ফাতিমা জাহান
বেলা দেড়টার মধ্যে ৩৫০ কেজি পোলাও বা প্লোভ সাবাড়। এ কেমন জায়গা রে বাবা! তিন হাজার লোক সমাগমে খানাপর্ব চলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো। বেলা ১টার পর এলে এখানে পাতিলের তলার প্লোভও মেলে না। আর এই প্লোভ রান্নার আয়োজন শুরু হয় আগের রাত থেকে।
উজবেকিস্তানের এই জাতীয় খাবারের আয়োজন কোনো অনুষ্ঠানের জন্য নয়। সারা বছর প্রতিদিন তাশকেন্তের ‘বিয়াশ কোযোন’ বা ‘বেশ কোযোন’ নামের রেস্তোরাঁয় বিশাল চুল্লির ওপর বিশাল কড়াইয়ে রান্না হয় এই প্লোভ। আমাদের দেশ হলে একে পোলাও না বলে বিরিয়ানিই বলা হতো। রেস্তোরাঁটিও দরাজ দিলের—যে কেউ রান্নাঘরে এসে দেখতে পারে কীভাবে রান্না হচ্ছে এই প্লোভ। ১০০ কিলোগ্রাম ভেড়ার মাংস, সঙ্গে ১০০ কেজি গাজর, পেঁয়াজ আর ১০০ কেজি চিকন চালের সমন্বয়ে এই প্লোভ রান্নার জন্য বাবুর্চি আগের রাত থেকে শুরু করে দেন আয়োজন। চার ঘণ্টার কাটা-বাছা আর ছয় ঘণ্টার চুলার রথে এই যাত্রায় সঠিক তাপ, সঠিক পরিমাণ তেল, সঠিক উপকরণে তাই এই প্লোভ হয়ে যায় উজবেকিস্তানের সেরা খাবার।
ইটের তৈরি চুলায় স্থায়ী কড়াই বসানো। সেই চুলায় আগুন জ্বেলে কড়াইয়ে প্রায় ৪০ লিটার সূর্যমুখী তেল ঢেলে গরম করেন বাবুর্চি সাহেব। এর আগেই লম্বা লম্বা ফালির মাংসের টুকরো ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি আকারে গুটিয়ে সুতো দিয়ে বেঁধে ফেলেন। কড়াইয়ের তেল গরম হলে তাতে ছেড়ে দেন ছোট ছোট পুঁটলির মতো মাংস। তেলে ভাজলে মাংস শক্ত হয়ে যায় না। বেশ কিছুক্ষণ পর মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে ছেড়ে দেওয়া হয় আগে থেকে কোঁচানো ১০০ কেজি গাজর আর পেঁয়াজ। ফুটন্ত তেলে গাজর আর পেঁয়াজের কমলা ও সাদা রং মিশে যায় মাংসের সুগন্ধি তেলে। লম্বা হাতা দিয়ে খানিক নাড়াচাড়া করে আধা সেদ্ধ হওয়ার পর লবণ মেশানো পানি ঢালা হয় কয়েক বালতি। ততক্ষণে মাংসের সঙ্গে গাজরের সখ্য হয়ে গেছে। উজবেক ভাষায় ওশ বা অশ রান্না করার জন্য নিয়োজিত থাকেন ৮ থেকে ১০ জন বাবুর্চি। মূল বাবুর্চি যাকে বলা হয় অশপায। মাংসের মিশ্রণের ওপর ঢেলে দেওয়া হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে চানা বা ডাবলি ডাল এবং কিশমিশ। এরাও রান্না হতে হতে অশপাযখানা বা রান্নাঘরের চারপাশ সুগন্ধে ভরিয়ে তোলে।
প্লোভ রান্নার জন্য চাল আধা সেদ্ধ করে রাখা হয়। অশপায জানেন মাংস ঠিক কতখানি তেলে সাঁতার কাটলে এরপর সেদ্ধ চাল ছেড়ে দেওয়া যাবে। ১০০ কেজি চাল এক সমুদ্র তেল-মাংসের ওপর তখন এক আবাদভূমির দায়িত্ব পালন করতে নেমে যায়। ঢেকে যায় মাংস, গাজর, চানা, কিশমিশ। এই বিশাল কড়াই একটি বিশাল ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় না। গোল গোল স্টিলের ট্রে দিয়ে পুরোটা ঢেকে দেওয়া হয়। ৮ থেকে ১০ খানা ট্রে এ কাজে ব্যবহৃত হয়। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে চাল, মাংসের মিশ্রণ ভালোভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার ঢেকে দেওয়া হয়।
উজবেকিস্তানের মানুষেরা মনে করে, প্লোভ রান্না হতে হয় তেলে—যত বেশি তেল, তত তার স্বাদ। পুরো রন্ধনপ্রণালি তেলের ওপরই নির্ভর করে। তেলের ওপর সেদ্ধ হতে থাকা চাল ধীরে ধীরে রান্না হতে হতে সাদা থেকে হলদে বাদামি রং ধারণ করে। মাঝে মাঝে অশপায সব মিশ্রণ নেড়েচেড়ে দেন। ছয় ঘণ্টার এক নিরবচ্ছিন্ন যাত্রায় কখনো এদিক-ওদিক করা যায় না। রান্নায় খেয়াল রাখতে হয় যেন একটি ভাতের সঙ্গে আরেকটি না লেগে যায় বা তলায় প্লোভ ধরে না যায়।
নামানোর আগে মাংসের টুকরোগুলো বের করে নেওয়া হয়। ততক্ষণে মাংসে পেঁয়াজ, গাজর, কিশমিশের কিসমত মিশে গেছে, খুশবু অশপাযির হাত আঁকড়ে ধরে আছে। অশপাযি তখন আরও যত্ন করে মাংস কুঁচিয়ে নেন।
এর মাঝেই বেশ কোযোন রেস্তোরাঁ ভরে গেছে খাদ্যরসিকে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খানেওয়ালাদের প্লোভ পরিবেশন করা হয় সরাসরি চুলা থেকে। দোতলা রেস্তোরাঁয় তিল ধারণের জায়গা নেই। ওয়েটারদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় এটি। এই ট্রে ভরে খাবার গেল তো এই খালি।
সাদার ওপর নীল নকশা করা ঐতিহ্যবাহী চিনামাটির প্লেটে পরিবেশন করা হয় বেশ কোযোন প্লোভ। প্রথমে ভাতের মিশ্রণ প্লেটে সাজানো হয়। তার ওপর রান্না করা কোঁচানো মাংস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাদা, নীল প্লেটে কমলা-হলুদ প্লোভ আর তার খুশবু একরাশ খিদে বাড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে টমেটো, পেঁয়াজের কচকচে সালাদ খুব যায়। আর পানীয় হিসেবে উজবেক চা তো যেকোনো সময়ের নিত্য সাথি।
পারস্য থেকে আসা এই প্লোভের দাম প্লেটপ্রতি দেড় থেকে দুই ডলার মাত্র। সঙ্গে বিনা মূল্যে মিলে যাবে রেস্তোরাঁর বাবুর্চি, ওয়েটার এবং বাকি অতিথিদের হাস্যোজ্জ্বল ও পরিতৃপ্ত মুখ। খাবার টেবিলে বসে সবাই একটিমাত্র খাবার উপভোগ করছে, এমন রেস্তোরাঁ আর কোথাও দেখা যায় না। এমন রেস্তোরাঁ যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোযোন বা কড়াইয়ে রান্না হয় একটি মাত্র খাবার, প্লোভ।
বেলা দেড়টার মধ্যে ৩৫০ কেজি পোলাও বা প্লোভ সাবাড়। এ কেমন জায়গা রে বাবা! তিন হাজার লোক সমাগমে খানাপর্ব চলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো। বেলা ১টার পর এলে এখানে পাতিলের তলার প্লোভও মেলে না। আর এই প্লোভ রান্নার আয়োজন শুরু হয় আগের রাত থেকে।
উজবেকিস্তানের এই জাতীয় খাবারের আয়োজন কোনো অনুষ্ঠানের জন্য নয়। সারা বছর প্রতিদিন তাশকেন্তের ‘বিয়াশ কোযোন’ বা ‘বেশ কোযোন’ নামের রেস্তোরাঁয় বিশাল চুল্লির ওপর বিশাল কড়াইয়ে রান্না হয় এই প্লোভ। আমাদের দেশ হলে একে পোলাও না বলে বিরিয়ানিই বলা হতো। রেস্তোরাঁটিও দরাজ দিলের—যে কেউ রান্নাঘরে এসে দেখতে পারে কীভাবে রান্না হচ্ছে এই প্লোভ। ১০০ কিলোগ্রাম ভেড়ার মাংস, সঙ্গে ১০০ কেজি গাজর, পেঁয়াজ আর ১০০ কেজি চিকন চালের সমন্বয়ে এই প্লোভ রান্নার জন্য বাবুর্চি আগের রাত থেকে শুরু করে দেন আয়োজন। চার ঘণ্টার কাটা-বাছা আর ছয় ঘণ্টার চুলার রথে এই যাত্রায় সঠিক তাপ, সঠিক পরিমাণ তেল, সঠিক উপকরণে তাই এই প্লোভ হয়ে যায় উজবেকিস্তানের সেরা খাবার।
ইটের তৈরি চুলায় স্থায়ী কড়াই বসানো। সেই চুলায় আগুন জ্বেলে কড়াইয়ে প্রায় ৪০ লিটার সূর্যমুখী তেল ঢেলে গরম করেন বাবুর্চি সাহেব। এর আগেই লম্বা লম্বা ফালির মাংসের টুকরো ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি আকারে গুটিয়ে সুতো দিয়ে বেঁধে ফেলেন। কড়াইয়ের তেল গরম হলে তাতে ছেড়ে দেন ছোট ছোট পুঁটলির মতো মাংস। তেলে ভাজলে মাংস শক্ত হয়ে যায় না। বেশ কিছুক্ষণ পর মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে ছেড়ে দেওয়া হয় আগে থেকে কোঁচানো ১০০ কেজি গাজর আর পেঁয়াজ। ফুটন্ত তেলে গাজর আর পেঁয়াজের কমলা ও সাদা রং মিশে যায় মাংসের সুগন্ধি তেলে। লম্বা হাতা দিয়ে খানিক নাড়াচাড়া করে আধা সেদ্ধ হওয়ার পর লবণ মেশানো পানি ঢালা হয় কয়েক বালতি। ততক্ষণে মাংসের সঙ্গে গাজরের সখ্য হয়ে গেছে। উজবেক ভাষায় ওশ বা অশ রান্না করার জন্য নিয়োজিত থাকেন ৮ থেকে ১০ জন বাবুর্চি। মূল বাবুর্চি যাকে বলা হয় অশপায। মাংসের মিশ্রণের ওপর ঢেলে দেওয়া হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে চানা বা ডাবলি ডাল এবং কিশমিশ। এরাও রান্না হতে হতে অশপাযখানা বা রান্নাঘরের চারপাশ সুগন্ধে ভরিয়ে তোলে।
প্লোভ রান্নার জন্য চাল আধা সেদ্ধ করে রাখা হয়। অশপায জানেন মাংস ঠিক কতখানি তেলে সাঁতার কাটলে এরপর সেদ্ধ চাল ছেড়ে দেওয়া যাবে। ১০০ কেজি চাল এক সমুদ্র তেল-মাংসের ওপর তখন এক আবাদভূমির দায়িত্ব পালন করতে নেমে যায়। ঢেকে যায় মাংস, গাজর, চানা, কিশমিশ। এই বিশাল কড়াই একটি বিশাল ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় না। গোল গোল স্টিলের ট্রে দিয়ে পুরোটা ঢেকে দেওয়া হয়। ৮ থেকে ১০ খানা ট্রে এ কাজে ব্যবহৃত হয়। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে চাল, মাংসের মিশ্রণ ভালোভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার ঢেকে দেওয়া হয়।
উজবেকিস্তানের মানুষেরা মনে করে, প্লোভ রান্না হতে হয় তেলে—যত বেশি তেল, তত তার স্বাদ। পুরো রন্ধনপ্রণালি তেলের ওপরই নির্ভর করে। তেলের ওপর সেদ্ধ হতে থাকা চাল ধীরে ধীরে রান্না হতে হতে সাদা থেকে হলদে বাদামি রং ধারণ করে। মাঝে মাঝে অশপায সব মিশ্রণ নেড়েচেড়ে দেন। ছয় ঘণ্টার এক নিরবচ্ছিন্ন যাত্রায় কখনো এদিক-ওদিক করা যায় না। রান্নায় খেয়াল রাখতে হয় যেন একটি ভাতের সঙ্গে আরেকটি না লেগে যায় বা তলায় প্লোভ ধরে না যায়।
নামানোর আগে মাংসের টুকরোগুলো বের করে নেওয়া হয়। ততক্ষণে মাংসে পেঁয়াজ, গাজর, কিশমিশের কিসমত মিশে গেছে, খুশবু অশপাযির হাত আঁকড়ে ধরে আছে। অশপাযি তখন আরও যত্ন করে মাংস কুঁচিয়ে নেন।
এর মাঝেই বেশ কোযোন রেস্তোরাঁ ভরে গেছে খাদ্যরসিকে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খানেওয়ালাদের প্লোভ পরিবেশন করা হয় সরাসরি চুলা থেকে। দোতলা রেস্তোরাঁয় তিল ধারণের জায়গা নেই। ওয়েটারদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় এটি। এই ট্রে ভরে খাবার গেল তো এই খালি।
সাদার ওপর নীল নকশা করা ঐতিহ্যবাহী চিনামাটির প্লেটে পরিবেশন করা হয় বেশ কোযোন প্লোভ। প্রথমে ভাতের মিশ্রণ প্লেটে সাজানো হয়। তার ওপর রান্না করা কোঁচানো মাংস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সাদা, নীল প্লেটে কমলা-হলুদ প্লোভ আর তার খুশবু একরাশ খিদে বাড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে টমেটো, পেঁয়াজের কচকচে সালাদ খুব যায়। আর পানীয় হিসেবে উজবেক চা তো যেকোনো সময়ের নিত্য সাথি।
পারস্য থেকে আসা এই প্লোভের দাম প্লেটপ্রতি দেড় থেকে দুই ডলার মাত্র। সঙ্গে বিনা মূল্যে মিলে যাবে রেস্তোরাঁর বাবুর্চি, ওয়েটার এবং বাকি অতিথিদের হাস্যোজ্জ্বল ও পরিতৃপ্ত মুখ। খাবার টেবিলে বসে সবাই একটিমাত্র খাবার উপভোগ করছে, এমন রেস্তোরাঁ আর কোথাও দেখা যায় না। এমন রেস্তোরাঁ যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোযোন বা কড়াইয়ে রান্না হয় একটি মাত্র খাবার, প্লোভ।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে