ইশতিয়াক হাসান
চান্দের গাড়িতে রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে কিংবা বগা লেকের ঠিক আগের চড়াইটা পেরোনোর সময় আপনার হয়তো মনে হতে পারে এমন বিপজ্জনক রাস্তা মনে হয় পৃথিবীতে আর নেই! কিন্তু বাস্তবে এগুলোর চেয়ে ঢের কঠিন রাস্তা পাবেন। কাজেই পাঠক সিটবেল্টটি ভালোভাবে বেঁধে নিন, বিশ্বের বিপজ্জনক ১০টি রাস্তার ভ্রমণে চলেছি আমরা। আগেই বলে রাখছি এই তালিকায় আমাদের প্রতিবেশী ভারত কিংবা পাকিস্তানের রাস্তা থাকলেও বাংলাদেশের কোনো সড়ক নেই।
কেলং কিশতওয়ার রোড, ভারত
যদি প্রচণ্ড রোমাঞ্চপ্রেমী হোন তবে খাঁড়া পর্বত কেটে যাওয়া ২৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ পথটি আপনার জন্য আদর্শ। হিমাচল প্রদেশের কেলং থেকে জম্মু-কাশ্মীরের কিশতওয়ার পর্যন্ত চলে যাওয়া এই সড়কের এক পাশে পাহাড়ের খাঁড়া দেয়াল, আরেক পাশে গভীর খাদ। নেই কোনো নিরাপত্তা দেয়াল।
পাহাড় ধ্বাসের ঝুঁকি এবং আবহাওয়ার নিত্য বদলে যাওয়া পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে একে। বিশেষ করে ‘ক্লিফ হেঙ্গার’ নামে পরিচিত রাস্তার একটি অংশ ভীষণ সরু এবং এর কাছাকাছি গেলে আপনিসহ অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
সিচুয়ান-তিব্বত হাইওয়ে, চীন
বিশ্বের উচ্চতম সড়কগুলির একটি এটি। তুষারপাত এবং ভূমিধস এড়ানোর পাশাপাশি অনেক উচ্চতায় চলা মিলিয়ে এই রাস্তাটি যে কোনো চালককে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে। তবে এত কিছুর পরও এটি অত্যন্ত ব্যস্ত এক সড়ক। ক্রমাগত ট্রাফিক জ্যাম এবং পথের নানা বাধা-বিঘ্নের কারণে পুরো হাইওয়ে ভ্রমণ করতে কখনো কখনো ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
আপনি যদি এই রাস্তায় ভ্রমণ করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হন, তবে পুরস্কার হিসেবে মিলবে তুষার-ঢাকা পর্বত এবং গভীর গিরিসঙ্কটের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখার সুযোগ ।
ইবাসকা মাগ্রিসত্রালা, সার্বিয়া
স্টেট রোড ২২ বা ‘ইবার হাইওয়ে’ স্থানীয়ভাবে কালো মহাসড়ক নামেও পরিচিত। সার্বিয়ার অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়কটি ইউরোপের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়কগুলোর একটি। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি রাজধানী শহর বেলগ্রেডকে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ মন্টেনেগ্রোর সঙ্গেও যুক্ত করেছে।
লম্বা সোজা রাস্তায় হঠাৎ বিপজ্জনক কোণ বিশেষ করে রাতে দুর্ঘটনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। তবে বেশির ভাগ দুর্ঘটনার জন্য অবশ্য মদ পান করে গাড়ি চালানো বা গাড়ির উচ্চগতিকে দায়ী করা হয়।
ট্রান্সফগেরাসান, রোমানিয়া
এটি ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর মহাসড়কগুলোর একটি। একই সঙ্গে প্রচণ্ড বিপজ্জনক এক রাস্তাও এটি। ঘোরানো পাহাড়ি সড়কটি কোথাও কোথাও দুই হাজার মিটারের বেশি উচ্চতা দিয়ে গিয়েছে। ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটিতে ভ্রমণের সময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে নয়ন জুড়াবে আপনার।
চুলের কাটার মতো বাঁক, বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ এবং হঠাৎ উচ্চতার পরিবর্তন এই রাস্তা ধরে গাড়ি চালানো পর্যটকদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। এই মহাসড়কে আপনি অন্য যে ঝামেলার সম্মুখীন হতে পারেন, তা হলো ভেড়ার বিশাল পাল। মেষপালকেরা তাদের ভেড়াগুলিকে চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পথটি ব্যবহার করে। তাই আপনার যদি তাড়াহুড়ো থাকে তবে এই রাস্তাটি এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
স্কিপারস ক্যানিয়ন রোড, নিউজিল্যান্ড
স্কিপারস ক্যানিয়ন নিউজিল্যান্ডের একটি গিরিখাত। শটওভার নদী এ পথে গিয়েছে। ১৮৬২ সালে এই এলাকায় সোনা আবিষ্কৃত হলে গিরিখাতের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে। খনি শ্রমিকেরা পাথুরে পাহাড়ের মধ্যে শুধুমাত্র সাধারণ সরঞ্জাম এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করে এটি তৈরি করে। গিরিখাতের নরম পাথরের কারণে, বৃষ্টি হলে পথটি বিপজ্জনকরকম পিচ্ছিল হয়ে উঠে।
হঠাৎ খাড়াভাবে নামা কিংবা ওঠে যাওয়া, অগণিত চুলের কাটাসদৃশ বাঁক ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। শুধুমাত্র একমুখী যাতায়াতের মতো প্রশস্ত এটি। এর কুখ্যাতি ও বিপজ্জনক প্রকৃতির কারণে, এই রাস্তাটিতে ভাড়ায় চলাচল করা গাড়ির বিমা কার্যকর হয় না।
রাস্তাটি সম্পূর্ণ হতে হতে খনির সোনার মজুত তলানিতে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু ঐতিহাসিক মূল্য এবং অত্যাশ্চর্য দৃশ্যের কারণে এটি আজও একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
জেমস ডালটন হাইওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র
টিভি শো ‘আইস রোড ট্রাকারস’ এই সড়কটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে ভূমিকা রাখে। জেমস ডাল্টন হাইওয়ে নামের এই দীর্ঘ রাস্তাটি ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরকে আর্কটিক সার্কেলের ওপরে অবস্থিত উত্তরের জনপদ ডেডহর্সের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
আলাস্কার এক প্রকৌশলীর নামে নামকরণ করা ৬৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ব্যবহার করে মূলত তেলক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ও জ্বালানি বহনকারী ট্রাকগুলি। রাস্তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পাকা, বাকি অংশে আলগা নুড়ি ও পাথর ফেলা।
প্রতিকূল আবহাওয়া যেমন তুষার এবং বরফ—এই রাস্তায় ভ্রমণকারীদের জন্য বড় হুমকি। একেবারে নির্জন এলাকা দিয়ে যাওয়ায় এবং মেরু ভালুকের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে রাস্তাটিকে।
জজিলা পাস, ভারত
লাদাখকে কাশ্মীর উপত্যকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। হিমালয়ের পর্বতমালার বেশ উচ্চতায় অবস্থানের কারণে তুষারপাত এবং বরফ জমে কঠিন হয়ে যাওয়া এখানে অতি স্বাভাবিক ঘটনা। এতে প্রায়ই এটি কয়েক মাস বন্ধ থাকে।
কেবল একটি গাড়ির যাতায়াতের মতো চওড়া পথটি। কোনো নিরাপত্তা দেয়াল নেই এতে। রাস্তার এমন অনেক অংশ পাবেন যেখানে আপনার একপাশে পাহাড়, অন্য পাশে রাস্তার পরেই অতল খাদ। সংক্ষেপে এটি দুর্বলচিত্তদের কোনোভাবেই ভ্রমণ করা উচিত নয় এমন এক রাস্তা।
শীতকালীন আবহাওয়ায় নিরাপত্তা দিতে একটি বড় অংশ বরাবর একটি নতুন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে। যা সারা বছর রাস্তাটি খোলা রাখতে সাহায্য করবে। তবে এটি রাস্তাটিকে আরও নিরাপদ করে কিনা তা দেখার বিষয়।
ফেয়ারি মিডোজ রোড, পাকিস্তান
মূর্তিমান এক দুঃস্বপ্নের মতো রাস্তাটি পাকিস্তানের উঁচু সব পর্বতের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। কিছু পয়েন্টে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার উচ্চতা অতিক্রম করেছে এটি। রাস্তাটা এতটাই সরু যে একবারে একটি গাড়ির জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত। আর কোনো নিরাপত্তা দেয়াল না থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে একেবারে নিচের উপত্যকায় গিয়ে তবেই থামবে গাড়ির পতন। আর এমন দুর্ঘটনা এখানে ঘটেও।
১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি কারাকোরাম হাইওয়েকে ফেয়ারি মিডোজ জাতীয় উদ্যানের ছোট্ট গ্রামের তাতোর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। অতিমাত্রায় বিপজ্জনক হওয়ায়, রাস্তাটিতে শুধুমাত্র স্থানীয়দের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
উত্তর ইয়াংগাস সড়ক, বলিভিয়া
অনেকের কাছেই বলিভিয়ার উত্তর ইয়াংগাস সড়ক পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তা। এখানে ঘটা বিভিন্ন দুর্ঘটনা, রাস্তার নানা বাঁক আর ঢালের কারণে এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘ডেথ রোড’ বা মৃত্যুসড়ক নামে। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সড়কটির নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছু উদ্যোগ নেওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বলে জানা গেছে।
সড়কটি বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজের সঙ্গে যুক্ত করেছে আমাজনের জঙ্গলের মধ্যকার এলাকা ইয়াংগাসকে। আর এটি করতে গিয়ে বিশাল, দুরারোহ করডিলেরা ওরিয়েন্টাল পর্বতমালা অতিক্রম করতে হয়েছে রাস্তাটিকে। হঠাৎ খাঁড়া নেমে যাওয়া, ওঠা কিংবা কড়া মোচড়—সব মিলিয়ে ভয়ানক এক রাস্তায় পরিণত হয়েছে এটি।
পথের শুরু লা পাজ থেকে, ৩ হাজার ৬৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটি পৃথিবীর উচ্চতম রাজধানী। এখান থেকে শুরুতে ওপর দিকে উঠে রাস্তাটি পৌঁছে ৪ হাজার ৬৫০ মিটার উচ্চতায় লা কুমবরে পাসে। তারপর একেবারে খাঁড়া নামতে শুরু করে করোইকো শহরে, এর উচ্চতা ১ হাজার ২০০ মিটার। আর এই সাড়ে তিন হাজার মিটারের বেশি পতন একে পৃথিবীর বিপজ্জনক রাস্তাগুলোর একটিতে পরিণত করতে সহায়তা করেছে। একটা সময় পর্যন্ত ফি বছর এ রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটত।
১৯৩০-এর দশকে চাকো যুদ্ধের সময় প্যারাগুয়ের কয়েদিদের দিয়ে বানানো হয় সড়কটি। কোথাও কোথাও পর্বতের খাঁড়া ঢাল কেটে তৈরি করা হয়েছে পথটি। রাস্তার এক পাশে কঠিন পাথুরে তাক, আরেক পাশে ৬০০ মিটার খাঁড়া গিরিখাদ। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশ সাড়ে তিন মিটার বা প্রায় ১১ ফুট চওড়া। অনেক জায়গায় নেই রেলিং।
আমাজনের দিক থেকে আসা উষ্ণ, ভেজা বাতাস আন্দিজের পুবের ঢালে বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই সঙ্গে জন্ম দেয় কুয়াশার। এতে আরও বিপজ্জনক রূপ নেয় রাস্তাটি। গোদের ওপর বিষফোড়া হিসেবে মাঝেমধ্যেই পাহাড় থেকে কাদা বা পাথর ঝরতে শুরু করে, কোথাও কোথাও ওপরের কোনো জলপ্রপাতের পানিতেও সিক্ত হয় রাস্তাটি।
পৃথিবীর রোমাঞ্চপ্রেমীদের কাছে এ পথ পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিগত বছরগুলোতে সড়কটির আধুনিকায়ন করা হয়। এখন কারও কারও মতে, রাস্তাটি এখন আগের চেয়ে নিরাপদ। সত্যি কি তাই?
বাইবুর্ত ডি ৯১৫, তুরস্ক
প্যাঁচানো এই পথটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর রাস্তাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করার মূল কারণ চুলের কাটাসদৃশ বাঁক এবং একপাশের গভীর খাদ। এটি উত্তর উপকূলে কৃষ্ণ সাগরকে বাইবুর্ত শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। প্রাচীন সিল্ক রোডের অংশ ছিল শহরটি প্রাচীনকালে।
রাস্তাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। রাস্তার আলগা পাথর, প্রায়ই প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে এ পথে চলতে হলে চালকদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন, ডিসকভারি ডট কম, উইকিপিডিয়া
আরও পড়ুন:
চান্দের গাড়িতে রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে কিংবা বগা লেকের ঠিক আগের চড়াইটা পেরোনোর সময় আপনার হয়তো মনে হতে পারে এমন বিপজ্জনক রাস্তা মনে হয় পৃথিবীতে আর নেই! কিন্তু বাস্তবে এগুলোর চেয়ে ঢের কঠিন রাস্তা পাবেন। কাজেই পাঠক সিটবেল্টটি ভালোভাবে বেঁধে নিন, বিশ্বের বিপজ্জনক ১০টি রাস্তার ভ্রমণে চলেছি আমরা। আগেই বলে রাখছি এই তালিকায় আমাদের প্রতিবেশী ভারত কিংবা পাকিস্তানের রাস্তা থাকলেও বাংলাদেশের কোনো সড়ক নেই।
কেলং কিশতওয়ার রোড, ভারত
যদি প্রচণ্ড রোমাঞ্চপ্রেমী হোন তবে খাঁড়া পর্বত কেটে যাওয়া ২৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ পথটি আপনার জন্য আদর্শ। হিমাচল প্রদেশের কেলং থেকে জম্মু-কাশ্মীরের কিশতওয়ার পর্যন্ত চলে যাওয়া এই সড়কের এক পাশে পাহাড়ের খাঁড়া দেয়াল, আরেক পাশে গভীর খাদ। নেই কোনো নিরাপত্তা দেয়াল।
পাহাড় ধ্বাসের ঝুঁকি এবং আবহাওয়ার নিত্য বদলে যাওয়া পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে একে। বিশেষ করে ‘ক্লিফ হেঙ্গার’ নামে পরিচিত রাস্তার একটি অংশ ভীষণ সরু এবং এর কাছাকাছি গেলে আপনিসহ অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
সিচুয়ান-তিব্বত হাইওয়ে, চীন
বিশ্বের উচ্চতম সড়কগুলির একটি এটি। তুষারপাত এবং ভূমিধস এড়ানোর পাশাপাশি অনেক উচ্চতায় চলা মিলিয়ে এই রাস্তাটি যে কোনো চালককে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে। তবে এত কিছুর পরও এটি অত্যন্ত ব্যস্ত এক সড়ক। ক্রমাগত ট্রাফিক জ্যাম এবং পথের নানা বাধা-বিঘ্নের কারণে পুরো হাইওয়ে ভ্রমণ করতে কখনো কখনো ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
আপনি যদি এই রাস্তায় ভ্রমণ করার জন্য যথেষ্ট সাহসী হন, তবে পুরস্কার হিসেবে মিলবে তুষার-ঢাকা পর্বত এবং গভীর গিরিসঙ্কটের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখার সুযোগ ।
ইবাসকা মাগ্রিসত্রালা, সার্বিয়া
স্টেট রোড ২২ বা ‘ইবার হাইওয়ে’ স্থানীয়ভাবে কালো মহাসড়ক নামেও পরিচিত। সার্বিয়ার অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়কটি ইউরোপের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়কগুলোর একটি। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি রাজধানী শহর বেলগ্রেডকে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ মন্টেনেগ্রোর সঙ্গেও যুক্ত করেছে।
লম্বা সোজা রাস্তায় হঠাৎ বিপজ্জনক কোণ বিশেষ করে রাতে দুর্ঘটনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। তবে বেশির ভাগ দুর্ঘটনার জন্য অবশ্য মদ পান করে গাড়ি চালানো বা গাড়ির উচ্চগতিকে দায়ী করা হয়।
ট্রান্সফগেরাসান, রোমানিয়া
এটি ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর মহাসড়কগুলোর একটি। একই সঙ্গে প্রচণ্ড বিপজ্জনক এক রাস্তাও এটি। ঘোরানো পাহাড়ি সড়কটি কোথাও কোথাও দুই হাজার মিটারের বেশি উচ্চতা দিয়ে গিয়েছে। ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটিতে ভ্রমণের সময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে নয়ন জুড়াবে আপনার।
চুলের কাটার মতো বাঁক, বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ এবং হঠাৎ উচ্চতার পরিবর্তন এই রাস্তা ধরে গাড়ি চালানো পর্যটকদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। এই মহাসড়কে আপনি অন্য যে ঝামেলার সম্মুখীন হতে পারেন, তা হলো ভেড়ার বিশাল পাল। মেষপালকেরা তাদের ভেড়াগুলিকে চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পথটি ব্যবহার করে। তাই আপনার যদি তাড়াহুড়ো থাকে তবে এই রাস্তাটি এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
স্কিপারস ক্যানিয়ন রোড, নিউজিল্যান্ড
স্কিপারস ক্যানিয়ন নিউজিল্যান্ডের একটি গিরিখাত। শটওভার নদী এ পথে গিয়েছে। ১৮৬২ সালে এই এলাকায় সোনা আবিষ্কৃত হলে গিরিখাতের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে। খনি শ্রমিকেরা পাথুরে পাহাড়ের মধ্যে শুধুমাত্র সাধারণ সরঞ্জাম এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করে এটি তৈরি করে। গিরিখাতের নরম পাথরের কারণে, বৃষ্টি হলে পথটি বিপজ্জনকরকম পিচ্ছিল হয়ে উঠে।
হঠাৎ খাড়াভাবে নামা কিংবা ওঠে যাওয়া, অগণিত চুলের কাটাসদৃশ বাঁক ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। শুধুমাত্র একমুখী যাতায়াতের মতো প্রশস্ত এটি। এর কুখ্যাতি ও বিপজ্জনক প্রকৃতির কারণে, এই রাস্তাটিতে ভাড়ায় চলাচল করা গাড়ির বিমা কার্যকর হয় না।
রাস্তাটি সম্পূর্ণ হতে হতে খনির সোনার মজুত তলানিতে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু ঐতিহাসিক মূল্য এবং অত্যাশ্চর্য দৃশ্যের কারণে এটি আজও একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
জেমস ডালটন হাইওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র
টিভি শো ‘আইস রোড ট্রাকারস’ এই সড়কটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে ভূমিকা রাখে। জেমস ডাল্টন হাইওয়ে নামের এই দীর্ঘ রাস্তাটি ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরকে আর্কটিক সার্কেলের ওপরে অবস্থিত উত্তরের জনপদ ডেডহর্সের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
আলাস্কার এক প্রকৌশলীর নামে নামকরণ করা ৬৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ব্যবহার করে মূলত তেলক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ও জ্বালানি বহনকারী ট্রাকগুলি। রাস্তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পাকা, বাকি অংশে আলগা নুড়ি ও পাথর ফেলা।
প্রতিকূল আবহাওয়া যেমন তুষার এবং বরফ—এই রাস্তায় ভ্রমণকারীদের জন্য বড় হুমকি। একেবারে নির্জন এলাকা দিয়ে যাওয়ায় এবং মেরু ভালুকের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে রাস্তাটিকে।
জজিলা পাস, ভারত
লাদাখকে কাশ্মীর উপত্যকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। হিমালয়ের পর্বতমালার বেশ উচ্চতায় অবস্থানের কারণে তুষারপাত এবং বরফ জমে কঠিন হয়ে যাওয়া এখানে অতি স্বাভাবিক ঘটনা। এতে প্রায়ই এটি কয়েক মাস বন্ধ থাকে।
কেবল একটি গাড়ির যাতায়াতের মতো চওড়া পথটি। কোনো নিরাপত্তা দেয়াল নেই এতে। রাস্তার এমন অনেক অংশ পাবেন যেখানে আপনার একপাশে পাহাড়, অন্য পাশে রাস্তার পরেই অতল খাদ। সংক্ষেপে এটি দুর্বলচিত্তদের কোনোভাবেই ভ্রমণ করা উচিত নয় এমন এক রাস্তা।
শীতকালীন আবহাওয়ায় নিরাপত্তা দিতে একটি বড় অংশ বরাবর একটি নতুন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে। যা সারা বছর রাস্তাটি খোলা রাখতে সাহায্য করবে। তবে এটি রাস্তাটিকে আরও নিরাপদ করে কিনা তা দেখার বিষয়।
ফেয়ারি মিডোজ রোড, পাকিস্তান
মূর্তিমান এক দুঃস্বপ্নের মতো রাস্তাটি পাকিস্তানের উঁচু সব পর্বতের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। কিছু পয়েন্টে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার উচ্চতা অতিক্রম করেছে এটি। রাস্তাটা এতটাই সরু যে একবারে একটি গাড়ির জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত। আর কোনো নিরাপত্তা দেয়াল না থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে একেবারে নিচের উপত্যকায় গিয়ে তবেই থামবে গাড়ির পতন। আর এমন দুর্ঘটনা এখানে ঘটেও।
১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি কারাকোরাম হাইওয়েকে ফেয়ারি মিডোজ জাতীয় উদ্যানের ছোট্ট গ্রামের তাতোর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। অতিমাত্রায় বিপজ্জনক হওয়ায়, রাস্তাটিতে শুধুমাত্র স্থানীয়দের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
উত্তর ইয়াংগাস সড়ক, বলিভিয়া
অনেকের কাছেই বলিভিয়ার উত্তর ইয়াংগাস সড়ক পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তা। এখানে ঘটা বিভিন্ন দুর্ঘটনা, রাস্তার নানা বাঁক আর ঢালের কারণে এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘ডেথ রোড’ বা মৃত্যুসড়ক নামে। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সড়কটির নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছু উদ্যোগ নেওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বলে জানা গেছে।
সড়কটি বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজের সঙ্গে যুক্ত করেছে আমাজনের জঙ্গলের মধ্যকার এলাকা ইয়াংগাসকে। আর এটি করতে গিয়ে বিশাল, দুরারোহ করডিলেরা ওরিয়েন্টাল পর্বতমালা অতিক্রম করতে হয়েছে রাস্তাটিকে। হঠাৎ খাঁড়া নেমে যাওয়া, ওঠা কিংবা কড়া মোচড়—সব মিলিয়ে ভয়ানক এক রাস্তায় পরিণত হয়েছে এটি।
পথের শুরু লা পাজ থেকে, ৩ হাজার ৬৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটি পৃথিবীর উচ্চতম রাজধানী। এখান থেকে শুরুতে ওপর দিকে উঠে রাস্তাটি পৌঁছে ৪ হাজার ৬৫০ মিটার উচ্চতায় লা কুমবরে পাসে। তারপর একেবারে খাঁড়া নামতে শুরু করে করোইকো শহরে, এর উচ্চতা ১ হাজার ২০০ মিটার। আর এই সাড়ে তিন হাজার মিটারের বেশি পতন একে পৃথিবীর বিপজ্জনক রাস্তাগুলোর একটিতে পরিণত করতে সহায়তা করেছে। একটা সময় পর্যন্ত ফি বছর এ রাস্তায় অনেক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটত।
১৯৩০-এর দশকে চাকো যুদ্ধের সময় প্যারাগুয়ের কয়েদিদের দিয়ে বানানো হয় সড়কটি। কোথাও কোথাও পর্বতের খাঁড়া ঢাল কেটে তৈরি করা হয়েছে পথটি। রাস্তার এক পাশে কঠিন পাথুরে তাক, আরেক পাশে ৬০০ মিটার খাঁড়া গিরিখাদ। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশ সাড়ে তিন মিটার বা প্রায় ১১ ফুট চওড়া। অনেক জায়গায় নেই রেলিং।
আমাজনের দিক থেকে আসা উষ্ণ, ভেজা বাতাস আন্দিজের পুবের ঢালে বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়, সেই সঙ্গে জন্ম দেয় কুয়াশার। এতে আরও বিপজ্জনক রূপ নেয় রাস্তাটি। গোদের ওপর বিষফোড়া হিসেবে মাঝেমধ্যেই পাহাড় থেকে কাদা বা পাথর ঝরতে শুরু করে, কোথাও কোথাও ওপরের কোনো জলপ্রপাতের পানিতেও সিক্ত হয় রাস্তাটি।
পৃথিবীর রোমাঞ্চপ্রেমীদের কাছে এ পথ পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিগত বছরগুলোতে সড়কটির আধুনিকায়ন করা হয়। এখন কারও কারও মতে, রাস্তাটি এখন আগের চেয়ে নিরাপদ। সত্যি কি তাই?
বাইবুর্ত ডি ৯১৫, তুরস্ক
প্যাঁচানো এই পথটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর রাস্তাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করার মূল কারণ চুলের কাটাসদৃশ বাঁক এবং একপাশের গভীর খাদ। এটি উত্তর উপকূলে কৃষ্ণ সাগরকে বাইবুর্ত শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। প্রাচীন সিল্ক রোডের অংশ ছিল শহরটি প্রাচীনকালে।
রাস্তাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। রাস্তার আলগা পাথর, প্রায়ই প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে এ পথে চলতে হলে চালকদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন, ডিসকভারি ডট কম, উইকিপিডিয়া
আরও পড়ুন:
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে