাওয়া সহজ খাগড়াছড়ি দিয়ে। আপনি কখনো সাজেক যাননি, তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন, কেন সাজেক যাবেন? লেখাটি পড়তে পড়তে আশা করি এর উত্তর পেয়ে যাবেন।
ধরলাম আপনি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দিকে যাওয়া রাতের বাসে চড়েছেন। ভোরের আলো ফুটেছে কেবল, এমন সময় দেখলেন গাড়িটা বামের একটা পথে ঢুকে পড়েছে। খাড়া পাহাড়ি, আঁকাবাঁকা পথ ধরে যখন বাসটা চলবে, সামনে অনেক দূরে হয়তো ম্যাচ বাক্সের মতো অন্য কোনো একটি ট্রাক কিংবা বাস দেখলেন। আর ভাবলেন, মনে হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমানায় পৌঁছে গেছেন। ব্যাপার মোটেই তা নয়, আপনি আসলে এখন আছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-মিরসরাই রেঞ্জে। বলা চলে সাজেক ভ্রমণের মজা শুরু হয়ে গেল আপনার।
তারপর থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত মোটামুটি পুরো পথটি গিয়েছে পাহাড়কে পাশে রেখে। সবুজ পাহাড় আপনাকে মুগ্ধ করবে, একই সঙ্গে আবার কোথাও কোথাও একপাশের খাদ দেখে গা কাঁটা দিতে পারে। খাগড়াছড়িতে প্রবেশের আগে আলুটিলার পাশে যে খাড়া ঢালটা পাবেন, সেটা পেরোনোর সময় রোমাঞ্চিত হবেন। খাগড়াছড়ি তো চলে এলেন, এখন সাজেক যাবেন কীভাবে?
বড় দল হলে খাগড়াছড়ি শহর থেকে চান্দের গাড়ি বা পিকআপ জিপ ভাড়া নেবেন সাজেক পর্যন্ত। আবার শুধু পরিবার নিয়ে গেলে কিংবা তিন-চারজনের ছোট দল হলে ভাড়া করবেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মাহিন্দ্রা। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, খাগড়াছড়ি থেকে যখনই রওনা দেন না কেন, বাঘাইহাট থেকে সব গাড়ি ছাড়বে একই সময়ে। সকালে এবং দুপুরে দুই টাইমে সেখান থেকে ছাড়ে গাড়ি। পর্যটক বহনকারী গাড়িগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সঙ্গে থাকে সেনাবাহিনীর জিপ।
চান্দের গাড়িতে এক রাত থাকাসহ ভাড়া পড়বে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। সঙ্গে দ্বিতীয় দিন খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদ পার্ক, আলুটিলা গুহার মতো জায়গাগুলোও ঘুরে দেখাবে। এদিকে পিকআপ জিপে ভাড়া পড়বে ৯ হাজার টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা মাহিন্দ্রায় এই ভাড়া ৫ হাজারের আশপাশে।
খাগড়াছড়ি থেকে বাঘাইহাট পর্যন্ত পথটা নয়ন জুড়াবে আপনার। দীঘিনালা পর্যন্ত সড়কে বাঁক বেশি। দীঘিনালার কাছে মাইনি নদী পেরোনোর সময় কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে নদীটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। বাঘাইহাট থেকে চান্দের গাড়িগুলো লাইন করে দাঁড়ায়। এ সময় চাইলে বাঘাইহাট বাজারে নেমে পাহাড়ি কলা কিংবা মৌসুমি কোনো ফল কিনতে পারেন। রাসায়নিকমুক্ত তাজা ফল পাবেন নিঃসন্দেহে। তবে পর্যটকের চাহিদার কারণে দামটা এখন আগের তুলনায় বেড়েছে।
বাঘাইহাটের পর থেকে পাবেন পাহাড়ি পথের আসল মজা। এই রাস্তা উঠেছে তো আবার নেমেছে। তারপর আবার উঠেছে। তবে এই পথে খুব বেশি বাঁক নেই। পাহাড়ি পথে একটার পর একটা চান্দের গাড়ি ছোটার দৃশ্যও সুন্দর। এই পথে রাস্তার ওঠানামার কারণে আপনি পাবেন রোলার কোস্টারে চড়ার অনুভূতি। মাঝে মাঝে রাস্তার ধারে পাহাড়িদের একটা-দুটো ঘর পাবেন, দেখবেন মুগ্ধ চোখে। চলার পথে অবশ্যই দৃষ্টি সজাগ রাখবেন, না হলে অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। বিশেষ করে কাসালং ও মাইনি নদী যেখানটায় মিলেছে সেখানটা এক কথায় অসাধারণ। সেতুর ওপর থেকে নিচে বাঁ পাশে দুই নদীর মিলনস্থলের সৌন্দর্য দেখে আবার গাড়িতে উঠতে মন চাইবে না।
সাজেক যাওয়া পথে মাঝে মাঝেই রাস্তার দুপাশে দেখবেন পাহাড়ি শিশুদের। হাসিমুখে হাত নাড়বে তারা। সর্বশেষ প্রায় খাড়া একটা চড়াই পেরোতে হবে। এটা পেরোতে গিয়ে গাড়িগুলো গোঁ গোঁ শব্দে প্রতিবাদ জানাতে থাকবে। তবে ভয়ের কিছু নেই, শেষ পর্যন্ত ঠিকই আপনাকে পাহাড়ের ওপরে পৌঁছে দেবে। সাজেক ভ্রমণের অন্যতম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত পাহাড়ের খাড়া এই অংশ পেরোনো।
পাহাড়ের ওপর উঠেই চমকে যাবেন। রাস্তার দুপাশে সারবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে একটার পর একটা হোটেল, কটেজ, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ। দৃশ্যটা দেখে আপনার একটু দার্জিলিং দার্জিলিং ফিল হতে পারে। একই সঙ্গে আবার এটাও মনে হতে পারে, জায়গাটি অনেক বেশি ঘিঞ্জি বানিয়ে ফেলেছে।
মোটেল-রিসোর্টে ভরপুর এই জায়গার নাম রুইলুই পাড়া। সাজেক রাঙামাটির একটি ইউনিয়ন হলেও পর্যটকেরা সাজেক বলতে এই রুইলুই পাড়া এবং আরও ওপরের পাড়া কংলাককেই বোঝেন। রুইলুই মূলত লুসাই ও ত্রিপুরা অধ্যুষিত একটি পাড়া। মজার ঘটনা, ২০১১ সালে যখন সাজেকে এসেছিলাম, তখন একটি হোটেল-রিসোর্টও ছিল না, আর এখন এগুলোতে গিজগিজ করছে।
এখন শিরোনামের দিকে একটু তাকাই, লিখেছি ‘সাজেক ভ্রমণের এখনই সময়’, কেন? বর্ষায় প্রকৃতি অনেক সবুজ থাকে সন্দেহ নেই। বৃষ্টিতে পাহাড় যেভাবে সাজে, তার জুড়ি মেলা ভার। মেঘের আনাগোনা থাকে প্রচুর। তবে বৃষ্টির কারণে পথ পিচ্ছিল থাকায় পাহাড়ি রাস্তায় ঝুঁকি কিছুটা হলেও বাড়ে। এদিকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে আবহাওয়া ভালো থাকলেও প্রকৃতির সবুজ ভাব কমতে থাকে। কিন্তু এই সময়টায় বৃষ্টির ঝামেলা নেই, এদিকে আবার পাহাড় যথেষ্ট সবুজ। ভোরের দিকে ভালো মেঘও পাবেন। বেশ একটা শীত শীত আমেজও পাবেন। মোটের ওপর তাই চোখ বুঝে সাজেক ভ্রমণের একটি প্ল্যান সাজিয়ে ফেলতে পারেন।
তবে কথা হলো, পুরোনো সাজেক যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা অনেকেই এখনকার রিসোর্ট-কটেজে ঘিঞ্জি সাজেককে পছন্দ করেন না। তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। এখানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে একের পর এক রিসোর্ট-কটেজ। অনেক ক্ষেত্রেই একটার থেকে প্রকৃতির রূপ উপভোগ নষ্ট করে দিয়েছে আরেকটি। তারপর আবার আমরা পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা মিলে অনেকটা আবর্জনাময় করে রেখেছি জায়গাটি।
তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে, এখনকার সাজেকেও চাইলে আনন্দময় কয়েকটি দিন কাটাতে পারবেন, সেই সঙ্গে ইট-পাথরের নগরে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবেন সারা জীবন মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতি। এমনিতে সাজেকের রুইলুই পাড়ায় ঘুরে বেড়ানোর সময় রাস্তার দুপাশ থেকেই পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
রুইলুই পাড়ায় একটা মডেল লুসাই পাড়া আছে। দেখে বেশ মজা পাবেন, টিকিট জনপ্রতি ৩০ টাকা। আমরা অনেকটা সময় ওখানে কাটিয়েছিলাম। গাছের ওপর বাড়ি বা গাছবাড়িটা দেখে মজা পাবেন। লুসাইদের রাজার বাড়ি, সাধারণ বাড়িঘর, তৈজসপত্র সবকিছুই দেখবেন। রাজার বাড়ি মানে বাড়ির মডেলে আবার আছে কয়েকটা পেইন্টিংও। একটা দোলনাও পাবেন লুসাই শিশুদের জন্য বানানো দোলনার স্টাইলে। এ ছাড়াও লুসাইদের জীবনযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানান কিছুই পাবেন। হেলিপ্যাড থেকে সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। সাজেকে পৌঁছার পরদিন ভোরে ঘুরে আসতে পারেন কংলাক পাড়া থেকে। কংলাক পাড়া এদিকের সবচেয়ে উঁচু জায়গা। ওখান থেকে আশপাশের পাহাড় ও রুইলুই পাড়ার রাস্তা এবং ঘরবাড়িগুলো দেখতেও বেশ লাগে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কংলাকেও পরিকল্পনাহীনভাবে একের পর এক কটেজ-হোটেল গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
এখন সাজেকে একটু নিরিবিলি উপভোগের সুযোগ কীভাবে মিলবে, সে বিষয়ে দু-চারটি কথা বলছি। সাজেকের পুবে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে বাংলাদেশের দীঘিনালা। পুবমুখী ও পশ্চিমমুখী উভয় কটেজ থেকেই সামনে যত দূর চোখ যায় সবুজ পাহাড়ের দেখা মিলবে। ভালো ব্যালকনি বা বারান্দা আছে এমন একটি কটেজ বেছে নিন। আমার ব্যক্তিগতভাবে পুবমুখী দৃশ্য পছন্দ। কারণ ওদিকে বাংলাদেশের পাহাড় শেষ হতেই শুরু হয়ে গেছে ভারতের সেভেন সিস্টারের এক রাজ্য মিজোরামের পাহাড়। ব্যালকনিতে বসেই বড় একটা সময় পার করে দিতে পারবেন। মিজোরামের ওদিকে কামরা থাকলে দেখতে পাবেন সূর্যোদয়, পশ্চিমে মানে দীঘিনালার দিকে কটেজ নিলে সূর্যাস্তের ভিউ ভালো পাবেন।
মেঘ ভালো দেখতে চাইলে একেবারে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখবেন সাদা একটা মেঘের পর্দা ঢেকে রেখেছে গোটা পাহাড়রাজ্য। সূর্য ওপর দিকে ওটার সঙ্গে সঙ্গে মেঘের চাদর ছিঁড়ে সবুজ পাহাড় বেরোতে থাকবে। এ ছাড়া ভিড়বাট্টা এড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করতে চাইলে পাহাড়িদের চলাচলের কোনো পথ ধরে চলে যেতে পারেন নিচের দিকে। পাহাড়িদের জীবন, সবুজ গাছপালা, পাখির কলকাকলি—সবকিছুই দেখার ও শোনার সুযোগ মিলবে চোখ-কান খোলা রাখলে। পাহাড়ের ঢালে কোনো ঘেসো জমিতে বসে মিজোরাম কিংবা বাংলাদেশের পাহাড় দেখতে দেখতেও আনন্দময় সময় পার করতে পারেন।
তবে সাজেকের ভিড় এড়াতে চাইলে অবশ্য আপনার টানা ছুটির দিন এড়িয়ে যেতে হবে। তেমনি শুক্র ও শনিবার না গেলেই মঙ্গল। কারণ ওই দিনগুলোতে পর্যটকের চাপ থাকায় রিসোর্ট-কটেজের ভাড়াও থাকে বেশি। তেমনি সাজেকের রাস্তায় শান্তিমতো হাঁটাও মুশকিল।
আর আগে থেকে হোটেল-কটেজ ভাড়া দিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে ছুটির দিন হলে ওটাই আপনার প্রথম কর্তব্য। ঈদসহ বড় ছুটিতে অনেকেই রিসোর্ট ভাড়া না করে গিয়ে বড় বিপদে পড়েছেন।
রিসোর্ট বা কটেজ বাছাইয়ের জন্য ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন। তেমনি কোন রেস্তোরাঁয় খাবেন সেটা বাছাইয়েও ইউটিউব আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। কিছু ভিডিও দেখলে বাছবিচার করার কাজটা সহজ হবে। তেমনি বেশির ভাগ রিসোর্ট-কটেজের ফেসবুক পেজ আছে। ওখানে ঢুঁ মারতে পারেন। এদিকে ছুটির দিন ছাড়া গেলে আপনি দরাদরি করে একটু কম ভাড়ায় কটেজ পেয়ে যাবেন। সাজেকের বেশির ভাগ কটেজের রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে। রেস্তোরাঁয় গোটা দিনের প্যাকেজ নিলে খাওয়ার খরচটা কম পড়বে।
কাজেই পাঠক, সাজেকে আনন্দময় একটি ভ্রমণে আপনাকে স্বাগত। ওহ্, একটা কথা, আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে পরিবেশ সুন্দর রাখুন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনকে সম্মান করুন।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে