ইশতিয়াক হাসান
পেরুর দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সবুজের মাঝে আশ্চর্য সুন্দর এক ইনকা নগরী মাচুপিচু। বহু বছর আগেই পরিত্যক্ত এই শহরের ধ্বংসাবশেষের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পর্যটক আর গবেষকদের কাছে। পেরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আপাতত পর্যটক প্রবেশ বারণ ইনকাদের শহরটিতে। তবে মাচুপিচু নিয়ে লেখাপড়ায় নিশ্চই বাধা নেই।
অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার
১৯১১ সালের ২৪ জুলাই, সকাল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও অভিযাত্রী হিরাম বিংহ্যাম পেরুর প্রাচীন ইনকা ধ্বংসাবশেষের কিংবদন্তি সত্যি কি না, তা অনুসন্ধানে বের হয়েছেন। তাঁর সঙ্গী দুজন গাইড। গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পথ করে এগোতে হচ্ছে তাঁকে। হামাগুড়ি দিয়ে গাছের গুঁড়ির একটি প্রাকৃতিক সেতু পেরোলেন। তারপর বিষধর পিট ভাইপার সাপেদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত এমন একটি ঝোপঝাড়ময় এলাকা অতিক্রম করলেন খুব সাবধানে।
দুই ঘণ্টা হাঁটার পর বিংহ্যাম ও তাঁর সঙ্গীরা এক কুঁড়ের সামনে চলে এলেন। সেখান থেকে স্থানীয় দুজন কৃষক তাঁদের কিছুটা পথ এগিয়ে দিয়ে ছোট্ট এক ছেলের দায়িত্বে ছেড়ে দিলেন। আর ওই ছেলের পেছনে পেছনে চলতে চলতে বিংহ্যাম অপ্রত্যাশিতভাবে এমন একটি কিছুর খোঁজ পেয়ে গেলেন, যাকে বিবেচনা করা হয় বিংশ শতকের সেরা প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হিসেবে। ২০০৭ সালে এই আবিষ্কার মানে মাচুপিচুর নাম ওঠে নতুন সপ্তাশ্চর্যের তালিকায়।
বিংহ্যাম যার খোঁজ পেলেন, সেটি পাহাড় কেটে বানানো বিশাল এক পাথরের নগরী। শহরের দালান-কোঠাগুলোতে চুন-সুরকির মিশ্রণ ছাড়া একটার পর একটা পাথর গায়ে গায়ে এভাবে লেগে আছে যে একটি ছুরির ফলা ভেতরে ঢুকবে না। অবাক বিংহ্যাম ভাবলেন, কিন্তু কেন? কারাই বা এটা করল?
পেরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কালচারের একসময়কার পরিচালক ও পেরুভিয়ান বিশেষজ্ঞ লুই লামবরারারস পরে মাচুপিচুকে পরিচয় করিয়ে দেন, ‘প্রাসাদ, মন্দির, বসতঘর, গুদামের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক নগরী হিসেবে; যেখানে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় রীতি উদ্যাপন করা হতো।’
মাচুপিচুতে দালান, চত্বর আর চাতালগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত সরু লেন বা পথের মাধ্যমে। শহরটির বিভিন্ন অংশ ঘিরে রাখা বেষ্টনী, পরিখা সবকিছু মিলিয়ে একে সামরিক ঘাঁটি মনে হলেও লামবরারারসের ধারণা ছিল এই নিরাপত্তাব্যবস্থা গোপনীয় ধর্মীয় আচার পালনের জন্যই।
সেই ‘হারানো শহর’ নয়
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ১৯১৩ সালের এপ্রিল সংখ্যায় বিংহ্যামের আবিষ্কারের কাহিনি ছাপা হয়। সেই সঙ্গে পেরুর পাহাড়রাজ্যের এই আশ্চর্য নগরী পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়ে যায়।
বিংহ্যামের বিশ্বাস ছিল, তিনি ইনকাদের সেই হারানো শহর ভিলকাবামবার খোঁজ পেয়েছেন, যেখানে শেষ স্বাধীন ইনকা শাসক স্পেনীয় আক্রমণকারীদের সঙ্গে এক বছর মরণপণ লড়াই করেছিলেন। প্রায় অর্ধশতাব্দী বিংহ্যামের ওই ধারণাই সত্যি বলে ধরে নিয়েছিল সবাই। তবে সত্যি হলো, বিংহ্যাম যে নগরী আবিষ্কার করেছেন, সেটি সেই হারানো শহর নয়, বরং নতুন এক হারানো শহর।
১৯৬৪ সালে অভিযাত্রী গেনে সেভয় ওই শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। তিনি প্রমাণ করেন, মাচুপিচুর পশ্চিমে এসপিরিতো পাম্পা হলো বিংহ্যামের খোঁজ করা সেই হারানো শহর। আশ্চর্যজনক হলেও ১৯১১ সালের সেই অভিযানের সময় বিংহ্যাম এসপিরিতো পাম্পার সেই ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পেয়েছিলেন। ইনকাদের কিছু পাথরের দেয়াল আর সেতু খুঁজে বেরও করেছিলেন। তবে এগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে এগিয়ে যান মাচুপিচুর দিকে। সেভয় বাকি বেশির ভাগ ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পান।
মাচুপিচু তাহলে কী?
সেভয়ের এই আবিষ্কারে একটা নতুন প্রশ্ন চলে এলো সামনে, তাহলে বিংহ্যামের সন্ধান পাওয়া শহরটির পরিচয় কী? স্প্যানিশদের কোনো নথিতে সেভাবে আসেনি মাচুপিচুর কথা। তার মানে, ইনকাদের রাজধানী কাস্কো থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হলেও ইউরোপীয় আক্রমণকারীরা এই নগরের খোঁজই পাননি আদতে। এমনকি এর অস্তিত্ব সম্পর্কেও নেই কোনো তথ্য।
বিংহ্যাম ধারণা করেন, এখানে ইনকা সাম্রাজ্যের নির্বাচিত নারীদের রাখা হতো, যারা ইনকা রাজা ও তাঁর সভাসদদের সেবা করতেন। তিনি শতাধিক কঙ্কাল পান এলাকাটিতে। তাঁর মতে, এগুলোর ৭৫ শতাংশ নারীর। তবে পরবর্তী গবেষণায় এখানে বাস করা নারী-পুরুষের সংখ্যা মোটামুটি সমান ছিল বলেই প্রমাণ মেলে।
আধুনিক ধারণা
মাচুপিচু নিয়ে জন রো, রিচার্ড বারগার, লুসি সালাজারদের গবেষণায় অনুমান করা হয় ইনকা শাসক পাচাচুটি শহরটি স্থাপন করেন বিশ্রাম নেওয়ার কেন্দ্র হিসেবে। বারগার যেমন মনে করেন অভিজাতরা যেন শহরে কোলাহল, কর্মব্যস্ততা থেকে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন, সে জন্য বানানো হয় শহরটি।
আরেক গবেষক ব্রায়ান বউয়ারের ধারণা, ১৪৫০ সালের দিকে স্থাপন করা হয় শহরটি। এটির আয়তন ইনকা শহর বিবেচনায় বেশ ছোট। আর এখানে সাধারণত ৫০০-৭৫০ জন মানুষ থাকত।
কোনো কোনো গবেষকের ধারণা, নির্মাণের ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সম্ভবত স্পেনীয়রা এ এলাকায় আগমনের আগেই শহরটির অধিকাংশ অধিবাসী গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল।
মাচুপিচুতে কী দেখবেন
মাচুপিচু শব্দের অর্থ ‘পুরোনো পর্বত’। শহরটির অবস্থান পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ মিটার (৭ হাজার ৮৭৫ ফুট) উচ্চতায়। মাচুপিচুতে দেখার মতো অনেক কিছু আছে। প্রতিটি স্থাপনা, জায়গা বা জিনিসের নিজস্ব ইতিহাস, অর্থ আছে। তবে সবই পুরাতাত্ত্বিক সৌন্দর্যের বিচারে অতুলনীয়। এই নগরীর মধ্যে ১৯৬টির মতো পর্যটন স্পট আছে। এর মধ্যে আছে মন্দির, ঝরনা, বসতঘরসহ আরও কত কী!
মাচুপিচু ভ্রমণের সময় প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ এক দেয়াল দিয়ে আলাদা দুটি অংশ পাবেন। একটি অংশ মূলত কৃষিকাজের জন্য নির্ধারিত এলাকা, অপর অংশকে মূল শহর বলতে পারেন। কৃষি এলাকাটায় বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য ধাপে ধাপে কাটা জমি আর চাতাল চোখে পড়ে। সেখানেই ছোট ছোট কিছু বাড়ি আছে, ধারণা করা হয়, এগুলো কৃষকদের থাকার জায়গা।
অন্য অংশে পাবেন রাজাসহ অভিজাতদের বাড়ি। আছে শহরের বিভিন্ন আচার পালনের মূল কেন্দ্র প্লাজা সাগরাদা। এখানেই পাবেন ইনতিহুয়ানতানা পাথর, একে সূর্যপাথর নামেও চেনে। গ্রুপো দেল কনডর নামে পরিচিত ধর্মীয় আচার পালনের মন্দির এলাকার অবস্থানও এখানে।
আপাতত বন্ধ মাচুপিচুর দুয়ার
মাচুপিচুতে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে কাস্কো শহরে। সেখান থেকে ট্রেনে চাপবেন কিংবা শুরু করবেন হাঁটা। ট্রেনে চাপলে পৌঁছাবেন এগুয়েস কেলুয়েন্তেস স্টেশনে। এখান বাসের ছোট্ট একটি ভ্রমণই আপনাকে পৌঁছে দেবে ইনকাদের রহস্যময় নগরী মাচুপিচুর কাছে।
তবে আপাতত চাইলে আশ্চর্য সুন্দর জায়গাটিতে যেতে পারবেন না। পেরুর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাচুপিচু ও ইনকা ট্রেইল আপাতত পর্যটকদের জন্য বন্ধ। কাজেই পরিকল্পনা করতে থাকুন, আপনি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হতে এবং যোগাড়যন্ত্র শেষ করতে করতে আশা করা যায় ইনকা নগরীর দুয়ার খুলে যাবে আবার!
সুত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, পেরু.ট্র্যাভেল, উইকিপিডিয়া
পেরুর দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সবুজের মাঝে আশ্চর্য সুন্দর এক ইনকা নগরী মাচুপিচু। বহু বছর আগেই পরিত্যক্ত এই শহরের ধ্বংসাবশেষের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পর্যটক আর গবেষকদের কাছে। পেরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আপাতত পর্যটক প্রবেশ বারণ ইনকাদের শহরটিতে। তবে মাচুপিচু নিয়ে লেখাপড়ায় নিশ্চই বাধা নেই।
অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার
১৯১১ সালের ২৪ জুলাই, সকাল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও অভিযাত্রী হিরাম বিংহ্যাম পেরুর প্রাচীন ইনকা ধ্বংসাবশেষের কিংবদন্তি সত্যি কি না, তা অনুসন্ধানে বের হয়েছেন। তাঁর সঙ্গী দুজন গাইড। গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পথ করে এগোতে হচ্ছে তাঁকে। হামাগুড়ি দিয়ে গাছের গুঁড়ির একটি প্রাকৃতিক সেতু পেরোলেন। তারপর বিষধর পিট ভাইপার সাপেদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত এমন একটি ঝোপঝাড়ময় এলাকা অতিক্রম করলেন খুব সাবধানে।
দুই ঘণ্টা হাঁটার পর বিংহ্যাম ও তাঁর সঙ্গীরা এক কুঁড়ের সামনে চলে এলেন। সেখান থেকে স্থানীয় দুজন কৃষক তাঁদের কিছুটা পথ এগিয়ে দিয়ে ছোট্ট এক ছেলের দায়িত্বে ছেড়ে দিলেন। আর ওই ছেলের পেছনে পেছনে চলতে চলতে বিংহ্যাম অপ্রত্যাশিতভাবে এমন একটি কিছুর খোঁজ পেয়ে গেলেন, যাকে বিবেচনা করা হয় বিংশ শতকের সেরা প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হিসেবে। ২০০৭ সালে এই আবিষ্কার মানে মাচুপিচুর নাম ওঠে নতুন সপ্তাশ্চর্যের তালিকায়।
বিংহ্যাম যার খোঁজ পেলেন, সেটি পাহাড় কেটে বানানো বিশাল এক পাথরের নগরী। শহরের দালান-কোঠাগুলোতে চুন-সুরকির মিশ্রণ ছাড়া একটার পর একটা পাথর গায়ে গায়ে এভাবে লেগে আছে যে একটি ছুরির ফলা ভেতরে ঢুকবে না। অবাক বিংহ্যাম ভাবলেন, কিন্তু কেন? কারাই বা এটা করল?
পেরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কালচারের একসময়কার পরিচালক ও পেরুভিয়ান বিশেষজ্ঞ লুই লামবরারারস পরে মাচুপিচুকে পরিচয় করিয়ে দেন, ‘প্রাসাদ, মন্দির, বসতঘর, গুদামের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক নগরী হিসেবে; যেখানে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় রীতি উদ্যাপন করা হতো।’
মাচুপিচুতে দালান, চত্বর আর চাতালগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত সরু লেন বা পথের মাধ্যমে। শহরটির বিভিন্ন অংশ ঘিরে রাখা বেষ্টনী, পরিখা সবকিছু মিলিয়ে একে সামরিক ঘাঁটি মনে হলেও লামবরারারসের ধারণা ছিল এই নিরাপত্তাব্যবস্থা গোপনীয় ধর্মীয় আচার পালনের জন্যই।
সেই ‘হারানো শহর’ নয়
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ১৯১৩ সালের এপ্রিল সংখ্যায় বিংহ্যামের আবিষ্কারের কাহিনি ছাপা হয়। সেই সঙ্গে পেরুর পাহাড়রাজ্যের এই আশ্চর্য নগরী পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়ে যায়।
বিংহ্যামের বিশ্বাস ছিল, তিনি ইনকাদের সেই হারানো শহর ভিলকাবামবার খোঁজ পেয়েছেন, যেখানে শেষ স্বাধীন ইনকা শাসক স্পেনীয় আক্রমণকারীদের সঙ্গে এক বছর মরণপণ লড়াই করেছিলেন। প্রায় অর্ধশতাব্দী বিংহ্যামের ওই ধারণাই সত্যি বলে ধরে নিয়েছিল সবাই। তবে সত্যি হলো, বিংহ্যাম যে নগরী আবিষ্কার করেছেন, সেটি সেই হারানো শহর নয়, বরং নতুন এক হারানো শহর।
১৯৬৪ সালে অভিযাত্রী গেনে সেভয় ওই শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। তিনি প্রমাণ করেন, মাচুপিচুর পশ্চিমে এসপিরিতো পাম্পা হলো বিংহ্যামের খোঁজ করা সেই হারানো শহর। আশ্চর্যজনক হলেও ১৯১১ সালের সেই অভিযানের সময় বিংহ্যাম এসপিরিতো পাম্পার সেই ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পেয়েছিলেন। ইনকাদের কিছু পাথরের দেয়াল আর সেতু খুঁজে বেরও করেছিলেন। তবে এগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে এগিয়ে যান মাচুপিচুর দিকে। সেভয় বাকি বেশির ভাগ ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পান।
মাচুপিচু তাহলে কী?
সেভয়ের এই আবিষ্কারে একটা নতুন প্রশ্ন চলে এলো সামনে, তাহলে বিংহ্যামের সন্ধান পাওয়া শহরটির পরিচয় কী? স্প্যানিশদের কোনো নথিতে সেভাবে আসেনি মাচুপিচুর কথা। তার মানে, ইনকাদের রাজধানী কাস্কো থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হলেও ইউরোপীয় আক্রমণকারীরা এই নগরের খোঁজই পাননি আদতে। এমনকি এর অস্তিত্ব সম্পর্কেও নেই কোনো তথ্য।
বিংহ্যাম ধারণা করেন, এখানে ইনকা সাম্রাজ্যের নির্বাচিত নারীদের রাখা হতো, যারা ইনকা রাজা ও তাঁর সভাসদদের সেবা করতেন। তিনি শতাধিক কঙ্কাল পান এলাকাটিতে। তাঁর মতে, এগুলোর ৭৫ শতাংশ নারীর। তবে পরবর্তী গবেষণায় এখানে বাস করা নারী-পুরুষের সংখ্যা মোটামুটি সমান ছিল বলেই প্রমাণ মেলে।
আধুনিক ধারণা
মাচুপিচু নিয়ে জন রো, রিচার্ড বারগার, লুসি সালাজারদের গবেষণায় অনুমান করা হয় ইনকা শাসক পাচাচুটি শহরটি স্থাপন করেন বিশ্রাম নেওয়ার কেন্দ্র হিসেবে। বারগার যেমন মনে করেন অভিজাতরা যেন শহরে কোলাহল, কর্মব্যস্ততা থেকে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন, সে জন্য বানানো হয় শহরটি।
আরেক গবেষক ব্রায়ান বউয়ারের ধারণা, ১৪৫০ সালের দিকে স্থাপন করা হয় শহরটি। এটির আয়তন ইনকা শহর বিবেচনায় বেশ ছোট। আর এখানে সাধারণত ৫০০-৭৫০ জন মানুষ থাকত।
কোনো কোনো গবেষকের ধারণা, নির্মাণের ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সম্ভবত স্পেনীয়রা এ এলাকায় আগমনের আগেই শহরটির অধিকাংশ অধিবাসী গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল।
মাচুপিচুতে কী দেখবেন
মাচুপিচু শব্দের অর্থ ‘পুরোনো পর্বত’। শহরটির অবস্থান পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ মিটার (৭ হাজার ৮৭৫ ফুট) উচ্চতায়। মাচুপিচুতে দেখার মতো অনেক কিছু আছে। প্রতিটি স্থাপনা, জায়গা বা জিনিসের নিজস্ব ইতিহাস, অর্থ আছে। তবে সবই পুরাতাত্ত্বিক সৌন্দর্যের বিচারে অতুলনীয়। এই নগরীর মধ্যে ১৯৬টির মতো পর্যটন স্পট আছে। এর মধ্যে আছে মন্দির, ঝরনা, বসতঘরসহ আরও কত কী!
মাচুপিচু ভ্রমণের সময় প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ এক দেয়াল দিয়ে আলাদা দুটি অংশ পাবেন। একটি অংশ মূলত কৃষিকাজের জন্য নির্ধারিত এলাকা, অপর অংশকে মূল শহর বলতে পারেন। কৃষি এলাকাটায় বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য ধাপে ধাপে কাটা জমি আর চাতাল চোখে পড়ে। সেখানেই ছোট ছোট কিছু বাড়ি আছে, ধারণা করা হয়, এগুলো কৃষকদের থাকার জায়গা।
অন্য অংশে পাবেন রাজাসহ অভিজাতদের বাড়ি। আছে শহরের বিভিন্ন আচার পালনের মূল কেন্দ্র প্লাজা সাগরাদা। এখানেই পাবেন ইনতিহুয়ানতানা পাথর, একে সূর্যপাথর নামেও চেনে। গ্রুপো দেল কনডর নামে পরিচিত ধর্মীয় আচার পালনের মন্দির এলাকার অবস্থানও এখানে।
আপাতত বন্ধ মাচুপিচুর দুয়ার
মাচুপিচুতে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে কাস্কো শহরে। সেখান থেকে ট্রেনে চাপবেন কিংবা শুরু করবেন হাঁটা। ট্রেনে চাপলে পৌঁছাবেন এগুয়েস কেলুয়েন্তেস স্টেশনে। এখান বাসের ছোট্ট একটি ভ্রমণই আপনাকে পৌঁছে দেবে ইনকাদের রহস্যময় নগরী মাচুপিচুর কাছে।
তবে আপাতত চাইলে আশ্চর্য সুন্দর জায়গাটিতে যেতে পারবেন না। পেরুর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাচুপিচু ও ইনকা ট্রেইল আপাতত পর্যটকদের জন্য বন্ধ। কাজেই পরিকল্পনা করতে থাকুন, আপনি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হতে এবং যোগাড়যন্ত্র শেষ করতে করতে আশা করা যায় ইনকা নগরীর দুয়ার খুলে যাবে আবার!
সুত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, পেরু.ট্র্যাভেল, উইকিপিডিয়া
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে