সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
জ্যোৎস্না না থাকলে বোধ হয় পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য হারিয়ে যেত! নিকষ কালো অন্ধকারে আচ্ছন্ন হতো রাত। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখতে হয় না বলে বাস্তবে জ্যোৎস্নালোকের রাতগুলো স্বপ্নের মতো সুন্দর। তেমনই এক জ্যোৎস্নাময় রাতে ঘর ছেড়েছিলেন মহামতি বুদ্ধ। তেমন না হোক, অন্তত পাহাড়চূড়ার নির্জন চরাচরে শিশিরভেজা নরম ঘাসে বসে পুরো একটি রাত কাটিয়ে দেওয়া কত মানুষের যে গোপন ইচ্ছে!
নিস্তব্ধ পাহাড়ি কুটিরে একটা রাত কাটানোর স্বপ্ন দেখছিলাম অনেক দিন ধরে। ঝাঁজালো এক দুপুরে সুযোগ পেয়েও গেলাম। সে সময় পাহাড়ে বৃষ্টিবাহী মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এর চেয়ে উত্তম সময় আর কী হতে পারে! শান্তি পরিবহনে শান্তির ভাতঘুম দিতে দিতে যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিলাম। খরতাপে ক্লান্ত শহর পেরিয়ে গেলাম দ্রুত। সূর্য তখন পাটে যেতে বসেছে। গোধূলির সোনারঙা রোদে উজ্জ্বল পথের দুই পাশের বিস্তৃত ধানখেত। এ রকম আবেশী গোধূলিতে বাসের চাকা নষ্ট! ঠিক করার জন্য দাঁড় করানো হলো পথের পাশে।
শাপে বর হলো যেন! বাস থেকে নেমে অপূর্ব প্রকৃতি দেখে প্রাণভরে শ্বাস নিলাম। তারপর গোগ্রাসে চোখে মেখে নিলাম গোধূলির সোনালি মায়া। অদূরে গ্রাম্য ঝুপড়িতে চা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। মাটিরাঙ্গা পৌঁছালাম রাত প্রায় আটটায়। এখান থেকে চাপতে হলো সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। অটোরিকশার হেডলাইটের আলোয় দেখছি সবুজ বনানী কেটে কেটে ঢুকে যাচ্ছি রাত্রির গহিনে। ৩০ মিনিটের যাত্রা শেষ হলো যখন, তখন প্রকৃতির মোহনীয় অভ্যর্থনা দেখে মুগ্ধ হলাম। দেখি ঘাসের বুকে আলোর পাখি জোনাকি তারার চাদর বিছিয়ে রেখেছে। চোখ তুলে তাকালাম পাহাড়ের দিকে। আকাশে যেন নক্ষত্রের মেলা। এমন ‘ভয়াবহ’ সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়ালে বুকে ধাক্কা লাগে।
তারার আলোয় উঠতে লাগলাম পাহাড়ি পথ বেয়ে। এ পথ যেন ছায়াপথের, যেন মহাকাশের-মহাকালেরও। জ্যোৎস্না কুটিরে পা রাখলাম। কত বিচিত্র সব পোকামাকড়ের শব্দ! প্রথমে ঘোর লাগল—অন্য কোনো পৃথিবীতে এসে পড়িনি তো! কত বিচিত্র গন্ধ! আকাশে মেঘের খেলা। সে মেঘ কখনো ঢেকে দেয় নক্ষত্ররাজিকে আবার পরক্ষণেই তারা জোর করে উঁকি দেয়। এই অদ্ভুত নিস্তব্ধ রাত্রিতে শিশির আর বৃক্ষরাজির গন্ধ নিচ্ছিলাম প্রাণভরে। দীর্ঘ রাত বসে থাকলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো। আমার মাথার খুব কাছে আকাশ। চরাচরে তীব্র নির্জনতা। এই রহস্যময় পাহাড়ি রাত্রিতে নিজেকে খুঁজে পাই নতুন করে। এখানে জয়ী হওয়ার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে। সুনীলের মতো দশ দিকের উদ্দেশে আমারও বলতে ইচ্ছে করে, হে দশ দিক, আমাকে ক্ষমা করো।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ
এখানে মিলবে না বিদ্যুতের সুবিধা, এসির ঠান্ডা হাওয়া, ফ্রিজের শীতল পানি। বরং মিলবে সৌরবিদ্যুৎ, কুয়ার ঠান্ডা জল, সারিবদ্ধ বৃক্ষের ছায়া আর শরীর জুড়ানো বাতাস, পাখিদের গান, লেকের তাজা মাছ, বাগানের ফল ও সবজি। নাগরিক জীবন এখানে বেমানান। প্রকৃতি এখানে তার আপন মহিমায় উপস্থিত।
প্রয়োজনীয় তথ্য
বাসে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে মাটিরাঙ্গা বাজার, সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অথবা মোটরসাইকেলে চেপে যেতে হবে জ্যোৎস্না বাড়ি। অবশ্যই প্রকৃতিকে কিন্তু বিরক্ত করা চলবে না। নিজে কিংবা প্রকৃতিকে খুঁজে পেতে হলে নীরবতা অপরিহার্য। জ্যোৎস্না বাড়িতে রাত যাপন করতে জনপ্রতি খরচ হবে তিন বেলা খাবারসহ প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা।
জ্যোৎস্না না থাকলে বোধ হয় পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য হারিয়ে যেত! নিকষ কালো অন্ধকারে আচ্ছন্ন হতো রাত। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখতে হয় না বলে বাস্তবে জ্যোৎস্নালোকের রাতগুলো স্বপ্নের মতো সুন্দর। তেমনই এক জ্যোৎস্নাময় রাতে ঘর ছেড়েছিলেন মহামতি বুদ্ধ। তেমন না হোক, অন্তত পাহাড়চূড়ার নির্জন চরাচরে শিশিরভেজা নরম ঘাসে বসে পুরো একটি রাত কাটিয়ে দেওয়া কত মানুষের যে গোপন ইচ্ছে!
নিস্তব্ধ পাহাড়ি কুটিরে একটা রাত কাটানোর স্বপ্ন দেখছিলাম অনেক দিন ধরে। ঝাঁজালো এক দুপুরে সুযোগ পেয়েও গেলাম। সে সময় পাহাড়ে বৃষ্টিবাহী মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এর চেয়ে উত্তম সময় আর কী হতে পারে! শান্তি পরিবহনে শান্তির ভাতঘুম দিতে দিতে যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিলাম। খরতাপে ক্লান্ত শহর পেরিয়ে গেলাম দ্রুত। সূর্য তখন পাটে যেতে বসেছে। গোধূলির সোনারঙা রোদে উজ্জ্বল পথের দুই পাশের বিস্তৃত ধানখেত। এ রকম আবেশী গোধূলিতে বাসের চাকা নষ্ট! ঠিক করার জন্য দাঁড় করানো হলো পথের পাশে।
শাপে বর হলো যেন! বাস থেকে নেমে অপূর্ব প্রকৃতি দেখে প্রাণভরে শ্বাস নিলাম। তারপর গোগ্রাসে চোখে মেখে নিলাম গোধূলির সোনালি মায়া। অদূরে গ্রাম্য ঝুপড়িতে চা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। মাটিরাঙ্গা পৌঁছালাম রাত প্রায় আটটায়। এখান থেকে চাপতে হলো সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। অটোরিকশার হেডলাইটের আলোয় দেখছি সবুজ বনানী কেটে কেটে ঢুকে যাচ্ছি রাত্রির গহিনে। ৩০ মিনিটের যাত্রা শেষ হলো যখন, তখন প্রকৃতির মোহনীয় অভ্যর্থনা দেখে মুগ্ধ হলাম। দেখি ঘাসের বুকে আলোর পাখি জোনাকি তারার চাদর বিছিয়ে রেখেছে। চোখ তুলে তাকালাম পাহাড়ের দিকে। আকাশে যেন নক্ষত্রের মেলা। এমন ‘ভয়াবহ’ সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়ালে বুকে ধাক্কা লাগে।
তারার আলোয় উঠতে লাগলাম পাহাড়ি পথ বেয়ে। এ পথ যেন ছায়াপথের, যেন মহাকাশের-মহাকালেরও। জ্যোৎস্না কুটিরে পা রাখলাম। কত বিচিত্র সব পোকামাকড়ের শব্দ! প্রথমে ঘোর লাগল—অন্য কোনো পৃথিবীতে এসে পড়িনি তো! কত বিচিত্র গন্ধ! আকাশে মেঘের খেলা। সে মেঘ কখনো ঢেকে দেয় নক্ষত্ররাজিকে আবার পরক্ষণেই তারা জোর করে উঁকি দেয়। এই অদ্ভুত নিস্তব্ধ রাত্রিতে শিশির আর বৃক্ষরাজির গন্ধ নিচ্ছিলাম প্রাণভরে। দীর্ঘ রাত বসে থাকলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো। আমার মাথার খুব কাছে আকাশ। চরাচরে তীব্র নির্জনতা। এই রহস্যময় পাহাড়ি রাত্রিতে নিজেকে খুঁজে পাই নতুন করে। এখানে জয়ী হওয়ার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে। সুনীলের মতো দশ দিকের উদ্দেশে আমারও বলতে ইচ্ছে করে, হে দশ দিক, আমাকে ক্ষমা করো।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ
এখানে মিলবে না বিদ্যুতের সুবিধা, এসির ঠান্ডা হাওয়া, ফ্রিজের শীতল পানি। বরং মিলবে সৌরবিদ্যুৎ, কুয়ার ঠান্ডা জল, সারিবদ্ধ বৃক্ষের ছায়া আর শরীর জুড়ানো বাতাস, পাখিদের গান, লেকের তাজা মাছ, বাগানের ফল ও সবজি। নাগরিক জীবন এখানে বেমানান। প্রকৃতি এখানে তার আপন মহিমায় উপস্থিত।
প্রয়োজনীয় তথ্য
বাসে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে মাটিরাঙ্গা বাজার, সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অথবা মোটরসাইকেলে চেপে যেতে হবে জ্যোৎস্না বাড়ি। অবশ্যই প্রকৃতিকে কিন্তু বিরক্ত করা চলবে না। নিজে কিংবা প্রকৃতিকে খুঁজে পেতে হলে নীরবতা অপরিহার্য। জ্যোৎস্না বাড়িতে রাত যাপন করতে জনপ্রতি খরচ হবে তিন বেলা খাবারসহ প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে